#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৯
আরশিদের ভার্সিটি আজ নতুন রূপে সেজেছে। ফাইনাল ইয়ার এর স্টুডেন্টদের বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে এতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আরশি ভার্সিটি তে প্রবেশ করে আশেপাশে চোখ বু*লা*লো। আজকের অনুষ্ঠানে আসতে চায় নি সে। কিন্তু তার বন্ধুরা জো*র করায় আসতে বাধ্য হয়েছে। কিছু টা দূরে চোখ যেতেই আরশি দেখতে পেলো মুন দাঁড়িয়ে আছে একটা গাছের সামনে। আজ মুন কে অনেক সুন্দর লাগছে। খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়েছে সে। চুলগুলো ছেড়ে দেয়া।
আরশি মুনের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— আরে দোস্ত তোকে তো আজকে সেই সুন্দর লাগছে রে। আমি তো ক্রাশ খেয়ে গেলাম। আজকে সব ছেলেরা তোর দিকে তাকিয়ে থাকবে দেখিস।
আরশির কথার মাঝেই বাকিরাও হাজির হলো। মোহনা আর আহি ও শাড়ি পড়েছে আজ। তাদের দুইজনকেও অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। আরশি ওদের দেখে বললো,
— হায় তিন সুন্দরী। আজ সবাই তোদের তিনজনের দিকেই তাকিয়ে থাকবে পা*ক্কা। আমারই না নজর লেগে যায়।
মুন আরশির কান টে*নে বললো,
— আমাদের সুন্দর দেখাচ্ছে ভালো কথা কিন্তু আপনি কেনো শাড়ি পড়েন নাই? কতো করে বললাম আমরা সবাই শাড়ি পড়বো। তুই ও একদিন একটু পড়। কিন্তু ম্যাডাম শুনলে তো?
মোহনা মুখটা কে ল*ট*কি*য়ে বললো,
— ঠিক কইসোস দোস্ত। আমরা শাড়ি পড়ে এতো সা*জু*গু*জু করে আসলাম আর এই মাইয়া ফ্রক ল*ট*কা*য় আইছে।
আহি মুখ গো*ম*ড়া করে আরশির উদ্দেশ্যে বললো,
— আমরা সবাই শাড়ি পড়েছি আর তুই ফ্রক পড়ে আসলি? এটা কি ঠিক? তার উপর একটুও সাজিস নাই।
আরশি আলতো হেসে বললো,
— কি করবো বল শাড়ি পড়তে জানলে তো পড়তাম। আর এমনিতেও আমি শাড়িতে কমফোর্টেবল ফিল করি না। এটাতেই শান্তি।
আহি আরশির হাত ধরে বললো,
— দেখি এদিকে বস দেখি।
আরশি দ্রুত হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
— কি করতে চাচ্ছিস তুই? হাত ছাড় মাইয়া। তোর ই*ন*টে*নশন আমার ঠিক লাগতেসে না।
আহি হাত না ছেড়ে আরও জো*রে টে*নে আরশি কে একটা বেঞ্চে বসিয়ে দিলো। বললো,
— চুপচাপ বসে থাক। আমি এখন তোকে সাজাবো।
আরশি নাক মুখ কুঁ*চ*কে জো*রে বললো,
— নায়ায়ায়ায়া আমি সাজবো না ছাড়।
আহি আরশি কে ধমকে বললো,
— চুপ। একটা কথাও বলবি না। আমি জাস্ট একটু সাজাবো বেশি না। শুধু কাজল আর একটু লিপিস্টিক দিবো বাস্।
এবার মুন আর মোহনাও জো*র দিলো। বললো,
— লাগিয়ে নে না দোস্ত। বেশি না একটু।
ওদের চা*পে পড়ে রাজী হলো আরশি। তবে ক*ড়া ভাবে বলে দিয়েছে যেনো তাকে ভূ*ত বানানো না হয়। সে কালা মানুষ, কালাতেই সুন্দর।
