#তোমাতেই_আমি
#হালিমা_চৌধুরী
#অন্তিম_পর্ব
কিছুক্ষনের মাঝে পূর্ণ এসে হাজির হয় আমাদের বাসায়। আমার বিপরীত পাশে বসে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে ফোন টিপছে। মনে হচ্ছে আমাকে ছিনে না এরকম ভাব নিয়ে বসে আছে। নিরবতা ভেঙ্গে পাশ থেকে আমার ভাইয়া বলে উঠে,
‘আপনারা এতো বিশ্বাস কি করে ফেলেন যে আমি আমার বোনকে আপনাদের ছেলের সাথে বিয়ে দিবো?’
ভাইয়ার কথা শুনে পৃথুলের কপাল আপনা আপনি কুচকে গেলো।
‘আপনার বোন কে বিয়ে দিতে বাদ্য থাকবেন সেই আশা নিয়েই বিয়ের সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি।’
পূর্ণ ভাইয়ার বাবার কথা শুনে ভাইয়া রাগে কটমট করতে থাকে।
‘আপনাদের আশা নিয়ে আপনারা চলে যান। আমার বোন কে এরকম একটা বেপোরোয়া ছেলের সাথে বিয়ে দিবো না।’
ভাইয়ার কথা শুনে উনার বাবা সোফার পাশে থাকা ফুলদানি টাতে একটা লাথি দেয়। মুহুর্তেই ফুলদানিটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
‘আমার ছেলে আপনার বোনকে ভালোবাসে। আপনার বোনও আমার ছেলেকে ভালোবাসে। এতে আপনি বাঁধা দেওয়ার কে?’
ওনার কথা শুনে ভাইয়া বিষ্ময় ভরা দূষ্টি নিঙ্গেপ করে আমার দিকে।
‘পূর্ণ কে কি তুই বিয়ে করতে রাজি?’
হঠাৎ এরকম একটা প্রশ্ন শুনে আমি কিছুটা ঘাবড়ে যাই। আমতা আমতা বলি,
‘আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।’
‘তারমানে বিয়ে করবি বাট এখন না! এই ছেলেটার মাঝে কি আছে? তোর জন্য কত ভালো সম্মন্ধ এসেছে। তোর দিক বিবেচনা করে আমি সবাই কে খালি হাতে ফিরিয়ে দি। আর তুই কি না…’
‘ভাইয়া আমি ওকে ভালোবাসি না। পড়াশোনা রেখে আমাকে সব সময় বিরক্ত করতো। একসময় আমি হাপিয়ে গিয়েছি। রাস্তায় এসব বিরক্তকর কথা বার্তা শুনতে ভালোলাগে না তাই ওকে একটা চ্যারেন্জে আবদ্ধ করে দেই।’
একদমে কথা গুলো বলে থামি আমি। আমার কথা শুনে এবার পূর্ণেরর হুশ আসে। আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসে। আমার সামনে এসে আমার বাম হাত টেনে সবার সামনে ধরে বলে,
‘আমাদের চ্যালেন্জ নেওয়ার আগেই আমরা এরকম ভাবে এনগেজমেন্ড করে ফেলি।’
আমার হাতে থাকা রিং টি সবার উদ্দেশ্যে দেখিয়ে বলেন। উনার কথায় আমি কিছুটা ঘাবড়ে যাই। উনি আবারও বলেন,
‘স্রুতি যদি আমায় ভালো না বাসতো তাহলে আমার দেওয়া রিং পরে কেনো ঘুরে বেড়ায়?’
পূর্ণেরর কথা শুনে ভাইয়া আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে।
‘বিয়ে করতে চাস কি না সেটা বল? যদি বিয়ে করতে চাস তাহলে আমাদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে হবে। আর যদি বিয়েটা করতে না চাস তবে…’
আমি ভাইয়াকে আর কিছু বলকে না দিয়েই বলি,
‘আমি তোর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে পারবোনা। মা-বাবা মারা যাওয়ার পর তুই আর ভাবিই তো আমাকে বড় করছিস। আমি ওকে ভালোবাসি না। হয়তো ভালো লাগে। এই বয়সে এসে সবার মনেই ভালো লাগার রেশ জন্মায়। আমার ক্ষেত্রেও হয়তো এটাই ঘেটেছে। তারজন্য আমি তোদের ছেড়ে থাকতে পারবো না।’
আমার কথা শুনে ভাইয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
‘আমার বোনের মুখ থেকে তে সব শুনলেন তাহলে এবার আপনারা আসতে পারেন।’
পূর্ণ ভাইয়ার আব্বু একবার করুণ মুখে আমার দিকে তাকান। তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলে,
‘যেখানে মেয়েটা বিয়ে করতে রাজি নেই সেখানে আমাদের কোনো হাত নেই মেয়েটাকে রাজি করানোর। পূর্ণ চলো এখানে থেকে আর কাজ নেই।’
পূর্ণ ভাইয়া এসে আমার হাত টেনে বলে,
‘তোকে আমাকেই বিয়ে করতে হবে এখন এবং আজকে।’
ভাইয়া পূর্ণ ভাইয়ার হাত থেকে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
‘আমি বেঁচে থাকতে এমন হবে না। যেখানে স্রুতি রাজি নেই বিয়েতে, সেখানে কিভাবে বিয়ে করবে ওকে?’
