তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ৩০

0
810

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৩০

বউ সাজানো হচ্ছে আরশি কে। পরনে হালকা গোলাপী রঙের লেহেঙ্গা, হীরার গহনা। লেহেঙ্গা আর গহনার ডিজাইন বেশ পছন্দ হয়েছে আরশির। লেহেঙ্গা মোটামোটি ভা*রী হলেও গহনাগুলো হালকা ডিজাইনের মধ্যে হওয়ায় স্বস্তিবোধ করছে আরশি। চুপচাপ মূর্তির মতো বসে আছে সে। মিসেস বন্যার নির্দেশ মতো তাকে সাজাচ্ছে পার্লারের মহিলারা। সাজানো শেষ হতেই পার্লারের মহিলারা বেরিয়ে গেলেন। মিসেস বন্যা আরশির কাছে এসে মুখ টা উঁচু করে ধরলেন। আরশি চোখ মেলে তাকালো মিসেস বন্যার দিকে। আরশির মায়া ভরা মুখ, সুন্দর টা*না টা*না চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন মিসেস বন্যা। মুখ দিয়ে আপনাআপনি বেরিয়ে আসলো,

— মাশাআল্লাহ।

চোখ নামিয়ে মৃদু হাসলো আরশি। এতে যেনো আরশির সৌন্দর্য আরও কয়েক গুন বৃদ্ধি পেলো। মিসেস বন্যার ইচ্ছা হলো আরও কিছু সময় আরশির দিকে তাকিয়ে তাকে খুঁ*টে খুঁ*টে দেখতে। কিছু তো একটা আছে এই শ্যামা মেয়ের মাঝে যা যে কাউকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে বা*ধ্য করবে। এই শ্যামা মেয়ে যেনো যে কাউকে আকর্ষণ করার ক্ষ*ম*তা রাখে। নাহলে তার ছেলে কোনো মেয়ের জন্য এতোটা পা*গ*ল কি করে হয়?

আহি হঠাৎ হাঁ*চি দেয়ায় ধ্যান ভা*ঙ*লো মিসেস বন্যার। কিছু টা অ*প্রস্তুত হলেন তিনি। হালকা কে*শে গলা ঝে*ড়ে মুন আর মোহনা কে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

— একটু পরে ওদের নিচে নিয়ে আসবে। আমি কাউকে পাঠিয়ে দিবো ডাকার জন্য। ততক্ষন অব্দি ওদের সাথেই থেকো তোমরা দুজন।

মুন আর মোহনা মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। মিসেস বন্যা তা*ড়া*হু*ড়ো করে বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। উনি বের হতেই হু*ড়*মু*ড় করে রুমে ঢুকলো আবির আর রাহুল। যেনো দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলো। ওরা ভিতরে আসতেই মোহনা গিয়ে দ্রুত দরজা লাগিয়ে দিলো। এক লাফ দিয়ে আরশির সামনে এসে দাঁড়ালো মোহনা। মোহনা কে এভাবে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে ভ্রু কুঁ*চ*কে তাকালো আরশি। মোহনা খ*প করে আরশির হাত ধরে ওকে উঠিয়ে বেডে এনে বসালো। আরশি কে বেডে বসাতেই সবাই আরশির সামনে গোল হয়ে বসলো। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো আরশির দিকে। আরশি চোখ ছোট ছোট করে বললো,

— কি স*ম*স্যা? আমাকে বুঝি বউ সেজে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে?

মোহনা মুখ টা কাঁ*দো কাঁ*দো করে বললো,

— এই ছিলো তোর মনে? তলে তলে প্রেম করলি। আবার আমার ক্রাশ কে বিয়ে ও করে নিলি?

আহি মুখ বাঁ*কা করে বললো,

— তোরা দুইটা এমন করতে পারলি? এভাবে ধোঁ*কা দিলি? আমার ভাই আমারে এই ব্যাপারে কিছু কইলো না আর তুই আমার বান্ধুবী হইয়া ও আমারে একটু বললি না। কেন বললে কি আমি তোদের প্রেমের মাঝখানে ভি*লে*ন হতাম নাকি? কবে থেকে তোদের প্রেম চলে জলদি বল, কিভাবে প্রেম হলো সেটা বল। বল, বল যতক্ষণ না শুনমু ততক্ষন শান্তি পামু না।

হাই তুললো আরশি। বললো,

— প্রেম থাকলে তবেই না কাহিনী শুনাবো?

আরশির কথা শুনে সবাই একসাথে বলে উঠলো,

— মানে?

