#তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৮
রিপন হায়দার নিজেকে সর্বোচ্চ টা দিয়ে শক্ত করে রাখছে । গাড়িতে শুধু ড্রাইভার, রিপন হায়দার আর অই অদ্ভুত মানবটা আছে।বাকি দুজন লোক যে ছিলো কন্ডাকটর ও হেল্পার তাদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না। যখন ঘুমিয়ে ছিলো তখনি তাঁরা নেমে গেছে,হয়তো তাদের বাড়ি চলে গেছে।
রাত একদম শেষের দিকে, প্রায় তিনটে বাজে ।
ঘুরেফিরে রিপন হায়দার যতবার তাঁর দিকে তাকাচ্ছে, চোখ দুটো স্থির অনড় হয়ে তাকিয়ে আছে,
মৃত লাশের চোখ দেখলে ভেতরে গা ছমছম করে উঠে তেমনটাই অনুভব হচ্ছে।
ভয়কে কোনো ভাবেই জয় করা যাচ্ছে না, গা থেকে ঘাম ছুটছে। ভয়ের সময় দোয়া ইউনুস পড়লে ভয় ও বিপদ কেটে যায়, কিন্তু রিপন হায়দার সূরা ফাতিহা আর ইখলাস ছাড়া আর কোনো সূরাই পারে না । তবুও তাঁর উচিৎ এখন এগুলোই পাঠ করা, কিন্তু সেটা এই সময় তাঁর মাথায় আটছে না।
ঘাড় ঘুরিয়ে পকেট থেকে রুমাল টা বের করে ঘাম মুছতে মুছতে হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো।এমন ভাবে গাড়ি ব্রেক করা হলো যে নিজের বেগ কনট্রোল করতে না পেরে সামনের দিকে ঝুঁকে কপালের সাথে সামনের সীটে বাড়ি খেলো।
কপালে হাত দিয়ে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বললো,
-এইভাবে গাড়ি থামালে কেনো?
-স্যার ঢাকা আইসা পড়ছি তো। আর সামনে যাইবো না,বাসে বইসা থাকেন না হয় বাইরে যাইয়া বইসা থাকেন। ৫ টার দিকে মালিবাগের বাস পাইবেন।
রিপন হায়দার কিছু বলবে তখন খেয়াল হলো তাঁর পাশের সীটে এতোক্ষণ যে ছিলো সে নেই। হঠাৎ করে কোথায় হাওয়া হলো মাথায় ধরছে না, এটা ভেবেই ভয় পাচ্ছে আরো।আজকের ঘটনা টা তাঁর কাছে পুরোটাই হরর স্টোরি মনে হচ্ছে।
বাস স্টপে গাড়ি থামার সাথে সাথে কয়েকজন পুলিশ এসে ঘেরাও করলো, রিপন হায়দার তাদের দেখে দাঁড়িয়ে গেলো ।
এরা এতোক্ষণ রিপন হায়দারের জন্য এখানে অপেক্ষা করছিলো না, বরং জামালপুর থেকে প্রায় দশ বারোজন পুলিশ এই গাড়িকে কৌশলে ফলো করে এসেছে এখানে।তীব্রর অর্ডার ছিলো যেনো রিপন হায়দার সুস্থ ভাবে তার সামনে উপস্থিত হয়।যদি কিলার কোনো ভাবে জেনে থাকে তীব্রর এক্সাক্ট প্ল্যান টা কি, তাহলে সে এট্যাক করার আগেই যেনো তীব্র তাকে ধরতে পারে।
সেজন্য এতো কিছু।
কিলার হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলো পরিস্থিতি, তাই প্রকাশ্য রূপ না দেখিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে।
পুরো গার্ড দিয়ে রিপন হায়দারকে মালিবাগে নেয়া হলো, সেখানে তাঁর খাবার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হলো।
বিশ্রাম শেষে এসবির অফিসে পা রাখলো।
তীব্রর কাছে যেতে না যেতেই তীব্র আদ্য অন্ত জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলো। কিন্তু রিপন হায়দারের থেকে তেমন কোনো কিছুই জানা যাচ্ছে না।আদৌ সত্যি বলছে কি মিথ্যে সেটাও বুঝা যাচ্ছে না। তোরাগ থানা থেকে দেয়া ইনফরমেশন অনুযায়ী জানা যায় এ এস আই অন্তুর সাথে তার গভীর ভালো সম্পর্ক ছিলো।কিন্তু রিপন হায়দারের বয়ানে জানা যাচ্ছে এমনটা “অন্তু নামে কোনো এ এস আই তো দূরে থাক কোনো মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে কিনা তাঁর মনে পড়ছে না,তীব্র প্রুভ দেখানোর পর স্বীকার করলেও জানায় অন্তুকে তেমন ভালোভাবে চিনতো না জানতো না, স্বাভাবিক ভাবে অন্যান্য অফিসারের সাথে যেরকম সম্পর্ক ছিলো সেরকম তাঁর সাথেও ছিলো।এমনকি অন্তু মারা গেছে সেটাও জানে না।
অথচ টিভিতে খবরের হেডলাইনে,নিউজ পেপারে অন্তুর মৃত্যুর খবর ছাপা হয়েছে।ওসি রিপন হায়দার নিজে নিজেই কেস খেয়ে গেলো মিথ্যে বলে। তীব্র সবটা বুঝেও না বুঝার ভান করলো।
-আপনি জামালপুর থেকে আসার সময় গাড়িতে বা রাস্তায় কোনো আজব জাতীয় ঘটনা ঘটেছে কি আপনার সাথে?
