#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ19
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?
হঠাৎই কলিং বেল বেজে উঠতে আফরিন বলে__
‘ যাও দেখো ভাইয়া মনে হয় এসে গেছে!’
আফিনের কথা মতো নিশি গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে নিহান এসেছে। নিহান কে দেখে আফরিন বলল __
‘কিরে ভাইয়া কোথায় ছিলি তুই,এত দেরি হল যে?’
‘ আরে আর বলিস না রিয়াদ (নিহানের ফ্রেন্ড) হঠাৎ করে ফোন করে বললো জরুরি ভাবে দেখা করতে। আমি ভাবলাম হয়তো ভীষণ সিরিয়াস কিছু হবে তাই হয়তো এভাবে ডাকছে তাই নিশিকে বাড়ি না পৌছে দিয়েই দ্রুত বেরিয়ে পড়ি। ওর সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখি রিয়াদ একা না আমার আরো কিছু পুরান ফ্রেন্ডও আছে তারপর ওদের থেকে জানতে পারি হারামিগুলো নীলার কাছ থেকে জানতে পারে আমার বিয়ে হয়েছে তাই ওরা আমার বিয়ে উপলক্ষে ট্রিটের জন্য এমন জরুরি তলপ করেছিল!’
নিহানের কথা শুনে আফরিন বলল __
‘কিহ! তুই তোর বন্ধুদের পার্টি দিয়ে এসেছিস তাহলে তো আমাদেরও পার্টি দেয়া উচিত!’
‘হ্যাঁ আমি জানতাম তো তুই এমনই করবি তাই তো আমি সবার জন্য অলরেডি খাবার নিয়েই এসেছি।’
নিহানের কথা শুনে আফরিন ভ্রু কুচকে বলল__
‘ তুই কি আমাদের সাথে মজা করছিস?’
‘কেন, আমি তোর সাথে মজা করতে যাব কেন?’
‘ তুই যদি আমাদের জন্য সত্যি খাবার এনে থাকিস তাহলে কই সেগুলো তোর হাত তো খালি!’
‘ আরে গাদী খাবারগুলো তো গাড়িতে রেখে এসেছি! আয় আমার সাথে আয়!’
এই বলে নিহান আফরিনকে টেনে বাহিরে নিয়ে চলে যায়।নিহান আফরিনকে টেনে বাহিরে আনায় আফরিন বলে __
‘এই,তুই কি এমন খাবার এনেছিস যে দুইজন লাগে তুই একা কি পারতিস না এগুলো ভেতরে নিতে?’
আফরিনের কথা শুনে নিহান বললো __
‘এই তোর মুখটা বন্ধ করতো, তোর সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে তাই তোকে এখানে নিয়ে এলাম! এখন তুই চুপ করে আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোন। তোকে এখন একটা কাজ করতে হবে!’
নিহানের কথা শুনে আফরিন বলল__
‘ কি কাজ?’
‘ ডিনারের পর যখন নিশির রুমে যেতে যাবে ঘুমোতে, তখন তুই যেকোনো কায়দা করে বলবি যে ভাবি আজকে তুমি আমার সাথে ঘুমাবে! ‘
নিহনের কথা শুনে আফরিন ভ্রু নাচিয়ে বলল __
‘কেন, তুই হঠাৎ করে এমনটি করতে বলছিস কেন?’
আফরিনের কথা শুনে নিহান মেকি হাসি দিয়ে বলল__
‘ না বললে হয় না?’
‘ না হয়!’
‘ তুই যদি আমাকে সত্য কথা না বলিস তাহলে আমি কিন্তু তোকে হেল্প করব না!’
আফরিনের কথা শুনে নিহান বলল __
‘বলতেই হবে?’
‘ হ্যাঁ বলতেই হবে!’
‘তাহলে শোন, আসলে আজকে আমি নিশি কে প্রপোজ করব!’
