তোমার মায়ায় আবদ্ধ আমি পর্ব ২০

0
622

#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ20
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?

হতভাগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি নিহান স‍্যারের দিকে।উনি এত রাতে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন কিছুই বুঝতে পারছি না।এটা তো নিহান স্যারের রুমে যাওয়ার রাস্তাও না, ইস!ওনাদের বাড়িটাও এখনো পর্যন্ত ঠিক করে দেখা হলো না। যদি আগে থেকেই দেখে রাখতাম তাহলে হয়তো বুঝতে পারতাম কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন উনি আমাকে এই অন্ধকার পথ দিয়ে। আমার ভাবনার মাঝে নিহান স্যার আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন। উনি আমাকে নামাতেই আমি দ্রুত আমার মুখের বাঁধন মুক্ত করে বললাম___

‘ আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?আপনি আমাকে এত রাতে এই অন্ধকার জায়গায় কেন নিয়ে এলেন তাও আবার এই ভাবে ডাকাতের মতো আমার মুখ বেধে কোলে করে।আমি কি বাচ্চা নাকি?’

আমার কথা শুনে নিহান স্যার আমার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে!আমাকে থামিয়ে আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললেন__

‘হুশ, কোন কথা না যখন আমি তোমাকে কিছু বলতে বলবো তখনই তুমি কথা বলবে,ওকে!এখন বর্তমানে চুপচাপ আমার সাথে চলো।’

হঠাৎ উনার এত কাছে আশায় আমার হৃদস্পন্দন এতটাই বেড়ে গেল যে মনে হচ্ছে হার্ট টা লাফাতে লাফাতে এখনই বেরিয়ে আসবে!কেমন স্ট্যাচুড় মতো দাঁড়িয়ে আছি আমি ওনার এমন আচরণে।বারবার শুধু একটা কথাই মনে আসছে আমার __

‘কি চাইছেটা কি উনি আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!’

আমার ভাবনার মাঝেই নিহান স্যার আমার চোখে হাত রেখে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আবারো আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন__

‘ চুপচাপ আমার সাথে চলো ‘

নিহান স‍্যারের কথা শুনে আমি বললাম__

‘ আরে আপনি আমার চোখ ধরে রেখেছেন কেন? এমনিতেই অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না তার উপর আপনি আমার চোখ ধরে রেখেছেন! ছাড়ুন বলছি আর আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।আমার ভীষণ ঘুম পেয়েছে আমি এখন ঘুমাবো। যেতে দিন আমাকে!’

আমার কথা শুনে নিহান স‍্যার আবারও আমার কানের মুখ এনে বলে__

‘ তোমাকে না বলেছি আমি না বলা পর্যন্ত কথা বলবে না!’

‘ আপ-নি,,আপনি আমার এত কাছে এসে কথা বলছেন কেন? আমার থেকে দূরে সরে কথা বলুন!আর আমার চোখটা ছাড়ুন আর,,,’

আমি আর কিছু বলব তার আগেই দ্যা গ্রেট নিহান চৌধুরী তার আগের ফর্মে ফিরে এসে আমার চোখ থেকে হাত সরিয়ে আমার কাঁধে দুহাত রেখে আমাকে ওনার দিকে ফিরিয়ে ধমক দিয়ে বললেন __

‘এই তোমাকে কি ভালোভাবে বোঝানো যায় না? আফরিন ঠিকই বলেছিল যে প্রোপ,,,’

এটুকু বললেই উনি হঠাৎ করে থেমে যায় উনি থামতেই আমি বলি __

‘কি হল? থেমে গেলেন কেন বাকিটুকু বলুন!’

নিশির কথা শুনে নিহান বলল__

‘ কি বলবো?’

‘ এই যে মাত্র যে কথাটা বলতে গিয়ে থেমে গেলেন!’

নিশির কথা শুনে নিহান মনে মনে বলে__

‘ এ কোন মেয়েকে বিয়ে করলাম আমি আমার রোমান্টিক মুড এর বারো দুগুনে চব্বিশ টা বাজিয়ে আমার রাগ উঠিয়ে দিচ্ছে। আফরিন ঠিকই বলেছিল প্রপোজ করতে এসোও আমাদের ঝগড়া হবে! ‘

‘কি হলো বলুন’

নিশির কথায় নিহান তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে বলে__

‘ হ্যাঁ কি বলব?’

