#তোমাতেই_আমি
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_৬
দুপুর প্রায় বারোটা ১০ বাজে এখনো রেজাল্ট প্রকাশ হয়নি। আমি একটু অধৈয্য হয়ে বলি,
‘আপনাদের রেজাল্ট আজকে আর দিবে না। সবক’টা মরছে।’
পূর্ণ আমার কথা শুনে হাসছে। আমি বিরক্তি ভরা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। হঠাৎ সবাই চিৎকার দিয়ে বলেছে আমাদের স্কুল থেকে ৩৭ জন এ+ পেয়েছে। কে কে পেয়েছে সেটার লিষ্ট এখনো আসেনি। আমি পূর্ণ ভাইয়াকে এভাবে ঘামতে দেখে ওনার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলি,
‘আপনি যদি সত্যি ভালো পরিক্ষা দেন তাহলে ভালো রেজাল্ট ওই আসবে। এতো টেনশন করার দরকার নেই।’
আমার কথায় ওনার কোনো হেলদোল নেই। উদগ্রীব হয়ে ভিড়ের মাঝে দাড়িয়ে আছে। সাইন্স থেকে ১৮ জন এ+ পেয়েছে। আমি নিশ্চিত হলাম যে এতে পূর্ণ ভাইয়াও আছে। রেজাল্ট প্রকাশ করার পর স্যারেরা অনেক খুশি। পূর্ণ ভাইয়াও এ+ পেয়েছে। আমি জানতাম ওনার এতো চেষ্টা বৃথা যাবে না। তা ছাড়া উনি একজন ভালো স্টুডেন্ট তিনি ভালো রেজাল্ট করারই কথা। হঠাৎ পূর্ন ভাইয়া আমাকে বলে,
‘আচ্ছাহ তুমি কোন কলেজে ভর্তি হবে?’
‘কেনো? ‘
‘না তুমি যেই কলেজে ভূতি হবে আমিও সেই কলেজেই ভর্তি হবো।’
‘সত্যি!’
‘হুম সত্যি এতো অবাক হওয়ার কি আছে?’
‘আমি তো মহিলা কলেজে ভর্তি হবো। এখন অধ্যক্ষ স্যার যদি আপনাকে কলেজে চান্স দেয় তাহলে তো ভালোই হয়।’
আমার কথা শুনে ওনি আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। কেদে দিবে এমন অবস্থা হয়ে গেছে বেচারির।
‘লাস্ট পর্যন্ত তুমি আমাকে মহিলা কলেজে ভর্তি করাবে?’
‘আমি কখন বললাম! আপনিতো আমাকে জিঙ্গেস করলেন আমি যে কলেজে ভর্তি হবো আপনিও সেই কলেজেই ভর্তি হবেন।’
স্কুলের মাঠে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমরা গল্প করছি। স্যার ম্যাম সবাই ব্যাস্ত এই মুহুর্তে। হঠাৎ আমার পাশে আমাদের ক্লাসের তুহিন এসে দাড়ায়।
‘স্রুতি এটা কোন ধরনের ভদ্রতা? মাঠে দাড়িয়ে একটা ছেলের সাথে কিসের কথা?’
তুহিনের কথা শুনে পূর্ণ ভাইয়া রাগে গজগজ করতেছে। কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই আমি উনাকে আটকে বলি,
‘তুই আমাকে কি ভদ্রতা শিখাবি? তুই নিজেই তো আমাকে সবসময় কথা বলার জন্য মাঠে আটকে রাখতি!’
‘আমার সাথে তো কখনো এভাবে দাড়িয়ে কথা বলতি না তাহলে এনার সাথে দাড়িয়ে কিসের কথা?’
