#তুমি_নামক_যন্ত্রণা
#লেখনীতেঃ হৃদিতা ইসলাম কথা
পর্বঃ৪
হঠাৎ করেই ব্রেক কষতেই আমি সামনের দিকে হেলে পড়লাম।অন্যমনস্ক থাকায় সামনের সিটের সাথে বেশ জব্বর একটা বাড়ি খেলাম।সেই চোট পাইছি মাগো।এই বজ্জাত লোকটা এত বজ্জাত কেনো? আমার জীবনে ঝড়ের মত উদয় হইয়া দুই দিনে জীবন ডারে একেবারে তছনছ কইরা ফালাইলো।ইচ্ছে করতাছে এক্ষনি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই এই মাঝরাস্তায় গাড়ি থেকে। হুহ!
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দুরত্ব ২৪৮ কিলোমিটার।গাড়িতো আর ট্রেনে আলাদা রকমের সময় লাগে।ট্রেনে ৬-৮ ঘন্টা আর গাড়ি বা বাসে যেতে সময় লাগে ৪-৬ ঘন্টা।যেহেতু আমরা নিজস্ব গাড়িতে যাচ্ছি তাই তুলনামূলক তাড়াতাড়িই পৌছানো যাবে বলে আশা করা যায়।এত লম্বা একটা জার্নি কি করে কাটবে।তাই ভাবছিলাম।আমি সচরাচর বাড়ি থেকে বের হইনা।আমার গন্ডির পরিসর তো ক্ষুদ্র। যেমন মোল্লার দৌড় মসজিদের অবধি আমার দৌড় মামা বাড়ি অবধি।মামা বাড়ি ছাড়া কোথাও যাই না আমি।তাই রাস্তা ঘাটের সৌন্দর্য ও দেখা হয় না।সবসময় মামা বাড়ির আশপাশের এলাকা আর আসা যাওয়ার রাস্তার সৌন্দর্য টুকু উপভোগ করার ভাগ্য মিলে।আজ পর্যন্ত কখনো ঢাকা যাওয়ার তেমন ইচ্ছে হয় নাই।যেহেতু আমি প্রকৃতি প্রেমী তাই প্রকৃতির সাথে মিশে থাকতে ভালোবাসি। ঢাকার মত ইট পাথরের শহরে আমার মন টিকবে না।এই ধারনাটা কেন যেন মনের মধ্যে বাসা বেধে আছে আমার। তাই আর সেমুখো হইনি আমি।আমাদের বাড়ি ও বাড়ির আশপাশটা গাছপালায় ভরপুর।যা আমার বেশ ভালো লাগে। আমার শ্রদ্ধেয় দাদা মশাই বেশ যত্ন করে বাড়িটা বানিয়েছেন।দিদুনের মুখে শুনেছি তিনিও নাকি আমার মত প্রকৃতিকে ভিষন ভালোবাসতেন।তাই চট্রগ্রাম শহর থেকে খানিকটা দুর এই নির্জন জায়গায় বাড়িটা বানান।তবে এখন এখানে আরো কয়েকটা বাড়ি তৈরি হয়েছে।মানুষজনের কোহাহলও মোটামুটি বাড়ছে।
মুলত এইসব ভাবনায় বিভোর ছিলাম।প্রকৃতির এই মোহময়ী রুপ আমাকে সবসময় টানে।তাদের মাঝে ডুবে থাকতে ভালোবাসি।আর সেই ভালোবাসায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে এই ধলা হনুমানটা।সহ্য হচ্ছে না লোকটাকে এই মুহুর্তে আমার।একদমই না।একটা রাগী শ্বাস ফেলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম তার উপর।সে ভাবলেশহীন। যেন এই পৃথিবীর কিছুই সে জানে না এতটা নিশ্বাপ সে। অথচ এক নাম্বারের বদেন হাড্ডি।আমি রেগে কিছু বলবো তার আগে উনি মিররে আমার দিকে শান্ত ও শীতল চাহনি নিক্ষেপ করে বললেন,
— তোর কি আমাকে ড্রাইভার বলে মনে হয়?
আমি ভ্রু কুচকালাম। মানে!
