#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (২৪)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
ইউটিউব এ ১০-১৫ বার থামিয়ে থামিয়ে শাড়ি পড়ার ভিডিও দেখে অবশেষে শাড়ি পড়তে সক্ষম হলাম। মন থেকে কোনো কিছু করার জন্য দৃঢ় ইচ্ছে শ’ক্তি জাগালে বারবার চেষ্টা করার পর ঠিকই একসময় সেই কাল আছে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম।
চুলগুলো খো’পা করে শিউলি ফুলের বানানো মালা দিয়ে খোপার চারপাশ পে’চি’য়ে নিলাম। খোপার মাঝ অংশে বড় আকারের একটা কাঠ গোলাপ ফুল বসিয়ে দিলাম। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে সাদা পাথর বসানো মালা আর সাদা পাথরের ছোট সাইজের এক জোড়া ঝুমকো বের করে নিলাম পড়ার জন্য। তারপর ৩ ডজন হালকা গোলাপি আর সাদা পাথরের মিশ্রণে তৈরি চুরি বের করে সমান ভাগে ভাগ করে দুই হাতে পড়ে নিলাম।
দুই ভ্রুরুর মাঝ বরাবর হালকা গোলাপি রংয়ের। পড়লাম, টিপটাও পাথরের হওয়ায় লাইটের আলোয় চিকচিক করছিলো। ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দেওয়ার পর মনে হলো কিছু একটা এখনও মিসিং রয়েছে যার জন্য আমার সাজ সম্পন্ন হয় নি। পরমূহূর্তে দু’চোখে গাঢ় করোদ কাজল দিলাম, কাজল দেওয়ার অভ্যাস আমার নেই, তবে কি মনে করে যেনো দিলাম। পরিশেষে আরো একবার আয়নায় নিজেকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিয়ে মনে হলো এবার সাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।
পরক্ষণেই আমি আমার রুম থেকে বের হয়ে তীব্রের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলাম। তীব্রের রুমের দরজার সামনে দাঁড়াতেই দেখি তীব্র আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। আমি দরজায় দাড়িয়েই তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বললাম…
____”পিছন ঘুরবেন না, চোখ ব’ন্ধ করে ফেলুন আপনার সারপ্রাইজ তৈরি আছে তাই এখন চোখ খুলে রাখলে চলবে না।”
তীব্র কোনো কথা না বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ফে’লে। আমি ঘরের ভিতর প্রবেশ করে ওয়ারড্রপ থেকে রুমাল বের করে তীব্রের সন্নিকটে এসে সেই রুমাল দিয়ে ওনার চোখ বে’ধে দিলাম। আয়নায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখলাম তীব্রের ঠোটের কোনায় এক চিলতে হাসি লেগে আছে। আমিও মৃদু হেসে তীব্রের হাতে আমার হাত রাখলাম। তারপর বললাম…
