#তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_১২
ডুব সাঁতারটাও সেনাবাহিনীতে থাকতে বেশ ভালোমতো শেখা হয়েছিলো, যার ফলে পানির সাথে মিলিয়ে যায় নিমেষেই।
অন্ধকারে গুলি করায় অনেকে ধরে নিয়েছে গুলি হয়তো বেশ কয়েকটা লেগেছে,ক্রস ফায়ারের পারমিশন যেহেতু আগে থেকেই ছিলো, মারা গেলেও সমস্যা নেই।
মরে গেলে পানি খেয়ে সকালের মধ্যে ভেসে উঠবে এই এরিয়াতেই।
তবুও যদি বেঁচে থাকে তবে?
বেশ কয়েকজন উপরেই রইলো আর কয়েকজন নিচে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে,ব্রিজের গোড়ায় গিয়ে নিচের দিকে নামতে গিয়ে পা ফসকে গড়িয়ে পরার অবস্থা। এতোটা ঢালু অবস্থা পাশ দিয়েই রেল লাইনের রাস্তা গেছে, এরমধ্যেই একটা রেল গাড়ি যায় যার ঝমঝম বিকট আওয়াজের জন্য সবাই স্থির হয়ে কান চেপে দাঁড়িয়ে রইলো।
এতোক্ষণে মিশানের স্থান ত্যাগ করা শেষ গুলিটা যে লেগেছে এখন অতোটাও ব্যাথা অনুভব না হলেও ঘন্টা খানেক পর বুঝবে কত ধানে কত চাল!
এ এস আই রাসেল তীব্রকে কল দিচ্ছে ফোন রিসিভ হচ্ছে না। রিফাতের ফোনে কল দিতেই রিফাত রিসিভ করলো,
রাসেল ফোনটা তীব্রকে দিতে বলতেই রিফাত পেছন ঘুরে দেখে তীব্র মাথা হেলান দিয়ে ঘুমোচ্ছে।
-স্যার….স্যার..
তীব্র চোখ খুলে তাকালো,
-স্যার রাসেল স্যার কল করেছে।
-কি বলছে?
-আপনার সাথে কথা বলবে,
রিফাত তীব্রকে মোবাইল এগিয়ে দিলো,
-হ্যালো।
রাসেল ভয়ার্ত ও উত্তেজিত কন্ঠে বললো
-স্যা স্যার সর্বনাশ হয়ে গেছে।
-কি হয়েছে সেটা বলো।
-স্যার ক্রিমিনাল পালিয়ে গেছে।
তীব্র উচ্চস্বরে বললো,
-হোয়াট!!
-স্যার দুজন স্টাফকে মেরে ফেলেছে গাড়িতেই, আমরা ক্রস ফায়ার চালিয়েছি হয়তো ক্রিমিনালের গায়েও লেগেছে কয়েকটা,এরপরেও ব্রিজ থেকে ঝাপ দিয়েছে।
গুলি লেগেছে শিউর কিন্তু
বুঝতে পারছি না বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে।
তীব্র উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে বললো,
-গর্দভ কোথাকার!একটা কাজও ঠিক মতো পারো না তোমরা।সব কিছু কি হাতেখড়ির মতো দেখিয়ে দিতে হবে?সামান্য একটা ক্রিমিনালকে বিশ পঁচিশ জন লোক মিলে গার্ড করতে পারলে না।
এই রিফাত গাড়ি ঘুরাতে বলো।
-স্যার সরি স্যার।এরকম একটা ঘটনা ঘটে যাবে বুঝতে পারি নি স্যার,কিভাবে কি হয়ে গেলো চোখের সামনে পুরোটা ঘটনা কারেন্টের গতীতে ঘটে গেলো।
-এই ফোন রাখো তো, যত্তসব। টাকা দিয়ে সরকার তোমাদের না পোষে গরু পোষলেও বেশ এগিয়ে যেতো দেশের উন্নয়ন মাত্রা।
ফোন কেটে দিয়ে তীব্র রিফাতকে কল ব্যাক করে দিলো।
এবার নিজের ফোন দিয়ে এডিশনাল আইজি খাইরুল হক স্যারকে কল করলো।
-আসসালামু আলাইকুক স্যার, আবারও বিরক্ত করলাম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম, তীব্র বলো সমস্যা নেই কোনো।আমি কি অফিসে আসবো এখন?
