তোমাতেই খুজি আমার পূর্ণতা পর্ব ১৮

0
1108

#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (১৮~বো’না’স পর্ব)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

তীব্রের সর্বশরীর রা’গে কাঁপছে এটা ভেবে যে ওর পিঠ পিছনে ওর ই বিশ্বস্ত লোকেরা এভাবে ওর সাথে বি’শ্বা’স’ঘা’ত’ক’তা করে এসেছে আর ও কখনও বুঝতেও পারে নি৷ তীব্র বিকালে আ’ঘা’ত পাওয়া ওর সেই হাত দিয়ে আবারও রেলিং এর উপর ঘু’ষি প্রয়োগ করতে উদ্দ্যত হলে আমি ওর হাত ধরে ফে’লি। উ’ত্তে’জি’ত কন্ঠে বলি….

____”আরে কি করছেন , বিকালেই এই হাতে কতোটা আ’ঘা’ত করে ক্ষ’ত বানিয়ে ফেলেছিলেন এখন আবার সেই হাতেই আ’ঘা’ত করতে উদ্দ্যত হচ্ছিলেন! এভাবে নিজের শরীরে আ’ঘা’ত করে লাভ কি! সব দো’ষী , অ’ন্যা’য়’কা’রী দের খুজে বের করতে হবে আর ক’ঠি’ন থেকে ক’ঠি’ন’ত’র শা’স্তি ওদের দিতে হবে। সবসময় রাগকে প্রশ্রয় দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত না , নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। রা’গে’র বশে নেওয়া প্রতিটি সিদ্ধান্ত সঠিক হয় না , বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই আমাদের চ’র’ম ক্ষ’তি’র সম্মুখীন করে। বুদ্ধি প্রয়োগ করে আমাদের প্রতিটি পদক্ষে………

আমি আমার কথার শে’ষ করার পূর্বেই হু’ট করেই তীব্র আমাকে খুব শ’ক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আমি যেন মূহূর্তেই হ’ত’বি’হ্ব’ল হয়ে যাই। সর্ব শরীর অ’ব’শ হয়ে আসছে। কিয়ৎক্ষণ পর অনুভব করি আমার ডান কাধের একটু ফাঁকা অংশে গরম কিছু পড়ছে ট’প ট’প করে , বুঝতে পারি তীব্র কাঁদছে। বুকের ভিতরটা ধ’ক করে উঠে , এতো ক’ঠি’ন হৃ’দ’য়’হী’ন মানুষ ভাবি যাকে সে কি না কাঁদছে! কাপা কাপা হাত দুটো উঠিয়ে তীব্রের পিঠের উপর রাখলাম , আমার চোখ জোড়াও ইতিমধ্যে নোনা জলের পুকুরে পরিণত হয়েছে। কন্ঠ ধ’রে আসছে , কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছি না। আমার মন বু’লি আ’ও’রি’য়ে মস্তিষ্ককে জানান দিচ্ছে…..

____”কা’দ’তে দে একটু মানুষটাকে, জীবনে অনেক পা’প করেছে ভালোভাবে না জেনেই রাগের ব’সি’ভূ’ত হয়ে অনেক ভু’ল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাঁদলে মনের ভিতর জমা ক’ষ্টে’র ভা’ড়ি পাহাড়টা অনেক হালকা হয়ে যাবে।”

আরো বেশকিছু সময় পেড়িয়ে যায়, তীব্র নিজ থেকেই আমাকে ছে’ড়ে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে পরে। হয়তো নিজের কা’ন্না গুলো আর প্রকাশ করতে চাইছে না। আমি ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ছে’ড়ে তীব্রের কাঁধে হাত রাখলাম। তীব্র ভেজা কন্ঠে বললো…..

