#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_২৩
আরশি চ*ম*কে পিছনে তাকাতেই দেখলো তার ফ্রেন্ড সার্কেল এর সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সবার চোখে মুখে কৌ*তূ*হল শুধুমাত্র একজন ছাড়া। আর সে হলো আহি। আহি চি*ল মুডে দাঁড়িয়ে আছে। সবার আড়ালে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। আরশি উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
— তোরা এখানে?
আবির বললো,
— হ্যা এখানেই তো লাঞ্চ করতে আসলাম। এই রেস্টুরেন্ট টা ভালো তাই।
আরশি বললো,
— তাহলে তোদের এতো লে*ট হলো কি করে? তোরা তো আরও আগে রওনা করেছিলি।
আহি বললো,
— আর বলিস না ইয়ার। এই মহু, বেলপুরি পা*গ*লি মহিলা মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামালো বেলপুরি খাওয়ার জন্য। তাই তো লে*ট হয়ে গেলো।
মোহনা গোল গোল চোখে একবার আবরার কে দেখছে আরেকবার আরশি কে। সে আরশির একেবারে কাছে চে*পে এসে ফিসফিস করে বললো,
— ত*লে ত*লে টে*ম্পু চালাস? তুই এভাবে আমাদের লুকিয়ে আমার ক্রাশ এর সাথে ডেটে আসতে পারলি?
আরশি মোহনার হাতে একটা চি*ম*টি কে*টে বললো,
— উনি আমার বস। উ*ল্টা*পা*ল্টা ভাবা বাদ দে। সে লাঞ্চ করার জন্য এখানে এসেছে। আর আমি তার পিএ। তাই তার পিছে পিছে ঘুরা লাগছে।
মোহনা ঠোঁট গোল করে বললো,
— ওওওওহ। তাহলে এই ব্যাপার? আগে বলবি না দোস্ত?
আরশি চোখ পা*কি*য়ে তাকালো মোহনার দিকে। মোহনা দ্রুত সরে আবিরের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। আবরার ওদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,
— তোমরাও লাঞ্চ করতে এসেছো বুঝি?
সবাই মাথা ঝা*কা*লো। আহি হাতে থাকা ক্রেডিট কার্ড ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বললো,
— আমি ওদের ট্রিট দিতে নিয়ে এসেছি।
আবরার চমৎকার একটা হাসি দিয়ে বললো,
— তোমরা সবাই আমার সাথে জয়েন করতে পারো। আমি খুব খুশি হবো।
আরশির ফ্রেন্ডরা প্রথমে অবাক হলেও পরে খুব খুশি হলো আবরারের অমায়িক ব্যবহারে। সবাই রাজী হয়ে গেলো আবরারের সাথে লাঞ্চ করার জন্য। আহি একটা চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
— আজ তো আমি ট্রিট দিচ্ছি। তাই সব বিল আমি পে করবো কিন্তু।
আবরারের দিকে বাঁ*কা চোখে তাকিয়ে কথাগুলো বললো আহি। আবরার মনে মনে বললো,
— আচ্ছা বাচ্চু। আমার টাকা দিয়ে আমাকে ট্রিট দিবি?
আহি মিটমিট করে হাসতে লাগলো। আবরার পা*ত্তা দিলো না। সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো,
— তো চলো সবাই খাওয়া শুরু করো।
সবাই সায় জানিয়ে খাওয়া শুরু করলো। আবরারের পাশে বসেছে মুন। আর আরশি বসেছে অ*পো*জিটে। আবরার খেতে খেতে মুন কে জিজ্ঞাসা করলো,
— তো কেমন আছেন মিস কিউটি?
মুন কিছু টা ল*জ্জা পেলো সবার সামনে এভাবে কিউটি বলায়। লাজুক হেসে বললো,
— এইতো ভালোই আছি। আপনি কেমন আছেন?
আবরার মৃদু হেসে বললো,
— বিন্দাস। তবে আমার কিন্তু একটা আ*ফ*সোস রয়ে গেলো?
