#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (১৬)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
অন্য একটি চেয়ার টেনে মধ্যবয়সী লোকটির সামনে বসে পরে আ’গ’ন্তু’ক’টি তার মাথায় উপর থাকা ক্য’পটি খুলে ফেলে। তারপর লোকটির মুখের কাপড়টি খুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে। লোকটির মাথার উপর ছোট্ট একটি লাইট জ্বলছে যা অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরটিতে ছোট্ট একটি বৃত্তের আকার নিয়ে সামান্য জায়গা আলোকিত করে রেখেছে। আ’গ’ন্তু’ক’টির মুখে আলো না পড়ায় লোকটি ওর মুখ দেখতে সক্ষম হচ্ছে না। কাপা কাপা কন্ঠে বলে…
“ক কে আ আপ আপনি! আ আমাকে এ এভাবে ক কি কি’ড’ন্য’প করে এনে চেয়ারের সাথে বে’ধে রেখেছেন কেন? আমার দো’ষ কোথায়?”
আ’গ’ন্তু’ক’টি শীতল কন্ঠে ধা’রা’লো ছু’রি’র ন্যয় ধা’চ বসিয়ে মধ্য বয়সের লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলে..
“তোদের মতো পা’পী’দে’র এই ধরনীর বুক থেকে চিরতরে মু’ছে ফেলার জন্য এসেছি আমি। তোদের জন্য আ’জ’রা’ই’ল আমি। এখন বলে , নূরা কোথায়? কোথায় গু’ম করে রেখেছিস তোরা ওকে? আশ্রম থেকে কয়জন বাচ্চাকে পা’চা’র’কা’রী’দের হাতে তুলে দিয়েছিস? কারা কারা আছে এই পা’চা’র কার্যের সাথে লিপ্ত? বল….”
আ’গ’ন্তু’ক’টি মুখে এহেনু প্রশ্নগুলো শুনামাত্র মধ্য বয়সের লোকটির সর্ব শরীর ঘা’ম’তে শুরু করেছে। কা’পা’ন্বি’ত কন্ঠে বলে..
“আ আ আমি ক কি কিছু জ জানি না, আ আমাকে ছ ছেড়ে দিন। আ আমি ন নিরাপরাধ।”
আ’গ’ন্তু’ক’টি শব্দ করে হেসে উঠে , ওর হাসির শব্দ দেওয়ালের চারপাশে বে’জে প্রতিধ্বনি তুলছে যা সম্পূর্ণ রুমটিকে কা’পি’য়ে তুলছে। আ’গ’ন্তু’ক’টি বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মাঝ বয়সের লোকটির চুলগুলো নিজের হাতে মু’ষ্ঠি’ব’দ্ধ করে নিয়ে রা’গে হি’স’হি’সি’য়ে বলে…..
“তুই কতো বড় পা’পি , দো’ষী সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। ভালোয় ভালোয় বলে দে নূরা কোথায় আর এই পা’চা’র কার্যের সাথে আর কোন কোন পা’পী’রা যুক্ত আছে। নয়তো নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই তোর এমন ক’রু’ণ হা’ল করবো যে তোর পরিবাররাও তোরে দেখে আ’ই’ডে’ন্টি’ফা’ই করতে সক্ষম হবে না। মাটির নিচে প’চে যাবে তোর এই পা’পে ভরা সম্পূর্ণ শরীর।”
————————–
রহমান মন্ঞ্জিল এর মূল গেইটে এসে দাঁড়াতেই দারোয়ান ভাই আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন…
“ভাবীজান আপনে তো বলছিলেন স্যার আপনারে আপনার বাড়ি যাওনের লা’ই’গা অনুমতি দিয়েছিলেন আর তাই আমি বিশ্বাস করে আপনারে যাইতে দিয়েছিলাম। স্যার তো ঘন্টা খানেক আগে আমারে আইসা আপনার কথা জিগাইলো , আপনে তারে না বইলাই বাহিরে গিয়েছিলেন স্যাররে দেইখা মনে হইলো ভিষণ রা’ই’গা আছেন আপনার উপর। তাড়াতাড়ি স্যারের কাছে যান নয়তো খা’রা’প কিছু হইয়া যাইবো।”
