তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি পর্ব ২৬

0
354

#তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_২৬
র‍্যাপিং পেপার আলাদা করে বক্সটা বের করে খুলে দেখলো ভেতরে।
ভেতরের জিনিসটা দেখে চোখ জ্বলজ্বল করছে মিশানের, তীব্রকে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বললো,
-থ্যাংক ইউ স্যার!আমি আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না জিনিস টা দিয়ে কত্ত বড় উপকার করলেন, আপনার এই ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারবো না।আমি আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো।
তীব্র গম্ভীর মেজাজ দেখিয়ে বললো,
-এএএহ ওভার এক্টিং বাদ দে।
-ওভার এক্টিং আমি করলে আপনিও করছেন।
তীব্র চোখ গরম করে তাকালো,
-তেজ দেখাবেন না স্যার,বিষয়টা আমি ক্লিয়ার করছি,আপনার প্রেজেন্টেশন যেরকম আমার রিয়্যাকশনও তেমন।
সামান্য কটা বুলেট একটা সুন্দর বক্সে এনেছেন ভালো কথা, এটা র‍্যাপিং করার কোনো মানে হয়?
-র‍্যাপিং করার যথেষ্ট উদ্দেশ্য আছে, তুমি বুলেট যেভাবে শেষ করো তাতে মনে হয় রেশনের ডাল ভাত।বুলেট গুলো যে আমার বেতন আর ঘুষের টাকা সব মিলিয়ে কিনতে হয় সেটা বুঝানোর জন্যই র‍্যাপিং করা হয়েছে। হাওয়াই গা ভাসিয়ে খাও তো বুঝো না টাকা কামাই করা কত ধার।১৫ টা বুলেট যেনো অন্তত পক্ষে দুটো মাস যায়, আগামী দু মাসে আমি এর দায়িত্ব নিয়ে পারবো না, ফুরিয়ে গেলে নিজে নিজে কিনে নিও।

-এসপিদের আবার টাকার অভাব হয় কি করে?টাকায় পকেট ভরা ছাড়া এদের আর কি কোনো কাজ আছে নাকি! শুধু পেট ভাসিয়ে বসে থাকবে চেয়ারে আর বড় বড় ডিল সাইন করবে,ওদিকে ক্রেডিট কার্ড, এটিএম কার্ড, ডেবিট কার্ড যা যা আছে সব ফুলে ফুলে উঠবে।

মিশানের কথায় তীব্র ক্ষিপ্ত না হয়ে লম্বা হতাশাময় শ্বাস ছেড়ে বললো,
-নারেহ মিশান, আজকে আর ঝগড়া করবো না।ঝগড়ার মুড নেই আজ।
-মরণ ব্যাধি ধরেছে নাকি?শুনেছি মৃত্যুর আগে মানুষ ভালো হয়ে যায়। আপনার কথার মধ্যে ভালো ভালো আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
-হ্যাঁ ওরকম ই।
মিশান ইয়ার্কির ছলে বললো,
-দোয়া করি, পরকালে আপনার প্রাপ্য শাস্তিগুলো পান।
-কাল তোমার মামা মামির থেকে পারমিশন নিয়ে বের হতে পারবে? দু চারদিনের জন্য?
-একটা জায়গায় যাবো।বাসায় ম্যানেজ করে বিকেল চারটার আগে এয়ারপোর্টে এসে পড়ো। রহমান টিকিট দিয়ে দেবে,সোজা প্লেনে গিয়ে বসে থাকবে।সো প্লেনের ভেতরে আমাদের দেখা হচ্ছে।
-কোথায় যাবো?
তীব্র রহস্যমাখা হাসি দিয়ে, মিশানের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো।
-পাকিস্তান।
-পাকিস্তান কেনো?
-তোমার মা বাবাকে খুঁজতে।
মিশান চোখ কুঁচকে বললো,
-কে আপনি সত্যি করে বলুন তো?
-মানুষ। আরেকটা পরিচয় আছে বলবো?
-কি?
-তোমার জামাই!
কথাটা বলেই তীব্র কিটকিটে হাসি দিলো।