পূর্ণ ভাইয়া দাতেদাত চেপে বলে,
‘তাতে তোর সমম্যা কথাই শুনি? আমাদের পার্সোনাল মেটার নিয়ে তোর নাক না গলালেও চলবে।’
বলেই পূর্ণ ভাইয়া আমাকে টেনে মাঠ থেকে নিয়ে আসে।
‘ওই ছেলেটার সাথে একদম কথা বলবে না বলে দিলাম।’
‘আমি ওর সাথে এমনিতেও কথা বলি না।’
‘আচ্ছাহ এসব এখন বাদ দেও কয়েকমাস পর তোমার এসএসসি পরিক্ষা এখন নিজের পরিক্ষার দিকে মনোযোগ দেও।’
‘হুম। আমি আপনার মতো না যে মেয়েদের পিছনে ঘুরঘুর করে সময় নষ্ট করবো।’
কিছুক্ষন কথা বলার পরে পূর্ণ ভাইয়া চলে যায়। তারপর আমি ক্লাস করতে চলে এলাম।
.
স্কুল ছুটির পর আমি আর সাবিনা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পাপিয়ার বাড়ি অন্যপাশে তাই সে একাই যায়। সাবিনাদের বাড়ির থেকেও আমাদের বাড়ি দূরে। তবুও একই রাস্তা দিয়ে যায়। সাবিনাদের বাড়ি আসাতে ও বাড়িতে ডুকে যায়। আর আমি একাই বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ আমার হাত টেনে ধরে। আমি মুচকি হেসে পিছনে ফিরে কাঙ্খিত ব্যাক্তিকে না দেখে মুখের হাসি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
‘স্রুতি একটু দাড়া প্লিজ।’
আমি বিরক্ত ভঙিতে বলি,
‘কেনো?’
‘একটু কথা ছিলো প্লিজ দাড়া।’
‘তাড়াতাড়ি বল কি বলবি?’
‘আমি তোকে ভালোবাসি স্রুতি। তোকে ছাড়া বাচবো না। এতদিন তুই রিজেক্ট করাতেও আমি খুশি ছিলাম কারন তুই তখনো কোনো সম্পর্কে জড়াস নি।’
‘এখনো খুশি থাক কারন আমি এখানে খুশি তাই।’
‘আমি পারবো নারে স্রুতি।’
‘তোর জন্য কি এখন আমি ব্রেকাপ করে দিবে ওনার সাথে? এখনো তো প্রেম হয়নি তুই এখনই বলিস ব্রেকাপ করে দিতে!’
আমার কথা শুনে তুহিন একদম নিশ্চুপ হয়ে যায়। চোখে পানি টলমল করছে। নড়লেই পানি গড়িয়ে পড়বে কপোল বেড়ে। তুহিন সেই স্থান নিশ্চুপে প্রস্থান করে। আমিও হাপ চেড়ে বাচি। নিজের বাড়ির উদ্দেশ্য পা বাড়িয়ে হাটতে লাগলাম।
.
বিকেল বেলা ছাদে দাড়িয়ে আছি। কোনো কাজ নেই তাই ছাদেই দাড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ করে কেউ জোরে শিষ বাজায়। আমি চমকে নিচে তাকিয়ে দেখি পূর্ণ ভাইয়া দাড়িয়ে আছে। নিচে কিছু একটা খুজছে। আমি একটু আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে দেখি একটা ইটের কণা নিয়ে সেটা একটা কাগজের সাথে মুড়ে আমার দিকে ছুড়ে মারে। আমি তাড়াতাড়ি কাগজ টা নিচ। থেকে নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি নেই। কাগজ টা খুলে দেখি একটা লম্বা চিঠি। আমি চিঠিটাকে নিয়ে রুমে এসে রুমের দরজা ভিড়িয়ে দেই।
প্রিয় স্রুতি,
অন্য নামে ডাকতে বারণ করেছো তাই
এই নামেই ডাকলাম। আসল কথা বলি,
আজ যখন তোমার হাতে আমার ওই
রিং দেখি তখন মনে হলো তোমাকে
ভালোবেসে আমি ভুল করিনি। তুমি
যখন আমাকে পড়ালেখার জন্য
