#তোমাতেই_অস্তিত্ব_আমার
লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
৬.
Time is the best healer কথাটা আমার জন্য অক্ষরে অক্ষরে কাজ করে যাচ্ছে।খুব অল্প সময়ের সাথে চারপাশটাকে নতুন করে আবিষ্কার করছি আমি।সন্ধ্যায় আশু মালুর সাথে কথা বলা,আব্বুর অমন ব্যবহার,আপির পরে বাসায় এসে আমার সাথে আরো নানা কথা শেয়ার করা,মাইশা রিজোয়ানের সাথে দুষ্টুমি,আম্মুর মাদার বাংলাদেশি ফর্মে ব্যাক করা,সেকেন্ডে সেকেন্ডে পাল্টে যাচ্ছে আমার জীবনের কিছুক্ষন আগ অবদি থাকা বিষময় অধ্যায়গুলো।আপির কোলে মাথা রেখে ওর কাছে আরো অনেক কথাই শুনছিলাম।বেশ আনন্দ লাগছিলো।নিজের লাইফ ইভেন্ট অন্য কারো মুখে শুনতে।আপির বলার ধরনগুলোই এমন যে আমি মনে করতে না পারার কষ্টটাই ভুলে গেছি।আম্মু আর মিশু দেখলাম বইয়ের সারি হাতে করে রুমে ঢুকছে।আমি উঠে বসলাম।আপি বললো,
-এই নাও।এবার আসলো তোমার আসল ক্রাশ!
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
-উহ্!মোটেও না!এগুলো কেনো ক্রাশ হবে আমার?বই কখনো ক্রাশ হয়?
-হয় হয়!যারা তোমার মতো তাদের তো এসবই ক্রাশ।
মাইশু বই টেবিলে রেখে বললো,
-রিয়াপি,একটু বেশিই বলো তুমি।ওর হিস্ট্রি জানো তুমি?সেদিন আমার বইয়ের আরেথমেটিকস্ এর ম্যাথ পারেনাই ও!
কথাটা হজম হয়নাই আপির তা ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আমি কথা ঘোরাতে বললাম,
-ত্ তো তোর অ্যালজেবরার ম্যাথস্ করে দিলাম!তার কি?সেটা তো বললি না?
-পারছো সেটা কেনো বলবো?উপরের ক্লাসের হয়েও ক্লাস সেভেনের পাটিগণিত পারো না!শেইম অন ইউ!
আমি চোখ কটমটে ওর দিকে তাকালাম।কিছু বলবো কিন্তু তার আগে আপির দিকে একনজর তাকালাম।আপি চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি শুকনো ঢোক গিলে ঘাড় চুলকে বললাম,
-ওই আসলে,আরেথমেটিকস্ এ আমি কাচা তো,তাই আর কি!আপি,ওকে বলো আমি ওর জিওমেট্রি,অ্যালজেবরা আদারস্ কভার করে দেই তো।
-ইহ্ কভার করে!পারেনা কিছু না!
আপি বললো,
-ব্যস মাইশু,মিথিকে কিছু বলোনা।মেয়েটার প্রেজটিজ বলে তো কিছু আছে নাকি?
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
-এখন তুমিও এসব বলবে আপি?নট ফেয়ার!হুহ্!
-এ বাবা!লাগ তোলেতো?ওওওওলে,লাগ তলেনা সোনাটা!
আপির আদুরে ডাক শুনে তিনজনে একসাথে জোরে হেসে দিলাম।এজ ইউজুয়াল,বাইরে থেকে আম্মু তেড়ে এসে বললো,
-কিরে মিথি!মাইশু!হাসি ধীরে হয় না তোদের?পাশের বাসা থেকে শোনা যাচ্ছে।রিয়া,তুমিও এদের সাথে তাল মিলাচ্ছো?ওরা দুটো মিলে তোম….
-ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দাও।ডিসটার্ব করো না।
আব্বুর কথায় আম্মু কপাল ভাজ করে বেরিয়ে গেলো।যে কি না আমরা ডিসটার্বেন্স ক্রিয়েট করছি বলতে এসেছিলো,তাকেই শুনতে হলো ডিসটার্ব করো না!আম্মুর মুখটা দেখার মতো ছিলো।আবারো হাসতে লাগলাম আমরা।
বেশ কিছুক্ষন পর আম্মু মিশু আর আপিকে একসাথে ডেকে পাঠালো।আমি ভাবলাম একটু বইগুলোতে চোখ বুলিয়ে নেই।পড়াটা মনে আছে কি না!কিছুক্ষন পরে বুঝলাম,চারমাস আগের থেকেই শুরু করতে হবে।প্রথম দুমাসের গুলোর কিছুটা ধারনা আছে।
এরমাঝেই আম্মুর ডাক!বিরক্তি নিয়ে ঢুলতে ঢুলতে ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখলাম একজন অল্পবয়স্ক লোক আব্বুর সাথে বসে হাসিমুখে কথা বলছে।লোকটার বডি ফিটনেস বেশ ভালো।রিয়াপি একবার কথা বলছে আবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।বোঝাই যাচ্ছে ও বিরক্ত হচ্ছে।আমাকে দেখেই হ্যাংলার মতো লোকটা বলে উঠলো,
-হাই মিথি!হোয়াটস্ আপ?বেএএশ বড় হয়ে গেছো তুমি!
