#তোকে চাই❤part: 35
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#
।
।
আর তোমার কিউট ফেসটা দেখলেই গাল দুটো টেনে লাল করে দিতে ইচ্ছে করে।(গাল টেনে)
।
কথাটা বলেই আমার হাত থেকে ছবিটা নিয়ে বেডের উপর দেয়ালে ঝুলিয়ে দিলেন,,,”নাও,,পার্ফেক্ট।”
।
আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি??
।
হুম বলো,,(বিছানা থেকে নামতে নামতে)
।
সাহেল ভাইয়া যে আমার জন্য বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছিলো,,আপনার রাগ লাগে নি??এতো কুল ছিলেন যে??
।
আমার কথা শুনে উনি মুচকি হেসে একদম আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন,,,আলতো হাতে নাক টেনে দিয়ে বলে উঠলেন,,
।
কি করবো বলো?সুন্দরী বউ থাকলে এসব প্যারা তো সামলাতেই হবে,,,কিন্তু আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না,,,
।
কি?(ভ্রু কুঁচকে)
।
সাহেল তোমার প্রেমে কিভাবে পড়লো??তোমার মধ্যে তো প্রেমে পড়ার মতো কিছু নেই,,
।
হোয়াট,,,আপনি আমাকে আন্ডারেস্টিমেট করছেন??কি মনে করেন আপনি নিজেকে হুম হুম??(রাগী গলায়)
।
আরে আন্ডারেস্টিমেট কেন করবো??যা সত্যি তাই,,সব মেয়েকে দেখে তো আর প্রেমে পড়া যায় না,,,কিছু স্পেসিফিক মেয়ের উপর ছেলেরা প্রেমে পড়ে,,,লাইক,,যে মেয়েদের দেখলে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,,,উফফ সো হট,,,সেক্সি,,,ওসব মেয়েদের উপর প্রেম প্রেম ভাবটা ঝাঁকিয়ে বসে,,,বাট তুমি তো ওমন না,,,
।
ছিহ,,,কথার কি ছিড়ি,,,তো আমি কেমন শুনি??(রাগী গলায়)
।
তুমি টোটালি রসগোল্লা টাইপ,,,এই টাইপের মেয়েদের দেখলে প্রেম না,, আদর আদর ভাব আসে।।কিছু বাচ্চা আছে না?যাদের দেখলেই গাল টেনে বলতে ইচ্ছে করে,,বাবু আইসক্রিম খাবে??তুমি ঠিক ওই টাইপ,,,(দাঁত কেলিয়ে)
।
আপনি আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি অপমান করছেন?(ভ্রু কুঁচকে)
।
এই যে,, এই লুকটা,,এই যে এখন তুমি ভ্রু কুঁচকে,, ঠোঁট উল্টে,,মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছো।।আর তোমার এই গুলুমুলু গালের পাশ দিয়ে কিছু চুল এসে পড়েছে,,,কতোটা কিউট লাগছে জানো??দেখলেই ইচ্ছে করে,,গাল দুটো টেনে দিয়ে,,একদম কামড়ে খেয়ে ফেলি,,,,
।
কিহ??কি বললেন??(অবাক হয়ে)
।
আব,,আব,,,ওয়াশ,,ওয়াশরুম,,ফ্রেশ হয়ে আসি,,বাইরে থেকে আসছি তো শরীর কামড়াচ্ছে,,
।
কথাটা বলেই উনি ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন,,,আমার তো হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাওয়ার অবস্থা,,বেচারা নিজে বলে নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছেন,,হিহিহিহি।।। উনি ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই আমি মুখ চেপে হাসতে লাগলাম,,,আমার এক সমস্যা একবার হাসি শুরু হলে কিছুতেই থামতে চায় না।।।উনি ভ্রু কুঁচকে রাগী গলায় বলে উঠলেন,,
।
কি সমস্যা??হাসছো কেন??
।
নাহ এমনি,,,,আমিও তো বাইরে থেকে আসলাম,,,আপনার শরীর কামড়াচ্ছে আর আমার কাতুকুতু লাগছে।।।
।
বলেই একপত্তন হেসে নিলাম আর উনি অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।।
।
দুপুর ২ টা,,, মামানি আর আপু খাবার টেবিল সাজাচ্ছে,,,আমি দিদার সাথে বসে দুষ্টামো করছি,,,দাদুভাই নাকি হেব্বি রোমান্টিক ছিলো,,,দিদা এখনো দাদুভাইকে আগের মতোই ফিল করে,,,মামানির জন্মের কিছুদিন পরই দাদু মারা গেছে তবু দিদার ভালোবাসা এক বিন্দু কমে নি।।একেই হয়তো বলে ভালোবাসা।।একটু পরেই গজগজ করে হাজির হলেন ঘষেটি বেগম,,,আই মিন আমাদের খালামনি।।আমাকে বসে থাকতে দেখেই যেনো তার পিত্তি জ্বলে গেলো,,,কিছু বলতে গিয়েও শুভ্রকে নামতে দেখে থেমে গেলেন,,মহিলার পেটের আজ ভাত হজম হবে কি না কে জানে??খাওয়া-দাওয়া শেষ করে শুভ্রর পেছনে লাগলাম,,,আমার এক কথা আমাকে আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে যেতে হবে নয়তো আমি একাই চলে যাবো,,,ব্যস।।।শেষমেষ বাধ্য হয়ে উনি রাজিও হয়ে গেলেন,,,পার্কের পাকা রাস্তা ধরে দুজন পাশাপাশি হাঁটছি।।।আমার মেজাজ ফুরফুরে থাকার কথা বাট আমি চরম বিরক্ত।।বেশকিছু মেয়ে বার বার ঘুরে ঘুরে উনার দিকে তাকাচ্ছে আর ফিসফাস করছে।।।উনার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই,,,তিনি তো আছেন আমার পায়ের নিচে কোন ইট পড়ছে কিনা,,কোন কাঁটা পড়ছে কিনা সেটা নিয়ে।।