#তোমাতেই_অস্তিত্ব_আমার
লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
১১.
রুমে বসে রক্তভেজা ওড়নার দিকে তাকিয়ে আছি।অবাধে চোখের পানি গরিয়ে পরছে গাল বেয়ে।থামার নাম নেই।অতিকষ্টে রক্তের দাগ লুকিয়ে বাসায় ঢুকেছি।এসেই বাথরুমে নিয়েছিলাম ধুবো বলে।কিন্তু তাতে শুধু কান্নার আওয়াজটাই বেরেছিলো,পারিনি ধুতে।রুমেই ছিলাম,আর বেরোই নি।আম্মুর ডাক পরলো।ডিনারের ইচ্ছা ছিলো না,তবুও সবাই টেনশন করবে ভেবে চুপচাপ স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে এলাম।বাইরে এসে দেখি সিয়াম এসেছে।সোফায় বসে আব্বুর সাথে কথা বলছেন।রাগে গা জ্বলতে শুরু করলো আমার আবারো উনাকে দেখে,উনার জন্যই এতোসব হয়েছে।কে বলেছিলো আমার হাত ধরে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে?কিছু না বলে সোজা ডাইনিং এ গেলাম।আব্বু আর সিয়ামও বসে গেলেন।খেতে খেতেই আব্বু বললেন,
-রাস্তায় কিছু হয়েছিলো আজ?
খাবার মুখে তুলতে গিয়েও নামিয়ে নিলাম।জানতাম লোকটা আব্বুকে বলবে এ নিয়ে,সবটা বলেছে?কিভাবে বলেছে?তবে তো আব্বুর চোখে আরমানই দোষী!আদৌও উনারই দোষ নয় কি?আমি কেনো তা ভাবতে পারছি না?কেনো বারবার কাচ বেধা হাতের কথা মনে পরছে?আবারো চোখ ভরে উঠলো আমার।
-কিছু বলেছি তোমাকে।
-হ্যাঁ,রাস্তায় ওনার সাথে দেখা হয়েছিলো।
-তো ড্রপ করতে চেয়েছিলো ওর সাথে আসোনি কেনো?
এভাবে বাইরের লোকের সামনে আব্বু এসব বলবেন ভাবতে পারি নি।উনি না থাকলে বুঝিয়ে বলতে পারতাম আব্বুকে।আব্বু বললেন,
-কি হলো?
-রিয়াপি আসার কথা ছিলো,তাই আর…পরে ওর সাথেই এসেছি।
-ওহ!
আব্বু আর কিছু বললেন না।আমি কিছুটা অবাক হলাম।সিয়ামের মার খাওয়া,আমার হাত ধরার বিষয়,এসব কিছু বললেন না কেনো?আব্বু চলে গেলে সিয়াম নিচু গলায় বললেন,
-সবটা বলি নি,তবে জাস্ট এটুকো বোঝালাম তোমাকে আমার কথার দাম তোমার আব্বুর কাছে কতোটা।
বলেই ঠোট বাকিয়ে হাসলেন উনি।আমি দাতে দাত চেপে গেলাম।লোকটা খেয়েই বিদেয় হলো।
-আব্বু উনি এভাবে আমাদের বাসায় আসেন কেনো?
-আমি ডেকেছিলাম আজ,কাজ ছিলো।
-কি কাজ?
-অফিসিয়াল কিছু ফাইলস নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো।
সত্যিই সোফার সামনে কিছু ফাইলস্ রাখা।কি এমন ফাইলস্ যে পুলিশ ডাকতে হবে?একটু এগোতেই,আব্বু বললেন,
-রুমে যাও,পড়া নেই তোমার?