আমি ভ্রুকুচকে আব্বুর দিকে তাকালাম।আব্বু বললেন,
-মিট সিয়াম!আমার ফ্রেন্ড আশরাফ জামানের একমাত্র ছেলে।
আমি মুখে সৌজন্যের হাসি টেনে তাকে সালাম দিলাম।তবে তা তার পছন্দ হয়নি বলে মনে হচ্ছে।আব্বু বলতে লাগলেন,
-ও কুর্মিটোলাতে থাকে,ওখানকারই পুলিশ সুপার।শুধু আমি বলেছি বলে দেখা করতে এসেছে এভাবে।আর…
আব্বুর মুখে এই লোকটার গালভরা গল্প সহ্য হলো না আমার।উনার চাওনি আমার একদম ভালোলাগে নি।অস্বস্তি লাগছে।আপিও নিশ্চিত একারনেই ওভাবে বসে আছে।আমি আব্বুকে থামিয়ে বলে উঠলাম,
-খিদে পেয়েছে আব্বু!আপি চলো খাবে চলো।বেরোতে হবে তো কাল!
আপি একপলক আমার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে উঠে এলো,যেনো হাফ ছেড়ে বেচেছে।আব্বুও লোকটাকে নিয়ে তার গুন গেয়েই ডাইনিংয়েও আমাদের খাবারের বারোটা বাজালেন।খাবারের সাথে ওগুলোও হজম করলাম।লোকটা ডিনার সেরে চলে গেলো।বেশ কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে আমার সাথে।আমি একটাবারো যে তার সাথে কথা বললাম না,তবুও তার মুখে লেগে থাকা নির্লজ্জের মতো দাত ক্যালানি দেখে রাগে গা জ্বলছিলো আমার।কিছু বলি নি শুধু আব্বুর কথা ভেবে।অন্য কেউ হলে তো…
ডিনার শেষে আমিই আগে রুমে ঢুকলাম।দমকা হাওয়া গায়ে লাগতেই বুঝলাম টেবিলের পাশের জানালাটা এখনো খোলা।কিন্তু মাইশু তো ডেয়লি লাগায় সন্ধ্যার পরপরই,তাহলে আজ কি ভুলে গেলো?এগিয়ে গিয়ে লাগিয়ে দিলাম জানালাটা।
•
-আঙ্কেল,আমার কিছু বলার আছে আপনাকে।
-হ্যাঁ রিয়া বলো না।
-আঙ্কেল আমি চাই আপনি একবার আরমানের সাথে ফেস টু ফেস কথা বলুন।
মাহবুব আলম রাগে দাড়িয়ে পরলেন।
-এসব কি বলছো তুমি রিয়া?
-ঠিকই বলছি আঙ্কেল।সবটা জেনেও ও এখনো তেমন কিছু করেনি।তারমানে হতেও তো পারে ও হয়তো ব্যাপারটা ভুলতে চায়।আর,,,,
-কি বলতে কি চাও তুমি?
-মিথিকে একটা নরমাল লাইফ দিতে চাই।আপনার এতোসব পুলিশ,নজরদাড়ি,এসব ভালোলাগে না ওর আঙ্কেল।
-কিন্তু তুমিতো জানো রিয়া,এসব না হলে তো…
-আমার প্রশ্নও তো সেখানেই,যে ভয়টা আপনি পাচ্ছেন তা এখনো ঘটলো না কেনো?ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।সবটা মিটমাট করে নিন ওর সাথে,কথা বলুন একবার!
-ব্যস রিয়া,তুমি বলেছো,আমি শুনেছি।হ্যাঁ,এটাও ঠিক ও চাইলে এসব কিছুর পরেও এসে ঝামেলা করতে পারতো,কিন্তু তা করেনি।এতে আমি কিছুটা স্বস্তি পেলেও মিথিকে একা ছাড়তে পারবো না।
-একা কোথায়?আমি তো যাবো!
