তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ৩৭

0
870

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৩৭

রাত্রি ১০ টা। আরশি এখনো রুমে ফেরে নি দেখে কপালে ভা*জ পড়লো আবরারের। এতক্ষন অফিসের কিছু ফাইল চেক করছিলো সে। ভেবেছিলো আরশি বোধহয় চলে আসবে কিছুক্ষন পর। কিন্তু মেয়ে টা গেলো তো গেলো আর রুমে আসলো না। একটা চুমুই তো খেয়েছে আর তো কিছু করে নি। তাই বলে এতো লজ্জা! আরও দুই চার টা চুমু খেলে বোধহয় এই মেয়ে কে খুঁজেই পাওয়া যাবে না। ভীষণ বি*র*ক্ত বোধ করলো আবরার। চোখ মুখ কুঁ*চ*কে বিড়বিড় করে বললো,

— জামাই বাসায় আছে, কোথায় সারাক্ষন জামাইয়ের আশেপাশে থাকবে, জামাইয়ের সাথে দুই চার টা রোমান্টিক কথা বলবে, একটু রোমান্স করবে তা না উনি কোথায় গিয়ে লু*কি*য়ে বসে আছেন। হায় এ কেমন বউ পেলাম আমি! একটা চুমু দিয়েছি বলে বউ আমার দুই তিন ঘন্টা ধরে রুমে আসে না। নাহ এমন হলে তো চলবে না। আমার বউ হবে আমার মতো রোমান্টিক, তা না একটা চুমু দিয়েছি বলে সে পা*লি*য়ে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে বউ কে রোমান্টিক বানানোর দায়িত্ব টা আমাকেই নিতে হবে।

আবরারের আকাশ পাতাল ভাবনার মাঝে একজন সার্ভেন্ট দরজা নক করে জানিয়ে গেলো ডিনারের জন্য ডাকা হয়েছে তাকে। এক সেকেন্ড ও অপেক্ষা করলো না আবরার। দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে আসলো। উদ্দেশ্য একটাই আরশি নামক রমণী কে দেখা।

আবরার ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে দেখলো সেখানে শুধুমাত্র তার বাবাই বসে আছে। আব্বাস আহমেদ ছেলে কে বসতে বলে এটা ওটা জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন। কিন্তু আবরারের মন যে এখানে নেই। তার মন টা তো পড়ে আছে আরশি নামক রমণীর কাছে। মেয়েটা কে একটু দেখার জন্য অ*স্থি*র হয়ে পড়েছে সে। আবরার কে অ*ন্য*ম*ন*স্ক হয়ে এদিক ঐদিকে তাকাতে দেখে কনুই দিয়ে খু*চা দিলেন আব্বাস আহমেদ। রসিকতা করে বললেন,

— কি বাবা কাকে খুঁজছো?

আব্বাস আহমেদের প্রশ্নে তার দিকে তাকালো আবরার। গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিলো,

— তোমার বউ কে খুঁজছি।

হো হো করে হেসে উঠলেন আব্বাস আহমেদ। আবরার চোখ ছোট ছোট করে তাকালো নিজের বাবাইয়ের দিকে। আব্বাস আহমেদ কোনো মতে নিজের হাসি থামিয়ে কণ্ঠ খাঁ*দে নামিয়ে বললেন,

— আমার বউ কে না নিজের বউ কে খুঁজছো বললেই পারতে। হয় হয় এমনটাই হয়।

আবরার আবার চারিদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে নির্বিকার কণ্ঠে বললো,

— জানোই যখন কাকে খুঁজছি তাহলে জিজ্ঞাসা করছো কেনো? কোথায় আছে জানলে তা বলো আর নাহলে আমাকেই খুঁজতে দাও।

নি*রা*শ হলেন আব্বাস আহমেদ। ছেলে কে একটু লজ্জা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু ছেলে তার লজ্জা পেলে তো! তার ছেলে টা এতো নি*র্ল*জ্জ কবে হলো? তার সময় যখন তাকে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল কি লজ্জাটাই না পেয়েছিলেন তিনি! আর তার ছেলে কে দেখো, দিব্যি এখনো বউ কে খুঁজে যাচ্ছে। কোনো লাজ লজ্জা নেই।