বিরক্তিকর।। কি দরকার ছিলো এতো ড্যাশিং সেজে আসার??আবার নেকামো হচ্ছে,,,ইচ্ছে করছে,,,এই সিল্কি গোছালো চুলগুলো এলোমেলো করে দিই,,,হুহ।।আর মেয়েগুলোও কি বেহায়া রে বাবা,,,অন্যের জামাইয়ের দিকে নজর দিস,,চোখ ফুটো হয়ে যাবে।।।এজন্যই বাবাকে বলেছিলাম,,,সুন্দর ছেলে বিয়ে করবো না,,,বাট আব্বু সেই সাদা বিলাই দেখেই বিয়েটা দিয়ে দিলেন।।।উনি আইসক্রিম আনতে গেলেন আর আমি চুপচাপ পার্কের এক বেঞ্চে বসে আছি,,শুভ্র আমাকে সাথে নিতে চেয়েছিলো,, আমিই মানা করে দিয়েছি,,সেখানেও নিশ্চয় মেয়েরা “হা ” করে উনার দিকে তাকিয়ে থাকবে তা আমার সহ্য হবে না।।তারচেয়ে আমি এখানেই ঠিক আছি।।প্রায় বিশ মিনিট হয়ে গেলো উনার খবর নেই,,এতোক্ষণ লাগে নাকি??আবার কোনো মেয়ে আমার বরকে নিয়ে পালালো না তো??খুবই চিন্তার বিষয়,,,তাই আমিও হাঁটা দিলাম,, দেখি আমার লাল টুকটুকে বর কার প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে আছেন।।কিছুদূর গিয়েই উনাকে দেখতে পেলাম,,,কারো সাথে কথা বলছেন।। আরেকটু কাছাকাছি যেতেই বুঝলাম লোকটা আর কেউ না সাহেল ভাইয়া,,,আমি আর এগুলাম না,,,একটু সরে এসে দাঁড়ালাম যেনো আমাকে দেখতে না পান।।উনার সামনে যাওয়াটা এখন আমার জন্য বেশ লজ্জার।।উনাদের কথাগুলো বেশ সহজেই আমার কানে আসছে,,,
।
শেষ বাজিটায় তুইই জিতে গেলি শুভ্র,,,মনে আছে?ছোটোবেলা আমাদের দুজনের একটা খেলনায় পছন্দ হতো অলওয়েজ,,,সবাই বলতো আমরা বউও সেই একই পছন্দ করবো নির্ঘাত,,দেখ তাই হলো।।
।
এটা কোনো বাজি না সাহেল,,আর না রোদ কোনো খেলনা।।।ও আমার স্ত্রী,, সেটা তোর উপস্থিতির আগেও ছিলো,,এখনো আছে,, আর ভবিষ্যতেও থাকবে।।তুই ভুল মেয়েকে চুজ করেছিস।।
।
হুমমম,,,সেই,,জীবনে আমরা যা চুজ করি,,সবই হয়তো দামী নয়তো অন্যকারো।।রোদ তো দুটোই দামিও আবার অন্যকারোও।।কিন্তু কি জানিস??মনকে বোঝানো শক্ত,,,শী ইজ মাই ফার্স্ট লাভ।।প্রথম দেখাই ভালোবেসে ফেলেছিলাম,,,উইথআউট নোয়িং হার আইডেন্টি।। একটা মেয়ে রাস্তায় গাল ফুলিয়ে বসে আছে,,সোডিয়ামের আলোয় বাচ্চা বাচ্চা চেহারাটা কি মায়াবীই না লাগছিলো।।ইসসস আই ওয়াজ স্টাক।।বাট ওইযে নিয়তি।।
।
আমার সামনে আমার বউয়ের এমন মধু মাখানো বনর্না দিস না দোস্ত রাগ লাগে।।।
।
হাহাহাহা,,,তাও তো ও তোর রে,,,ইসস আজ বড্ড আফসোস হচ্ছে,, নীলিমা বেঁচে থাকলে ভালো হতো এট লিস্ট আমি রোদকে তো পেতাম,,,আই মেডলি লাভ উইথ হার।।
।
সাহেল ওকে ভুলে যা,,,সেটাই তোর জন্য ভালো হবে,,,,
।
আমি বাধ্য,,জানিস,,আমি রোদকে তোর থেকে কেড়ে হলেও নিজের করে নিতাম যদি রোদ তোকে ভালো না বাসতো।।ও তোকে ভালোবাসে,,এটা আমার জন্য বড় বাঁধা,,আর যায় হোক ভালোবাসা জোড় করে হয় না।।।আর ভালোবাসার মানুষটিকে কাঁদতে দেখতে পারার এভিলিটি রাখতেও বুকের পাটা লাগে,,আমার তা নেই।।নেভার মাইন্ড হ্যাপি থাক,,,আমার জন্যও হয়তো কেউ আছে,, রোদকে ভুলিয়ে দিতে ঠিক চলে আসবে,,,(মুচকি হেসে)
।
আই অলসো থিংক সো,,,আচ্ছা বাই রে,,রোদ একা আছে।।
।
ওহ ওকে,,যা বাই,,আমি কিন্তু রিভেন্জ নিবো,, দেখিস তোর ছেলে নির্ঘাত আমার মেয়ের প্রেমে পড়বে,,তখন আমি ভিলেন হবো,,,হাহাহাহা এতো সহজে ছাড়ছি না।।।
।
সাহেল ভাইয়ার কথায় উনাদের সাথে আমারও হাসি পেয়ে গেলো,,,আমিও দোয়া করি,,কেউ একজন আসুক উনার জীবনে,,,তারপর না হয় আমার ছেলের কথা চিন্তা করে দেখা যাবে।।।
।
।
রাত প্রায় ১১ টা বাজে,,আমার প্রবল ইচ্ছে হচ্ছে আপুর কাছে যেতে,,কতোদিন রাত জেগে গল্প করা হয় না।।মাঝরাতে উঠে বসে আপুকে ডেকে তুলে বলা হয় না,,,”এই আপু,, ঘুমাইছো??চলো গল্প করি।।”আপুও সদ্য ঘুম ভাঙা গলায় বিরক্তি দমন করে বলতো,,,”রোদ প্লিজ ঘুমাতে দে”।।আমি আবারো বলে উঠতাম,,,”আমার পেটে গল্প কিলবিল করছে,,তুমি কতোদিন পর আসো চলো গল্প করি।”ছোট বোনের মন ভাঙার মতো মন আপুর না থাকায় ঘুম ঘুম চোখে বলতো,,”আচ্ছা বলে যা,,আমি শুনছি।” আজও আপুকে বেশ বিরক্ত করতে ইচ্ছে করছে।।ইচ্ছে যখন করছে তো বসে থেকে লাভ কি??পা টিপে টিপে চলে গেলাম আপুর রুমে,,,ঢুকেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম,,,ভাইয়া আর আপুর রোমান্স টাইম চলছিলো,,এতো রাতে রোমান্স চলাটায় স্বাভাবিক,,,বরং আমার এখানে আসাটা অস্বাভাবিক,,,, সবাই তো আর শুভ্র না যে রাত দুপুরে বই আর খাবার নিয়ে টর্চার করতে চলে আসবে,,অবশ্যই রোমান্স করবে।।।
।
উহুম উহুম,,,কি গো ভাইয়া রোমান্স চলে??