-না স্যার অফিসে আসতে হবে না এখন,এমনকি কাল সকালেও আসতে হবে না, আরামের ঘুমটা দিয়েই অফিস আসবেন। আমি বিদায় নিতে আসবো দুপুরের দিকে।
-তুমি যে তখন বললে সকালে আসবে,ক্রিমিনালকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
-হ্যাঁ স্যার ব্যাপারটা আমার কথা মতো ঘটলে প্রযোজ্য ছিলো যেহেতু আমার কথামতো কিছু হয় নি তাই হচ্ছেও না কিছু।
-মানে বুঝলাম না।
-স্যার বেশ কয়েকটা মিটিংয়ে তো আপনারা সিনিয়ররাই বলে দিয়েছেন আমি শুধু আসামী শনাক্ত করণ অব্ধিই আছি, এরপর দায়িত্ব সব আমাদের এ এস পি ইরফান শেখের উপর, যেনো সহি সালামতে আসামীকে মিনিমাম পুলিশ কাস্টডি অব্ধি নিতে পারে।
মিনিট ত্রিশ আগেও আমি আপনাদের জবান বন্দী নিলাম,আমার কাজ কর্তব্য শেষ,এখন আমি মুক্ত কিনা, আপনারা আমার মতকে সমর্থনও করলেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত আপনার গুণধর অফিসার গুলো একজন ক্রিমিনালকে ঢাকা অব্ধি নিয়ে যেতে পারলো না, তার আগেই ক্রিমিনাল পিচ্ছিল মেরে হাওয়া হয়ে গেলো।
এখন কি মনে হয় স্যার আমরা কেউ বাঁচবো?নাকি এখন আমাকে আবার এই লীলার গুটি প্রথম থেকে সাজাতে বলবেন?
-……………
-স্যার চুপ করে আছেন কেনো?কিছু বলুন স্যার।
কাজের কাজ তো কিচ্ছুই হলো না,মাঝখান থেকে আমার টাইম ওয়েস্ট। আপনারা ভালোমতো জানেন আমার নিজের মিশনটা কত জরুরি, সময় চলে গেলে আমার কাজও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, কিন্তু আমার কথা কেউ কানে পাত্তা দিলো না।
সোওওহ এখন আমি তীব্র যদি এক বাপের ব্যাটা হই এই কাজটা আমাকে দিয়ে দ্বিতীয় বার আমার বাপেও করাতে পারবে না, প্রয়োজনে জব টা ছেড়ে দিবো, কিন্তু একটা কাজে আমি অন্য কারো ভুলের জন্য দ্বিতীয় বার হাত লাগাতে পারবো না।
-তীব্র মাথা ঠান্ডা করো।
দেখা যাক ঘটনা কতদূর যায়।এতজন ফোর্স নিয়েও এরকম একটা ব্লান্ডার হয়ে গেলো কি করে!
-সেটা আপনার কর্মীরাই ভাল জানে।
-ওখানে কি সিনিয়র ইরফান সাহেব আছে এখনো?