———
স্পেশাল গেস্ট রূপে আবরার কে ভার্সিটি তে প্রবেশ করতে দেখে ভীষণ অবাক হলো আরশি। কিছুক্ষন আগে সে শুনেছিলো কোনো স্পেশাল গেস্ট আসবে আজ। কিন্তু ভাবতেও পারে নি সেটা আবরার। আরশি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে। আজ আবরার কে মা*ত্রা*তি*রি*ক্ত সুদর্শন লাগছে। আগের দিন আবরার পাঞ্জাবী পড়ে আসলেও আজ সুট, বু*ট পড়ে এসেছে। আবরার কোট টা খুলে হাতে নিয়ে আছে। সাদা শার্ট এ তার সুঠাম দেহ স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে। যাতে আরও আকর্ষণীয় লাগছে আবরার কে। আবরারের সাথে আরও একজন ভদ্র লোক আছেন। ভদ্র লোক বেশ বয়স্ক হলেও মা*রা*ত্ম*ক হ্যান্ডসাম। আবরারের মতোই ফিটফাট। আরশি একটু খেয়াল করতেই বুঝলো ভদ্র লোক আবরারের মতো ফিটফাট নয় বরং আবরার ভদ্র লোকের মতো ফিটফাট। অর্থাৎ এরা হয়তো বাপ ছেলে।
আরশি আবরারের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো অধিকাংশ মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। কেউ কেউ আবার নিজের সাজ ঠিক করছে হয়তো আবরারের নজর কা*ড়া*র আশায়। আরশি দেখলো মোহনাও মুখ টা হা করে আবরার কে দেখছে। আর আহি আবরার কে দেখে মিটমিট করে হাসছে। মেয়েদের এভাবে তাকানো দেখে বি*র*ক্ত হলো আরশি।
আবরার ভিতরে প্রবেশ করে এদিক ওদিক চোখ ফেরাতেই তার নজরে এলো পরিচিত এক মুখ। শত শত অসাধারণের মাঝে অতি সাধারণ একজন। বি*র*ক্তি*তে কপাল কুঁ*চ*কে আছে। তাতেই যেনো সৌন্দর্য চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। আবরার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেই অতি সাধারণ একজনের দিকে। ভাবতে লাগলো কি এমন আছে তার মাঝে?
আবরার কে নিজের দিকে আসতে দেখে ভ*ড়*কে গেলো আরশি। কপালে চি*ন্তা*র ভা*জ পড়লো। মনে মনে ভাবতে লাগলো,
— এই লোক আবার এদিকে আসছে কেনো? এখানে এদের সামনে আবার উ*ল্টা*পা*ল্টা কিছু না বলে।
আরশির ভাবনার মাঝে আবরার আরশির সামনে এসে দাঁড়ালো। আরশি হাঁ*স*ফাঁ*স করতে লাগলো আবরার আবার তার বন্ধুদের সামনে কোনো বে*ফাঁ*স কথা না বলে। কিন্তু সবাই কে অবাক করে দিয়ে আবরার আরশির পাশে দাঁড়ানো মুন কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করলো,
— কেমন আছেন মিস?
সবার সামনে একজন এমপি মুনের সাথে কথা বলায় অ*স্বস্তি হতে লাগলো তার। তবুও জো*র করে হেসে বললো,
— ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
আবরার মা*রা*ত্ম*ক একটা হাসি দিয়ে বললো,
— ভালোই আছি। ঐদিনের ঘটনার জন্য আমি সত্যিই দুঃ*খি*ত।
মুন দ্রুত বললো,
— না না স*ম*স্যা নেই। আপনাকে স*রি বলতে হবে না। আমি বুঝতে পেরেছি আপনি ইচ্ছা করে দেন নি। ভু*ল*ব*শ*ত লেগেছে। it’s ok….
