তোমার মায়ায় আবদ্ধ আমি পর্ব ২১

0
620

#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ21
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?

ভোর সকালে ভোরের পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে নিশির। ঘুম ভাঙতেই নিজেকে আবিষ্কার করে দক্ষিণ ঘরের সেই বারান্দায় নিহানের বুকে।নিজেকে এ অবস্থায় দেখে নিশি মনে পড়ে যায় গতকাল রাতের কথা। রাতের কথা মনে পড়তেই নিশি মুচকি হেসে নিহানকে ডেকে বলল___

‘ স্যার,,, স্যার উঠুন!’

নিশির ডাক পেয়ে নিহান ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল__

‘ কি হয়েছে নিশি, এত সকাল সকাল ডাকছো কেন? ঘুমাতে দাও আর তুমিও ঘুমাও!’

এই বলে নিহান নিশিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে নেয়।নিহান নিশিকে কাছে টেনে নিতেই নিশি নিজেকে নিহানের কাছ থেকে ছড়াতে ছাড়াতে বলে__

‘আরে কি ঘুমাবো, এটা কি ঘুমানোর জায়গা নাকি! ছাড়ুন আমাকে আর দেখুন আপনি কোথায় ঘুমিয়ে আছেন!গতকাল গল্প করতে করতে তো এখানেই বারান্দাতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম আমরা।আর তাছাড়া সকাল হয়ে গেছে উঠুন আর রুমে চলুন।আর এই রুমটা কি এভাবেই সাজানো রাখবেন নাকি মামুনি, বাবাই,আফরিন ওদের দেখানোর জন্য!’

নিশির এবারের কথা শুনে নিহান লাফ দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে __

‘এই না-না এইগুলো এখানে এভাবে রাখা যাবে না! এখনো ভোর মা উঠতে এখনো দেরী আছে তাড়াতাড়ি এগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে।না হলে আমার মান সম্মান সব যাবে!’

নিহানের কথা শুনে নিশি দুষ্টু হেসে বলল __

‘হ্যাঁ তা তো যাবেই!গম্ভীর বদ রাগী নিহান চৌধুরী ও প্রেমে পড়েছে,ভাবা যায়!’

নিশির কথা শুনে নিহান বলল___

‘হুম তোমার কাছে ধরা দিয়ে যে খুব ভুল করেছি তা আমি বেশ ভালোই বুঝতে পারছি।এখন আমাকে পিন্চ মেরে কথা না বলে রুমটা ঠিক করতে আমাকে একটু হেল্প কর। ক‍্যান্ডেলগুলো তো নিভেই গেছে ওইগুলো আগে ওঠাই চলো।’

নিহানের কথা শুনে নিশি বলল__

‘ আপনি কি আমাকে অর্ডার করছেন?’

‘ না আমি তো তোমার কাছ থেকে হেল্প চাচ্ছি!’

‘ হ্যাঁ, ঠিক আছে, ঠিক আছে নেহাত মামুনি,বাবাই, আফরিন ওরা এগুলো দেখলে আমিও লজ্জায় পড়ে যাব নয়তো আপনাকে হেল্প করতে আমার বয়েই গেছে।’

এই বলে নিশি রুমে গিয়ে ক্যান্ডেল গুলো উঠানো শুরু করল।সাথে নিহান ও গিয়ে ক্যান্ডেল গুলো উঠাতে শুরু করল। নিশি ক‍্যান্ডেল গুলো উঠাচ্ছিল হঠাৎই কিছু একটা ভেবে শয়তানি হাসি দিয়ে নিশি বারান্দায় এসে একটা বেলুন নিয়ে পা টিপে টিপে নিহানের কানের কাছে গিয়ে দিল ঠাস করে বেলুন ফাটিয়ে।
____________
এক মনে ক্যান্ডেলগুলো ওঠাচ্ছিল নিহান হঠাৎই কানের কাছে এত জোরে কিছু একটার শব্দ পেয়ে ভয় পেয়ে পেছন ফিরে দেখে নিশি মুখ টিপে হাসছে। নিশি কে হাসতে দেখে নিহান কিছুটা রাগী গলায় বলল__

‘ ইউ স্টুপিড! কি করলে এইটা আমার কানটা মনে হয় শেষ!’