মিশান নাক ফুলিয়ে দাঁত চেপে বললো,
-পিস্তলটা সাথে আনি নি, নাহলে এই বুলেট সবগুলো আপনার পেটে ঢুকিয়ে দিতাম।
-আচ্ছা আনো নি যখন আফসোস করে প্যারা নিও না।
বাড়ি চলে যাও ,কাল সময় মত এসে পড়ো।
-আমি যাবো না কোথাও।
তীব্র কড়া স্বরে বললো,
-আমি অপেক্ষা করতে পারবো না, প্লেনে উঠে যেনো দেখতে পাই।
-………………
তীব্র গাড়ি থেকে নেমে শরীর মুচড়ে দাঁড়িয়ে বললো,
-যাও বাড়ি যাও।এগিয়ে দিয়ে আসবো?
-নাহ দরকার নেই, বাড়ি যাবো না এখন হাঁটবো।

তীব্র মিশানের দিকে তাকিয়ে রইলো,মিশানকে একটু রুগ্ন দেখাচ্ছে,
মিশানের কপালে তীব্রর হাত চেপে ধরলো।,তীব্রর হাত ঠান্ডা ছিলো বলে মিশান একটু কাঁপুনি দিয়ে উঠে।
-জ্বর খুব একটা আসে নি, এটাকে জ্বর বলে না কেউ, কিন্তু তোমার চোখ দেখে মনে হচ্ছে অনেক অসুস্থ।

মিশান স্লিপ মেরে গাড়ির উপর থেকে নেমে পড়ে।
-এগিয়ে দিয়ে আসবো?
-দরকার নেই, একা এসেছি একাই যেতে পারবো।
মিশান তীব্রকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে এমন সময় ঘুরে দাঁড়ালো, তীব্র পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-স্যার!
-বলো
-সত্যি করে বলুন না, আপনি কি করে এতোকিছু জানেন আমার সম্পর্কে?
-তুমি কুয়েত থাকা কালীন আমি আর নিশান অনেক ঘুরেছি, তখন নিশানের থেকে জানতে পেরেছি এই আর কি।
-কই নিশান তো আমায় কখনো বলে নি, ও আপনার সাথে ঘুরেছে।
-তুমি তো আমাকে দেখতে পারো না, তোমাকে বললে তুমি যদি রাগ করো তাই বলেনি।

মিশান তীব্রকে আর কোনো প্রশ্ন করলো না। আনমনে হাঁটতে হাঁটতে দূরের কুয়াশাতে মিলিয়ে গেলো।
তীব্র কথা গুলো মিশানের প্রশ্ন থামানোর জন্য বলেছে। মিশানের মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়ে আছে। কিন্তু প্রশ্ন করলো না।
হতে পারে নিশান তীব্রর সাথে ঘুরাফেরা করেছে।কিন্তু
নিশান মিশানের অতীত সম্পর্কে স্বয়ং নিশানও অবগত নয়। নিশান জানতো দ্বীপের বাবা মা ওর আপন মামা-মামী, ওর বাবা মা মারা গেছে একটা এক্সিডেন্টে।
যদি ওদের রহস্যময়ী অতীতটা নিশান জানতো তাহলে বার বার সে বিষয় নিয়ে নিশান নানা রকম প্রশ্ন মিশানকে করতো, আর মিশান না চাইতেও বার বার অতীতে ডুবে যেতো, পরিস্থিতিই অন্য রকম হয়ে যেতো।
সেসব কিছু বিচার করে দ্বীপের বাবা, মা,দ্বীপ,মিশান সবাই মিলে এই অতীতের অংশটুকু নিশানের থেকে হাইড করে নতুন গল্প সাজিয়ে বলেছে।

