#তুমি_শুধু_আমারই_হও
লেখনীতে- অরনিশা সাথী
|১৭|
ভার্সিটির সামনে বাইক থামাতেই অর্নি নেমে পড়লো। নিহাল বাইক ঘুরিয়ে বললো,
–“ক্লাস শেষ হবে কয়টায়?”
–“তোমার আসতে হবে না, আমি চলে যেতে পারবো।”
–“আচ্ছা তো সাবধানে থাকিস।”
কথাটা বলে নিহাল চলে গেলো নিজ গন্তব্যে। অর্নি পুরো মাঠে চোখ বুলালো কোথাও নূর বা রুশানকে দেখতে পেলো না। ক্যান্টিনে যেতেই দেখলো নূর আর রুশান বসে আছে। অর্নি গিয়ে চেয়ার টেনে বসতেই নূর উঠে দাঁড়ালো। ওখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই অর্নি নূরকে আটকে দেয়। বলে,
–“কেন এমন করছিস আমার সাথে? আমাদের এত বছরের বন্ধুত্ব এভাবে শেষ করে দিতে পারিস না তুই।”
নূর অর্নির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
–“পারি, তোর জন্য আজ আমার ভাই কষ্ট পাচ্ছে অর্নি। আমার ভাইয়ের কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবো না। তুই আমার ভাইকে যেই পরিমান কষ্ট দিচ্ছিস সেটা কক্ষনো ভুলবো না আমি। ক্ষমা করবো না তোকে কোনোদিনও।”
–“আমার দিকটা বুঝার চেষ্টা করবি না একবারো?”
–“কি বুঝবো তোর দিক? তুই যদি বাসায় জানাতি দ্যান যদি কেউ মেনে না নিতো তাহলে একটা কথা ছিলো। কিন্তু তুই সেরকম টা করিস নাই। বাসায় জানাস নি। নিজের মর্জিতে আমার ভাইকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস তুই।”
–“আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে___”
–“অর্নি বাচ্চা না আমি, আমিও শান্তকে ভালোবাসি। আমি শান্তর সাথে রিলেশনে যাওয়ার আগে আমার পরিবারকে ম্যানেজ করেছি। তারপর পারিবারিক ভাবেই আংটিবদল হয়েছে আমাদের। তুই পারতি না বাসায় একবারের জন্যও জানাতে? হ্যাঁ আমার আর তোর সিচুয়েশনটা আলাদা আমি মানছি অর্নব ভাই আর আন্টি হয়তো প্রথমে রাজি হতো না৷ একটু কষ্ট হতো উনাদের মানাতে৷ তুই অন্তত একটা বার বলে তো দেখতি পরে না মানলে ভাইয়ার উপর ছেড়ে দিতি সবটা। ভাইয়া সবটা ঠিক করে নিতো। ঠিক মানিয়ে নিতো অর্নব ভাইয়া আর আন্টিকে।”
–“নূর তুই___”
–“একদম কথা বলবি না তুই।”
কথাটা বলে রেগে ক্যানটিন থেকে বেরিয়ে গেলো নূর৷ অর্নি একটা চেয়ারে বসে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে। কাঁধে স্পর্শ পেয়ে পাশে তাকিয়ে রুশানকে দেখলো৷ রুশানকে জাপ্টে ধরে কাঁদতে শুরু করে দিলো। রুশান অর্নির মাথায় হাত বুলালো ক্ষানিক সময়। তারপর অর্নির সামনে বসে ওর হাতদুটো ধরে বললো,
–“কাঁদিস না, এখন কেঁদে কি হবে বল?”
