তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতা পর্ব ১৯

0
1021

#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (১৯)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

মধ্য বয়সের লোকটি ধ*র*ফ*রি*য়ে উঠে তীব্রকে নিজের সামনে দেখতে পেয়ে চোখ যেনো কো*ট*র থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়। তীব্র ইশারায় মধ্য বয়সের লোকটির মুখে বে*ধে রাখা কাপড়টি খুলতে বলে। তীব্রের পাশে বালতি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকা কালো পোশাকধারী লোকটি হাতের বালতিটি মেঝেতে রেখে মধ্য বয়সের লোকটির পিছনে গিয়ে মুখের বা*ধ*ন খুলে দেয়।

মুখের বাধণ খোলা পেতেই লোকটি জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে থাকে , খা*চা থেকে স*দ্য মু*ক্তি পাওয়া পাখিরা যেমন খোলা আকাশে ডানা ঝা*প্টা*তে পেরে অমায়িক সুখ লাভ করে তেমনি মধ্য বয়সের লোকটিও প্রা*ণ ভ*রে নিঃশ্বাস নিতে পেরে নিজের মাঝে সেই সুখ লাভ করে।

তীব্র নিরব থেকেই নিজের কপালের ডান পার্শে ব*ন্দু*ক এর মাথা ঠেকিয়ে আলতো করে ঘ*ষা দিচ্ছে। তীব্রের এই নীরবতা যেনো বড় কোনো ঝ*ড়ে*র পূর্বা*ভা*স , মধ্য বয়সের লোকটি নিজের দৃষ্টি চ*ন্ঞ্চ*ল রেখে বারবার শুকনো ঢো*ক গি*ল*ছে। চোখের পলক না পড়তেই তীব্র লোকটির ডান হাটুতে সু*ট করে। সঙ্গে সঙ্গে মধ্য বয়সের লোকটি ক*রু*ণ আ*র্ত*না*দ করে উঠে। তীব্র উচ্চস্বরে ক*র্ক*শ কন্ঠে লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে…

____”চুপপপপপপপ……”

তীব্রের ধ*ম*ক মিশ্রিত উচ্চস্বর কর্ণপাত হতেই মধ্য বয়সের লোকটি ঠোঁটের সাথে ঠোঁট চে*পে য*ন্ত্র*ণা স*হ্য করে নেওয়ার দ*রু*ণ প্রচেষ্টা চালায়। কিয়ৎক্ষণ পর তীব্র আবারও বলে উঠে…..

____”আমার আ*ন্ডা*রে এতোগুলো বছর ধরে কাজ করে আসছিস সেই আমার সাথেই এতো বড় বিশ্বাস*ঘা*ত*ক*তা করতে তোর রু*হু কা*প*লো না রে ….জা*নো…. ভাবলি না একবার ও আমি তোদের এই কার্য কলাপের কথা জানতে পারলে তোদের জীবনে ঠিক কোন ভ*য়া*ব*হ দিন গুলো আসতে পারে!

তীব্রের কথা বলার মাঝেই মধ্য বয়সের লোকটি অ*নু*ন*য়ে*র স্বরে বলে উঠে…

____”আমাকে ক্ষ*মা করে দিন ব*স , টাকার লো*ভ আমাকে তার কালো চাদর দিয়ে এমন ভাবে জ*র্জ*রি*ত করে নিয়েছিলো যে কোনটা সঠিক কোনটা ভু*ল সেই দিক-বে*দিক না ভেবেই প্রতিটি প*দ*ক্ষে*প নিয়ে ফেলেছিলাম।”

____”লো*ভে পা*প আর পা*পে মৃ*ত্যু। তুই যে চরম পা*প কাজগুলো করে এসেছিস তই তোর জন্য ভ*য়া*ব*হ মৃ*ত্যু অপেক্ষা করছে।”

____”বস আপনি যা বলবেন সেই সব কথা , কাজ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। আর কখনও বিশ্বাস*ঘা*ত*ক*তা করবো না।”