-হয়তো,আমি যাচ্ছি ওদিকে দেখি কি হয়। আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমান স্যার।
ফোন রেখে দিয়ে বসে রইলো, কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে গেলো স্পটে।
এসে দেখে সবার মধ্যে একটা উত্তেজনা চলছে,ইরফান শেখ যে এতো লটর পটর করে সেও মুখ চুপসে দাঁড়িয়ে আছে।
কিন্তু একটা ব্যাপার দেখে তীব্রর মেজাজ সেই গরম হলো বোকার মতো সবাই এক জায়গাতেই খুঁজাখুঁজি চালাচ্ছে।
মিশান তো এতোক্ষণে পুরো এরিয়ার ত্রিসীমানা পেরিয়ে গেছে।
এতো রাতে কোনো লঞ্চ ইস্টিমারও দেখতে পাচ্ছে না এদিকে।
তীব্র আরেকটু দূরে এগিয়ে গিয়ে সবাইকে খুঁজাখুঁজি করতে বললো। খুঁজাখুঁজির কিছু ডিরেকশন দিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো। খামোখা এদের সাথে সময় নষ্ট করে লাভ নেই,ভালোমতোই জানে ক্রিমিনালকে হাজার খুঁজলেও আজ রাতে অন্তত পাওয়া যাবে না।
মিশান অনেকটা দূর এক ডুবেই পেরিয়ে গেছে, নিশ্বাস আটকে আসার ফলে হাল্কা করে মুখটা পানির থেকে বের করে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে আবার ডুব দিলো।
অনেক্ষণ পর বুঝতে পারলো নদীর গভীরে এসে গেছে, আশে পাশে কোনো তীর দেখা যাচ্ছে না, তার মানে যে ব্রিজ থেকে ঝাপ দিয়েছিলো সেটা নদীর একটা ছোট্ট শাখা ছিলো মাত্র, এখন মিশান আসল নদীর বুকে এসে গেছে।ডানার ব্যাথাটা আস্তে আস্তে অনুভূত হচ্ছে। পানি থেকে মাথা বের করে এদিক ওদিক দেখার চেষ্টা করছে কোনো নৌকা বা ট্রলার, স্টিমার, ফেরি কিছু একটা দেখতে পায় কিনা। অনেক্ষণ অপেক্ষার পর বালি
বহন করে নিয়ে যাচ্ছে একটা ট্রলার দেখতে পায়, মিশান কৌশলে ট্রলারের এক প্রান্তে উঠে বসে।
একজন কর্মী সে ট্রলারের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করছে, মিশানকে দেখে ভয় পেয়ে যায়,এভাবে চলন্ত ট্রলারে শেষ রাতে উঠে বসলো ভূতের মতো। ট্রলারের হাল্কা আলোতে মিশানের চোখ জ্বলজ্বল করছে এটা দেখেই লোকটা ভয়ে কাবু হয়ে রইলো, মনে হচ্ছে সেন্সলেস হয়ে যাবে।
ভূতেরা আগুন দেখে ভয় পায় জেনে,একটা সিগারেট ধরালো কিন্তু তাতেও কিচ্ছু না হওয়াই ভয়ে বরফ হয়ে রইলো।
মিশান নিজের মতো চুপচাপ বসে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে নিরবে।
ভয়ে তাড়াহুড়ো করে ট্রলারের স্পীড আরো বাড়িয়ে ঘাট খুঁজতে লাগলো।
লোকটার সাথে আরেকজন কর্মী ছিলো কিন্তু সে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে, ভয়ে এতোটা কাবু হয়েছে যে গলা থেকে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না তাকে ডেকে তোলার জন্য।
কিছুদূর যাওয়ার পর একটা ঘাট দেখতে পেলো যেখানে ওনেক গুলো জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার , ফেরি ভীড় করে আছে।
ট্রলারটা পাড়ে নিতেই সামনে তাকিয়ে দেখে কিছুক্ষণ আগে যাকে দেখতে পাচ্ছিলো সে নেই এখানে হাওয়া হয়ে গেছে। সে পুরোপুরিই শিউর ওটা ভূত ই ছিলো।
কিন্তু মিশান ট্রলারের বেগ আস্তে আস্তে কমতে দেখেই চুপ করে এই ট্রলার থেকে অন্য একটা খালি স্টিমারে উঠে যায় সেখান থেকে একে একে লঞ্চ স্টিমারের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ঘাট থেকে একটু দুরত্বে গিয়ে নামে যেনো কেউ দেখতে না পায়। সেখান থেকে আস্তে আস্তে হাঁটা পায়ে রোডের দিকে যায়।
ফজরের আজান দিয়ে দিয়েছে,ভোরের আলো চারপাশে ফুটছে।
একটা চলন্ত সি এনজিতে বসে রইলো।
-ভাই আপনার মোবাইল আছে?
-আছে আপা।
-একটু দেয়া যাবো?
-দেয়া যাবো,কই ফোন দিবেন ?