কথাটা শুনে একটু চমকে গেলো রিপন হায়দার, রাতের সেই লোম হর্ষক দৃশ্যের কথা মনে পড়ে গেলো। নিমেষেই গা থেকে ঘাম ছুটে গেলো।
-অফিসার আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি।
-জি মা মা মানে স্যার একটা ভূতুড়ে ঘটনা ঘটেছে।
-যেহেতু আমি ওখানে ছিলাম না, তাই কথা না পেঁচিয়ে খুলে বলুন পুরোটা।
-স্যা স্যার , আমি বাসে ওঠার কিছুক্ষণ পর পরই ঘুমিয়ে যাই, তবে মাঝে মাঝে গাড়ির ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে একটু নড়ে চড়ে বসতাম, বাস ভর্তি মানুষ ছিলো । কিন্তু স্যার কালিয়াকৈরের পর ঘুম ভাঙতেই দেখি বাসে একটাও যাত্রী নেই।শুধু আমি একাই যাত্রী ছিলাম। সেটা তো গেলো তারপর আশুলিয়া পেরুতেই আবার জেগে উঠলাম , সামনে তাকিয়ে দেখি হেল্পার কন্ডাকটর কেউ নেই শুধু আমি আর ড্রাইভার, তৎক্ষণাৎ খেয়াল হলো আমার পাশের সারির সীটে কেউ একজন বসে আছে, ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি একটা মানুষের মতোই দেহো কিন্তু চোখ দুটো ভয়ংকর, গাড়ির ভেতর লাল আলোতে তার নীল চোখ গুলো জ্বলজ্বল করছিলো। চেহারা দেখা যাচ্ছিলো না।মাস্ক পড়া, লম্বা হুডি পড়া, মাথা থেকে পা অব্ধি তার শরীরের কোনো অংশ দেখা যাচ্ছিলো না শুধু চোখ দুটো ছাড়া।
এই টুকু বলতে বলতে রিপন হায়দারের গলা শুকিয়ে যায়, তীব্র সামনে থাকা পানির গ্লাসটা তাঁর দিকে এগিয়ে দেয়, সে এক নিশ্বাসে পুরো গ্লাসের পানি ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।
তীব্র শান্ত স্বরে বললো,
-তারপর বলুন।
-স্যার তারপর একটু পর পর তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি প্রচুর ভয় পাচ্ছিলাম,ভয়ে নড়ে চড়ে বসবো বা চিৎকার করবো নাকি তাঁর সাথেই কথা বলবো কোনো কিছুই মাথাই আসছিলো না,আমি না পারছলাম তাঁর চোখ থেকে নিজের চোখ সরাতে, না পারছিলাম তাকিয়ে থাকতে। তারপর গাড়ি টা গায়ে ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেলো,আমার ঘোরটাও কেটে গেলো,ড্রাইভার বললো ঢাকা এসে গেছি, ড্রাইভারের কথা শেষ হতেই পাশে তাকিয়ে দেখি সে মানুষ না জ্বিন কি ছিলো! সে আর পাশে নেই।
তীব্র পেপার ওয়েট হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে কিছু একটার ভাবনায় পড়ে গেলো।
-আপনি এখন আসতে পারেন।আমার সব উত্তর পেয়ে গেছি।দেওয়ানগঞ্জ ফিরে যেতে পারেন।
-ওকে স্যার, ওঠি তাহলে।
-হুম।
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
