তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ৩৬

0
830

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৩৬

বিশ মিনিট যাবৎ আবরারের সামনে বসে আছে আরশি। আর আবরার গালে হাত রেখে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শুধু তাকানোতেই থেমে নেই আবরার, মাঝে মাঝে মিটমিট করে হাসছে সে। আরশি স্বেচ্ছায় আবরারের সামনে বসে আছে বললে ভু*ল হবে। আবরার আরশির এক হাত শ*ক্ত করে ধরে নিজের সামনে বসিয়ে রেখেছে। আরশি বেশ কয়েকবার ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ছাড়ে নি আবরার। বরং হাতের বাঁধন আরও শ*ক্ত হয়েছে। সেই যে কোলে করে এনে নিজের সামনে বসিয়েছে আর ছাড়ার নাম নেই। কি এতো দেখছে কে জানে!

আবরারের কোনো হে*ল*দো*ল না দেখে বি*র*ক্ত হলো আরশি। এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে কেমন টা লাগে! ভীষণ অ*স্ব*স্তি হচ্ছে তার। আবরারের এমন দৃষ্টি আর নিতে পারলো না আরশি। চোখ মুখ কুঁ*চ*কে বললো,

— স*ম*স্যা কি? মাথার কয়টা তার ছি*ড়ে*ছে আপনার? এভাবে অ*সভ্য, লু*চু লোকের মতো তাকিয়ে আছেন কেনো? হাত ছাড়ুন। আমার অ*স্ব*স্তি হচ্ছে।

ঠোঁট বা*কি*য়ে হাসলো আবরার। বললো,

— বউ এতো সুন্দর করে সেজেগুঁ*জে বসে থাকবে আর জামাই তাকাবে না এটা কি হয়! তোমার ভাগ্য ভীষণ, ভীষণ, ভীষণ ভালো মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি।

আবরারের এতগুলো ‘ভীষণ ভালো’ শুনে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আরশি। মুখ বি*কৃ*ত করে বললো,

— তা আমার ভাগ্য এতোটা ভালো হওয়ার কারণ টা কি শুনি।

লাজুক হাসি দিলো আবরার। যেনো আরশি অনেক লজ্জার কিছু জিজ্ঞাসা করেছে। স*ন্দে*হের চোখে তাকালো আরশি। এই লোকের হাবভাব সে বুঝে না। আরশির মনে হয় এই লোকের মাথার কয়েকটা তার সত্যিই ছি*ড়া আছে। নাহলে হুটহাট এমন আচরণ করে কেনো! আরশির ভাবনার মাঝে মুখ খুললো আবরার। লাজুক কণ্ঠে বললো,

— আমার মতো একটা অতি মাত্রায় ভদ্র বর পেয়েছো। এই জন্যই তো তোমার ভাগ্য ভীষণ ভীষণ ভীষণ ভালো।

চোখ বড় বড় করে তাকালো আরশি। মুখ টা হা হয়ে গেলো তার। কোনোরকমে হা করা মুখ বন্ধ করলো সে। মুখ বা*কি*য়ে বললো,

— এটাও আমাকে মানতে হবে? মানে আপনার চরম লেভেলের অ*সভ্য, অ*ভদ্র, লু*চু, বে*হা*য়া পুরুষ আবার অতি মাত্রায় ভদ্র! যেই সেই ভদ্র না অতি মাত্রায় ভদ্র!

আরশির রিঅ্যাকশন দেখে ভীষণ মজা পেলো আবরার। মনে মনে হাসলো সে। কিন্তু উপরে প্রকাশ করলো না। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে বউ কে এই রূপে দেখে কি করতো জানো?

কথা বলতে বলতে আরশির দিকে এগিয়ে আসলো আবরার। আবরার কে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখে মাথা পিছিয়ে নিলো আরশি। তি*র্য*ক দৃষ্টিতে তাকালো আবরারের দিকে। আবরার আরশির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— আমি তো শুধু দেখাতেই থেমে আছি। অন্য কেউ হলে এতক্ষনে বউ কে চুমু টুমু দিয়ে বসতো। তাহলে বুঝো আমি কতোটা ভদ্র। কিন্তু এখন যেহেতু তুমি আমাকে এতসব সুন্দর সুন্দর উপাধি দিয়েই দিলে তাহলে আমার দায়িত্ব সেই উপাধিগুলোর নাম রক্ষা করা। তাই না?