-তবুও,পুলিশ যাবে তোমাদের সাথে।ছদ্মবেশে।মিথি না জানলেই তো হলো!
রিয়া একটা হতাশার নিশ্বাস ফেলে চলে এলো।মেয়েটাকে পুরোপুরি স্বাধীনতা দিচ্ছে না ওর বাবা,উনিও জানেন এসবের কাছে আরমানের জেদ কিছুই না।অহেতুক এসবের মাঝে কষ্ট দিতে চাচ্ছে মিথিকে।
•
দ্বিতীয়বারের মতো,ফার্স্ট ডে এট ভার্সিটি!!!!ফার্স্ট ডে না হলেও,আমার মনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আজই ফার্স্ট ডে।আম্মু সকালের অ্যালার্মকে বাজতে না দিয়েই ঘুম থেকে তুলে দিয়েছে আমাদের।আমি আগে ফ্রেশ হয়ে এসে দুহাতে হ্যাঙ্গারের চারচারটে জামা নিয়ে দাড়িয়ে আছি।আপি ওয়াশরুম হতে বেরিয়ে বললো,
-কি হলো,মোনুমেন্ট হয়ে দাড়িয়ে আছো যে মনু?
-ড্রেস চুজ করে দাওনা।
আপি এগিয়ে এসে চারটা ড্রেসই নিয়ে আবার আলমারীতে রেখে দিলো।একটা ব্লাক রেডের কম্বিনেশনের গোলজামা ধরিয়ে দিয়ে বললো,
-মিথি ওয়ান্টস্ টু রিএক্সপেরিয়েন্স ফার্স্ট ডে এট ভার্সিটি রাইট?
আমি খুশিতে চকচকে চোখে জামাটা গায়ে জরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-এটা পরেছিলাম বুঝি??
-জ্বি মহারানী!
-তুমি কি করে জানলে?
আপি কিছুটা হচকিয়ে গিয়ে জোরপুর্বক হেসে বললো,
-তোমার স্পেশাল দিন,আর আমিই জানবো না?
আপিকে কিছুক্ষন জরিয়ে ধরে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রিকশা করে বেরোলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।বাসার বাইরে বেরোতেই মনে হচ্ছিলো,আজ থেকে আমি মুক্ত,কোনো নজরদাড়ি নেই আমার উপর।আ রাহা হু মে,জীন্দেগী!
রিকসা থেকে রাস্তার এপাশেই নেমে দাড়ালো আপি,ওর নাকি এই স্টেশনারীর দোকানে কি কেনার আছে!ফুটপাতে দাড়িয়ে আমি গেইটের দিকে তাকিয়ে কিছুটা এগিয়ে গেলাম।আমার স্বপ্নের ভার্সিটি।কতোই না স্বপ্ন বুনেছিলাম আমার ভার্সিটি লাইফ নিয়ে,আর!!নাহ,কিছুই হয়নি,আমি আবারো সবটা গুছিয়ে নেবো।মনেমনে ছোটখাটো প্রমিস করে মুখে হাসি টেনে একপ্রকার ঘোরের মধ্যেই আপিকে ছেড়ে আরো সামনে এগোলাম।
রিয়া চারপাশে একবার চোখ বুলালো।ওর থেকে দুহাত দুরেই জেনারেল ড্রেসআপে চারজন পুলিশ দাড়িয়ে,দুজন নিজেদের মধ্যে কথা বলছে,আর দুজন আড়চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।ভার্সিটির ভিতরে কিভাবে নজর রাখবে এরা,ঢুকতে তো আর দিবে না ক্লাসটাইমে,বাইরেই ঘাটি গেরে থাকবে । আরমান চাইলে এসব কিছুই ওর রাস্তায় আসতে পারবে না।ভাবতেও হাসি পেলো ওর,এরা মাত্র চারজন নাকি আরমানকে থামাবে!
-আহ্!
দুজন অফিসারই এগিয়ে আসলেন রিয়ার দিকে।বললেন,
-হোয়াট হ্যাপেন্ড মিস?আর ইউ ওকে?