____”এই আ’ধা’রে ঢা’কা জীবন থেকে বে’ড়ি’য়ে এসে নূরাকে নিয়ে নিজের ভবিষ্যত সাজিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। ভিষণ ভালোবাসতাম ওকে , ওর মুখে নিজেকে নিয়ে ভালোবাসা মাখা কথা শুনতে মন অ’স্থি’র হয়ে থাকতো আমার। অবশেষে যেদিন সেই সময় আসলো সেদিনই ওকে আমার থেকে কে’ড়ে নেওয়া হলো। আমাকে ম’র’ণে’র থেকেও গভীর আ’ঘা’ত করলো আমার নূরপাখির রূপ ধা’রী অন্য এক নারী।

গত ৫ টা বছর ধরে এই দ’হ’নে আমি জ্ব’লে’ছি, ভেবে এসেছি কাওকে প্রকৃত ভাবে ভালোবাসা চরম মূ’র্খ’তা। নিজের অ’স্তি’ত্বকে ভু’লে কাওকে খুব করে ভালোবাসলে তার থেকে ভালোবাসা নয় চরম বি’শ্বা’স’ঘা’ত’কা পেতে হয়। সমগ্র নারী জাতির উপর আমার রা’গ , ক্ষো’ভ , ঘৃ’ণা’র সৃষ্টি হয়। মনে হয় সব নারীই ছ’ল’না’ম’য়ী , প্রথমে ভালোবাসা নামক পবিত্র জিনিসটা নিয়ে ছ’ল’না’র চাদর বিছাইবে তারপর সেই চাদরে যখন কেও নিজেকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিবে ঠিক সেই সময় নারী তার আসল রূপে এসে বুকের বাম পার্শ্বে যেখানে তাকে নিয়ে গড়ে তোলা সকল অনুভূতি গুলো বাস করে সেখানে আ’ঘা’ত হে’নে ক্ষ’ত-বি’ক্ষ’ত করে দিবে।

তুমি সত্যিই বলেছো তৃপ্তি , আমার চোখের উপর ভা’ড়ি পর্দা টা’ঙা’নো আছে। যে পর্দা আমি নিজে খুব যত্ন নিয়ে টা’ঙি’য়ে’ছি। ভু’ল করে এসেছি , চরম ভু’ল , যে ভু’ল গুলো কখনও ক্ষ’মা’র যোগ্য না। টাকার লো’ভে জ’র্জ’রিত হয়ে কতো কতো মানুষের অ’স’হা’য়’ত্বে’র সুযোগ নিয়ে তাদের সর্বস্ব কে’ড়ে নিয়েছি , খু’ন করতে দু’বার ভাবি নি। ২য় তো যাকে এতো বেশি ভালোবাসলাম তাকে সঠিক ভাবে না চিনেই দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে নিজের মাঝে ভু’ল ধারনার বিরাজ রাখলাম।

৩য় তো সেই ভু’লে জ’র্জ’রি’ত হয়ে আমি আবার ও ভু’ল করলাম , অ’ন্যা’য় করলাম , আমার প্রতি থাকা তোমার সব সত্য অনুভূতি , ভালোবাসার সাথে ছ’ল’না করলাম , কতো অ’ত্যা’চা’র করেছি তোমার সাথে। আমার মতো পা’পী মানুষের বে’চে থাকাও সবথেকে বড় পা’প। সকল অ’ন্যা’য় কারীদের খুব দ্রুতই তাদের পা’পে’র শা’স্তি দিবো আমি আমার নিজ হাতে। এতে যদি জীবনে করা হাজার হাজার পা’পে’র পরিমাণ গুলো একটু হলেও কমে যায়। তারপর…..

এতোসময়ের জ’মে থাকা নোনাজল গুলো এবার আর বা’ধ মানলো না। বা’ধ ভে’ঙে বেড়িয়ে এলো , আমার ঠোঁট জোড়া কাঁপছে অনবরত কাঁপছে। বুকের ভিতরের সব য’ন্ত্র’ণা গুলো বুক চি’ড়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। কা’পা কা’পা কন্ঠে বললাম…..

____”ত তা তার তারপর! তারপর ক কি! কি ক কর করবেন আ আপ আপনি!”

তীব্র আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। এখন আর ওর চোখে নোনা জল চিক চিক করছে না। মুখের আকৃতি ও স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। ওনার এই স্বাভাবিক রূপ আমার ভিতরটা আরো গভীর ভাবে ক্ষ’ত-বি’ক্ষ’ত করে দিচ্ছে। তীব্র স্মিত হাসলেন , আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন…..

