#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি ?
#পর্বঃ16
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা ?
চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে নিশি নিহান আর নিহান কে জড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে।
কিছুক্ষণ আগে,,,,
নিশি আর নিহান বড় একটা শপিং মলে এসে ঘুরে ঘুরে নিশির জন্য ড্রেস কিনে যাচ্ছিল রেস্টুরেন্টের দিকে লাঞ্চ করতে। হঠাৎই কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে নিহান বলে চেঁচিয়ে নিহানকে জড়িয়ে ধরে। নিহান আর মেয়েটাকে এভাবে দেখে নিশি মনে মনে বলল__
‘ এই বজ্জাতটা তো দেখছি শুধু রাগীই না বদমাইশ, ক্যারেক্টার লেসও! ঘরে নতুন বউ রেখে থুরি বউকে দাঁড় করিয়ে রেখে অন্য মেয়েকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।’
_______
হঠাৎই কোন একটা মেয়ে এসে জড়িয়ে ধরায় নিহানও বেশ অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তাও আবার পাবলিক প্লেসে তাই নিহান দ্রুত মেয়েটাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল ___
‘হাউ ডেয়ার ইউ?আপনার সাহস,,,, নীলা তুই!! কেমন আছিস?ও মাই গড আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না এত বছর পর আমাদের আবার দেখা হবে।’
নিহানের কথা শুনে মেয়েটিও মুচকি হেসে বলল__
‘ আমারও বিশ্বাস হচ্ছে না দ্যা নিহান চৌধুরীর সাথে আমার আবারও দেখা হবে।জানিস আমার এখনো মাঝে মাঝে কলেজ লাইফের সেই দিন গুলোর কথা খুব মনে পড়ে।কি সুন্দরই না ছিল দিন গুলো,সে যাই হোক তা কবে এলি বিদেশ থেকে?’
‘ এই তো কয়েকদিন আগে এসেছি,মাসখানেক হবে হয়তো।তা তোর কি অবস্থা দিনকাল কেমন যাচ্ছে?’
‘ এইতো যাচ্ছে কোন রকম,স্বামী সংসার নিয়েই আছি।’
‘ কিহ!তুই বিয়ে করে নিয়েছিস আর আমাদেরকে বললিও না, দিস ইজ নট ফেয়ার!’
‘হুম,তোকে বললে তো তুই তোর পড়াশোনা সব ছেড়েছুড়ে আমার বিয়ে খেতে আসছিস। তা শপিংমলে কেন এসেছিস কি কেনাকাটা করতে এসেছিস?’
‘আরে আমি তো নিশির জন্য,,,,,’
নিশির কথা বলতেই নিহানের মনে পরে নিশির কথা। নিশির কথা মনে পড়তেই নিহান কপালে হাত দিয়ে কপাল ডলতে ডলতে বলে__
‘ইস,,সিট! দেখেছিস তোর সাথে কথা বলতে বলতে আমি এতটাই বিভোর হয়ে গিয়েছিলাম যে আমার সাথে করে যে কাউ কে এনেছি আমার মনেই ছিল না। মিট মাই ওয়াইফ নিশি!’
এই বলে নিহান পিছন ফিরে দেখে নিশি ওর পেছনে নেই।নিশিকে না দেখে নিহান বলল__
‘কোথায় চলে গেল নিশি?আমার সঙ্গেই তো ছিল!’
নিহানের কথা শুনে নীলা বলল__
‘ হোয়াট তুই বিয়ে করে নিয়েছিস! আগে বলবি তো কই ভাবি কই?’
‘ এক্ষুনি তো আমার সাথেই ছিল,কোথায় গেল?’
‘কোথায় গেল মানে কি! এত বড় মলে না বলে কোথায় চলে গেল।এক কাজ কর তুই বরং একটা ফোন কর।’
নীলার কথা শুনে নিহান বেশ চিন্তিত কন্ঠে বলল__
‘আমার কাছে তো ওর ফোন নাম্বার নেই!’
নিহানের কথা শুনে নীলা বলল__
‘মানে?তোর কাছে তোর বউ এর ফোন নাম্বার নেই?’