-হ্যাঁ,কিন্তু আব্বু,এগুলো…
-ও কিছু না।যাও তুমি।
রুমের জন্য পা বারালাম।পেছন ফিরে আবারো বললাম,
-উনাকে রাতে ডিনারে আর আসতে বলবেন না আব্বু,আমার এসব পছন্দ না।
আব্বু একবার আমার দিকে তাকালেন।তারপর মৃদ্যু হেসে বললেন,
-সরি,আর হবে না এমন।
তার হাসার কারন বুঝলাম না।তবুও আমি মলিন হেসে রুমে ঢুকলাম।মাইশু আর সব টিভি দেখছে।রুমে ঢুকতেই মনে পরলো ওড়নাটা কাবার্ডে রাখা।এ বাসায় আমার দরজা লাগানো নট অ্যালাউড তাই দরজার সামনে স্টিলের গ্লাস রেখে ওটা বের করলাম। কান্না পেলো আবারো।তবুও নিজেকে শক্ত রেখে ওড়নাটাই দেখছি।
কিন্তু আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো?হ্যাঁ,আহত কাউকে দেখে এর আগেও কান্না করেছি।কিন্তু ওরা আমার আপনজন।অচেনাদের জন্য কান্না পেলেও লোকলজ্জার ভয়ে এভাবে কাদি নি আমি।আর বাসায় এসে এখনো?কেউ হন না তো উনি আমার!কোনো সম্পর্ক নেই আমাদের! আরমান বাসায় গেছেন?ডানহাতেই তো লেগেছে,খেয়েছেন উনি?
স্টিলের গ্লাস পরার আওয়াজ!কেউ রুমে ঢুকেছে।আমি চটজলদি ওরনা লুকিয়ে মুখ মুছে নিলাম।মাইশু এগিয়ে এসে আমার চেহারা দেখে বললো,
-রাত বিরাতে কেদেছো কেনো?
-ক্ কই?না তো!
-রাত বিরাতে মিথ্যা বলছো কেনো?
-আরে,মিথ্যা বলতে যাবো কেনো?
-রাত বিরাতে স্বীকার না করে উল্টো আমাকেই প্রশ্ন করছো কেনো?
এই মেয়েটাও না!বিরক্তি নিয়ে বললাম,
-রাত বিরাতে “কুছ তো গারবার হে দায়া”এমন করছিস কেনো?
-তো রাত বিরাত হইছে যখন বুঝছো,বিছানাটা ঠিক মতো পেতে দাও না।ঘুমাই।
-রাত বিরাতে যখন তুমিই ঘুমাবা তাইলে তুমিই ঠিক করো বিছানা!
মাইশু গাল ফুলিয়ে বিছানা ঝারতে লাগলো,তারপর শুয়ে পরলো।আমি মৃদ্য হাসলাম।ঝগড়া করলেও আমার মুড ভালো করতে জানে ও।কিছুক্ষন পড়লাম,যদিও মন বসছিলো না।চিন্তা হচ্ছিলো আরুর ভাইয়ের জন্য।জাননিনা তার জন্য এতো চিন্তা আমার সাজে কি না!ফোন করবো আরুকে?কি বলবো?কিন্তু খবর না নিলেও তো ঘুম হবে না আমার।করি কল।একটু কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলবো।যা হবে হবে।কাপকাপা হাতে মোবাইল তুলে কল লাগালাম আরুর নাম্বারে।
মোবাইল হাতে এতক্ষন দাড়িয়ে ওয়েট করছিলো আরমান।বাসায় আসার সাথে সাথেই ওর হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে আরু।গত চারমাসে রুমের ছ ছটা আয়না ভেঙেছে ও।এসব দেখে যেনো অভ্যসই হয়ে গেছে ওদের।কিছুক্ষন আগেই আফরোজ সাহেব জোর করে খাওয়ার টেবিলে বসিয়েছে ওকে,স্পুন দিয়ে খাচ্ছে।যদিও মিসেস জামান খাইয়ে দিতে চেয়েছিলো।মোবাইলটা রিং হওয়ার শব্দে সবাই সেদিকে তাকালো।এই নাম্বারে একজনই কল করতে পারে।মিথি নামটা জ্বলজ্বল করছে।আরমান তো খুশিতে খাওয়া ছেড়ে উঠে দাড়িয়েছে।পরে কিছু একটা মনে পরতেই মনটা খারাপ করে বসে পরলো।সবাই শুধু দেখছে ওকে।আরমান বললো,
-আরু,ফোনটা ধর।লাউডস্পিকার দিয়ে।
আরু রিসিভ করে বললো,
-হ্যালো।
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললাম,
-যাক আজ তো নেট আছে তোর!
-হ্যাঁ,হঠাৎ এভাবে ফোন করলি?
-ওই…
-কি হলো?
