তুমি ছিলে বলেই শেষ পর্ব

0
229

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ২৭(অন্তিম)
#দিশা_মনি

নিপুণ দৌড়াতে দৌড়াতে এসে উপস্থিত হলো চিঠিতে পাওয়া ঠিকানায়। কিন্তু সেই স্থলে এসে সে কাউকেই দেখতে পেল না। নিপুণ অবাক হলো ভীষণ। নিজের মাকে ডাকতে লাগল অবিরত ভাবে। আচমকা তার সামনে চলে আসলো ইশা। ইশাকে দেখে নিপুণ ভড়কালো। ভ্রু কুচকে বলল,
“তুমি এখানে কি করছ?”

ইশা অট্টহাসি দিয়ে বলে,
“তোমার মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানাতে এসেছি আমি।”

“তার মানে তুমি আমাকে ঐ চিঠিটা দিয়েছিলে?”

“একদম ঠিক ধরেছ। আমার আসল উদ্দ্যেশ্য তো ছিল তোমাকে মে*রে ফেলা। যাতে করে তুমি আমার রুদ্রার জীবন থেকে সরে দাড়াও। রুদ্রাকে যে আমি ভীষণ ভালোবাসি।”

“তুমি এমনটা করতে পারো না।”

“আমি এমনটাই করবো। তুমি নিজের মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানাতে প্রস্তুত হও নিপুণ।”

এই কথাটা বলে ইশা যেই না বন্দুকটা চালাতে যাবে ওমনি রুদ্র সেখানে এসে উপস্থিত হলো। সে নিপুণকে বাঁচিয়ে নিলো। অতঃপর ইশার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“তোকে আমি নিজের বন্ধু ভেবেছিলাম ইশা। আর তুই এভাবে আমার পিছে ছু’রি মা*রলি।”

“আমি তোকে বন্ধু ভাবিনি রুদ্রা। আমি ভালোবাসি তোকে।”

“এটা কেমন ভালোবাসা? যে তুই আমার ভালোবাসারই ক্ষতি করতে চাইছিলি?”

“তোকে পাওয়ার জন্য এছাড়া যে আর কোন রাস্তা ছিল না।”

“ভুল রাস্তা বেছে নিয়েছিলি তুই। আর এবার তার জন্য তোকে উপযুক্ত শাস্তিও পেতে হবে। ইন্সপেক্টর এরেস্ট হার।”

মহিলা পুলিশ সদস্যরা এসে ইশাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এসব কিছু হয়ে যাবার পর রুদ্র নিপুণকে বলে, “তুমি ঠিক আছ তো?”

” না, আমি মোটেই ঠিক নই। শুধুমাত্র আপনার জন্য আমি ঠিক থাকতে পারছি না।”

“এসব তুমি কি বলছ নিপুণ?”

“হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি। আপনি আমার মাকে লুকিয়ে রেখেছেন। আমাকে নিজের মতো করে চালোনা করছেন। এত সবকিছুর পর আমি কিভাবে ভালো থাকব। আর আপনি তো খুব নিজের বান্ধবীকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন তো এবার নিজেকেও পুলিশের হাতে তুলে দিন।”

“আমি নিজেকে কেন পুলিশের হাতে তুলে দেব?”

“কারণ আপনি একটা খু**নি। প্রজ্ঞার খু***ন করেছেন আপনি।”

তখনই হঠাৎ করে মাস্ক পড়া একটি মেয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে,
“জীবিত ব্যক্তির খু**নের জন্য কেউ কিভাবে শাস্তি পেতে পারে?”

নিপুণের খুব চেনা চেনা লাগা মেয়েটির গলা। তাই সে জিজ্ঞেস করে,
“কে আপনি?”

মেয়েটি মাস্ক খুলতেই নিপুণ হতবাক হয়ে যায়। তার তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস হয়না। সে অবাক হয়ে বলে,
“প্রজ্ঞা, তুমি বেঁচে আছ?”

প্রজ্ঞা মৃদু হেসে বলে,
“হ্যাঁ, আর আজ আমার বেঁচে থাকার সব কৃতিত্ব রুদ্র স্যারের। উনিই আমাকে আর আপনাকে সেফ করার জন্য এসব করেছেন।”

“মানে?”

রুদ্র বলতে শুরু করে,
“আমার বাবা রাজীব চৌধুরী একজন অত্যন্ত ক্ষমতাবান ব্যক্তি। উনি তোমাকে আর প্রজ্ঞাকে মে**রে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলেন। আমি সেইসময় তোমাকে আর প্রজ্ঞাকে সেফ করার উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তারপর অনেক ভেবে এই প্ল্যান সাজাই। প্রথমে প্রজ্ঞাকে সবটা জানাই এবং ওকে মে**রে ফেলার মিথ্যা নাটক করি এবং তারপর তোমাকে সেফ করার জন্য বিয়ে করে নিজের কাছে নিয়ে আসি।”

নিপুণ জিজ্ঞেস করে,
“তাহলে আপনি আমাকে সবটা জানান নি কেন?”