আরশি সোজাসা*প্টা জবাব দিলো,

— উনি আমাকে কি*ড*ন্যা*প করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছেন।

আরশির জবাবে মুখ হা হয়ে গেলো সবার। আরশি ওদের সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বললো। কিভাবে আবরার তাকে বিয়ে করেছে সব টা জানালো। সব টা শুনে আহি বললো,

— আমার ভাই দেখি তোর প্রেমে পা*গল* হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত উপায় না পেয়ে তোকে কি*ড*ন্যা*প করে বিয়ে করলো? আমার ভাই ও একটা চি*জ মানতেই হবে। রাতারাতি কি প্ল্যান টা করলো? আর দেখ তোর জন্য বিয়ের সবকিছু আগেই সে কিনে রেখেছে। বাব্বাহ কি প্রেম, কি ভালোবাসা? যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। তুই আমার ভাবি হয়ে গেলি আর ইশা ডা*ই*নিটাও বিদায় হলো। আহঃ কি সুখ সুখ লাগছে।

নিশ্চুপ রইলো আরশি। কিছু একটা ভাবতে লাগলো সে। এমন সময় মুন বললো,

— তবে একটা জিনিস আমার মাথায় ঢুকলো না….

সবাই উৎসুক চোখে তাকালো মুনের দিকে। মুন কৌতূহল নিয়ে বললো,

— আবরার ভাইয়া তোকে কি*ড*ন্যা*প করে ভ*য় দেখিয়ে পেপারে সাইন করালো আর তুই ও ভ*য় পেয়ে সাইন করলি? এই ব্যাপার টা ঠিক হ*জ*ম হলো না। তোকে আমার খুব ভালো করে চেনা আছে। যেই মেয়ে কারোর থ্রে*টে*র তো*য়া*ক্কা করে না, কাউকে ভ*য় পায় না সে আজ ভ*য় পেয়ে সাইন করলো? আর এখনই বা তুই এতো স্বাভাবিক কি করে আছিস?

সবাই ভাবলো আসলেই তো মুনের কথা টা ঠিক। আরশি তো ভ*য় পাওয়ার মতো মেয়ে নয়। তবে আজ কিভাবে সে ভ*য় পেলো? আরশি নিরবে ভাবতে লাগলো এখন কি জবাব দিবে। তবে জবাব দেয়ার প্রয়োজন পড়লো না আরশির। সে কিছু বলার আগেই দরজায় নক করে একজন জানালো নিচে তাদের ডাকা হচ্ছে, দ্রুত যেনো সবাই নিচে আসে। ফোঁ*স করে একটা শ্বাস ছাড়লো আরশি। মুন, মোহনা উঠে দাঁড়ালো আরশি আর আহি কে নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

—–

ধীরে ধীরে আরশি আর আহি কে ধরে নিচে নিয়ে আসতে লাগলো মুন, মোহনা। ওরা সিঁড়ির কাছে আসতেই আরও কিছু মেয়েরা আশপাশে যোগ হলো। পিছন পিছন আবির আর রাহুল ও আসছে। নিচে আসতেই আরশির চোখ চলে গেলো সামনের দিকে। নিজের মা মিহি বেগম এবং রিফা কে দেখে ভীষণ অবাক হলো আরশি। তারচেয়ে বেশি অবাক হলো মিহি বেগম কে আবরারের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে। আবরার উনাকে এক হাতে আ*গ*লে নিয়ে কথা বলতে বলতে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। সোফার কাছে পৌঁছাতেই আবরার উনাকে যত্ন সহকারে বসিয়ে দিলো। মিহি বেগম আলতো হেসে আবরারের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। চোখ জ্ব*লে উঠলো আরশির। আজ কতগুলো বছর পর সে নিজের মা কে এভাবে সুস্থ অবস্থায় হাসতে দেখলো। কি সুন্দর পরিপাটি দেখাচ্ছে মিহি বেগম কে। এই মুহূর্তে উনাকে দেখে কেউ বলবে না উনি মানসিক ভাবে দু*র্ব*ল। মিহি বেগম রিফার সাথে টু*ক*টা*ক কথা বললেও কখনো হাসেন না। আর আরশি কে তো স*হ্যই করতে পারেন না। একরাশ অ*ভি*মান হা*না দিলো আরশির মনের মাঝে। তার মা তার সাথে কথাই বলতে চায় না, দেখলেই রা*গা*রা*গি করে অথচ আবরারের সাথে কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে। আসলেই কি তার কোনো দো*ষ ছিলো? যার জন্য তার মা তাকে এতগুলো বছর ধরে অ*ব*হে*লা করে আসছে?

আরশির ভাবনা চি*ন্তা*র মাঝে সোফার কাছে চলে আসলো তারা। আরশি কে বসিয়ে দেয়া হলো সোফায়। আহি কে বসানো হলো রাদিফের পাশে। আরশি কে দেখেই রিফা এগিয়ে আসলো। আরশির পাশে বসে তাকে আনন্দের সাথে জড়িয়ে ধরলো। এই মেয়ের হাসি দেখলে কেউ বলবে না তাকে কিছুক্ষন আগে মা*রা*র হু*ম*কি দেয়া হয়েছিলো। স*ন্দি*হান চোখে একবার রিফার দিকে তাকালো আরশি। আরশি কে এভাবে তাকাতে দেখে হালকা কা*শি দিলো রিফা। হাসি বন্ধ করে মুখ ফিরিয়ে আশপাশ দেখতে লাগলো। আরশি সামনে তাকাতেই দেখলো তার মা কেমন যেনো অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ছ*ল*ছ*ল করছে উনার। আরশি ও অ*ভি*মানী চোখে তাকিয়ে রইলো নিজের মায়ের দিকে। যেনো চোখ দিয়েই বুঝিয়ে দিতে চাচ্ছে সে অনেক অ*ভি*মান করেছে।