তীব্রর মধ্যে কিছু একটা ব্যাপার আছে যার জন্য ও মিশানের ব্যাপারে এতো কিছু জানে।
মিশান তীব্রর ব্যাপারটা মাথায় ই নিতে পারছে না।কিছু একটা কানেকশন আছে তীব্রর সাথে মিশানের অতীতের। কিন্তু কি সেই কানেকশন সেটাই মাথায় ধরছে না।
এতোগুলো দিন তীব্রর সাথে পরিচয়, অথচ মিশান তীব্রর সম্পর্কে কিছুই জানে না, যতবার তীব্রকে ফলো করে ওর ব্যাপারে জানার চেষ্টা করেছে ততোবারই তীব্রর কাছে ধরা খেয়ে যায়, তীব্রর বাড়ির ঠিকানা জানার জন্যেও চেষ্টা চালিয়েছে কিন্তু কোনোভাবেই পারে নি সেটা, তীব্র কিভাবে কিভাবে যেনো সব বুঝে যায়।

সকাল বেলা ঘরের ভেতর রাউন্ড দিতে দিতে দাঁত ব্রাশ করছে এমন সময় তীব্রর ফোনে কল আসে, তীব্র ফোন স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে এসবি থেকে কল এসেছে। নাম্বার টা মোশারফ স্যারের।
মোবাইল টা রেখে বেসিংয়ের সামনে গিয়ে কুলকুচি করে হাতমুখ ধুয়ে আসে ।
টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছার সময় আবার ফোন রিং হলো,এবার ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করলো,
-আসসালামু আলাইকুম স্যার।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।তীব্র কেমন আছো?
-আপনার ফোন রিসিভ করার আগেও ভালো ছিলাম। এখন কেমন আছি বলতে পারলাম না তবে আপনার কল টা কেটে দেয়ার পর বুঝতে পারবো কেমন আছি।
-রেগে আছো এখনো?
-রেগে থাকবো কেনো স্যার?
-কতোদিন হয়ে গেলো এসবি থেকে চলে গেছো, একটা বার এসে দেখা তো করোই না খোঁজখবরও নাও না।
-স্যার আপনার মেয়ে আমার মায়ের ছেলের বউ না, যে উইদাউট এনি রিজন আপনাদের খোঁজখবর নিতে যাবো।
-তীব্র তুমি ছেলে ও মানুষ হিসেবে যথেষ্ট ভালো কিন্তু একটা মেয়ের স্বামী হিসেবে কখনোই ভালো হতে পারবে না, সেরকম সম্ভাবনা থাকলে আমি অবশ্যই আমার মেয়েকে তোমার সাথে দেয়ার চিন্তা করতাম।
-কেনো স্যার আমাকে কি এতোটাই ফিজিক্যালি আনফিট লাগে? বাচ্চাকাচ্চার জন্ম দিতে পারবো না?
-আমি সেরকম কিছু বলিনি। তুমি যথেষ্ট ফিট সব দিক দিয়েই। শুধু শারীরিক সামর্থ্য আর আর আর্থিক সামর্থ্য থাকলেই একজন যোগ্য স্বামী হওয়া যায় না। ব্যবহারের ও ব্যাপার স্যাপার আছে। মেয়ে মানুষ অত্যন্ত নমনীয় মেজাজের, এরা একটুতেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে, তোমার যে ব্যবহারের নমুনা,তাতে তোমাকে যে বিয়ে করবে তার কাঁদতে কাঁদতে জীবন পার হয়ে যাবে।
তীব্র স্বর নরম করে বললো।
-কি যে বলেন স্যার, এতোটাও নিকৃষ্ট না আমি। বউকে যথেষ্ট আদর করবো। আপনার মেয়েকে দিয়েই দেখেন।
-আমার দিন এতোটাও খারাপ আসে নি যে তোমার কাছে আমার মেয়ে দিবো।
-স্যার চেতেন কেনো?ব্যাপারটা ভেবে দেখুন, আপনার মেয়ের আগের কোনো প্রেম থাকলেও সমস্যা নেই আমার। আপনি চাইলে আমার আপনার সম্পর্কটা জামাই শ্বশুর সম্পর্কে বদলাতে পারে,বিশ্বাস করুন স্যার আমি শুধু আপনার মেয়ে না আপনার সাথেও ভালো ব্যাবহার করবো।
-তীব্রওওও.এসব কথা রাখো এখন। কাজের কথায় আসো।
-ওকে স্যার, কিন্তু একটা প্রশ্ন স্যার আপনার মেয়ের এলএলবি টা কি এখনো কমপ্লিট হয় নি?একটা ব্যাপার ভেবে দেখুন স্যার আপনার মেয়ের সাথে ঝগড়া লাগলে জমবে ভালো সেও তর্কের উপর শিক্ষাগত ডিগ্রীধারী, আমিও প্র‍্যাক্টিক্যালি ডিগ্রিধারী।বেশ মাখা মাখা সম্পর্ক জমবে স্যার।
-ওপস তীব্র তুমি থামো তো একটু, কাজের কথায় আসো প্লিজ।
– কাজ কিসের স্যার? আপনার সাথে তো এখন কোনো কাজ নেই।আপনি কি আমার খোঁজখবর নেয়ার জন্য ফোন দেন নি?