‘না আসলে আমার সাথে ওর গতকালই বিয়ে টা হয়েছে,’
তারপর নিহান কিভাবে ওদের বিয়েটা হয় সব নিলা খুলে বলে।সব শুনে নীলা নিহাহকে চিন্তিত দেখে বলল___
‘ চিন্তা করিস না, দেখ হয় তো এইদিকেই আছে,আচ্ছা আমি তাহলে গেলাম আমার লেট হয়ে যাচ্ছে।ও হ্যাঁ! তোর ফোন নম্বরটা দে আমি পরে তোকে ফোন করে সব জেনে নিব।’
তারপর নিহান নীলাকে ফোন নাম্বার দিতেই নীলা নিহানকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়।
________
হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছে নিহান নিশিকে,নিহান নিশিকে এদিক ঐদিক খুঁজতে খুঁজতে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে পড়ে।হঠাৎই নিহানের চোখ পরে রেস্টুরেন্টের ভিতরে থাকা একটা টেবিলের ওপর।
‘ঠাস,,, হাউ ডেয়ার ইউ!আমাকে না বলে তুমি এখানে কি করছো ইডিয়ে! তুমি এখানে কার পারমিশন নিয়ে এসেছ?’
একটু আগে,,
খুব মজা করে বসে বসে পিজ্জা খাচ্ছিলাম আমি। হঠাৎই কোথা থেকে ঝড়ের গতিতে বজ্জাতটা এসে আমাকে টেনে দাঁড় করিয়ে দিল আমার গালে এক চর বসিয়ে। ঘটনাটা এত দ্রুতই হলো যে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না,গালে হাত দিয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি নিহান স্যারের মুখের দিকে! কি হলো সব যেন আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
‘ কথা বলছো না কেন ইডিয়েট!’
ওনার ধমকে আমি আমার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসি।
‘ কি হলো বলো!’
উনার ধমক শুনে আমি তেতে ওঠে বললাম __
‘ আপনি আমাকে মারলেন কেন? ‘
‘তুমি আমাকে না বলে এখানে কেন এলে? তুমি জানো আমি কতটা টেনশনে পড়ে গেছিলাম!তোমাকে ওখানে না দেখে হন্যে হয়ে এতক্ষন খুঁজছিলাম তোমাকে।’
নিহানের কথা শুনে নিশি গালে হাত রেখেই ভ্রু নাচিয়ে বলল__
‘ আপনার কি আদৌ আমার কথা মনে ছিল? ওই মেয়েকে পেয়ে তো আপনি এতটাই বিভোর ছিলেন যে আপনার পাশে কি আদৌ কেউ ছিল নাকি সেটাই আপনি ভুলে গেছেন। আর আমার খুব খিদে পেয়েছিল তাইতো আমি আপনাকে ডিস্টার্ব না করে এখানে চলে এলাম।’
‘তুমি যে আমাকে না বলে এলে আমি যদি তোমাকে খুঁজে না পেতাম?’
‘ খুঁজে না পেলে কি আর করতেন বাড়িতে চলে যেতেন। আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে আমি যেতে পারতাম না বাড়িতে একা একা!তাই বলে আপনি আমাকে এই পাবলিক প্লেসে মারবেন? আমি আর থাকবোই না আপনার সাথে আমি এক্ষুনি চলে যাব আমার বাসায়।’
এই বলে আমি খাবারের বিলটা টেবিলে রেখে যেই হাঁটতে শুরু করলাম তখনই নিহান স্যার আমার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়ির সামনে এনে বলে __
‘চুপচাপ গাড়ি তে ওঠো।’
‘ না আমি আর আপনার সাথে আপনার বাড়িতে যাব না।’
‘তোমাকে তো আমি,,’
এই বলে নিহান নিশিকে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে নিজেও গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।আর গাড়ি চলতে থাকে তার আপন গতিতে। গাড়িতে মুখ ফুলিয়ে বাহিরের দিকে চেয়ে বসে আছে নিশি আর আপন মনে ড্রাইভ করছে নিহান।হঠাৎই নিহান বলল__
‘ আই এম সরি নিশি!আসলে একে তো তোমাকে অনেক খুজেও পাচ্ছিলাম না যখন পেলাম তখন দেখলাম তুমি আমাকে টেনশনে ফেলে ওখানে বসে বসে ছিলে তাই রাগের মাথায় কি করেছি আমি নিজেও জানিনা। তার জন্য সত্যিই আই এম সরি!’
নিহানের কথা শুনে নিশি মুখ ভেংচি কেটে আবারো বাহিরের দিকে তাকায়।
___________
‘ কি হলো তুমি নামছে না কেন না?’আমরা তো বাড়ি এসে গেছি।’
‘না, আমি নামবো না আমি আমার বাড়িতে চলে যাব’
‘দেখো নিশি তুমি কিন্তু এবার আমাকে রাগিয়ে দিচ্ছো!’