‘দেখুন আপনি কিন্তু আমাকে আবার বকছেন!’

‘তো কি করবো তুমিই তো আমাকে রাগিয়ে দিলে!’

‘ কোথায় রাগিয়ে দিলাম বলুন,আমি তো জাস্ট একটু মজা করেছিলাম!’

নিশির কথা শুনে নিহান মুচকি হেসে নিশির দিকে এগোতে এগোতে বলল__

‘ ওওও,,,তুমি দুষ্টুমি করছিলে! আগে বলবে না তাহলে আমিও একটু দু,,,,’

নিহানের কথার মাঝে নিশি শুকনো কয়েকটা ঢোক গিলে বলল __

‘আরে আপনি আমার দিকে এগোচ্ছেন কেন?’

‘এমনি,,আমিও তোমার সাথে একটু মজা করতাম আর কি!’

এই বলে যেই নিহান নিশির কাছে এসে হাত বাড়িয়ে নিশিকে ধরতে যাবে। তখনই নিশি মাথা নিচু করে নিহানের হাতের নিচ দিয়ে এক দৌড়ে দরজার সামনে গিয়ে পেছন ফিরে বলল__

‘ আপনি এগুলো ঠিক করুন,আর আমি নিচে গিয়ে সবার জন্য চা করে আনছি আর দেখছি কেউ এদিকে আসছে কিনা।’

এই বলে নিশি এক দৌড়ে নিচে চলে গেল।নিশিকে এইভাবে দৌড়াতে দেখে নিহান মুচকি হেসে বলল__

‘ পাজি মেয়ে একটা, এক নম্বরের দুষ্টু!’

এই বলে নিহান ঘরটাকে ঠিক করতে লাগলো।
_____________

কোমরে ওড়না গুজে পাকা গিন্নির মত চা বানাচ্ছি আমি।এই চা কফি ছাড়া আর কিছুই করতে পারি না, এইটুকুও পারতাম না কিন্তু বিয়ের আগে যখন রাতে বসে বসে গল্পের বই পড়তাম তখন এইটুকু অনেক বলে কয়ে মার কাছ থেকে শিখে নিয়েছিলাম।মা আর বড়মা তো আমাকে আগুনের কাছে ঘেশতেও দিত না।রাত জেগে চা ফা কফি সাথে গল্পই বই পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। বলতে গেলে আমার একটা ব্যাড হেবিট! তাই চা কফি করাটা শিখে ছিলাম। এখন অন্তত চা টুকুতো করে সবাইকে খাওয়াতে পারব।
________________
‘ একি তুই এত সকালে রান্না ঘরে কি করছিস নিশি?’

সবার জন্য চা আর নিহান স্যারের জন্য কফি বানিয়ে সব রেডি করছিলাম আমি। তখনই হঠাৎ মামনি এসে এই কথা টা বললেন।মামনির কথা শুনে কাপে চা ঢালতে ঢালতে আমি বললাম ___

‘আসলে মামনি খুব সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল তাই ভাবলাম আজ সবার জন্য একটু চা কফি বানাই। আমি তো আর কিছুই বানাতে পারি না তাই ভাবলাম যা পারি তাই করি।’

আমার কথা শুনে মামুনি মুচকি হেসে বললেন__

‘ তুই যা পারিস তাতেই আমাদের হবে,তুই অন্তত সবাইকে খুশি রাখতে তো জানিস এটাই আমার কাছে অনেক!দে,,দেখি কেমন চা বানায় আমার বৌমা!’

মামুনির কথা শুনে আমি খুশি হয়ে বললাম ___

‘হ্যাঁ এই নাও ‘

এই বলে আমি যেই মামুনিকে চা দিতে যাবো তখনই বাবাই নিচে নামতে নামতে বলল___

‘ বাহ,ভালোইতো নিশি মা শুধু মামুনি কেই বুঝি তোমার হাতের চা খাওয়াবে।এই বাবাই টা কি পাবেনা!’

বাবাই এর কথা শুনে আমি মামুনির হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে আমি মুচকি হেসে বললাম ___

‘আরে বাবাই আমি তো সবার জন্য চা,কফি করেছি এক্ষুনি দিচ্ছি!’

