#তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৪২
-তুমি তো কখনো বলোওনি যে তোমার একটা ভাইও আছে।
-তোমাকে তো আমি এটাও বলিনি আমার ফ্যামিলিতে কে কে আছে, কে নেই। শুধু একদিন তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ফ্যামিলিতে কে কে থাকলে তুমি খুশি হও।
আমার ফ্যামিলিতে তোমার কথা শুধু ভাইয়াই জানতো। ভাইয়া তোমাকে চিনতো, তোমার সম্পর্কীত সব জানতো।
শুরু থেকেই যখন আমি তোমাকে ফলো করতাম,ভাইয়াও আমার সাথে থাকতো তখন, অনেক চেষ্টা করতো তোমার সামনে আমাকে নেয়ার। এমনও হয়েছে গা ধাক্কা ধাক্কিও করেছে আমাকে,তোমার সামনে পাঠানোর জন্য। নিশান যখন তোমায় নিয়ে বের হতো তোমাকে দেখার জন্য আমি একা বের হোতাম না, আমার সাথে ভাইয়াও থাকতো।
ভাইয়া আমার জন্য তোমাকে খুব পছন্দ করতো।আমি তোমার সামনে কড়াকড়ি ভাব নিয়ে থাকলেও ভালোবাসার কথা তোমার সামনে বলতে আমার যেনো কেমন ফিল হতো সেজন্য আমি নিশানের সাথে শেয়ার করতাম,আর নিশানকে দিয়েই প্রস্তাব দেই।তুমি আমার সাথে ফ্রি না হলেও নিশান তো অনেক ফ্রি ছিলো,তাই ওর সাথে ভেতরের কথা শেয়ার করতে পারতাম।
এখন বলবে হয়তো, আমার ফ্যামিলিতে কেনো জানাই নি তোমার কথা। কারণ টা হলো, ভাইয়া। বড় ভাই রেখে তো আমি ছোটো আগে বিয়ে করতে পারবো না, যদি তোমার কথা জানাতাম তাহলে ফ্যামিলি থেকে ভাইয়ার উপর বিয়ের চাপ পড়তো অনেক, শুধু মাত্র আমার কারণে।
ভাইয়া চেয়েছিলো আরেকটা প্রমোশনের পর বিয়ে করবে, ভাইয়া দীপ্তিকে অনেক ভালোবাসতো আর দীপ্তি ভাইয়াকে।
ওদের ভালোবাসা টা কত ইনোসেন্ট দেখেছো?দুজনেই একে অপরকে হারালেও, অন্য কারো হয়নি।
এই একটা কারণেই আমি ফ্যামিলিতে বলিনি,যেনো আমার ছুতোয় ভাইয়ার উপর চাপ সৃষ্টি না করে আমার ফ্যামিলি।
সব কিছুর মাঝে অবাক করা বিষয় কি জানো? আমি যখন প্রথম প্রথম তোমাকে দূর থেকে দেখতাম,তখন কিন্তু আমার সাথে ভাইয়া থাকতো, নিশান তোমাকে নিয়ে বের হতো আমাকে দেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।তখন দেখতাম নিশান আমার দিকে দূর থেকে তাকাতো,ভেবেছিলাম ও আমার সাথে ভাইয়াকেও দেখেছে, কিন্তু আমার পোড়া কপাল,নিশান কেবল আমাকেই খেয়াল করেছে, আমার পাশে ভাইয়াকে কখনো খেয়াল করেনি । যদি খেয়াল করতো, তবে হয়তো পরবর্তীতে আমাকে দেখে ওর মনে প্রশ্ন জাগতো, ঝলকের স্থানে তীব্র কি করে এলো!
আমি যে ঝলক সেটা হয়তো আরো আগেই প্রকাশ হয়ে যেতো তোমার সামনে।
ভাইয়া বেঁচে থাকলে এতোদিনে ভাইয়ার প্রমোশনেও হয়ে যেতো,সঙ্গে আমারও।ভাইয়ার ইচ্ছে ছিলো দুই ভাই আরেক ধাপ সাফল্য নিয়ে,একসাথে এক দিনে ধুমধাম করে বিয়ে করবো।হলো না সেরকমটা!দমকা কালো মেঘ এসে সবটা উলটপালট করে দিলো।
কারো কোনো স্বপ্নই পূরণ হলো না,মাঝপথে সবাই খাদে পড়ে গেলাম।
কি আর বলবো, সব ই নিয়তির খেলা! সেরকমটা হয় নি,যেরকমটা চেয়েছিলাম।সব উল্টো তো হয়েছেই,সঙ্গে ভয়ানকও হয়েছে পরিস্থিতি ।
-জীবনের কিছু কিছু ফল দেখে বুঝে উঠতে পারি না,এটা কোন কর্মের ফল!আমার জীবনের কিছু কিছু মানের হিসেব মিলে না,কি কারণে হলো,কেনো হলো, না হলে কি হতো, হওয়ার পর কি হলো,এরকম হাজার টা প্রশ্ন ঘুরে মাথায়।বাবা মাকে দিয়ে হারানোর হাতেখড়ি হয়,এখনো হারিয়েই যাচ্ছি।
আচ্ছা আংকেল আন্টি কি কখনো আন্দাজ করে না, এটা তীব্র নাকি ঝলক? উনারা তো বাবা মা,উনারা বুঝার কথা তো।
-বাবা শুরু থেকেই সবটা জানে,মা জানে না।
ঝলকের মৃত্যু মা মেনে নিতে পারলেও তীব্রর মৃত্যু মেনে নিতে পারবে না।
কারণ আমাদের তিন ভাই বোনের মধ্যে ভাইয়া ছিলো অতি আদরের একজন ছেলে।অতি আদরের হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।বিয়ের পর নাকি মায়ের বাচ্চা হচ্ছিলো না, অনেক ডক্টর দেখায়, সব ডক্টর রা বলে, মায়ের বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা ১০%আর, না হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ %।
এতে বাবা-মা হতাশ হয়ে পড়ে,তাঁরা বাচ্চার আশা ছেড়ে দেয়,বছরের পর বছর যেতে থাকে, সন্তানহীন জীবন নিয়ে। একসময় হঠাৎ করেই মায়ের মধ্যে বাচ্চা হওয়ার সিম্পটম ফিল করে,যখন জানতে পারে মা অন্তঃসত্ত্বা তখন তাদের জীবনে ঈদের মতো খুশি বিরাজ করে। বাবাও মাকে প্রচুর কেয়ারে রাখতো। দিনের পর দিন মা সময় গুনতে থাকতো কবে তাঁর সন্তান পৃথিবীতে আসবে, তাঁর সন্তানকে নিয়ে হাজারটা স্বপ্ন বুনতে থাকে। নিজেই নিজেকে অনেক কেয়ারে রাখতো, যেনো তাঁর কারণে তাঁর বাচ্চার কোনো ক্ষতি নাহয়।ডক্টর রা যা যা বলতো মা হরফে অক্ষরে পালন করতো।
এতো কেয়ারিংয়ের পর ধৈর্য্য ধারণের পর, ডেলিভারির দিন যখন, বাচ্চা ভূপৃষ্ঠ হতেই ডক্টর রা জানায় বাচ্চা মৃত, হার্ট চলছে না। এর চেয়ে হতাশাময় আর কোনো বাক্য হতে পারে না, একটা দম্পতির কাছে। মা চিৎকার করে করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে আর ঠিক আধ ঘন্টা পর জানতে পারে বাচ্চার হার্টবিট চলছে,সুস্থতার লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে ।
এই খবরে মায়ের দেহে প্রাণ ফিরে আসে।
তুমিই বলো এতো সাধনার ছেলে তাকে অমায়িক আদর ভালোবাসা টা কি অস্বাভাবিক?