তবে উনি কে? ড্রাইভ যখন করছে নিশ্চয়ই ড্রাইভার সে।নিজেকে কি চিনতে পারছে না৷ নাকি উল্টোপাল্টা কিছু খেয়ে নিল।এসব ভাবনার ইতি টেনে বিরক্তি নিয়ে বললাম,
— মানে! মনে করার কি আছে! যেহেতু ড্রাইভ করছেন সেহেতু ড্রাইভার। আপনি জানেন না।চালককে ড্রাইভার বলা হয় নাকি কেউ বলে নি।ও আচ্ছা আপনি হয়তো বাংলা কম বোঝেন তাই তো।আচ্ছা সমস্যা নাই।আমি শিখিয়ে দিব।
উনার চোখে চোখে রেখে গড়গড় করে সব বলে ফেললাম। উনি চোখমুখ কুচকে নিয়েছেন ইতোমধ্যে।মনে হচ্ছে উনাকে বিরক্ত করতে পেরেছি।চরম ভাবে না হলেও খানিকটা হলেও বিরক্ত করতে পেরেছি।কাল থেকে যা শুরু করেছেন উনি।তার প্রতিশোধ তো নেওয়া হয় নাই।কাউকে বিরক্তির উপর বিরক্তি! মানে বিরক্তির চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ও একটা আর্ট যা সবাই পারে না।আর এই গম্ভীর গোমরামুখো লোকটা ইঞ্চি পরিমান বিরক্ত করতে পারলেও কেল্লাফতে।এসব ভাবতেই নিজেকে কেমন সাহসী সাহসী মনে হচ্ছে।মনে মনে নিজেকে বাহবা দিলাম।
— গ্রেট কথা গ্রেট।তুই তো কামাল করে দিয়েছিস রে।তোকে তো নোবেল না থুরি অস্কার ছুড়ে দেওয়া উচিত।তারপর মিররে তাকিয়ে আবারো বললাম,
— আচ্ছা! আপনি কি ভুলে যাচ্ছেন যে আপনি কার ড্রাইভ করছেন উড়োজাহাজ নয়।যদিও উড়োজাহাজগুলো চালককে পাইলট বলা যায়। তবে কার ড্রাইভ কারীকে পাইলট বলার যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।আপনি যেহেতু কারই ড্রাইভ করছেন সেহেতু আপনি ড্রাইভার। এবার বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়। একদম ক্লিয়ার করে বলে দিয়েছি।এবার একটু আপনি নিজের কাজে মন দিন আর গাড়িটা চালাতে শুরু করুন।কখন পৌছোবো কে জানে? ভালো লাগছে না। তাড়াতাড়ি করুন তো।বের হইলাম দশ মিনিট ও হলো না।আর আপনি গাড়ি থামায় রাখছেন।এটা কোন কথার মধ্যে পড়লো।
উনার চোখমুখ হুট করেই স্বাভাবিক হয়ে গেল।একদম শান্ত স্বাভাবিক।উনার এমন শান্ত আর স্বাভাবিক অবস্থা দেখে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এবার আমি চোখমুখ কুচকে তাকিয়ে আছে উনার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে। আমার কেমন সন্দেহ সন্দেহ লাগছে। উনি একেবারে আচমকাই গাড়ির ফ্রন্ট সিট থেকে বেরিয়ে ব্যাক সিটে এসে বসে পড়লো।আমি অন্যপাশে বসে ছিলাম।উনাকে এমন হুট করেই কাছে আসতে দেখে বিচলিত হয়ে পড়লাম।পারলে গাড়ি থেকে পালাই। কিন্তু ডোর লক করা।ততক্ষণে মাথা অটোমেটিকলি পিছনে হেলিয়ে দিছি।আর ভয়ে চোখমুখ খিচে বন্ধ করে রাখছি।মনে মনে আল্লাহকে বলছি।
— হায় আল্লাহ! বাচাও আমারে। বাঘের খাঁচায় থেকে বাঘের সামনেও কেন এত বড় বড় বুলি আওড়াতে যাচ্ছিলাম কে জানে।আমার মাথায় কোন ভুত ভর করছে আল্লাহ।ওরে তাড়াতাড়ি নামায় দিবা না।এখন তো আমি শেষ! এই গরিলা তো আমারে কাঁচা চিবায় খাইয়া ফালাইবো।শেষ বার বাচাও আর বেশি বকবক করুম না।এই কান ধরছি।না নাক ও ধরমু।কে রাখছিলো আমার নাম কথা??
এত বেশি কথা কেন কই আমি??