“সত্যটা জানলে তুমি হয়তো আমাকে সঙ্গ দিতে না। কারণ তুমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করতে চাও”

প্রজ্ঞা বলে,
“আপনার মাকেও রুদ্র স্যার নিরাপদে রেখেছেন। আমি এতদিন আপনার মায়ের খেয়াল রেখেছিলাম।”

নিপুণ ধীর পায়ে রুদ্রর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আপনি আমার জন্য এত কিছু কেন করলেন?”

“ঋণ শোধ করার জন্য।”

“কিসের ঋণ?”

“তোমার বাবার কাছে আমি ঋণী নিপুণ। ছোটবেলায় যখন রাজীব চৌধুরী আমাদের অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তখন উনি আমাকে এবং আমার মাকে সাহায্য করেছিলেন। সেই ঋণের প্রতিদানের জন্যই।”

“শুধুই কি প্রতিদান নাকি অন্যকিছু?”

“সত্যি বলতে আরো অনেক কিছুই। তুমি আমার লাইফে এসে আমায় ভালোবাসতে শিখিয়েছ। #তুমি_ছিলে_বলেই আমি ভালোবাসার মর্ম বুঝেছি। মিথ্যা বলব না, আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি নিপুণ। যদিও আজকের পর আমি তোমাকে ফ্রি করে দেব কারণ আমার উদ্দ্যেশ পূরণ হয়েছে। আমার বাবার একটা অনৈতিক ব্যবসার বিরুদ্ধে তোমার বাবা কেস লড়ছিল জন্য উনি তোমার বাবাকে মে*রে ফেলেন এবং দূর্ঘটনার নাটক সাজান। সেটা এখন প্রমাণিত। এই কেসের জন্য রাজীব চৌধুরীকে এবং প্রজ্ঞাকে রে**পের জন্য রাহাতও গ্রেফতার হয়েছে। এখন তুমি নিরাপদ। তাই আমি আর তোমাকে আটকাবো না। তুমি নিজের পথে চলে যেতে পারো।”

প্রজ্ঞা নিপুণের কাছে তার মাকে এনে দেয়। নিপুণ তার মাকে পেয়ে তার সেবায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অতঃপর রুদ্রর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনার কাছে আমিও আজ থেকে ঋণী হয়ে রইলাম। তবে সত্যি এটাই আমার মনে আপনার জন্য কোন অনুভূতি নেই। ভালো থাকবেন।”

এটুকু বলেই সে নিজের মাকে নিয়ে রওনা দেয়। যাওয়ার সময় আর একটিবারও পিছনে ফিরে চাইল না৷ রুদ্রের বুকের বা পাশে অদ্ভুত ব্যাথা অনুভূত হলো। তার মন যেন কেদে উঠল। রুদ্র নিজের কষ্টে গান ধরল,
“Accha chalta hoon Duaaon mein yaad rakhna Mere zikr ka zubaan pe swaad rakhna Dil ke sandookon mein Mere acche kaam rakhna Chitthi taaron mein bhi Mera tu salaam rakhna Andhera tera maine le liya Mera ujla sitaara tere naam kiya Channa mereya mereya Channa mereya mereya Channa mereya mereya Beliya O piya… Channa mereya mereya”

নিপুণ আর নিজেকে আটকাতে পারল না। দৌড়ে এসে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরল। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল,
“কেন আমার এত কষ্ট হচ্ছে মিস্টার রুদ্র চৌধুরী? আমি কি তবে আপনাকে ভালোবেসে ফেললাম?”

★★★
৩ মাস পর,
মহাসমারোহে রুদ্র ও নিপুণের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। গতবার বিয়েটা সাধারণ ভাবে হলেও এবার বেশ ধুমধামের সহিতই হচ্ছে। এমপি রুদ্র চৌধুরীর বিয়ে বলে কথা। রুদ্র চৌধুরীর আর তর সইছে না। তবে আজ যেন তার জন্য আরো বড় কিছু অপেক্ষা করছিল। ইশার সৎমা মালিনী বেগম আজ দেখা করতে এলো রুদ্রর সাথে। তিনি এসেই রুদ্রর উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
“আজ তোমাকে আমি কিছু কথা বলতে চাই। যা না বললে আমি মরেও শান্তি পাবো না। আসলে তোমার মা যেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আমি সেখানকার নার্স ছিলাম৷ তোমার মা সাধারণ ভাবে ম*রে যায়নি। তোমার সৎমা তাকে খু**ন করেছিল এমনকি তোমার সদ্যজাত বোনকেও ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল। আমায় সেইসময় প্রাণের ভয় দেখিয়ে এবং অনেক টাকা দিয়ে চুপ করে রেখেছিল। তবে এবার আমি সব সত্য তোমায় জানাতে এসেছি। এমনকি অনেক কষ্টে অনাথ আশ্রম থেকে তোমার বোনের বর্তমান ঠিকানাও জোগাড় করে এনেছি। এই নাও সেই ঠিকানা।”