____”এবার আমার সাথে চলুন।”
____”আমি তো কিছু দেখতে পারছি না যাবো কিভাবে?”
____”অ’ন্ধে’র ষষ্টী এর অর্থ জানা আছে আপনার?”
____”হুম।”
____”হুম, এখন নিজেকে অ’ন্ধ মনে করুন আর আমাকে অন্ধের ষষ্টী মনে করুন। এই যে আমি আপনার হাত ধরে আছি আমিই আপনাকে সঠিক গন্তব্যে নিয়ে যাবো। চুপচাপ আমার সাথে চলুন।”
তীব্র মাথা নাড়িয়ে যাওয়ার জন্য সম্মতি জানায়। আমি তীব্রের হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে আসি। ধীরপায়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করি। মিনিট ৫-৬ হাটার পর অবশেষে গন্তব্যে এসে পৌঁছাই। রহমান মন্ঞ্জিলের পিছন পার্শে অনেক ফুল ও সবজির সমারহ নিয়ে একটি বাগান রয়েছে। বাগানের মাঝ অংশে গোলাকার ঘর রয়েছে, ঘরটির চারপাশে কোনো দেওয়াল নেই ছয়টি পিলার এর উপর (ভি) শে’প এ ছা’উ’নি উঠানো। এক পার্শে তিনটে সিঁড়ি দেওয়া, সিড়ির অংশ টুকু ফাকা রেখে চারপাশ রেলিং দিয়ে ঘেরা, মেঝেতে সাদা টাইলস বসানো রয়েছে। মাঝ অংশে হওয়ায় সেখানে দাড়ালে সম্পূর্ণ বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
শফিক ভাইয়াকে দিয়ে বাহির থেকে কাঠগোলাপ ও গোলাপি-সাদা রংয়ের মিশ্রণের গোলাপ ফুল দিয়ে সেই জায়গাটাকে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে নিয়েছিলাম। ঘরটির মাঝ অংশে একটা টেবিল বসিয়ে সম্পূর্ণ জায়গাটিকে আলোকিত করতে রং বেরংয়ের মোমাবাতি দিতে বলেছিলাম। চারপাশটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করি ফুলের সুভাস আর ডেকোরেশনের কারুকার্যে চারপাশ নজরকারা সৌন্দর্যে ভরপুর হয়ে উঠেছে।
____”তৃপ্তি এবার তো আমার চোখের বা’ধ’ন খুলে দাও। তোমার সারপ্রাইজ দেখার জন্য আমার চোখ জোড়া ও মন অ’স্থি’র হয়ে আছে ভিষণ।”
তীব্রের কন্ঠ কর্ণপাত হতেই আমার ঘো’র কা’টে। আমি ঠোঁট চে’পে হেসে তীব্রের সন্নিকটে এসে বললাম…
____”উমম নি’চু হন একটু, এমন আইফেল টাওয়ারের মতো লম্বা হয়েছেন যে বাঁ’ধ’ন খুলতে অ’সু’বি’ধা হচ্ছে।”
আমার কথা শোনামাত্র তীব্র হেসে দিয়ে বলে…
____”হো’য়া’ট! আমার হাইট কে তুমি আইফেল টাওয়ারের সাথে তুলনা করলে! ঠু ফানি। নাও নি’চু হলাম মিসেস.লিলিপুট এবার বা’ধ’ন খুলে দিয়ে আমাকে উ’দ্ধা’র করুন।”
আমি কন্ঠে কিছুটা রাগ মিশ্রিত করে বললাম…
____”এই এই একদম আমাকে লিলিপুট বলবেন না। আমি কিন্তু মোটেও এতোটা সর্ট নই, আমার হাইট ৫’৪” হুহ। আর মেয়েদের জন্য এটাই ঠিকঠাক।”
____”ওক্কে মেরি বউজান, আমার ভু’ল হয়ে গিয়েছে আপনাকে লিলিপুট বলা আমার একদম উচিত হয় নি। এবার অন্তত আমার চোখের বাঁধন খুলে দাও, ব্য’থা হয়ে গেলো তো চোখ জোড়া, এতো শক্ত ভাবে কেও বা’ধে!”
আমি হালকা হেসে তীব্রের চোখের বা’ধ’ন খুলে দেই। বা’ধ’ন খুলে দেওয়া মাত্র তীব্র একহাতে ওর দু’চোখ হালকা ঘ’ষা দিয়ে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে চোখ মেলে। আমি ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে নিজের দৃষ্টি তীব্রের মুখশ্রীর উপর স্থির করে রেখেছি। তীব্রের দৃষ্টি যেনো মূহুর্তেই আমার উপর আটকে গিয়েছে। বিষয়টা লক্ষ্য করতেই আমার মাঝে লজ্জার বহিঃপ্রকাশ ঘ’ট’লো। তীব্রের উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মেঝেতে স্থির করলাম। তীব্র অস্পষ্ট স্বরে বললো….