মুখের উপর শীতল বাতাসের আভাস পেয়ে পিটিপিটিয়ে চোখ খুললাম।উনি একদম আমার মুখের সামনে।সামান্য দুরত্ব অবশিষ্ট নেই। সোস্যাল ডিস্টেন্সিং তো দুরের কথা। উনার দৃষ্টি এলোমেলো লাগছে।
কেমন ঘোর লাগা নেশাক্ত দৃষ্টি।যা অপলকে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।তার চাহনি দেখে অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।একটু গলা ঝেড়ে নড়েচড়ে উঠতেই উনি দৃষ্টি পরিবর্তন করলেন।চোখ নামিয়ে নিলেন।কিছুক্ষন পর আবার চোখ তুলে শান্ত কন্ঠে বললেন,
— কি বলছিলি তুই? আবার বল আমিও শুনি।
আমি কাঁপছি রীতিমতো। কিছু না করেই লোকটা ভিষন ভয় পাইয়ে দিল।মনে মনে ভাবেলাম “এতক্ষণ এত কিছু বলার পর আবার জানতে চাইছে। কালা নাকি যে এতক্ষণ যা বললাম শুনতে পাইনি।যা বলেছি তা তো বলেছি এ কথা আর দ্বিতীয় বার মুখ ফুটে বের করা যাবে না।কালকের ধমক ভুলে যাইনি আমি।যে লোক আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাকে এমন রামধমক দিতে পারে সে এই মাঝরাস্তায় আমার সাথে ঠিক কি করতে পারে আল্লাহ মালুম।বেশি কথা না বলে চুপ থাকাই শ্রেয়।”
আমার ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আমি একদম চুপ করেই রইলাম।যেন আমি কিচ্ছুটি জানি না।এক্কেবারেই না।ধোয়া তুলসি পাতা টাইপ।উনি আমাকে বললেন,
— ফ্রন্ট সিটে চলে আয়।
আমি মাথা নেড়ে সায় জানালাম।ইতোমধ্যে আমার সব সাহসিকতা জলে ধুয়ে গেছে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের অস্তিত্ব। আমি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম।আমি সায় দিতেই উনি গাড়ির লক খুলে দিয়েছেন।
.
গাড়িতে বসে বাইরের পরিবেশের মুগ্ধতায় ডুবে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম জানি না।প্রায় একঘন্টা পর ঘুম ভাঙলো আমার। চোখ মেলেই দেখতে পেলাম গাড়িতে আমি একা।চোখ কচলে আশেপাশে তাকাতেই বুঝতে পারলাম উনি বাইরে দাড়িয়ে আছে।আমরা একটা ব্রিজের উপর।এখানে কোলাহল নেই একদমই শান্ত পরিবেশ। আর কি সুন্দর শীতল হাওয়া। শরীর মন শীতলতায় ভরিয়ে দিচ্ছে।আমি গাড়ি থেকে বাইরে বেরোলাম।উনার পাশে গিয়ে দাড়াতেই উনি আমার দিকে চাইলেন।বাতাসে আমার খোলাচুল গুলো আরও দুলতে লাগলো।এলোমেলো করে দিতে লাগলো। তবে এটা বেশ ভালো লাগছিলো আমার।কিছুক্ষণ ওভাবে থাকার পর উনি বললো,
–সামনেই রেস্টুরেন্ট আছে আমরা লান্চ করে তারপর বেরোবো।
আমি শুধু মাথা দুলালাম।তারপর আর কোন কথা হলো না।লান্চ করে বাড়িতে ফিরতে ফিরতে বিকেল ৪ টা বেজে গেল।বাড়িতে ঢুকতেই প্রথমে দেখতে পেলাম বড় আম্মুকে।আমব গিয়ে উনাকে সালাম দিলাম।উনি সালামেন জবাব দিয়ে আমাকে বুকো জরিয়ে বললো,
— আসার ইচ্ছে হলো তবে আমাদের রাজকন্যার। সে তো তার রাজ্য ছেড়ে কোথাও যায় না।
আমি আদুরে হয়ে বললাম,
— যদি নাই যাই তবে এখানে এলাম কি করে বলো?
