#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৮
বাঁ*কা চোখে তাকিয়ে আবরারের কাজ কর্ম দেখছে আরশি। আবরার কি করতে চাচ্ছে বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছে সে। আবরারের কেবিনে একটা বেলকনি আছে হয়তো। আবরার নিজের ফোন টা নিয়ে সেখানে চলে গেলো। কারোর সাথে কথা বলছে হয়তো। তবে কার সাথে কথা বলছে, কি কথা বলছে কিছুই শুনতে পাচ্ছে না আরশি। পাঁচ মিনিটের মাথায় আবরার ফেরত আসলো। নিজের ফোন টা আরশির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
–কথা বলো।
আরশি বুঝতে পারলো না কার সাথে কথা বলতে বলছে আবরার। আরশি ফোন টা কানে লাগাতেই ভয়েস শুনে বুঝতে পারলো অপর প্রান্তে আব্বাস আহমেদ আছেন। আরশি দ্রুত সালাম দিলো আব্বাস আহমেদ কে। আব্বাস আহমেদ সালামের জবাব দিয়ে বললেন,
— মামুনি তোমার থেকে কিন্তু এটা আশা করি নি।
আরশি নিম্ন স্বরে বললো,
— কিন্তু স্যার আমি তো…..
আব্বাস আহমেদ আরশি কে কথা কমপ্লিট করতে না দিয়ে বললো,
— যা করেছো তার জন্য শা*স্তি তো পাবেই। যেহেতু আমিই তোমাকে সিলেক্ট করেছি সেহেতু শা*স্তিটাও আমিই দিবো। তোমার শা*স্তি হচ্ছে আবরার তোমাকে এখন যা বলবে তা কোনো প্রকার দ্বি*ধা ছাড়াই মেনে নিবে। যদি আমাকে মন থেকে শ্রদ্ধা করে থাকো তাহলে আবরারের কথা মেনে নিবে তুমি। ধরে নাও আমার পক্ষ থেকে আবরার তোমাকে পা*নি*শ*মেন্ট দিবে। কি বলো মানবে তো?
আরশির মুখ টা ম*লি*ন হয়ে গেলো আব্বাস আহমেদের কথায়। লোকটার কথা কিভাবে অ*মান্য করবে সে? যেই লোকের মামুনি ডাকে অ*শান্ত মন শান্ত হয়ে যায় তার কথা অ*মান্য করা আরশির পক্ষে সম্ভব নয়। আরশি জবাব হ্যা তে দিয়ে ফোন টা আবরারের হাতে ধরিয়ে দিলো।
ভীষণ অ*ভি*মান হলো আরশির। সে তো কোনো ভু*ল করে নি তারপরও আবরার তাকে দো*ষী বলে মেনে নিলো। আব্বাস আহমেদের কাছেও ছোট করে দিলো। আরশির অ*ভি*মানী মুখ টা দেখে আরশির অ*গো*চ*রে আলতো হাসলো আবরার। আরশির কানের কাছে মুখ টা নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি আমার উপর অ*ভি*মান হচ্ছে বুঝি? মুখ টা দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। আচ্ছা মানুষ তো শুধু মাত্র নিজের প্রিয় জনের উপর অ*ভি*মান করে। আমি কি তোমার প্রিয়জন?
এমন একটা প্রশ্নে আবরারের চোখের দিকে তাকালো আরশি। আবরারের মুখ টা অতি নিকটে হওয়ায় তার গরম শ্বাস আরশির মুখের উপর আ*ছ*ড়ে পড়ছে। আবরারের গভীর কালো চোখের দিকে তাকিয়ে কোনো উত্তর দিতে পারলো না আরশি। আবরার আরশির মুখের উপর আলতো করে ফুঁ দিয়ে তার ছোট ছোট চুলগুলো সামনে থেকে সরিয়ে দিলো। চোখ বন্ধ করে ফেললো আরশি। কয়েক সেকেন্ড পর চোখ খুলে দেখলো বেশ দূরত্বে অবস্থান করছে আবরার। সে আরশির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো,
— বাইরে এসো আমার সাথে।
আরশি আবরারের পিছন পিছন বাইরে আসলো। সবাই উ*ৎ*সুক চোখে তাকালো। আরশির চাকরি গেলো কিনা সেই চি*ন্তা করছে সবাই। আবরার সবার সামনে জো*রে জো*রে বললো,
— অনেকদিন ধরেই একজন পিএ এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলাম। এতো প্রে*সা*র কি নেয়া যায়? তাই আজ থেকে মিস আরশি আমার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর দায়িত্ব পালন করবেন।
আবরারের কথায় সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। আরশি নিজেও ভীষণ অবাক হয়েছে। মিস প্রিয়ার মুখ টা যেনো ঝু*লে পড়েছে আবরারের এমন একটা কথায়। সে সামনে এসে বললো,
— কিন্তু স্যার….