-ন্ না মানে এমনিই।আঙ্কেল আন্টি কেমন আছেন?
-হ্যাঁ,সবাই ভালো আছি।
-ও।সব্বাই ভালো আছিস তো?
-হ্যাঁ বললাম তো ভালো আছি।
-ও।
-আচ্ছা,রাখছি তবে?কাল দেখা হচ্ছে?
-হুম?না ওয়েট।
-কি?
-কাল কখন আসবি?
-প্রতিদিন যখন যাই।কেনো?
-ক্ কার সাথে আসবি?
-তুই তো জানিস ভাইয়ার সাথেই যাই।
-উনিই আসবেন?
-হ্যাঁ,কেনো?
-কেনো আসবেন?
-ফোন দিয়ে কথা পেচিয়ে ইন্ডিরেক্টলি ভাইয়ার কথা শুনতে চাচ্ছিস?
ওর কথা শুনে হচকিয়ে গেছি আমি।বললাম,
-বয়েই গেছে আমার!
-হ্যাঁ,তাইতো দেখছি।তুই…
-ডিনার করেছিস?
-হ্যাঁ,খাচ্ছি।
-সবাই?
-হুম।
এ অবস্থায় কি করে খাচ্ছেন উনি?কেউ খাইয়ে দিচ্ছে না?বললাম,
-আন্টি কি করেন?
-তোকে বললাম তো সবাই খাচ্ছি।
তারমানে জনাব একা একাই খাচ্ছেন।মুখ কালো করে বললাম,
-ও তাহলে ডিনার পরে কল করছি।রাখি।
-না তুই এখনি বল।ব্যস্ত থাকবো ডিনার পর।
-কিসের ব্যস্ততা?বফ নাই তো তোর!
-তা বলে ব্যস্ত থাকা যাবে না নাকি?তুই বললে বল,নইলে রাখছি।কাল কথা হবে।
-ওই না না,শোন।
-হুম,বল।
-তোকে এতো দৈনিক পৌছে দেওয়ার কি আছে রে?ছোট বাচ্চা নাকি তুই?একাই আসবি কাল থেকে।
-এটা বলতে ফোন করেছিস?
-ন্ না মানে,কথাটা তো ভুল বলিনি।
-ভাইয়া অফিস যাওয়ার সময় ড্রপ করে দেয় আমাকে।জানিস না তুই?
ইশ্!ঠিকই তো।ওকে মানা করলে অফিস যাওয়া তো আটকাতে পারবো না।ইডিয়টটা হাতের ঐ দশা নিয়ে ঠিকই ড্রাইভ করে যাবে।আনমনে বলে উঠলাম,
-ব্যান্ডেজ করেছিস?
-হুম।
-আর মেডিসিন?ওটা দিয়েছিস?
-না।ডিনার পর।
-ও!ঠিকমতো দিয়ে দিস।
-হুম।ওয়েট ওয়েট।কিসের মেডিসিনের কথা বললি তুই?
কেলো করেছে।এবার আর রক্ষে নেই।আওয়াজ পাল্টে বললাম,
-সরি,ইউর নেটওয়ার্ক কভারেজ এরিয়া ডাজ নট অ্যালাও টু মেক আ কল রাইট নাও।প্লিজ রিট্রাই আফটার আ ফিউ মোমেন্টস্ লেটার।থ্যাঙ্কিউ।টুট,টুট,টুট।
উফফফ্!বাচা।আজ আর রিসিভ করছি না তোর ফোন আরু।বললো তো মেডিসিন দিবে।কাল দেখে নেবো কি অবস্থা।একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কিছুক্ষন পড়ে প্রতিদিনের মতো ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
জামান ম্যানশনের ডাইনিং টেবিলে হাসির রোল পরে গেছে।মিসে জামান বললেন,
-এ মেয়েটা পারেও!নেটওয়ার্কের দোহাই দিতে ঠিক ম্যানেজ করে নিলো।
আরু বললো,
-আরে আম্মু!ও মিথি!ইশতিয়াক আরমানের…
আফরোজ জামান বললেন,
-মেয়েটা যে কবে আসবে?কতদিন পর ওর আওয়াজ শুনেই শান্তি লাগছে।
আরমান নিচদিক তাকিয়ে খাচ্ছে আর ঠোট টিপে হাসছে।আরিশা বললো,
-কিরে ভাইয়া?হাসি তো সরছেই না তোর মুখ থেকে।