— তা তো তুই তিশার জন্য এসেছিস।তাছাড়া নিজ থেকে তো এলি না।আমরা এতবার বলার পরও আসতে চাস না।
— এইতো এসেছি বড় আম্মু। তোমার অভিযোগের পালা এবার শেষ কর।
এরমধ্যেই তিশা আপু ছুটে এল।একছুটে তিশা আপু আমাকে জরিয়ে ধরলো শক্ত করে।তারপর ইচ্ছে মত গালগুলো টেনে দিল।সবার সাথে কুশল বিনিময় করলাম।দিদুন, আব্বু, আম্মুর,আর পিচ্চুর কথা জিজ্ঞেস করলো বড় আম্মু। স্রোত ভাইয়া আমাদের কথার মাঝেই চুপটি করে উপরে চলে গেলেন।বড় আব্বুর সাথে দেখা হলো না।উনি অফিসে ছিলেন।ভাইয়া থাকলে কাজের চাপ কম পড়ে।পড়াশোনার পাশাপাশি ভাইয়া বড় আব্বুর অফিসেও যায়। তাকে অনেকটাই সাহায্য করে।শুনে ভালো লাগলো।
তিশা আপু তার ঘরের দিকে যেতে যেতে বললো,
— তা আমাদের ঝাসিকি রানি।নিজের ঝাসি ছেড়ে বেরিয়ে এলো। আমি তো বিশ্বাস ই করতে পারছি না।
— কেন আমি তো এসেছি।
— তা এসেছিস তবে আমার মনে হচ্ছে ইচ্ছে করে আসিসনি।স্রোতের ধমক খেয়ে এসেছিস। তাই না!
— ইশশ! বললেই হলো,আমি তোমার ভাইয়ের ধমক খেয়েছি।শোন আমি কথা।যে কাউকেই ভয় পায় না।বুঝলে।আর তোমার ভাই! হাহ! তাকে কেন ভয় পেতে যাবো।এমনিতেই তো গোমরামুখো একটা। তাকে দেখে আবার কেউ ভয় পায়।সারাক্ষণ পেচার মত মুখটা করে রাখে।এমনিতেই দেখতে ধলু তারউপর আবার হোপ্ করে থাকে।এরকম মানুষকে দেখে আমি ভয় পাই না।আমি তো ইহজীবনে কোনদিন তাকে দেখে ভয় পাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।আর ধমক! হাহাহা আমাকে ধমক দেয় কার সাধ্যি। তুমি তো জানো ইহজগতে আম্মু ছাড়া আর কাউকে ভয় পাই না আমি।
— হুম বেশ বুঝতে পারছি। কে কাকে কতটা ভয় পায়?
— মানে!
— কিছু না ফ্রেশ হবি চল।তারপর অনেক আড্ডা দেব।শপিং করবো।আর তো সময় বেশি নেই।দুটো ফাংশন একবারেই হবে।সবটাই সামলাবে স্রোত।বাবা ওর উপর দায়িত্ব দিয়েছে।আমার পছন্দ ও খুব ভালো করেই জানে।
আমি ফ্রেশ হয়ে নিলাম।বড় আম্মু খাবার খেতে বললে বললাম আমরা লান্চ করে এসেছি। এখন কিছু খাবো না।কিন্তু বড় আম্মু কার কথা শুনবে।উনাকে এটা বলতেই আদুরে গলায় ধমকে বললেন,
— একদম না।এখন খাবো না খাবো না বললে লাগাবো একটা।না খেয়ে খেয়ে কেমন শুকিয়ে যাচ্ছিস দেখেছিস! নিজের যত্ন তো একদমই নিস না।হেরে ছোট কি তোর খেয়াল রাখে না।ঠিকমতো খাবার খাস বলে তো মনে হচ্ছে না।
বড় আম্মুর বানী শুনে আমি বললাম,
— ঠিক বলেছো বড় আম্মু। তোমার ছোট আমার একটুও খেয়াল রাখে না। আদরও করে না।পিচ্চুকেই সব আদর করে।আমাকে খালি ধমকায়।
— হুম তাইতে বলি।আমার মেয়েটা দিন দিন এমন রোগা হয়ে যাচ্ছে কেন?
— দেখলে বড় আম্মু।তুমি আমাকে কত ভালোবাসো! তোমার ছোট আমাকে একদম ভালোবাসে না।আমি তোমার কাছেই থাকবো আম্মুর কাছে যাবো না।তুমি আম্মুকে আচ্ছা করে বকে দেবে কেমন?
বড় আম্মু কোল জরিয়ে আদুরে গলায় বললাম।
বড় আম্মু বললো,
— আচ্ছা বকে দিব।এখন কিছু খেয়ে নে।
তারপর নিজ হাতে আমায় আদর করে খাইয়ে দিল।
.
বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে উপুর হয়ে শুয়ে আছি আমি আর আপু।আপু তার ফাংশনে কি কি হবে সেসব নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করছে।প্রথমেই বার্থডে সেলিব্রেশন আর তারপর এন্গেইজমেন্ট পার্টি।এরমাঝেই আমি বলে উঠলাম,
— আচ্ছা আপু।ভাইয়া তোমাকে খুব ভালোবাসে তাই না?