– বাড়িতে কল দিবো, টাকা নিয়ে আসার জন্য আমার কাছে টাকা নেই ভাই।
সি এনজি ড্রাইভার তার মোবাইল টা দিলো।মিশান বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কয়টা খুচরো টাকা ছাড়া আর কিছু নিয়ে বের হয় নি, ওয়ালেট মোবাইল সব বাড়িতে।এখন দ্বীপকে একটা কল করলো,দ্বীপ ফোন রিসিভ করে চুপ রইলো,
-হ্যালো!
মিশানের কন্ঠ পেয়ে উত্তর দিলো।
-মিশান তুই,কোথায় আছিস?এটলিস্ট জানাবি তো?রাতে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গেছি।এতো লেট কেনো?তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফির।
-আরে শোন,বাড়ি এখন ফিরবো না, ৪ নাম্বারে আয়,আমার মোবাইল ওয়ালেটও নিয়ে আয়।
-আচ্ছা আসছি এক্ষুণি।
-হুম রাখছি।
মিশান ফোন টা হাতে নিয়ে সি এনজি ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলো,
-ভাই আপনার ফোনে তো ডোয়েল সিম, একটা হারিয়ে গেলে আরেকটা দিয়ে চলতে পারেন সেই জন্য রেখেছেন তাই না ?
-হ আপা।
-আপনার মোবাইলের দাম কত?
-আট হাজার।
-ওহ আচ্ছা।ভাই ফোনটা একটু পরে দেই, বাসায় থেকে কল দেবে একটুপর।
-আইচ্ছা ।
-ধন্যবাদ ভাই।
-এই অসময়ে আপনার শরীর ভেজা কেন ?
-আমি সেনাবাহিনীর লোক, ক্যান্টনমেন্টে গিয়েছিলাম, আসার সময়
পানিতে পরে গিয়েছিলাম ভাই,জামা কাপড় কিচ্ছু নাই সাথে এখন জামা চেঞ্জ করতে যাইতেছি,বাসা টা দূরে তাই বাসার লোককে এগিয়ে আসতে বললাম যেনো
তাড়াতাড়ি ফিরতে পারি।
-ও আইচ্ছা।শীত লাগতাছে না?
-তা তো লাগছেই।
গা থেকে ভেজা জ্যাকেট টা একটা বড় ম্যানহোলে ফেলে দিতে গিয়েও ফেলে দেয় নি, কারণ দুই হাতের বিচ্ছিন্ন হ্যান্ডকাপ যেনো দেখা না যায় সেজন্য।
একদিকে ঠান্ডা তার উপর বাম হাতের ডানায় গুলি লাগায় হাতটা ব্যাথা হয়ে আছে।গায়ে জ্বর উঠে গেছে, কিন্তু কিছুই করার নেই এই মূহুর্তে নিজেকে স্বাভাবিক স্থানে রাখতে হবে।
সি এনজি ওয়ালার মোবাইলে কি কি ডায়াল করে যেনো সিম কার্ড টা অফ করে দিলো, একদম অকেজো করে দিলো।এই নাম্বার উঠাতে গেলে অন্য ভোটার আইডি কার্ড ব্যাবহার করে উঠাতে হবে,যে সিমটার মালিক হবে অন্য কেউ।
ছোটো খাটো ব্যাপার গুলোতে খুব বেশি সতর্ক থাকে। কারণ ছোটো খাটো ভুলের বড় বিপদ আসে।
একটা জায়গায় এসে গাড়ি থামাতে বললো,
মিশান সেখানে নেমে দাঁড়িয়ে রইলো, কিছুক্ষণ পর দ্বীপ এলো।
জ্যাকেট পড়া, উইন্টার হ্যান্ড গ্লাভস পড়া,মানকি টুপির সাথে মাফলার দিয়ে নাক মুখ আটকিয়ে এসেছে। চারদিকে বেশ কুয়াশাই পড়েছে।
এসে এক হাজার টাকার নোট ড্রাইভারকে দিলো, সাথে মিশান মোবাইলটাও দিলো।
– ভাংতি নাই তো আমার কাছে।
-ভাংতি লাগবে না, আপনি নিয়ে যান এটা।
সিএনজি চলে যাওয়ার পর মিশান আর দ্বীপ হেঁটে একটা গলির ভেতর ঢুকলো,
দ্বীপ মিশানের হাত ধরতে যাবে তখনি দেখে ওর গা পুরো গরম, জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।
-মিশান তোর গা তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে,কষ্ট হচ্ছে না?হাঁটছিস কি করে!