ভাইয়াকে এতো এতো ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতো। মায়ের কাছে তখন পৃথিবীর সমস্ত সুখ সৃষ্টিকর্তা তাঁর কোলে দিয়েছে বলে মনে করতো।জীবনে আর কিছু চাওয়ার ছিলো না ভাইয়াকে পাওয়ার পর।তারপর তো তৃপ্তি হলো, আমি হলাম ।
মায়ের ধারণার বাইরে ছিলো ভাইয়ার পর
সে আরো দুই সন্তানের মা হবে।
এমন না, যে মা শুধু ভাইয়াকে নিয়ে পড়ে থাকতো, আমাদের সবাইকেই ভালোবাসতো, আদর করতো।কিন্তু ভাইয়া ছিলো মায়ের অন্যরকম এক ইমোশনের নাম, ভাইয়ার নামটা তো মা ই রেখেছিলো “তীব্র!”কারণ ভাইয়ার নামের মধ্যেই ছিলো ভাইয়ার প্রতি মায়ের তীব্র ভালোবাসা, ভাইয়াকে পাওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে তীব্র শুকরিয়া আদায়,ভাইয়ার আগমনে মায়ের জীবনে আসে তীব্র সুখ!
তৃপ্তি আপির নাম রাখে দীপ্তির মা ,
আমার নামটা রাখে আমার বাবা।
সো, দিন শেষে কথা একটাই, যে ছেলের মৃত্যু সংবাদ একবার শুনে মা ঠিক ছিলো, তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুর কথা মা হজম করতে পারবে না। এখন আমাকে সন্দেহ করার কোনো প্রশ্নই আসে না,আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করি ভাইয়ার ক্যারেকটার টা ভালোমতো প্লে করার।
আর মায়ের মাঝে যেনো ভুল করেও সন্দেহ না আসে সেজন্য মায়ের সাথে কথাও কম বলি, অবশ্য ভাইয়াও খুব একটা কথা বলতো না কারো সাথে, ভাইয়া একরোখা স্বভাবের ই ছিলো, কথা কম বলা, মুড নিয়ে চলা,একটুতেই রেগে উঠা ,ভেতরের কথা অপ্রকাশ রাখা ,স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড ছিলো তাঁর কথার ধরণ ।
যাই হোক মায়ের মনে কখনো সন্দেহ এলেও, সেটা সত্যি প্রমাণের চেষ্টা করবে না। মায়ের ধারণারও বাইরে তাঁর এক ছেলের রূপে আরেক ছেলে বেঁচে আছে।
– তুমি মারা গেছো শোনার পর আমি তখন এতোটা ভেঙে পড়ি যে, কুল-কিনারা কোনো দিশা থাকে না। জানো তো আমি একটু কাঁদিও নি।”তুমি নেই “এই শব্দটা নিজেকে বিশ্বাস করানোটা আমার কাছে ছিলো আত্ম যুদ্ধ। তুমি যদি আমায় ছেড়ে চলে যেতে,আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে, তবে আমি মেনে নিতাম।কিন্তু এভাবে নিরবে ভালোবেসে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া অনুভূতি গুলো মেনে নেয়া কষ্টসাধ্য ছিলো।
কোনো ভাবেই যখন মানিয়ে নিতে না পারি,তখনই আমি এলকোহলের আশ্রয় নিই।রাতের পর রাত এতোটা এলকোহল এডিকটেড হয়ে পড়ি যে, আমি তাল হারিয়ে ফেলি,নিজস্ব হিতাহিত জ্ঞান বুদ্ধির তাল হারিয়ে যাই। তুমি যখন আমাকে বিয়ে করলে জোর করে,আমি ভেবে পাই না কোন ঘোরে সেদিন বিয়ে করেছি । বিয়ের পর পর তুমি মিসিং হয়ে যাওয়ার পর ভাবলাম হয়তো সব কিছু আমার মস্তিষ্কের বিভ্রম ছিলো, বিয়ে টিয়ে কিছু হয়নি। একটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর বুঝলাম,না আমার সত্যিই বিয়ে হয়েছে তীব্র নামের একটা ছেলের সাথে। তবে বিয়ে নিয়ে আমার ভেতরে কোনো শোক আফসোস জাগে নি কখনো, কেনো জানি না!হয়তো আমার আরো ভেঙে পড়ার কথা ছিলো,কিন্তু তা হয়নি।
আমি তো বিয়েটা মানিই নি কখনো, কষ্ট হবে কি করে? তোমার সাথে যখন দেখা হতো আমি সেরকম ভাবে তোমার দিকে তাকাতামই না।আমি যেখানেই থাকি মন থাকে ভবঘুরে। রোজ আমার সাথে কি হয় না হয় সেগুলো নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা হয় না।কারণ একটাই ছিলো,আমার হারানোর ভয় নেই,জীবনের সমস্ত মূল্যবান অংশগুলো হারিয়ে ফেলেছি,হারানোর মতো আর কিছু নেই।আমি নিজের প্রতি ছন্নছাড়া, আমি মরলে কোনো আফসোস নেই, বাঁচলেও দুঃখ নেই। শুধু জীবন কেটে গেলেই হলো একভাবে।তোমার নতুন রূপটার সাথে বহুদিনের পথ চলা হলেও, আমি তোমাকে কখনো পরোখ করে দেখিনি।দেখিনি কারণ, দেখার প্রয়োজন মনেই করিনি, আমার ভেতরে তো কেবল ই ঝলক! তুমি শুধু আমাকে দিয়ে খুন ই করিয়েছো, আর তো কিছু করাওনি। খুনি তো আমার একদিন না একদিন হতেই হতো, এসব ভেবেই নিজেকে বুঝ দিতাম।
তুমি আমার সাথে ভালো ব্যবহার করলেও আলাদা আনন্দ হতো না, খারাপ ব্যবহার করলেও কোনো কষ্ট হতো না, সব ই নরমাল লাগতো।
বড় কথা হলো, নেশা করতে করতে আমার ব্রেইন এমন পর্যায় চলে গেছে,দৈনন্দিন জীবন নিয়ে কোনো ভাবনা নেই আমার, সব কিছু তোমার সেই বুলির মতো লাগে।
“Everything was normal.Everything is normal.Everything will normal.!
