#তোমার_নিরব_অভিমানীনি(১৭)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
ফার্নিচারে ভরপুর নিস্তব্ধ ঘরে বসে আছে রাহা। কোথাও কোন মানুষের গতানুগতি নেই। এশার নামায এর পর খাওয়া দাওয়া শেষে রূপক এর ফুফু এবং কিছু আত্মীয় মিলে রাহা কে সাজিয়ে রূপক এর ঘরে দিয়ে গেছেন।
এখন ঘড়ির কাঁটায় রাত দুইটা বেজে ঊনচল্লিশ মিনিট। অথচ রূপক এখনো অবধি রুমে আসছে না। রাহা বার দুই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে ডুলে পরে। ঘুমিয়ে পড়লে যদি রূপক আসে? তখন যদি সে রাগ করে? এই ভেবে রাহা ঘুমানোর সাহস পাচ্ছে না কিছুতেই। এদিকে ঘুমে বিভোর হয়ে পড়ছে। তাই বিছানা ছেড়ে নেমে দাঁড়ায়। বুক সেলফ জুড়ে থাকা বইয়ের কাছে এগিয়ে যায়। সব সায়েন্স ফিকশন এবং ইংরেজি রাইটারের বইয়ে ভরপুর।
রাহা বই পড়তে তত পছন্দ করে না। কিন্তু এই মুহূর্তে সময় কাটাতে বই পড়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে তার জন্য। তাই বুক সেলফ এর বই গুলো চোখ বুলাচ্ছে। কোনটা পড়া যায়? ভাবছে। তখন একটা বইয়ের মধ্যে নজর আটকে যায়। বইটা হাতে নিয়ে অপলক চেয়ে রইল। “ছায়া সঙ্গিনী” রাইটার “রুপকথা”! উপন্যাস যে কারো কাছে থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার তাই এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করলো না রাহা। তবে তার ভাইটার কথা মনে পড়ে গেল। এই রুপকথা নামক রাইটার কে তার ভাই না দেখেই ভীষণ ভালোবাসে। অথচ মেয়েটা বিবাহিতা।
রাহা বই টা হাতে নিয়ে ইজিচেয়ারে বসে। তারপর কিছুটা পড়ে বেশ আগ্রহ জাগে তার। অতঃপর বইয়ের নেশায় মত্ত হয়ে পড়ে। রূপক এর কথা ভুলেই বসে একপ্রকার।
_____
রাদ শাহমাত গাঢ় স্বরে প্রশ্ন করে,
—” এখানে কি রাত কাটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা আছে? শীত অনুভব হচ্ছে না”?
রাদ শাহমাত এর কথায় কিছুটা নড়েচড়ে বসে নজরাত। রাদ শাহমাত এর প্রশস্ত বুকের সাথে লেপ্টে গুটিয়ে বসে আছে সে। আজকের রাতটা স্বপ্নাচ্ছন্নের মতো লাগছে তার। এত সুখ তার কপালে ছিল? ভাবেনি নজরাত।
রাদ শাহমাত নজরাত এর হাত নিয়ে খেলা করতে করতে বলল,
—” আমায় ভালোবাসেন আপনি?
—” হুঁ।
—” কবে থেকে?
—” যবে থেকে আপনার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি সেদিন থেকে। আপনি বাসেন?
—” উঁহু!
নজরাত তৎক্ষণাৎ রাদ শাহমাত কে ছেড়ে মুখমুখী বসে। উদ্বিগ্ন মুখে চেয়ে থাকে রাদে’র দিকে। রাদ শাহমাত মৃদুস্বরে বলল,
—” ভালোবাসতে চাই।
তারপর দুই হাত বাড়িয়ে দিলে নজরাত পুনরায় তাঁর বুকে ঢলে পড়ে। মাথা নত করে নখ দেখতে লাগে। রাদ শাহমাত খুব যত্ন করে তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে রেখেছে নজরাত কে। একটুক্ষন পর রাদ শাহমাত ধীর স্বরে বলল,
—” এবার রুমে যাবো?
