#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (১৭)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
তৃপ্তির বলা শেষ কথাটি শোনামাত্র তীব্রের কপালে চি’ন্তা’র ভা’জ স্পষ্ট হয়। তীব্র র’কিং চেয়ার ছেড়ে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কপালে ডান পার্শে এক আঙুল ঠেকিয়ে ঘ’ষা দিতে থাকে আর ভাবে…
____”আমার চোখে কিসের প’র্দা আছে যা সড়িয়ে ফে’ল’তে বললো তৃপ্তি! আমি কি দেখছি যা সত্য নয় , মি’থ্যা’র চাদরে মো’ড়া’নো! এমন ধো’য়া’শা’র মাঝে ফে’লে রেখে যাওয়ার কোনো মানে হয়।”
তৃপ্তির উপর কিছুটা বি’র’ক্তি কাজ করছে তীব্রের।
————————
নিজ রুমে এসে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে কখন যে ঘুমের রাজ্যে ডু’বে গিয়েছিলাম আমি তা বুঝতেই পারি নি। যখন ঘুম ভা’ঙ’লো চোখ মেলে তাকাতেই সম্পূর্ণ অন্ধকার চাদরে মুড়ানো দেখে বুঝতে পারলাম সন্ধ্যা পেরিয়ে গিয়েছে। শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে উঠিয়ে ফ্লা’শ অন করলাম তারপর বিছানা ছেড়ে নেমে ঘরের লাইট অন করলাম।
ফোনটা ওয়ার ড্র’প এর উপর রেখে খোলা চুলগুলো হাত খো’পা করে নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলাম ফ্রেশ হওয়ার উদ্দেশ্যে। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আমার বিছানার উপর তীব্রকে আয়েশের সাথে বসে থাকতে দেখে একটুও অবাক হলাম না। এই মূহূর্তে তীব্রের আমার রুমে আসার পিছনে কারণ কি তা আমার বুঝতে বাকি নেই। আমি তীব্রের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রুমের বাহিরে যেতে নিলাম সেই মূহূর্তে তীব্র আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো…
____”বারবার পা’লি’য়ে যাচ্ছো কেন? প্রশ্ন করবো উত্তর দিতে পারবে না তাই পা’লা’চ্ছো?”
তীব্রের এহেনু কথায় আমি ওরদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্মিত হাসলাম। তারপর বুকের সাথে দু’হাত গু’জে স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম…
____”আপনি কি কি প্রশ্ন করবেন সব আমি জানি , কি উত্তর করতে হবে সেটাও জানি। অপেক্ষা করুন কফি বানিয়ে আনছি। তারপর আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন”
তীব্রকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি নিচে চলে আসলাম কফি বানানোর উদ্দেশ্যে।
——————————-
কিয়ৎক্ষণ পর ২কাপ কফি হাতে নিয়ে আবারও রুমে প্রবেশ করলাম। বিছানায় তীব্রকে দেখতে না পেয়ে ঘা’ড় বা’কি’য়ে বেলকোনিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। তীব্র বেলকোনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ধীরপায়ে বেলকোনিতে এসে তীব্রের থেকে এক হাত সম দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম। তীব্র আমার উপস্থিতি টের পেয়ে একনজরে আমাকে দেখলেন।
আমি ডান হাতে থাকা কফির মগটি তীব্রের দিকে এগিয়ে দিলাম, তীব্র বিনাবাক্যে মগটি নিয়ে নিলেন। আজকের চাঁদটা দেখে মনে হচ্ছে অর্ধ পূর্ণিমা , চাঁদের অর্ধেক অংশ আকাশের বুকে জায়গা দখল করে আছে যেনো। তার চারপাশে অগণিত তারারা মেলে জমিয়েছে। শির শির করে বাতাস বইছে , পরিবেশটা বেশ রোমান্ঞ্চকর। কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে সহজ গলায় তীব্রকে বললাম…
____”হুম বলুন কি কি জানতে চান?”
তীব্র শব্দ করে নিঃশ্বাস ছাড়লেন , সেই নিঃশ্বাস যেনো শীতল বাতাসের সাথে মিশে গিয়ে আমার সম্পূর্ণ শরীরে এসে বা’রি খে’লো। আমি চোখ বুঝে নিলাম সঙ্গে সঙ্গেই। তীব্র আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো….