সবাই কৌ*তূ*হল নিয়ে তাকালো আবরারের দিকে। আবরার আরশির দিকে বাঁ*কা চোখে তাকিয়ে বললো,
— আপনার মতো সুইট একটা মেয়ে আমার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হলে খুব খুশি হতাম। আপনার মতো একটা মিষ্টি, কিউট মেয়েই আমার দরকার ছিলো। কিন্তু পেয়ে গেলাম ঝাঁ*ল ম*রি*চ।
সবাই শব্দ করে হেসে উঠলো। কারণ আবরার যে আরশি কে ঝাঁ*ল ম*রি*চ বলেছে তা সবাই বুঝতে পেরেছে। অন্যদিকে মুড অফ হয়ে গেলো আরশির। সে চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে খাবার না*ড়া*চা*ড়া করতে লাগলো। আবরার সবার সাথেই টু*ক*টা*ক কথা বলছে খেতে খেতে। কিন্তু আরশির দিকে তাকাচ্ছে ও না। যেনো আরশি নামের কেউ এখানে নেই। আরশি খাচ্ছে কম এসব দেখছে বেশি। আবরার এভাবে ই*গ*নোর করায় মনের মাঝে একটা চা*পা ক*ষ্ট অনুভব করলো আরশি। এতক্ষন পেটে প্রচন্ড ক্ষু*ধা থাকলেও এখন কেনো যেনো গলা দিয়ে খাবার নামছে না। কোনোরকমে অল্প একটু খেলো সে।
খাওয়া শেষ করে সবাই আরও কিছুক্ষন গল্প করলো। এর মাঝে আরশি একটাও কথা বলে নি। সে চুপচাপ বসে ছিলো। আবরার সবার জন্য আইস ক্রিম অর্ডার দিলো। তারপর খাওয়া শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলো সবাই। আবরার সবাই কে বি*দা*য় জানিয়ে আরশি কে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। রওনা করলো অফিসের উদ্দেশ্যে। গাড়িতে বসে আরশি একবারও আবরারের দিকে তাকালো না আর না কোনো কথা বললো। ব্যাপার টা আবরারের নজরে আসতেই সে বুঝতে পারলো কোনো কারণে আরশির মন খা*রা*প। কিন্তু কিছুক্ষন আগেও তো ঠিক ছিলো। আবরার একটু গভীর ভাবে ভাবতেই বুঝতে পারলো বিষয় টা। সে এটা ওটা বলে আরশি কে রা*গা*নোর চেষ্টা করলো কিন্তু কোনো লাভ হলো না। তাই এক সময় চুপ হয়ে গেলো সে।
——-
অফিসে পৌঁছাতেই নিজের কাজে লেগে পড়লো আরশি। তবে আরশি খেয়াল করলো তাদের ফ্লোরে আজ কোনো ছেলে কাজ করছে না। সব মেয়ে। পাশের একটা মেয়ে কে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে জানালো ম্যানেজার নাকি এমন টা করেছে। এই ফ্লোরে এখন থেকে শুধু মেয়েরাই কাজ করবে। আরশির মাথার মধ্যে ঘু*র*পা*ক খেতে লাগলো আসলে বিষয় টা কি? তবে বেশিক্ষন এসবে মাথা ঘা*মা*লো না সে। নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।
——-
অফিস টাইম শেষ হতেই আবরার বেল বা*জি*য়ে আরশি কে কেবিনে ডাকলো। আরশি আবরার কে সব কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বের হতে নিলেই আবরার বলে উঠলো,
— তুমি আমার সাথে যাবে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি।
আরশি কোনো কথা বললো না। বি*র*ক্ত হলো আবরার। আরশি তার সাথে একটাও এক্সট্রা কথা বলছে না সেটা স*হ্য হচ্ছে না তার। আবরার এক ঝ*ট*কায় আরশির কাছাকাছি চলে আসলো। আরশি সরে যেতে চাইলে হাত চে*পে ধরলো সে। দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,
— ই*গ*নোর করছো আমাকে? কি হলো বলো? তোমার সা*হ*স কি করে হয় আমাকে ই*গ*নোর করার?