রিপন হায়দার রুমাল দিয়ে গায়ের ঘাম মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো।তীব্র গভীর ভাবনাতেই আছে।
কিছুক্ষণ পর টিভির নিউজের দিকে চোখ গেলো,যেখানে সাংবাদিকরা বলা বলি করছে কিলারকে ধরার জন্য কাকে কাকে দায়িত্ব দিয়েছে,এমনকি বার বার তীব্রর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যে ওসি রিপন হায়দারকে ডাকা হয়েছিলো সেটাও মিডিয়ার কাছে চলে গেছে ।
নিউজ দেখেই তীব্রর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
মাথায় পুরো রক্ত উঠে যাওয়ার উপক্রম। যেখানে ব্যাপারটা পুরো টিমের মাঝে সিক্রেট রাখার কড়া নির্দেশ দিয়েছে তীব্র সেখানে টিম ছেড়ে পুরো মিডিয়ার কাছে নিউজ চলে গেছে, এখন পুরো দেশ বাসী জেনে যাবে এর মধ্যে থাকা কিলারও জেনে যাবে।
টিমের সমস্ত অফিসারসদের ডেকে পাঠানো হয়। তাঁরা আসার আগেই কেবিনের গ্লাসে কড়া নাড়ে একজন অফিসার, তীব্রর পারমিশনে সে ভেতরে প্রবেশ করবে তখন তীব্র বাইরের দিকে খেয়াল করে,
তিন চার দল সাংবাদিক ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে,বুঝার আর বাকি রইলো না কিছু, মাথা সেই লেভেলের গরম হয়ে গেলো।
-স্যার সাংবাদিকরা কোনো ভাবেই বাঁধ মানছে না ভেতরে আসতে দিতে চাই নি আমরা কিন্তু তাঁরা মনমতলবি নিউজ বানিয়েই যাচ্ছে, ডি আইজি স্যার তাদের ভেতরে ঢুকার পারমিশন দেয়, আর ভেতরে এসেই তাঁরা আপনার ইন্টার্ভিউ নেয়ার জন্য ফোর্স করছে, স্যার কি করবো এখন?
-কিচ্ছু করতে হবে না, যা করার আমিই করছি।
তীব্র উঠে গিয়ে বাইরে গেলো, সাংবাদিকরা ভীড় করতেই তীব্র বলে উঠলো,
-আপনারা ভবনের বাইরে অপেক্ষা করুন আমি আসছি।
লিফটে উঠে সোজা উপরের ফ্লোরে চলে গেলো।
-স্যার আসবো?
তীব্র মোশারফ রহমান স্যারের কেবিনের দরজায় নক করতেই মোশারফ রহমান সাদরে তীব্রকে ভেতরে প্রবেশ করতে বলেন।
তীব্র ভেতরে ঢুকেই চেয়ার টেনে বসে পড়লো।
-রাগান্বিত লাগছে কেনো তোমায়?এনি প্রবলেম?
-মিডিয়ার লোকদের কি আপনি ভেতরে ঢুকার পারমিশন দিয়েছেন?
-না দিয়ে কোথায় যাবো বলো, ভেতরে ঢুকতে না দিতেই এরা যা তা নিউজ বানিয়ে দিচ্ছে।
তীব্র তুচ্ছ হাসি দিয়ে বললো,
-স্যার আপনাকে ডি আইজি বানিয়েছে কে?রঙিন মিডিয়ার সামান্য চাল ধরতে পারলেন না? সিনক্রিয়েট করা উল্টো পাল্টা নিউজ ক্রিয়েট করে সাধারণ মানুষের মস্তিষ্ক গুলানোই তো ওদের কাজ।
আচ্ছা বাদ দিলাম, ভুল মানুষেরই হয়।
এখন বলুন তো স্যার আমাকে যে কাজটা আপনারা সিনিয়ররা দিয়েছেন সেটা কি শো অফ করার জন্য নাকি কাজের কাজ করার জন্য?