মোশারফ স্যার অনুনয় স্বরে বলতে লাগলো,
-তীব্র একটু অফিসে আসতে পারবে?দরকার ছিলো খুব।
-ইয়ে হুইয়ি না বাত! তীব্রর কাছে কেউ দরকার ছাড়া আসে না। যারা দরকার ছাড়া আসে তাদেরকে তীব্র পছন্দ করে না।
কিন্তু স্যার আই এম এক্সট্রিমলি সরি স্যার।আমি বাংলাদেশে নেই,
-তীব্র বাংলাদেশের সিম দিয়ে অন্য কোনো দেশ থেকে কথা বলা যায় না।
-স্যার আমি বাংলাদেশের বাইরের সীমানাতে আছি বর্ডারের কাছে ওপাশের টাওয়ার থেকে সিমে সিগনাল পাচ্ছে তাই এখনো কথা বলা যাচ্ছে, দুই এক সেকেন্ডেই কল কেটে যাবে।
ডক্টর দেখাতে কর্ণাটক যাচ্ছি ।
-তীব্র প্লিজ একটু দেখা করো, বেশি সময় নিবো না তোমার। তুমি যদি এয়ারপোর্টেও থাকো ফ্লাইট ক্যান্সেল করে আসো, পরবর্তী ফ্লাইটে যাও, টিকেট আমি দেবো।
-ঠিক আছে আপনি টিকেটের ব্যবস্থা করুন আমি এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আসছি।
-থ্যাংকস তীব্র, আসো আমি এক্ষুণি তোমার জন্য পরের ফ্লাইটের টিকিট কাটিয়ে রাখছি।

তীব্র ফোন কেটে দিয়ে, বাঁকা হাসি দিলো।ওয়াল কেবিনেট থেকে কয়েকটা জামা বের করে আর মেডিকেল পেপারস গুলো একটা ট্রলিতে ভরে নিলো।
রেডি হয়ে একবারে বেরিয়ে গেলো।
এসবির অফিস থেকে বের হয়ে নিজের অফিসে যাবে সেখান থেকেই এয়ারপোর্টে যাবে।