জীবনের কাছে হেরে গেছি কিনা! তাই বাক্যটা খুব সহজলভ্য রূপ নেয় আমার কাছে।
-আমি তোমার দিকটা বুঝতে পারতাম মিশান।মাঝে মাঝে আকাঙ্ক্ষা হতো তুমি আমাকে পরোখ করে দেখো, তোমার ঝলকের সাথে সামনে থাকা মানুষটার বৈশিষ্ট্য মেলাও। কিন্তু তুমি যে, অন্য একটা ঘোরে থাকো সব সময় সেটা আমি বুঝতাম। আমার ব্যর্থতা ছিলো আমি তোমাকে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারতাম না। সেজন্য আমি সব সময় তোমার সাথে রহস্য লাগিয়ে কথা বলতাম। নিশান আর দ্বীপের বিয়ের ব্যাপারটা তো তুমি আর আমিই জানতাম,সেটা তীব্র জানলো কি করে এরকম প্রশ্ন তোমার মনে আনার জন্য,আমি তোমাকে সরাসরি বলেও উঠি,তারপরও তোমার মনে নাড়া দেয় না, কিছু একটা ব্যাপার আছে আমার মাঝে। আবার তোমার বাবা মা সম্পর্কীত কথাও বলতে থাকি,তবুও তোমার মনে কিছু আঁচ করে না। এরকম অনেক চেষ্টা করি, তোমায় ক্লু দেয়ার,কিন্তু তুমি পাত্তাই দাও নি।আমার সর্বশেষ চেষ্টা ছিলো লাস্ট যেদিন তোমাকে ইন্ডাইরেক্টলি বুঝালাম,ঝলক এক্সিডেন্টে মারা যায়নি,ওর মার্ডার হয়েছে,তখন হয়তো তোমার ভেতরে নাড়া দিয়েছে সব কিছু।
আমার ধারণা ছিলো তুমি কোন স্টেপে কি করবে। কিন্তু ভয়ও হচ্ছিলো, প্ল্যান মতো তোমাকে সত্যির সম্মুখে আনতে পারবো তা?তুমি কি সবটা বুঝবে নাকি উল্টো ভুল বুঝে দূরে সরে যাবে? আমি খুবই ভয়ে ছিলাম।এখন সে ভয়টা নেই আমার ভেতর।
-একটা সত্যি কথা বলবে ঝলক?
-কি ?
-কুয়েতে মিশনের লিস্টে তো তোমার নামও এসেছিলো,তুমি কেনো ক্যান্সেল করে দিয়েছিলে তোমার নাম?তুমি কেনো গেলে না আমার সাথে?
ঝলক মলিন হেসে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-মিশান!
-বলো।
-আমি জানতাম তোমার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল নিশান।তাই আমি চেষ্টা করতাম তোমার ঠোঁটে হাসি ফুটানোর আগে নিশানকে হাসানোর । নিশান ভালো থাকলেই তুমিও ভালো থাকবে। হয়তো তোমার সমান নয়,তবে তোমার মতোই নিশানকে আমিও ভালোবাসতাম। যখন কুয়েতে মিশনের লিস্টে আমাদের নাম এলো, আমি চিন্তা করলাম।
যদি তুমি আমি দুজনেই কুয়েত যাই তবে এদিকে নিশান একা হয়ে পড়বে, দ্বীপ আর কতক্ষণ সময় দিতে পারে?তোমার অভাব তো নিশানের জীবনে কেউ পূরণ করতে পারবে না। আর ওদিকে কুয়েতে তুমিও অশান্তির মাঝে থাকতে নিশানের কথা ভেবে ভেবে,আলাদা একটা দুশ্চিন্তা থেকে যেতো তোমার,প্রতিনিয়ত তোমার অই রূপ আমি চোখে দেখতে পারতাম না । তাই আমি ঠিক করি, যেহেতু তুমি আমাকে অনেকটা ভরসা করো, বিশ্বাস করো সেহেতু আমার কুয়েত না যাওয়াটাই বেটার।অন্তত নিশানকে সময় দিতে পারবো।দূর থেকে তোমার দুশ্চিন্তাটাকে কমিয়ে রাখতে পারবো।তোমার কুয়েতের মিশনটাও আমি ক্যান্সেল করতে পারতাম কিন্তু করিনি,তার কারণ হলো,নিশানের চিকিৎসার জন্য সেসময় তোমার অনেক টাকার প্রয়োজন ছিলো,তুমি কারো থেকে টাকার সাহায্যও নিতে চাওনি,এমনকি আমার থেকেও না। তাই তোমার কুয়েত যাওয়াটাই বেটার ছিলো।মিশন তো আর মুখের কথা ছিলো না! তবুও সব দিক দিয়ে চিন্তা করে তোমাকেই বারুদের মুখে রাখি,প্রতিনিয়ত আমি ভয় পেতাম তোমাকে হারানোর।
যখন কুয়েত চলে যাও সব সময় চিন্তা হতো মিশান ঠিক আছে কিনা। কি করছে, না করছে।যে কাজ করছে সেখানে সেইফটি আছে কিনা।প্রতি সেকেন্ডে মনে হতো মিশান কোনো বিপদে পড়লো কিনা ।
হাজারটা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতো।
খুব কষ্টে যাচ্ছিলো দিন রাত গুলো।
তোমাকে দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখতে রোজ নিশানকে সময় দিতাম, তোমাকে দেখাতাম নিশান ভালো আছে,তোমার হয়ে আমি নিশানের দায়িত্ব নিয়েছি, নিশানের সমস্ত আবদার মিটিয়েছি ।
কিন্তু অভাগা কপাল,শেষ রক্ষা নিশানকে করতে পারলাম না!
-আফসোস করো না ঝলক। নিশানের মৃত্যুর জন্য আমি যথেষ্ট প্রস্তুত ছিলাম। ওর মৃত্যু নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই।আফসোস শুধু একটাই নিশানের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারিনি,ওর প্রত্যাশিত মৃত্যু হয়নি,হয়েছে অপ্রত্যাশিত মৃত্যু । একটা জঘন্য মৃত্যু হয়েছে! যেখানে আমার বোনের মৃত্যু হওয়ার কথা ছিলো নিরবে,সেখানে হয়েছে চিৎকার আর্তনাদ করে।
দুর্ভাগ্য!
মিশান থেমে গেলো,কিছুক্ষণ নিরব থেকে তীব্রর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আচ্ছা ঝলক তোমাদের সাথে কি এমন হয়েছিলো? যার কারণে তোমার এই অবস্থা! তোমার ভাই চলে গেলো পৃথিবী থেকে,তোমার জীবন বদলে গেলো।তুমি কিসের ট্র্যাপের কথা বললে?