দারোয়ান ভাইয়ের কথাগুলো আমার মধ্যে তেমন একটা ভি’তী’র সৃষ্টি করতে পারলো না। কারণ এই তীব্র নামক লোকটিকে আমি শুধু ঘৃ’ণা’ই করি তাই ওনাকে ভ’য় পাওয়ার কোনো মানে হয় না৷ আমি দারোয়ান ভাইয়ের দিকে একপলক দেখে স্মিত হাসি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করি। বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই দেখি যেমন ভাবে সব রেখে গিয়েছিলাম তেমনই আছে , রাগ হলে তবে তীব্রের ভা’ঙ-চো’ড় করার মতো খা’রা’প অভ্যাস নেই৷ পারে তো শুধু নি’রি’হ , নি’রা’প’রা’ধ মানুষদের খু’ন করতে। ধীরপায়ে একটা একটা করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছি। আজ অনেক ধ’ক’ল গিয়েছে , এই মূহূর্তে আমার একটু বি’শ্রা’ম করা ভিষণ প্রয়োজন। তীব্রের জন্য সেই সুযোগ হবে কি না আল্লাহ ভালো জানে।
ডায়েরি রাখা ঘরটি পেরিয়ে যেতে নিতেই ভিতর থেকে তীব্রের ক’র্ক’শ কন্ঠস্বর ভেসে আসে , আমার পা থে’মে যায় সেখানেই। দু’চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে বারকয়েক নিঃশ্বাস ফেললাম। কিয়ৎক্ষণ পর তীব্র আমার সামনে দাঁড়ালেন , আমার দৃষ্টি নিচের দিকেই নিবদ্ধ করে রেখেছি আমি। তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমাকে দেখছেন , ওর এই দৃষ্টি আমার ভিতরটা আরো গভীর ভাবে পু’ড়ি’য়ে দিচ্ছে যেনো। চোখের পলকেই তীব্র আমার দু’হাত নিজের এক হাতের মুঠোয় মু’ষ্টি’ব’দ্ধ করে নিয়ে আমার পিঠ দেওয়ালের সাথে শ’ক্ত ভাবে চে’পে ধরে রা’গে হি’স’হি’সি’য়ে বললেন…
“কার অনুমতি নিয়ে বাড়ির বাহিরে পা রেখেছিলি তুই?”
শ’ক্ত ভাবে চে’পে ধরায় দু’হাতের ক’ব্জি’তে ভিষণ ব্য’থা করছে , ব্য’থা’য় চোখ-মুখ খি’চে বন্ধ করে নিলাম। তীব্র ওর অন্য হাতে আমার মুখ চে’পে ধরে আবারও বললেন…
“বলছিস না কেন কিছু? খুব সা’হ’স বে’ড়ে গিয়েছে তোর তাই না?”
দাঁতের সাথে দা’ত চে’পে তীব্রের দেওয়া প্রতিটি আ’ঘা’ত সহ্য করছি। তীব্র আমার মুখ ছেড়ে দিয়ে আমার মাথার বাম পার্শ্বের দেওয়ালে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ঘু’ষি প্রয়োগ করলেন , ওনার এহেনু কাজে আমার সর্ব শরীর কে’পে উঠলো। এতোসময় ভ’য় না করলেও ওনার এমন কাজের পর ভ’য় করছে। আমি পিট পিট করে চোখ মেলে ওনার হাতের দিকে লক্ষ্য করতেই আমার কলিজা কেঁ’পে উঠলো যেনো। ঘু’ষি প্রয়োগ এর ফলে র’ক্ত ঝরছে ওনার হাত থেকে৷ আমি চ’ট করে ওনার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ওনার লা’লা’ভ মুখশ্রী দেখতে পাই। একবার ওনার মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতো আরেকবার ওনার র’ক্ত ঝ’র’তে থাকা হাতের দিকে৷ আমি কা’পা কা’পা কন্ঠে বলি…
“আ আপ আপনার হ হা হাত থ থেকে ত তো র র’ক্ত ঝ ঝড়ছে”
তীব্র এতোটাই রে’গে ছিলেন যে উনার ম’স্তি’ষ্ক থেকে বে’ড়ি’য়ে গিয়েছিলো আমি র’ক্ত দেখতে পারি না। আমার ব্লা’ড ফো’বি’য়া নামক স’ম’স্যা’টি আছে। তীব্র ওনার র’ক্ত ঝরতে থাকা হাতটি আমার মুখের সামনে এনে ধ’রে আর বলে…
“হুম দে’খ , ভালো করে দে’খ র’ক্ত তো ঝরছেই এর জন্য শুধু তু…..
