তুমি ছিলে বলেই পর্ব ১৩

0
192

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১৩(মহাধামাকা পর্ব)
#দিশা_মনি

নিপুণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুব সুন্দর করে সাজছে। তার পড়নে লাল রঙের একটি কাতানের শাড়ি আজকের দিনটা দীপ্রর সাথে আলাদাভাবে কা’টানোর জন্যই বরাদ্দ রেখেছে সে। নিপুণ তৈরি হয়ে বের হতে যাবে এমন সময় শাহিনা খাতুন তাকে আটকে বললো,
“কিরে এত সেজে কোথায় যাচ্ছিস?”

“দীপের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি মা।”

“তোদের মধ্যে তাহলে কি সব ঠিক হয়ে গেছে? বাহ, জেনে খুশি হলাম। এখন আমার শান্তি লাগছে।”

নিপুণ মৃদু হাসে। নিপুণ ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। শাহিনা খাতুন অস্থির হয়ে বলেন,
“দেখে চলবি তো।”

নিপুণ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“শাড়িতে পা আটকে পড়ে গেছিলাম মা। আসলে অভ্যাস নেই তো। আমি তাহলে যাচ্ছি।।”

“এখন যাস না। একটু অপেক্ষা করে যা?”

“কেন?”

“এভাবে হোঁচট খেলি, এখন যাওয়া ঠিক হবে না।”

“এসব কুসংস্কার মা। দীপ আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমায় যেতে হবে।”

এই বলে নিপুণ আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে যায়। শাহিনা খাতুন তাকে আটকাতে ব্যর্থ হয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,
“এই মেয়েটা যদি আমার একটা কথা শুনত!”

★★★
দীপ্রর মন মেজাজ আজ অনেক ফুরফুরে। কতদিন পর আজ নিপুণের সাথে মুখোমুখি হবে সে। নিজেদের মধ্যকার সব বোঝাবুঝি মিটিয়ে আজ আবার তারা এক হবে। দীপ্র নিজের হাতে থাকা গিফটটার দিকে তাকায়। মুচকি হেসে ভাবতে থাকে আজ নিপুণকে কিভাবে সারপ্রাইজ দেবে। আজ সবার সামনে নিপুণকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করবে সে। এমনিতেই তাদের বিয়ের আর বেশি দেরি নেই। বিয়ের কথা ভাবতেই দীপ্রর মনে খুশির আমেজ তৈরি হয়। আর কিছুদিন পর সে নিপুণকে নিজের খুব আপন করে পাবে। নিপুণকে নিয়ে একটি ছোট্ট টোনাটুনির সংসার সাজাবে। এসব ভেবেই হেসে চলেছিল সে। এদিকে সময় অতিবাহিত হতে থাকে। দীপ্র নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
“নিপুণ তো বলেছিল ৮ টার মধ্যে চলে আসবে। এখন তো ৮ঃ২০ বাজে। ও এখনও আসছে না কেন?”

দীপ্র নিপুণকে কল দেয়। কিন্তু নিপুণ কলটা রিসিভ করে না। দীপ্র ভাবতে থাকে,
“নিপুণ কি কোন সমস্যায় পড়েছে? না হলে ও আমার ফোন ধরছে না কেন?”

★★
নিপুণ রওনা দিয়েছে রুদ্র চৌধুরীর গোপন ডেরার দিকে। যেখানে রুদ্র চৌধুরী প্রজ্ঞাকে অপহরণ করে রেখেছে। অনেক খোঁজার পর অবশেষে সে সেই স্থানের সন্ধান পেয়েছে। তাই আর সময় নষ্ট করতে চায়না সে। প্রজ্ঞাকে ওরা অন্য কোন স্থানে সরিয়ে নেওয়ার আগেই প্রজ্ঞাকে রুদ্রর ডেরা থেকে উদ্ধার করতে চায় নিপুণ।

নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নামে নিপুণ। অতঃপর প্রবেশ করে ডেরার ভেতর। সেখানে প্রবেশ করে কাউকেই দেখতে পায়না নিপুণ। ধীরে ধীরে সে আরো ভেতরে প্রবেশ করে৷ কিছুদূর যেতেই সে দেখতে পায় প্রজ্ঞাকে একটি চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রজ্ঞার কাছাকাছি যেতেই নিপুণ হতবাক হয়ে যায়। কেউ প্রজ্ঞার বুকে ছু’রিকাঘাত করেছে। নিপুণ ভয় পেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আসে। অতঃপর সে সাহস করে প্রজ্ঞার কাছে গিয়ে তার নিঃশ্বাস চেক করেই দেখতে পায় নিঃশ্বাস পড়ছে না। নিপুণ এবার অনেক বেশিই ভয় পেয়ে যায়। তড়িঘড়ি করে সে পুলিশকে ফোন করতে যাবে এমন সময় হঠাৎ করে তার পেছনে চলে আসে রুদ্র চৌধুরী। নিপুণ ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে রুদ্র চৌধুরীর দিকে তাকায়। তার কাছে গিয়ে তার কলার ধরে বলে,
“আপনি একটা খারাপ লোক। আপনি মে’রেছেন প্রজ্ঞাকে তাই না? আমি আপনাকে ছাড়ব না। আপনাকে উপযুক্ত শাস্তি আমি পাইয়ে দিয়েই ছাড়ব।”

রুদ্র নিপুণকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,
“খুব সখ না তোমার ন্যায়ের হয়ে লড়াই করা? এবার দেখ আমি তোমার কি অবস্থা করি।”

নিপুণ বিদ্রুপাত্মক হেসে বলে,
“কি করবেন আপনি? মে’রে ফেলবেন আমায়? তাতে কোন লাভ হবে না। আমি এখানে আসার আগে আমার এক বন্ধুকে সবটা জানিয়ে রেখেছি। আপনার বিরুদ্ধে আমি কিছু প্রমাণও সংগ্রহ করেছি। আমার কিছু হয়ে গেলে সেইসব প্রমাণ সে সবার সামনে আনবে। যারফলে আমার খু*নের কেসে কিন্তু আপনি ফেঁসে যাবেন।”

রুদ্র চৌধুরী বিকট হাসি দেয়। নিপুণ রুদ্র চৌধুরীর এই হাসির মানে বুঝতে পারে না। সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রুদ্র চৌধুরীর দিকে। রুদ্র চৌধুরী নিপুণের দিকে উপহাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“তুমি কি আমাকে এতটাই বোকা ভেবেছ? আমি কেন মা’রতে যাব তোমাকে? তোমাকে মে**রে তো কোন মজাই পাওয়া যাবে না। তোমাকে নিয়ে যাতে মজা করতে পারি আমি সেই ব্যবস্থাই করব।”

নিপুণের কপালের ভাঁজ চওড়া হয়। রুদ্র চৌধুরী নিপুণের সামনে নিজের ফোনে একটি ভিডিও দেখিয়ে বলে,
“তোমার বাড়ির আশেপাশে আমার লোকেরা ঘিরে রেখেছে। যদি তুমি কোন বাড়াবাড়ি করার চেষ্টা করো তাহলে তোমার মাকে ওরা…”

নিপুণ চিৎকার করে বলে ওঠে,
“না….আমার মায়ের কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না। নাহলে কিন্তু আমি..”

“কুল নিপুণ কুল। মেয়েদের এত রাগ, জেদ বেমানান লাগে। তুমি যদি চাও ওরা তোমার মায়ের কোন ক্ষতি না করুক তাহলে আমি যা বলবো তোমায় তাই করতে হবে।”

নিপুণ ক্রোধে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। তার ইচ্ছা করছে রুদ্র চৌধুরীকে এই মুহুর্তে মে*রে শেষ করে দিতে কিন্তু তা সম্ভব নয়। নিপুণ তাই নিজের দুই চোখ বন্ধ করে নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বলে,
“বলুন আপনি কি চান।”

“তোমাকে চাই।”

নিপুণ নিজের চোখ খুলে বিস্ফোরণ দৃষ্টিতে রুদ্র চৌধুরীর দিকে তাকায়। বলে ওঠে,
“কি বলছেন টা কি আপনি?”

“যা শুনেছ তাই। আমি তোমাকে চাই। তাও আবার হালালভাবে নিজের স্ত্রী হিসেবে। কি জানো তো তোমার সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে গেছি আমি। তাই তো তোমাকে নিজের কাছে রাখতে চাই।”

“আপনাকে তো আমি..”