-সে এক লম্বা কাহিনী! আমাদের এই হারানোর গল্পের শুরুটা কোথা থেকে, আমি তার সঠিক সময়সীমা জানিনা । ভাইয়াই ভালো জানে আদ্যঅন্ত। জানো তো,
আমি যতোটা মৃত্যুকে ভয় পাই আমার ভাই ছিলো ততোটাই বেপরোয়া।বিপদ দেখে যেখানে আমি থেমে যাই, আমার ভাই সেই বিপদের কাছে ছুটে যায়।
ভাইয়ার চাল চলন ছিলো ইউনিক! সিনেমাতে যেমন দেখেছি সুপার হিরোদের,বাস্তবে দেখেছি আমার ভাইকে।
যার মাঝে সমস্ত গুণ সৃষ্টিকর্তা ঢেলে দিয়েছিলো।আমার ভাই ছিলো মৃত্যুঞ্জয়ী!
প্রতিটা স্টেপে রিস্ক নিতে দুবার ভাবতো না।
এক কথায় বলা যায়,তীব্র ছিলো, তীব্র গুণ সম্পন্ন!
চলবে……
#তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৪৩
তীব্র কেবল একটা নাম ই নয়, বেপরোয়া গতিতে চলা একটা মানুষ।
কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায় সেটা ভাবতো না। ভাবতো, কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক।
তীব্রর হিসেব ছিলো এরকমটা,
অভাবে স্বভাব নষ্ট হলে, এটা স্বভাবের দোষ নয়,দোষ অভাবের।
যদি অভাবটা পূরণ করে দেয়া হয়, তবে স্বভাব আপনা আপনিই ঠিক হয়ে যাবে।
কেউ খুন করলে,সে প্রকৃত খুনি না। যদি খুনি হওয়ার পেছনের কারণটা হয় তাঁর সাথে কৃত অবিচার।
মানুষ যখন তাঁর কর্ম অনুযায়ী ফল না পায়,ঠকে যায় মানুষের কাছে। তবে সে মানুষটা অপরাধী হলে, সে অপরাধী না।অপরাধী তাঁরাই যারা তাকে অপরাধী নামক কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।
যে চুরি করে সে পেটের দায়ে চুরি করে।কিন্তু যদি চুরি তাঁর পেশা হয়, তবে সে অপরাধী।
যে ভিক্ষা করে সে ইনোসেন্ট নয়,কিংবা ভাগ্যের পরিহাসে সে রাস্তায় নয়,যদি সে কাজের জন্য শক্তিসামর্থ্যবান হয়।
ভিক্ষুককে দেখে তখনি মায়া হবে, যখন সে তাঁর কাজের শক্তি সামর্থ্য হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পায়না।
তীব্রর দৃষ্টি ছিলো এমনটাই।আসামী ধরে তাকে কোর্টে চালান করার আগে নিজ দায়িত্বে খবর নিতো, লোকটার কৃত কাজের কারণ বা উদ্দেশ্য কি।
তীব্রর লিস্টে” বিশ্বাস ” বলে কোনো শব্দ ছিলো না। তবে “আত্মবিশ্বাস ” ছিলো ওর পুরো জীবন জুড়ে।
কাউকে বিশ্বাস করলে তাঁর কাছে ধোঁকা খাওয়া আবশ্যক। তাই তীব্র সবাইকে শুরুতে আসামীর নজরে দেখতো।
নিজের কাজ নিজ দায়িত্বে করে এগিয়ে থাকতো। মৃত্যু মৃত্যু যোদ্ধ খেলাটা ছিলো তীব্রর বদ অভ্যেস কিংবা বলা যায় শখের বিষয়।
প্রতিটা স্টেপে রিস্ক নিতে আলাদা আনন্দ পেতো, নিজের কাজে কোনো সহযোগীর প্রয়োজন পড়তো না।
ছোটো বেলা থেকেই তীব্র একটু অন্য রকম, কারো সাথে তেমন মিশতো না, কথাও খুব হিসেব করে বলতো। তীব্রর পর তৃপ্তির জন্ম এরপর ঝলক। বোন হওয়াতে তেমন খুশি না হলেও ঝলক হওয়ার পর তীব্র বেশ খুশি হয়েছিলো। সব সময় চাইতো ওর একটা ভাই হোক।ঝলককে সব সময় ই ভালোবেসে আগলে রেখেছে।ঝলকও ছিলো ভাই ভক্ত, ভাইয়ের ক্যারেকটার তাঁর কাছে ফিল্মের হিরোদেরও হার মানাতো।
এই যে তীব্রর ঘরটাতে একটা পাখিও প্রবেশ নিষেধ, সেখানে ঝলকের অবাধ আসা যাওয়া হতো বিনা অনুমতিতে।একমাত্র ঝলকেরই পারমিশনের প্রয়োজন হতো না, এই ঘরে ঢুকতে। দুজনে দু ডিপার্টমেন্টের হলেও ওদের মূল উদ্দেশ্য, দেশে শান্তি বিরাজ করা ।
তীব্রর কাজ গুলো দেখা ,সেসব সম্পর্কীত তীব্রর থেকে জানা,এটা সেটা ঘেঁটে দেখা, এগুলোই করতো ঝলক। তীব্রর সবার কাছে রহস্যের ডালি হলেও ঝলকের কাছে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর ছিলো,ঝলক আগ্রহ করে যখন যা জিজ্ঞেস করতো তার উত্তর দিতে দু সেকেন্ড সময় নিতো না তীব্র।
ঝলকের দৃষ্টিতে তীব্র যেমনটা হিরো, তারচেয়ে দ্বিগুণ হারে সুপার হিরো ছিলো তীব্রর ডিপার্টমেন্টের কাছে।
এসবির প্রত্যেক সিনিয়র তীব্রকে বাড়িয়ে সম্মান করতো। কারণ একটাই, তীব্রর কাজের ধরণ দেখে।একটা মিশন হাতে নিলে সেটার সাফল্য আনতে এক রাতের বেশি সময় তীব্র নিতো না। তীব্র নিজের পজিশন নিয়ে কখনো এটিটিউড দেখাতো না। সব সময় কাজের ধ্যানে পড়ে থাকতো। তীব্রর কাজ দেখে কেউ হিংসা প্রকাশ করলে,তীব্র তাকে ইন্ডাইরেক্টলি তেঁতো কথা শুনিয়ে থামিয়ে দিতো। তীব্রর মাঝে রাগের পরিমাণ তীব্রতর হলেও, সেই রাগ সঠিক জায়গায় খাটানোটাও ছিলো তীব্রর বিশেষ গুণ।
কয়েক বছর আগে তীব্রর পোস্টিং দেয়া হয় র্যাবে।
স্বনামধন্যের সাথে কাজ করে যাচ্ছিলো প্রতিনিয়ত।
সেখানেও নিজের কাজের প্রতি যথেষ্ট রেসপন্সেবল ছিলো।