–“তুইও বন্ধুত্ব শেষ করে দিবি তাই না? দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোরও যা যা বলার আছে বল, বলে চলে যা আমায় ছেড়ে।”
রুশান অর্নির চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
–“ধুর! আমি কেন বন্ধুত্ব শেষ করবো? তোদের ছাড়া আমার চলবে নাকি? নূরের কথা ধরিস না তো৷ ওর মন মেজাজ ঠিক নেই তাই এরকম বলেছে। রাগ কমলে দেখবি সবার আগে তোর কাছে ছুটে আসবে। তুই কান্না অফ কর।”
অর্নি কিছু বললো না। রুশান আবারো বললো,
–“এখনো সময় আছে অর্নি, সবটা তোর হাতে। তুই একবার বাসায় জানা উৎসবের ভাইয়ের কথা৷”
অর্নি তখনো নিশ্চুপ। রুশান বললো,
–“আমি উৎসব ভাইকে ডাকছি এখানে। কথা বল দুজনে। তুই একা না পারলে উৎসব ভাইকে নিয়ে গিয়ে তারপর কথা বল অর্নব ভাই আর আন্টির সাথে৷ আই হোপ উনারা বুঝবেন।”
কথাগুলো বলে রুশান ফোন বের করলো উৎসবকে ফোন করার জন্য৷ অর্নি বললো,
–“ডাকিস না উনাকে৷ আমি দাঁড়াতে পারবো না উনার সামনে।”
–“সমস্যা থেকে পালিয়ে বেড়ালেই সমস্যা সমাধান হয় না অর্নি৷ শক্ত ভাবে দাঁড়িয়ে সেটার মোকাবেলা করতে হয়৷ এতদিন তো পালিয়ে বেরিয়েছিস, কোনো সমাধান হইছে? হয়নি৷ উলটো আরো কষ্ট পাচ্ছিস এখনো। উৎসব ভাইকে টেক্সট করে দিয়েছি, উনি দশ মিনিটের মাঝেই ক্যাম্পাসে ঢুকছে। কথা বল দুজনে৷”
অর্নি নির্বিকার ভাবে বসে রইলো৷ রুশান বললো,
–“তুই এখানেই বোস, আমি দেখছি নূর আবার কোথায় গেলো? ওকে নিয়েই আসছি আমি।”
অর্নি সম্মতি জানাতেই রুশান উঠে গেলো৷ ওখানেই চুপচাপ বসে রইলো অর্নি। এমন সময় কেউ একজন বসে অর্নির সামনে৷ অর্নি মাথা তুলে মাহিরকে দেখতে পেয়ে বিরক্ত হলো বেশ। উঠে চলে যেতে চাইলে মাহির বললো,
–“ভালোই তো ছেলে জুটিয়েছো। একদিন উৎসব তো একদিন আজকের ওই ছেলেটা। তা আমাকেও একটু সময় দিতে পারতে। ওদের থেকে খারাপ হতো না আমার পারফরম্যান্স___”
পেছনে ঘুরে সপাটে চ/ড় বসালো অর্নি মাহিরের গালে। রাগে গাঁ জ্বলে যাচ্ছে৷ কিসব উল্টাপাল্টা বলছে৷ মাহির দাঁড়িয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো অর্নির দিকে। অর্নি ওর দিকে আঙুল তাক করে বললো,
–“একদম উল্টাপাল্টা বলবেন না__”
মাহির অর্নির বা-হাত ধরে দ্বিগুণ তেজ নিয়ে বললো,
–“আমি যখন ভালোভাবে ভালোবাসি বলছিলাম তখন তো খুব সতীসাধ্বী সেজেছিলে। রিলেশন করবেন না ভালোবাসবে না। তাহলে দু দুটো ছেলে নিয়ে এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছো কেন? নাকি একজনে পোষায় না? না পোষালে আমায় বলো আমি একদম পুষিয়ে___”
অর্নির ঘৃণায় চোখ বন্ধ করে নিলো। চ/ড় মারার জন্য আবারো ডান হাত তুলতেই উৎসব এসে মাহিরের ঘাড় ধরে মুখ টেবিলের সাথে চেপে ধরলো। মাহির ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। উৎসব ঠেসে ধরে রেখেছে মাহিরকে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবি না অর্নির সম্বন্ধে___জানে মেরে ফেলবো।”
রুশান আর নূর এসে উৎসবকে ছাড়িয়ে নিলো। মাহির উঠে গিয়ে নিজের শার্ট ঠিক করে নিয়ে অর্নির দিকে রাগ চোখে তাকিয়ে বললো,
–“পার পাবে না একদম____”
উৎসব মাহিরের কলার টেনে ধরে বললো,
–“তোর চোখ একদম উপড়ে ফেলবো আমি। কোন সাহসে আবার অর্নির দিকে চোখ তুলে তাকাস তুই?”