নজরাত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। তারপর দুজনে রুমে চলে আসে।
লাইট অফ করে শুয়ে যাওয়ার পর দুজনে মাঝে দূরত্ব থাকে। তখন রাদ শাহমাত একটু একটু করে নজরাত এর দিকে আগালে নজরাত দূরে সরে যেতে চাইলে আকস্মিক হেঁচকা টানে নিজের বুকের উপর শুয়ে দেয় নজরাত কে। নজরাত কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
—” কি করছেন? ঘুমাবেন না?
রাদ শাহমাত রা করলো না। নজরাত কে পাশে শুয়ে দিয়ে তার উপর আধশোয়া হয়ে নজরাত এর কাঁপা কাঁপা ওষ্ঠদ্বয় নিজের আয়ত্তে দখল করে নেয়। স্বামীর আলিঙ্গনে সায় দেয় নজরাত। পবিত্র বন্ধনের আবদ্ধে ভাষে দুজন দুজনাতে।
______
সকাল বেলা রাহা ফ্রেশ হয়ে বিয়ের শাড়ি পাল্টে একটা সুতির শাড়ি পরে নেয়। রুম থেকে বেরিয়ে লম্বা বারান্দা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একদম শেষ প্রান্তে আসে। এতো বড় বাড়িটা দেখা হয়নি তার। তাই একটু দেখছে। একটা রুমের দরজা ভেজানো দেখে কি মনে করে যেন হালকা ধাক্কা দিল। ফলে দরজা খুলে গেল। রাহা একটু ভরকালো, ভাবেনি এভাবে খুলে যাবে দরজাটা। তাই একটু ভিতরে ঢুকে পুনরায় দরজা বন্ধ করতে উদ্যত হলে বিছানায় শুইয়ে থাকা রূপক এর খানিকটা মুখশ্রী দেখতে পায়! দরজা ছেড়ে একটু এগিয়ে যায়। ভালো করে খেয়াল করে। হ্যাঁ এটা তো রূপক ই। ও এখানে কি করছে? ও কি ভুলে গেছে? নিজের রুমে বিয়ে করা বউ তার জন্য অপেক্ষা করছে। কি আজব ব্যাপার!
রাহা অপলক চেয়ে থেকে ভাবলো। তার ভাইয়া যখন বিয়ে করে তখন ঠিক এরকমই করে যদিও রাদ শাহমাত এমনি করে অন্য রুমে এসে থাকেনি সে তার বন্ধু শিহাব এর বাসায় গিয়ে থাকে। বিয়ের দু’দিন পর বাসায় ফিরে। রাহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজাটা আগের মতই ভেজিয়ে দিয়ে নিচে নেমে আসে। মনে মনে ভাবে তার ভাইয়ার অন্যায় গুলো বুঝি তার উপর এসে পড়ছে!
কিচেনে দুজন হেল্পিং হ্যান্ড নাস্তা তৈরি করছেন। সাজ্জাদ হোসেন রাহা কে দেখতে পেয়ে হেসে বললেন,
—” বৌমা এসো।
রাহা সৌজন্য মূলক হাঁসি দিয়ে বলল,
—” আসসালামু আলাইকুম বাবা।
—” ওয়ালাইকুমুস সালাম। বসো বৌমা। নতুন পরিবেশে ভালো লাগছে তো নাকি?