দেশের বাইরে থেকে পাচারকৃত মাদক,অস্ত্র দেশে প্রবেশ করা, দেশের অভ্যন্তরীণ মূল্যবান সম্পদ অন্য দেশে পাচার করা এগুলোর বিরুদ্ধে কড়া স্টেপ নেয়া হয়, একে একে বাংলাদেশের চারপাশের বর্ডার ক্রস করে এগুলো ঢুকার রাস্তা অফ করে দেয়া হয়।
আসামীদের ধরে হাজতে ঢুকানো হয়।গর্তের সাপ বের করতে রিম্যান্ডে ঢুকিয়ে মারধোর করে জবান বের করতো । আসামী পেটানোতে তীব্র বেশ এক্সপার্ট ছিলো।
বেশি মারতে হতো না , বেকায়দা এংগেলে লাঠি দিয়ে দুটো বাড়ি মারলেই আসামী চিৎকার দিয়ে দিয়ে সব বলে দিতো।
এসবের পাশাপাশি কিছু এমপি মন্ত্রির শালা সহ বেশ কিছু পাতিহাঁসের গোপন কুকীর্তি-অপকর্ম গুলোর তথ্য জমা করে তাদের খাদে ফেলতে থাকে।অবৈধভাবে বাজেট দেখিয়ে বছরের পর বছর টাকা গিলে শুয়ে বসে ভুঁড়ি বাড়ানো লোক গুলোর পেটে পা ফেলে চাপ মারে।
তীব্র জানতো এরা অনেক পাওয়ারফুল। একজনকে বাঁচানোর জন্য আরেকজন এগিয়ে আসে।
তাই তীব্রও সময় নিয়ে পাকাপোক্ত ভাবে খেলার মাঠে নেমে তাদের নিরাশ করে, যেনো কোনো ভাবে কোনো তথ্যকে ভূল প্রমাণের চেষ্টা না চালাতে পারে।
পলিটিশিয়ানদের উপর নজর দেয়ার মেইন কারণ, বড় বড় ক্রিমিনালদের সাথে এদের লিংক সব চেয়ে ভালো। এরা একে অপরের প্রয়োজনে সাফল্য ধরে রাখে।কান টানলে যেমন মাথা আসে,এদের খাদে ফেললে তাদের সহযোগীদের চিহ্নিত করা যাবে।
ডিপার্টমেন্টের কয়েকটা ঘুষখোর চামচাকেও সাসপেন্ড করে দেয়।
সব দিক দিয়ে বড় বড় দান মেরে তীব্র লাফিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো। যেখানে কেউ ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে এগিয়ে আসার সাহস পেতো না, সেখানে তীব্র সিনিয়রদের থেকে গোপনে পারমিশন নিয়ে সুপার হিরোর মতো ঝাঁপিয়ে পড়তো।
ছোটোখাটো একটা দুর্ঘটনায় তীব্রর হাতে একটু কেটে যায়,কিন্তু অনেক ব্লিডিং হতে থাকে।
গাড়িতে ফার্স্ট এইড বক্সে ব্যান্ডেজও ফুরিয়ে যায়,সেজন্য আশেপাশে ওষুধের ডিসপেনসারি খুঁজতে থাকে।সামনে আরেকটু এগিয়ে একটা ডিসপেনসারি পায়।
তীব্র সেখানে গিয়ে দোকানদারের কাছে ব্যান্ডেজ চায়, দোকানের সামনেই দাঁড়িয়ে স্যাভলন দিয়ে ক্লিন করে ব্যান্ডেজ করতে থাকে। এমন সময় একটা তরুণ ছেলে রোগাটে ধরণের, গুঁজো হয়ে পাশে দাঁড়ায় ,তীব্র আড়চোখে ছেলেটাকে পর্যবেক্ষণ করে। ছেলেটার চোখ দুটো ভাসা ভাসা লাল, ঠোঁট তা কালচে পড়া,পেটের চামড়া যেনো পিঠের সাথে লেগে গেছে। পকেট থেকে একটা প্রেসক্রিপশন বের করে দোকানদারকে দেয়,তীব্র কি মনে করে যেনো প্রেসক্রিপশনটার দিকে তাকায়। দোকানদার প্রেসক্রিপশন টা দেখে একটা ড্রয়ার থেকে কি যেনো বের করে প্যাকেট করে ছেলেটার হাতে দেয়,ছেলেটা একটা হাজার টাকার নোট,আরেকটা পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে চলে গেল। তীব্র পুরো ঘটনাটা আদ্য অন্ত পর্যবেক্ষণ করছিলো।
ওর বিল পরিশোধ করে দোকান থেকে তীব্র চলে যায়,কিছু একটা ভাবতে ভাবতে।
গাড়িতে বসে তীব্র হিসেব মিলাতে থাকে, ছেলেটাকে দেখে রেগুলার নেশা করে এমন দেখা যাচ্ছিলো।যে প্রেসক্রিপশন দিচ্ছিলো লোকটাকে, সেটা কোনো প্রেসক্রিপশনই না। শুধু একটা ক্যাশ মেমোর মতো কাগজে বড় করে,( B.5)^3 লিখা।
এটা কোনো ওষুধের নাম না। বড় কথা ওটা কোনো ডাক্তারি প্রেসক্রিপশনও না। দোকানের লোকটাকেও দেখা গেলো কনফিডেন্টের সাথে হাতের আড়ালে ড্রয়ার থেকে কিছু একটা বের করলো।
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে তীব্র হিসেব মেলালো, B দ্বারা ইয়াবাকে বুঝানো হয়েছে,কারণ ইয়াবাকে “বাবা” বলা হয়।
.5 দ্বারা বুঝানো হয়েছে ৫০০ টাকা দামের ইয়াবা, 3 দ্বারা তিন পিচ।
যার জন্য এর দাম দাঁড়িয়েছে ১৫,০০ টাকা।
-ওষুধের ডিসপেনসারিতে ইয়াবার ব্যবসা!কোথায় এর উৎস?
কোনো ওষুধের কোম্পানি? নাকি এর পেছনে অন্য কিছু?
তীব্র পরের দিন আব্দুর রহমানকে নিয়ে অই জায়গাটা থেকে একটু দূরে দাঁড়ায়।
অই ছেলেটার হাতের কাগজটার মতো কাগজে তীব্র লিখলো,
(B.5)^2,
(B.10)^2
লিখা শেষে, তীব্র কাগজটা রহমানের হাতে দিয়ে ওখানে পাঠায়,রহমান দোকানে গিয়ে কাগজটা বাড়িয়ে দিতেই দোকানদার কাগজটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে, আব্দুর রহমানের দিকে সন্দেহ দৃষ্টি নিয়ে তাকায়।
-ভাই কি এলাকায় নতুন নাকি?
-এলাকায় নতুন না,তবে আপনার দোকানে নতুন কাস্টমার।
-খোঁজ কেমনে পাইলেন?