তীব্র পুরো কথা শে’ষ করতে পারলেন না তার আগে আমার শরীর আমাকে সা’য় না জানানোতে আমি সে’ন্স হা’রি’য়ে ফেলি।
———————-
পিটপিট করে চোখ মেলে নিজের অবস্থান বুঝতে চেষ্টা করি। আমি তীব্রের রুমে ওনার বিছানায় আমাকে শুয়ে রাখা হয়েছে। দু’হাতে মাথা চে’পে ধরে শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসি। হাতের বাম পার্শ্বে লক্ষ্য করতেই দেখি তীব্র র’কিং চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বু’ঝে আছে। ওনাকে দেখে আমার সেন্স হা’রা’নো’র পূর্বের ঘ’ট’না মনে পড়ে। চ’ট করে ওনার হাতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। কোনো ব্য’ন্ডে’জ করে নি ওভাবেই রেখেছে , ক্ষ’ত স্থানের র’ক্ত জ’মা’ট বেধে গিয়েছে।
ওনার ফর্সা হাতের চারটে আঙুল র’ক্তে লাল হয়ে আছে। বুকের বাম পার্শ্বে চি’ন চি’নে ব্য’থা অনুভব হলো। কিছুসময়ের জন্য যেনো ভু’লে গেলাম ওনার প্রতি থাকা আমার সব ভালোবাসাগুলো ঘৃ’ণা’র চাদরে চা’পা দিয়ে রেখেছিলাম। বিছানা ছেড়ে নেমে ওয়ার ড্র’প এর উপর থেকে ফাস্ট এ’ই’ড এর বক্সটা হাতে নিয়ে তীব্রের সন্নিকটে এসে মেঝেতে বসে পড়ি।
ওনার হাতটা আলতো ভাবে স্পর্শ করতেই আমার মেরুদণ্ড শি’র’ডা’রা বেয়ে শি’হ’র’ণের বাতাস বয়ে যায়৷ চোখ দু’টো নোনা জলের পুকুরে পরিণত হয়ে যায় মূহূর্তেই। ফাস্ট এইড বক্সের ভিতর থেকে তুলো বের করে হে’ক্সি’স’ল লাগিয়ে ওনার ক্ষ’ত স্থানে রাখতেই উনি ‘আহহহ’ বলে কে’পে উঠেন , দ্রুত চোখ মেলে তাকান , হাত সড়িয়ে নিতে ধরলে আমি শীতল কন্ঠে বলি….
“বেশি ন’ড়া চ’ড়া করলে সম্পূর্ণ হে’ক্সি’স’ল আপনার এই ক্ষ’ত স্থানের উপর ঢে’লে দিবো বলে দিলাম”
আমি আড়দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলাম তীব্র আমার এমন কথায় চো’খের আকৃতির স্বাভাবিক এর তুলনায় বেশ বড় করে ফেলেছেন। আমি ঠোঁট চে’পে হাসি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলাম। পরমুহূর্তে ওনার হাত পরিষ্কার করাতে মনোনিবেশ করলাম। জ্ব’ল’ন যেনো কম অনুভব হয় তাই ‘ফুউউ’ দিচ্ছি আর ক্ষ’ত স্থান খুব যত্নের সাথে পরিষ্কার করছি।
পরিষ্কার করা শে’ষ হলে ব্য’ন্ডে’জ করে দিলাম। তারপর একটা ব্য’থা কমে যাওয়ার ট্য’ব’লে’ট বের করলাম , বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ওনার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাস আর ঔষধটি এগিয়ে দিলাম। উনি না’কো’চ স্বরে বললেন…
“আমার মতো মা’ফি’য়া দের জন্য কা’টা ছে’ড়া’র য’ন্ত্র’ণা ভিষণ স্বাভাবিক বিষয়। ঔষধ এর প্রয়োজন নেই।”
আমি স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম…
“ভালোভাবে যদি খে’তে না চান , তবে জো’ড় প্রয়োগ করে হলেও ঔষধ খা’ই’য়ে ছাড়বো আপনাকে”
আমার কথায় তীব্র শব্দ করে হাসতে শুরু করলেন , সেই সুযোগে আমি ঔষধটা ওনার মুখে পু’ড়ে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে উনি ‘থু’ করে ফেলতে চাইলে আমি রা’গা’ন্বি’ত কন্ঠে বললাম…
“গি’লে ফেলুন ঔষধটি”
তীব্র পানি ছাড়াই ঔষধটি গি’লে ফেলে। আমি পানির গ্লাসটা ওনার হাতে ধরিয়ে দিলাম। উনি এক নিঃশ্বাসে সবটুকু পানি খেয়ে নিলেন। আমি গ্লাসটি ওনার হাত থেকে নিয়ে আবারও বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে দিলাম। তারপর কোনো কথা না বলে ওনাকে পাশ কা’টি’য়ে চলে যেতে নিলে উনি বলে উঠলেন…
“আমাকে না জানিয়ে বাহিরে কোথায় গিয়েছিলে বললে না তো”
আমি সেভাবেই দাঁড়িয়ে ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন…
“চোখের পর্দা সড়িয়ে ফে’লু’ন, সবসময় চোখের দেখা জিনিসগুলো সত্যি হয় না।”
তারপর তীব্রকে আর ২য় কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি ওর রুম ত্য’গ করি।
#চলবে…………..