#তোমাতেই_আমি
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_৫
পূর্ন ভাইয়া আমার দিকে রুক্ষ মেজাজে তাকিয়ে আছে। আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলি,
‘বৃষ্টি থেমে গেছে আমি এখন যাই। আর হ্যা আমাকে সব সময় বিরক্ত করবেন না এখন মন দিয়ে পড়াশোনা করেন।’
পূর্ণ ভাইয়া মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেলে আমার কথা শুনে। মুখে জোর পূর্বক হাসি রেখে বলে,
‘যথা আজ্ঞা মেডাম।’
‘আর শুনুন আমাকে মেডাম টেডাম ডাকা লাগবে না। মেডাম ডাকার জন্য স্কুলে তিন জন ম্যাম আছে। আমাকে নাম ধরে ডাকলেই হবে।’
কথা টা বলে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই উনার মা কে বলে। উনাকে এক্সেপ্ট করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। বাট এক্সেপ্ট না করলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে আমার পিছন পিছন ঘুরবে তাই অল্প একটু এক্সেপ্ট করে কাজে লাগিড়ে দিলাম। আমার দূঢ় বিশ্বাস উনি এতোদিন আমার জন্য অপেক্ষা করবে না। তবে আমি অপেক্ষা করবো যেহেতু আমি চেলেন্জ টা উনাকে দিয়েছি।
.
স্কুল আসতে আসতে প্রায় ৯:৪০ বেজে গেছে। কিছুক্ষন পর সমাবেশ শুরু হবে তাই সবাই মাঠে। আমি আমার ব্যাগটা ক্লাসে রেখে মাঠে আসতেই ওরা তিনজন আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো আমি চুরি করে এখানে পালিয়ে এসেছি।
‘কিরে স্রুতি তোর ভাবি তো বললো তুই প্রাইবেটে এসেছিস তাহলে প্রাইবেট না পড়ে কথাই গেলি?’
‘জাহান্নামে গেছি। আগে তুই বল তুই ঠিক আছিস তো?’
আমার কথা শুনে পাপিয়া আর সাবিনা আমার দিকে অদ্ভূত ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হয় আমি ভুল কিছু বলে ফেলেছি। পরক্ষনে মনে পড়লো কালকের ব্যাপারে ওরা কেউ কিছু জানে না তাই ব্যাপার টা এক প্রকার এড়িয়ে বলি,
‘আরে আমি বুঝি তৌসি কে এই কথা টা জিঙ্গেস করতে পারিনা?’
‘নাহ তুই আবার কবে থেকে সবার খোজ নেওয়া শুরু করলি তাই ভাবলাম।’
‘থাক না পাপিয়া এই সামান্য ব্যাপারে এতো কথা পেছানোর কি আছে। আর স্রুতি তুই আগে বল তুই কোথায় চিলি এতক্ষন?’
আমি জানি এরা আমাকে ব্যাপারটা খুলে বলা ছাড়া চাড়বে না তাই বলেই দিলাম।
‘এই দ্যাখ রে স্রুতিরর ব্রিলিয়ান্ট বফ আসছে।’
হঠাৎ পাপিয়ার এরকম অদ্ভট কথা শুনে বিরক্তিতে আমাার কপাল আপনাআপনি কুচকে গেলো। পাপিয়া একটু অদ্ভত টাইপের মেয়ে। সব সময় হাসি খুশি চলা টাই তার কাজ। তবে সারাদিন আমাদের পিছনে পড়ে থাকবে কে কাকে পছন্দ করে না করে এসব নিয়ে। এতে আমার বিরক্ত লাগলেও একদিন পাপিয়া স্কুলে না আসলে আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল টা কিরকম পাকা পাকা লাগে।
‘শুন পাপিয়া বইন আমার এই বিষয়ে আমাকে বিরক্ত করলে তোর একদিন কি আমার একদিন। তুই যদি এটা নিয়ে বেশি মাতামাতি করিস তাহলে তোর আর মেহেরাজ ভাইয়ার ইটিসপিটিসের গল্প আদ্র স্যারের কাছে চলে যাবে।’
‘এই আমি তো তোকে কিছুই বলিনি তুই হুদাই মেহেরাজ কে এটার ভিতরে টানছিস।’
‘হহ এখন সে নাকি আমাকে কিছু করেনি আচ্ছা এসব বাদ দে সমাবেশ শুরু হবে লাইনে দাড়া তোরা।’
গল্প গুজব বাদ দিয়ে সমাবেশ করার জন্য সবাই লাইনে দাড়িয়ে পড়লাম। সাথে তো আমাদের সেই বিশ্ববিখ্যাত বকবক আছেই।
.
.
স্কুল ছুটির পর আমি তৌসিকে টেনে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি। তারপর দুজনে ফ্রেশ হয়ে ছাদে চলে এলাম।
‘আচ্ছাহ স্রুতি তোদের সব কিছু ফাইনাল কি করে হয়েছে?’
আমি তৌসির কথায় বিরক্ত মুখে তাকিয়ে বলি,
‘আমাদের কিছুই ফাইনাল হয়নি। পূর্ণ ভাইয়া পড়ালেখা রেখে আমার পিছন পিছন ঘুরে সেটা তো জানিস। হুদাই আমার জন্য কেনো একটা ছেলে পড়াশোনা ছেড়ে দিবে বল? আমি তো বলেছি যে ভালো রেজাল্ট করতে হবে এখন এসব উল্টাপাল্টা কথা মাথা থেকে দূর করে দিতে। যদি ও আমার কথা রেখে নিজের পড়াশোনায় মন দেয় তাহলে ব্যাপারটা ভেবে দেখবো।’
‘বাব্বাহ লম্বা লাভ স্টোরি। বাট তোকে একটা কথা বলি স্রুতি তুই কিন্তু তুহিনকে ভালোবাসতি। তুই সেটা ওকে বলিস নি ঠিকই ও তো তোকে বলেছে। তুই ওকে কেনো রিজেক্ট করেছিস?’