কথাটা বলে উৎসব মাহিরের নাক বরাবর ঘুঁষি মারলো। এত জোরে মেরেছে যে নাক ফেঁটে রক্ত বেরিয়ে এলো ক্ষানিকটা। মাহির ঝাড়া মেরে উৎসবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নাকের রক্ত মুছে নিয়ে তাকালো দুজনের দিকে। তারপর চলে গেলো সেখান থেকে৷ নূর অর্নির কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“তুই ঠিক আছিস অর্নি?”
অর্নি কিছু না বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
–“আমি খারাপ আর বাজে একটা মেয়ে তাই না রে নূর?”
নূর অর্নির চোখের পানি মুছে দিলো। রুশান অর্নির কাঁধে হাত রেখে বললো,
–“কিসব ভুলভাল বলছিস? তুই খারাপ হতে যাবি কেন?”
–“আমি যদি বাজে না হই তাহলে মাহির আমাকে এতো গুলো নোংরা নোংরা কথা শোনানোর স্কোপ পায় কোথায় বল?”
–“হ্যাঁ খারাপ তুমি, ভীষণ রকমের খারাপ। তোমদের মতো মেয়েদের জন্য যারা সত্যিকারের অর্থে ভালোবাসে তাদেরও বদনাম হয়। ছেলেরা খারাপ হয়, ভালোবাসা হারায়। তোমার মতো মেয়েরাই একটা ছেলের জীবন নষ্ট করে দিতে দুবার ভাবে না। এতই যদি পরিবারের উপর দরদ তাহলে শুরুতে সবটা ক্লিয়ার করোনি কেন? পেছন পেছন ঘুরাবা তারপর নিজের অনূভুতিও প্রকাশ করবা তারপর একটা টাইমে এসে সেই ছেলেটার ভালোবাসার কথা বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে পরিবারের দোহাই দিয়ে চলে যাও। পেছন ফিরে একবারো তাকাও সেই ছেলেটার দিকে? যদি তাকাতে তাহলে অবশ্যই দেখতে পেতে সেই ছেলেটার তোমাকে হারানোর আহাজারি। দেখতে পেতে সেই ছেলেটার চোখে তোমার জন্য এক আকাস সম ভালোবাসা। কিন্তু না তুমি, তোমরা পেছন ফিরে তাকাও না। তোমরা নিজেদের মন মর্জি মতো কাছে টেনে নেবে আবার তোমাদের মর্জি মতোই দূরে ঠেলে দিতে দু’বার ভাবো না। এতই যখন পরিবার নিয়ে চিন্তা তাহলে সেদিন তোমার মনের অনূভুতি গুলো ব্যক্ত করেছিলে কেন আমার সামনে? একেবারে দূরে সরে যেতে পারোনি? আমার সামনে থেকেই কেন তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটা আরো গভীর থেকে গভীর করেছো?”
উৎসবের এমন সব কথায় অর্নি এবার শব্দ করেই কেঁদে দিলো৷ নূর ওর ভাইকে বললো,
–“ভাইয়া কি বলছো এসব? এমনিতেই মাহিরের ওরকম বিহেভিয়ার তার উপর আবার তুমি এসব বলছো।”
উৎসব অন্যদিকে ঘুরে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। রাগ নিয়ন্ত্রণের সব রকম কৌশল অবলম্বন করতে লাগলো। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে অর্নির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অর্নির দু গালে হাত রেখে বললো,
–“অর্নি প্লিজ এরকমটা করো না। জাস্ট এনগেজমেন্ট হয়েছে, এটা কোনো ফ্যাক্টই না। প্লিজ, প্লিজ একটাবার অন্তত নিজের কথা ভাবো, আমার কথা ভাবো? এই বিয়েটা তে তুমি হ্যাপি থাকবে না অর্নি। পাগলেও তো নিজের ভালোটা বুঝে অর্নি। আর তুমি___”
অর্নি তখনো চুপচাপ চোখের জল ফেলছে৷ নূর অর্নিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