।
আমার কন্ঠ শোনে বিদ্যুৎ বেগে ভাইয়া আপুর কোল থেকে উঠে গেলে,,,বেচারা একদম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে বাট আমার ব্যাপক হাসি পাচ্ছে।।কোনো রকম মাথা চুলকে বলে উঠলেন,,,”আরে রোদ??আসো আসো।”
।
আপনি না বললেও আসতাম,,,(দাঁত কেলিয়ে)
।
ভাইয়াও মুচকি হেসে বিছানায় বসে পড়লেন,,,আপুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,”জানিস তোকে খুব মিস করছিলাম,,কতোদিন একসাথে থাকি না।।”
।
আমিও,,তোর এতো গল্পগুলো পেটে কিভাবে রেখেছিস??ফেটে যায় না পেট??(পেটে গুঁতো দিয়ে)চল,,আজ তোর সব গল্প শুনবো,,,
।
সত্যি??(খুশি হয়ে)
।
হুমম,,,
।
তাহলে ভাইয়া??আপনি আপনার ভাইয়ের কাছে চলে যান,,আমি আমার বোনের কাছে ঘুমাবো,,,(দাঁত কেলিয়ে)
।
মানে কি??(করুন গলায়)
।
ভাইয়া,,,দেখুন আমি কিন্তু আপনার একমাত্র ফুপাতো বোন,,আরেকজন তো বউ হয়ে গেছে,,,আবার একমাত্র শালী,,,একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র বউ,,আপনার হবু বাচ্চার একমাত্র খালামনি এবং একমাত্র কাকিমনি,,,,আমি এত্তো স্পেশাল একটা মানুষ আর আপনি আমার জন্য এটুকু করতে পারবেন না???(মুখ গোমড়া করে)
।
ভাইয়া পড়েছেন ফেসাদে,,হ্যা আমার কথা ১০০%ঠিক,,কিন্তু বউ ছাড়া যে উনার ঘুম হবে না এটাই ঠিক।।কি বলবেন কিছু ভেবে পাচ্ছেন না,,ঠিক তখনই দরজা থেকে আমার গুণোধর স্বামী বলে উঠলেন,,,
।
সেটাই তো,,,বউ মনি?? আমি তোমার একমাত্র মামাতো ভাই,,,অন্যজন তো তোমার বর হয়ে গেছে,,আবার একমাত্র দেবর,,একমাত্র ছোট বোনের একমাত্র জামাই,,,তোমার হবু বাবুর একমাত্র খালুমশাই এমনকি একনাত্র চাচ্চু,,,,সো আমার ব্যাপারটাও দেখো,,আমিও কম স্পেশাল না,,,,(বিছানায় বসতে বসতে)
।
আপনার কি চায়??(ভ্রু কুঁচকে)
।
কি আর চাই??বউ চাই,,,বউমনি আমার বউটাকে দিয়ে দেও,, নিয়ে চলে যাই,,,আমার জন্য এটুকু তো করতেই পারো,,,
।
হ্যা সেই ভালো,,,তুই তোর বউ নিয়ে যা,,আমি বরং আমার বউ,,,
।
আপনি চুপ করেন দুলাভাই,,,আমি কোথাও যাচ্ছি না,,,আমি আপুর সাথেই ঘুমাবো ব্যস(সোজা হয়ে বসে)
।
ওকে তাহলে আমিও এখানেই ঘুমাবো,,,,
।
হোয়াট???পাগল হয়ছেন আপনি??(অবাক হয়ে)
।
কেন??এখানে আমার বউ,, ভাবি,,বোন সবই আছে,, সো এখানে থাকার পুরো অধিকার আমার আছে,,,,(আমার গাঁ ঘেষে বসে)
।
তাহলে আমিও এখানে থাকবো,,,এখানে আমার বউ,,বোন,,শালী,,ভাইয়ের বউ,,ভাই সবই আছে,,সো আমার তো থাকার অধিকার বেশি বেশি আছে,,,(আপুর গা ঘেঁসে বসে)
।
অল দ্যা বেস্ট ভাইয়া,,,(দাঁত কেলিয়ে)
।
থেংকিউ,,
।
এদের পাগলামোতে হাসবো না কাঁদবো উফফপ,,আপুও দেখি মুখ টিপে হাসছে,,হোয়াট দ্যা হেল,,,
।
আপনি যাবেন এখান থেকে??(রাগী গলায়)
।
হুম যাবো তো,,,
।
তো যান না,,,বসে আছেন কেন???(চিৎকার করে)
।
ওকে,,,
।
বলেই উনি উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা দিলেন,,,”আরে আরে,,,আমি কেনো??”।।”তুমি কারন আমি গেলে তোমাকেও যেতে হবে,,,বিয়ে কি তোমার বোনের সাথে ঘুমানোর জন্য করেছি নাকি??”
।
দেখুন এটা একদম ঠিক না,,নামান বলছি,,,
।
নামাবো,,একদম বিছানায়,,,
।
আপনি আসলেই খারাপ,,,থাকবো না,,,কালই আব্বুর কাছে চলে যাবো,,(মুখ ফুলিয়ে)
।
বলেছি না,,,একবছর বাপের বাড়ির নাম মুখে নিবা না,,,
।
শুধু মুখে না,,,সশরীরে সেখানে চলে যাবো,,,মামুকে বলে চলে যাবো,,,দেখি আপনি কিভাবে আটকান,,,
।
কথাটা বলা শেষ করার সাথে সাথে উনি আমাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে গলায় কামড় দিয়ে দিলেন,,,তাও একটা না তিন তিনটি,,,
।
আউচ,,,আআআআআআআআহহহ,,,, আপনি রাক্ষস নাকি??কামড়াচ্ছেন কেন???(রাগী গলায়)
।
এবার যাও বাপের বাড়ি,,,ঘর থেকেই বের হতে পারবে না,,পুরো গলায় কামরের দাগ,,,,(বাঁকা হাসি দিয়ে)
।
আমি মামুকে বলে দিবো,,,(মুখ ফুলিয়ে)
।
কি বলবা??যে তোমার ছেলে রাতে আমায় কামড় দিয়েছে,,,হা হা হা,,,বাবাকে বলতে পারবে সিউর??(চোখ টিপে)
।
আপনি আসলেই অসভ্য,,,জানেন কতোটা পুরাচ্ছে???(কান্না করে দিয়ে)
।
আরে,,,এটুকুর জন্য কান্না করা লাগে??ছিচঁকাদুনে,,,
।
আমি ছিঁচকাঁদুনে?? বেশ তো,,দেখাচ্ছি মজা,,আপনার কি মনে হয়,,,আমি ঘরে বসে থাকবো আর আপনি দাঁত কেলিয়ে ঘুরে বেড়াবেন তা আমি হতে দিবো???নো নেভার,,,
।
কথাটা বলেই উনার কলার টেনে,,,একটা কামড় বসিয়ে দিলাম উনার ঠোঁটে,,,এখন বুঝো,,?