-বলুন স্যার কি এমন মহামারী প্রয়োজন পড়লো আমাকে?
মোশারফ হোসেন স্যার মাথা নিচু করে কলম ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,
-তীব্র…. গেছো তো গেছো একটা খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন বোধও করলে না, ডিপার্টমেন্ট কিছুই করতে পারছে না তোমাকে ছাড়া। ইরফান শেখ শুধু মুখেই চপচপ করতে পারে ওনার কাজের কোনো আওয়াজ নেই।
-মার্ডারের সংখ্যা কি বেড়ে গেছে স্যার?
– না, সেরকম কোনো খোঁজ খবর পাচ্ছি না। কিলার বেঁচে আছে নাকি আত্মগোপন করেছে সঠিক বুঝতে পারছি না। যদি আত্মগোপন করে থাকে তবে সে কঠিন ভাবে আহত হয়েছে।সে হয়তো আমাদের আশেপাশেই লুকিয়ে আছে।আর যাই হোক বাংলাদেশের বাইরে যেতে পারে নি।
আমরা যদি ভালো মতো চেষ্টা করি তাহলে হয়তো খুব সহজেই পেয়ে যাবো।
-ঘোড়ার ডিম পাবেন কিন্তু কিলার পাবেন না স্যার ! সে বান্দা আত্মগোপন করার বান্দা না, আপনাদের মাঝেই ঘুরাফেরা করছে।আর জানও শক্ত আছে এতো সহজে মরবে না (মনে মনে)
-কি ভাবছো তীব্র?
-ভাবছি আপনারা সবাই উঠে পড়ে লাগুন।মানে অই যে কথায় আছে না, আদা জল খেয়ে লাগা। ব্যাপারটা হবে সেরকম আদা জল খেয়ে লেগে পড়ুন।এভাবে চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে ভাবলে কিচ্ছু হবে না স্যার। চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াতে হবে, তারপর কোমর বেঁধে ছুটতে হবে।

ডি আইজি স্যার তীব্রর কথায় মাইন্ড না করে, নিজেকে শান্ত রেখে তীব্রর দিকে ঝুঁকে হাতের উপর হাত রাখলো,
-তীব্র….! প্লিজ বাবা, তুমিই পারো এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে। এডিশনাল আইজি স্যার আমাকে বার বার জোর দিয়ে বলেছে তোমাকে কনভেন্স করতে। আর আইজি স্যার তো জানেই না, আমরা সামান্য একটা কিলারকে ধরতে এতো হিমশিম খাচ্ছি, এডিশনাল আইজি স্যার উনাকে কোনোমতে সাত পাঁচ বুঝিয়ে চুপচাপ রেখেছে। বাঙালী ছোটো খাটো ভুলেই ধরা
খায়, এই সামান্য একটা কেসের জন্য শেষ কালে আবার সাসপেন্ড হয়ে না বসি। আর কটা বছর পর ই আমার পেনশন। সবাই আমার উপর চাপ দিচ্ছে তোমাকে বুঝানোর জন্য, কারণ তোমার সাথে আমার সম্পর্কটা ভালো। সবাই জানে তোমাকে আমি ভালোমতো কনভেন্স করতে পারবো।
তীব্র মোশারফ হোসেন স্যারের দিকে তাকিয়ে তুচ্ছ হেসে বললো,
-আপনার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক! স্যার! অবশেষে আপনার মেয়েকে আমার কাছে দিতে রাজি হয়েই গেলেন?
-তীব্র প্লিজ!ইয়ার্কি করো না।
-আপনার সাথে আমার ইয়ার্কির সম্পর্ক? আমি বলেছি আপনি চাইলে আমাদের সম্পর্কটা জামাই শ্বশুরে রূপান্তর হতে পারে।

