#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ17
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?
জানলার কার্নিশ বেয়ে আসছে মিষ্টি রোদের আলো আর সেই আলো এসে আছরে পরছে ঘুমন্ত নিশির চোখে মুখে।রোদের তাপ চোখে পড়তে ঘুম ভাঙতেই নিশি নিজেকে গতকালের মতো নিহানের বাহুডোরে আবিষ্কার করে।ঘুমন্ত নিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে নিশি মনে মনে বলে___
‘ আমার এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না এই বদরাগী লোকটাই আমার স্বামী।যার সাথে আমার দেখা হলেই ঝগড়া হতো এখন তার সাথেই আমার সারা জীবন থাকতে হবে!’
নিশির ভাবনার ছেদ ঘটে এলামের শব্দে এলামের শব্দে নিহান একটু নড়েচড়ে উঠতেই নিশি তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে নেয়।এলামের শব্দে নিহানের ঘুম ভাঙ্গতেই নিহান চোখ খুলে দেখে আজও নিশি তার বুকের মাঝে গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। নিহান মনে করে আজও সে নিশির আগে উঠেছে তাই নিহান নিশির মুখের দিকে চেয়ে বলে__
‘কি কপাল আমার নিজেরই বিয়ে করা বউকে কেমন চোরের মত দেখতে হয় না। হলে যে পাজি মেয়েকে বিয়ে করেছি ওকে কেন দেখলাম তার জন্য ঝগড়া শুরু করে দিবে।’
এই বলে নিহান মুচকি এসে খুব সাবধানে নিশি শুইয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।নিহান ওয়াশরুমে যেতেই নিশি চোখ খুলে উঠে বসে মনে মনে বলে ___
‘এটা কি হলো! নিহান স্যার এটা কি বলে গেলেন তাহলে কি উনি আমাকে ভালোবাসেন! এটা কিভাবে হবে উনি তো আমাকে তেমন পছন্দই করেন না। উফ ওনার মনে চলছে টা কি কিছুই বুঝতে পারছি না!’
নিহান ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখে নিশি বেডে বসে বসে কি যেন ভাবছে নিশিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে নিহান বলল__
‘ কি হলো এখনো বসে আছো কেন?কলেজে না যাওয়ার প্ল্যান করলে থাকলে ভুলে যাও সামনেই তোমার ইয়ার চেঞ্জ এর এক্সাম আছে তাছাড়া অনেক দিন ছুটি তো কাটালে তাই আর কলেজ ফাকি দেওয়া যাবে না,যাও রেডি হয়ে নাও।’
নিহানের কথা শুনে নিশি বলল__
‘ কলেজ তো আজ আমি এমনিতেই যাব,আপনিই তো এতক্ষণ ফ্রেশ হচ্ছিলেন তাই আমি বসে ছিলাম! আসছে আমাকে জ্ঞান দিতে!’
এই বলে নিশি কাবাড থেকে ড্রেস নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।নিশি যেতেই নিহান মনে মনে বলে__
‘ এই মেয়ে কোনো দিনও শুধরানোর নয়!ভালো কথা বললেও উল্টো কথা শুনিয়ে চলে যায়। এই মেয়েকে যে আমি সারা জীবন কিভাবে সামলাবো আল্লাহই জানেন।’
এই বলে নিহান রেডি হয়ে নিচে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নিজের বই খাতা গুছিয়ে নিল নিশি যেগুলো আসার সময় বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিল। সব গুছিয়ে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে নিশিও চলে গেল নিচে। ডাইনিং টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে সবার জন্য নাস্তা রেডি করছিলেন মিসেস চৌধুরী। নিশি কে নিচে নামতে দেখে মিসেস চৌধুরী বলল__
‘ আয় বসে পর নাস্তা করে একেবারে নিহানের সাথে বেরিয়ে পড়বি ‘
‘আরে মামনি তার কোন প্রয়োজন নেই আমি একাই চলে যেতে পারবো!’