-আরে বলছি সব জায়গামতো আগে পৌঁছে নেই।
ছোটো বড় কয়েকটা গলি পেরিয়ে একটা
নির্জন স্থানে এলো দুজনে, পুরাতন একটা দালান সেখানে। সেই দালানের একটা ফ্ল্যাটে ঢুকলো।
এটা একটা ফ্যামিলি ফ্ল্যাটই ছিলো,ভেতরে সব কিছুই আছে। বাইরে থেকে ভাঙাচোরা হলেও ভেতরে একদম ইনটেক।
ভেতরের পরিবেশ দেখে বুঝা গেলো এখানে ওদের আসা যাওয়া হয় প্রায় সময় ই।
মিশান ভেতরের রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে।
দ্বীপ একটা টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে বসে রইলো।
মিশান ড্রেস চেঞ্জ করে দ্বীপকে ভেতরে আসতে বললো,একটা খাটে বসতে বসতে দ্বীপকে বললো,
-বুলেট টা বের করে দে হাতটা ব্যাথা করছে খুব।
দ্বীপ উত্তেজিত হয়ে বললো,
-বুলেট লেগেছে? মিশান কেয়ারফুললি চলতে কি হয় তোর?বলবি আমায়?
-আরে ধুর আনফরচুনেটলি হয়ে গেছে, শালাকে সেদিনই মেরে ফেলা উচিৎ ছিলো।
-কিভাবে কি কি হলো?
মিশান সবটা খুলে বললো দ্বীপকে রাত থেকে কি কি ঘটনা ঘটেছে।
দ্বীপ ফার্স্টএইড বক্স নিয়ে মিশানের বুলেট টা বের করে দিলো, বুলেট লাগার পর যতটা না ব্যাথা করছিলো এখন তার থেকে হাজার গুণ ব্যাথা করছে।শরীর থেকে অ্যালকোহলের রেশটাও শেষ হয়ে গেছে যার ফলে সব মিলিয়ে ব্যাথাটা অসহনীয় হয়ে গেছে।
ব্যাথাটা কোনোভাবেই সহ্য হচ্ছে না।
-মিশান পেইন কিলারটা খা একটু পর ব্যাথা আস্তে আস্তে কমতে থাকবে।
-ব্যান্ডেজ আগেই করিস না,অ্যালকোহল ঢেলে দে একটু।এটা খেলে আর ঢেলে দিলেই ব্যাথা কমে যাবে।
-মেডিকেল সাইন্স তুই বেশি জানিস নাকি আমি? খালি পেটে অ্যালকেহল ব্লাস্ট হবে ।হাল্কা কিছু খেয়ে নে তারপর ওষুধ খা।এরপর শুয়ে থাক।এ অবস্থায় তো বাড়িতেও যাওয়া যাবে না।মা বাবার সামনে কি স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়াতে পারবি?তাহলে চল.
-নাহ। বাড়ি যাবো না কয়দিন।বাড়িতে জিজ্ঞেস করলে বলিস আমাকে তুই একটা মেডিকেল ক্যাম্পেইনে পাঠিয়েছিস।
-এখানেই থাকবি?
-নাহ,জ্বরটা একটু কমলে এক জায়গায় যাবো।
-কোথায়?
