#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৬
লাঞ্চ সে*রে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলো আরশিরা। রাহুল তুলিকা কে নিজের বাইকে করে নিয়ে গেছে। আবির আর মোহনার বাড়ি রেস্টুরেন্ট থেকে কাছে হওয়ায় ওরা হেঁটে যেতে পারবে বলে হেঁটেই গেছে। আহি গাড়ি ছাড়া এক কদম ও চলে না। ও নিজের গাড়িতে করে গেছে। মুন আর আরশির বাড়ি রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু টা দূরে। কিন্তু রিকশা খুঁজে পাচ্ছে না মুন আর আরশি। ভীষণ বি*র*ক্ত লাগছে আরশির। কতক্ষন হলো দাঁড়িয়ে আছে অথচ রিকশার কোনো খোঁজ নেই।
অনেকক্ষন পরে একটা রিকশা পেতেই মুন কে রিকশায় উঠিয়ে দিলো আরশি। তাদের দুইজনের বাসা দুই দিকে। আর মুনের বাবা মেয়ে কে স্বাধীনতা দিলেও তা লি*মি*টের মধ্যে দিয়েছেন। এমনিতেই অনেক লে*ট হয়ে গেছে। তাই মুন কেই রিকশায় উঠিয়ে দিলো আরশি। মুন অনেকবার বলেছিলো আরশি কে যেতে। কিন্তু আরশি মানে নি। সে দে*রি*তে বাড়ি গেলেও কিছু হবে না। তবে মুনের স*ম*স্যা হতে পারে।
আরশি মুন কে উঠিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো আরেকটা রিকশা পাওয়ার। এদিক ওদিক চোখ ফেরাতেই দেখলো মু*খো*শধারী আবরার রেস্টুরেন্ট থেকে বের হচ্ছে। আবরার বাম ডান কিছু খেয়াল না করে নিজের গাড়ির দিকে চলে গেলো। আরশি আবরার কেই দেখছিলো কিন্তু হঠাৎ আবরারের দিকে একটা দ্রুতগামী ট্রাক কে এগিয়ে আসতে দেখে আঁ*ত*কে উঠলো আরশি। এক মিনিট ও দেরি না করে দৌড় দিলো আবরারের গাড়ির দিকে। আবরার আরশির কাছ থেকে বেশ দূরেই ছিলো। আরশি বেশ কয়েকবার ডাক দিলেও সে শুনতে পেলো না।
——
দামি অ্যাপেলের মোবাইল টা রাস্তায় পড়ে আছে আবরারের। ভে*ঙে চু*র*চু*র হয়ে গেছে। তার ব্র্যান্ডেড গাড়ি টা ট্রাকের ধা*ক্কা*য় এক দিকে মু*চ*ড়ে গেছে। মাঝ রাস্তায় এ*ব*ড়ো*থে*ব*ড়ো হয়ে পড়ে আছে। হাত পা ঝে*ড়ে উঠে দাঁড়ালো আরশি। হাতে পায়ে বেশ অনেক জায়গায় পড়ে যাওয়ার কারণে কে*টে গেছে। একটুর জন্য আজ বেঁচে গেছে আবরার। সে প্রায় গাড়িতে বসতেই নিয়েছিল, এমন সময় তাকে টা*ন দিয়ে সরিয়ে নেয় আরশি। ফোন পড়ে যায় আবরারের হাত থেকে। আর সাথে সাথে ট্রাক টা ধা*ক্কা দেয় আবরারের গাড়ি। টা*ন দেয়ার কারণে টা*ল সামলাতে না পেরে দুইজনই পড়ে গিয়েছিলো।
আরশি হাত ঝে*ড়ে আবরারের দিকে এগিয়ে দেয় উঠার জন্য। আবরার এখনো একটা ঘো*রে*র মাঝে আছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতে কিছু টা সময় লাগে তার। আজ তার প্রাণ টা প্রায় গিয়েছিলো। চোখের সামনে কোনো মেয়েলি হাত দেখে চোখ তুলে তাকায় আবরার। দেখে আরশি অ*শ্রু*শি*ক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে হাত টা বাড়িয়ে রেখেছে। আবরার তাকিয়ে থাকে আরশির অ*শ্রু*শি*ক্ত চোখের দিকে। আরশি তো ভ*য় পেয়ে, ব্য*থা পেয়ে কাঁ*দা*র মতো মেয়ে না। তাহলে কেনো তার চোখে পানি? আরশির চোখে পানি দেখে মনের মাঝে অ*স্থি*রতা কাজ করে আবরারের। আরশির হাত না ধরেই দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। অ*স্থি*র হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
— তুমি ঠিক আছো? কোথাও ব্য*থা পেয়েছো তাই না? কোথায় ব্য*থা পেয়েছো দেখি?