-এই গুলা জিনিসের আবার খোঁজ লাগে নাকি? একজন খাইলে দশজনের পথ বাইর হয়।
-তা ঠিক।
-বাংলাদেশে আসার পর পাওয়া খুব মুশকিল হইয়া গেছে, দুনিয়ার চিপাচাপা দিয়া দাঁড়াইয়া থাকা লাগে।সামান্য একটা জিনিসের জন্য কোন গলি থিকা কোন গলি দৌড় পারা লাগে। এক ছোটো ভাই কইলো আপনার এইখানেই অ্যাবলএবল , তাই আর কষ্ট কিসের?আইসা পড়লাম।দেশে যতোদিন আছি আমি মনে করেন আপনার রেগুলার কাস্টমার ভাই।
-কার কাছে পাইলেন খোঁজ?
-নাম বললে চাকরী থাকবো না ভাই,দেয়ালেরও কান আছে।
দোকানদার হেসে হেসে বললো,
-ঠিক আছে নিয়া যান।আরো কিছু লাগলে বইলেন,চেষ্টা করি সব কালেকশন ই রাখার।এইগুলা তো পোলাপাইনা জিনিস,খাইলে ভালো ভালোই খাইবেন।
-আমি আবার ভাই গাঁজা বাদ দিয়া সব ই খাই।গাঁজা খাইলে মুখ গন্ধ হইয়া থাকে, গন্ধে আমার কষ্ট না হইলেও আশেপাশের মানুষ ভূগে।
-বুঝছি ভাই,তাও লাগলে নিয়েন।
-কালেকশন কি কি আছে সেইটার লিস্ট একটা দিয়েন,পাশে দামও।তাই বুইঝা টাকা পয়সা নিয়া বাইর হমু।
-দিতাছি ভাই, দাঁড়ান একটু।
দোকানদার আনায়েসে সব কিছু লিখে দেয় কাগজটাতে, যা যা পাওয়া যায়।রহমান গোড়া খবর জানার চেষ্টা করলো না,এতে সন্দেহ করতে পারে লোকটা,ওর দায়িত্ব যতোটুকু ততোটুকু করেই বিদায় নিলো দোকান থেকে।
তীব্রকে লিস্ট দিতেই তীব্র পুরোটা দেখলো।
এরপর প্ল্যান করে রহমানকে রোজ পাঠাতো দোকানে মাদক কেনার জন্য,রহমাম একেক দিন একেকটা কিনে আনতো আর তীব্রকে দিতো।দোকানদারের সাথে কথায় কথায় জানতে পারে তাঁর কাছে প্রোডাক্ট মাসের শুরুর দিকে আসে।
এতে তীব্র মাসের শুরুতে তাকে তাকে থাকে দোকানটার।
একদিন দেখে একটা ওষুধের কোম্পানির গাড়ি আসে, আর সেই গাড়ির ভেতরে দেখা যায় ওষুধের বক্স, সেখান থেকে কয়েকটা বক্স দোকানে দিয়ে আবার আরেক দোকানের উদ্দেশ্যে যায়।তীব্রর মনে সন্দেহ আসায়, সেখান থেকেই গাড়িটাকে ফলো করতে থাকে।গাড়িটা নিয়ে আরো বেশ কয়েকটা ডিসপেনসারিতে সাপ্লাই দিয়ে, এরপর যায় কসমিটিক্স এর দোকানে,মোদির দোকানে, এরকম বেশ কিছু দোকানে দিয়ে আসে,যেসব দোকানকে কেউ ভুল করেও সন্দেহ করবে না এসব জায়গায় মাদক বিক্রি হয়।
আবার হাইওয়ের মাঝ রাস্তায় লোক দাঁড়িয়ে থাকতো, তাদের হাতেও বক্স ধরিয়ে দেয়।গাড়ির ভেতর খালি হওয়ার পর গাড়িটা কোনো ওষুধ কোম্পানির কারখানায় না গিয়ে, একটা ডেরায় ঢুকালো।
তীব্রর বুঝার আর বাকি থাকে না, এরকম গাড়ি দিয়েই সেবা পৌঁছে দিচ্ছে দেশ দেশান্তরে।
এরপর নেক্সট ধাপে দেখে এই গাড়িতে মাল ভরা হয় কোথা থেকে।তীব্র স্বয়ং নিজে, তাকে তাকে থেকে দেখে গাড়িটা অই ডেরা থেকে আরেক টা ডেরায় রাখা হয় । সেখান থেকে বক্স গুলো দিয়ে গাড়ি সাজানো হয়।
সেখান থেকে তীব্র আবার পর্যবেক্ষণ করে অইখানে মাল গুলো আসে কিভাবে, মাঝ রাতে বড় বড় গাড়ি এসে গোডাউনে বক্স দিয়ে পূর্ণ করে,সকাল হলেই মাল সাপ্লাই দিয়ে গোডাউন খালি।
মাঝ রাতে আসা গাড়ি গুলোকে ফলো করে দেখে গাড়ি গুলো বহুদূর যায়, কক্স বাজারের প্রান্ত এলাকায় গিয়ে অপেক্ষা করে, সেখান থেকেই মাল গুলো ভরা হয়।
জানা যায়, এখান থেকে শুধু ইয়াবা সাপ্লাই হয়, আর ইয়াবা গুলো মায়ানমার দিয়ে আসে।
তীব্র আস্তে আস্তে তথ্য এক করে, টিম বানাতে থাকে।
জাফর হাসান, যার নাম আগেও শোনা হয়েছে।জাফরের জীবনী টা তুলে ধরা হয়েছে এর আগে একবার।
জাফরের টাকার মতো ওর পাওয়ার আকাশছোঁয়া।
বড় বড় লোকের সাথে উঠা বসা বলে ওকে ধরাটা সহজ কোনো বিষয় না।
রাজনীতিকেও নিজের কাজে ব্যবহার করে রোজ কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলছে শহরে।
রংবাজি,বোমাবাজি, অবৈধ অস্ত্র নিয়ে খেলা। বিভিন্ন লিংক সূত্রে দেশে প্রবেশের অকল্পনীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে মাদক দ্রব্য বিশেষ করে ড্রাগস , ইয়াবা, কোকেন, হেরোইন, এল এস ডি,ম্যানডেক্স,বারবিচুয়েট।
এগুলো প্রবেশ করিয়ে, তরুণ সমাজকে অনায়েশে ধসিয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
অথচ সবাইকে দেখায় বিদেশে ওর বিশাল ব্যবসা আছে,সেটাই মূলত ওর আয়ের উৎস।
জাফরের এই চক্রে বাঙালীদের মধ্যে আরো তিনজন শেয়ারে ছিলো।
অভিজিৎ, যে কাতারে থাকতো,কোকেন হেরোইন,ম্যানডেক্স, বারবিচুয়েট, এল এস ডি এগুলো পাচারের দায়িত্বে থাকে।যে মাদক দেশে পাঠায়,বিভিন্ন দেশ ঘুরিয়ে যেনো ধরা না খায় কোনো ভাবে ।
আরেকজন এক বিরাট মাপের পলিটিশিয়ানের ভাই, কাদের মোল্লা।
কাদের মোল্লা তাঁর পলিটিকাল সাপোর্ট দিয়ে ওদের ঢাল হয়ে থাকতো ।
মুনায়েম হক, যে লোকের সামনে তাঁর আয়ের উৎস শো করে, তাঁর বিশাল গরুর ফার্ম দেখিয়ে।
মুনায়েম,সাধারণত দুধের প্যাকেটের নামে ড্রাগসের প্যাকেট সরাবরাহ করতো গরুর দুধের ভেতর।
কালো বাজারে কালো ব্যবসায় ফুলে ফেঁপে উঠছিলো কালো টাকার পাহাড়,যা দেশে না রেখে দেশের বাইরে সুইচ ব্যাংকে রাখতো।
এই বদ মানুষ গুলো সমাজের দশজন সুশীল মামুষের সাথে মিশে তাদের কাজ করে যেতো,যার কারণে ওদের ধরা টা কোনো মুখের কথা নয় ।ওরা সমাজের সেই সব সম্মানীয় সুশীল প্রভাবশালী শ্রেণীর পর্যায়ে থাকতো বলে ওদের নাশ করার চিন্তা কেবলই এক রূপকথার গল্পের মতো, কল্পনাতেই সম্ভব!