আবরার বাঁ*কা হেসে বললো,
— আরে কিসের কিন্তু মিস প্রিয়া? আপনিই তো বললেন উনি বে*য়া*দব, মুখে মুখে ত*র্ক করেন। আপনার কথা বার্তায় বুঝলাম আপনার পক্ষে মিস আরশি কে হ্যান্ডেল করা সম্ভব না। তাই তো আমিই দায়িত্ব নিয়ে নিলাম। আমার কাজ ও হবে। আর উনাকে টা*ই*ট দিয়ে বে*য়া*দব থেকে ভদ্র মেয়েও বানানো যাবে।
শেষের কথা টা আরশির দিকে বাঁ*কা চোখে তাকিয়ে বললো আবরার। রা*গে আরশির নাকের পা*টা ফুলে আছে। মনে মনে বলছে,
— আমি বে*য়া*দব হলে আপনি একটা অ*সভ্য লোক এমপি সাহেব।
আবরার আরশির থেকে চোখ ফিরিয়ে আবার বললো,
— আপনাদের আব্বাস স্যার অনেক আশা, ভরসা করে মিস আরশি কে চাকরি টা দিয়েছেন। তার সিদ্ধান্ত তো আমি ভু*ল প্রমাণিত হতে দিতে পারি না। আমি তাকে অবশ্যই নি*রা*শ করবো না।
মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে মিস প্রিয়া। তার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে নিজের পায়ে নিজেই কু*ড়া*ল মে*রে নিয়েছে যেনো। আবরার আরশি কে উদ্দেশ্য করে বললো,
— মিস আরশি কেবিনে আমার ডেস্কের উপর যতো ফাইল আছে সব নিয়ে বসুন। আমি এসে আপনাকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছি। কার সাথে কন্টাক্ট করতে হবে, কিভাবে করতে হবে, শিডিউল কিভাবে ফি*ক্স করতে হবে, ফাইল কিভাবে চেক করতে হবে, কি কাজ করতে হবে সব টা আমি বুঝিয়ে দিবো আপনাকে।
আরশি আবরারের দিকে ক*ড়া লুক দিয়ে কেবিনে চলে গেলো। আবরার প্রিয়ার কাছে গিয়ে বললো,
— ধন্যবাদ মিস প্রিয়া।
আবরার ধন্যবাদ বলায় আসমান থেকে পড়লো প্রিয়া। হা*ব*লার মতো তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
— ধন্যবাদ কেনো স্যার?
আবরার বাঁ*কা হেসে নিম্ন স্বরে বললো,
— তা আপনার না জানলেও চলবে। শুধু এতটুকু জেনে রাখুন আপনি কোনো এক ভাবে আমার উপকার করেছেন। আর আরেকটা বিষয় আপনাকে জানিয়ে দেই। আপনার ব্যাপারে সব কিছুই কিন্তু আমার কানে আসে। এটা ভাববেন না যে আমি কিছু জানি না। আমি আপনাকে সুযোগ দিচ্ছি। তবে বারবার দিবো না। আর হ্যা মিস আরশির থেকে দূরে থাকবেন। ভেবে নিন এটাই আপনার শেষ সুযোগ।
আবরারের কথাগুলো শুনে গলা শু*কি*য়ে আসলো প্রিয়ার। মাথা হ্যা বোধক না*ড়ি*য়ে আবরারের সামনে থেকে দ্রুত কে*টে পড়লো সে। আপাতত চাকরি টা বাঁ*চা*নো দরকার। চাকরি থাকলে ওই মেয়ে কে সে পরে দেখে নিবে।
——–
কেবিনে গিয়ে আরশির পাশে চেয়ার টে*নে বসলো আবরার। প্রায় দেড় কি দুই ঘন্টা সময় নিয়ে আরশি কে সব টা ভালো মতো বুঝিয়ে দিলো। আবরার উঠতেই হাফ ছেড়ে বাঁ*চ*লো আরশি। এতো মনোযোগ দিয়ে তো সে ভার্সিটির ক্লাস ও করে না। আবার কতগুলো কাজ ও দিয়েছে যা টাইম ও*ভা*র হওয়ার আগে শেষ করতে হবে তাকে। আরশির ভাবনার মাঝে আবরার আরশির কানে ফিসফিস করে বললো,
— আমার পিছে পিছে ঘুরার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। এবার তো তোমাকে বে*য়া*দব থেকে ভদ্র বানিয়েই ছাড়বো।
আরশি দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে আবরারের উদ্দেশ্যে বললো,
— আর একবার বে*য়া*দব বলে দেখুন শুধু। আপনার মাথা টা এই… হ্যা এই পেপার ওয়েট টা দিয়ে ফা*টি*য়ে দিবো।
আবরার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
— কি সাং*ঘা*তি*ক মেয়েরে বাবা। অফিসের বস কে বলছে মাথা ফা*টি*য়ে দিবে। আমি নিতান্তই ভালো মানুষ বলে তোমাকে কিছু বললাম না। অন্য কেউ হলে তোমার চাকরি থাকতো না। এখন চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো নিজের ডেস্কে গিয়ে কাজ করো। একটু তি*ড়িং বি*ড়িং করলে তোমার আব্বাস স্যার কে ফোন করে জানিয়ে দিবো তুমি আবার বে*য়া*দবি করেছো। সেটা অবশ্যই চাও না?