– অবশ্যই কাজের কাজ করার জন্য।
তীব্র লম্বা গরম নিশ্বাস ছেড়ে , অনেকটা চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো,
-তাহলে স্যার আমাকে এটা বলুন, এই সিরিয়াল কিলারকে ধরার সিক্রেট অপারশনটার মূল দায়িত্বে যে আমি আছি এটা মিডিয়া কি করে জানলো?এই নিউজ তো এসবির বাইরে যাওয়া বারণ ছিলো তাই না? এমনকি আমার টিমে যাদের যাদের সিলেক্ট করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৮/১০ জন আমার প্ল্যানের ৫০% অংশ জানে আর কি আজব এই ফিফটি পারসেন্ট ই মিডিয়া জানে! কার কাঁধে বন্দুক রেখে কার বুকে কয়টা গুলি চালাতে পারি সব কিছু মিডিয়া বলে বলে দেবে আর সেটাই আমরা করবো?
যেটা আমি ভাবিই নি সেটাও মিডিয়ার কাছে পৌঁছে গেছে।
-দেখো তীব্র তোমার রাগ করা স্বাভাবিক। কিন্তু এটা মাথায় রেখো যাদের নিয়ে তুমি দল গঠন করেছো তাদের মাঝে তুমি বয়সে অনেকের ছোটো হতে পারো কিন্তু তোমার পজিশন সবার সিনিয়র। তুমি খুব ভালো করেই জানো তোমার জায়গা টা আমাদের মাঝে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, আমরা সিনিয়ররা তোমায় ছেলের মতো দেখি।
সো তোমার কোনো ডিসিশন নিয়ে আমরা দ্বিমত করবো না,দলের কেউ ভুল করলে তুমি তাদের যোগ্য শাসন ও শাস্তি দিতে পারো।
-কোনো প্রয়োজন নেই স্যার।আমি জানি প্রবলেমটা কোথায়।আমি যেহেতু আমার সিনিয়রদের পাত্তা দেই না, সেই সুত্র অনুযায়ী আমার জুনিয়ররাও আমায় পাত্তা দেয় না। তাই আপনারা সিনিয়ররা প্রয়োজনে আমাদের আইজি স্যার জাবেদ পাটোয়ারিকে দিয়ে আমার জুনিয়রদের বলান যে , মিডিয়ার কাছে কে এই সব কপি পেস্ট করেছে?আর নেক্সট টাইম যেনো এরকম না করে।
-ওয়েট আমি ডেকে পাঠাচ্ছি বাকিদের।
তীব্র মাথা চেপে বসে রইলো।
মোশারফ হোসেন কয়েকজন অফিসারকে ডেকে পাঠালেন ইরফান শেখ সহ বেশ কয়েকজন ভেতরে এলো।
কথা প্রসঙ্গ উঠতেই সবাই না করে বসলো কেউ মিডিয়াকে জানায় নি। কিন্তু তীব্রর সন্দেহ হচ্ছে ইরফান শেখকে, সে জন্যই নিজে কিছু না বলে সোজা ডি আইজি স্যারের কাছে এসে গেছে। তাই কৌশলে ইরফান শেখ বাদে বাকিদের বেরিয়ে যেতে বললো।ইরফান শেখ একটু টেনশনে পড়ে গেল।
তীব্র ঘাড় ঘুরিয়ে ইরফান শেখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-ইরফান সাহেব!
-জি স্যার বলুন।
-আপনি জানেন তো, আমি মানুষের ভবিষ্যৎ বলতে না পারলেও অতীত বলতে পারি?
-স্যার আপনি এক্সাক্টলি কি বলতে চাইছেন? আর স্যার মিডিয়া জেনে গেছে তো কি প্রবলেম হয়েছে?মিডিয়া জানলে তো আমাদের উপকার ই, কোনো ভাবে কিলারও জেনে যাবে যে তাকে ধরার জন্য আমরা পুলিশরা উঠে পড়ে লেগেছি, এতে কিলার ভয়ে আর মার্ডার করবে না, হতে পারে নিজে থেকেই সারেন্ডার করে দিবে।
তীব্র নজর ফিরিয়ে মোশারফ রহমান স্যারের দিকে তকিয়ে ইন্ডাইরেক্টলি ইরফান শেখকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-স্যার আমাদের সিক্রেট প্ল্যানিং মিডিয়া জেনে গেছে তাতে আমার সমস্যা নেই।মিডিয়া সেটা পাবলিকের সামনে প্রেজেন্ট করছে সেটাতেও আমার কোনো প্রবলেম নেই,সেই সব পাব্লিকের মাঝখান থেকে কিলারও জেনে যাচ্ছে সব তাতেও আমার সমস্যা নেই।
কিন্তু স্যার প্রবলেম টা হলো, মিডিয়া যে বার বার আমার নাম মেনশন করছে, এতে কিলার যদি নেক্সট টার্গেট আমাকে মারার জন্য করে নেয় তখন?কে বাঁচাবে আমায়?একটা জিনিস ভেবে দেখুন, কিলার কোনো স্বাভাবিক সাধারণ মানুষদের মারছে না, পাওয়ারফুল মানুষদের ই মারছে। অবশ্যই তাদের সাথে কোনো শত্রুতা আছে এখন আমি যদি সেখানে বাঁধা দেই তাহলে কি আমার প্রাণ টা সংকটে নেই?