।
#চলবে
#তোকে চাই❤
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:36
।
।
তুই কি জানিস তোর একটি কথা শোনার জন্য এখন আমি সারাটাদিন ছটফট করি,,,,তোর মুখে হাসি ফোটানোর লোভে আজ আমি কতোটা লোভী।মাঝরাতের অবাধ্য অশ্রুটার সাথে তুই মিশে আছিস কতো নীরবে।বুকের চিন চিনে ব্যাথাটাও কতো নির্মমভাবে মনে করিয়ে দেয় তোর কথা।।কিন্তু,,,, তুই??কখনো অবসরেও কি ভাবিস আমার কথা?তোর জন্য স্বার্থপর এই আমার ঠোঁটের ব্যালকনির হাসিটা কি তোকে ভাবায়?উত্তরটা আমি জানি।।পরিচিত উত্তরের হাতছানি যে কতো নির্মম,,, কতো নিষ্ঠুর!! ঘুম ভাঙা চোখে সোনালি আলোয় তোকে নিয়ে দেখা স্বপ্নগুলো বড্ড অসহায়,,,,
।
মন খারাপ??
।
ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলাম,,,পেছন থেকে উনার কন্ঠ কানে আসায় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়েই বলে উঠলাম,,,,,,,
।
নাহ তো,,মন খারাপ না,,,কিন্তু মনের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে দিন দিন।।।(মুচকি হেসে)
।
মানে???(ভ্রু কুঁচকে)
।
নাথিং,,,
।
এতো রাতে একা দাঁড়িয়ে আছো যে??
।
রাতের আকাশ দেখছিলাম,,একটা আকাশের কতো রূপ,,কতো রং।।আমাদের জীবনটাও আকাশের মতো কখনো সাদা,,কখনো নীল আবার কখনো ঘন কালো,,,
।
হুমম,,,তো আজ হঠাৎ এতো কাব্যিক কথাবার্তা??দাঁড়িয়ে শুনছিলাম,,,তোমার বলা প্রথম কথাগুলো,,,
।
বিনা অনুমতিতে শুনছিলেন??এবার পানিশমেন্ট দেওয়া উচিত আপনাকে,,,(মুচকি হেসে)
।
তাই??দোষ যখন করেছি,, পানিশমেন্ট তো পেতেই হবে,,,তো বলুন ম্যাডাম,,কি পানিশমেন্ট দিতে চান,,,?
।
শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর,,(আকাশের দিকে তাকিয়ে)
।
কি প্রশ্ন??
।
জাস্ট ইমাজিন যদি নীলিমা আপু কোনো ভাবে আবার আপনার লাইফে বেক করেন তো কি করবেন??(ঘাড় ঘুরিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে)
।
উনি শূন্য দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন,,উনাকে চুপ থাকতে দেখে মুচকি হেসে বলে উঠলাম,,,,”নিশ্চয় আমায় ছুঁড়ে ফেলে দিবেন??দেওয়ারই কথা প্রয়োজন যে ফুরিয়ে যাবে।”
।
উনি আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন,,,সে দৃষ্টি কি বলতে চাইছে আমি জানি না,,,,আজ আমি নিজের উপর বড্ড বিরক্ত,,উনার চোখের ভাষা বোঝার সদিচ্ছা তিল পরিমান নেই আজ,,,আমার চোখ দুটো রাতের আকাশ দেখতে ব্যস্ত,,,,”যদি কখনো প্রয়োজনটা ফুরিয়ে যায়,,, বলবেন আমায়।।ভয় নেই,,পরগাছার মতো লেপ্টে থাকবো না,,,পা বাড়াবো অজানার পথে”…
।
তুমি আমায় এতোটা,স্বার্থপর ভাবো রোদ??
।
নাহ,,আমি নিজেকে প্রয়োজনহীন ভাবি ব্যস,,
।
রোদ?নীলির যদি ফিরে আসার ১% চান্সও থাকতো তবু আমি তোমায় বিয়ে করতাম না,,,তখন আমার কাছে বাহানা থাকতো,,হয়তো সে ফিরে আসবে।।।কিন্তু নীলি আসবে না।।আর যদি তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করো আমি কি চাই??তাহলে বলবো,,আমি এখন আর চাই না ও ফিরে আসুক।।।না,,এর মানে এই নয় যে ভালোবাসা কমে গেছে,,তা নয়।।কিন্তু বাস্তবতা আবেগের কাছে হেরে যায় বারবার,,,নীলি ফিরে এলে না তুমি সুখী হতে পারবে না আমি,,,না নীলি।।।তিনটি বিক্ষিপ্ত জীবন নিয়ে আমাদের মরে মরে বাঁচতে হবে,,,,ভালোবাসার মানুষকে কষ্টে দেখতে পারার জন্যও অসীম সাহস আর ধৈর্য লাগে,,যা এখন আর অবশিষ্ট নেই,,,,তাই আমি তোমাদের দুজনের কারো চোখেই জল দেখতে পারবো না।।।তোমরা দুজনই আমার জীবনের অংশ,,,অস্তিত্বে মিশে আছো।।নীলি আমার প্রতিটি অনুভূতিতে মিশে আছে আর তুমি আমার প্রতিটি নিশ্বাসে।।। নীলিকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গেছি আমি,,,কিন্তু তোমাকে ছাড়া নতুন করে বাঁচতে শিখা আমার পক্ষে সম্ভব না,,,সেটা নীলি আমার পাশে থাকলেও না।।।তোমাকে আমার চাই রোদ,,,প্রতিটি মুহূর্তে চাই,,,কোনো কারণ ছাড়াই চাই।।।
।
আমি উনার কথা শুনছি,,মন দিয়েই শুনছি।।আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আমার খুশি হওয়া উচিত নাকি কষ্ট পাওয়া উচিত।।চিন্তাশক্তিটা কাজে লাগছে না,,,সবকিছু কেমন ঘোলাটে হয়ে আসছে,,,,হঠাৎই একটা ঠান্ডা হাতের পরশ পেলাম যে হাতটা আমাকে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে,,,কপালে এঁকে দিলো ভালোবাসার পরশ,,,,আমি শুধু নির্বাক দ্রষ্টার মতো দাঁড়িয়ে আছি,,,
।