মোশারফ হোসেন নার্ভাস মুডে তীব্রকে বললো,
-তীব্র প্লিজ, এখানে আমার মেয়েকে টেনো না।
-স্যার! আপনি আমার সিনিয়র, কেনো আমাকে তেল মেরে রিকুয়েস্ট করেন?আপনি করবেন অর্ডার! গাম্ভীর্যপূর্ণ স্বরে আমার দিকে চোখ গরম করে ভারী গলায় বলবেন,”তীব্র ইট’স এন অর্ডার, এটা তোমার করতেই হবে, করতে হবে মানে করতেই হবে। “আমি আপনাদের অই গরম দৃষ্টির দিকে চোখ ফেলে ভয়ে কাঁপতে থাকবো, চাকরী ছুটে যাওয়ার ভয়ে আমি আপনাদের কথায় নাচবো।
তা না করে কি প্লিজ প্লিজ করছেন!
কি এমন রহস্য লুকায়িত আছে স্যার?যার জন্য আপনারা সিনিয়র আমাকে অর্ডার না করে রিকুয়েস্ট করেন?
-তীব্র এমন করে বলো না, তোমার বাবা এক সময় আমাদের সিনিয়র ছিলেন, প্রমোশনের জন্য পরিক্ষা দিলে উনি এতোদিনে আমাদের উপরেই থাকতো। মিনিমাম তাকে আমরা এডিশনাল আইজির স্থানে দেখতাম, কিন্তু উনি এডিশনাল ডি আইজি অব্ধিই রয়ে গেলেন, উল্টো নিজের পেনশনের আবেদন করে ফেললেন।
তুমি আমাদের নিজেদের ছেলের মতো।তোমার সাথে কি জোরাজুরির সম্পর্ক? আমারও একটা ছেলে আছে, হতে পারে তোমার থেকে ছোটো কিন্তু তুমিও আমার ছেলের মতোই ।
-ও আচ্ছা আপনার নিজের ছেলেকে কি যখন তখন বিপদের মুখে ফেলে দেন?
-……………………

মোশারফ স্যারকে থামিয়ে দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে তীব্র কিছু একটা ভাবতে লাগলো।এরপর ঠান্ডা মেজাজে বললো,
-ঠিক আছে স্যার আমি আপনাদের একটা সুযোগ দিচ্ছি আমাকে নাচানোর।

তীব্রর কথা শুনে উনার মুখে হাসি ফুটলো,উনি কিছু বলার আগেই তীব্র বলে উঠলো,
-তবে আমার একটা শর্ত আছে। আমার যে পেপারস গুলো আপনারা সিনিয়ররা সিন্দুকে ভরে রেখেছেন সেখান থেকে বের করে আমাকে দিয়ে দিন, আমি প্রমিস করছি, যা বলবেন তাই ই করবো।

মোশারফ হোসেন হতাশাময় একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
-তীব্র এটা হয়তো কখনোই সম্ভব হবে না, কাজটা তোমার বাবার বুদ্ধিতে করা হয়েছিলো ঠিকি এখন তোমার বাবা বললেও ওগুলো ফেরত দেয়া সম্ভব না।পেপারস গুলো আইজি স্যারের কাছে সুরক্ষিত অবস্থায় আছে।
-তাহলে আর কি আপনারা আপনাদের পথ দেখুন আমি আমারটা, এনি ওয়ে আমার লেট হয়ে যাচ্ছে স্যার।এক জায়গায় যেতে হবে।
-ব্যাপার টা ভেবে দেখো তীব্র । তুমি চাইলে তোমার প্রমোশনের ব্যবস্থা করতে পারি।
-ধন্যবাদ স্যার, কিন্তু দরকার নেই।উঠি আজকে, বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।

তীব্র চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো,
-একটু অপেক্ষা করো, তোমার বারোটার ফ্লাইটের টিকিট টা আসছে। এসে পড়েছে প্রায়।
-দরকার নেই স্যার। আমার ফ্লাইট বিকেল পাঁচটাই। আর টিকিটও কাটা আছে।আসি আমার অফিসে যেতে হবে।আল্লাহ হাফেজ।
অফিস থেকে তীব্র বেরিয়ে গেলো।