কিছু না বলে খাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসলো ও।তখন আরুকে কিছু বললে ও আরো কথা তুলতো আর ওর দেরি হতো।রুমে এসে ছবি্গুলোতে চোখ বুলিয়ে বাইকের চাবি নিয়ে ছুটলো সোজা মিথির বাসায়।বুকে জরিয়ে শান্তিতে চোখ বুজলো ও।
•
সকালে উঠে নিজের গায়ে সেই চেনা ঘ্রান অনুভব করলাম।তবে কেনো জানি না ভালোই লাগে।বেডে বসেই টেবিলে একটা চিরকুট দেখতে পেলাম,উপরে চকলেট।এগিয়ে গিয়ে হাতে নিয়ে দেখি ওটাতে লেখা,
“সরি,দেখা দিলাম না তোমাকে।সারপ্রাইজ তো সারপ্রাইজই বলো।এনিওয়ে,কেনো,কিভাবে কখন এসব করলাম আশা করি এ বিষয়ে আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবা না।কষ্ট পাবো আমি।তোমার আইসক্রিম খাওয়াটা কিছুদিন অফ দাও,কন্টিনিউয়াসলি খেলে ঠান্ডা লাগবে,প্রক্সিতে চকলেট নিও কেমন?টেক কেয়ার।”
এই আপিটাও না।সবটা এমনভাবে করে আর বলে যে না আমার কনফিউশন কাটে,না আমার প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে।তবে প্রক্সি আছে ভেবে খুশি হয়ে গেলাম।ব্রেকফাস্ট শেষে রেডি হয়ে গেলাম ভার্সিটিতে।
গাল ফুলিয়ে মাঠের কোনার গাছতলায় বসে আছি আমি।আমার ব্যাগ,বই,ফোন সব হাতিয়ে নিয়ে জুনান্টির চুরেল হাসি ঝুলিয়ে বসে আছে তিন শাকচুন্নি আরু,মালু,উর্বি। আর সাথে আছেন নিজস্ব ডেভিল টাইপ হাসি নিয়ে গরিলা রায়হান।শেষের দু দুটো ক্লাস হবে না আজ।ক্লাস টাইম ওভার হয়নি তাই বাসায় যেতে দিলো না কেউও।আমিও অনেকদিন পর জমিয়ে আড্ডা দেবো বলে ওদের সাথেই বসে যাই।ভাগ্যক্রমে রাতে ফোন দেওয়া নিয়ে আরু কিছু বলে নি আর।
হারামিগুলা গেইটের সেই দোকান থেকে আমাকে দিয়ে চকলেট আনিয়ে খেয়েছে,যদিও এক্সট্রা চারটার টাকা দিতে চেয়েছিলাম আমি,উনি নেন নি।এতেও মন ভরেনি ওদের।তাল তুললো স্পিন দ্যা বোটল।বোটল স্পিনে এবার আমার পালা।টাস্ক হলো গান গাওয়া,মালু রায়হানও গেয়েছে।ছাড় পাওয়ার উপায় নেই ভেবে ব্যাগ নিয়ে চলে আসার সময় কাড়াকাড়ি করে ওগুলো রেখে দেয় ওরা।দাবি-গান গাবি,দেন বাড়ি যাবি।মালু বললো,
-আর কতক্ষন এভাবে থাকবি?
-যতক্ষন না ব্যাগ দিবি।
-দিবো না।
-আব্বু কল করলে?
-রিসিভ করবো না।
-বেশ,আর কিছুক্ষন ওয়েট কর।আমার আব্বু আসতেছেন।
-তবুও গাইবি না তুই?
-না,পচাবি তোরা জানি আমি।
-মেরি মা,পচাবো না।
-বিশ্বাস করি না।
-একটাবার বিশ্বাস করে দেখ।
-পরেরবার যাতে আশ্বাস পাই যে বান্ধবীদের গান শুনিয়ে নিজেকে বেকুব প্রমান করেছিলাম?
-এমন ভাবিস আমাদের?
-এমন নস তোরা?