রিয়া পা ধরে ফুটপাতের উপর পরে থাকা ভাঙা কাচের বোতলটা দেখালো।যদিও ওভাবে কেটে যায়নি তবুও পথচারীদের সমস্যা হবে এই কথা নিয়ে অফিসার দুজনই পাশের দোকানদারগুলোকে ঝাড়তে থাকে।
রাস্তায় কিছুটা এগোতেই দেখি সেদিনের ওই নিলু ছেলেটা মাঝরাস্তায় দাড়িয়ে ওর ফুলের ঝুড়িটায় কিছু দেখছে।ওভাবে কেনো দাড়িয়ে আছে ও রাস্তায়?কিছু হয়ে গেলো?বামদিকে তাকাতেই দেখি একটা ব্লাক গাড়ি বেশ অনেকটা স্পিডেই ওর দিকে ছুটেছে।আমি চেচিয়ে নিলু বলে ডাক দিচ্ছি,ও একচুলও সরলো না।লাগালাম এক দৌড়,হেচকা টানে সাইডে নিয়ে আসতে পারি ছেলেটাকে।আমাকে জরিয়ে আছে ও।তবে গাড়িটা বেশ অনেকদুর দিয়েই পাশ কাটিয়ে যায়।আমার শ্বাস প্রশ্বাস জোরে জোরে চলছে,হাপিয়ে গেছি।ভয়ে কাপছি এখনো।রাগী গলায় বললাম,
-রাস্তার মাঝে গিয়ে কেনো দাড়িয়েছিলি তুই নিলু?
নিলু মাথা তুলে বললো,
-আপা!!তুমি??
-হ্যাঁ আমি,তুই রাস্তার মাঝে কেনো গিয়েছিলি?ঝুড়ির ফুল গোনার জন্য আর কোনো জায়গা ছিলোনা?
-আরেহ্!মাঝ রাস্তায় ক্যান দাড়ামু।সাইডে তো ছিলাম।তুমি মাঝ রাস্তায় পাইবা ক্যামনে আমারে?
-তাই?সাইডে ছিলিস বুঝি?তাহলে ওই গাড়িটা যে তোকে ধাক্কা দিচ্ছিলো!তার কি হ্যা?
-আরে ধুর,গাড়ি রইলো কই আর আমি রইলাম কই!কি যে কওনা তুমি!
আমি একটু পাশে তাকিয়ে দেখলাম,নিলু রাস্তার পাশেই ছিলো,ভেবে দেখলাম গাড়িটাও বেশ অনেকদুর দিয়েই চলে গেছে।তাহলে আমার এমন মনে হলো কেনো?আর এই পরিস্থিতি?কেনো মনে হলো এমনটা আগেও হয়েছে আমার সাথে?এক্সিডেন্টের মতো সিচুএশন ছিলো না,তবুও এতোটা ভয় পেয়ে গেলাম কেনো আমি?
-আপা!
আমি ধ্যান ছেড়ে বললাম,
-হুম,বল।তুই কি আশেপাশেই থাকিস?
-হ তো।ওইযে সবজিওয়ালার পাশের গলিটার ভিতরেই আমার বাড়ি।কইছিলাম না তোমারে?
এরমধ্যে আপিও এসে গেছে।আমাকে বললো,
-তুমি একাই এপারে আসলে কেনো?
-ওই এমনি,নিলু এই নে,,আর সাবধানে থাকিস।
ছেলেটার হাতে বিশ টাকা ধরিয়ে দিলাম,ও অনেক বড় একটা হাসি দিয়ে হেলতে দুলতে চলে গেলো।
-ফুল নিলে না অথচ বিশ টাকা দিলে মানে?
-কিছুনা আপি।
-কিছু তো।
-ও বললো আমি চারমাস আগে নাকি এমনটাই করতাম,তাই আজও তাই করলাম।
-ও!তো এখন যদি কেউ এসে বলে চারমাস আগে তোমাকে কেউ পাগলের মতো ভালোবাসতো আর তুমিও তাকে জি জান দিয়ে ভালোবাসতা তো কি করবে?
আপির কথায় আমি থেমে গেলাম।এই কথাটা কেনো বললো আপি?মানে কি এর?আপি হেসে বললো,
-আরে রিল্যাক্স !তুমি তো লাভ ম্যারেজ করবেই না।কমিটেট না তুমি?আর তুমি রিলেশনে গেলে সেটা আমিই আগে জানতাম।এরকম কিছুই হয়নি।সো লেট ইট গো।চলো ভিতরে যাই।
আপির কথায় মৃদ্যু হেসে পা বাড়ালাম ভার্সিটির ভেতরে।মাথা নিচু করে হাটছি,হারিয়ে গেছি আবারো ভাবনার দুনিয়ায়।কিছুটা এগিয়ে যেতেই ঝড়ের বেগে দুজন এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো।কিছুটা চমকে উঠলাম।ওদের ছাড়িয়ে দেখি এপ্রোন গায়ে আশু আর ব্যাগ নিয়ে ফর্মাল ড্রেসে মালিহা।আমি খুশি হয়ে আবারো ওদের জরিয়ে ধরলাম।এবার কান্না করে দিয়েছি আমি।মালু ওভাবেই বললো,
-কিরে আশু?মিথি এতোটা ছিচকাদুনে হয়ে গেছে?