বাপ ছেলের ভাবনা আর খোঁজাখুঁজির মাঝেই হাজির হলেন মিসেস বন্যা। আরশি ও তার পিছে পিছে আস্তে আস্তে পা ফেলে এগিয়ে আসলো। আরশি কে এতক্ষন পর দেখে অ*শান্ত মন টা শান্ত হলো আবরারের। মনে মনে ভাবলো মেয়ে টা তাকে কি থেকে কি বানিয়ে দিয়েছে! কিছু সময় চোখের আ*ড়া*ল হলেই মন মস্তিষ্ক অ*শান্ত হয়ে পড়ে। আবরার শান্ত চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আরশির দিকে। তবে তাকাচ্ছে না আরশি। সে এদিক ওদিক চোখ ঘুরাতে ব্য*স্ত। আরশি কে একবারও তার দিকে না তাকাতে দেখে মনের মাঝে চা*পা রা*গ অনুভব করলো আবরার। ইচ্ছা হলো আরশি কে তার দিকে তাকাতে বাধ্য করতে।

অন্যদিকে আরশি আবরারের দিকে না তাকালেও বেশ বুঝতে পারছে আবরার তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আব্বাস আহমেদ আর মিসেস বন্যার সামনেই এভাবে তাকিয়ে আছে দেখে অ*স্ব*স্তি বোধ করলো আরশি। মনে মনে আবরার কে বারংবার নি*র্ল*জ্জ উপাধি দিলো সে। আরশি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিসেস বন্যা আবরারের পাশের চেয়ারের দিকে ইশারা করে গম্ভীর গলায় বললেন,

— যাও ওখানে গিয়ে বসো। দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন নেই।

মিসেস বন্যার কথা শুনে বাঁ*কা চোখে আবরারের দিকে তাকালো আরশি। দেখলো আবরারের চোখে মুখে স্পষ্ট রা*গে*র আভাস। আরশি একটা ঢো*ক গি*লে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে আবরারের পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। আরশি কে নিজের পাশে বসতে দেখে শ*য়*তা*নি হাসি দিলো আবরার। তাকে ই*গ*নো*র করার মজা ঠিক বুঝাবে সে।

মিসেস বন্যা সবার প্লেটে খাবার সার্ভ করতে লাগলেন। আরশি সেটাই দেখছিলো। হুট করে টের পেলো কেউ তার হাত শ*ক্ত করে চে*পে ধরেছে। দ্রুত নিজের হাতের দিকে চোখ ফেরালো আরশি। বুঝতে পারলো কাজ টা আবরারের। আরশি হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে আরও শ*ক্ত করে আরশির হাত মুঠোয় পুরে নিলো আবরার। আবরারের দিকে চোখ রা*ঙি*য়ে তাকালো আরশি। কিন্তু আবরার পা*ত্তা দিলে তো! সে বাঁ*কা হেসে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে খাওয়া শুরু করলো। হাত ধরে রাখার কারণে খেতে পারছে না আরশি। দাঁ*তে দাঁ*ত চা*প*লো সে। অনবরত হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। শেষমেষ আবরার হাত ছাড়ছে না দেখে ন*ড়া*চ*ড়া বন্ধ করে দিলো আরশি। আরশি কে আর ছাড়ানোর চেষ্টা না করতে দেখে খেতে খেতেই বাঁ*কা চোখে তাকালো আবরার। দেখলো আরশি শ*য়*তা*নি হাসি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এই হাসির মানে সাথে সাথে না বুঝলেও দুই মিনিটের মাথায় বুঝে আসলো আবরারের। আরশি সর্বশ*ক্তি প্রয়োগ করে নিজের পা দিয়ে আবরারের পায়ে পা*ড়া দিয়েছে। পা যেনো জ্ব*লে উঠলো আবরারের। আবরারের হাতের মুঠ লু*জ হতেই হাত উপরে তুলে নিলো আরশি। বাঁ*কা হেসে খাওয়া শুরু করলো। পায়ে বেশ ব্য*থা পেলেও টু শব্দ টা করলো না আবরার। ফের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। মনে মনে ঠিক করে নিলো এর শা*স্তি অবশ্যই সে আরশি কে দিবে।