‘কেন,তুই একা যাবি কেন তোরা তো একই কলেজে যাবি তাহলে তুই একা যাবি কেন?বেশি কথা না বশে চুপচাপ খেতে বস।’
মিসেস চৌধুরীর কথা মতো যেই নিশি টেবিলে বসতে যাবে তখনই নিহানের ফুপ্পি মিসেস জেসমিন বলে___
‘ এই মেয়ে! কেমন বাড়ির বউ তুমি দেখছো তোমার শাশুড়ি একা একা কাজ করছে আর তুমি ড্যাং ড্যাং করে রেডি হয়ে এসে খেতে বসে গেছো’
মিসেস জেসমিনের কথা শুনে নিহান রেগে টেবিলে এক ঘুষি দিয়ে বলল___
‘ফুপ্পি এবার তুমি তোমার লিমিট ক্রস করছো তোমার সাহস হলো কি করে আমার বউকে এমন কথা শুনানোর।তুমি,,’
নিহান আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিশি নিহানকে থামিয়ে মাথায় নিচু করে বলে__
‘ উনি তো ঠিকই বলছেন স্যার, আমার তো সত্যিই উচিত ছিল মামনি কে হেল্প করার।’
নিশির কথা শুনে মেসেস চৌধুরী বললেন__
‘না তার কোন প্রয়োজন নেই,আর আপু(মিসেস জেসমিন কে উদ্দেশ্য করে) তুমি এতদিন আমাকে অনেক কথাই শুনিয়েছ তার জন্য না আমি তোমাকে কিছু বলেছি না তোমার ভাই তোমাকে কিছু বলেছে কিন্তু এখন যদি তুমি আমার ছেলের বউ কে ও কথা শোনাও তাহলে কিন্তু আমি চুপ থাকবো না।
‘কিহ, তুমিও আজকে এই মেয়ের জন্য আমাকে কথা শুনালে? আমি আর এক মুহূর্ত ও থাকবো না এই বাড়িতে!’
মিসেস জেসমিনের কথা শুনে নিহান বলল __
‘মোস্ট ওয়েলকাম তোমার ইচ্ছে হলে তুমি এক্ষুনি চলে যেতে পারো কেউ তোমাকে বাধা দিবে না।’
‘ কি তুই এই মেয়ের জন্য আমাকে এইভাবে চলে যেতে বলতে পারলি? ‘
‘হ্যাঁ পারলাম ‘
নিহানের কথা শুনে মিসেস জেসমিন রেগে মেগে টেবল থেকে উঠে চলে যায় উনি যেতেই নিহান নিশি কে বলে__
‘ তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন?চুপচাপ ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট করে চলো আমার সঙ্গে!’
নিশি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে নিহান ধমক দিয়ে বলে __
‘তোমাকে কি বললাম শুনতে পাওনি?’
বিহানের ধমক শুনে নিশি কোন মত একটু খেয়ে উঠে যায়।
___________
গাড়িতে চুপচাপ মন খারাপ করে বসে আছে নিশি। নিশিকে এইভাবে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে নিহান বলল__
‘ নিশি তোমাকে আমি গতকালও বলেছি তোমাকে এমন শান্তশিষ্ট্য মানায় না। তুমি আগে যেমন সবাইকে মুখের উপর জবাব দিয়ে দিতে তেমনি করবে তোমাকে তেমন ভাবেই মানায়।আমি আবার আগের নিশিকে দেখতে চাই যে সবাইকে সঠিক জবাব দিতে জানে।’
নিহানের কথা শুনে নিশি নিহানের দিকে তাকাতেই নিহান বলে ___
‘আসলে কি বলতো আমি তোমাকে আমার জন্যই আগের মত হতেে বলছি।’
‘মানে?’
‘ মানে তুমি যদি ঝগড়া করা বন্ধ করে দাও তাহলে আমি কার সাথে ঝগড়া করবো বলো!আমি তো ঝগড়া না করার অভাবে তুমি যেন আমাকে কি বলো বদরাগী,তাই তো?আমি তো আরও বদরাগী হয়ে যাব!’
‘ তাহলে আপনি স্বীকার করছেন আপনি বদরাগী!’