আরশি এক টা*নে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। ক*ড়া কণ্ঠে বললো,
— নিজের লি*মি*টের মধ্যে থাকুন স্যার। আমার আপনার সাথে ই*গ*নোর করার মতো কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের সম্পর্ক শুধুমাত্র কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাই এসব অদ্ভুত ব্যবহার করা থেকে বি*র*ত থাকুন।
আবরার অবাক হলো আরশির ব্যবহারে। আরশি এভাবে কথা বলবে ভাবনার বাহিরে ছিলো তার। তার ভাবনার মাঝেই কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো আরশি। আবরার তাকিয়ে রইলো আরশির যাওয়ার পানে। আজ আর থামালো না আরশি কে।
———
সময় বহমান। দেখতে দেখতে কে*টে গেছে এক টা মাস। এই এক মাসে আরশি আবরার কে সম্পূর্ণ রূপে ই*গ*নোর করেছে। এ যেনো সম্পূর্ণ নতুন এক আরশি। আবরার যতোই দেখেছে, ততোই অবাক হয়েছে। এই এতগুলো দিনে কাজ ব্যতিত কোনো কথা আবরারের সাথে বলে নি আরশি আর না ঝ*গ*ড়া করেছে। আবরার যা বলেছে তাই নিঃশব্দে মেনে নিয়েছে। আবরার ও সেদিনের আরশির করা ব্যবহারের পর থেকে আর আরশির সাথে ঝ*গ*ড়া করার চেষ্টা করে নি। না কোনো কিছু নিয়ে জো*র করেছে। তবে আরশির খেয়াল রাখতে ভু*লে নি সে। এই কয়েকদিনে আরশি কে হাসানোর অনেক চেষ্টা করেছে আবরার। কিন্তু আরশি কেমন যেনো অন্যরকম হয়ে গেছে। সবসময় গ*ম্ভী*র হয়ে থাকে। আবরার বুঝে উঠতে পারছে না কি হলো আরশির। কেনো তার মাঝে এতো পরিবর্তন?
——–
ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে বসে আছে আরশি আর তার সব ফ্রেন্ড। আজ একটা ক্লাস না হওয়ায় আগেই ছুটি হয়ে গেছে ওদের। তাই সবার সাথে ক্যান্টিনে এসেছে আরশি। আহি নাকি কোনো জ*রু*রি কথা বলবে। আহি কে হাঁ*স*ফাঁ*স করতে দেখে মোহনা বললো,
— কিরে জ*রু*রি কথা কি বলবি? নাকি হু*দা*ই বসায় রাখবি?
আহি আ*মতা আ*মতা করে বললো,
— আসলে,,, আসলে হয়েছে কি…
মুন আহির কাঁধে হাত রেখে বললো,
— কি হয়েছে বল…
আহি চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বললো,
— আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
আহির কথায় চোখ বড় বড় হয়ে গেলো সবার। একযোগে চি*ল্লি*য়ে বললো,
— কিইইইইইই…..
আহি মুখ টা ছোট করে বললো,
— হু। তোদের কে রাদিফের কথা বলেছিলাম না? সে দেশে ফিরেছে। এখন উনি চায় এক সপ্তাহের মধ্যে আমাকে বিয়ে করতে। বাবাই রাজী হচ্ছিলো না। এতো দ্রুত কিভাবে কি করবে? কিন্তু সে অনেক রিকোয়েস্ট করেছে। তাই বাবাই রাজী হয়ে গেছে। আসন্ন শুক্রবার বিয়ে। এখন মূল কথা হলো তোদের সবাইকে আমার বিয়ের দুইদিন আগে আমাদের বাড়িতে আসতে হবে। আর এই দুইদিন তোরা আমাদের বাড়িতেই থাকবি। কেউ না করতে পারবিনা কিন্তু। আগেই বলে দিলাম।
সবাই রাজী হলেও মুন আর আরশি রাজী হতে চাচ্ছিলো না। অনেক ক*ষ্টে ওদের রাজী করালো আহি। মুন কে আহি বুঝালো সে নিজে মুনের বাবার সাথে কথা বলবে। আর আরশি বললো সে বাসায় গিয়ে জানাবে আসবে কিনা। এখনো সিওর না। কিন্তু আহি চে*পে ধরলো যেকোনো ভাবে হোক আসতেই হবে। আহি সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো,
— তোদের সবার জন্য একটা surprise আছে।
সবাই উৎ*সু*ক হয়ে জানতে চাইলো কি? আহি হাসতে হাসতে বললো,
— জানতে পারবি আগে আমাদের বাড়িতে আয়। আমি কিন্তু গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। সবাই চলে আসবি।
চলবে?
(আস্সালামুআলাইকুম। আজকের পর্ব একটু এ*লো*মে*লো লাগতে পারে। তা*ড়া*হু*ড়ো করে লিখেছি। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)