দুদিন যাবৎ গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘুরছি,,,,জুলাই মাসের চরম গরমে ব্যাপারটা খুবই বিরক্তকর।।প্রথম প্রথম সবার হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলেও এখন সব স্বাভাবিক।।।সবার কাছে এক উত্তর” ঠান্ডা লাগছে তাই ওড়না পেঁচিয়েছি।।”যদিও আমার ধারনা তারা আমার কথাটি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করে নি,,,,তবু প্রশ্নের কবল থেকে বেঁচেছি সেটাই অনেক।।।শুভ্র প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বেরুয়নি,,, যা একটু বেরিয়েছে তা মামানি ঠিক সামলে নিয়েছে,,,সবার মধ্যে শুধুমাত্র মামানিই পুরো ব্যাপারটা জানে,,,সেদিন সকালে হঠাৎই মামানি রুমে ঢুকে যায়,,,আর আমাদের এই অবস্থা দেখে চরম অবাক হয়ে প্রথম যে কথাটি বলে তা হলো,,,”তোরা কি বেবি প্ল্যান করছিস?” উনার কথায় যে আমরা অস্বস্তির কোন পর্যায় পৌঁছে গিয়েছিলাম শুধু আমরা জানি।।শাশুড়ীর মুখে কি এসব মানায় বলুন??কিন্তু আমার শাশুড়ী মা সেসবের ধারে কাছে নেই,,,তার কথা সোজাসাপ্টা,,,, “আরে,,লজ্জার কি আছে??মা কে বলবি না তে কাকে বলবি??” মামানির এই কথায় শুভ্র কতটুকু লজ্জা পেয়েছিলেন জানি না,,তবে কাশতে কাশতে যে যক্ষা রোগীর পদবীটা ছিনিয়ে নিতে চাইছিলেন,, সে বেশ বুঝতে পেরেছিলাম,,
।
#চলবে,,,,
।
(আজ লেখিকার মন ভীষন রকম খারাপ,,তাই গল্পটাও বিশ্রী টাইপ হয়েছে,,কিছু করার নেই।।।মাঝে মাঝে বিশ্রী জিনিসের সাথে মানিয়ে নিতে ক্ষতি কি?
#তোকে চাই❤
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:37
।
।
মামানির এই কথায় শুভ্র কতটুকু লজ্জা পেয়েছিলেন জানি না,,তবে কাশতে কাশতে যে যক্ষা রোগীর পদবীটা ছিনিয়ে নিতে চাইছিলেন,, সে বেশ বুঝতে পেরেছিলাম,,,,কিন্তু ছেলের এই করুন অবস্থায় মামানির বিন্দুমাত্র দয়া হলো বলে মনে হলো না,,,উনি দুর্দান্ত গতিতে তার প্রশ্ন ছুঁড়ে চলেছেন,,,
।
শুভ্র??এটা ফ্যামিলি প্ল্যানিং করার টাইম নাকি??রোদ কতো বাচ্চা একটা মেয়ে,,,ওকেই আমায় সামলাতে হয়,,,ওর বাচ্চাকে কে সামলাবে???রোদের এডমিশনের আরো দুইমাস আছে,,সেপ্টেম্বরে এক্সাম আর তুই এই সময় এইসব প্ল্যানিং করছিস??এসব নাই বাদই দিলাম,,আমি যে বাচ্চাদের এক সিট করে ড্রেস কিনে ফেলেছি,,,এবার তো নতুন করে শপিং করতে হবে,,সবাইকে বলতে হবে,,কতো কাজ।।।
।
মামানির কথাগুলো শুনে আমি রীতিমতো “হা”।।উনি কই থেকে কই চলে গেছেন???হায় আল্লাহ দরি ফালাও,,,শুভ্রর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম সেও হাবলার মতো তাকিয়ে আছে,,,মামানি এক নিশ্বাসে কথা বলেই চলেছেন,,,যাকে বলে ননস্টপ টকিং ।।।
।
তুই যে মার সেইদিনের বাচ্চা বিষয়ক কথা এতো সিরিয়াসলি নিয়ে নিবি আমি ভাবতেই পারি নি,,,,আর রোদ??তুই কিভাবে,,,
।
মা?(চাপা গলায়)
।
রোদ তুই কিভাবে প্রশ্রয় দিলি??কই এডমিশনের পর হানিমুন টানিমুনে যাবি তা না,,,এখনি,,,
।
মা প্লিজজজজ
।
কি হয়ছে??চেঁচাচ্ছিস কেন??
।
মা তুমি একটা কামড় থেকে বাচ্চার জন্য শপিং পর্যন্ত চলে গেছো,,,তাহলে সত্যি সত্যি বাচ্চা পেটে আসলে তো দেখি ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলবে,,,,
।
কি বলতে চাচ্ছিস তুই??(ভ্রু কুচঁকে)
।
মা??এতো ফাস্ট না দৌড়াই একটু স্লো হও,,, তুমি যে আকাশ-পাতাল ভাবছো,,,তা কিছুই নয়।।রোদ আর আমি ঝগড়া করছিলাম,,,,তাই এই কামড়াকামড়ি,,,
।
হোয়াটটট???তোরা কি বাচ্চা যে কামড়া কামড়ি করিস??(অবাক হয়ে)
।
তোমার বউমা তো বাচ্চাই,,(নিরীহ ভঙ্গিতে)
।
বউমা বাচ্চা হলেও তুইতো ধামড়া ছেলে,,,ছি ছি,,এসব কি??বউয়ের সাথে ঝগড়া করে কামড়া কামড়ি,,মানসম্মান সব ধুলোই মিশিয়ে দিবি দেখছি,,,ওসব নয় বাদই দিলাম আমি যে কতো কিছু ভাবলাম,,,শপিং করবো,,দুই বাচ্চাকে একসাথে কোলে নিয়ে পার্কে ঘুরবো,,,সারাবাড়ি ঘুরে ঘুরে দুই নাতনীকে খাওয়াবো,,,,আর তুই সব ভাবনায় পানি ঢেলে দিলি হতচ্ছাড়া,,,,
।
আমি অবাক হয়ে মামানির কথা শুনছি,,,এর মধ্যে উনি এতো কিছু ভেবে ফেলেছেন???এখন আমারও মনে হচ্ছে উনি সত্যিই বেবি আসার আগেই বেবির বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলবেন।।তবে আমাদের কামড়া-কামড়ির ব্যাপারটি মামানির জানা থাকায় একদিকে ভালোই হয়েছে,,উনিই সবার প্রশ্নের হাত থেকে কয়েক দফা বাঁচিয়ে দিয়েছেন।।।
।
।
দুদিন যাবৎ কোচিং এ ও যায় না,,,সারাদিন ঘর বন্ধি হয়ে থাকতে কার ভালো লাগে???ভালোবাসা যেমন ভালো,,অতি ভালোবাসা তেমনি খারাপ।।যা এখন আমি প্রকটভাবে বুঝতে পারছি।।। বিছানায় পা উঠিয়ে,,গাল ফুলিয়ে বসে আছি,,,,সব কিছুই বিরক্তিকর লাগছে,,,আর এই বিরক্তি চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে,,,ইচ্ছে করছে কাউকে ইচ্ছেমতো চড়াই,,এটা মন ভালো করার ভালো ট্রিক,,,বাবা মার সাথে কথা বলতে পারলেও হতো,,,ভাইয়া নামক ডাফারটার সাথে কিছুক্ষন বকবক করলেও মন ভালো হয়ে যাওয়ার চান্স ছিলো কিন্তু আমার কাছে ফোন থাকলে তো,,,,হঠাৎই উনি রুমে ঢুকলেন,,আমি এমন একটা ভাব করলাম যেনো উনাকে দেখিই নি,,,,উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন,,তার মূল কারন তিনি কয়েকবার আমাকে ডেকেছেন কিন্তু কাঙ্ক্ষিত উত্তর তার মেলে নি।।
।
কি সমস্যা??কথা বলছো না কেন??(একদম সামনে এসে দাঁড়িয়ে)
।
ইচ্ছে করছে না তাই,,,
।
ইচ্ছে কেনো করছে না??(ভ্রু কুচঁকে)
।
মুড সুয়িং করছে,,ব্যাপক বিরক্ত লাগছে,,,(ঠোঁট উল্টিয়ে)
।
তাই??