নিশির কথা শুনে নিহান কিছু ভাবার ভান করে বলে__
‘ মনে হয় আমি একটু রাগীই!’
এই কথা বলেই নিহান হেসে দেয় আর নিশি ও নিহানের সঙ্গে সঙ্গে হেসে দেয়।নিশি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে যে নিহান ইচ্ছে করে ওকে হাসাতে এসব করছে তাই নিশি নিহানকে বলে__
‘ নিলয় ভাইয়া ঠিকই বলেছিল আপনি সত্যিই খুব ভালো মনের মানুষ, আপনি আমার মন ভাল করতে এসব বলছেন তাই না।’
‘ হঠাৎই নিহান গাড়ি ব্রেক করে বলে নামো আমরা কলেজে চলে এসেছি আর আমি সত্যিই নিজের কথা ভেবে বলেছি! অন্য কিছুই না যাও সোজা ক্লাসে যাবে।’
এই বলে নিহান গাড়ি লক করে নিজের কেবিনের দিকে চলে যায়।আর নিশি ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে নিহানের যাওয়ার দিক চেয়ে মনে মনে বলে__
‘ কেন জানি স্যার আমার মনে হচ্ছে আপনি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছেন!’
এই কথা ভেবেই নিশি খুশী হয়ে ক্লাসের দিকে যেতে থাকে।
‘ এই নিশি শোন!’
ক্লাসে যাওয়ার সময় কারো ডাক শুনে নিশি পিছন ফিরে দেখে নদী আর রুহি দাঁড়িয়ে আছে। ওদের দেখেই নিশি দৌড়ে গিয়ে ওদের জড়িয়ে ধরে। নিশি নদী আর রুহির কাছে যেতেই নদী বলে __
‘কিরে কি অবস্থা তোর সেই যে তোর বিয়ের দিন দেখলাম তারপর তো তুই আর যোগাযোগ করলি করলি না।আমরাও ভাবলাম হঠাৎ করে বিয়ে হয়েছে কি হবে না হবে তাই আর নিজ থেকে ফোন করিনি তা কেমন আছিস তুই সব ঠিকঠাক আছে তো?’
নদীর কথা শুনে নিশি বলল__
‘সবকিছু ঠিকঠাকই আছে শুধু নিহান স্যারের এক পাজি ফুপ্পি আছে উনি শুধু সিরিয়ালের শাশুড়িদের মতো আমাকে উঠতে বসতে কথা শোনায়!’
নিশির কথা শুনে রুহি বলল__
‘ সে কি তা মিহান স্যার বা তোর শাশুড়ি ওনারা কিছু বলেন নি?’
‘ স্যার তো ওনাকে রেগে মেগে অনেক কথাই শুনিয়েছেন ‘
তারপর নিশি এই দুইদিন হয়ে যাওয়া সব ঘটনাই নদী আর রুহিকে বলে।সব শুনে নদী বলে__
‘ দেখেছিস আমি বলেছিলাম না নিহান স্যার অনেক ভালো মনের মানুষ!’
‘ হ্যাঁ হয়েছে চল ক্লাসে যাই না হলে ওই টাকলু স্যার আমাদের বারোটা বাজাবে ওনার ক্লাসই প্রথমে।’
‘ হ্যাঁ চল ‘
তারপর নিশি নদী রুহী কথা বলতে বলতে ক্লাসে চলে যায়।
__________
‘মিসেস চৌধুরী বলো নেন গেইটের সূত্র টা বলো’
ক্লাসে বসে বসে বোর হচ্ছিলাম আমি কারণ এই আইসিটি ক্লাসে কি কি বুঝানো হয় সবই আমার মাথার উপর দিয়ে যায়।তাই চুপচাপ বসে ছিলাম কারণ ক্লাসের নিহান স্যার আছে যদি নদীদের সাথে গল্প করি আর ওনি দেখে ফেলেন তাহলে নিশ্চিত কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখবে! তাই চুপচাপ বসেছিলাম হঠাৎই নিহান স্যারের মুখে মেসেজ চৌধুরী নামটা শুনে ক্লাসের সবাই সহ আমিও বেশ অবাক হয়ে স্যারের দিকে তাকাই।আমি স্যারের দিকে তাকাতেই স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন__
‘ কি হলো আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছো নেন বলো গেইটের সূত্রটা।’
আমাকে মিসেস চৌধুরী বলে সম্বোধন করায় পুরো ক্লাস অবাক হয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে।আমিও বিস্ময়কর কণ্ঠ নিয়ে বললাম ___
‘মানে স্যার আপনি কি আমাকে বলছেন?’
