#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২৬
ঘুমের কারণে চোখ ঠিকমতো মে*ল*তে পারছে না আরশি। ঢু*লু ঢু*লু পায়ে চোখ ড*লতে ড*লতে রুম থেকে বের হলো সে। এমন সময় কারোর সাথে জো*রে*শো*রে ধা*ক্কা লেগে ফ্লোরে পড়ে গেলো আরশি। ব্য*থা*য় চোখ মুখ কুঁ*চ*কে গেলো তার। কারোর হাসির শব্দে চোখ মে*লে সামনে তাকালো সে। দেখলো আবরার হাসছে। হাসতে হাসতে চোখে পানি চলে এসেছে আবরারের। কপাল কুঁ*চ*কালো আরশি। সারারাত এক ফোঁটা ও ঘুমাতে পারে নি সে। তারা চার বান্ধুবী এক রুমেই ঘুমিয়েছিল। আরশি ঘুমিয়েছিল কর্নারে। তিন বান্ধুবী ঘুমের মাঝে তাকে এমন ঠে*লা দিয়েছে যে আরেকটু হলে বেড থেকেই পড়ে যেতে। বেড থেকে পড়ে যাওয়ার ভ*য়ে আর ঘুমায় নি আরশি। উঠে বেলকনি তে গিয়ে বসে ছিলো। আর সেই এখন আবরার তাকে ধা*ক্কা দিয়ে ফে*লে তো দিলোই আবার হাসছেও। আরশি ফ্লোরে বসে থেকেই ঝাঁ*ঝা*লো কণ্ঠে বললো,
— এতো হাসার কি হলো? একে তো ধা*ক্কা দিয়ে ফে*লে দিয়েছেন আর এখন হাহা হিহি করছেন।
আবরার হাসি থামিয়ে নিজের হাত টা আরশির দিকে বাড়িয়ে দিলো। বললো,
— আগে ফ্লোর থেকে ওঠো। অনেক ঠান্ডা ফ্লোর। ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
আরশি মুখ বাঁ*কা*লো। আবরারের হাত ধরবে কি ধরবে না করতে করতে শেষমেষ ধরলো। আবরার এক টা*নে উঠিয়ে আনলো আরশি কে। বেশ জো*রে টা*ন দেয়ায় আরশি আবরারের একেবারে নিকটে চলে আসলো। আরশির এক হাত এখনো আবরারের হাতের মাঝে ব*ন্দি। আরশি তাকালো আবরারের চোখের দিকে। দেখলো লোকটা গভীর ভাবে তার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা পর্যবেক্ষণ করছে। আরশি আবরারের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলো আসলে আবরার কি দেখছে। হঠাৎ করে আরশির মুখে আলতো করে ফুঁ দিলো আবরার। চোখ বন্ধ করে ফে*ল*লো আরশি। আবরার আরশির দিকে আরও একটু ঝুঁ*কে ফিসফিস করে বললো,
— তোমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে জানো? মনে হচ্ছে নে*শা করেছো তুমি। নে*শা করে মা*তা*ল হয়ে ঢু*লছো। এই যে তোমার লাল লাল, ফো*লা ফো*লা চোখ? এই চোখ জোড়া কতো টা নে*শা*লো লাগছে তা জানো?
আবরারের কথাগুলো কানে যাওয়া মাত্র চোখ খুলে ফে*ল*লো আরশি। চোখ বড় বড় করে তাকালো আবরারের দিকে। দেখলো আবরার কেমন নে*শা*লো দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন চাহনি দেখে সারা শরীরে মৃদু ক*ম্প*ন সৃষ্টি হলো আরশির। ভাবতে লাগলো,
— লোক টা এভাবে কেনো তাকায় আমার দিকে? এভাবে তাকালে যে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। কিছু তো একটা আছে লোকটার দৃষ্টিতে, যা আমার মাঝে ক*ম্প*ন সৃষ্টি করে। আচ্ছা সে কি নিজের চাহনি দ্বারা আমাকে কিছু বোঝাতে চায়? কিন্তু আমি তার চাহনি তে যা অনুভব করি তা কি আদোও সম্ভব?
আরশির ভাবনার মাঝে আবরার আরশির চোখে চোখ রেখে বললো,
— নিজে মা*তা*ল হয়েছো ভালো কথা কিন্তু অন্য কাউকে এই রূপ দেখিয়ে মা*তা*ল করে কি ঠিক কাজ করলে? এখন যদি সে কোনো ভু*ল করে ফে*লে? কতো ক*ষ্টে সে নিজেকে নি*য়*ন্ত্রণ করে জানো?
চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আরশি। আবরারের কথা গুলো মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে তার। আরশি চোখ মুখ গম্ভীর করে বললো,
— আপনি যে কা*না, তা*র*ছি*ড়া তা কি জানেন? আমি নাহয় মা*তা*ল হয়ে ঢুলছিলাম কিন্তু আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সত্ত্বেও কেনো ধা*ক্কা দিলেন? ধা*ক্কা দিয়ে আমাকে ফে*লে দিলেন, ব্য*থা দিলেন, আবার হাসলেন আর এখন কিসব গাঁ*জা*খু*রি কথা বলছেন। আচ্ছা আপনার মতো পা*গ*ল, তা*র*ছি*ড়া লোক এমপি কিভাবে হলো আমাকে একটু বলেন? হাউ এটা পসিবল হইলো? আপনাকে এমপি কে বানালো তাকে আমি একটু দেখতে চাই।
আবরার রা*গ করলো না আরশির কথায়। বাঁ*কা হাসলো। ভ*ড়*কে গেলো আরশি। সে বোঝে না এই লোকের মাথায় আসলে কখন কি চলে। আবরার ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে বললো,
— আগেরবার কা*না বলায় শা*স্তি স্বরূপ ক’বার যেনো কি*ড*ন্যা*প করিয়েছিলাম?
থ*ত*মত খেলো আরশি। সে তো প্রায় ভু*লেই গিয়েছিলো এই লোকের কর্মকান্ড। আরশির রিঅ্যাকশন দেখে বেশ মজা পেলো আবরার। স্লো ভয়েসে বললো,
— আগের বার তো শুধু কিছু সময়ের জন্য কি*ড*ন্যাপ করিয়েছিলাম। এবার যদি সারাজীবনের জন্য তোমাকে আমার কাছে ব*ন্দি করে রাখি?
মুখ বাঁ*কা*লো আরশি। ব্যা*ঙ্গ করে বললো,
— আমার কাছে ব*ন্দি করে রাখি? বললেই হলো? মনে হয় আপনি ব*ন্দি করে রাখবেন আর আমিও থেকে যাবো হুহ।
হাসলো আবরার। বললো,
— সেটা সময় বলে দিবে। এবার বলো এই ভোর সকালে কোথায় যাচ্ছিলে?
আবরারের প্রশ্নে চোখে মুখে একরাশ চ*ঞ্চ*লতা ভ*র করলো আরশির। চ*ঞ্চ*ল কণ্ঠে বললো,
— বেলকনি থেকে দেখেছি নিচের বাগান। বাগানে অন্নেক অন্নেক ফুল হয়েছে। ওগুলো সামনাসামনি দেখার লো*ভ সামলাতে পারলাম না। তাই তো বেড়িয়েছি ওগুলো সামনাসামনি দেখার জন্য, একটু ছোয়ার জন্য, ঘ্রাণ নেয়ার জন্য।
আরশির বাচ্চামি দেখে আবরার বুঝলো আরশির হয়তো বাগান, ফুল অনেক পছন্দ। সে মজা করে বললো,
— তুমি জানো ওই বাগানের মালিক কে? সে যদি তোমাকে ওখানে যাওয়ার অনুমতি না দেয়, তোমাকে ফুল ছোয়ার অনুমতি না দেয়?
মুখ টা অ*ন্ধ*কার হয়ে গেলো আরশির। সে তো খুব করে চায় ফুলগুলো কে ছুঁয়ে দিতে। আবরার আরশির ম*লি*ন মুখ টা দেখে বললো,
— থাক থাক কাঁ*দা লাগবে না। তোমাকে যাওয়ার অনুমতি দিলাম। বাগান টা আমার বুঝলে মেয়ে? আমার অনেক শখের তৈরি বাগান। আর আমার দি*ল আবার অনেক বড়, মায়া দ*য়ায় ভর্তি। কিছু কিছু মানুষের ম*লি*ন মুখ স*হ্য হয় না। তাই যাওয়ার পারমিশন দিলাম। তবে বেশি ফুল ছি*ড়*বে না।
চোখ মুখ খুশিতে ঝ*ল*ম*ল করে উঠলো আরশির। দৌড় দিয়ে নিচে চলে গেলো। আবরার নিজের এ*লো*মে*লো চুলের মাঝে হাত চা*লি*য়ে আরশির পিছু নিলো।