আবরার বললো,
— ধন্যবাদ মিস ব্যাপার টা বোঝার জন্য। অনেকে তো আবার না বুঝেই ঝা*মে*লা করতে ভালোবাসে।
কথা টা যে আবরার মুনের পাশে দাঁড়ানো আরশি কে উদ্দেশ্য করে বলেছে তা ঠিক বুঝতে পারলো আরশি। এতক্ষন সে ট্যা*রা চোখে আবরার কেই দেখছিলো। আবরারের কথা শুনে ক*ড়া চোখে আবরারের দিকে তাকালো সে। কিন্তু আবরার আরশির দিকে তাকালোই না। আরশি দাঁ*ত ক*ট*ম*ট করে বি*ড়*বি*ড় করে বললো,
— অ*সভ্য লোক একটা। দেখো কেমন ভা*ন করছে যেনো আমাকে চেনেই না হুহ।
আবরার আরশি কে কোনোরূপ পা*ত্তা না দিয়ে মুন কে বললো,
— আপনি কিন্তু খুব সুইট মিস আর আজকে আপনাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।
আবরার প্রশংসা করায় লজ্জা পেলো মুন। লাজুক হেসে বললো,
— ধন্যবাদ।
আরশি আবরার কে মুনের প্রশংসা করতে দেখে মুখ বা*কি*য়ে নিম্ন স্বরে বললো,
— লু*চু এমপি একটা।
আবরার কিউট একটা হাসি দিয়ে বললো,
— ইউ আর ওয়েলকাম। তো আসি মিস ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
মুন ও লাজুক হাসি দিয়ে বললো,
— আল্লাহ হাফেজ।
আবরার আরশির দিকে না তাকিয়েই চলে গেলো স্টেজে। আরশির কেনো যেনো খা*রা*প লাগলো আবরার এভাবে ই*গ*নো*র করায়। ভাবলো রাতের ব্যবহারের জন্য আবরার রে*গে নেই তো? পরোক্ষনেই ভাবলো রা*গ*লে রা*গু*ক তার কি?
আবরার যেতেই সব বন্ধুরা ঘিরে ধরলো মুন কে। মোহনা এক প্রকার চি*ৎ*কা*র করে বললো,
— ত*লে ত*লে তাহলে এসব চলে? শেষমেষ আমার ক্রাশটা কে কে*ড়ে নিলি?
মুন ওকে বুঝানোর ভঙ্গিতে বললো,
— তুই ভু*ল বুঝছিস। আসল কাহিনী তো অন্য।
রাহুল দু*স্টু হাসি দিয়ে চোখ টি*পে বললো,
— কি কাহিনী বল বল? কেমনে কি হুম হুম?
মুন ওদের সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বললো। সব টা শুনার পর আবির বললো,
— আমার তো মনে হচ্ছে এমপি আবরার আহমেদ ধা*ক্কা খেয়ে তোর প্রেমে পড়ে গেছে। তার কথাবার্তা তে তো তাই মনে হলো।
বন্ধুরা সবাই আবিরের কথায় সায় দিয়ে হৈহৈ করে উঠলো। মুন ওদের ঝা*ড়ি দিয়ে বললো,
— আ*জা*ই*রা কথা বলিস না তো। এসব গু*জ*ব ছাড়া আর কিছু না।
আবির টি*ট*কা*রি করে বললো,
— নিজের চোখে দেখলাম তো বস।
মোহনাও মুন কে খুঁ*চি*য়ে বললো,
— আপনি কিন্তু খুব সুইট মিস আর আজকে আপনাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।
মোহনার কথা বলার স্টাইলে সবাই হেসে উঠলো। মুন ওদের বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলো ওরা যা বুঝছে তা ঠিক নয়। কিন্তু ওরা খুঁ*চি*য়েই যাচ্ছে মুন কে। আরশির আর স*হ্য হচ্ছে না এসব। তাই সে চুপচাপ ওখান থেকে সরে আসলো। স্টেজের সামনে অনেক চেয়ার পা*তা*নো হয়েছে। আরশি সেখানে তৃতীয় সারির একটা চেয়ারে বসে পড়লো। মুখ টা গো*ম*ড়া করে রেখেছে সে। মন টা তার একটুও ভালো না। আরশির মনে হচ্ছে আবরার তার করা রাতের ব্যবহারে ক*ষ্ট পেয়েছে। তাই তো তাকে দেখেও না দেখা করলো।
কিন্তু আরশি এটা খেয়াল করলো না কেউ একজন তার দিকে একধ্যা*নে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখে নিজের চোখ জু*ড়া*চ্ছে মানুষ টা। তার উ*দা*স কাজল টা*না চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। তার দিকে তাকিয়ে যেনো দুনিয়া ভু*লে গেছে, ভু*লে গেছে পলক ফেলতে। মানুষটার চাহনি তে রয়েছে এক আকাশ সমান মুগ্ধতা, এক সমুদ্র সমান ভালোবাসা। হয়তো সেই ব্যক্তি নিজেও জানে না সে আরশির মায়ায় ডু*বে যাচ্ছে, যেই মায়া থেকে হয়তো আর তার নি*স্তা*র নেই।
চলবে?
(আস্সালামুআলাইকুম। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)