ওদের রাস্তা একদিকে বন্ধ করলে, আরো দশটা অপশনাল রাস্তা থাকেই ওদের হাতে।
তাই যা করার ওদের গোড়া থেকে বিনাশ করতে হবে।
গোড়া থেকে বিনাশ মানে,সমস্ত প্রমাণ হাতের মুঠোয় রেখে ওদের দিকে গান পয়েন্ট করতে হবে। প্রমাণ ছাড়া আইন কোনো কিছুই সমর্থন করে না।
সত্যিটা সবাই জেনেও কিছু করতে পারবে না, যদি প্রমাণ না পায়।
জাফরের এই গ্যাংয়ে এমন সব কর্মী রাখা হয় যাদের সর্বোচ্চ কঠিন মৃত্যু দিলেও সত্যিটা বলবে না।
মায়ানমার হতে কক্সবাজার দিয়ে প্রবেশ করানো ইয়াবার চক্রটা দিয়েই শুরু করে জাফরের কালো ব্যবসায় জাল ফেলা।
জাফরের ব্যবসায় এমন ছোবল দেয়ার কারণে, প্রচন্ড খেপে যায় জাফর।
কিন্তু তীব্রর ব্যাপারে জানার পর থেমে যায়। নেগেটিভ কোনো স্টেপ না নিয়ে তীব্রর সাথে দেখা করতে চায়। বার বার অফার করে তীব্রকে, জাফরের সাথে মিট করার জন্য।
তীব্র সহজেই ধরা দেয় না,ডেট দিয়ে দিয়ে অনেক করে ঘুরায় জাফরকে।
মাদকের চক্রগুলো বেশ কয়েকটা ভালো মতো ধরে তাঁদের আটক করলেও, থেকে যায় এরকম হাজার হাজার চক্র।রোজ একটা করে ধরলেও ৩৬৫ দিনেও ফুরাবে না এদের চক্র।
তীব্র তবুও হাল ছাড়েনা। প্রতিরাতে ওর মিশন দুটো থাকে, এই লিংক গুলো কাট করা, আর ওদের গট ফাদারদের কুকর্মের প্রমাণ খুঁজা।রিস্ক হলেও কাজ গুলো কোনো টিম নিয়ে করতো না, নিজে নিজেই করতো। কারণ মানুষ সাথে থাকলেই, পেছন থেকে ছুরি মারার লোকের অভাব হবে না।
প্রায় রাতের শেষের অংশে তীব্র বাড়ি ফিরছিলো, পাশেই ছিলো এক বডিগার্ড নাম বাবলু,আর ড্রাইভিং সিটে আব্দুর রহমান। এমন সময় বেশ কয়েকটা গাড়ি এসে ওর গাড়িকে ঘেরাও করে নেয়।
চারপাশের ঘেরাও করা গাড়ি গুলোর হেড লাইট জ্বলার কারণে, সামনের দিকে কিছু দেখতে পাচ্ছে না।
তীব্র বুঝতে পারে এটা বাংলার জাফর ই হবে, কারণ ইতিহাসে শুনেছে জাফর এভাবেই এন্ট্রি নেয় হুট করে, এছাড়াও বেশ কয়েকদিন ধরে জাফর তীব্রর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
বাবলু আর রহমানকে গাড়িতে রেখে নিজে বেরিয়ে পড়ে তীব্র।
সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে, তীব্র নিজের গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই
জাফর নিজের গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। জাফরের লোক পুরো রোড ব্লক করে রাখে।
কয়জন লোক এসে রাস্তার মাঝখানে দুটো চেয়ার আর একটা টেবিল রাখে, জাফর সেখানে একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তোলে বসে,আর তীব্রকে সেখানে বসতে বলে।
তীব্রও পায়ের উপর পা তোলে বসে, হাতের সিগারেট টা শেষ হওয়াই সেটা ফেলে দিয়ে পকেটে হাত দেয়,হাত দিয়ে দেখে সিগারেট বক্সে আর কোনো সিগারেট নেই। বক্সটাও ছুঁড়ে ফেলে দেয়। জাফর এতোক্ষণ ধরে তীব্রর দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিলো।
জাফর নিজের পকেট থেকে সিগারেট বের করে তীব্রর দিকে ধরে বললো,
-আমার সাথে মানুষ দেখা করার জন্য বছর ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে, তবুও আমার দর্শন পায় না। আর তুমি এমন একটা লোক যাকে আমি স্বয়ং অফার করেছি স্পেশাল মিট করার জন্য,তুমি পাত্তাই দাও না। কিছু মনে নিও না,তুমি করে বললাম বলে। তুমি আমার ছেলের বয়সী একটা ছেলে।
তীব্র বাঁকা হাসি দিয়ে জাফরের হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে টেবিলের উপর জাফরের সামনেই রেখে দিয়ে বলে।
-নুন, এমন একটা জিনিস। যার টা খাওয়া হয়,তাঁর গুণ গায়তে হয়।
তাই দুঃখিত, না খেয়ে মরবো কিন্তু আপনার এই জিনিসটা আমি নিতে পারবো না।
-তোমার বর্ণনার সাথে কথার ধরণের খুব মিল আছে। মূলত তোমার বর্ণনা শুনেই তোমাকে দেখতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগে মনে। খুব ভালো লাগলো তোমার দর্শন পেয়ে।
-আমারও ভালো লাগছে খুব।নিজেকে সুপারস্টার মনে হচ্ছে,আর আপনাকে আমার ফ্যান। যে আমাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে মাঝরাতে আমার পথ আটকে রাস্তার মাঝে এতো সুন্দর ব্যবস্থা করে রেখেছে।তবে ধারণা ছিলো এরকম কিছু হতে পারে,তাই একটুও অবাক হইনি এমন কর্মকান্ডে।
জাফর বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
-দেখো তীব্র, কাজের কথায় আসি।সময় তোমারও কম,আমারও কম।
-যদিও আপনার সাথে আমার কাজের কোনো সম্পর্ক নেই।তবে আপনার কাজ থাকতেই পারে,বলুন শুনি।
-তুমি একজন এসপি। একজন এসপি কেনো এভাবে ছুটাছুটি অভিজান করবে?তুমি পায়ের উপর পা তুলে শুধু আঙুল দিয়ে ইশারা করবে তোমার কি কি লাগবে।লাইফ সেট তোমার, কেনো এভাবে সাপের লেজে পা দিয়ে বীণ বাজাচ্ছো?