____”মাশাআল্লাহ, আজ দুটো চাঁদ একসাথে দেখার সৌভাগ্য হলো আমার। মাথার উপর ভরা পূর্ণিমার চাঁদের থেকেও অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারীনী একটুকরো চাঁদ আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।”
তীব্রের মুখে নিজেকে চাঁদের থেকেও সুন্দর বলে ব্য’ক্ত করতে শুনে লজ্জায় আমার মাটি ভে’দ করে নিচে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। নিজের মনকে নিজে জিঙ্গাসা করলাম…
____”বে’হা’য়া মন আমার, নিজেই তীব্রের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সবসময় ব্য’কু’ল হয়ে থাকিস আজ যখন সেই সময় এসেছে তখন এতো বেশি লজ্জায় রাঙান্বিত হচ্ছিস কেনো! লজ্জায় কি এখনি ম’রে যেতে চাস! তবে তীব্রের ভালোবাসা বিনিময়ের প্রতিটি মূহূর্তকে অনুভব করবি কি করে!”
তীব্রের থেকে আমার দুরত্ব মাত্র একহাত পরিমাণ। হু’ট করেই বুঝতে পারলাম তীব্র আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তীব্রের এক একটি কদম আমার শরীর কা’পি’য়ে কা’পি’য়ে তুলছে, প্রতিটি লো’ম’কূ’প দাড়িয়ে গিয়েছে, মেরুদণ্ডের শি’র’ডা’রা বেয়ে শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, হৃ’দ’পি’ন্ডে’র গ’তি স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেক গু’ণে বে’রে গিয়েছে। বারকয়েক শুকনো ঢো’ক গি’লে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলাম। তারপর তীব্রের কদম ফেলার তালে তালে আমিও পিছনের দিকে কদম ফেলতে শুরু করলাম। আমি যতো পিছিয়ে যাচ্ছি তীব্র ও আমার দিকে ততো অগ্রসর হচ্ছে। মন আমার মস্তিষ্কে প্রশ্ন করছে….
____”এ কোন অনুভূতির সামনে দাঁড়িয়েছি আজ আমি! এই অনুভূতির নাম কি!”
মনের মধ্যে প্রশ্নগুলো পে’চ লাগিয়ে ফেললেও কোনো উত্তর আমি খুজে পাচ্ছি না। চোখ বন্ধ রেখে পিছনের দিকে পি’ছা’তে পি’ছা’তে রুমটির একদম শে’ষ মাথায় সিঁড়ির কাছে এসে আরেক কদম পিছিয়ে যেতে নিতে ধরলেই তীব্র আমার ডান হাত ধরে হ্য’চ’কা টা’ন দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেন।
হু’ট করে তীব্রের এমন কাজে আমি কিছুটা ভ’য় পেয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে চোখ-মুখ খি’চে বন্ধ করে ফেলি। পরমূহূর্তে অনুভব করি তীব্র আমার কমোরে নিজের হাত রেখে আরো গভীর ভাবে নিজের সাথে আমাকে মিশিয়ে নিচ্ছে। তীব্রের এই স্পর্শ গুলো আজ আমাকে যেনো শে’ষ করে দিচ্ছে। ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম গুলো বুঝতে সক্ষম হলে বুঝি এমন অদ্ভুত রকম অনূভুতি হয়!
তীব্র আমার ডান কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে….