স্যার আমার কিন্তু মরার ইচ্ছে নেই।আমি মরার জন্য প্রস্তুত না।বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে আমি, মরে গেলে আমার মায়ের কি হবে?বাবার কথা বাদ ই দিলাম, আমার বোন? এমনকি আমার বউটার হবে কি?অন্য কেউ বিয়ে করে নিয়ে যাবে! আমার আত্না মরে গিয়েও অশান্তিতে জ্বলবে, আমার বউ অন্য কারো বিছানায়!
মোশারফ রহমান ইরফান শেখকে কড়া স্বরে বললো,
-ইরফান সাহেব, আপনি কাজটা একদম ঠিক করেন নি।একজন সিনিয়র অফিসার হয়ে এরকম বোকার মতো কাজ মানায় না, নেক্সট টাইম এরকম কোনো ভুল করলে আমরা আপনার বিরুদ্ধে একশন নিতে বাধ্য হবো।
-কিন্তু স্যার আপনারা ব্যাপারটা নেগেটিভ ভাবে নিচ্ছেন কেনো? এটার পজেটিভ দিক গুলো ভেবে দেখুন।
তীব্র ইরফান শেখকে বললো,
-ইরফান সাহেব, এটা কোনো লাভ অ্যাফেয়ার না যে আপনি পজেটিভ দিক থেকে চিন্তা করে একটা লাভ লাইন ঠিক করবেন। এটা অনেকগুলো মার্ডারের সম্মিলিত কেস, যেখানে সবার আগে নেগেটিভ সাইড থেকে চিন্তা করতে হয়, আশে পাশের সবাইকে আসামীর চোখেই দেখতে হয়।
সরল মনে নিলেই বিরল ঘটনা ঘটে যাবে।
_………………………!
-আর একটা কথা মাথায় রাখবেন, সময় মতো জাস্ট টাইমে কোথাও পৌঁছানোকে কারেক্ট টাইমিং বলে না, উল্টো পথে হেঁটেও সময় থাকতে কাজ কমপ্লিট করাকে কারেক্ট টাইমিং বলে।আমাদের ক্যাডেটে বছরের পর বছর ডিসিপ্লিন, কারেক্ট টাইমিং, রেসপন্সিবিলিটি, মোটিভেট, ব্রেইন ওয়াশ,নিজেকে ও অন্যকে প্রোটেক্ট করা, নানান বিষয়ের উপর খুব ভালো শিক্ষা দিয়েছে,শুধুই বই খাতাতে আমাদের মুখ থুবড়ে ফেলে নি।
সো কথা গুলো মাথায় রাখবেন।
-স্যার ছোট্ট বিষয়কে কেনো এতো গভীর ভাবে নিচ্ছেন স্যার?
তীব্র কোনো উত্তর না দিয়ে উঠে চলে গেলো।
এতোক্ষণ ধরে বাইরে মিডিয়ার লোক গুলো তীব্রর জন্য অপেক্ষা করে যাচ্ছিলো। তীব্র বাইরে দাঁড়াতেই মিডিয়ার লোকদের ভীড়।
-স্যার ওসি রিপন হায়দারের থেকে কি জানতে পারলেন জিজ্ঞাসাবাদ করে?আপনার নেক্সট প্ল্যান কি স্যার? আমদের দয়া করে সবটা খোলাসা করে বলুন স্যার। আর এতো বড় দায়িত্ব নিয়ে আপনার অনুভূতি কি?শেষ পর্যন্ত কি আপনারা পারবেন এই নাইট সিরিয়াল কিলার কে শনাক্ত করতে?
একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ছে তীব্রর দিকে। তীব্র উত্তর না দিয়ে সবার প্রশ্ন শুনছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের বেগ কমতেই তীব্র বলে উঠলো,
-আচ্ছা আপনারা আমাকে কেনো এসব প্রশ্ন করছেন?আমি এই কেসটার ব্যাপারে কিছু জানি না। আমার র্যাবে পোস্টিং হয়ে গেছে, সামনের সপ্তাহ থেকে র্যাবে জয়েনিং। আর আপনারা কিসব নিউজ বানিয়ে আমাকে টানছেন!
-স্যার আমরা সুত্রপাতের মাধ্যমে জেনেছি, এবার কিলারকে ধরার জন্য আপনিই মাঠে নেমেছেন,সমস্ত দায়িত্ব আপনার উপর।এমনকি ১০০ জনের সিক্রেট টিম গঠন করেছেন।
-দেখুন এসব কথা কে জানিয়েছে আমি জানি না, যে জানিয়েছে তাকে গিয়ে ধরুন।আমি একজন এসপি হয়ে কেনো এসব কাজ করবো,আমি শুধু বসে বসে পারমিশন এনে দিতে পারি, ইন্সট্রাকশন না।
-কিন্তু স্যার আমরা তো সত্য খবর শুনেই এসেছি।
-ঠিক আছে, আপনারা এটা বলুন আপনাদের চ্যানেলের বা নিউজ পেপারের যে মালিক, ম্যানেজার ডিরেক্টর তাঁরা কি কখনো আপনাদের কাজ গুলো করে?ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, পেপার, রেকর্ডার এসব জিনিস নিয়ে ছুটাছুটি, খবর সংগ্রহ এসব করে? নাকি বসে বসে শুধু পারমিশন দেয়?
-……………………(সবাই নিরব)
-আপনারাই ভেবে দেখুন না এটা কি আমার কাজ?কখনো দেখেছেন এসপিকে আসামীর পেছনে ছুটতে?আমি থাকি পায়ের উপর পা তুলে বসে,ডিপার্টমেন্টের রঙ তামাশা দেখি।
হয়তো আপনারা শুনতে কিছুটা ভুল করেছেন।এর দায়িত্ব আমাকে না, আমাদের এডিশনাল এসপি ইরফান শেখকে দেয়া হয়েছে।জিজ্ঞাসাবাদ তাকে করুন। আমি কিচ্ছু জানি না।
ইরফান শেখকে কেস খাইয়ে দিয়ে তীব্র কেটে পড়লো।
রিফাতকে গাড়ি বের করতে বলে,
সাংবাদিকদের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো।
-তুমি এসেছিলে, কেনো এসেছিলে?আবার কেনো চলে গেলে? ফিরে এসেছো বেশ করেছো ফেলে যেও না আর, বড় কষ্ট কষ্ট লাগে, রাতে হয় না এক ফোঁটা ঘুম!
গানের স্বরে গাইতে গাইতে গতকালের সেই ভ্যাবাচ্যাকা
ছেলেটা সামনে এসে দাঁড়ায়।
মিশান ফুটপাতে বসে টুকটুকির চা খাচ্ছিলো।
ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো,
-হেই ব্রো,তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।তোমার নামটা যেনো কি? ভুলে গেছি।
-কিন্তু আমি তো আমার নামটা বলিই নি কাল।
মিশান চোখ বাঁকা করে তাকালো,
-তমাল আমার নাম।
-ওহাহ!হোয়াট এ মাল!
-নট এ মাল,আই এম তমাল।
-এহহ!এটিটিউট আমার সামনে চলবে না!
-ওকে সরি।
-হাত দুটো পেছনে লুকিয়ে রেখেছো কেনো?
তমাল মুচকি হেসে বললো,
-কাল আপনি ফাঁকি দিয়ে চলে গিয়েছিলেন, আজ যেনো যেতে না পারেন সেই ভাবেই এসেছি।
কথা শেষ দিয়েই দাঁত কেলিয়ে হেসে দিয়ে আইসক্রিম সামনে ধরলো।
মিশান কোনো প্রকার সংকোচ বোধ না করে স্বাভাবিক ভাবেই আইসক্রিম গুলো নিলো নিজের কাছে দুটো রেখে বাকি গুলো টুকটুকি সহ আরো বেশ কয়েকজন পিচ্চি ছিলো, ওদের ভাগাভাগি করে নিতে বললো।
-ব্রো আইসক্রিম টা দিয়ে ভালো করেছো, চা টা খুব গরম দুটো মিশিয়ে খেতে বেশ জমবে। কোল্ড কফি, মালাই কফি কত কিছু খেয়েছো, কোল্ড মালাই ক্রিমি চা খেয়েছো?