।
উনার তাই কথাটা শুনে উনার দিকে আড়চোখে তাকালাম,,,উনাকে দেখে মনে হচ্ছে,,আমার মুড সুয়িং এর ব্যাপারটাই উনি চরম খুশি।।।উনার এমন অবাঞ্ছিত খুশি খুশি ভাব দেখে,,অটোমেটিকলি আমার ভ্রু কুঁচকে গেলো,,,,
।
কি ব্যাপার?এতো খুশি খুশি লাগছে কেন আপনাকে??
।
ভাবছি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো,,দেখবে মুড সুয়িং ভাবটা হাওয়া হয়ে গেছে,,,
।
আমি উনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,,,উনার মাথায় কি চলছে,,তাই বুঝার চেষ্টা।।
।
জটপট তৈরি হয়ে নাও,,,
।
আপনার ফোনটা দিবেন প্লিজ??
।
কেনো??(ভ্রু কুচঁকে)
।
আমার কাছে ফোন নেই,,একটা আপনি ভাঙছেন অন্যটা বাসায় ফেলে আসছি,,,,আম্মুর সাথে কথ বলবো(মুখ ফুলিয়ে)
।
ওহ,,,ওকে
।
উনি ফোনটা আমার হাতে দিলেন,,,খুশি খুশি মনে মনে স্ক্রিনটা অন করতেই,,,স্ক্রিন সোজাসাপ্টা ভাবে জানিয়ে দিলো তার পাসওয়ার্ড চায়,,নয়তো সে খুলবে না।।।ব্যাপারটা সে যতো সহজভাবে বললো,,আমার মেজাজ ততো সহজ ভাবে নিলো বলে মনে হলো না,,বিরক্তি আগের থেকে কয়েকধাপ এগিয়ে গেলো,,,এই সাদা বিলাইকে কি করা যায়??ব্যাটা পাসওয়ার্ড না খুলেই ফোন হাতে তুলে দিলো,,আহাম্মক একটা।।।
।
এইযে??আপনার ফোনের পাসওয়ার্ড কি??
।
উনি ল্যাপটপ দেখছিলেন,,আমার কথায় মাথা উঠিয়ে বলে উঠলেন,,,”দাও খুলে দিচ্ছি”
।
না,,আপনি বলুন,,, আমি ইন করছি,,
।
আমি বলছি তো দাও আমি খুলে দিচ্ছি,,
।
আমিও তো বলছি আপনি বলুন,,,,কি এমন জিনিস আছে যে পাসওয়ার্ড শুনে নিলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে,,,(ভ্রু কুচঁকে)
।
আশ্চর্য এমন সিম্পল একটা বিষয়ে তুমি জেদ করছো কেন??(রাগী গলায়)
।
আশ্চর্য এমন সিম্পল একটা বিষয়ে আপনি জেদ কেন করছেন??নাকি কারো সাথে চক্কর চলছে??(সন্দেহের দৃষ্টিতে)তাই এতো ইনসিকিউর ফিল করছেন???(ভ্রু নাচিয়ে)
।
ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল,,,, এতো জেদি কেন তুমি??যত্তোসব,,,ওকে তুমিই ইন করো,,,(রাগী গলায়)
।
হ্যা হ্যা বলুন,,,(উৎহাস নিয়ে নড়েচড়ে বসে)
।
“মাই পুচকি”
।
উনার কথাটা শুনেই আমার দৃষ্টি সরু হলো,,,পুচকি??ইটস মি??ব্যাপারটা ভাবতেই আমার মুখ “হা” হয়ে যাওয়ার উপক্রম,,,,আমি “থ” মেরে বসে আছি,,,উনি উঠে এসে ফোনটা হাত থেকে নিয়ে লক খুলে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।। যেতে যেতে বলে গেলেন,,,”রেডি হয়ে নাও,,আমরা বেড়োবো”,,,আমি এখনো চুপচাপ বসে আছি,,নিজেই বুঝতে পারছি না আমার ভেতরের অনুভূতিটা আসলে কি???,,,অবাক হয়েছি নাকি খুশি হয়েছি,,,,
।
।
দুজনেই নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি,,এটা সেই জায়গা যেখানে উনি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলেন,,আজও এমন কিছুর প্ল্যান করছেন না তো???আমি উনার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছি কিন্তু উনি আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন,,,ব্যাপারটা ব্যাপক রহস্যজনক,,,
।
#চলবে,,,,
#তোকে চাই❤
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:38
।
।
কি ব্যাপার?এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন???(ভ্রু কুচঁকে)নদীতে ফেলে টেলে দেওয়ার প্ল্যান করছেন না তো??
।
হোয়াট ননসেন্স?? নদীতে কেন ফেলবো??