____”কোথায় গিয়েছিলে দুপুরে?”
আমি চোখ বু’ঝে রাখা অবস্থাতেই বললাম….
____”আশ্রমে”
____”আমাকে বললে কি আমি নিয়ে যেতাম না?”
____”আপনাকে বলার মতো এতো ভালো মানসিক অবস্থা ছিলো না তখন , আর সবথেকে বড় কথা আপনার সাথে আমার সম্পর্ক টাও বিয়ের আগের মতো সুন্দর নয় সম্পূর্ণ উ’ল্টো এখন আপনার নিকট এই আবদার গুলো করা মানে আমার জন্য নি’ছ’ক বে’মা’না’ন”
____”সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না , এরপর যেনো একলা বাহিরে যাওয়া না হয়। যখন প্রয়োজন হবে আমাকে বলবে”
____”ভেবে দেখবো”
____”আমি ভাবতে সময় বা সুযোগ দেই নি , আমার কথা শুনতে হবে তোমার এটাই শেষ”
____”কেনো শুনবো? আমি এতো বা’ধ্য তো নই”
____”মুখে মুখে ত’র্ক করে আমাকে রাগিও না। ফল খা’রা’প হবে”
____”আর কি বাকি আছে খা’রা’প হওয়ার!”
____”আমার এবার রা’গ উঠছে”
____”রাগ ছাড়া আর কি আছে আপনার? কখনও কোনো জিনিস নিয়ে ভালো ভাবে না ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় , রাগের বশে যা নয় তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন , এর জন্য অন্যের জীবন ও শে’ষ করে দেন আবার নিজের জীবন কতোটা দূ’র্বি’ষ’হ করে ফেলেন সেটার ও খেয়াল রাখেন না”
____”এতো হে’য়া’লি’প’না ভিষণ অ’পছন্দনীয় আমার”
____”হে’য়া’লি কোথায় করলাম? আপনার চোখে যে রা’গ আর ক্ষো’ভে’র ভা’ড়ি পর্দা দেওয়া আছে সেই পর্দাটাকে সরিয়ে নিজের চারপাশটা ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করিয়েন। জীবনে অনেক অ’ন্যা’য়, পা’প করেছেন। যার দ’রু’ন আজ আপনার এই অবস্থা।”
____”পা’প তো আমি করেছিই তাই তো যাকে নিজের সবটা ভালোবেসেছিলাম তার হাতে মৃ’ত্যু’র স্বাদ গ্রহন করতে গিয়েও বে’চে ফিরেছি”
____”আসলেই কি সে আপনার ভালোবাসা ছিলো?”
তীব্র চ’ট করে তাকায় আমার দিকে , আমার দৃষ্টি স্বাভাবিক সামনের দিকে নিবদ্ধ। তীব্র কিছু সময় নিরব থেকে বললো…
____”তুমি এখন আমার ভালোবাসা নিয়ে প্র’শ্ন তুলছো?”
____”মোটেও না , আমি বুঝাতে চেয়েছি আপনি যাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসেছিলেন শে’ষ সময়েও কি সেই আপনার সামনে উপস্থিত ছিলো? আপনার বুকে কি সেই ছু’ড়ি চালিয়ে ছিলো?”
____”তুমি এতোকিছু জানলে কি করে?”
____”সেসব পরের বিষয় , যা প্রশ্ন করছি তার উত্তর করুন।”
____”হুম নূরাই তো ছিলো , ওর চেহারা…”
আমি তীব্রকে থা’মি’য়ে দিয়ে বললাম…..