-আমি নিম্নবিত্ত এক মানুষ, চাহিদাও কম।
খেটে খেতেই ভালোবাসি বলে, চেয়ারে বসে টেবিলে পা তুলি না।জীবন যেমন চলছে,বিন্দাস আছি!
জাফর তীব্রর দিকে মাথা বাড়িয়ে বললো,
-চাহিদার জগতে একবার প্রবেশ করেই দেখো, চাওয়ার শেষ রবে না। যতো চাইবে, ততোই পাইবে। পাওয়ারও কোনো কমতি হবে না। মুখ ফুটে শুধু বলো কি কি লাগবে তোমার, সোনা দিয়ে তাজমহল করে দেবো।
-সামান্য এসপি আমি,তাই এতো বড় অফার!যদি আরো বড় পোস্টে থাকতাম, তাহলে কি হতো? হীরে দিয়ে তাজমহল করে দিতেন? ইশসস্ বড্ড আফসোস হচ্ছে। লস খেয়ে গেলাম!
-তুমি চাইলে তাই ই দেবো,আফসোসের কি হলো?
-নাহ আফসোস হচ্ছে তবুও।
এক কাজ করি, আমার আরেকটা পদন্নোতি হোক তখন আপনার অফারটা আমি একসেপ্ট করছি।
-তীব্র তুমি মজা নিচ্ছো, আমি বুঝতে পারছি।
-আপনি ভুল বুঝছেন, আমি মজা কেনো নেবো? আমি তো বাস্তব মিশ্রিত কথা বললাম।
জাফর থমথমে গলায় বললো,
-দেখো তীব্র তুমি যা শুরু করেছো তাতে আমার বিজনেসে লস খাওয়াতে পারবে কিন্তু উচ্ছেদ নয়!
-ছোটো ছোটো বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল।
গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল।
-তোমার চাকরীটা যেমন সরকারী, আমাদের বিজনেস টা তেমন সরকারী। তোমার ধারণার বাইরে আমাদের ব্যাকাপে সরকারী সাপোর্ট কতটা।সেখানে তুমি সামান্য একটা পুলিশ অফিসার হয়ে কি করবে বলোতো আমাকে? কতো পুলিশ এলো গেলো, তোমার মতো, তোমার থেকেও হিংস্র। দিন শেষে গেছে তাদের প্রাণ একদম নিরবে! তোমার এটিটিউট আমার খুব মনে ধরেছে তাই তোমাকে নিজের সাথে শামিল করতে চেয়েছিলাম। লাভ তোমারও আমারও।ভেবে দেখো।
তীব্র এতোদিন ভেবেছিলো জাফর এই কালো ব্যবসায় একা। কিন্তু জাফরের মুখে বার বার “আমাদের” শব্দ উচ্চারণ শুনে মাথায় প্রশ্ন ঘুরতে লাগলো,এই খেলা জাফর একা খেলে না, ওর দলে আরো খেলোয়াড় আছে। তাঁরা কে,সেটাই জানতে হবে।
তীব্র ডেভিল স্মাইল দিয়ে বললো,
-আপনার অস্ত্র গুলোর কালেকশন গুলো অনেক ভালো আছে।
-তুমি চাইলে রাশিয়ান কালেকশন সব তোমার নামে।
-জ্বি আমি ভেবে দেখবো।তাহলে আজ উঠি?
-কথা এখানেই শেষে হয় নি তীব্র।
-জ্বি বলুন।
-কি ভাববে না ভাববে সেটা তোমার ব্যাপার।
তবে একটা কথা জেনে রাখো,প্রমাণ ছাড়া সব কিছু অঁচল।তোমার মতো মাত্র একজন পুলিশ অফিসার আমার বিজনেসে লস খাওয়াতে পারলেও, গোড়া থেকে উচ্ছেদ করতে পারবে না। তাঁর জন্য তোমাকে আমার সামনে দাঁড়াতে হবে, আমাকে জানতে হবে,প্রমাণ কালেক্ট করতে হবে, সেসব প্রমাণ দিয়েই তুমি আমার সাথে টক্কর নিতে পারবে।কিন্তু তোমার দুর্ভাগ্য, এটা কোনোদিনই তুমি পারবে না,হয়তো তোমার চাকরির বয়স শেষ হবে, নয়তো তুমিই শেষ হবে।স্বয়ং তোমাদের ডিপার্টমেন্ট এমন একটা পর্যায়ে বিলং করে।চোরকে বলে চুরি করো, গৃহস্থকে বলে ধরো ধরো। তোমাকে তাঁরা সাপোর্ট পারমিশন দিলেও,সাহায্য কিন্তু আমাকেই করছে!
তীব্র বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
-ধন্যবাদ! এতো গুলো ইনফরমেশন দেয়ার জন্য।
আপনার পাওয়ার, প্রোপার্টি, মানি, সব থাকলেও একটা জিনিসের বড্ড অভাব।সেটা হলো নলেজ!
উঠি এখন, আল্লাহ হাফেজ!
তীব্র উঠে দাঁড়ালো,
-তুমি আমাকে অপমান করলে? জানো তো আমি স্কলারশীপ নিয়ে লেখাপড়া করেছি?২০ বছর বয়সে কোটি কোটি টাকার মালিক ছিলাম,আর এখন আমি বিলিয়নার,খুব শীঘ্রই ট্রিলিয়নে চলে যাবো।
টিটকারি হাসি দিয়ে তীব্র বললো,
-এতো টাকা পয়সা দিয়ে কি হবে? সেই তো সব টাকা পাবে আপনার প্রাক্তনের ছেলে। ওহ সরি আপনার ওয়াইফের এক্স হাজবেন্ডের ছেলে!
কথাটা শুনে জাফরের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো।তীব্রর দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকালো।
-তোমার কি মনে হয় না,এই মুহুর্তে তোমাকে মেরে এই রাস্তার পিচের সাথে মিশিয়ে দিলেও একটা কাক পক্ষীও টের পাবে না?
-জানি,কিন্তু আপনি সেটা পারবেন না।কেনো পারবেন না সেটা ভালো করেই জানেন।
চলবে…………