।
যেভাবে তাকিয়ে আছেন,, সন্দেহ তো লাগবেই,,,এমন তো নয় যে আমাকে দেখে আপনি মিনিটে দশবার/বারোবার ক্রাশ খাচ্ছেন,,আমি তো আবার ক্রাশ খাওয়া টাইপ না,,,তো তাকিয়ে কেনো আছেন??(ভ্রু নাচিয়ে)
।
তোমাকে শাড়ি কে পড়তে বলছে??(গম্ভীর কন্ঠে)
।
কেনো??কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছে নাকি??আই মিন এব্রিথিং অলরাইট?? (তাড়াহুড়ো করে)
।
রিলাক্স তোমার সব ঠিক আছে,,,বাট আমার সব বেঠিক হয়ে গেছে,,,(বাঁকা হাসি দিয়ে)
।
মানে??(ভ্রু কুচঁকে)
।
হার্ট বেরিয়ে আসতে চায়ছে,,,আসলে কি বলোতো রোদ,, তোমাকে যতটা ছোট লাগে তুমি ততটা নও,,,তা তোমায় শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখেই বুঝা যায়,,,,
।
উনার তাকানো আর কথায় অবাক হবো নাকি অস্বস্তি ফিল করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না,,তাই ভ্রু কুচকে আগের মতোই উনার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম,,,
।
তোমাকে গুলুমুলু পুচকি টাইপই বেশি ভালো লাগে,,,এসব শাড়ি টারি পড়ো না,,,
।
কেনো খারাপ লাগছে দেখতে??(মুখ ফুলিয়ে)
।
তুমি আসলেই একটা হাদা,,,আমার কথা যে একটাও তোমার মাথায় ঢুকে নি সে বেশ বুঝতে পারছি,,,(গাল টেনে দিয়ে)
।
তাহলে বুঝিয়ে বললেই তো হয়,,,,(ঠোঁট উল্টে মুখ ফুলিয়ে)
।
বুঝিয়ে বলবো???ওকে বোঝাচ্ছি,,,শাড়ি পড়লে তোমাকে প্রেমে পড়া টাইপ মেয়েদের মতো লাগে,,আই মিন,,,হট এন্ড,, সেক্সি,,(চোখ টিপে)
।
কথাটা বলেই উনি হুহা করে হেসে উঠলেন,,,,আর আমি অবাক চোখে আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছি।।।উনার কথাটা বুঝতে আমার পুরো দু মিনিট সময় লাগলো,,,ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই আমার চোখ দুটি বেরিয়ে আসার উপক্রম,,,
।
ছিহ,,,আপনি আমার উপর এসব বাজে ওয়ার্ড ইউজ করছেন??(রাগী গলায়)
।
তো??এসব বাজে ওয়ার্ড কিভাবে হলো??এগুলোকে মনের ভাব প্রকাশক শব্দ বলতে পারো,,,,তাছাড়া এগুলো তোমার উপর এপ্লাই করবো না তো কার উপর করবো??? বন্ধুর বউ এর উপর এপ্লাই করবো??আমাকে ধুয়ে দেবে,,,হুহ
।
ভালোই তো হবে,,,বিনা খরচে ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবেন,,,,(মুখ ভেঙিয়ে)
।
তুমি,,,,(দাঁতে দাঁত চেপে)এনিওয়ে এখন মন কেমন??
।
কেন আমার মনের আবার কি হলো??(বিরক্তি নিয়ে)
।
তুমিই না বললে মোড সুয়িং হচ্ছে?(অবাক চোখে)
।
ওহ,,,বিরক্তিভাবটা এখন একটু কম,,,(মুখ গোমরা করে)
।
চলো একটা কাজ করি,,,মন ভালো হয়ে যাবে,,,
।
কি কাজ??(ভ্রু কুঁচকে)
।
আরে চলো তো,,আর কথায় কথায় ভ্রু কুচকাবে না তো,,,(হাত ধরে টেনে)
।
উনি আমাকে নদীর পাড়ে এনে ধার করালেন,,,,,আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা উনি কি করতে চাইছেন,,,,কে জানে??ধাক্কা টাক্কা মারবে না তো আবার,,,,
।
চলো পা ভিজাই,,,
।
আমি আবারো উনার দিকে ভ্রু কুচঁকে তাকালাম,,,”এই যে আবারো ভ্রু কুচকাচ্চো,,,মানা করেছি না??এখন চলো আমার সাথে”
।
শাড়ি ধরে রাখতে হবে তো,,,
।
হবে না,,,ভিজতে দাও….
।
দুজনে অল্প পানিতে পা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে আছি,,,আমার কাছে ব্যাপারটা পাগলের কারবার ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না,,,
।
আচ্ছা??তোমার কোন গানটা গায়তে ভালো লাগে?(আমার দিকে তাকিয়ে)
।
ইউ মিন ফেবরিট সং??