-জানি না, অবস্থা বুঝে।জানাবো তোক সময় মতো।যাওয়ার আগে কিছু খুচরো টাকা দিয়ে যাস , আমার ওয়ালেট মোবাইল সব বিছানার উপর রেখে দিয়ে চলে যা।
-ঠিক আছে, তুই শুয়ে থাক, এ বেলা আর বের হোস না, এতো সকালে তো কোনো হোটেল রেস্টুরেন্টও খুলে নি যে খাবার নিয়ে আসবো।আপাততো শুকনো খাবার খেয়ে থাক।
আমি অফিস যাওয়ার পথে খাবার দিয়ে যাবো।
দ্বীপ মিশানকে শুকনো খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলো, তারপর লেপ কম্বল মুড়িয়ে দিয়ে চলে গেলো ।
হাতের ডানা সহ সম্পূর্ণ হাত পাথরের মতো ভারী হয়ে আছে। এখন আস্তে আস্তে যেনো পুরো শরীর ব্যাথা হচ্ছে।
শরীর এতো গরম হয়ে আছে যেনো চামড়া পুড়ে যাওয়ার অবস্থা।
দ্বীপ বাড়ি চলে যায়।
এগারোটার দিকে তীব্র এসবিতে আসে, নিজের কিছু পারসোনাল জিনিসপত্র নেয়ার জন্য । সিনিয়রদের সামনে যেতেই কেউ তীব্রকে কোনোরকম প্রেশার করলো না।কারণ তীব্র নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা চালিয়েছিলো,অন্যের ভুলের কারণে কেনো ডাবল খাটুনি খাটবে?
সবার থেকে টেম্পোরারি বিদায় নিয়ে র্যাব ডিপার্টমেন্টের সম্পদ হয়ে গেলো।
মিরপুর র্যাব-৪ এর দিকে গেলো। দারুসসালাম রোডের সাথেই র্যাব-৪ হেডকোয়ার্টার।
ভেতরে গাড়ি ঢুকার পর তীব্র গাড়ি থেকে নামলো। এমন সময় দালানের ভেতর থেকে বের হচ্ছিলো এক পরিচিত মুখ।একজন সুন্দরী মায়াবতী যুবতী নারী , সাদা রঙের শাড়ি পড়া, তীব্রকে দেখে সে ওর দিকেই আসতে নিলো।
অতীতে এই নারী তীব্রর ক্যাডেটের জুনিয়র স্টুডেন্ট ছিলো নাম দীপ্তি ।
বর্তমানে এটা তীব্রর মাইনর এক্স।
-কেমন আছো তীব্র?
-ভালো, তুমি?
দীপ্তি মলিন হেসে উত্তর দিলো,
-আলহামদুলিল্লাহ।
তীব্র জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-তুমি এখানে?
-ভাইয়ার কাছে এসেছিলাম, দরকার ছিলো একটু।তুমি তো জানোই ভাইয়াও র্যাবে আছে।
-হুম।তোমার হাসবেন্ড কি করে?
দীপ্তি অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে উঠলো,
-হাসছো কেনো?
-হাসবেন্ড কি করে আমি কি করে বলবো?আমি কি বিয়ে করেছি?
-হোয়াট তুমি এখনো বিয়ে করো নি!
-কেনো বিয়ে করিনি এটা আবার জিজ্ঞেস করো না, কারণটা তুমি ভালো করেই জানো।
-হুম, অতীত ধরে এখনো বসে আছো তুমি।
-কিসের এতো ব্যস্ততা তীব্র তোমার?
দুটো বছরে একটা খোঁজও নাও নি।আমিতো তোমায় ভুলতেই বসেছিলাম।
তীব্র মুখ শুকনো করে উত্তর দিলো,
-তাহলে আর কটা দিন পর আমাদের দেখা হলে ভালো হতো, আমাকে দেখলে আর চিনতে না।
দীপ্তি হেসে উত্তর দিলো,
-অন্য কেউ হলে এটা সম্ভব হতো।
তীব্রর ভেতরে হয়তো কোনো চাপা কষ্ট জাগ্রত হয়ে উঠলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ হতাশাময় লম্বা নিশ্বাস ছেড়ে দীপ্তির দিকে ফিরে বললো,
-এনি ওয়ে কোথায় আছো এখন?