-হ্যাঁ,তাইতো দেখছি।এই মেয়েটাও না!নটাংকি কি দুকান!
আমি ওদের ছেড়ে চোখ মুছে বুকে হাত গুজে গাল ফুলিয়ে দাড়ালাম।আমি জানি ওদের সাথে আপির বা আব্বুর কথা হয়ে গেছে যাতে ওরা আগের বিষয়ে কথা না বলে।আমাকে রাগতে দেখে ওরা দুজনেই হেসে দিলো।আশু বললো,
-ওয় ড্রামেবাজ!তোর ড্রামা থামা।আমার কলেজ যেতে হবে,ক্লাস আছে।নবাবীর সাথে সাক্ষাৎ পেয়ে আমি ধন্য।তুই রাগ করে থাক,আমি আসছি বাই।
আমি কোমড়ে হাত দিয়ে চোখ ছোট করে ওর দিকে তাকাতেই ও হেসে বললো,
-আরে,ক্লাস আছে।তবে দেরিতে।এখন তোর রাগ দেখতেই যদি সময়পার হয়ে যায় তাহলে…
আমি ওর হাতে চড় মেরে বললাম,
-খবরদার ব্যস্ততা দেখাতে আসবি না।আজ সারাদিন আমরা ঘুরবো।মালু,চল।আজ দুজনকেই ভার্সিটি ঘোরাবি তুই।
মালিহা মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বললো।আপি বললো,
-ওকে দেন,তোমরা মজা করো।আমি আসছি।মিথি,ক্লাস শেষে তোমাকে আমি পিক করে নিবো।আর মালিহা,ক্লাস শেষে তুমি ওর সাথেই থেকো হুম?
দুজনেই একসাথে হ্যাঁ বললাম।আপি চলে গেলে বেশ অনেকটা সময় আমরা একসাথে কাটালাম,আড্ডা দিলাম।এরপর আশু ক্লাসের জন্য বেরিয়ে গেলো।মালিহা আমাদের ভার্সিটির নতুন ফ্রেন্ড উর্বি আর রায়হানের সাথে কথা বলালো।উর্বি বললো,
-কেমন আছিস মিথি?
-এইতো,ফিট এন্ড ফাইন।তুমি?
-ওরে,তুই তুকারি শেখাতে হবে তোকে আবার?
রায়হান বললো,
-কেনোরে উর্বি,এতোটা প্যারার কি আছে?আর মিথির জন্য তো ব্যাপারই না।আজই বলবে তুই করে।কি বলিস মিথি?
আমি ঘাড় উপরে নিচে নামালাম।রায়হান বললো,
-দেখেছিস জানতাম।মিথি ডেমো দে তো।
আমি হেসে বললাম,
-আমাদের গ্রুপে ঢোকানোর আগে রায়হানকে গ্রুপ রুলস্ শর্ত বুঝিয়েছিলি উর্বি?
উর্বি মালু হাসলো।রায়হান দুঃখের স্বরে বললো,
-হুউউম!তুইই সেই পাব্লিক না যে আমাকে বন্ধু বানানোর আগে দুরুম দুরুম করি গার্লফ্রেন্ড বানাতে বলেছিলি?সিঙ্গেল ছেলেরা নাকি বন্ধু হয়েই প্রপোজ করে বসে সেই ভয়ে!আমি বানিয়েছি গার্লফ্রেন্ড।
আমরা সবাই মিলে হাসলাম।মালু বললো,
-ফটিক চাদ,দেখাইলা না এখনো।
-মিথি আসছে না,তিনজনকে একেবারে দেখাবো।অবশ্য মিথির ডিপার্টমেন্টেই মেয়েটা।
মালু উর্বি একসাথে ওওওও বলে উঠলো।এভাবে বেশ মজাতেই সময় কাটালাম।উর্বি রায়হানের ব্যবহারে মনে হলো ওদেরকেও সবটা বলেছে মালু।ওরা সবাই মিলে আগের আমাদের মজা করার অনেক কথা শেয়ার করলো।মিস করছি সেই মুহুর্তগুলোকে,যা পেয়েও মনে করতে পারছি না।তবুও একটা মুহুর্তের জন্য ওরা কেউ আমাকে ওসব নিয়ে ভাবতে দেয়নি।ব্যবহারটা একদমই স্বাভাবিক ছিলো ওদের তিনজনেরই।তাই আমিও আর পুরোনো কথা ভেবে মনখারাপ করিনি।অনেকক্ষন আড্ডা দিয়ে ক্লাসে ঢুকলাম।
ফার্স্ট ক্লাস শেষে আমার চারমাসের গ্যাপের কথা আন্দাজ করতে পারলাম।সেকেন্ড ক্লাস নাকি হবে না আজ।আগের নোটস্ গুলো কার কাছ থেকে কালেক্ট করবো ভেবে চিন্তায় পরে গেছি আমি।ডিপার্টমেন্টের সামনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি।উর্বি,রায়হান,মালিহা একই ডিপার্টমেন্টে,ক্লাস করছে।আমিই পরেছি দরিয়ায়!কেউ তো তেমন নেই,যদি কাউকে চিনেও থাকতাম,এখন তো তারও সাথে কথা বলতে পারছি না,ম্যামোরি লসের কথা সবাইকে কি করেই বা বলবো?মুখ ছোট করে এসব ভাবছি একটা মেয়ে আচমকাই এসে জড়িয়ে ধরে বললো,
-মিথিইইইইইই!ইউ আর ব্যাক!ওমাইআল্লাহ!কান্ট বিলিভ দিস!ভেবেছিলাম এক্সিডেন্টের পর ট্রিটমেন্ট শেষ করে হয়তো দেশের বাইরেই চলে গেছিস তুই!