____”আমার জানা মতে পৃথিবীতে এক রকম চেহারার ৭ জন মানুষ বাস করে। ভিন্ন ভিন্ন দেশে , কিংবা এই দেশে অন্ঞ্চল আলাদা হয়। যাদের কারোর সাথে কারোর র’ক্তে’র কিংবা বং’শে’র ও কানেকশন থাকে না”
আমি তীব্রের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে , তীব্রের দৃষ্টি আমার উপর স্থির। ওনাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে উনি ওনার সম্পূর্ণ মনোযোগ আমার কথা শোনার প্রতি নিবেশ করে রেখেছেন।আমি তীব্রের মুখশ্রী পানে শীতল দৃষ্টি স্থির করি। তারপর আবারও বলি….
____”আমার জানামতে নূরা সবসময় ওর দু’চোখে ভা’ড়ি কাজল দিতো। কখনও ওর চোখ কাজল বি’হী’ন থাকতো না। ও সবসময় হিজাব পড়তো তাই ঠোঁটে গাড় রংয়ের লিপস্টিক দেওয়াও ওর অ’প’ছ’ন্দে’র একটা অংশ ছিলো। নূরা শাড়ি পড়তেও জানতো না। আর এটাও জেনেছি নূরার চুল বিশেষ বড় ছিলো না যে খো’পা করা যাবে , হিজাব পড়ে থাকতো তাই আপনি হয়তো দেখেন নি।
কিন্তু আপনাকে যেদিন হ’ত্যা’র চেষ্টা করা হয়েছিলো সেদিনের ওর সাজের বর্ণনায় আমি অনেক কিছুর পরিবর্তন দেখেছি , যেমনঃ ওর চোখে সেদিন কাজলের চিহ্ন ও ছিলো না , ঠোঁটে ছিলো গাড় খয়েরী লিপস্টিক , পড়নে শাড়ি , আর চুল ছিলো খো’পা করা। সেদিনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমি বুঝলাম সেদিন কোনো পার্লার থেকেও মহিলা আসে নি বা বাড়তি কোনো মহিলাই আসে নি , নূরা একাই এ বাড়িতে এসেছিলো।
হাতে একটা সপিং ব্যগ ছিলো যাতে শুধু একটা শাড়ি আর সাজের হালকা জিনিসপত্র ছিলো। এক্সট্রা চুল ছিলো না যা ও ওর আসল চুলে লাগিয়ে খো’পা করতে পারবে। সম্পূর্ণ চেইঞ্জ আপনার সাথে কয়েকমাস ধরে চলাচল করা নূরা আর সেদিনের নূরার মাঝে আকাশ-পাতাল ত’ফা’ৎ ছিলো।
আর সবথেকে বড় কথা নূরা সবসময় আপনাকে আপনি বলে সম্বোধন করতো কিন্তু সেদিন ওর প্রতিটি কথায় ও আপনাকে তুমি বলে সম্বোধন করেছে ভিষণ সাবলীল ভাবে যেনো ও অনেকদিন থেকেই আপনার সাথে তুমি সম্বোধন করেই কথা বলে। আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো আপনি ভালো ভাবে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারতেন সেদিন আপনাকে হ’ত্যা’র চেষ্টাকারী আ’দে’ও নূরাই ছিলো নাকি অন্য কেও!”
তীব্রের দৃষ্টি ঘো’লা’টে হয়ে এসেছে , চাঁদের এক খ’ন্ড আলোয় তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বেশ কিছু সময় পি’ন’প’ত’ন নিরবতা বিরাজ করে আমাদের মাঝে। নিরবতার সেই দেওয়াল ভে’ঙে আমি আবারও বললাম….