মধ্য বয়সের লোকটির মুখে এহেনু কথা শুনে তীব্র রুম কা*পি*য়ে হাসতে শুরু করে। তীব্রের হাসির প্র*তি*ধ্ব*নি মধ্য বয়সের লোকটির রু*হু কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে তুলছে। পরমুহূর্তেই তীব্র হাসি থামিয়ে রাগে হি*স*হি*সি*য়ে বলে…

____”আমার ডিকশিনারিতে বিশ্বাস*ত*ক*দে*র জন্য ক্ষ*মা বলতে কোনো শব্দ নেই। তোর মৃ*ত্যু অ*ব*ধা*রি*ত।

মধ্য বয়সের লোকটির সর্ব শরীর ঘে*মে একাকার অবস্থা।
তীব্র ওর হাতে থাকা ব*ন্দু*ক*টি লোকটির মাথা বরাবর ধরে আবারও বলে….

____”কতোটুকু জানিস তুই দ্রুত সব বল…!”

লোকটিকে নিরব থাকতে দেখে তীব্র ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কালো পোশাকধারী লোকটিকে ইশারা করে। ইশারা পেতেই কালো পোশাকধারী লোকটি মেঝে থেকে আরেকটা বালতি উঠিয়ে নিয়ে মধ্য বয়সের লোকটির উপর ছু*ড়ে মা*রে। এবারের পানিগুলো আগের তুলনায় দ্বি’গুণ গরম ছিলো। চামড়া ঝ*ল*সে যাওয়ার উপক্রম হয় যেনো লোকটির। আবারও কলিজা ছে*ড়া আ*র্ত*না*দ করে উঠে। তীব্র সঙ্গে সঙ্গে হাতে থাকা ব*ন্দু*ক*টি লোকটির মুখের ভিতর ঢু*কি*য়ে দেয়। মধ্য বয়সের লোকটি য*ন্ত্র*ণা*য় ওভাবেই ‘উমমম’ ‘উমমম’ স্বরে কা*ত*ড়া*তে থাকে। কিয়ৎক্ষণ পর তীব্র লোকটির মুখের ভিতর থেকে ব*ন্দু*ক*টি বের করে বলে…

____”বললললললল ….শু*য়া ….

মধ্যবয়সের লোকটি মুখ দিয়ে লা*লা ফেলতে ফেলতে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নিয়ে বলতে শুরু করে….