এসব বলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দাড়ালো ও।বেশ ফর্সা আর শুকনো একটা মেয়ে।হাতে আমাদের সাব্জেক্টের বই,মানে সেইম ডিপার্টমেন্ট আমরা।পরনে জিন্স টপস্,হাই হিল,দেখেই বোঝা যাচ্ছে ধনী ঘরের মেয়ে।ও চেনে আমাকে?এক্সিডেন্টের কথাও জানে?ওকে তাহলে বলাই যায়,হেল্প করতে পারবে ও আমাকে।
-তুমি…
-আরেহ্!চিনতে পারছিস না মনে হয়?আশু মালুকে একটু কম সময় দিয়ে আমাকে আরেকটু সময় দিলে এমনটা হতো না।ওরা তো আবার তোর বেস্টফ্রেন্ড!আরু,তোর কপালটাই খারাপ।
আরু?এটা কেমন নাম?যাই হোক,এটুকো জেনেছি,চলবে আমার। বললাম,
-আরু,প্লিজ রাগ করো না হুম!আসলে আমি শহরের বাইরে ছিলাম তো?কেমন আছো বলো?
-তো শহরের বাইরে গেলেও খোজখবর নেওয়া যায় ফ্রেন্ডের!
-ও অনেক কথা!বলবো তোমাকে।কেমন আছো এটা বলো।
-হুম ভালো।আঙ্কেল,আন্টি,মাইশা,রিজোয়ান,রিয়াপি ওরা কেমন আছে?
ওর কথায় অবাক হলাম।এতোটা চেনে আমাকে?মুখে বললাম,
-হুম সবাই ভালো আছে।তোমার বাসার সব?
-হ্যাঁ ভালো,আব্বু কাল আসছেন কানাডা থেকে,আম্মুর ডায়াবেটিকস এর পয়েন্টটা বেড়েছে,ও ঠিক হয়ে যাবে।আর ভাইয়া…
দীর্ঘশ্বাস ফেললো ও।আমি একটু ব্যস্ত হয়েই জিজ্ঞাসা করলাম,
-কি হয়েছে তোমার ভাইয়ার?
-ওর ভাইয়ার খবর জেনে তুমি কি করবে?
কথাটা শুনে পিছনে তাকিয়েই অবাক হয়ে গেলাম আমি।কালো শার্ট,ফোল্ডেড লং হাতা,গ্রে প্যান্ট,গলায় সানগ্লাস ঝুলানো,পকেটে হাত,ভ্রুজোড়া কুচকানো আর ঠোটে এক রহস্যময় অমায়িক হাসি।উনি?উনিতো সেদিনের ওই লোকটা,আমাকে রাস্তায় জরিয়ে ধরেছিলো যে!বাবাহ্,সেদিনের ওরকম এরুগেন্ট ড্রেসআপ ছেড়ে আজ এতোসুন্দর ফর্মাল ড্রেস?আশেপাশে কালো সুটের গার্ডস্ গুলাও নাই।কিন্তু উনি এখানে কি করে?
-আপনি?
-ইউ নো মি?
কথাটা শুনে রাগ হলো আমার ।নিজেই তো সেদিন চিনি নাই জন্য কিকরম ব্যবহারটা করলো,এখন আবার উল্টোটাই বলছে।
-কি ম্যাম?কোথায় হারিয়েছো?বললে না তো,ওর ভাইয়ের খবর জেনে কি করবে?আর আমাকে চেনো কি না?