-হলিক্রস।
-ওয়াহ!বিরাট পজিশনে আছো দেখছি।
-হুম সবই তোমার মোটিভেশনের ফল।
-আচ্ছা দীপ্তি আমি তো আজই এলাম র্যাব পোস্টিংয়ে,তোমার ভাইও যেহেতু এখানে, সো আবার এসো সময় করে কথা হবে।এখন কিছু কাজ আছে প্লিজ মাইন্ড করো না।
-ইট’স ওকে, আমারও পৌঁছাতে হবে, ক্লাস আছে। পরে দেখা হবে। আল্লাহ হাফেজ।
তীব্র ফরমাল হাসি দিয়ে বললো,
-আল্লাহ হাফেজ।
দুজন দুদিকে গেলো।
তীব্র ভেতরে প্রবেশ করলো সবাই খুব সম্মান দেখালো।সবাই ওকে আগে থেকেই চেনে তীব্র এর আগেও এখানে এসেছে।
তীব্র ভেতরে গিয়েই নিজের কাজের সাথে অভিযুক্ত হলো।
কয়েকজন সদস্য নিয়ে একটা টিম গঠন করলো।
একটা অভিজানের পুরো প্ল্যানের ম্যাপ আঁকলো দু রাত ভরে। ব্রেইনের উপর প্রচুর প্রেশার যাচ্ছে।
এসবিতে একটা বারও খবর নিয়ে দেখে না ওদিকের কি অবস্থা। তবে রিফাত কৌতুহল বশত খোঁজ নেয়, আর যা জানে তীব্রকে জানায়।এ ব্যাপারে শোনার মতো বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট তীব্রর মধ্যে নেই।
ও চাইলে এবার সহজেই মিশানকে ধরিয়ে দিতে পারবে, কিন্তু দেবে না। কারণ ডিপার্টমেন্টের কিছু অফিসারের শরীরের জং ছাড়ানোর জন্য তীব্রর মুখ বন্ধ রাখতে হবে। পরে সময় মতো মুখ খুললেই হবে।
এদিকে মিশানের জ্বর এই কমে তো এই বাড়ে। আপ ডাওনের মাঝামাঝি আছে। দ্বীপ তাপসিন মিশানের দেখাশোনা করছে। দিনে কয়েকবার মামী ফোন করলে কন্ঠস্বর স্বাভাবিক করে কথা বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কেটে দেয়।
মামী জানে দ্বীপ ওকে মেডিকেল ক্যাম্পেইনে পাঠিয়েছে আসল সত্য তো কেবল দ্বীপ আর তাপসিন ই জানে।
চারদিনের মাথায় মিশান শরীর নিয়ে উঠতে পারে,চলাফেরা করতে পারে।
আস্তে আস্তে শুয়ে বসে প্ল্যান করে কিভাবে তীব্রকে শেষ করে দেয়া যায়।
কেনো যেনো মনে হচ্ছে তীব্র এখনো মুখ খুলে নি।মুখ খুললে এতোক্ষণে অভিজান চালিয়ে বের করে ফেলতো।এটা ভেবেই স্বস্তি পাচ্ছে।
কিন্তু যেভাবেই হোক তীব্রকে ওর সরিয়ে দিতে হবে দুনিয়া থেকে।
সন্ধ্যা বেলা একটা বাইশ তলা টাওয়ারের উপর তীব্র দাঁড়িয়ে আছে, কিছুক্ষণ পর রিফাত তীব্রর পেছনে এসে দাঁড়ালো।
-রিফাত।
-জি স্যার।
– পরচর্চা খুব খারাপ জিনিস জানো?
-জি স্যার।
-কি অদ্ভুত তাই না, মানুষ বড় কোনো বিশ্বাস ঘাতকতা করার আগে বিশ্বাস অর্জন করে।
-রাইট স্যার।
-সে জন্য আমি কখনো কাউকে বিশ্বাস করি না যার ফলে ধোঁকাও কম খাই। আর কেউ যদি ভাবে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার উপর দিয়ে চালাকি করবে তাহলে আমার মেজাজ যে হাইপার হয়
বরাবর ই যেহেতু আমার রক্তের তেজস্ক্রিয়তা টা একটু বেশি তাই
তাকে দুনিয়া থেকে সরানো না অব্ধি আমার শান্তি হয় না।
ভাবো একটাবার তার সাহস হয় কি করে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার!
রিফাত কথাটা শুনে থমকে গেলো, ভেতরে কোনো এক অজানা ভয় গেড়ে বসলো।
-স্যা স্যার!
তীব্র বাঁকা হাসি দিয়ে,সিগারেট টানতে টানতে রিফাতকে গান পয়েন্টে রাখলো।
চলবে…………