হুমকি দেও সেটাও আমার ভালো লাগে
কেনো ভালোলাগে সেটা জানি না তবে
ভালো লাগে এটাই জানি।যখন আমার
রেজাল্ট দিলো তখন আমি তোমার মুখে
তৃপ্তিকর হাসি দেখলাম। তুমি ঠিকই
জানো,পড়ালেখা আমার ধ্যান-জ্ঞান
সবকিছু। তুমি যদি শর্ত না দিতে তাহলে
বুঝতাম না তুমি আমার সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
রাত শেষ হয়ে গেলেও প্রেয়সীর সৌন্দর্য
কখনো বর্নণা করে শেষ করা যাবে না।
তাই আজ এখানেই শেষ করলাম।
এখন থেকে নিশ্চয় ভালো থাকবে। কাল
আমি ঢাকা চলে যাচ্ছি। সেখানেই একটা
কলেজে ভর্তি হবো। এর মধ্যই তোমার
টেস্ট পরিক্ষা শুরু হয়ে যাবে। শান্তিতে
আসা যাওয়া করতে পারবে। পথে আর
আমি বিরক্ত করবো না। তুহিন বা অন্য
কেউ হলে প্লিজ পাত্তা দিয়ো না। মাথায়
ডুকিয়ে নিয়ো তুমি শুধু আমার। আমি
তোমাকে আমার করেই ছাড়বো। আর
গালাগাল করো না। আমি রোমান্টিক
কথাবার্তা লিখতে পারি না
__ তোমার পূর্ন ভাইয়া
চিঠিটা পড়া শেষ করে আমি নিজের অজান্তেই হেসে দেই। ভাবতেই অবাক লাগে পূর্ণ ভাইয়া আমাকে প্রেমপত্র দিয়েছে। ভেবেই খানিকটা লজ্জা পেলাম। পূর্ণ ভাইয়া ঢাকা চলে যাবে শুনে আবার মন খারাপ হয়ে গেলে। আমাদের প্রেমটা কিরকম আগের যুগের টাইপ। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েও এখন চিঠি তে কথা বার্তা। অদ্ভুত লাগলেও ভালো লাগছে এই ভেবে যে আমাদের ভালোবাসা টা সবার থেকে আলাদা। চিঠিটা আরেক বার উল্টে পাল্টে দেখে নিবো ভেবেই চিঠি টা হাতে নিলাম। চিঠির অপর পাশে একটা নাম্বার দেওয়া আছে। তাড়াতাড়ি করে মোবাইল নিয়ে নাম্বার টা ডায়াল করে ফোন দিলাম।
ফোনটা রিসিভ হতেই অপর পাশ হতে ভেসে আসে পূর্ণ ভাইয়ার কন্ঠ স্বর।
‘কি স্রুতি চিঠি পড়া শেষ?’
এটা আমার নাম্বার কিভাবে জানলো উনি ভাবতেই অবাক হলাম আমি। আমাকে অবাক করে দিয়ে পূর্ণ ভাইয়া আবারো বলে,
‘কি ভাবছো তোমার নাম্বার কিভাবে পেলাম? আরে নাম্বার টা তো আরো কয়েক বছর ধরে এই ফোনে যত্ন করে সেভ করা আছে। শুধু তোমার অনুমতি পাইনি বলে ফোন দিই নাই।’
‘আমার অনুমতির অপেক্ষায় বুঝি এতোদিন ফোন করেন নি?’
‘নাহ ফোন দিলে তো তুমি আমাকে একটা ঝাড়ি দিয়ে বলতে,পড়াশোনা রেখে আর কাজ নেই? কেনো ফোন করছেন? এই সেই কতকিছু বলতে।’
উনার কথা শুনে আমি মুখ টিপে হেসে দেই। হঠাৎ দরজা ধাক্কা দিয়ে ভাবি রুমে প্রবেশ করে।
‘আরে স্রুতি তোমার ভাই সেই কখন থেকে তোমাকে ডাকছে। নিচে চলো।’
আমি ভাবির কথা শুনে হাপ ছেড়ে বাচি। ভাবি কিছু বুজেনি এটাই বেশি। তাড়াতাড়ি ফোন কেটে নিচে চলে এলাম।
চলবে……
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দূষ্টিতে দেখবেন। জীবনে প্রথম গল্পের জন্য প্রেমপত্র লিখলাম। ভুল হলে ক্ষমার দূষ্টিতে দেখবেন। অনেক প্রেমপত্র থেকে দেখে কিছু কিছু অংশ নিয়েছি।]