আবরারের খাওয়া শেষ হতেই সে টেবিল ছেড়ে উঠার আগে আরশির কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

— খাওয়া শেষ করা মাত্র রুমে আসবে। এক মিনিট ও যেনো দেরি না হয়। নাহলে তোমার কপালে দুঃ*খ আছে মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি। বড্ড জ্বা*লি*য়ে*ছো আজ। সেই হিসাব টা বরাবর করা বাকি।

আবরারের থ্রে*ট শুনে খাবার আর গলা দিয়ে নামতে চাইলো না আরশির। তবুও কোনোরকমে খেলো সে। আর ভাবতে লাগলো কি করা যায়। আজ কিছুতেই আবরারের সামনে যাওয়া যাবে না। লোক টা নিশ্চিত পায়ে পা*ড়া দেয়ার প্র*তি*শো*ধ নিবে! সে যতোই বা*হা*দু*রি করুক না কেনো আবরারের সাথে শ*ক্তি*তে কখনোই পারবে না এটা আরশি ভালোই জানে।

খাওয়া শেষ করে চু*পি*চু*পি ছাদে চলে আসলো আরশি। নিচে থাকলে মিসেস বন্যা স*ন্দে*হ করবে বলে ছাদে চলে এসেছে সে। আজ আকাশে বেশ বড় চাঁদ উঠেছে। অসংখ্য তারার ঝিকমিক করছে। মৃদু বাতাস ব*ই*ছে। পরিবেশ টা মনোমুগ্ধকর মনে হলো আরশির। চাঁদের আ*ব*ছা আলোয় ছাদের এক কর্নারে একটা দোলনা নজরে আসলো তার। বেশ বড় দোলনা। আরশি শাড়ি খানিকটা উঁচু করে পা টিপে টিপে দোলনার দিকে এগিয়ে গেলো। দোলনায় বসে মুগ্ধ চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ আরশির মনে একটা ইচ্ছা জাগলো। শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখবে সে। যখন তার নিজের বাড়ি ছিলো, বাবা বেঁচে ছিলো তখন প্রায় প্রায় এমন করতো সে। ছাদে পাটি বি*ছি*য়ে বাবা মা কে সাথে নিয়ে শুয়ে শুয়ে তারা ভ*রা আকাশ দেখতো। আজ অনেকদিন পর সেই ইচ্ছা জাগ্রত হলো আরশির মনে। কিন্তু পাটি তো নেই! কিছুক্ষন চি*ন্তা ভাবনার পর আরশি দোলনাতেই আধশোয়া হয়ে মুগ্ধ চোখে তারা ভরা আকাশ দেখতে লাগলো। মৃদু বাতাসে দোলনা হালকা দু*ল*ছে। আকাশ দেখতে দেখতে একসময় চোখ লেগে আসলো আরশির।

অন্যদিকে আরশি এখনো রুমে আসছে না দেখে রুমজুরে পা*য়ে*চা*রী করতে লাগলো আবরার। এতক্ষন তেমন রা*গ না হলেও এবার বেশ রা*গ হচ্ছে আবরারের। মেয়ে টা তার কথায় পা*ত্তা দিলো না! তার অ*বা*দ্ধ হলো! আবরার আরও কিছু সময় অপেক্ষা করলো। কিন্তু আরশির আসার কোনো নাম নেই দেখে এবার রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে আসলো সে। নিচে এসে কাউকে দেখলো না আবরার। আব্বাস আহমেদ এবং মিসেস বন্যা এতক্ষনে ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। উনারা বেশ দ্রুত ঘুমান। আরশি কে কোথাও না দেখে অ*স্থি*র হলো আবরারের মন। সে একে একে রান্নাঘর থেকে শুরু করে সকল রুম চেক করলো কিন্তু ফলাফল শূন্য। আরশি কোথাও নেই।