“আমার কোন ক্ষতি করার চিন্তাও করো না। নাহলে কিন্তু তোমার মায়ের খাটিয়া সাজানোর ব্যবস্থা করতে হবে।”

নিপুণ নিজের হাত খামছে ধরল। এইরকম পরিস্থিতিতে যে কখনো তাকে পড়তে হতে পারে সেটা সে ভাবতেও পারেনি। রুদ্র চৌধুরী যেন নিপুণকে এভাবে দেখে খুব মজা পেল। নিপুণ তখন নিজের শক্ত খোলস ছেড়ে অনেকটাই নরম হয়েছে। নিপুণকে বড্ড অসহায় দেখতে লাগছে। এই ব্যাপারটা নিয়েই রুদ্র চৌধুরী ব্যঙ্গ করে বলে,
“তোমার মতো এতো স্ট্রং একটা মেয়েকে এভাবে ভাঙতে দেখে আমার কিন্তু পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে। আসলে মেয়েদের এমন নরম রূপেই মানায়। শক্ত খোলস তাদের কাছে বড্ড বেমানান। তো যাইহোক বলো তুমি কি সিদ্ধান্ত নিলে।”

“আমার মায়ের যেন কোন ক্ষতি না হয়।”

“কোন ক্ষতি হবে না। তুমি শুধু আমার কথাটা মেনে নাও।”

নিপুণ ধরে আসা গলায় বলল,
“বেশ, আমি মেনে নিলাম আপনার কথা। আমি আপনাকে বিয়ে করবো।”

“এতক্ষণে তোমার সুবুদ্ধি হলো তাহলে।”

★★★
নিপুণকে না পেয়ে তার ফোনের লোকেশন ট্রাক করে সেই ঠিকানা অনুযায়ী রওনা দেয় দীপ্র। ঠিকানাটা একটি কাজি অফিসের সামনে এসে থামে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে যায় দীপ্র। তড়িঘড়ি গাড়ি থেকে নেমে কাজি অফিসের দিকে রওনা দেয়।

নিপুণ পাথরের মতো নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে৷ কাজি সাহেব তাকে কবুল বলতে জোর দিচ্ছে। এদিকে নিপুণ কিছুতেই এই বিয়েটা মানতে পারছে। একে তো এই রুদ্র চৌধুরীর মতো এত জঘন্য একটা মানুষকে তার বিয়ে করতে হচ্ছে তার উপর সে যে দীপ্রকে ভালোবাসে। নিপুণের মানসপটে বারবার দীপ্রর ছবিটাই ভেসে আসতে থাকে। নিপুণ তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমার পক্ষে এই বিয়ে করা সম্ভব নয়।”

তখন রুদ্র চৌধুরী শীতল অথচ কঠোর কন্ঠে বলে,
“তুমি বোধহয় নিজের মার ভালোটা চাইছ না।”

নিপুণ প্রচণ্ড অসহায়ত্ব বোধ করে। এই মুহুর্তে তার চোখে জল চলে আসে। নিপুণকে এভাবে কাঁদতে দেখে ভীষণ আনন্দ পায় রুদ্র চৌধুরী৷ মনে মনে বলে,
“আমার বিরুদ্ধে লড়তে চাইছিলে না তুমি? এবার দেখো এর ফল কত ভয়ানক হতে পারে। তোমাকে একবারে মে**রে তো কোন আনন্দ নেই। এভাবে তিলে তিলে মারব তোমায়।”

অতঃপর তাড়া দিয়ে বলে,
“জলদি কবুল বলো।”

নিপুণ কান্নায় ভেঙে পড়ে। এত অসহায় কখনো বোধ করে নি সে। চোখ বন্ধ করে নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে সে বলে ওঠে,
“কবুল।”

এমন সময় দীপ্রও কাজি অফিসে প্রবেশ করে। নিপুণকে কবুল বলতে শুনে নেয় সে। দীপ্রর পায়ে তলা থেকে মাটি সরে যায়। সে বিমর্ষ কন্ঠে বলে ওঠে,
“নিপুণ…”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here