আবরার আরশির হাত টা ধরে উ*ল্টে*পা*ল্টে দেখতে থাকে। হাতের বেশ কয়েক জায়গায় কে*টে গেছে দেখে আরও অ*স্থি*র*তা ঘিরে ধরে আবরার কে। কয়েক ফোঁটা পানি টপটপ করে পড়ে আরশির চোখ থেকে। সে আস্তে করে আবরারের থেকে হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
— এই চোখের পানি শরীরে ব্য*থা পাওয়ার কারণে নয় এমপি সাহেব। ভ*য়ং*ক*র এক স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে আজকের ঘটনা। এমন একটা ঘটনা যে আমার জীবনের সাথেও জড়িয়ে আছে। নিজের চোখে এভাবে, ঠিক এভাবেই নিজের সবচেয়ে ভালোবাসার, কাছের মানুষটা কে হা*রি*য়ে যেতে দেখেছি। আর আজ আবার এমন একটা ঘটনার সাক্ষী হলাম।
আরশির মুখে ভালোবাসার, কাছের মানুষের কথা শুনে ঠিক ভালো লাগলো না আবরারের। ভাবতে লাগলো আরশি কার কথা বলেছে। আরশি নিজেকে স্বাভাবিক করে আবরারের উদ্দেশ্যে আবার বললো,
— আপনার এভাবে গা*র্ড ছাড়া বের হওয়া ঠিক হয় নি এমপি সাহেব। এটা কোনো এ*ক্সি*ডে*ন্ট ছিলো না, আপনাকে মা*র্ডা*র করার চেষ্টা করা হয়েছে। হয়তো আপনার শ*ত্রু*রা টে*র পেয়েছে আপনি একা বেড়িয়েছেন।
আবরার বিশ্বাস করলো আরশির কথা। কিন্তু ভাবার বিষয় একটাই তার শ*ত্রু*রা জানলো কিভাবে সে একা বেরিয়েছে? সে তো প্রতি মাসেই একবার এভাবে একা বের হয়। কেউ তো টে*র পায় না। আর আজকেও যে সে একা বেরিয়েছে তা শুধু মাত্র একজন ব্যক্তিই জানে। তার বাবা মা কেউই জানে না। তার বাবা জানলে কখনোই তাকে একা বের হতে দিতো না। তাই তো জানায় নি। কিছু একটার হিসাব মিলাতে লাগলো আবরার।
আশেপাশে অলরেডি ভি*ড় জ*মে গেছে দেখে আরশি ব্যাগ থেকে নিজের ফোন বের করে আবরারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
— আপনার গা*র্ডদের ফোন করে এখানে আসতে বলুন জ*ল*দি। দেখুন ভি*ড় জ*মে যাচ্ছে। যেকোনো সময় পু*লি*শ ও চলে আসবে।
আবরার আরশির ফোন হাতে নিয়ে নিজের হেড গা*র্ড কে কল করে ঠিকানা বললো আর জ*ল*দি আসতে বললো। তার এখান থেকে বের হওয়াটা জরুরী। আর এখন একা যাওয়াও ঠিক হবে না। কিছুক্ষনের মাঝে রেস্টুরেন্ট এর সামনে গা*র্ডদের গাড়ি দিয়ে ভ*রে গেলো। গা*র্ড রা সবাই কে সাইড করে আবরারের সামনে এসে উপস্থিত হলো। সবাই অবাক হয়ে দেখতে লাগলো এতো গা*র্ড ভি*ড় করায়। বুঝতে পারলো স্পেশাল কেউ উপস্থিত আছে এখানে।