পাশে কেউ একজন ধ*প করে বসায় ধ্যান ভ*ঙ্গ হলো আরশির। চোখ ফিরিয়ে পাশে তাকাতেই আবরারের শান্ত, গম্ভীর চেহারা নজরে আসলো। আবরার একবারও তার দিকে তাকাচ্ছে না খেয়াল করলো আরশি। মনের মাঝে খা*রা*প লাগা যেনো আরও বেড়ে গেলো তার। তাকে কি এতোটাই বা*জে দেখাচ্ছে যে লোকটা একবারও তার দিকে তাকালো না? তবে কি সে ভু*ল বুঝলো?

কাজী সাহেবের আওয়াজ শুনে সেদিকে তাকালো আরশি। কাজী সাহেব রাদিফ আর আহির বিয়ে পড়াচ্ছেন। আহি কিছু টা সময় নিয়ে কবুল বললো। কিন্তু রাদিফ কে বলমাত্র সে ঝ*ট*ফ*ট কবুল বলে ফেললো। সবাই হাসলো রাদিফের তা*ড়া*হু*ড়ো দেখে। আহিও হাসা শুরু করলো। কোনোরকমে হাসি থামিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— আচ্ছা আপনি আবার বাইরে কবে যাবেন?

চোখ বড় বড় করে তাকালো রাদিফ। অবাক কণ্ঠে বললো,

— বিয়েও শেষ হতে পারলো না আর তার আগেই তুমি আমাকে ভা*গা*নোর প্ল্যান করছো? তুমি কি চাচ্ছ আমি তোমাকে রেখে আজই আবার চলে যাই?

আহি মিটমিট করে হেসে বললো,

— আপাতত এটাই চাচ্ছি। আপনি বাইরে গেলে আমার তো ফা*য়*দা। বাপের বাড়ি চলে আসবো। এরপর দুই বান্ধুবী একসাথে রাজত্ব করবো। দেখছেন না আমার বান্ধুবী আমার ভাবি হয়ে গেলো। আমি তার উপর হু*কু*ম না খাঁ*টি*য়েই শ্বশুর বাড়ি চলে যাবো। এটা কি মানা যায়? আমার তো এখন আ*ফ*সোস হচ্ছে আমার ভাই আগে কেন ওকে বিয়ে করলো না?

দু*স্টু হাসি হাসলো রাদিফ। আহির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— আপনার আশা পূরণ হচ্ছে না প্রিয়তমা। আগামী ছয় মাসেও আমি কোথাও যাচ্ছি না। এই ছয় মাস বউয়ের সাথে শুধু রোমান্স চলবে। তাই আপনার আর আপনার ভাবির উপর হু*কু*ম চালানো হবে না।

লজ্জায় গাল লাল হয়ে আসলো আহির। সে লজ্জা লু*কা*নোর চেষ্টা করে চোখ রা*ঙি*য়ে তাকালো রাদিফের দিকে।

অন্যদিকে, কাজী সাহেব কবুল বলতে বললো আরশি কে। এতক্ষন স্বাভাবিক থাকলেও এখন বুক ধ*ড়*ফ*ড় করছে আরশির। মনের মাঝে ভ*য় জা*গছে এই বিয়ে যদি তার জন্য সুখকর না হয়? আবার যদি তাকে নতুন ভাবে ভে*ঙে দিয়ে যায়? সে কি পারবে স*হ্য করতে? আরশির উ*ল্টো*পা*ল্টা ভাবনার মাঝে কেউ তার হাত টা আঁ*ক*ড়ে ধরলো। চ*ম*কে তাকালো আরশি। দেখলো আবরার তার হাত টা নিজের মুঠোয় পুরে নিয়েছে। কিন্তু তার দিকে তাকাচ্ছে না। তবুও কেমন যেনো ভরসা পেলো আরশি। একবার নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে জো*রে একটা শ্বাস টে*নে কবুল বলে ফেললো। আবরার কে কবুল বলতে বলা হলে সেও কিছু টা সময় নিয়ে কবুল বললো। বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো আবরার, আরশি। আরশি মাথা উঁচু করে তাকালো আবরারের দিকে। আজ থেকে সে এই মানুষটার অর্ধাঙ্গিনী, এই মানুষটার সম্পদ। আর এই মানুষটাও সম্পূর্ণরূপে তার, শুধুমাত্র তার। কথাগুলো ভেবে ঈ*ষ*ৎ কেঁ*পে উঠলো আরশি।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here