এয়ারপোর্টে এসে সমস্ত ফর্মালিটি পালন করে প্লেনে উঠে যায়, তীব্রর আগেই মিশান জায়গামতো উপস্থিত। জিন্স টাইপের একটা হুডি পড়ে আছে চোখে লাল রঙের সানগ্লাস।
তীব্র দুষ্টুমি করেই নাকি রিয়েল মুডেই, ব্লাশিং ব্লাশিং মুডে নিজের চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে মিশানের দিকে তাকিয়ে আছে।
-দাঁড়িয়েই থাকবেন?বসবেন না?
তীব্র মৃদু হেসে বসতে বসতে বললো,
-তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে, ঠোঁটে একটু লিপস্টিক লাগাতে পারলে না? দেখতে আরো সুন্দর লাগতো।
মিশান ভ্রুঁ বাঁকিয়ে তীব্রর দিকে তীর্যকভাবে তাকিয়ে রইলো।
-আমি কি আঠারো প্লাস কোনো কথা বলেছি?
-আমরা ইন্ডিয়া কেনো যাচ্ছি?
-হানিমুন করতে।
-সোজা কথা কি আপনার থেকে আশা করা যাবে না?
-আমরা ইন্ডিয়া ল্যান্ড করে ঝগড়া করছি,এখানে যারা আছে সবাই ভদ্রলোক, সিনক্রিয়েট করাটা মানাবে না।

পুরো জার্নিতে মিশান একটা কথাও বললো না। মিশান তীব্রর উপর যতোই ক্ষিপ্ত হোক, তীব্র যখন যা বলে তাই ই করে কারণ তীব্র আর যাই হোক কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া মিশানকে ডাকে না। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আসতে হলো ওর সাথে এই কারণেই।
বেঙ্গালুর এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করতেই ওরা নিকটবর্তী একটা হোটেলে আসে, যেহেতু তীব্রর এখানে প্রায় ই আসতে হয় তাই এখানকার হোটেলও গাইড পরিচিত ছিলো। একপ্রকার রেগুলার কাস্টমার বলা যায় ওকে।
একটা রুম বুক করায় মিশান অনেকটা ক্ষিপ্ত হলো তীব্রর উপর, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই মুড ঠিক হলো, রুমে দুটো সিংগেল বেড ছিলো।