– না তো ওটা কেমন?
-এই যে আমি বানাচ্ছি রেসিপি দেখে নাও।
মিশান চায়ের কাপে আইসক্রিম মিশিয়ে আঙুল দিয়ে নাড়িয়ে খাওয়া ধরলো।
-আপনার এন্সার টা জানালেন না তো?
-আচ্ছা তোমার একটা বন্ধু আছে না? মাঝে মধ্যে দেখা যায় তোমার সাথে কি নাম যেনো ওর?
মিশান কথাটা আন্দাজি ঢিল ছুঁড়ে কিন্তু ঢিল জায়গা মতো পড়ে যায়।
তমাল অনেকটা অবাক হয়, ওর জানা মতে মিশান ওকে চেনে না, অথচ মিশান ওর বন্ধুকেও খেয়াল করেছে,ওর ধারণা হচ্ছে বাই এনি চান্স মিশানও ওকে আগে থেকেই দেখে রোজ আর ওকে পছন্দও করে।
নানান কথা চিন্তা করছে তমাল।মিশান তমালের ঘোর কাটাতে একটু স্বর উচ্চ করে বললো,
-কি হলো?
-আপনি কি জোবায়েররের কথা বলছেন?
-তোমরা এক ম্যাসেই থাকো?
-ম্যাসে বলতে ব্যাচেলর বাসায় থাকি।
-একই হলো ,
তমাল চুপ করে কিছু একটা ভাবতে লাগলো। মিশান আপন মনে চা খাওয়াতে মন দিলো।
কাপের চা শেষ হতেই, তমাল থেমে থেমে বললো,
-আপনার………উত্তর ……টা …?
-বাইক চালাতে পারো?
-হ্যাঁ পারি।
-তুমি আমার সাথে ঠিক রাত ১০ টাই দেখা করবে।মানে এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে,তখন জানাবো উত্তরটা।
-আপনি আসবেন তো?
-আমার ফোন নাম্বার টা রেখে দাও,৯:৩০ শে আমাকে কল দিয়ে মনে করিয়ে দেবে।
-ওকে।
-এখন জায়গা পরিত্যাগ করো, আমি এখানে ধ্যান করবো।
তমাল মিশানের কথা মতো সরে গেলো। মিশানের কথার ধরণ ওর কাছে খুব বেশি আজব ধরণের লাগলেও মিশানের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে ব্যাপার গুলো মাথায় নিচ্ছে না। কে জানে কি আছে এই ছেলের ললাটের লিখনে!
গাড়ি করে তীব্র কোথাও একটা যাচ্ছিলো, চুপচাপ ভাবলেশহীন চেহারায় বসে আছে।এমন সময় মুতালেব হোসেনের কল।
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম, সরি স্যার ফোন টা কাছে ছিলো না,তাই তখন রিসিভ করতে পারি নি।
-ইট’স ওকে।কাজের কথা শুনুন।
-জি স্যার বলুন।
-কয়েকজন লোক ইরফান সাহেবের পেছনে লাগান।উনার ভাব ভঙ্গী আমার কাছে সুবিধার ঠেকছে না।
-স্যার আমার মনের কথা বলেছেন,এই প্রস্তাব টা আমি আপনার কাছে রাখতে চেয়েছিলাম।আমি এখনি করছি কাজটা।
-হুম করে ফেলুন।
ফোন কান থেকে সরাতেই রিফাত তীব্রকে প্রশ্ন করলো,
-স্যার আপনি কি কোনো ইরফান স্যারকে সন্দেহ করছেন?
তীব্র একটা লম্বা নিশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিলো,
-সন্দেহ না, আবার বৃত্তের বাইরেও রাখছি না। এমন একটা সিচুয়েশন কাউকেই সাধু চরিত্রে বসানো যাচ্ছে না।হতে পারে মেইন ভিলেন আমি বা তুমি কিংবা অন্যকেউ!
চলবে…………