‘তৌসি মেজাজ খারাপ করবি না আমি শুধু একদিন তোদের বলেছি যে আমি তুহিনের উপর ক্রাশ খাইছি। এটা তুহিন জানেও না। ও কেনো হুদাই এসে আমাকে প্রোপ্রোজ করবে?’
‘আচ্ছাহ ভালো বাসার টপিক টা এখন বাদ দে। তোর জীবন তোর সিদ্ধন্ত। বাট একটা কথা সকালে ইন্সপেক্টর সাহেব বাড়িতে এসেছে।’
‘কিহহহ! তুই আমাকে আগে বলিস নি কেনো! ওই জামাইবাবু তোকে কি বলতে এসেছে?’
‘জামাইবাবু!’
তৌসি কে এতো অবাক হতে দেখে আমি বলি,
‘আরে তুই এ তো বললি তুই পুলিবাবুকে মেনে নিতে চেষ্টা করবি তাহলে আমরা জামাইবাবু ডাকলে কি সমস্যা।’
তৌসি আমার কথা শুনে হাসে। ওকে হাসতে দেখে আমি সত্যিই অবাক হচ্ছি। মেয়েটা এতো স্বাভাবিক কেনো।
‘হু তা ঠিকাছে বাট আরেকটা কথা পুলিশবাবু বলেছে আমাকে খুব তাড়াতাড়িই তার বাড়িতে নিয়ে যাবে।’
‘কি বলিস এসব তুই তৌসি? এতো তাড়াতাড়ি কেনো যাবি তুই?’
‘আরে পুলিশ মহাশয় আমাকে বলেছে যে আমাকে তার কাছেই রাখবে। আর তুই তো জানিস যে আমি বিয়ে করার জন্য কত এক্সাইটেড ছিলাম। এখন যেহেতু একবার বিয়ে টা হয়েই গেছে তাহলে আর কিসের চিন্তা বল? সুখে শান্তি তে ঘর সংসার করবো প্যারা নাই জাস্ট চিল বেইবি কয়েকদিন পর তোর ও বিয়ে হয়ে যাবে।’
আমি তৌসির কথা শুনে না হেসে পারি না। মুখে এক কথা তার মনে আরেক কথা। মুখে হাসি ভাব থাকলেও ওর যে মন খারাপ সেটা আমার বুঝতে বাকি নেই।
‘আচ্ছাহ তুই যা ভালো বুঝিস।’
‘হু চল নিচে যাই।’
.
.
রাত যখন এগারোটা ছুইছুই ঠিক তখন আমাদের বাড়িতে ইন্সপেক্টর ইমন এসে হাজির। তিনি তৌসি কে নিয়ে যেতে এসেছে। তৌসিও খুশি মনে সবকিছু মেনে নিয়ে যেতে প্রস্তুত। ওর যাওয়ার সময় আমার মন খারাপ হলেও ওকে হাসি খুশি দেখে মন ভালো হয়ে যায়।
ইতোমধ্য তৌসিকে ওর বর ওদের ওখানের একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। এভাবেই আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের একটা প্রান অন্য স্থানে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের দিন এভাবেই কাটতে থাকে। কয়েকদিন পর আমাদের প্রি-টেস্ট পরিক্ষা তাই সবাই নিজেদের পড়াশোনায় মন দিয়েছে।
.
৫ মাস পর.
আজ এসএসসি পরিক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ হবে দুপুর ১২ টা বাজে। পূর্ণ ভাইয়ার সাথে এতোদিনে আমার সাথে মাত্র তিনবার দেখা হয়েছে। ওর পরিক্ষার পর যে উদাও হয়েছে আর দেখা হয়নি আমাদের। আমি ধরেই নিয়েছি যে উনি আমাদের যে একটা কিছু ছিলো তা ভুলে গিয়েছে। আমি তো অপেক্ষা করছি এখনো তার।
আজ স্কুল খোলা। তাই যথা সময়ে স্কুলে চলে এলাম। সুন্দর করে নিজের মতো করে ক্লাস করছি। আজকে যেহেতু রেজাল্ট দিবে পরিক্ষার্থী সবাই স্কুলে চলে এসেছে। এতো ভিড়ের মাঝেও পূর্ণ ভাইয়াকে চোখে পড়লো। উনি ইশারায় আমাকে ডাকছে বাহিরে যাওয়ার জন্য। স্যার ক্লাসে তারপরও আমি স্যারকে বলে বাহিরে চলে এলাম। বাহিরে এসে দেখি উনি উনার ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। আমাকে দেখে উনি এগিয়ে আসেন।
‘তোমার করা প্রতিঙ্গার কথা মনে আছে স্রুতি?’
পূর্ণ ভাইয়ার এতো করুণ কন্ঠ শুনে আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
‘আমার মনে আছে ভাইয়া। বারো টা বাজতে চলেছে আপনাদের এখন রেজাল্ট প্রকাশ হবে।’
‘তুমি থাকো আমার সাথে।’
‘স্যার ক্লাস নিতেছে আমি কিভাবে থাকবো এখানে?’
আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে পূর্ণ ভাইয়া আমার বাম হাত চেক করছে আমার হাতে তার দেওয়া সেই রিং টা আছে কি না। পরক্ষনে আমার হাতে তার দেওয়া রিং টা দেখে মুচকি হাসে।
চলবে….