এই কথা শুনে আফরিন উৎসাহিত হয়ে বলল__
‘ কিহ, সত্যি বলছিস তুই!তুই পারবি?আমার তো মনে হয় না পারবি দেখা যাবে প্রপোজ করতে গিয়েও ঝগড়া শুরু করে দিলি তোরা দুইজন।’
আফরিনের কথা শুনে নিহান ওর মাথায় একটা চাটি মেরে বলল__
‘ তোকে এত ভাবতে হবে না,যা বললাম তাই করবি আর শোন আজকে ঘুমানোর টাইমে দরজাটা খোলা রাখবি। এখন চল ভেতরে যাই আর কেউ যেন কিছু জানতে না পারে বলে দিলাম।’
এই বলে নিহান গাড়ি থেকে খাবারের প্যাকেট গুলো বের করে আফরিনের হাতে দিতেই আফরিন বাড়ির ভিতরে চলে যায়। আফরিন ভেতরে যেতেই নিহানও গাড়ি লক করে বাড়ির ভেতরে চলে যায়।
___________
ডাইনিং টেবিলের সামনে সকলের জন্য খাবার বারছিল নিশি আর মিসেস চৌধুরী। মিসেস চৌধুরী নিহানকে বাড়ির ভেতরে আসতে দেখে বললেন___
‘ নিহান যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো, এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে তোমার জন্য কারোই এখনো ডিনার হয়নি।’
মায়ের কথা শুনে নিহান বলল__
‘ ঠিক আছে আমি এক্ষুনি আসছি!’
এই বলে নিহান উপরে চলে যায়।
__________
ডাইনিং টেবিলে খাবার নামিয়ে সবাইকে খাবার পরিবেশন করতে মেসির চৌধুরীকে হেল্প করছে নিশি। নিশিকে এমন চুপচাপ থাকতে দেখে মিসেস চৌধুরী বললেন___
‘ নিশি তোর কি হয়েছে বল তো,কলেজ থেকে এসেছিস পর থেকে দেখছি কেমন চুপচাপ হয়ে আছিস। কি হয়েছে তোর?’
মিসেস চৌধুরীর কথা শুনে নিশি বলল __
‘আরে মামনি আমার আবার কি হবে?সকালে মা ফোন করে বলছিল একটু যেন ওই বাড়ি থেকে ঘুরে আসি আরোও বলছিল মার নাকি মনে হচ্ছে আমাকে কতদিন ধরে দেখেনা।আপুও কথা বলার সময় কান্না করছিল । তাই আমারও ও বাড়ির জন্য মন খারাপ করছিল আর কিছুই না।’
নিশির কথা শুনে মিসেস চৌধুরী মুচকি এসে বললেন__
‘ মায়ের মন তো সন্তানকে দেখার জন্য ছটফট করবেই, তুমি বরং এক কাজ কর কাল নিহানকে নিয়ে গিয়ে একবার ওই বাড়ি থেকে ঘুরে এসো।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে!’
‘ কি ঠিক আছে ভাবী?’
হঠাৎ টেবিলের সামনে এসে জিজ্ঞেস করে আফরিন। আফরিনের কথা শুনে নিশি বলল __
‘মা ফোন করে বলছিল একটু ওই বাড়ি থেকে ঘুরে আসার জন্য। এই শুনে মামনি বলল কাল যেন আমি আর স্যার একটু ঘুরে আসি তুমি যাবে আমাদের সাথে?’
নিশির কথা শুনে আফরিন খুশি হয়ে বলল__
‘ হ্যাঁ যাব, আমার যে কি ভালো লাগে না ওই বাড়ি যেতে!’
ওরা কথা বলছিল তখনই ওখানে এসে উপস্থিত হয় নিহান আর মিস্টার চৌধুরী! তারপর সবাই মিলে ডিনার শেষ করে।
________
‘ভাবি আজকে তুমি আমার সাথে ঘুমাবে?’
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মিসেস চৌধুরীর হাতে হাতে সব গুছিয়ে যখন নিশি উপরে যাচ্ছিল তখনই কথাটা বলে আফরিন।আফরিনের কথা শুনে নিশি বললো__
‘আজ হঠাৎ আমার সাথে ঘুমাতে মন চাইলে, কি ব্যাপার বলতো!’
আফরিন বেচারিত পড়ে গেল মহাজালায় এখন ও নিশি কে কি বলবে।আফরিন নিশির দিকে চেয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলল__
‘ আসলে কি বলতো গতকাল হরাল মুভি দেখে ঘুমানোর সময় খুব ভয় পেয়েছিলাম।মনে হচ্ছিল এই বুঝি কেউ ধরতে এলো!তাই আজকে তোমাকে সাথে নিয়ে ঘুমাবো ভাবছি!’