এই বলে আমি আরেকটা কাপে চা ঢেলে বাবাই এর হাতে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিলাম।আমি কাপ টা এগিয়ে দিতে বাবাই চা মুখে দিলেন।অধীর আগ্রহে চেয়ে আছি আমি মামুনি আর বাবাই এর দিকে এমনিতে আমি চা টা ভালই করি কিন্তু এই প্রথম নিজের জন্য না করে অন্য কারো জন্য বানালাম তাই একটু টেনশন টেনশন লাগছে।বাবাই চা মুখে দিয়ে মুচকি হেসে বলেন___

‘খুব ভালো হয়েছে তো!’

আমি উনার কথা শুনে খুশি বললাম __

‘সত্যিই তোমাদের ভালো লেগেছে মামুনি-বাবাই’

আমার কথা শুনে মামুনি বলল ___

‘হ্যাঁ,এবার যা নিহানের কফিটা গিয়ে দিয়ে আয়,নিজের হাতে করলি দেখবি নিহানেরও ভালো লাগবে।যা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।’

‘ হ্যাঁ আফরিন আর স্যারকেও তো ওনাদের চা,কফি দিতে হবে ‘

এই বলে আমি আফরিনের জন্য চা আর নিহান স‍্যার এর জন্য কফি নিয়ে উপরে চলে গেলাম।
______________

‘ আফরিন ওঠো,,এই আফরিন ওঠো,,,,এই নাও তোমার চা আর ওঠো স্কুলেও তো যেতে হবে নাকি?’

আমার ডাকে আফরিন চোখ ডলতে ডলতে উঠে বলল___

‘ কি ভাবি একটু ঘুমাতে দাও তো আর তুমি আজ এত সকালে উঠলে কি করে?তোমার তো আজ লেট করে ওঠার কথা!’

আফরিনের কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে আফরিনকে ধাক্কা দিয়ে বললাম __

‘এই তোমার ঘুম কি এখনো কাটেনি?কি আজেবাজে কথা বকে যাচ্ছ!’

আমার কথা শুনে আফরিন বলল __

‘না আমার ঘুম তো কেটে গেছে’

‘তাহলে কি আজেবাজে বলছো,আমি কেন আজ লেট করে ঘুম থেকে উঠতে যাব!’

‘ আরে তোমরা কাল নিশ্চয়ই অনেক লেট করে ঘুমিয়েছো তাই বললাম আজকে একটু লেট করে ওঠার কথা।’

আফরিনের কথা শুনে আমার মাথায় যেন বাজ পরল। এই মেয়ে আবার কিছু টের পেল নাকি!

‘ কি,গো কি হল এমন স্ট্যাচু এর মত বসে আছো কেন?’

আফরিনের ধাক্কায় আমি আমি আমার ভাবনা থেকে বের হয়ে আফরিনের দিকে চেয়ে মেকি হাসি দিয়ে বললাম__

‘ কি বলছো এসব আমরা কেন লেট করে ঘুমাতে যাবো, আর আমরা বলতে কি বুঝাচ্ছো গতকাল রাতে তো তুমি আর আমি একসাথেই ঘুমালাম তাই না!’

আমার কথা শুনে আফরিন বলল___

‘ হয়েছে আর বানিয়ে বানিয়ে বলতে হবে না,আমি সব জানি!ভাইয়া আমাকে সব বলেছে।আর ভাইয়ার কথাতেই আমি গতকাল রাতে তোমাকে আমার সাথে ঘুমাতে বলেছিলাম।তাই আমার কাছ থেকে আর লুকাতে হবে না।এবার বলো কাল ভাইয়া তোমাকে কিভাবে প্রপোজ করেছে! নিশ্চয়ই মুভির হিরোর মত হাঁটু মুড়ে ফুল বা রিং দিয়ে প্রপোজ করেছে!’

‘সে গুড়ে বালি তোমার ভাইয়ের মতো নিরামিষ আমি আর একটাও দেখিনি!’

‘ কেন আমার ভাই আবার কি করেছে?’