বাগানের কথা মাথায় আসতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাগানে আসলো আবরার। কিন্তু সেখানেও নেই আরশি। এবার মনের মাঝে ভ*য়ে*র সৃষ্টি হলো আবরারের। এতো রাতে কোথায় গেলো মেয়ে টা! কোনো ক্ষ*তি হলো না তো! মুহূর্তের মাঝে আবরারের চোখ র*ক্তি*ম বর্ণ ধারণ করলো। মাথার চুলগুলো খা*ম*চে ধরলো সে। গা*র্ডদের কাছে জিজ্ঞাসা করতে যাবে এমন সময় তার চোখ গেলো ছাদের দিকে। এক সেকেন্ড সময় ব্যয় না করে দৌড় দিলো ছাদের দিকে। মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগলো আরশি যেনো ছাদেই থাকে।

ছাদে পৌঁছাতেই রা*গে গা জ্ব*লে উঠলো আবরারের। মেয়ে টা তাকে ক*ঠি*ন চি*ন্তা*র মাঝে ফেলে এখানে এসে দোলনায় নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে! ধু*প*ধা*প পা ফেলে আরশির দিকে এগোলো আবরার। উদ্দেশ্য একটাই আরশি কে ক*ষি*য়ে একটা থা*প্প*ড় মা*রা। চুমু দিয়ে আদর করতে পারলে থা*প্প*ড় দিয়ে ঘাড় ত্যা*ড়া*মি ও ছু*টা*তে পারে সে। কিন্তু ঘুমন্ত আরশির কাছাকাছি আসার পর রা*গ উধাও হয়ে গেলো আবরারের। চাঁদের আবছা আলোয় আরশির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে। সেই চোখে এখন আর নেই কোনো রা*গ, যা আছে তা হলো একরাশ মুগ্ধতা।

ঘুমে আ*চ্ছ*ন্ন আরশি। তার লম্বা বিনুনি টা দোলনার বাইরে ঝু*ল*ছে। সামনের ছোট ছোট চুলগুলো কপাল জুড়ে ছড়িয়ে আছে। দোলনার সামনে হাঁটু গে*ড়ে বসলো আবরার। আলতো হাতে আরশির কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে মুগ্ধ কণ্ঠে বিড়বিড় করে বললো,

— আমার শুভ্র মায়াবিনী, আমার শুভ্র পরী। আর কতো রূপে ঘা*য়ে*ল করবে আমায় বলো তো! আর কি কি নাম দিবো তোমায়! তুমি যে দিনদিন আমায় ব*দ্ধ উ*ম্মা*দে পরিণত করছো তা কি জানো! তুমি কিছু সময়ের জন্য চোখের আ*ড়া*ল হলেই অ*স্থি*র হয়ে উঠছে আমার মন, মস্তিষ্ক। এই যে এতো রা*গ নিয়ে এসেছিলাম তোমায় শা*স*ন করবো বলে অথচ এখন নিজের মাঝে রা*গে*র ছি*টা*ফোঁ*টাও খুঁজে পাচ্ছি না! এটা কি ঠিক হলো বলো? একদম ঠিক হয় নি কিন্তু।

কথাগুলো বলেই চুপ হয়ে গেলো আবরার। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রইলো আরশির পানে। বেশ খানিকটা সময় এভাবেই অতিবাহিত হলো। আবরার যেনো এক ঘো*রে*র মাঝে ডু*বে আছে। এক দ*ম*কা হাওয়া দেহে আ*ছ*ড়ে পড়তেই ঘো*র থেকে বেরিয়ে আসলো আবরার। আলতো হেসে উঠে দাঁড়ালো। যত্ন সহকারে অতি সা*ব*ধা*ন*তার সহিত কোলে তু*লে নিলো আরশি কে। মেয়েটা কে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারবেনা সে এটা বেশ বুঝতে পেরেছে আবরার।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here