————————-
সাল ২০১৭…….
~~~~~~~~~
তীব্রকে হ*ত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো অনেক পূর্ব থেকেই। কিন্তু অত্যন্ত ধূ*র্ত , চা*লা*ক , বুদ্ধি সম্পন্ন , পা*ও*য়া*র ফু*ল , হিং*স্র , রু*ক্ষ মে*জা*জে*র হওয়ায় কেও ই সেই সাহস করে উঠতে পারে নি। দিন কাটতে থাকে। তীব্রের আঁধারে নি*ম*জ্জি*ত জীবনে আলোর দিশা হয়ে আসে নূরা। যার সংস্পর্শে এসে তীব্রের মাঝে পরিবর্তন লক্ষ্য হয়। তীব্র ওর পা*পে*র রাজত্ব ত্য*গ করে ধীরে ধীরে নিজেকে সাধারণ মানুষ হিসেবে তৈরি করতে শুরু হয়।

বেশিরভাগ সময় নূরার সাথে আর অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের সাথে থেকেই কাটিয়ে দেয়। তীব্রের এমন হু*ট করে পরিবর্তন হওয়াকে ওর পক্ষ দলের অনেকেই মেনে নিতে পারে না। করণ তীব্রের পরিবর্তন এর জন্য তারা অনেক বড় একটা শ*ক্তি হা*রি*য়ে ফেলবে , যা কোনো না কোনো সময় তাদের হু*ম*কি*র মুখে ফে’লে দিতে পারে। তাই তীব্রের পক্ষ দলের লোকেরা একত্র হয়ে কূ*ট বুদ্ধি আ*টে আর তীব্রের বি*প*ক্ষ দলের সাথে হাত মিলায়। তীব্রের বি*পক্ষ দলের লোকরা এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলো যেনো।

তারা সকলে মিলে প্লা*ন করে অন্য একজন মেয়ের প্লাস্টিক সা*র্জা*রি করে নূরার চেহারা বসিয়ে দিবে। নূরাকে কি*ড*ন্যা*প করে সেই মেয়েটিকে পাঠিয়ে দিবে তীব্রকে হ*ত্যা করে। কিন্তু সেইমূহূর্তে ওরা আরো একটি বড় তথ্য জানতে পারে। জাবেদ ইসলামের বড় মেয়ে বিদেশ থেকে ফিরবেন কিছুদিন পরই , ওর নাম তিলত্তমা তারিন। তারিন এর চেহারার সাথে হুবহু মিল আছে নূরার চেহারার।

তীব্রের গু*লি*র আ*ঘা*তে জাবেদ ইসলামের ছোট মেয়ে নিরা আ*হ*ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলো। ডাক্তারকে মো*টা অংকের টাকা দেয় আর নিরাকে ভু*ল চিকিৎসার মাধ্যমে মে*রে ফেলতে বলা হয়। ডাক্তার ও টাকার লো*ভে জ*র্জ*রি*ত হয়ে নিরাকে মে*রে ফেলে। কোম্পানি হা*ত*ছা*ড়া হওয়ার পরপরই ছোট মেয়ের মৃ*ত্যু সংবাদ শুনে জাবেদ ইসলাম মানসিক ভাবে ভে*ঙে পরে।

জাবেদ ইসলাম তার নিজ বাসভবন ইসলাম মঞ্জিলে এসে তারিনকে উল্লেখ করে চিঠি লিখে, আ*ত্ন*হ*ত্যা করবেন বলে মনঃস্থির করেন। এমন মানসিক য*ন্ত্র*ণা নিয়ে বে*চে থাকা যেনো অ*সম্ভব হয়ে উঠেছে জাবেদ ইসলামের জন্য। সেইমূহূর্তে তীব্রের বি*পক্ষ দলের কয়েকজন লোক এসে জাবেদ ইসলামের উপর আ*ক্র*ম*ণ করে।

শ্বা*স*রো*ধ করে তাকে হ*ত্যা করে তারই ঘরের সেলিং এর সাথে ঝু*লি*য়ে রাখে, যেনো সকলে দেখে ভাবে জাবেদ ইসলাম স্বইচ্ছায় আ*ত্ন*হ*ত্যা করেছেন। তারিন নির্ধারিত সময়ের ২ দিন পূর্বেই দেশে ফিরে নিজের বাবা-বোনের মৃ*ত্যু সংসাদ শুনে , জাবেদ ইসলামের লেখা চিঠিটি পড়ে রা*গে ক্ষো*ভে ফে*টে পরে। সেইমূহূর্তে তীব্রের বি*পক্ষ দলের লোকেরা তাদের প্লা*ন এর ম*ক্ষ*ম চা*ল চা*লে।