ওদিনের কথা কি করে ভুলবো?বেশ রাগ হয়েছিলো আমার।কিন্তু বেকার বেকার ঝগড়া করবো না আর আরুর সাথে ভাব বাড়াবো বলে লোকটাকে পুরোপুরি ইগ্নোর করে আরুকে বললাম,
-বললে তো না আরু,কি হয়েছে তোমার ভাইয়ার?
-উরিব্বাস!আবারো ওর ভাইকে নিয়েই জানতে চাচ্ছো?নট ব্যাড হা?ভালোই পারো তো,,,,
আমি তার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললাম,
-কি বলতে কি চাইছেন আপনি?
-সিম্পল!তুমি ওর ভাইয়ের খোজ নিচ্ছো কেনো?
-নান অফ ইউর বিজনেস।আমি আরুর সাথে কথা বলছি।আমাদের মাঝে এভাবে কথা বলছেন কেনো আপনি?আর,,,
-ইয়াহ্,ইট ইজ মাই বিজনেস।তুমি চেনো ওকে?
আমি অনেকটাই বিরক্ত হলাম।এই লোকটা ছেচড়ার মতো কথা বলে চলেছে আমাদের মাঝে!প্রথমদিন থেকেই আমাকে তুমি বলে সম্মোধন করছে!আবার বলছে আরুকে চিনি কি না!বেটা তোর কিসের দরকার তা জানার?বললাম,
-সেটা আপনাকে কেনো বলবো?আরু চলো তো এখান থেকে।
বলে আরুকে ধরে হাটা লাগালাম,আপাতত আরুকে দরকার আমার।লোকটা পিছন থেকেই বললো,
-আরু অচেনা কারো সাথে কোথাও যায় না।
মেজাজ বিগরে গেলো আমার।জোরে জোরে পা ফেলে এগিয়ে এসে বললাম,
-এতো কথা বলছেন কেনো?ও আমার ফ্রেন্ড,অচেনা হবো কেনো আমি?আরু,তুমি কিছু বলছো না কেনো?
-ফ্রেন্ড হও আরুর?আরুর ফুল নেইম বলো।
আমি চুপ করে গেলাম।এবার কি বলবো?দুজনেই আমার দিকে উত্তরের জন্য তাকিয়ে আছে।আরুকে সবটা বলবো,একে না।কথা ঘোরাতে বললাম,
-আপনাকে প্রুভ দিবো কেনো আমি,আজব তোহ!যান নিজের কাজে।
-তাহলে আরুও যাবে না তোমার সাথে!
আমি একনজর আরুর দিকে তাকালাম।ও”আমার কিছু করার নেই”টাইপ একটা লুক দিলো।বুঝলাম,এইলোক ফর্মালে এসেও হয়তো মেয়েটাকে ভয় দেখিয়েছে।বললাম,
-দেখুন,আপনি ওকে এভাবে ভয় দেখাতে পারেন না।নিজের ক্ষমতা অন্য কোথাও দেখাবেন।চলো আরু।
-হেই ওয়েট,আরু যাবে না তুমি ওকে টানাটানি করছো কেনো?জোর করছো কোন অধিকারে?আবার ওর ভাইয়াকে নিয়েও আলোচনা করছো!
-আপনিই বা কোন অধিকারে বলছেন ও যাবে না আর আমরা কি নিয়ে আলোচনা করবো না করবো?
-কারন এই আরিশা আমার বোন আর যাকে নিয়ে কথা বলছো সে হতভাগাটা আমি,ইশতিয়াক আরমান।
উনার কথা শুনে আমার চোখ কপালে। মানে?উনিই আরুর ভাইয়া?এভাবে কেস খেয়ে গেলাম?এবার কি করে হ্যান্ডেল করবো?বাজখাই গলায় তো আর কম কথা শুনাই নি উনাকে!আরুও তো উল্টোপাল্টা ভাববেই,হয় আমি বেয়াদব হয়ে গেছি,নয়তো পাগল।আমি অসহায় চোখে দুজনের দিকে তাকালাম।ওরা একবার আমার দিকে তাকিয়ে নিজেদের দিকে তাকিয়েই জোরে হেসে উঠলো,যার মানে বুঝলাম না আমি।কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবো তখনি উর্বি আর মালিহা হাজির।মালিহা লোকটাকে দেখে বললো,
-ভাইয়া আপনি?
আমি অবাক হয়ে গেলাম।ও চেনে এনাকে?বললাম,
-মালু তুই চিনিস এনাকে?