‘ তোমার ভাই আমাকে,,,,,,,এই আফরিন তুমি কিন্তু খুব পেকে যাচ্ছ!যাও ফ্রেশ হয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হও।আমি যাই তোমার ভাইয়া কে গিয়ে কফিটা দিয়ে আসি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’

‘ হ্যাঁ,যাও স্বামী সেবা করো গিয়ে!’

‘ আফরিন তুমি কিন্তু এবার আমার হাতে কান মলা খাবে!’

এই বলে আমি চললাম আমাদের রুমের দিকে।
___________

ওই ঘরের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুধু টাওয়াল পড়ে সবেমাত্র বের হয়েছে নিহান। আর তখনই ঘরে ঢুকে নিশি! ঘরে এসে নিহানকে এ অবস্থায় দেখে হাতে থাকার চায়ের ট্রেটা চোখের সামনে রেখে নিশি বলল ___

‘ছি! আপনার কি লজ্জা করে না এভাবে বের হতে? আপনি জানেন না আপনি এখন এইরুমে একা থাকেন না।আপনার সাথে একটা মেয়েও থাকে!’

নিশির কথা শুনে নিহান পেছন ফিরে নিশিকে দেখে নিশিকে উদ্দেশ্য করে বলল __

‘মেয়েটা যেন আমার কি হয়? ও হ্যাঁ, মেয়েটা তো আমার বউ হয়!আর বউয়ের সামনে,,,,,’

‘ চুপ আর একটাও কথা বলবেন না এই যে আপনার কফি রেখে গেলাম ড্রেস পরে খেয়ে নেবেন।’

এই বলে নিশি দ্রুত কফিটা রেখে নিচে চলে গেল।আর নিহান সেন্টার টেবিলে থাকা কফির দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বলল___

‘ তোমাকে জ্বালাতে তো বেশ মজা লাগে!’
______________

‘নিশি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসে ব্রেকফাস্ট করে নাও। না হলে কলেজ যেতে লেট হয়ে যাবে,গো ফাস্ট!’

রেডি হয়ে নিচে নামার সময় কথাটি বলল নিহান।

মামুনির হাতে হাতে কিছু কাজ জোর করে করছিলাম আমি। তখনই নিচে নামতে নামতে নিহান স্যার এই কথা বলে ওঠেন। নিহান স‍্যারের কথা শুনে আমি বললাম___

‘ হ্যাঁ যাচ্ছি হাতের কাজটা শেষ করে নিই তারপর যাচ্ছি!’

আমার কথা শুনে মামুনি বললেন __

‘তার কোন প্রয়োজন নেই যা তাড়াতাড়ি কলেজের জন্য রেডি হয়ে আয়’

মামুনির কথা শুনে আমি বললাম ___

‘আরে মামুনি যাচ্ছি তো হাতের কাজটা শেষ করেই যাচ্ছি।’

‘আমি তো তোকে যেতে বলেছি যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়।’

কি আর করার মামুনির কথার উপরে তো আর যেতে পারি না।তাই হাতের কাজ সব ছেড়েছুড়েই উপরে চলে এলাম। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে বই খাতা সব গুছিয়ে কাঁদে ব্যাগ ঝুলিয়ে নিচে চলে গেলাম আমি। আমাকে নিচে নামতে দেখে নিহান স্যার বলল___

‘ এত সময় লাগে রেডি হতে,যাও অনলি টেন মিনিট সময় আছে তোমার কাছে তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট করবে!’

ওনার কথা শুনে আমি বললাম __

‘আরে আমি কি রাক্ষস নাকি যে মাত্র ১০ মিনিটে খাবার খেয়ে নেব! আরেকটু লেট হলে কিছু হবে না!’

‘ আমি সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে করতে পছন্দ করি, কোন কাজে লেট করা আমার একদম পছন্দ না। এখন কথা কম বলে জলদি ব্রেকফাস্ট শেষ কর।’

তারপর আমার আর কি করার ১০ মিনিটের মধ্যেই কোনরকম খেয়ে নিলাম। না হলে রাক্ষসটা আমাকেই খেয়ে ফেলবে।আমার নাস্তা করা শেষ হতেই নিহান স্যার আর আমি বেরিয়ে পড়লাম কলেজের উদ্দেশ্যে।

#চলবে,,,

( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here