গা*র্ড রা আবরার কে নিয়ে যেতে চাইলে কয়েক পা গিয়ে থেমে গেলো আবরার। গভীর দৃষ্টিতে তাকালো আরশির দিকে। হাত পায়ের কে*টে যাওয়া জায়গা থেকে অল্প অল্প র*ক্ত বের হচ্ছে। কিন্তু একদম স্বাভাবিক ভাবে স*টা*ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরশি। আবরার এবার আরশির স্বচ্ছ আঁখি জোড়ার দিকে গভীর দৃষ্টি তা*ক করলো। সে চোখে স্পষ্ট বে*দ*না লু*কি*য়ে আছে। কিন্তু আরশি তা প্রকাশ করছে না। নিজেকে শ*ক্ত, ক*ঠি*ন রূপে প্রদর্শন করছে।
আবরার একবার ভাবলো আরশি কে তার সাথে গাড়িতে উঠতে বলবে না। কারণ এর ফলে আরশি তার শ*ত্রু*দের আ*ক্র*ম*ণের শি*কা*র হতে পারে। কিন্তু পরোক্ষনেই ভাবলো আরশি তাকে বাঁচিয়ে অলরেডি তার শ*ত্রু*দের নজরে চলে এসেছে। যা হওয়ার হবে, দেখে নিবে সে এমনটা ভেবে আবরার আবার পা বাড়ালো আরশির দিকে। আবরার কে নিজের দিকে আসতে দেখে ভ্রু কুঁ*চ*কে তাকালো আরশি। আবরার আরশির কাছাকাছি এসে বললো,
— গাড়িতে ওঠো যাও। তুমি এই মুহূর্তে আমার সাথে যাবে। তোমাকে তোমার বাসায় পৌঁছে দিবো আমি চলো।
আরশি নাক মুখ কুঁ*চ*কে বললো,
— আমি কেন আপনার গাড়িতে যাবো? অ*সম্ভব। আমি আপনার মতো দু*র্ব*ল না বুঝেছেন।
দু*র্ব*ল বলায় মে*জা*জ খা*রা*প হলো আবরারের। কিন্তু নিজেকে শান্ত করে মাস্ক এর আ*ড়া*লে বাঁ*কা হাসলো আবরার। আরশির আরেকটু কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— নিজে থেকে ভালোয় ভালোয় গাড়িতে উঠবে নাকি এতো মানুষের মাঝে কোলে তু*লে নিয়ে যাবো? কোনটা চাও বলো? এমপির কোলে উঠলে হ*ট টপিকে প*রি*ণ*ত হবে তুমি। এখন অবশ্যই চাইবে না আমি এতো মানুষের সামনে তোমাকে কোলে নেই? কোলে তু*লতে আবার আমার ভালোই লাগবে। সময় এক মিনিট। জ*ল*দি ভাবো।
আরশি বাঁ*কা চোখে তাকালো আবরারের দিকে। এক পা ও নড়লো না। এক মিনিট শেষ হতেই আবরার আ*গা*লো আরশি কে কোলে নেয়ার জন্য। আরশি এক লা*ফ দিয়ে সরে গিয়ে বললো,
— উঠছি উঠছি। লু*চ্চা এমপি। আপনি কেমন এমপি বলেন তো ভ*রা রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা নি*ষ্পা*প মেয়ের সাথে লু*চু*মি করছেন?
আবরার ক*ড়া চোখে তাকিয়ে আবার আরশির দিকে আ*গা*তেই সে দৌড়ে গাড়িতে উঠে গেলো। আরশির কা*ণ্ডে মাস্কের আ*ড়া*লে হাসলো আবরার। তারপর সেও গাড়িতে উঠে গেলো।
চলবে?
(আস্সালামুআলাইকুম। কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)