আবরারের কথায় ভী*ত হলো আরশি। দূরে সরে যাওয়ার প্রয়াস করলো কিন্তু সফল হলো না। তার পূর্বেই কোমর আঁ*ক*ড়ে ধরলো আবরার। সেকেন্ড ব্যয় না করেই আরশির অধরে অধর ডু*বি*য়ে দিলো। থ*ম*কে গেলো আরশি। হৃদস্পন্দন ও যেনো থেমে গেছে তার। ন*ড়া*চ*ড়া করার শক্তিটাও যেনো হা*রি*য়ে ফেলেছে সে। আবরারের গভীর স্পর্শ অনুভব করতেই চোখ বন্ধ করে ফেললো আরশি। না বলা প্রিয় মানুষটার প্রথম গভীর ছোঁয়া হৃদয়ে ঝ*ড় তু*লে*ছে তার।

কিছু সময় পর আরশির কাছ থেকে সরে আসলো আবরার। তাকিয়ে দেখলো তার প্রিয়তমা নিজের অদ্ভুত সুন্দর আঁখি জোড়া মুদে রয়েছে। কোনো ন*ড়া*চ*ড়া নেই তার, যেনো জ্ব*ল*জ্যা*ন্ত মূর্তি। আরশির অবস্থা দেখে নিঃশব্দে হাসলো আবরার। মেয়েটা কে এভাবে হুট করে স্পর্শ করার কোনো ইচ্ছা তার ছিলো না। কিন্তু কেনো যেনো আজ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না সে। মেয়ে টা আবার রা*গ করবে না তো ভাবলো আবরার। পরক্ষনে নিজেই নিজের বি*রো*ধি*তা করে বললো তার বউ কে সে আদর করবে না তো কে করবে! তার বউ টা এতো কিউট, আদর না করে কি থাকা যায়! আবরারের ইচ্ছা হলো আরেকবার আরশির অধর স্পর্শ করতে, ওই অধরের মাঝে ডু*ব দিতে। কিন্তু নিজেকে দ*মি*য়ে নিলো সে। বলা তো যায় না যদি তার বউ একদিনে এতো চা*প স*ই*তে না পেরে অ*জ্ঞা*ন ট*জ্ঞা*ন হয়ে যায়!

নিজের আ*জ*গু*বি চি*ন্তা ভাবনা ত্যা*গ করে আরশির মুখে আলতো করে ফুঁ দিলো আবরার। এতেই কাজ হলো। ধীরে ধীরে চোখ খুললো আরশি। আবরারের মুখ টা নিজের অতি নিকটে আবিষ্কার করলো সে। লোক টা এখনো কেমন নি*র্ল*জ্জে*র মতো তাকিয়ে আছে! ঠোঁটের হাসি যেনো স*র*ছেই না। কিছু সময় আগের ঘটনা মনে পড়তেই আবরারের উপর থেকে চোখ সরিয়ে ফেললো আরশি। লজ্জায় মুখ র*ক্তি*ম বর্ণ ধারণ করলো যেনো।

প্রিয়তমার লজ্জা মিশ্রিত মুখের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো আবরার। ইচ্ছা হলো লজ্জা টা আরেকটু বাড়িয়ে দিতে। ঠোঁট বা*কি*য়ে হাসলো সে। আরশির সামনে থেকে উঠতে উঠতে ফিসফিস করে বললো,

— জীবনে প্রথমবার এতো মিষ্টি জিনিস টেস্ট করলাম। এখন বারবার টেস্ট করার অপেক্ষায়….