রুদ্র আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না। দৌড়ে চলে যায় সেই ঠিকানা অনুযায়ী।

স্নেহা তার বাবার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকদিন আগেই আব্বাস খান ইহজগতের মায়া ত্যাগ করেছেন। স্নেহার বিয়েটাও আর হয়নি। মৃত্যুর আগে স্নেহার বাবা তাকে জানিয়েছিল যে সে তার আসল মেয়ে নয়৷ যদিও স্নেহা এটা আগে থেকেই জানত। তার চোখ থেকে অনবরত জল পড়ছে। স্নেহা কান্নারত স্বরে বলে,
“তুমি আমায় কেন একা করে ফেলে গেলে আব্বু? এখন আমি কার কাছে থাকব?”

হঠাৎ করেই রুদ্র দৌড়ে স্নেহার ঘরে প্রবেশ করল। স্নেহাকে দেখেই বুঝতে পারল এই তার বোন।ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। হঠাৎ একজন পুরুষ মানুষ এভাবে জড়িয়ে ধরায় স্নেহা দ্রুত সরে গিয়ে বলল
“কে আপনি? আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরছেন কেন?”

“আমি তোমার ভাই হই।”

স্নেহা কিছুই বুঝল না। রুদ্র স্নেহাকে সব খুলে বলল। সব শুনে সে আবেগাপ্লুত হয়ে গেল। সে এবার রুদ্রকে জড়িয়ে ধরল। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। অবশেষে সে নিজের আসল পরিবারের খোঁজ পেল।

_★
স্নেহাকে নিয়ে রুদ্র নিজের বাড়িতে ফেরে। নিপুণ স্নেহাকে দেখে অবাক হয়। রুদ্র সবার সামনে স্নেহার আসল পরিচয় বলে। নিপুণ খুব খুশি হয়।

নিপুণ ও রুদ্রের বিয়ে সম্পন্ন হয়। অবশেষে তাদের পরিবার সম্পুর্ণ হয়৷ দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে ফেলে দীপ্র। তার ভালোবাসার মানুষটা এখন অন্যকারো। তার ভীষণ কষ্ট হয় কান্না পায়৷ সে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে করতে বলে,
“তুমি আমার ভাগ্যে ছিলে না নিপুণ। তাই হয়তো আমাদের এভাবে আলাদা হয়ে যেতে হলো।”

আনমনা হয়ে চলতে গিয়েই স্নেহার সাথে ধাক্কা খেল দীপ্র। স্নেহা পরে যেতে নিতেই দীপ্র তাকে ধরে নেয়। তারা একে অপরের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে থাকে।

~~~~~~~✨সমাপ্ত ✨~~~~~~~~~~
[আমি জানি গল্পটা এভাবে শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকে অবাক হয়েছেন৷ কেউ কেউ হয়তোবা খুব রাগও করছেন আমার উপর। তবে বিশ্বাস করুন আমার এটা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। আমার ফোনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সমস্যা বলতে ফোনে চার্জ উঠছে না। ফোনটা মেকানিককে দেখাতে তারা বলল, ফোনটা আর ভালো হবে না। নতুন ফোন কিনতে হবে। এদিকে ফ্যামিলি থেকে বলে দিয়েছে ২-৩ মাসের আগে নতুন ফোন তারা কিনে দেবে না। আমি নিজে এতটা সাবলম্বী নই যে নিজের ফোন কিনতে পারব। এখন হঠাৎ করে ফোনটা নষ্ট হয়ে গেলে তো আর ২-৩ মাস আপনাদের বসিয়ে রাখতে পারতাম না। তাই গল্পটা অসম্পূর্ণ রেখেই শেষ করে দিতে হলো। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আশা রাখছি খুব শীঘ্রই আপনাদের মাঝে আবার ফিরতে পারব। ততদিন অব্দি আমার পাশেই থাকবেন। আমার পাঠকদের বলব আমার জন্য অপেক্ষা করতে। খুব শীঘ্রই দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। আর হ্যাঁ, সবাইকে অনুরোধ জানাবো এই গল্প সম্পর্কে আজ শেষবারের মতো কিছু গঠনমূলক কমেন্ট করতে। জানি না পরবর্তীতে আবার কবে আপনাদের কমেন্ট পড়তে পারব। আজ মনে করুন, এটা আমার আকুল আবেদন গল্প সম্পর্কে কিছু গঠনমূলক কমেন্ট দেখার। জানি সুন্দর হয়নি গল্পটা কারণ শেষটা খুব তাড়াহুড়ো করে দিতে গিয়ে পুরো জগাখিচুরি হয়ে গেছে। তবুও কিছু সুন্দর কমেন্ট দেখতে চাই। রচনার মতো কমেন্ট পেলেও মাইন্ড করব না বরং খুশিই হবো। আবার কখন আপনাদের কমেন্ট পড়ার সৌভাগ্য হবে জানি না। তাই আমার এই ইচ্ছা পূরণ করবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here