‘ও তো রাজি হতে বাদ্য থাকবে।’
বলেই পূর্ণ ভাইয়া এসে আমাকে টেনে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে পাশের টেবিল থেকে ফল কাটার ছুরি নিয়ে বলে,
‘তুই যদি আমাকে বিয়ে না করিস তো আমি আত্নহত্যা করবো।’
পূর্ণ ভাইয়ার নেওয়া সিদ্ধান্তে সকলে ভয় পেয়ে যায়। উনার বাবা এসে ভাইয়ার হাত ধরে অনুরোধ করতে থাকে। পূর্ণ ভাইয়ার মা আমার কাছে এসে হাত জোড় করে বলে,
‘তুমি যা চাইবে তাই পাবে শুধু আমার পূর্ণ কে বিয়ে করো মা।’
আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। ভাইয়া আমার দিকে অসহায় এর মতো তাকিয়ে আছে।
.
.
ড্রয়িং রুমে সবাই আড্ডায় মেতে উঠেছে। আমাদের বিয়েটা হয়ে যায়। আমাকে পূর্ণ ভাইয়ার জেদের কাছে হেরে যেতে হয়েছে। বিয়ে পড়ানো শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এখন আমি এখানে থেকেই পড়াশোনা করবো। আর পূর্ণ ভাইয়া ঢাকা গিয়ে নিজের পড়াশোনায় মনোযোগ দিবে। কিছুক্ষণ আগেই সবার মুখটা কিরকম ফ্যাকাসে ছিলো। বিয়েটা হতেই সবার মুখে হাসি ফুটে উঠে। আমি পূর্ণ ভাইয়ার মায়ের পাশে গুটিশুটি মেরে বসে আছি। আর পূর্ণ ভাইয়া আমার ভাইয়ার সাথে কথা বলছে। কিছুক্ষণ আগেও দুজনের সম্পর্ক টা দা-কুমড়োর মতো ছিলো এখন কেউ দেখলে বুঝবেও না।
‘আচ্ছাহ অনেক বিপদ পূর্ণ স্রুতির উপর দিয়ে গেছে। এখন ওদের কে একটু আলাদা কথা বলতে দেওয়া উচিত। তোমরা দুজন তোমাদের ভুল-বোঝা বুঝির পূব শেষ করে আসো।’
পূর্ণ ভাইয়ার আম্মুর কথা শুনে আমি কিছুটা হকচকিয়ে যাই। নিজেকে শান্ত করে বলি,
‘না লাগবে না আন্টি।’
তারপরও উনার আম্মু আমাদের জোর করে ছাদে পাঠিয়ে দেয়।
.
ছাদে দুজন দুই প্রান্ত দাড়িয়ে আছি। একজন আরেক জনের বিপরীত দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাড়িয়ে আছি। নিরবতা ভেঙ্গে উনি বলে,
‘বিয়েটা করতে চাওনি কেনো?’
‘আপনার জন্য আমি আমার পরিবার কে ছাড়তে পারবো না তাই। আপনার সাথে তো এখনো আমি কোনো সম্পর্কে জড়ায়নি কিন্তু আমার ভাইয়ার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক সেটাকে কিভাবে আমি তুচ্ছ করে আরেকটা ছেলের হাত ধরে অন্য বাড়িতে চলে যাবো?’
‘বুঝলাম! বাট তুমি যে বললে তুমি আমার সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াওনি তো স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন টা কি?’
উনার এরকম গম্ভির কন্ঠ স্বর শুনে আমি আকম্মাৎ কেপে উঠি। তৎক্ষনাৎ জবাব দিতে পারলাম না।
‘আমি কালকে ঢাকা চলে যাবো। স্বাধীন ভাবে চলবে তবে তোমার যে হাজবেন্ড আছে সেটা বিবেচনা করে চলবে। আমার সাথে স্বাভাবিক ভাবেই যোগাযোগ করবে আশা করছি।’
‘আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আপনার সাথে যোগাযোগ করার। আপনি তো আমার শত্রু আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন। আমি বলেছি আমাদের সম্পর্ক টা মানায় না উনি একদম এসে বিয়ে করে মানিয়ে নেয়।’
‘দেখা যাবে কে কার সাথে যোগাযোগ করে। যোগাযোগ না করলে বাড়ির থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাবো তোমাকে। আমাকে কাপুরুষ বলার শাস্তি এই অল্প একটু তো হতেই হয়।’
‘আমার ভাল্লাগছে না আমি নিচে যাই।’
‘কালকে তো চলেই যাবো একটু আদর করাই যায় এই নিরীহ ছেলেটাকে। নাহয় আগের মত একটু মিথ্যে অভিনয়ই করো।’
‘আপনার মুখে কি কিছুই আটকায় না। আমার জন্মের শিক্ষা হয়েছে আপনাকে ভিতু বলাতে। পিচ্ছি পোলা আসছে… আর বললাম নাহ!’
‘পিচ্ছি হলেও তো তোমার বর। থাক ওই ব্যাপার টা বাদ দিয়ে এবার জড়িয়ে ধরো।’
‘পারবো নাহ।’
বলে হাটতে নিতেই উনি আমার হাত ধরে টান দেন। টাল সামলাতে না পেরে আমি ওনার বুকের উপর গিয়ে পড়ি।
‘তোমাকে তো পারতে হয়েছেই।’
বলেই আমার গালে আলতো ঠোট ছুড়ে দেয়। আমার সারা দেহ প্রশান্তি তে ভরে যায়। তখন মনে হচ্ছিলো আমার জীবনে আর কিছু চাই না তাকে ছাড়া।
সমাপ্ত
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি জানি গল্পটা অনেক অগোছালো হয়েছে। আমি সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারি নি গল্পটা। শেষ করে ফেললাম তাই।]