____”যে বাচ্চাদের নিয়ে আশ্রম খুলেছিলেন তাঁদের সঠিক ভাবে খেয়াল রাখা হয় কি না সে বিষয়ে কখনও খোঁজ নিয়েছিলেন?”
তীব্র ধীর কন্ঠে ‘না’ সূচক জবাব দিলো। আমি তা’চ্ছি’ল্যে’র হাসি দিয়ে বললাম…
____”ঐ এ’তি’ম ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা পথে-ঘাটে ঘুরে ঘুরে নিজেদের রু’জি চালাতো এতেই ওরা ভালো ছিলো। যে দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারবেন না লোক দেখিয়ে সেই দায়িত্ব নিতে যান কেনো?”
____”ওদের যেনো কোনো প্রকার অ’সু’বি’ধা না হয় তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি শফিকের উপর দিয়েছিলাম।”
____”বিশ্বাস ভালো , অ’ন্ধ বিশ্বাস ভালো না। একটা কথা মনে রাখবেন, নিজ কমোরে থাকা ছু’রি’ই একসময় নিজ পেট কে’টে ক্ষ’ত-বি’ক্ষ’ত করে ফেলে। যে আ’ঘা’ত সহজে চোখে দেখা যায় না , অনুভব করা যায় না। ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দেয়।”
____”তুমি কি বলতে চাচ্ছো বাচ্চারা ভালো নেই? শফিক ওদের ভালো-ম’ন্দে’র দেখাশোনা সঠিক ভাবে করছে না?”
____”লা’স্ট বিয়ের আগে যখন ১ম আপনার সাথে আশ্রমে গিয়েছিলাম তখন ওখানে আমি ৪০ জন বাচ্চা দেখেছিলাম। ছবি তো আছে গুণে দেখিয়েন। কিন্তু আজ যখন গেলাম ১০ জন বাচ্চা মি’সিং , ওদের জায়গা নতুন ১০ জন বাচ্চা আনা হয়েছে। আমি সেখানকার কর্মকর্তাকে বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন ঐ ১০ জন বাচ্চা নাকি ভিষন দ’স্যি স্বভাবের ছিলো।
ওনারা অনেক চেষ্টা করেও ওদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন নি , তাই ওরা রাতের অন্ধকারে পিছনের প্রাচীর ট’প’কে পা’লি’য়ে গিয়েছে। বিষয়টা ১ম এ আমাকে চি’ন্তা’য় ফেলেছিলো , কিন্তু গভীর ভাবে ভাবলাম আর বাকি পুরোনো বাচ্চাদের মাঝে যারা একটু বু’ঝ’দা’র স্বভাবের ছিলো তাদের থেকে যে ১০ জন বাচ্চা পা’লি’য়ে গিয়েছে বলে কর্মকর্তা দা’বি করলেন ঐ ১০ বাচ্চার দৈনন্দিন আচারন কেমন ছিলো তা শুনলাম , তখন ওরা সবাই আমাকে বললো ঐ বাচ্চাগুলো কি একদমই দ’স্যি স্বভাবের ছিলো না।
ভিষণ ভদ্র ছিলো, পড়াশোনাও ভালো করতো , সবার সাথে মিশে চলতো। শে’ষ যে বুঝদার বাচ্চার কাছে জানতে চেয়েছিলাম তখন ঐ বাচ্চাটাকে কেমন ভী’ত দেখাচ্ছিলো , কাওকে দেখে সে ভিষণ ভ’য় পেয়ে ছিলো আমাকে কিছু কথা বলতে চেয়েও বলতে পারে নি। বিষয়টা ভিষণ অদ্ভুত লেগেছিলো আমার কাছে। আমি বাচ্চাটিকে অ’ভ’য় দিয়েছিলাম কিন্তু তবুও কিছু বলাতে পারি নি। তাই ওদের আর কিছু না বলে আমি আবারও ঐ কর্মকর্তার নিকট গিয়েছিলাম আর তখনি যা শুনতে পেলাম তাতে আমার সর্ব শরীর কে’পে উঠেছিলো……….
#চলবে……