নিহানের কথা শুনে নিশি বলল___

‘ আমার মাথা! সরুন সামনে থেকে,যেতে দিন আমাকে আর এইদিকে এত অন্ধকার কেন? এত কিপটা কেন আপনারা! কারেন্ট বিল উঠবে বলে এইদিকে সব লাইট বন্ধ করে দিয়েছেন! অন্ধকারে কেমন ভয় ভয় লাগছে আমার অন্তত একটা লাইট জ্বালিয়ে তো রাখ,,,’

আমি আর কিছু বলার আগেই নিহান স‍্যার আমাকে ধমক দিয়ে বললেন__

‘এই তুমি থামবে? কি সব উল্টোপাল্টা বলেই যাচ্ছো কখন থেকে, এখন আর একটা কথাও বলবে না।’

হঠাৎই উনি গলার স্বর নরম করে আমার হাত দুটো ওনার হাতের মধ্যে নিয়ে বললেন ___

‘প্লিজ আমাকে রাগিয়ে দিও না,তোমাকে আমার কিছু বলার আছে,প্লিজ আমি যা বলছি তা একটু শোনো।’

ওনার ব্যবহারে আমি পুরোই স্তব্ধ।উনি আমাকে কিছু বলবেন, কি বলবেন উনি আমাকে? আমার ভাবনার মাঝে উনি আমার হাত ধরে একটা ঘরের দরজার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আবার আমার চোখ দুটো ওনার হাত দিয়ে ঢেকে দিল। তারপর আমার কানের সামনে ওনার মুখে এনে লো ভয়েসে বললেন___

‘ এইবার তোমার হাত দুটো দিয়ে সামনের দরজাটাকে ধাক্কা দাও।’

উনার কথামতো আমিও বিনা বাক‍্যে আমার হাত দিয়ে সামনে দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল হয়তো ভেজানো ছিল। তারপর নিহান স্যার আমাকে বললেন_

সামনের দিকে হাঁটতে আমিও ওনার কথা মত সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। কয়েক কদম এগোতেই নিহান স্যার আমাকে বললেন__

‘ এবার থেমে যাও!’

এই বলে উনি আমার চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিলেন উনি আমার চোখ থেকে হাতছাড়াতে আমি ধীরে ধীরে আমার চোখ দুটো খুললাম।অনেকক্ষণ চোখ ধরে রাখায় সব ক্লিয়ার দেখতে পারছি না।তাই হাত দিয়ে চোখ কচলে সামনের দিকে তাকাতেই আস্তে আস্তে সব কিছু চোখের সামনে ক্লিয়ার হতে লাগলো।সবকিছু ক্লিয়ার হতে চার দিকে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার। মুগ্ধ আর অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি আমি পুরো রুমটার দিকে! কারণ বাহিরে অন্ধকারে কেউ ঘুনাক্ষরেও টের পাবে না যে ভিতরে এই রুমটা এত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।পুরো রুমটাই ছোট ছোট ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো হয়েছে।না কোনো ফুল না অন্য কিছু শুধু ছোট ছোট ক‍্যান্ডেল দিয়ে সাজানো হয়েছে।ক্যান্ডেল গুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে এক জায়গায় হার্ট শেপ এর মতো দেখা যাচ্ছে।অন্য জায়গায় ক্যান্ডেল দিয়ে লিখা আই লাভ ইউ নিশি! যা দেখ আমি পুরাই থ মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না।

শুধু মুগ্ধ হয়ে সব দেখে যাচ্ছি রুমটা এত সুন্দর সাজানো দেখে আমি খুশি হয়ে চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছি তখনই আমি দেখলাম দক্ষিণের দিকের খোলা বারান্দার দরজা ভেদ করে আসছে ফুরফুরে দক্ষিণা বাতাস যে বাতাসে মিটমিট করে জ্বলছে ঘরে থাকা সব ক্যান্ডেলগুলো। আমি যখন ঘরটা ঘুরে ঘুরে দেখতে ব‍্যস্ত তখনই হঠাৎ নিহান স‍্যার আমার হাত ধরে হাটা ধরলেন আমিও বিনা বাক‍্যে পিছন পিছন হাটতে শুরু করলাম।আমার হাত ধরে নিহান স‍্যার আমাকে দক্ষিণের ঐ বারান্দার সামনে দাড় করালেন। এখানে এসে আমি আরও বেশি অবাক কারন বারান্দা টা রুমের থেকেও বেশি সুন্দর করে সাজানো।

খোলা বারান্দা এখান থেকে দেখা যাচ্ছে মুক্ত আকাশ আর আকাশে থাকা আমার মতো চন্দ্র বিলাশীদের প্রিয় থালার মতো জোছনা রাতের চাঁদ। আর সেই চাঁদের আলোয় বাড়ির পেছনে থাকা বাগান টাও দেখতে বেশ ভালো লাগছে।তার উপর বারান্দা টা রুম থেকেও সুন্দর করে সাজানো হয়েছে লাল রঙের হার্ট সেপ বেলুনে টইটম্বুর চার পাশ আর তার মাঝে রয়েছে দুটো বেতের মোড়া আর একটা ছোট সেন্টার টেবিল যার উপর রাখা আছে ঢাকা দেওয়া দুটো কফি মগ আর এক গুচ্ছ কালো গোলাপ! এগুলো দেখে তো আমি শুধু অবাকের উপর অবাক হচ্ছি।হঠ‍াৎই নিহান স‍্যার আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে মোড়ায় বসিয়ে দিলেন।আমি শুধু চুপচাপ ওনার কান্ড গুলো দু চোখ ভরে দেখছি।ওনি আমাকে বসিয়ে আমাকে আরও অবাক করে দিয়ে পাশ থেকে গিটার হাতে নিয়ে আমার সামনাসামনি বসে বললেন__

‘জানো আজ প্রায় অনেক বছর পর এই গিটার টা হাতে নিলাম!কলেজ লাইফে এইটা ছিল আমার নিত‍্য দিনের সঙ্গী কিন্তু বাহিরে যাবার পর আর তেমন এইসব গান বাজনার প্রতি টান ছিল না।আজ সকালে তুমি আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলে মনে আছে?’