— হুম।তবে হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন? তুই তো কখনো এসব বিষয়ে প্রশ্ন করিস না।
— এমনিতেই।তোমার প্রতি উনার কেয়ারিং দেখলেই বোঝা যায়।
— আচ্ছা কথা তোর কোন বিএফ আছে? থাকলে বলতে পারিস। বাড়ির দিকটা আমি ম্যানেজ করে নিব।
— আরে না না! কি বলো আপু? আমার ওসব বফ টফ নেই।আমি এসবে ইন্টারেস্ট নেই।আমার তো আলাদা একটা জগৎ আছে। তুমি তো জানো প্রকৃতিতে মিশে থাকতে ভালো লাগে আমার।ওসব নিয়ে ভাবার বা টাইম পাস করার মত সময় নেই আমার হাতে।
–সত্যি বলছিস?
— একদম সত্যি।
— কিন্তু এ বয়সে মেয়েদের তো বফ থাকাটা স্বাভাবিক।
— থাকাটা স্বাভাবিক নয় আপু।না থাকাটাই স্বাভাবিক। জানো আমার সব বন্ধুদের বফ গফ আছে।সারাক্ষণ ফোনে প্যান প্যান।কি এসব ভালো লাগে না আমার।
— কখনো কাউকে ভালোবেসেছিস?
— নাতো! কেন আপু?
— তাহলে বুঝবি না।
— কেন বুঝবো না।বুঝিয়ে বললেই বুঝবো।
— আচ্ছা আপু তুমি কি করে বুঝলে যে তুমি রোহান ভাইয়াকে ভালোবাসো।
আচ্ছা আপু তুমি তো তোমার লাভ স্টোরিটা বললে না।আমি তো শুধু জানি তোমরা একে অপরকে পছন্দ করো।তো এই পছন্দের শুরুটা কোথা থেকে হলো? কিভাবে এগোলো কিছুই তো বললে না।
— কখনো জানতে চেয়েছিস যে বলবো।আর তাছাড়া তুই তো আমাকে ভালাই বাসিস না।তাই এত করে বলার পরও এলি না। আর এবার স্রোতকে পাঠাতেই সুরসুর করে চলে এলি।
— আরে আপু ছাড়ো তো তোমার বদরাগী গোমরামুখো হনুমান ভাইয়ের কথা।আমি তো তোমার জন্যই এলাম আর তুমি এভাবে বলছো।
— তো কিভাবে বলবো? তুই যা করেছিস তাই তো বলছি।আচ্ছা বলতো স্রোতের সাথে সারা রাস্তায় তোর ঝগড়া হয়নি।আই মিন টু সে, ও তোকে ধমক দেয় নি।ও যা রাগী। ওর রাগের সাথে তো পারা মুশকিল।আমি তো একবার ভয় পেয়েছি। যে ওকে তো পাঠিয়ে দিলাম।তুই যা ঘ্যাড়ত্যাড়া যদি না আসার জন্য জেদ করিস তবে ও তোর কি অবস্থা করবে সেই ভেবে দুঃখে ভেসে যাচ্ছিলাম একেবারে।
আপুর কথা শুনে কালকের রামধমক টা মনে পড়ে গেল।মুহুর্তেই মেজাজ বিগড়ে গেল আমার। তবে সেট্া অপ্রকাশিত রাখলাম।আর আপুকে মুখ কালো করে বললাম,
— এত দুঃখের সাগরে না ভেসে পাড়ে ফিরে আসো।আমি কারো ঝাড়ি বা ধমক খাই নাই। বারবার একথা মনে করাবা না।বলবা ও না।তোমার ভাই যে এই পৃথিবী না মহাবিশ্বের এক মাত্র অসভ্য ব্যাক্তি সেটা তার চেহারাতেই জ্বলজ্বল করে।
আপু উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। আর হাসতেই বললো,
— তাই বুঝি।তুই জানিস স্রোত যদি একথা জানতে পারে তবে তোর কি হাল করবে? আমার ভেবেই কলিজা কেঁপে উঠছে। তোর জন্য মায়া হচ্ছে।
–আপু। তুমি ওসব বাদ দাও আর আমাকে বলো আসলে এই ভালোবাসা কি? আমিও জানতে চাই।
#চলবে…..