-হ্যাঁ,কেনো তোর কথা হয়নি ভাইয়ার সাথে এখনো?ভাইয়া আপ…
ওকে থামিয়ে আরমান বললেন,
-মালিহা,উর্বি তোমাদের সাথে কথা আছে আমার।ওদিকে চলো।
-কিন্তু ভাইয়া…
উনি রাগী গলায় বললেন,
-কোনো কিন্তু না।এসো আমার সাথে।
ওরা গটগট করে উনার পিছন পিছন ছুটলো।আমি কিছু বলবো তারআগেই আমার হাত ধরে আরু বললো,
-মিথি তোর নোটস্ লাগবে না?
-হ্যাঁ,কিন্তু ওরা,,,,
-যেতে দে না ইয়ার।ভাইয়ার সাথে ওদের ভালো একটা বন্ডিং আছে।হয়তো জরুরি কোনো কথা।
-তা ঠিক আছে,কিন্তু মালিহা কিছু বলতে চাচ্ছিলো।
-ওকে রিল্যাক্স।শুনে নিস কোনো একসময়।এখন যেহেতু ওরা আলাদাভাবে কথা বলতে চাচ্ছে,তোর যাওয়া ম্যানারস্ এর মধ্যে পরে না।ভালো দেখাবে না রাইট?
আমি চুপ করে গেলাম।ঠিকই তো বলেছে ও।লোকটা আমার সাথে অমন করে আর মালুদেরকে আলাদা কথা বলতে নিয়ে গেলো?এমনভাবে পরিচয় আমাদের?আরু আমাকে নিয়ে সিড়িতে বসিয়ে আমার হাতে কিছু নোটস্ ধরিয়ে দিয়ে বললো,
-এই নে,এগুলোই প্রথমে লাগবে তোর।আর বাকিগুলো ধীরে ধীরে দিয়ে দেবো তোকে।
-থ্যাংকস্ আরু।কিন্তু তুমি কি করে জানতে এগুলোই লাগবে আমার?আর পুরোনো নোটস্ ক্যারি করছিলে কেনো?
আরু থতমত খেয়ে বললো,
-আ্ আরে,পরশুই একজন নিয়েছিলো।আজ ব্যাক করলো,ভাবলাম তোকেই দিয়ে দেই।
-ধন্যবাদ।
-তুই আমাকে ফ্রেন্ড ভাবিস না!
-কেনো?এভাবে বলছো কেনো?
-ওদের সবাইকে তুই করে বলিস,আমাকে না।আবার বারবার থ্যাংকস্ দিচ্ছিস।
-আচ্ছা,ঠিকাছে।তুইই বলবো,আর থ্যাংকস্ ও দিবোনা।এবার খুশি তো তুই?
আরু আমাকে জরিয়ে ধরে বললো,
-খুউউউউব!!
-আচ্ছা,তুই আমার এক্সিডেন্ট,মেমোরি লস এসবের কথা জানিস?
আরু আবারো আমার কথায় অস্বস্তিতে পরেছে কিছুটা বুঝতেই পারছি।মুখে বললো,
-হুম!শুনেছি।কিভাবে কি তা জানি না,তবে তোর দের বছরের মতো টাইমের কিছুই মনে নেই নাকি!
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
-হুম।
-আরেহ ছাড়তো,এটা কোনো বিষয়ই না।মাইনর এক্সিডেন্ট।চিন্তা করিস না,সব মনে পরে যাবে তোর।
আমি মৃদ্যু হাসলাম
-আচ্ছা,ডিপার্টমেন্টের আর কেউ কথা বলতো না আমাদের সাথে?
-না,ভাইয়াও তুই ছাড়া কারো সাথে মিশতে দিতো না আমাকে।
ওর কথায় আবারো অবাক হলাম।
-কিন্তু কেনো?
-সেটা ওই ভালো জানে।ওকে আজ অবদি কেউ বুঝে উঠতে পারলাম না আমরা।
ওর কথায় সহমত আমারো।দু দিনের দেখায় আমিও গোলকধাধায় পরে গেছি তার আলাদা আলাদা রুপ দেখে।ওর সাথেই বসে বাকি ক্লাসগুলো শেষ করলাম।তারপর আরুর ভাই,মালু,উর্বি,রায়হান কারো সাথেই দেখা হয়নি আর। গেটে দাড়াতেই দেখি আপি হাজির।রিকশায় আপিকে সবটা বলতে বলতে বাসায় আসলাম।আপি শুধু বললো বাসায় আরুর ভাইয়াকে নিয়ে কিছু বলার দরকার নেই।কারনটা জিজ্ঞাসা করতেই বললো রায়হান বাদে অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বলার বিষয়টা নাকি আব্বু সিরিয়াসলি নিতে পারেন।যদিও কখনো এমন হয়নি,তবুও গত একমাসের কথা ভেবে আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।এই একটা লোক নিয়ে বাসায় কথা না বললে তেমন কিছু আসবে যাবে না।
#চলবে…
®