পরের দিন তীব্র মিশানকে হোটেলে রেখে একাই হসপিটালে চলে যেতে নেয়, একা একা থাকতে হবে ভেবে মিশান তীব্রর সাথেই গেলো।
তীব্র ডক্টরের চেম্বারে ঢুকার পর মিশান ওয়েটিংরুমে বসে থাকে।
যেহেতু দুজনের দু রকম ভাষা, তীব্র আর ডক্টর ইংরেজীতেই কথোপকথন করছেন।
কয়েকটা টেস্ট দেয়ার পর সেগুলোর রিপোর্ট নিয়ে ডক্টরের সামনে বসে আছে, ডক্টর রিপোর্ট দেখছেন।
– মিস্টার তীব্র, আপনার রুটিনে সব ই ঠিক আছে বাট তিনটে কারণে আপনার অবনতি ঠেকছে না। সিগারেট আর রাত জাগার কারণে কোনো ইম্প্রুভ হচ্ছে তো না ই । আর ওষুধের অনিয়মের জন্য অবনতি হচ্ছে।
বুঝতে পারছি আপনার ঘুম না হওয়ার কারণ টা, এমনকি সিগারেট খাওয়ার কারণটা।
-স্যার আমি আগের থেকে সিগারেট এখন অনেক কম খাই, আর কিছুদিনের মধ্যেই বাদ দিয়ে দেবো, সব কিছুই তো সময় সাপেক্ষ।
-তা ঠিক, সমস্যা নেই। কিন্তু আমার মনে হয় না আপনি ওষুধটা ঠিক মতো খাচ্ছেন। ওষুধ ঠিক মতো না খেলে তো আমি কিছু করতে পারবো না, আপনি আমার সাথেও ঠিক সময় দেখা করেন না। আপনার আসার কথা ছিলো আরো পঁয়তাল্লিশ দিন আগে, আপনি এলেন কবে?
-কাজের চাপে থাকি স্যার, যার জন্য নিজের দিকে সময় দেয়ার কথা মনেই থাকে না।
-আপনি আত্মবিশ্বাসী ঠিকি কিন্তু জীবনের মায়াটা খুব কম, নেই বললেই চলে।
-হতে পারে।
ডক্টর প্রেসক্রিপশন লিখতে লিখতে বললো,
-আপনাকে যে ডক্টর শ্রীনারায়ণকে দেখাতে বলেছিলাম দেখিয়েছেন?
-না আজ ই দেখাবো।
-আপনার ওয়াইফ এসেছেন?
-হ্যাঁ।
-দুজনেই দেখিয়ে নিন তাহলে। আর আমি এবার স্ট্রিক্ট অর্ডার দিচ্ছি আগামী তিন মাস এই ওষুধ গুলো রেগুলার খাবেন, একদম অনিয়ম করা যাবে না। কাঁটায় কাঁটায় তিন মাস পর আসবেন একদিন আগেও না পরেও না।পরেরবার যদি অনিয়ম করেন তাহলে বাঁচার আশা বাদ দিন। এবার অনিয়ম করার কারণে শুধু বুকে ব্যাথা দেখা দিয়েছে, নেক্সট টাইম কি হয় বুঝবেন হাড়ে হাড়ে। তাই দয়া করে আমার কথা রাখবেন।
-ওকে স্যার।
-হুম প্রেসক্রিপশন লিখে দিচ্ছি। আর আমি এখান থেকে ডক্টর শ্রীনারায়ণকে জানিয়ে দিচ্ছি।উনি যে সময় দেখা করতে বলে দেখা করে নেবেন। ও চেষ্টা করবে আপনাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার।
শ্রী নারায়ণ আমার বন্ধু আর আপনি আমার রেগুলার পেশেন্ট, আপনার সুস্থতা ও সুস্বাস্থ্য কাম্য করা আমার দায়িত্ব।
-জি ধন্যবাদ স্যার, উঠি তাহলে ।
-দেশে ফেরার আগে দেখা করে যাবেন। আমি তো এখন ব্যস্ত, তাই বলছি না, নেক্সট টাইম আপনার ওয়াইফকে সাথে নিয়ে আসবেন।
-শিউর স্যার।

তীব্র উঠে বেরিয়ে গেলো।মিশান বাইরে চেয়ারে বসে একটা ছোট্ট পিচ্চির সাথে খেলা করছে।তীব্র মিশানের পাশে বসলো।
-হয়ে গেছে আপনার?
-হুম, আবার সন্ধ্যা বেলা আসতে হবে।
-ওহ।
-চলো তাহলে হোটেলে ফেরা যাক। আবার আসতে হবে তো।এতোক্ষণ এখানে বসে থাকাটাও সম্ভব না।

মিশান বাচ্চাটাকে তার মায়ের কাছে দিয়ে তীব্রর সাথে চলে যায়।
আবার সন্ধ্যা বেলা আসে ডক্টর শ্রীনারায়ণের শরণাপন্ন হতে ।
মিশান ওয়েটিংরুমে বসবে তখন তীব্র বলে উঠে,
-বসো না, আমার সাথে ভেতরে চলো।
-ভেতরে কেনো? পেশেন্ট আপনি আমি গিয়ে কি করবো?
-আমরা দুজনেই পেশেন্ট তুমি চলো ভেতরে।
-আশ্চর্য আমি কেনো যাবো? পাগল, মাথা খারাপ?
তীব্র চোখ গরম করে বললো,
-তোমার সমস্যা কোথায় আমার সাথে গেলে?আমি বলছি চলো।
-আমার কোনো রোগ থাকলে তো আমি যাবো!আপনি যান।
চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here