আরশি আবরার কে একটা ক*ড়া লুক দিয়ে ধু*প*ধা*প পা ফেলে বাইরে চলে আসলো। আব্বাস আহমেদ লোকটার সাথে মাত্র একদিন দেখা হলেও তার প্রতি অনেক সম্মান জ*মে*ছে আরশির মনে। কি সুন্দর মন মানুষটার। কতো টা আদর, স্নেহ মিশিয়ে তাকে মামুনি বলে ডাকে। আরশি চায় না উনি আরশি কে ভু*ল বুঝুক।
——–
আজ কাজের তুলনায় দেয়ালে ফিট করা স্ক্রিন বেশি দেখছে আবরার। এখানে বসেই সব ফ্লোরের ভিডিও ফুটেজ দেখতে পায় সে। কিন্তু আজ তার চোখ যে একজনের উপরেই আ*ট*কে আছে। অন্য কিছু দেখায় মন নেই তার। মন টা যেনো কেউ একজন চু*রি করে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। আবরার স্ক্রিনে চোখ রেখে মুচকি হেসে বললো,
— আমার মন চু*রি করার শা*স্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।
——–
কাজের টাইম শেষ হয়ে যাওয়ায় নিজের ব্যাগ গু*ছা*চ্ছে আরশি। অনেকেই চলে গেছে আবার কেউ কেউ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় অচেনা একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো আরশির সামনে। ঠোঁটের কোণে হাসি ঝু*লি*য়ে বললো,
— হেই তোমার সাথে তো পরিচিত হতে পারলাম না। আমরা কি পরিচিত হতে পারি?
আরশি সৌ*জ*ন্যতার খা*তি*রে আলতো হেসে বললো,
— অবশ্যই। আমি আরশি।
অচেনা ছেলে টা মাথা চু*ল*কে বললো,
— আমি সামির। মাস্টার্স করছি। আর এখানে জব করি। তোমাকে দেখেও স্টুডেন্ট মনে হচ্ছে।
আরশি মাথা না*ড়ি*য়ে বললো,
— হ্যা আমিও স্টুডেন্ট। অনার্স ফাইনাল ইয়ার এ এবার।
সামির আরশির কিছু টা নিকটে এসে ফিসফিস করে বললো,
— আজ প্রিয়া ম্যাম এর যা ধো*লা*ই করলে না? সাব্বাস। এমন কিছু জবাব উনার প্রাপ্য ছিলো।
আরশি সামিরের কথা বলার ধরণে হেসে ফেললো। সামির কে ভীষণ মিশুক মনে হলো তার। সামির হেসে বললো,
— আরশি তোমার চোখ জোড়া মা*রা*ত্ম*ক সুন্দর। এমন আনকমন চোখের রঙ অনেক কম দেখা যায়। আচ্ছা তুমি কি লেন্স পড়েছো?
আরশি মাথা না*ড়ি*য়ে বললো,
— না তো। এটা আমার আসল লেন্স।
সামির বললো,
— অনেক সুন্দর। আমি তো ক্রাশ খেয়ে গেলাম।
আরশি ফিক করে হেসে দিলো। সামির ও তা*ল মিলালো আরশির সাথে। এই সবকিছুই দেখলো এবং শুনলো আবরার। চোখ মুখ শ*ক্ত হয়ে আসলো তার। সেও বাসায় যাওয়ার জন্যই কেবিন থেকে বেরিয়েছিলো। এসব দেখে আবার কেবিনে চলে গেলো সে। কেবিনে গিয়ে কন্টিনিয়াসলি বেল প্রে*স করতে লাগলো। আরশি বেলের শব্দ শুনে সামির কে বললো,
— সামির ভাইয়া স্যার ডাকছে। কোনো কাজ আছে হয়তো। আগামীকাল আবার কথা হবে কেমন?
সামির মাথা না*ড়ি*য়ে চলে গেলো। আরশি ও আ*গা*লো আবরারের কেবিনের দিকে। কাজের টাইম তো শেষ তাও কেনো আবরার বেল প্রে*স করছে ভেবে বি*র*ক্ত হলো আরশি। আবার নিশ্চয় কোনো গা জ্বা*লা*নো কথা বলবে ভেবে মুখ বাঁ*কা*লো সে।
চলবে?
(আস্সালামুআলাইকুম। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)