‘হ্যাঁ তোমাকেই বলছি ‘
‘স্যার আমি অধ্যায়ের কিছুই পারি না।’
আমার কথা শুনে নিহান স্যার বললেন___
‘ তাহলে বাইনারি অধ্যায় ওখান থেকে একটা অংক দিচ্ছি ওইটা সলভ করে দেখাও।’
স্যারের কথা শুনে তো আমি গেলাম ফেঁসে কারণ আমি আইসিটি কোন অধ্যায়েই পারি না ঠিকমত তাই আমি নিচুস্বরে বললাম __
‘ স্যার আমি নেনগেইট,ফ্যানগেইট বাইনারি টাইনারকি কিছুই পারি না।’
আমার কথা শুনে নিহান স্যার বললেন__
‘ কিছুদিন পরে না তোমার ইয়ার চেঞ্জ এক্সাম এগুলো কিছু না পারলে তো তুমি আইসিটিতে ফেল করবে।’
নিহান স্যারের কথা শুনে আমি ভাব নিয়ে বললাম__
‘ আরে স্যার চিল করুন আই সি টি আমাদের চয়েজিং সাবজেক্ট তাই ফেইল করলেও সমস্যা নেই।’
আমার কথা শুনে নিহান স্যার রেগে মেগে বললেন__
‘আর ইউ ম্যাড!চয়েজিং সাবজেক্ট বলে তুমি এইটা ফেল করবে? তাহলে তো এইচএসসি এক্সামে আর পাস করা লাগবে না ফেল করে ঘরে বসে থাকতে হবে।’
আমি স্যারের কথা শুনে ভাব নিয়ে বললাম__
‘ স্যার ফেল করলে সমস্যা নাই আপনি আমাকে মাত্রই না মিসেস চৌধুরী বলে ডাকলেন।তার মানে আপনি জানেন আমার হাজব্যান্ড কে? আমার হাজব্যান্ড আমাকে দিয়ে কাজ করে খাওয়াবে না সো প্যারা নাই চিল।’
আমার কথা শুনে নিহান স্যার রেগে মেগে বললেন__
‘ তোমার হাজব্যান্ড তোমাকে দিয়ে কাজ করে খাওয়াবে না,তাই বলে তুমি ফেল করবে?’
‘যদি পড়া না মাথায় ঢুকে তাহলে কি করব হ্যাঁ!’
‘ পড়াশোনা ঢুকবে কি করে সারাদিন তো জানো কিভাবে ঝগড়া করতে হয়,,’
আর কিছু বলার আগেই ক্লাসের ঘন্টা পড়ে যায় তাই নিহান স্যার আর কিছু না বলেই রেগে চলে যায়। উনি যেতেই আমি নদী আর রুহিকে উদ্দেশ্য করে বলি___
‘ দেখলি তো আমাকে তো কেমন অপমান করে গেলেন, দেখ সারা ক্লাসের স্টুডেন্টরা আমার দিকে কিভাবে চেয়ে আছে। ধুর আর ক্লাসই করবো না দিল আমার হ্যাপি মুডের বারোটা বাজিয়ে,চল ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দেই।’
আমার কথা শুনে নদী বলে__
‘ হ্যাঁ রুহি চল ক্যান্টিনে বসে কি আড্ডা দি,দুইদিন হবে কথা বলি না মনে হচ্ছে কতকাল ধরে যেন কথা বলি না। চল আড্ডা দিলে একটু ভালো লাগবে!’
এই কথা বললে নদী,রুহি আর নিশি চললো ক্যান্টিনের দিকে।
#চলবে,,