আবরারের কথা কানে যাওয়া মাত্র কান যেনো জ্ব*লে উঠলো আরশির। লজ্জায় হাঁ*স*ফাঁ*স করতে লাগলো সে। আরশির অবস্থা দেখে আবরার আর তার সামনে দাঁড়ালো না। দ্রুত পায়ে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। বলা তো যায় না অতিরিক্ত লজ্জা পেলে যদি আবার তার সামনে আসতে না চায়! তখন তার কি হবে! তার তো আর ডজন খানেক বউ নেই, আছে একটামাত্র বউ। সুইট, সুইট বউ। কথাগুলো ভেবে নিজের অধরে হাত বু*লা*লো আবরার।

অন্যদিকে আবরার যেতেই চোখ বন্ধ করে ফেললো আরশি। জো*রে জো*রে শ্বাস টা*ন*তে লাগলো। আরেকটু সময় আবরার সামনে থাকলে হয়তো দম আ*ট*কে যেতো তার। কিছু সময় আগের ঘটনা স্মরণ হতেই দুই হাতে মুখ চে*পে ধরলো আরশি। মনে মনে ঠিক করে নিলো আজ দুনিয়া উ*ল্টে গেলেও রুমে আসবে না। বাইরে বসেই রাত কা*টি*য়ে দিবে। যেই ভাবা, সেই কাজ। দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো আরশি। নিচে এসে দেখলো তার শ্বশুর মশাই চোখে চশমা এঁ*টে কিছু একটা পড়ছেন। আরশির দিকে চোখ পড়তেই নিজের কাছে ডাকলেন তিনি। আরশি কে নিজের পাশে বসিয়ে বিভিন্ন গল্প জুড়ে দিলেন। আরশি ও তা*ল মি*লা*লো উনার সাথে।

আবরার ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো আরশি রুমে নেই। বুঝলো আরশি পা*লি*য়েছে। সে ভাবলো কিছুক্ষন নাহয় বাইরেই থাকুক। তাতে যদি মেয়েটা স্বাভাবিক হয়!

——-

— বস এমপির বউয়ের সম্পর্কে সব খোঁজ এনেছি।

নিজের বস কে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো সোহেল নামের একটা ছেলে। চেয়ারে পায়ের উপর পা তু*লে চোখ বন্ধ করে বসে ছিলো বস লোক টা। সোহেলের মুখে এই কথা শুনে চোখ খুললো সে। বললো,

— কি কি জানতে পেরেছিস বল…

সোহেল বলতে শুরু করলো,

— নাম আরশি রহমান। পরিবারে আছে মা আর একটা বোন। বাবা নেই। মেয়েটা এতদিন নিজের পরিবার চা*লা*তো।

এতটুকু বলে থেমে গেলো সোহেল। বস লোক টা ভা*রী আওয়াজে বললো,

— বাপের নাম কি? বাপ ম*র*লো কি করে?

সোহেল পুনরায় বলা শুরু করলো,

— বাপের নাম আনোয়ার রহমান। পাঁচ কি ছয় বছর আগে এ*ক্সি*ডে*ন্ট করে মা*রা গেছে।

আরশির বাবার নাম শুনে চ*ম*কে উঠলো বস লোক টা। মুহূর্তের মাঝে সোজা হয়ে বসলো সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জ*ম*লো তার। কোনোরকমে কপালের ঘাম মু*ছে জিজ্ঞাসা করলো,

— কি নাম বললি আবার বল…

সোহেল ছেলে টা বস কে এমন করতে দেখে ঘা*ব*ড়ে গেলো। দ্রুত বললো,

— আনোয়ার রহমান।

বস লোক টা অ*স্থি*র কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

— সে কি সাংবাদিক ছিলো?

সোহেল ছেলে টা অবাক কণ্ঠে বললো,

— জি বস। কিন্তু আপনি কি করে জানলেন?

বস লোক টা রা*গী কণ্ঠে বললো,

— সেটা তোকে অবশ্যই বলবো না। যা এখান থেকে। আমি একা থাকতে চাই।

সোহেল ভ*য় পেয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। সোহেল যেতেই লোক টা উঠে দাঁড়ালো। রুমজুরে পা*য়ে*চা*রী করতে লাগলো সে। মনের মাঝে ভ*য় জাগলো কোথাও অতীত সামনে না চলে আসে! পরোক্ষনেই নিজেকে অ*ভ*য় দিলো সে। দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,

— সবাই কে শেষ করে দিবো। আমার রাস্তায় যে আসবে সবাই কে ম*র*তে হবে। কেউ ছাড় পাবে না। কেউ না।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। আগেই জানিয়েছিলাম ভীষণ ব্য*স্ত*তার মধ্যে আছি। তাই গল্প দিতে পারিনি। তার জন্য আবারও ক্ষ*মা*প্রা*র্থী। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here