বাগানে এসে আরশির মনে হলো সে খুশিতে পা*গ*ল হয়ে যাবে। এতো এতো ফুল? আগেরদিন রাতের বেলা আসায় অ*স্পষ্ট দেখেছে সে। বাহারি বাহারি রঙিন ফুল, ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ পা*গ*ল করে তু*ল*ছে আরশি কে। সে উৎফুল্ল মনে বাগানে হেঁটে বেড়াচ্ছে আর ফুলগুলো স্পর্শ করছে। কখনো বা ফুল ছিঁ*ড়ে কানে গু*জ*ছে। এই মুহূর্তে আরশি কে দেখে মনে হচ্ছে সে এক অন্য আরশি। যার মাঝে বাচ্চামি, চ*ঞ্চ*লতায় ভ*রা। এসবের তা*লে আরশির দীঘল কালো কেশ কখন মু*ক্ত হয়ে গেছে তাও টে*র পায় নি আরশি। মৃদু বাতাসে তার উন্মুক্ত কেশ দু*ল*ছে। আর এইসব কিছু মুগ্ধ হয়ে দেখছে এক জোড়া চোখ। চোখের মালিক এই সুন্দর মুহূর্ত কে নিজের মস্তিষ্কে ব*ন্দি করে নিলো। তারপর ছু*ট*লো নিজ কাজে।
——
বেশ বেলা করে রুমে ফিরলো আরশি। সে কতক্ষন বাগানে ছিলো সে জানে না। তবে রোদের তে*জ আর বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার পর মানুষদের জা*গ্র*ত অবস্থায় দেখে ধারণা করে নিলো বেশ বেলা হয়েছে। সে যখন বাগানে এসেছিলো তখন কেউই জেগে ছিলো না।
আরশি ওড়নায় করে সব ধরণের ফুল একটা একটা করে নিয়ে এসেছে। রুমে প্রবেশ করে দেখলো সবাই জেগে গেছে। আহি আরশি কে দেখে প্রশ্ন করলো,
— কিরে কই ছিলি তুই? ঘুম থেকে উঠার পর তোরে দেখলাম না। আর তোর ওড়নায় কি?
আরশি ওড়নার ফুলগুলো বেডের উপর ছ*ড়ি*য়ে দিলো। বললো,
— তোরা আমারে যেই ঠে*লা দিসোস রাতে একটুও ঘুমাইতে পারি নাই। তাই ভোরের আলো ফু*ট*তেই বাগানে গেছিলাম। দেখ কতগুলো ফুল নিয়ে আসছি।
আহির মুখ টা হা হয়ে গেলো। সে অবাক হয়ে বললো,
— দোস্ত তুই ভাইয়ের গাছের এতগুলো ফুল ছিঁ*ড়*সোস? জলদি লু*কা ভাই দেখলে তোর হাত না ভে*ঙে দেয়। সে তো তার গাছের ফুল আমারে ছিঁ*ড়*তে দেয়া তো দূর, ধরতেও দেয় না। মাঝে মাঝে বহুত রিকোয়েস্ট করে, গলা ধরে ঝু*লে পড়ে তাকে মা*না*ইতে হয়। আর তুই কিনা এতো ফুল….
আরশি ফুলগুলো ছুঁয়ে দিতে দিতে বললো,
— কিছু বলবে না তোর ভাই। সেই পারমিশন দিয়েছে হুহ।
আহি অবাক হয়ে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই একজন কর্মী দরজা ন*ক করে জানালো ব্রেকফাস্ট করতে ডাকা হয়েছে তাদের। তাই আহি আর কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারলো না। মোহনা পেটে হাত বুলিয়ে বললো,
— চল ব্রেকফাস্ট করতে ডাকছে। ব্রেকফাস্ট করে আসি। অনেক ক্ষু*ধা লেগেছে।
আহি মোহনার মাথায় চা*টি মে*রে বললো,
— পে*টু*ক মহিলা একটা। বান্ধুবীর বাসায় আইসোস কই মা*ই*পা মা*ই*পা খাবি তা না খাওয়ার কথা শুনতেই খাইতে দৌ*ড়া*ই*তাসোস। বলি তোর কি কোনো স*র*ম নাই?
মোহনা মুখ টা কাঁ*দো কাঁ*দো করে ফেললো। বললো,
— তুই আমারে খাওয়ার খো*টা দিলি? ওই বেডি তুই বান্ধুবী নামের ক*ল*ঙ্ক।
আহি বললো,
— চল চল আর ঢং করা লাগবে না। আমি জানি তুই দুই মিনিট পর আবার কবি ক্ষু*ধা লাগছে।
——
ব্রেকফাস্ট করতে নেমেছে সবাই। আবরার ও রেডি হয়ে নেমেছে। বাইরে যাবে হয়তো। আবরার টেবিলের সামনে এসে চেয়ার টে*নে বসতে যাবে এমন সময় এক জোড়া মেয়েলি হাত পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আবরার কে।
চলবে?
(আস্সালামুআলাইকুম। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)