–“প্লিজ দোস্ত একটা বার ভেবে দেখ না। এখানে তুইও কষ্ট পাচ্ছিস আর আমার ভাইটাকেও কষ্ট দিচ্ছিস৷ এরকমটা করিস না অর্নি। এখনো হাতে অনেক সময় আছে তুই একবার অর্নব ভাইয়াকে বুঝিয়ে বল। আ’ম সিওর অর্নব ভাইয়া দ্বিমত করবে না। প্লিজ দোস্ত আমার ভাইটাকে এভাবে কষ্ট দিস না। একবার কথা বলে___”
অর্নি কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
–“আমি পারবো না রে___”
অর্নির কথায় উৎসবের মেজাজ আরো গরম হলো। অর্নির হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
–“ওকে ফাইন, তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না। যা করার আমিই করবো।”
কথাগুলো বলে উৎসব টেনে হিঁচড়ে অর্নিকে নিয়ে গাড়িতে বসালো। তারপর নিজেও বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। নূর আর রুশানও ছুটলো ওদের পেছনে।
–
অর্নিদের বাসার সামনে এসে উৎসব গাড়ি থামায়। নিজে নেমে অর্নিকে টেনে বার করে গাড়ি থেকে। অর্নি বললো,
–“প্লিজ উৎসব ভাই এরকমটা করবেন না আপনি।”
উৎসব অর্নির দিকে ঘুরে লাল লাল চোখে তাকায়। উৎসবের চোখদুটো রক্তবর্ন ধারন করেছে৷ অর্নির দিকে ঝুঁকে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো,
–“হুশশশ! একদম কথা বলবে না তুমি। এবার যা বলার আর করার আমি করবো।”
কথাটা বলে উৎসব অর্নিকে টেনে বাসার ভিতরে নিয়ে গেলো। অর্নিকে এভাবে একটা ছেলে টেনে আনায় মিসেস অদিতি কিচেন থেকে দ্রুত বেড়িয়ে এলেন। এমন সময় নূর আর রুশানও উপস্থিত হলে সেখানে। অর্নির এরুপ অবস্থা দেখে মিসেস অদিতি জিজ্ঞেস করলেন,
–“কি হইছে অর্নি? আর ছেলেটা কে?”
নূর এগিয়ে এসে বললো,
–“আন্টি এটা আমার ভাই, তুমি একটু অর্নব ভাইয়াকে ডেকে দিবে?”
মিসেস অদিতি উৎসবের দিকে তাকালেন একবার। তারপর আবারো তাকালেন অর্নির হাতের দিকে যে হাতটা উৎসব শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে। মিসেস অদিতি দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে অর্নবের রুমে গেলেন ওকে ডাকার জন্য। অর্নবকে ডেকে মিসেস অদিতি আবারো সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। নূরকে বললো,
–“নূর কিছু হইছে? অর্নিকে এমন দেখাচ্ছে কেন?”
–“রিল্যাক্স আন্টি কিচ্ছু হয়নি।”
কথাটা যেন বিশ্বাস হলো না মিসেস অদিতির। কিছু তো গন্ডগোল আছে৷ নয়তো হুট করেই নূরের ভাই এ বাসায় আসবে কেন? উনি আবারো সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালেন উৎসবের দিকে। তারপর নূরকে বললো,
–“তোমার ভাইকে নিয়ে বসো, আমি চা-নাস্তার ব্যবস্থা করছি।”
রুশান বললো,
–“তার কোনো দরকার নেই আন্টি।”
এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো অর্নব। উৎসবকে দেখে চিনতে পারলো না। নূর পরিচয় বলতেই বেশ অবাক হলো ও। হঠাৎ উৎসবের ওর সাথে কি কাজ থাকতে পারে ভেবে পেলো না অর্নব। উৎসব তখনো শক্ত করে অর্নির হাত ধরে রেখেছিলো। তা দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো অর্নব।
চলবে~
[ আজ গল্প সময়ের আগেই দিয়ে দিছি মানে অনেক তাড়াতাড়ি। এবার আপনারাও একটু ভালো ভালো মন্তব্য করুন😒 বাট প্লিজ কেউ নাইছ নেক্সট লিখবেন না, দরকার পড়লে কমেন্টস কইরেন না। হ্যাপি রিডিং🥰 ]