-এর সাথে কথা বলাই বেকার।
-গান বলানোর আবদারটা ওবায়দুল আঙ্কেল।
সবগুলোর দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনলাম।উর্বি বললো,
-আরমান ভাইয়া!
আমি তো শকে।উনি এসেছেন,অসুস্থ্য শরীর নিয়েও?এখনই আসতে হবে উনাকে?মাথা তুলে দেখলাম অফ হোয়াইট টিশার্ট,জিন্স পরে এসেছেন আজকে।চোখে কালো সানগ্লাস,মুখে সেই অমায়িক হাসি।আজকে একটু বেশিই ফ্রেশ লাগছে উনাকে।হাটার সাথে দুলতে থাকা ডান হাতটায় সাদা ব্যান্ডেজ কিন্তু ঠিকই দেখা যাচ্ছে।ব্যথাটা কমেছে কি না কে জানে!অসুস্থ্য মানুষকে এমনটা দেখায় কিভাবে?যেনো হাত কেটে আরো সুখে আছেন তিনি!এর কোনো লজিক আছে?
-কিরে?রায়হান কোথায় গেলো?
মালুর কথায় ধ্যান ভাঙলো আমার।সত্যিই তো!ছেলেটা কোথায় গেলো?এখানেই তো বসে ছিলো!এভাবে উধাও হয়ে গেলো কিভাবে?আরু বললো,
-ওকে ছাড়।মিথিকে ধর।
-ধরাধরির কি আছে?আমি গান গাচ্ছি না।বাই।
-চলে যাচ্ছো?
আরমান আরুর পাশে একদম আমার সামনে বসতে বসতে বললেন।
-জ্বী।
-কেনো?
-ক্লাস নাই তাই।
মালু বললো,
-ভাইয়া আপনার হাত?
-ও কিছু না।কারো কেয়ারিং দেখছিলাম।
আমি ভ্রুকুচকে তাকালাম উনার দিকে।মৃদ্যু হাসলেন উনি।আরুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
-কিরে আরু?ক্লাস নাই তাহলে এখানে কি?চল বাসায় যাই?
-আড্ডা দিবো।তুই এতো আগে যে?
-কাজ শেষ,চলে এলাম।সত্যি বলতে এসেছি অনেক আগেই।এক ছোটভাইয়ের সাথে দরকার ছিলো।
-ওহ্!
উনি ভ্রুকুচকে বললেন,
-এভাবে বলছিস?এনি প্রবলেম?
উর্বি বললো,
-আরে ভাইয়া,কি যে বলেন!আপনাকে ছাড়াই আরো খালি খালি লাগে।
-রিয়েলি?
মালু বললো,
-তা নয় তো কি?আপনাকে তো…
আমি রাগী গলায় বললাম,
-ব্যাগ দে আমার আরু।
-আমি আসাতে খারাপ লাগছে তোমার?
কি বলবো আমি?খারাপ তো লাগছে মালু উর্বির উদ্ভট কথায়।কিন্তু একে তা বুঝতে দেওয়া যাবে না,একে কেনো?কাউকেই নাহ!উনি বললেন,
-কি হলো?বলো?কোনো সমস্যা?
আমি তৎক্ষনাৎ বললাম,
-ইয়াহ্!আপনার গুনোধর বোন আমার…
আরু বললো,
-মিথি,বলিস না তুইই ফাসবি।
-কিসের ফাসাফাসি?লিসেন,আমি গান গাচ্ছি না।আমার ব্যাগ দে।
-ওওওওও!!এখানে গান গাওয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো নাকি?
মালু বললো,
-জ্বী ভাইয়া।খালি গলার লাইভ রেওয়াজ বাই বাথরুম সিঙিং স্টার মিথি!!!
ওরা সবাই একসাথে হেসে উঠলো।আমি রাগে ফুসছি।আরমান বললেন,
-রিয়েলি?মিথি গানও গায়?এ প্রতিভাও আছে ওর?
-কোনোদিন শুনিনি ভাইয়া।তাইতো আজ ধরেছি।গান না গাইলে বাসায় যেতে দিবো না।
-একেতো অপমান করছিস,আবার গান শুনতেও চাচ্ছিস?বাই দ্যা তোদের মতো আজাইরাদের গলি,আমাকে আটকানোর সাধ্যি আছে তোদের?