।
নাহ,,,ফেবরিট সং না,,,এমন কিছু গান আছে যা তোমার প্রিয় গান বলা যায় না,, তবে গলা ছেড়ে গাইতে ভালো লাগে,,,এমন টাইপ,,,
।
উমমমমম,,,মনে পড়ছে না,,,(করুন চোখে)
।
মনে করো,,,(গম্ভীর মুখে)
।
ইচ্ছেটাকে দিলাম ছুটি আসবে না ফিরে,,,এইগানটা গাইতে বেশ ভালো লাগে,,,
।
তাহলে গাও,,,
।
এখন??(অবাক হয়ে)
।
হুমম,,,আমাকে শোনানোর জন্য নয়,,,নিজের জন্য গাও,,,গলা ছেড়ে গাও,,আশেপাশে কেউ নেই কেউ শুনবে না,,,
।
কিন্তু,,,
।
গাও বলছি,,(ধমক দিয়ে)
।
উনার ধমকে ধীরে গাইতে লাগলাম,,,,আস্তে আস্তে আমার গলার আওয়াজ যে বাড়ছে বুঝতে পারছি।।।একসময় খেয়াল করলাম,,গানটা আমি বেশ ইনজয় করছি এবং হাত পা ছুড়ে তাল মেলানোরও চেষ্টা চালাচ্ছি,,আর উনিও কম কিসে আমার সাথে গলা ছেড়ে গাইছেন,,,”ইচ্ছেটাকে দিলাম ছুটি আসবে না ফিরে,,,এক পৃথিবীর ভালোবাসা রয়েছে ঘিরে,,মনটা যেনো আজ পাখির ডানা,,,হারিয়ে যেতে আজ নেইতো মানা,,,চুপিচুপি চুপি স্বপ্ন ডাকে হাত বাড়িয়ে,,,মন চাই মন চাই,,,,,,,” দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ লাফালাফি করে টায়ার্ড হয়ে ঘাসের উপর বসে পড়লাম,,,,
মনটা সত্যিই ফ্রেশ লাগছে,,,শাড়ি ভিজে একাকার কিন্তু তত খারাপ লাগছে না,,,গরমের দিনে ভেজা কাপড় তেমন সমস্যা করে না।।হঠাৎ ই উনি উঠে গাড়ির দিকে হাটা দিলেন,,,কোথায় যাচ্ছেন জিজ্ঞেস করায় বললেন,,,”এখনি আসছি”।।।প্রায় মিনিট দশেক পর উনি ফিরলেন,,হাতে মাঝারি সাইজ আইসক্রিম বক্স,,,আমার পাশে বসতে বসতে বলে উঠলেন,,,”কি চাই??” আমি মুচকি হাসলাম মাত্র,,,,,সন্ধ্যা হবে হবে ভাব,,,প্রকৃতি ঘন অন্ধকারকে বরন করে নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত,,,,আকাশটাও লাল রঙে সেজেছে অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার লোভে,,,,আমিও সেজেছি এক অজানা অনুভূতিতে,,,শুভ্র, আমি পাশাপাশি দাড়িয়ে আছি,,,দুজনের চোখেই মুগ্ধতা,,,হঠাৎই উনি বলপ উঠলেন,, “রোদ? ভালোবাসি।” উনার বলা “ভালোবাসি” শব্দটা কানে বাজছিলো বার বার।।এটা কি আমার শোনার ভুল নাকি বুঝার ভুল??নাকি বাস্তবতা???অবাক চোখে উনার চোখে তাকালাম,,চোখে একগাদা প্রশ্ন….উনি আমাকে উচু করে তুলে গাড়ির ডিকির উপর বসিয়ে দিলেন,,,স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন,,,,
।
দ্বিতীয় বার ভালোবাসা যায় এটা তোমার থেকে শিখেছি রোদ,,,দ্বিতীয়বারও বাঁচার স্বপ্ন দেখা যায়,,,তোমাদের দুজনের মধ্যে কাকে বেশি ভালোবাসি এটা জিজ্ঞেস করো না,,উত্তরটা আমার নিজেরই অজানা।।।আসলে উত্তরটা কখনো খুঁজতেই যায়নি।।উত্তরটা কি খুব জরুরি রোদ???(করুন দৃষ্টিতে)
।
আমি মাথা নেড়ে জানালাম না,,,উত্তরটা জরুরি নয়,,,,জরুরি হলো উনি আমাকে ভালোবাসেন,,,নীলিমা আপুকে ভুলতে বলার আমি কে??ওটা নীলিমা আপুর অধিকার,,,আসলে,,উনি নীলিমা আপুকে ভুলে যাননি,,,এই ব্যাপারটিই আমাকে তার প্রতি আরো বেশি আসক্ত করে তুলেছে,,,শ্রদ্ধাবোধটা বাড়িয়ে দিয়েছে,,সত্যিতো এভাবে কি ভুলা যায়??ভালোবাসা কি ভুলে যাওয়ার জন্য??উনি নীলি আপুকে পুরোপুরি ভুলে আমায় মেনে নিলে আমিই হয়তো তা মেনে নিতে পারতাম না,,,মনের মধ্যে একটা বিষয় সাড়াক্ষন নাড়া দিতো,,তার মানে কি এই নয় যে,,আমি হারিয়ে গেলেও উনি একইভাবে ভুলে যাবেন??উনার প্রতি ভরসাটা তৈরি হতো না,,,তাই আমি উনার প্রতি কৃতজ্ঞ যে উনি নীলি আপুকে ভুলে যান নি,,,উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো বলতে শুরু করলেন,,,
।
ইশিতার বিয়ে হয়ে যাবার পর রুহান যখন ভেঙে পড়েছিলো,,তখন নীলি ওকে একটা কথা বলেছিলো,,,”ভালোবাসার মানুষটার চেয়ে ভালোবাসাটা বেশি দামী,,,ইশিতা তোমায় ছেড়ে দিয়েছে তারমানে এই নয় তুমি জীবনটাকেই ছেড়ে দিবে,,,আকড়ে ধর জীবনটাকে,,,ভালোবাসাটাকে অন্যকারো ভালোবাসার মধ্যে বাঁচিয়ে রাখো,,,,মানুষটা মরে গেলেও ভালোবাসাটা যেন না মরে,,বেঁচে থাকে অন্য একজনের নিশ্বাসে প্রশ্বাসে”
রোদ??আমি কি নীলির ভালোবাসাটা তোমার মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে পারি না???তোমাকে আমার চাই রোদ,,,খুব বেশিই চাই,,,আমার প্রত্যেকটা প্রয়োজনীয়তায়,,, প্রত্যেকটা মুহূর্তে চাই,,,,তারজন্য কি আমায় নীলিকে ভুলে যেতে হবে???কিভাবে পারবো বলো??(টলমলে চোখে)
।
আমি উনার হাতটা নিজের হাতে নিলাম,,উনার স্থির দৃষ্টি আমার চোখে মুখে,,,
।
নীলি আপুকে ভুলতে হবে না,,,তাকে একবিন্দুও ভুলবেন না আপনি,,,ভালোবাসাটা ভুলে যাওয়ার জন্য নয়,,,আমি নীলি আপুর পাশাপাশি বেশ আছি,,,আমাকে শুধু ভালোবাসলেই হবে,,,ভালোবাসায় প্রতিযোগীতা হয় না,,,ভালোবাসা,তো শুধুই ভালোবাসা,,,,
।
উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন,,,
।
সত্যি ভালোবাসি তোমায়,,,খুব বেশিই ভালোবাসি,,,এটা প্রয়োজনীয়তা থেকে বলছি না,,অনুভূতিগুলো থেকে বলছি,,,তোমাকে হারানোর ভয়ে আমি ক্লান্ত,,,প্লিজ ছেড়ে যেও না আমায়,, প্লিজজজ,,,,
।
আমার চোখে জমে থাকা মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়লো,,,,ইচ্ছে হচ্ছে চেঁচিয়ে বলি,,,ভালোবাসি,,বড্ড বেশিই ভালোবাসি,,,কিন্তু মুখ আজ নির্বাক।।।কান্নাগুলো গলায়,গুটি হয়ে আটকে গেছে যেনো,,কিছুতেই কথা বলতে পারছি না,,,কিছুতেই না।।।
।
#চলবে,,,,