____”আই ওয়ান্ট ইউ ব্য’ড’লি মিসেস.তীব্র রহমান।”
তীব্রের বলা এই মূহূর্তের সাতটি শব্দ আমার হৃ’দ’পি’ন্ড’কে কা’পি’য়ে তুললো যেনো। আমি আমার ডান হাত দিয়ে তীব্রের বুকের বাম পার্শ্বের শার্ট খা’ম’চে ধরি। তীব্রের গরম নিঃশ্বাস আমার ডান কান ও ঘাড়ের একপার্শে আ’চ’ড়ে পড়ছে। নিজেকে কি বলে কি করে শান্ত করবো ভেবে পারছিনা। মনে হচ্ছে অ’শা’ন্ত সাগরের মাঝে আমাকে কেও ফে’লে দিয়েছে। এখন সেই সাগরের ঢেউয়ের তালের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে নয়তো ত’লি’য়ে যাবো সাগরের একেবারে ত’ল’দেশে। তীব্র আমার ডান গালে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিতেই আমি আরো শক্ত ভাবে তীব্রের শার্ট খা’ম’চে ধরি।
পরমূহূর্তে তীব্র আমাকে তার কোলে উঠিয়ে নেন, আমি তীব্রের বুকের মাঝে নিজের মুখ লুকিয়ে রাখি, লজ্জা এবার পুরোপুরি ভাবে আমাকে তার গ্রা’সে আয়ত্ত করে নিয়েছে। তীব্র সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো…
____”ধন্যবাদ তোমাকে, আমাকে এতো বেশি সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। এবার পুরোপুরি ভাবে মিসেস.রহমান হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো। আজকের এই সুন্দর পূর্ণচাদের রাতকে সাক্ষী রেখে তোমাকে একান্ত নিজের করে নেবো। আজ কোনো ভাবে তোমার ছা’ড় হবে না!”
তীব্রের প্রতিটি কথা আমার শরীরকে শি’হ’রি’ত করে তুলছে। মনে হচ্ছে… যা হচ্ছে হতে থাক এ অনুভূতি গুলোর কখনও শে’ষ না হোক। তীব্র আমাকে কোলে নিয়েই বাড়ির ভিতর চলে আসে, সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। উপরে এসে রুমের ভিতর প্রবেশ করে তীব্র আমাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারে বসিয়ে দেয়। আমি আমার দৃষ্টি নিচের দিকে স্থির রেখেছি। আমার সম্পূর্ণ মুখশ্রীতে লজ্জা ভাব স্পষ্ট ভাবে ফুটে আছে। তীব্র রুমের দরজা ভিতর থেকে আটকে দিয়ে আবারও আমার সন্নিকটে এসে দাঁড়ায়। আমার ডান কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে…
____”আজ তোমার মাঝেই আমার পূর্ণতা খুজে পাবো। তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতার সার্থকতা আজ মিলবে।”
আমার ডান কানের ঝুমকো খুলে দিয়ে আলতো করে ভালোবাসার পরশ একে দেন। একই ভাবে বাম কানের ঝুমকো খুলে দিয়ে সেখানেও ভালোবাসার আরেকটি পরশ একে দেন। আমি আমার শাড়ির দু’পাশ দু’হাতে খা’ম’চে ধরে এই ভালোলাগার য’ন্ত্র’ণা গুলো স’হ্য করছি। আমার গলার মালাটি খুলে দিয়ে ঘাড়ে খুব ডি’প’লি ভাবে ঠোঁটের পরশ একে দেন তীব্র। আমি আর না পেরে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ছু’টে জানালার সামনে এসে গ্রি’ল ধরে দাঁড়াই, জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করি।
তীব্র ধীরপায়ে আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন আমি তা বুঝতে সক্ষম হই। আমি জানালার গ্রিল আরো শ’ক্ত ভাবে ধরি সেইমূহূর্তে তীব্র পিছন থেকে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেন। আমি ডুবে যাই যেনো তীব্রের মাঝে। তীব্র আমাকে তার ভালোবাসার চাদর দিয়ে সম্পূর্ণ ভাবে মু’ড়ি’য়ে ফে’লে’ন।
#চলবে…….
[এই বাচ্চারা তোমরা এখনও আছো 😶 কি দেখছো শুনি? যাও এখান থেকে বাকিটা তীব্র কা’কু আর তৃপ্তি কাকীমা বুঝে নিবেন আমিও কিছু জানি না তোমরাও না। চোখ ব’ন্ধ করো 🫣😣]