-ন্যাহ্!যা তুই,ব্যাগ ছাড়া,রিকশাভাড়া ছাড়া।
আমি কিছুটা অসহায়ভাবে তাকালাম ওদের দিকে।আসলেই তা সম্ভব না,লেইট হবে অনেক।আমার চেহারা দেখে আরু বললো,
-এইরে,মেয়েটা কেদে দিবে।দেখনা কি ইনোসেন্ট ফেইস বানিয়েছে।আহ্রে।
-হুম,ওর ব্যাগটা পাস কর।
আরু ব্যাগটা ছুড়ে দিলো।তবে মালুর দিকে।আমি নিতে গেলেই ও তা উর্বি দেন আবার আরু।এভাবেই ব্যাগটা আমার সামনে দিয়ে রিঙ্গা রিঙ্গা রোজেজ খেলছে আর আমি ধরতেও পারছি না।
-আহ্!
হাত ধরে আওয়াজ করে উঠলেন আরমান।তার ব্যথায় কুকড়ে ওঠা আওয়াজ কোথাও লাগলো আমার!ধরফরিয়ে উঠে বললাম,
-কি হলো আপনার?হাতে লেগেছে?
-হুম কিছুটা।
-কই দেখি?
-ইটস্ ওকে।
-কিসের ওকে,লেগেছে বললেন তো!
উর্বি বললো,
-হাইপার হচ্ছিস কেনো?ভাইয়া বললেন তো ঠিক আছে।
-তুই দেখেছিস ঠিক আছে?ওহ্!জনাবা দেখলে তো আর ব্যাগটা হাতের উপর ফেলতেন না।
-লেগেছে উনার,তুই এমন করছিস কেনো?
থেমে গেলাম,মাথা নিচু করে ফেললাম আমি।আসলেই তো,এমন করছিলাম কেনো আমি?পাগল হয়ে গেছি কি আমি?কালকে তার কাটা হাত দেখে কেদেছি,কল করে খোজ নিয়েছি,আজ একটু ব্যথা পেয়েছেন জন্য উর্বির সাথে এভাবে বিহেভ করছি।এসব কি হচ্ছে টা কি?কেউ হয় না তো উনি আমার!
-একটা গান গাও না!
আমি চোখ তুলে তাকালাম।আরমান প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন।এভাবে অনুরোধ?কি করে ফেলবো আমি তার এমন স্বরের চাওয়া?উনি আবারো বললেন,
-কি হলো?গাইবে না?দেখো,আ’ম ইল।আর অসুস্থ্য মানুষের আবদার ফেলতে নেই।যদি মরে…
-গাইবো।
শেষ করতে না দিয়েই বললাম।তার ওমন কথা সহ্য হবে না আমার।মালু,উর্বি,আরু একসাথে চেচিয়ে বলে উঠলো,
-ইয়েএএএএ!!!!
আমি নিচদিক তাকিয়ে গাইতে শুরু করলাম,
প্রান দিতে চাই,মন দিতে চাই
সবটুকো ধ্যান সারক্ষন দিতে চাই
তোমাকে….
ওওও তোমাকে
স্বপ্ন সাজাই,নিজেকে হারাই
দুটি নিয়নে রোজ নিশুতে যাই
তোমাকে….
ওওও তোমাকে
জেনেও তোমার আখি চুপ করে থাকে
রোজ দুইফোটা যেনো আরো ভালোলাগে
গানে,অভিসারে,চাইশুধু বারেবারে
তোমাকে…
ওওও তোমাকে
যেদিন কানে কানে সবি বলবো তোমাকে
বুকের মাঝে জাপ্টে জরিয়ে ধরবো তোমাকে
পথ চেয়ে রই,দেরী করো না যতই
আর ভোলা যাবে না জীবনে কখনোই
তোমাকে…
ওওও তোমাকে
তুমি হাসলে আমার ঠোটে হাসি
তুমি কাদলে জোনাকি রাশি রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি
সব চিঠি সব,কল্পনা জুড়ে
রং মিশে যায়,রুক্ষ দুপুরে
সেই রং দিয়ে তোমাকে আকি
আর কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি?
হ্যাঁ,প্রান দিতে চাই…সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে…ওওও..তোমাকে
#চলবে…
®