আমি এতক্ষণ খুব মনো যোগ দিয়ে ওনার কথা গুলো শুনছিলাম হঠাৎই ওনার মুখে আমার করা সকালের সেই প্রশ্নের কথা শুনতেই আমি ওনার দিকে তাকাই।আমার তাকানো দেখে ওনি মুচকি হেসে বললেন__

‘তুমি আমাকে সকালে যেই প্রশ্ন করেছিলে আমি চাইলেই তোমাকে তখনই উত্তর টা দিতে পারতাম কিন্তু নিহান চৌধুরির প্রপোজ করা কি এতো সাধারণ ভাবে হবে নাকি একটু তো স্পেশাল হবেই তাই না?’

ওনার মুখে প্রপোজ এর কথা শুনে আমি কি রিয়েকশন দিবো তাই ভুলে গেছি।ওনি সকাল এই ভেবে উত্তর দেন নি আর আমি গাদার মতো সারা দিন কান্না কাটি করেছি দূর!

আমার ভাবনার ছেদ ঘটে গিটারের টুংটাং শব্দে।গিটারের শব্দ পেয়ে আমি ওনার দিকে তাকাতেই ওনি মুচকি হেসে বললেন__

‘এইটা হলো তোমার করা প্রশ্নের উত্তর’

এই বলেই ওনি গাইতে শুরু করলেন,,,,,

বোঝা বো কি করে তোকে,
কত আমি চাই
তোর কথা মনে এলে নিজেকে হারাই❤

বোঝা বো কি করে তোকে,
কত আমি চাই
তোর কথা মনে এলে নিজেকে হারাই❤

তোকেই মাথায় করে,
বেঁচে আছি তাই আমি,
তোকেই মাথায় করে বেঁচে আছি তাই।

আ,,,জ চুরি চুরি মন,
উড়ি উড়ি মন,ঘুড়ি ঘুড়ি মন।

আ,,,জ চুরি চুরি মন,
উড়ি উড়ি মন,ঘুড়ি ঘুড়ি মন?
(বাকি টা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)

মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে আমার তো এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না।ওনি আমাকে সত্যিই ভালোবাসেন।আমার ভাবনার ছেদ ঘটে আমার হাতে ওনার হাতের স্পর্শে । ওনি গান টা শেষ করে গিটার টা এক পাশে রেখে আমার দুটো ওনার হাতের মধ‍্যে নিয়ে বললেন__

‘দেখো নিশি আমি হয়তো সবার মতো করে তোমাকে হাটু মুড়ে প্রপোজ করতে পারব না।কারন আমি ভালোবাসা প্রকাশে বিশ্বাস করি না।আমি যদি তোমাকে ভালোবাসি তাহলে তুমি আমার আচরণ থেকেই তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা টা অনুভব করতে পারবে।তাই আমি তোমাকে ভালোবাসি বলব না ওইটা তো তুমি নিজেই বুঝে নিবে।আমি তো তোমাকে এইটা বলব,থাকবে কি সারা জীবন শুধু আমার হয়ে।’

ওনার কথা শুনে আমি কি বলব আমার তো মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না।

‘কি হলো বলো!’

নিশি কোনো কথা না বলেই ঝাপিয়ে পড়ল নিহানের বুকে।নিহানও মুচকি হেসে জরিয়ে ধরলো তার প্রেয়সী কে।নিশিকে এখনো চুপ থাকতে দেখে নিহান বলল__

‘মৌনতাকেই কি তাহলে সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ধরে নিব।’

নিশি নিহানের বুকে মুখ গুজেই বলল__

‘ আমি জানি না!’

বিনিময়ে নিহান শুধু মুচকি হেসে মনে মনে বলল__

#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি তো সেই কবেই হয়েছিলাম নিশি।অপেক্ষা ছিল শুধু তোমার মনে ও আমার জন‍্য কিছু আছে কিনা তা জানার।

#চলবে,,,

( আসসালামুআলাইকুম,কেমন আছেন সবাই গতকাল গল্প দিতে পারিনি তার জন‍্য আমি দুঃখিত।আমার খুব অসুস্থ তাই কাল নানির বাসায় ছিলাম আর ওখানে তো গল্প লিখার সুযোগ ও ছিল না।তাই আর গতকাল গল্প দিতে পারি নি।তো আজকের পর্বটা কেমন ছিল?রিচেক দেওয়া হয়নি তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সাপেক্ষ।ধন‍্যবাদ?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here