আফরিনের কথা শুনে নিশি মুচকি হেসে বলল__
‘ চল ননদিনী রাই বাগিনী আজ তাহলে তোমার সাথেই ঘুমাবো!’
‘ হ্যাঁ চলো!’
এই বলেষনিশা আর আফরিন চলে গেল আফরিনের ঘরে।
____________
‘আচ্ছা ভাবি তুমি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেছো?
আফরিনের সাথে আফরিনের রুমে শুয়ে ছিল নিশি তখনই আফরিন এই প্রশ্ন করে নিশি কে। আফরিনের কথা শুনে নিশি বলল __
‘আরে ধুর কি যে বল না ভালোবাসা তাও আমি আমার দ্বারা এসব সম্ভব না!’
‘সত্যি বলছো?’
‘হুম, এখন কথা না বাড়িয়ে ঘুমাও অনেক রাত হয়ে গেছে’
নিশির কথা শুনে আফরিন বলল __
‘ তুমি কি সত্যিই কাউকে ভালোবাসো না?’
‘ বললাম তো না!’
‘ ভাইয়া কেউ না?’
আফরিনার কথা শুনে নিশি আফিমের থেকে মুখ ঘুরিয়ে বলল___
‘ হুহ,তোমার ওই বদরাগী বদমেজাজি ভাইকে ভালোবাসবো,ইম্পসিবল! এখন কথা না বাড়ি চুপচাপ ঘুমাও তো!’
এই কথা বলে নিশি আফরিনের অপর পাশ ফিরে চোখ বুজে শুয়ে পড়ে।
________
জানালার কার্নিশ বেয়ে আসছে ফুরফুরে বাতাস আর সেই বাতাসে বারংবার উড়ে যাচ্ছে আফরিনের রুমের জানালার পর্দা গুলো আর সেই পর্দা গুলো উড়তেই আকাশে থালার মতো ওঠা চাঁদের এক ফালি আলো আসছে রুমে যা অন্ধকার রুম কে বেশ খানিকটা আলোকিত করে রেখেছে। আফরিনের রুমে বেডে শুয়ে নিশি সেই রাতের স্তব্ধ আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে__
‘সত্যিই কি আমি নিহান স্যার ভালোবাসি না?তাহলে কেন ওনার প্রতি আমার এত দুর্বলতা হলো? কেন আমি ওনার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারি না? কেন ওনার প্রতীক্ষায় বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছটফট করলাম কেন?ভালোবাসা কি তা আমি জানিনা যদি কারো অপেক্ষার প্রহর গুনাকে ভালোবাসা বলে তাহলে হ্যাঁ আমি ওনাকে ভালোবাসি! যদি তার অনুউপস্থিতিতে তার জন্য ছটফট করা কে ভালোবাসা বলে তাহলে হ্যাঁ আমি ওনাকে ভালোবাসি!যদি তার পাশে অন্য কাউকে দেখে সহ্য করতে না পারাকে ভালোবাসা বলে তাহলে হ্যাঁ আমি ওনাকে ভালোবাসি। কিন্তু উনিতো আমাকে ভালোবাসে না।’
এইসব ভাবতে ভাবতে নিশি কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে নিজেও জানে না।
_____________
রাত দুইটা,,,,
কারো হৃদস্পন্দনের শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায় নিশির। ঘুম ভাঙতেই নিশি অনুভব করে যে শূন্যে ভাসছে।এমন হওয়াতে চোখ খুলে দেখে নিশি আফরিনের ঘরে নেই। অন্ধকার বারান্দা দিয়ে কেউ ওকে কোলে করে কোথাও একটা নিয়ে যাচ্ছে। এই দেখে ভয় পেয়ে নিশি যখন চিৎকার দিতে যাবে তখন দেখে যে তার মুখ কিছু একটা দিয়ে বাধা। এ দেখে নিশি আরো ভয় পেয়ে হাত পা ছুটাছুটি করতে থাকে।এই দেখে নিহান নিশির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে__
‘নিশি ইট’স মি!আমি তোমার একমাত্র হাসবেন্ড।’
হঠাৎই নিহানের কন্ঠস্বর কানে আসায় নিশি শান্ত হয়ে আবাক দৃষ্টি তে চেয়ে আছে নিহানের দিকে।নিহান করতে চাইছেটা কি তাই বুঝার চেষ্টা করছে।
#চলবে,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন?)