ভরা ক্লাস রুমে সকলের সামনে প্রচন্ড রাগ নিয়ে কান ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি আমি।আর আমার সামনে ফুল এটিটিউড নিয়ে বুকে দুই হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে,আমাদের নতুন আইসিটি টিচার মিস্টার নিহান চৌধুরী। সরি, বদরাগী সাদা বিলাই!!
কিছুক্ষণ আগে,,
ক্লাসে টিচার নেই তাই আমি আর আমার দুই বান্ধবী নদী আর রুহি মিলে গল্প করছি। আমাদের গল্পের টপিক হচ্ছে, আমাদের আরেক ফ্রেন্ড মিতু ওকে আমাদের কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের রোহান ভাইয়া প্রেমপত্র দিয়েছে। মিতু আজ কলেজে আসেনি,তাই রোহান ভাইয়া আমার কাছে চিঠিটা দিয়েছেন মিতুকে চিঠিটা দিয়ে দেওয়ার জন্য। আর তা নিয়েই চলছিল আমাদের আড্ডা।আমাদের কথার মাঝে হঠাৎ ক্লাসে প্রবেশ করলো আমাদের কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার। আর তার সাথে ক্লাসে প্রবেশ করল আমার চাচাতো ভাই এর বদ রাগী বন্ধু নিহান চৌধুরী।তাকে দেখে আমি একটু না অনেকটাই অবাক কারণ আমার জানামতে এই কলেজ ওনার কোন কাজই নেই।তাহলে এই বদ রাগী বজ্জাত লোকটা এখানে কি করছে?আমার ভাবনার ছেদ ঘটে প্রিন্সিপাল স্যারের ডাকে __
‘এই মেয়ে! তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন?বস।’
আমি চারদিকে তাকিয়ে দেখি আমি বাদে সবাই বসে গেছে!শুধু আমি একাই বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছি, তাই আমিও আর কিছু না ভেবে বসে পড়লাম।আমি বসতেই প্রিন্সিপাল স্যার সকলের উদ্দেশ্যে বললেন __
‘ডিয়ার স্টুডেন্টস,মিট ইউর নিউ আইসিটি টিচার নিহান চৌধুরী। বিদেশ থেকে পড়াশোনা কমপ্লিট করে এসেছে আর তোমরা এটা যেন অবাক হবে যে ও এই কলেজ থেকেই এইচএসসি পাস করে বিদেশ চলে গিয়েছিল উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য। ওর বয়স এমনিতে কম কিন্তু ওর পরিশ্রম ও মেধার জোরে আজ এত অল্প বয়সে ও এত সাফল্য অর্জন করেছে।যাই হোক আমার মনে হয়,তোমরা সবাই ওর সাথে কোঅপারেট করবে ভালোভাবে ক্লাস করার জন্য,কি তাই তো?’
স্যারের প্রশ্নের উত্তরের সবাই একসাথে উত্তর দেয়,,
‘জ্বী স্যার!’
‘ভেরি গুড!আচ্ছা নিহান তুমি তাহলে ওদের সাথে কথা বলো আর কোন প্রবলেম হলে আমার কে জানিও, ওকে!’
এই বলে প্রিন্সিপাল স্যার চলে যান। স্যার যেতেই নদী আমাকে বলল __
‘নিশি! দোস্ত দেখ,নতুন স্যারকে কি সুন্দর না? আমি তো দেখেই ক্রাশ খাইছি!’
আমি নদীর কথায় বিরক্ত হয়ে বললাম__
‘হাহ,ওই সুন্দর মুখ দেখেই গলে যাইস না।যে বদ রাগী বজ্জাত ওরে দেখলেই আমার রাগ ওঠে।
আমার কথা শুনে রুহি ভ্রু কুচকে বলল__
‘কেন?তোর কেন রাগ ওঠে? এই এক মিনিট তুই কি ওনাকে চিনিস মানে আগে থেকেই জানিস উনাকে!
‘হুম,চিনি নিলয়( নিলয় আমার চাচাতো ভাই )ভাইয়ার বন্ধু আবার আমাদের বিজনেস পার্টনার চৌধুরী আংকেল এর ছেলে।ভাইয়ার সাথেই পড়াশোনা করে এসেছে।’
_______
‘স্যার আপনার নাম কি?’
‘ কেন? প্রিন্সিপাল স্যার যে আমার নাম বলে গেলেন শুনতে পাওনি?’