____”তারপর যা করবো , যা হবে সব নিজের চোখেই দেখতে পারবে। এতো উতলা হয়েও না , এবার থেকে আমার নেওয়া সকল সিদ্ধান্তই সঠিক হবে , ভু’ল আর করবো না।”

আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। ঝা’পি’য়ে পড়লাম তীব্রের বুকের উপর। আমার আকস্মিক এমন কাজে তীব্র দু’ক’দ’ম পিছিয়ে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন। ডু’ক’রে কেঁদে উঠলাম আমি , কেনো যেনো মনে হচ্ছে এই মানুষটাকে আমি হা’রি’য়ে ফেলবো। যতো কিছুই হয়ে যাক না কেনো এই মানুষটাকে তো আমি আমার সবটা দিয়ে ভালোবেসেছি , এখনও বাসি। যতোই বলি না কেনো ওনার প্রতি আমার ঘৃ’ণা কাজ করে কিন্তু আমার ভালোবাসার কাছে সেই ঘৃ’ণা’র দেওয়াল অত্যন্ত ন’গ’ন্য। কোনো ভাবেই আমি হারাতে চাই না এই মানুষটাকে। কাঁদতে কাঁদতে বলি….

____”যখন কেও নিজের করা সব অ’ন্যা’য় , পা’প কাজগুলোর জন্য অনুতপ্ত হয় আর পরবর্তীতে কিছু ভালো কাজ করে তখন তাকে ক্ষ’মা করে দেওয়া উচিত। আপনার জন্য আমার মনে রা’গ , ঘৃ’ণা কিয়ৎক্ষণ পূর্বে থাকলেও এখন আর নেই। আমি আপনাকে অনেক অনেক বেশিই ভালোবাসি , আপনাকে আমি হা’রা’তে পারবো না।”

কথাগুলো বলতে বলতেই আমি সে’ন্স হা’রি’য়ে ফেলি। যখন মাথায় খুব বেশি প্রে’সা’র পরে বা আমি খুব ভ’য় পাই বা খুব কা’দি তখন হু’ট করেই সে’ন্স হা’রি’য়ে ফেলি।

তৃপ্তি নীরব হয়ে গিয়েছে দেখে তীব্র তৃপ্তিকে পাঁজা কোলে উঠিয়ে বেলকোনি থেকে রুমের ভিতর চলে আসে। তৃপ্তিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর মাথার পাশে বসে পরে তীব্র। নিজের দৃষ্টি তৃপ্তির মুখশ্রীর উপর স্থির রেখে বলে…

____”তোমার ভালোবাসাকে , সকল অনুভূতি গুলোকে সেই কবেই আমি অ’প’মা’ন করেছি , ছোট করেছি, তু’চ্ছ করেছি। তবুও তুমি আমাকে ভালোবাসো। তোমার এই পবিত্র ভালোবাসা পাওয়ার যো’গ্য’তা আমার নেই। আমাকে আমার সিদ্ধান্ততেই অ’ট’ল থাকতে হবে। পারলে ক্ষ’মা করে দিও।”

কথাগুলো বলে তীব্র তৃপ্তির পাশ থেকে উঠে দাঁড়ায়। এবার ওকে সব পা’পে’র বি’না’শ ঘটাতে হবে। এতোদিন নিজে পা’প কাজে লি’প্ত ছিলো এখন সেই সব পা’পে’র বি’না’শ ঘ’টি’য়ে ও নিজের করা পা’প কাজ গুলোর প্রা’স্চি’ত্ত করবে। পরক্ষণেই তীব্র তৃপ্তির রুম ত্য’গ করে বাহিরে চলে যায়।
————————–
অ’ন্ধ’কা’রা’চ্ছ’ন্ন রুমে মধ্য বয়সের লোকটি নে’তি’য়ে পড়েছে , অস্পষ্ট স্বরে ‘পানি’ চাইছে। সেইমূহূর্তে একজন কালো পোশাকধারী লোক মধ্য বয়সের লোকটির মুখের উপর একবালতি হালকা গরম পানি ছু’ড়ে মা’রে। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি ধ’র’প’ড়ি’য়ে উঠে।

#চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here