‘ হ্যাঁ আমি তো জানিই আপনি একটা বদমেজাজি,এটা বলার কি আছে? আচ্ছা আপনার এই রাগ কি শুধু আমার বেলাইতেই থাকে কই ওই মেয়ের সাথে তো এত রাগ দেখালে না।কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছিলেন!’
নিশির কথা শুনে নিহান মুচকি এসে বলল __
‘কেন তুমি কি জেলাস?’
‘হোয়াট দা ফাও কথা!আমি কেন ওই মেয়ের উপর জেলাস ফিল করতে যাব?’
নিশি কথা শুনে নিহান কিছুটা ভাব নিয়ে বলল __
‘কেন আমাকে নিয়ে, নীলা আমাকে হাগ করলো তাই তো তুমি রেগে আছো।’
নিহারের কথা শুনে নিশি গাড়ি থেকে বেরিয়ে বলল__
‘ আমার কি কোনো খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে আপনাকে নিয়ে জেলাস হতে যাব!’
‘ কেন হতেই পার যতই হোক তোমার হাসবেন্ড কে হাগ করেছে বলে কথা।’
‘ হাহ,, আপনাকে হাগ কেন বিয়ে করে নিলেও আমি কিছু বলবো না।দেখি সড়েন সামনে থেকে!’
এই বলে নিশি বিড় বিড় করতে করতে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।নিশি যেতেই নিহান মুচকি হেসে বলল___
‘ জেলাস তো তুমি হয়েছই, শুধু তা স্বীকার করছ না!’
এই বলে নিহান নিশির জন্য কিনা ড্রেস গুলো নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে যায়।
_______
‘বদমাশ, দেখিস তোর কোনদিন ভালো হবে না। আমার মত নাদান একটা মেয়েকে তুই মারলি না এই শোধ যদি আমি না নি তাহলে আমার নামও নিশি না।তোকে তো একদিন না একদিন আমি মজা ঠিকই দেখাবো।’
নিহানের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে বাড়িতে ঢুকছিল নিশি।নিশিকে বিড়বিড় করতে দেখে আফরিন বলল __
‘কি হয়েছে ভাবি?কি বলছো!’
আফরিনের কথা শুনে নিশি বলল__
‘ কই!কই কিছুই নাতো!’
‘ওহ্ আমার কেন জানি মনে হল তুমি কিছু বলছিলে!’
‘না, তেমন কিছুই না!’
‘ ও,, তাহলে কি কি শপিং করলে?’
‘ওইগুলো পরে দেখাবো এখন চলো তোমার সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দেই। এমনিতেই এখন আমার মুড অফ!’
‘কেন তোমার মুডের আবার কি হলো?’
‘ সব বলবো,চলো এই বলে নিশি আফরিনকে নিয়ে চলে যায় আফিমের ঘরে জমিয়ে আড্ডা দিতে।
_________
রাতে,,,,,
‘আমি আর আপনার সাথে ঘুমাবো না!’
নিশির কথা শুনে নিহান বলল__
‘ তাহলে নিচে বা সোফায় ঘুমাও তোমাকে বাধা দিয়েছে কে?’
‘আমি নিচে বা সোফায় ঘুমাতে পারি না আমাকে অন্য কোনো ঘরের ব্যবস্থা করে দিন। ‘
‘এখন আমি তোমার জন্য এত রাতে কোথা থেকে ঘরের ব্যবস্থা করে দিব!’
‘কেন আপনাদের এত বাড়িতে কি ঘরের অভাব পড়েছে?’
‘না, তোমার যদি অন্য ঘরের প্রয়োজন হয় তাহলে তুমি আফরিন বা আম্মুকে বলো। ওনারা ব্যবস্থা করে দিবে আমাকে ডিস্টার্ব করো না কাল সকালে আবার কলেজ যেতে হবে।কালকে থেকে তো আমাদের ছুটি শেষ সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি ওকে!’
এই বলে নিহান উল্টো পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল আর নিশি মনে মনে বলল __
‘বেটা খচ্চর আমি জানতাম তুই আমার সাথে এমনই করবি এখন আমি এত রাতে গিয়ে মামনিকে কিভাবে বলব অন্য রুমের কথা! আজকেই তোর সাথে লাস্ট কালকে আমি ঠিকই মামনি কে বলব অন্য রুমে কথা, হু!’
এই বলে নিশিও গিয়ে শুয়ে পড়ে বেড়ের এক সাইডে।
সকালে,,,,,
#চলবে,,,,