#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_৮
এক সপ্তাহ পর কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে নুশা সামনে পরিক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে । এই এক সপ্তাহ বই নামক জিনিসটা হাতের নাগালে একদম নেওয়া হয়নি । কি ঝড় টাই না গেলো নুশার উপর দিয়ে , তারিন বেগম এখনো কথা বলেনা নুশার সাথে , নুশা তো শুধু পালিয়েছে তাও আবার একা, কোনো ছেলের হাত ধরে নয় ; বরং সায়ান নামাক ছেলের হাত থেকে বাঁচতে তাহলে তার মা কেনো এতো রেগে আছে সেটাই বুঝতে পারছে না ।
নয়টায় ক্লাস তাই সাতটা চল্লিশের মধ্যে বাড়ি থেকে বের হতে হবে তাই তারাতাড়ি করে রেডি হয়ে পিছনে কলেজ ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখি আব্বু খাবার টেবিলে বসে পত্রিকা পড়ছে আর চা খাচ্ছে, ভাইয়াও আছে আব্বুর পাশেই বসে পাউরুটি খাচ্ছে । আব্বুর কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ যাবৎ। আব্বু কে টাকার কথা বলতেও কেমন জানি লাগছে কারন ঐদিনের পর থেকে আব্বু আমার সাথে ফ্রী হলেও আমি ফ্রী হতে পারছি না। নিজের ভিতরই একটা গিল্টি ফিলিংস কাজ করছে।
নুশার আব্বু পএিকা পরতে পরতে হঠাৎ খেয়াল করলো তার পেছনে কেউ আছে তাই মাথা ঘুড়িয়ে দেখে নুশা দাড়িয়ে আছে তাই পেপার টা হাত দিয়ে বাজ করে নুশার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
-কিছু লাগবে মা,,,
নুশা থেমে থেমে বললো,
-আসলে আব্বু কলেজে যাচ্ছি কিছু টাকা লাগবে।
-অহ এই ব্যাপার , এটা বলতে এতোক্ষণ লাগে আমার সব টাকাই তো তোমাদের তিনজনের যখন ইচ্ছে তখনই নিতে পারো বলে পকেট থেকে দুইশ টাকার একটা চকচকে নোট দিলো ।
-আব্বু এতো টাকা লাগবে না তো।
– লাগবে । তুমি নিয়ে যাও আরো লাগলে আরো দেবো ভালো করে লেখাপড়াটা শুধু করো।
-আচ্ছা আব্বু তাহলে আসি আমি কলেজের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে ।
-একি খাবার না খেয়ে কলেজে যাবে নাকি ।
-আব্বু দেরি হয়ে যাচ্ছে ।
-না আগে খেয়ে তারপর যাবে যতোই দেরি হোক না কেনো।
নুশা কিছু বলতে যাবে তখনই রান্না ঘর থেকে তারিন বেগম বলে উঠলো,
-নিশাত,, নবাবের বেটিকে বল খেতে পারলে কলেজে যেতে পারবে, তা না হলে এক পাও বাড়ির বাহিরে নিয়ে যেতে পারবে না ।
নিশাত কিছু না বলেই নুশার দিকে তাকিয়ে আছে কারন তার মা কি বলেছে সেটা নুশাও শুনেছে তাই কথার অবাধ্য না হয়ে বাবার পাশেই চেয়ারটা টেনে বসে পরলো নুশা তারপর পাউরুটি আর ডিম নিয়ে তাড়াতাড়ি খেতে লাগলো কারন সত্যি সত্যিই দেরি হয়ে যাচ্ছে গাড়ি না পেলে আরো বেশি সমস্যা হবে পরে কলেজের ভিতর ঢুকতেই পারবে না। কারন আটটা পয়তাল্লিশে কলেজ গেট বন্ধ করে দেয় । খাওয়া শেষ হলে হাত ধুয়ে তারিন বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
-আম্মু আমি খেয়েছি আর এখন কলেজে যাচ্ছি , আব্বু আসি বলে নুশা বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে । বাড়ির বাহিরে আসতেই চোখে পরলো সায়ান দাড়িয়ে আছে বাইকের সামনে আর মোবাইলে কিছু একটা দেখছে। নুশা অবাক হয়ে মনে মনেই বলে উঠলো,
-আজব তো এতো সকালে উনি এমন বাসার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে কেনো…?
এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে তাই উনাকে পাত্তা না দিয়ে সাইট দিয়ে যেতে লাগলাম তখনই সায়ান বলে উঠলো,
-চোখে কি দেখতে পাও না নাকি,,? এখানে কেউ একজন তোমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
কথা শুনেও না শোনার মতো করে হাটতে লাগলো নুশা আর মনে মনে বলতে লাগলো,
-কথার কি ছিঁড়ি, মনে হয় ছোটবেলা মামি নিমপাতার রস খাওয়াইছে । আর বড় হয়ে এখন তেল ছাড়া করলাম বাজি, করলাম জুস খায় ।
নুশাকে তার কথা এমন এরিয়ে যাওয়া দেখে সায়ানের প্রচুর রাগ উঠে তাই এবার নুশার হাত ধরে সায়ানের সামনে দাড় করিয়ে বলে উঠলো,
-নুশা তোমার কিন্তু দিনে দিনে অনেক সাহস বেড়ে যাচ্ছে। আমার কথা একদম শুনো না, আমার কথা যেনো তোমার কানেই যায় না এমন একটা ভাব ধরে আছো সমস্যা কি তোমার এমন করছো কেনো।
নুশা আয়ানের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য মুচরা মুচরি করতে লাগলো আর বলতে লাগলো,
-আপনি আগে বলেন আপনি এমন করছেন কেন ? আমার জীবনটাকে কেনো শুধু শুধু নরক করে তুলছেন।
-তোমার জীবন নরক করছি মানে কি করছি আমি ?
-কি না করছেন সেটা বলেন, কেনো পিছনে পরে আছেন মুক্তি দেন এবার ।
-কি করছি আমি সেটা বলো । আমি করিনি করেছো তো তুমি বিয়ের দিন পালালে সবাইর কাছে আমাকে মাফিয়ার পরিচয় দিলে ।
-ব্যাস এটুকুই আমি করছি আর আপনি কি করছেন, আপনি তো প্রথমে আপুর সাথে বিয়ের নাটক করলেন যে আপু কে বিয়ে করবেন কিন্তু কি হলো বিয়ের দিন আপুর সাথে বিয়েটা ভেঙে দিয়ে আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন। তারপর যখন আমি পালিয়ে গেলাম বাড়ির সবাই কে বললেন আমি দশ বারো জনের সাথে রিলেশন করি। একটা করে বলেন তো আপনি কি আমায় কোনো দিন দেখছেন আমি কারো সাথে কোনো রিলেশন সম্পর্কে আছি, নাকি কোনো দিন কেনো জায়গা বা কারো মুখ থেকে শুনেছেন। না যেনে না শুনে কেনো বললেন আমি রিলেশন করি তাও আবার দশ বারো জনের সাথে । আমি আম্মুর কাছে খারাপ মেয়ে হইছি শুধু আপনার জন্য , আপনি আমার জীবনটাকে সম্পূর্ণ ভাবে নরক বানিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করছেন নাকি সেটা বলেন।
নুশার কথা শুনে সায়ান কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না আসলেই তো সব তার দোষ কিন্তু সায়ানদের পাড়ার সিফাত তো বললো নুশা নাকি তার সাথে রিলেশন করে । তাহলে কি নুশার বান্ধবীর কথার মতো এটাও একটা ফাউ কথা।
সায়ানকে চুপ করে থাকতে দেখে হাত ছুটানোর চেষ্টা করতে করতে বলে হাত ছাড়েন আজ আর কলেজ যাওয়া হলো না।
সায়ান নুশার হাত আরো শক্ত করে ধরে বলে,
-আমি ভালোবাসি তোমাকে নুশা সেটা তোমার আমার ব্যবহারেই বুঝা উচিত । আর তুমি তো বললা রিলেশন করো না তাহলে সিফাত সে তোমাকে চিনে কিভাবে ?
সিফাতের কথা শুনে হাত ছুটানো বন্ধ হয়ে গেলো নুশার । সিফাত ভাই তো আয়ানের মাফিয়ার কথাটা বলেছিলো আর ছবিটা সিফাতের মোবাইলেই দেখেছিলো । সায়ান ভাইকে কি বলা উচিত এই সিফাতের কথা ।
-কি হলো এখন চুপ করে আছো কেনো বলো সিফাতের সাথে তোমার পরিচয় কিভাবে তোমাকে সিফাত চিনে কিভাবে।
চিন্তা ভাবনা বাদ সায়ানের চোখে চোখ রেখে বলল,,
-আপনি চিনেন কনে সিফাত ভাইয়া কে।
-আমার এলাকার লোক আমি চিনবো না। তোমাকে যা প্রশ্ন করি উলটে আবার সেই প্রশ্নটা তুমি আমাকে করো, সমস্যা কি তোমার বলোতো।
-আমার কোনো সমস্যা নাই আপনি আমাে হাত ছাড়ুন আর ভাই লাগেন ভাইয়ের মতোই থাকেন এমন হাত ধরাধরি আমার একদম পছন্দ না তাই আর কখনো হাত ধরবেন না ।
-আমি কি বলছি তোমার কানে যায়নি , “তুমি আমার একটা প্রশ্নের জবাব কেনো দিচ্ছো না ” কিসের এতো তোমার !