আমাদের ক্লাসের এক নাম্বার এর ঢঙ্গি মেয়ে মিলি।নিজেকে খুব সুন্দর আর বড়লোক মনে করে তাই হ্যান্ডসাম কোনো ছেলে দেখলেই শুরু হয়ে যায় ওর নেকামি।
____
‘ দেখেছিস!মিলিকে কিভাবে উত্তর দিল। তবে ঠিকই করছে একেবারে মুখ ছামা ঘষে দিয়েছে বেশি নেকামি করলে তো এমন হবেই।আর,,,’
আমার আর কিছু বলার আগেই নদী উৎসাহ নিয়ে বলল__
‘হ্যা,আমিও তো তাই বলছি।ওনি এক্কেবারে আলাদা যেমন দেখতে তেমন এটিটিউড,পুরাই জোস!!’
‘এই তুই থামবি?আর তোর লজ্জা লাগে না স্যার কে নিয়ে এই সব বলতে?এইসব ফালতু কথা রেখে শুন তুই তো মিতুদের বাড়ির কাছাকাছিই থাকিস তুই ওকে এই চিঠি টা দিয়ে দিস।’
এই কথা বলে যেই চিঠিটা নদী কে দিতে যাব,তখনই কেউ আমার হাত থেকে কেউ চিঠি টা খপ করে কেড়ে নিয়ে যায়।চিঠিটা কে নিল দেখার জন্য মাথা তুলে তাকাতেই দেখি স্যার কিছুটা গম্ভীর হয়ে চিঠি মোড়ানো হলুদ খামের উপর তাকিয়ে আছে।যেখানে সুন্দর করে লিখা আছে,’ভালোবিসি প্রিয়’ আমি ভয়ে ভয়ে দাড়িয়ে দুই একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম __
‘না,মানে ভাইয়া থুরি স্যার এই টা আমার না,আস,,,’
আমি আর কিছু বলার আগেই ওনি আমাকে ধমক দিয়ে, চোখ লাল করে বললেন__
‘চুপ!আর একটাও কথা না!কলেজে কি আসো পড়াশোনা করতে?নাকি প্রেম করতে!এখন চুপচাপ কান ধরে দাড়িয়ে থাকবে একটাও কথা না।’
আমার আর কি এক ধমক খেয়েই আমি পেট ভরে গেছে তাই আর কথা না বাড়িয়ে,মনে মনে ওনার চৌদ্দ গুষ্ঠি কে বকতে বকতে কান ধরে দাড়িয়ে আছি।আর ওনি চিঠিটা হাতের মুঠোয় মুচড়িয়ে ডেস্ক এর উপর রেখে মাথা এক হাত দিয়ে ডলছে।হয়তো রাগ কমানোর চেষ্টা করছে!কিন্তু ওনার এতো রাগার কি আছে?
বর্তমানে,,,
ওনি ক্লাসে পড়া বুঝাচ্ছেন আর একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছেন।আর আমি অসহায় মুখ করে কানে ধরে দাড়িয়ে আছি কিন্তু মনে মনে অনেক রেগে আছি ওনার উপর এক মাত্র ওনার জন্য ক্লাসের সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে।
______
‘বলছিলাম কি ভাইয়া! সরি স্যার আমি সত্যি বলছি,এই চিঠিটা আমার না এটা আমার ফ্রেন্ড মিতুর ও আজকে কলেজে আসেনি তাই এই চিঠি টা যে দিয়েছে সেকেন্ড ইয়ারে রোহান ভাই উনি আমাকে দিয়েছে ওকে দিয়ে দেওয়ার জন্য।আপনার যদি বিশ্বাস না হয় আপনি নদীকে জিগ্গেস করে দেখুন। সত্যিই,,,’
আমি আর কিছু বলার আগেই স্যার আমাকে ধমক দিয়ে বলল___
‘ এই মেয়ে! আর একটা কথাও বলবে না চুপচাপ কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকো।’
আমার আর কি করার তাই চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম,
‘আমি জানি তো বজ্জাত তুই ইচ্ছে করেই এমনটা করছিস!ঐ দিনের শোধ তুই আজকে নিলি তাই তো?ঠিক আছে,দিন আমারও আসবে তখন দেখবি ঐ দিনের মতো তোকে আবারও বুঝাবো এই নিশি খান কি জিনিস।হুহ!’
সেদিন,,,
#চলবে,
#তোমার_মায়ায়_আবদ্ধ_আমি?
#পর্বঃ1
#লেখনিতেঃসামিয়া_আক্তার_মুনা?
(আসসালামুআলাইকুম,কেমন আছেন সবাই?নতুন লিখছি তাই কোনো ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাদৃষ্টিতে দেখবেন।আর কেমন হয়েছে বলবেন প্লিজ,ধন্যবাদ?)