তারিনকে নিজেদের আ*স্তা*না*য় ডেকে আনে। তারপর তারিনকে বুঝিয়ে বলে কিভাবে তীব্রকে হ*ত্যা করতে হবে। তারিনকে নূরার জায়গায় পাঠানোর পূর্বে নূরাকে সেখান থেকে স*রি*য়ে আনতে হবে। আশ্রমের কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে কিনে নেয় তীব্রের বি*পক্ষ দলের লোকেরা। আশ্রমের কর্মকর্তা ও তাদের কথানুযায়ী তীব্রের অনু*প*স্থি*তে নূরার উপস্থিতি দেখে ফোনে কথা বলার অভিনয় করে , নূরাকে শুনায় ওরা আশ্রমের বাচ্চাদের পা*চা*র করার পরিকল্পনা করছে আজ রাতেই (.ঠি..কা..না.) জায়গায় নিয়ে যাবে ।

নূরাও ওদের ফা*দে পা দেয় , তীব্রকে না জানিয়ে আশ্রমের বাচ্চাদের বাচাতে একাই সেই ঠিকানায় চলে যায়। তীব্রের বি*পক্ষ দলের লোকেরা সেইমূহূর্তে নূরাকে কি*ড*ন্যা*প করে নেয়। আর নূরার বে*শে তারিনকে আশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। তারিন আশ্রমে এসে শফিককে বলে সে যেনো রহমান মন্ঞ্জিলে তীব্রের কক্ষ খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। নূরা তীব্রকে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করবে এমনই বলে।

তীব্র ও খুশি মনে নিজ বাসায় আসে। তারিন সেদিন নিজেকে নিজের মতো করে সাজিয়েছিলো। নূরা কিভাবে সাজতে পছন্দ করতো তা সম্পর্কে জানতো না। নূরার কথা বলার ধরণ তীব্রের সাথে কেমন ছিলো সে সম্পর্কেও জানতো না। সব নিজের মতো করেই করে তারিন। বি*পক্ষ দলের লোকেরা তীব্রকে হ*ত্যা করতে তারিনকে একটা বি*ষ মাখানো ছু*রি দেয়। তীব্রকে দূ*র্ব*ল করে দিতে পারে এমন ঔ*ষ*ধী ড্রিং*ক*স এ মিশিয়ে খাইয়ে দিতে বলে। তারিন ও সেই অনুযায়ী কাজ করে।

তীব্রকে ড্রিং*ক*স করিয়ে দূ*র্ব*ল বানিয়ে ওর বুকে সেই বি*ষ মাখানো ছু*রি বসিয়ে দেয়। নিজের মনের মধ্যে পু*ষে থাকা সব রা*গ , ক্ষো*ভ তীব্রের উপর প্রকাশ করে ঠিকই কিন্তু তীব্রের মৃ*ত্যু নিশ্চিত না করেই স্থান ত্য*গ করে।

————————
বর্তমান…..

মধ্য বয়সের লোকটির কথাগুলো শোনামাত্র তীব্র স্ত*ব্ধ হয়ে যায় যেনো কিছুসময়ের জন্য। এতো নি*খু*ত পরিকল্পনা করেছিলো ওরা। সেদিন ওদের এই খা’রা’প পরিকল্পনা সফল ই হতো যদি না শফিক আসতো সঠিক সময়ে। সেদিন শফিক কোনো একটা কাজে রহমান মন্ঞ্জিলে আবারও আসতে বা*ধ্য হয়। মূল দরজা খো*লা দেখে দ্রুত পায়ে তীব্রের রুমে এসে দেখে তীব্র উ*বু হয়ে মেঝের উপর পরে আছে। তীব্রের চারপাশ র*ক্ত দিয়ে একাকার অবস্থা।

শফিক দ্রুত গা*র্ড*দের ডেকে ওদের সহায়তায় তীব্রকে হাসপাতালে ভর্তি করে। তীব্রের বুক ছি*দ্র করা ছু*রি*তে যে বি*ষ ছিলো তা খুবই খা*রা*প বি*ষ ছিলো। আর ক্ষ*ত টাও বেশ গভীর হওয়ায় তীব্রের সুস্থ হয়ে বেশ কয়েকমাস লেগে যায়। নূরা রূপী তারিনের থেকে এতো বড় আ*ঘা*ত পেয়ে তীব্র মনে মনে ভিষণ আ*হ*ত হয়৷ এ বিষয় নিয়ে আর খো’জ ও করে নি। আবারও নিজের পুরোনো মা*ফি*য়া ক্য*রে*ক্টা*র এ ফিরে আসে।

#চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here