—” জ্বি, ভালো।
কথার ফাঁকে সাজ্জাদ হোসেন একজন কে ডেকে বললেন রাহা কে কফি দেওয়ার জন্য।
তারপর কফি নিয়ে এলে, রাহা সাজ্জাদ হোসেন কে দিতে বললে তিনি জানান যে একটু আগেই তিনি খেয়েছেন তাই এখন আর খাবেন না। অতঃপর সাজ্জাদ হোসেন আর রাহা গল্প জুড়ে বসে। রাহার কাছে সাজ্জাদ হোসেন কে খুব ভালো লাগে। ভীষণ প্রাণউজ্জল মানুষ সাজ্জাদ হোসেন। যার মধ্যে গম্ভিরতার ছিটে ফোঁটা ও নেই।
খানিকক্ষণ পর রূপক এর ফুফু আসেন। রাহা দাঁড়িয়ে বসতে বললে,
—” তিনি বলেন বসো তুমিও বসো।
সাজ্জাদ হোসেন কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
—” ভাই আমি আজই চলে যাবো। ছেলে বউ বাসায় একা আছে। ছেলেটাও বিদেশে জানোই তো কেউ নেই।
—” সে কি! কালই না এলি? বৌভাত পর্যন্ত অন্তত থেকে যা।
—” না ভাই। তোরা নতুন বউ নিয়ে সিলেটে ঘুরে আসিস।
দু’জনের কথার মাঝে রূপক নিচে নেমে আসে। বাহিরে বের হতে হতে রাহা কে বলল, কফি বানিয়ে গার্ডেনে নিয়ে যেতে। সাজ্জাদ হোসেন বোনের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত তাই রূপক এর কথা শুনলেন না। না হয় রাহা কে বলতো কাউকে বলো কফি বানিয়ে দিতে, তোমাকে বানাতে হবে না। কিন্তু আফসোস রাহা লজ্জায় কাউকে বলতে পারলো না। নিজেই বানাতে গেল। একজন কাজের লোক অবশ্য বলেছেন যে, আমি বানিয়ে দেই? কিন্তু রাহা না করলে দ্বিতীয় বার আর বলে না। অথচ দ্বিতীয় বার বললেই রাহা রাজি হয়ে যেত। ঘরোয়া কাজ কর্মে রাহার কোনো দিন আগ্রহ জাগে নি। তাই সবসময় দূরে সরে ছিল।
________
প্রতিদিন এর মতো আজো ও রাদ শাহমাত তৈরি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়।
নজরাত বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে নিচে। যেখানে রাদ শাহমাত গাড়িতে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হঠাৎ উপরে নজর দিতে নজরাত কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। রাদ শাহমাত তার দিকে নজর দিতে নজরাত পিছনে ঘুরে যায়। নেত্রজোড়া বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কিছুটা মন খারাপ হয়েছে তার। অন্যান্য দিনের মতো আজকের দিনটা তো ছিল না। তবুও রাদ শাহমাত এভাবে বেরিয়ে গেল। তাই নজরাত এর মন খারাপ।
এর মাঝে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে নেত্রজোড়া মেলে তাকায় নজরাত। রাদ শাহমাত মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। তার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে গ্রিলে হাত রেখে, একপ্রকার আবদ্ধ করে রেখেছে। নিঃশ্বাসের বাতাস গুলো আছরে পরছে রাদ শাহমাত এর গায়ে। রাদ শাহমাত মিষ্টি করে বলে,
—” সরি।
নজরাত অনিমেষ চাহনিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তখন রাদ শাহমাত আবারো বলে,
—” একদম ভুলে বসেছিলাম, আপনার সাথে যে আমার কাল রাতে…
কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই নজরাত ডান হাতে তার অধরযুগল চেপে ধরে। লজ্জা রাঙ্গা চোখে চেয়ে বলে,
—” আপনি যে এতো ঠোঁটকাটা আগে জানতাম না তো।
রাদ শাহমাত অস্ফুট স্বরে বলল,
—” এখন থেকে জানবেন! রোজ জানবেন! ক্ষনে ক্ষনে জানবেন!
নজরাত লজ্জাবতী গাছের পাতার ন্যায় মিইয়ে যায়। রাদ শাহমাত এর বুকে মুখ লুকায়।……
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।