-আমার কোনো অহংকার নাই । আর কি বললেন ঐসময় আপনি আমাকে ভালোবাসেন । আপনার আচরণে তো তা প্রকাশ পায় না আপনি হার্টের ডাক্তার হয়েছেন ঠিক কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আপনি মানসিক ভাবে অসুস্থ মানসিক হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন।
-নুশা….!!Shut up ” মুখ সামলিয়ে কথা বলো।
-কিহ ইগো তে লাগছে নাকি আমার কথা শুনে ৷ আমারও ঠিক এমন-ই লাগছিলো ঐসময় আম্মু যখন ঐসব বলছিলো। এখন হাত ছাড়েন আমাকে যেতে হবে।
-কই যাবা এখন যেতে যেতেই ক্লাস তো শুরু হয়ে যাবে ।
-আমি কই যাবো সেটা আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নয় আপনি দয়া করে আমার হাত ছাড়ুন আমার হাত ব্যাথা করছে।
-আমি এতো চাপ দিয়েও ধরি নাই যে তুমি ব্যাথা পাবে তাই মিথ্যা কথা একদম কম বলবে, অন্ততপক্ষে আমার সাথে তো একদমই মিথ্যা কথা বলবে না।
-ভাই কেনো এমন করছেন। দেখেন ভাই আপনি ডাক্তার মানুষ ভালো ভালো সুন্দরী মেয়ে পাবেন দয়া করে আমার পিছন ছাড়েন।
-আমার তো ভালো ভালো সুন্দরী মেয়ের দরকার নাই আমার তো শুধু তুমাকে চাই।
-পাবেন না আপনি আমাকে।
– কেনো পাবো না।
-কেনো পাবেন না কারন জানেন কি..! কারন টা হলো আমার মনে আপনার জন্য যা আছে তা সবটুকুই ঘৃণায় ভরা
এক ফোঁটাও ভালোবাসা নাই।
– এই ঘৃণা টুকুই ভালোবাসার রূপ নিবে।
-কখনোই না।
-মিলিয়ে নিতে পারো।
– চ্যালেন্জ।
-হুম চ্যালেন্জ, যদি আমি পারি তোমার মনে ঘৃণা টুকুর জায়গায় ভালোবাসা আনতে তাহলে তুমি কি করবে।
-কি আর করবো তখন আপনি যা বলবেন তাই করবো।
-ভেবে বলছো তো যে তখন আমি যা বলবো তাই করবে।
-এখানে ভেবে দেখার কি আছে।
-ঐসময় আবার ভুলে যেও না যেনো ।
– ভুলবো কেন, আমি তো জানিই আপনি পা,,,
আর কিছু বলার আগেই নিশান কেচি গেইট খুলে নুশাকে দেখে অবাক হয়ে বলে উঠলো,
-নুশু বুড়ি কলেজে না গিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো । আর সায়ান ভাইয়া তুমি তুমি কখন এলে।
নিশাত কে দেখে সায়ান হাত সরিয়ে ফেললো, ভয় পেয়ে নয় নুশা আনিজি ফিল করতে পারে তাই।
নিশাতের দিকে তাকিয়ে সায়ান বললো,
-নুশা কে কলেজে নিয়ে যেতে আসছিলাম কিন্তু তোমাে বোন তো বোনই দেখো না কতো কথা লাগিয়ে দিয়েছে। এখন কথা বলতে বলতে কলেজের টাইমই শেষ । তা তুমি কোথায় যাচ্ছো …?
-ভাইয়া আসলে আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি একটা ছোট খাটো চাকরি করতে চাই তাই একটা ইন্টারভিউ আছে সেখানেই যাচ্ছি দোয়া কইরো।
– অলদাবেস্ট , ভালো করে দিও।
– জি ভাইয়া। তা এখন তো আর কলেজে যাওয়ার সময় নাই এখানে আর দাড়িয়ে থেকে লাভ কি ভিতরে যা নুশু বুড়ি আর ভাইয়া তুমিও যাও। অহ ভাইয়া মামা মামি কেমন আছে..?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।
-আচ্ছা ভাইয়া বিকাল অবধি থেকো তুমার সাথে কথা আছে । এখন অনেক লেট হয়ে গেছে আসি তাহলে।
সায়ান নুশাকে আর কিছু বলার আগেই রাস্তায় একটা মিশুক যেতে দেখে তাকে থামিয়ে উঠে বসলো আর টাটা দিয়ে চলে গেলো।
এদিকে নুশা সায়ানের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আর এক মূহুর্তের জন্যও না দাঁড়িয়ে থেকে ভেতরের দিকে চলে গেলো। আর সায়ানও নুশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে হাঁটা ধরলো বাড়ির ভেতরের দিকে।
#চলবে,,?