#তুমি_আসবে_বলেছে_হৃদয়
#পর্ব-৬
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)
-” কাকে?
রিদিশা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। সে চাতক পাখির মতো চেয়ে রইলো উত্তরের আশায়। এরিক থতমত খেয়ে গেলো রিদিশার কথায়। ভূল হয়ে গেছে বড্ড। ভুল জায়গায় সে ভুল কথা সরি সঠিক কথা বলে ফেলেছে। এখন কি হবে? কি বলবে? উপায় না পেয়ে হাঁসফাঁস অবস্থা। এরিকের ভাবনার মাঝেই দরজায় করাঘাত পড়লো। মিহি একটা মেয়ে কন্ঠে ভেসে এলো-
-” মে আই কাম ইন স্যার?
এরিক চকিতে দরজার দিকে তাকালো। এক টুকরো হাসি ফুটলো মুখে। রিদিশা কে এরিয়ে তাড়াতাড়ি করে বলল-
-” ইয়েস কাম ইন।
ফিওনা অনুমতি পেয়েই কিছু ফাইল নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। এরিক হাফ ছেড়ে বাঁচলো। রিদিশার আর জানা হলো না এরিকের কথার মানে! সেও নিজের মতো করে কাজে মনযোগ দিলো। এরিক ফিওনার সাথে কথা বলছে আর আরচোখে রিদিশার দিকে তাকাচ্ছে। রিদিশার অস্বস্তি হচ্ছে এরিকের চাহনিতে। ব্যাপারটা বেশ খটকা লাগছে ফিওনার। তবুও সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রিদিশার কৌতূহলী মনে এরিকের কথাটা বারবার নাড়া দিচ্ছে। কথাটা তাকে কখনোই বলবেনা এরিক। কারণ ও জানে আমি ওর সিনিয়র! তাহলে কথাটা কার জন্য ছিলো? এরিক আবেগে ও যদি বলে তাহলে আমি বুঝাবো। দরকার পড়লে ওর থেকে দূরে চলে যাবো। আর বেশি মাথা ঘামালো না রিদিশা। ফিওনা নানা অঙ্গভঙ্গি করে এরিকের আকর্ষণ পাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এরিক ফাইল থেকে মুখ তুলছেই না। রিদিশার রাগ হচ্ছে ফিওনার কাজ কর্মে। একটা মেয়ে এতই সস্তা? যে নিজে যেচে ছেলেদের আকর্ষণ পাওয়ার চেষ্টা করে! ফিওনা বিরক্ত হয়ে বলে-
-” এরিক স্যার!
নিজের নামের ডাক শুনে এরিক মাথা তুলে তাকায়। গলা গম্ভীর করে বলে-
-” ইয়েস।
ফিওনা একগাল হাসি দেয়। এরিকের দিকে মায়াবী হাসিতে তাকিয়ে বলে-
-” স্যার আজকে আমাকে কেমন লাগছে?
বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে আসে এরিকের। ধমক দিতে ইচ্ছে করছে। তবুও নিজেকে সংযত করে হেসে বলে-
-” আপনি কি এখানে পার্লারে এসেছেন আন্টি? যে আগে বয়স্ক দেখাতো , এখন মেকআপ করার পর কেমন লাগছে, বাচ্চা বাচ্চা লাগছে কি না সেটা আমায় জিজ্ঞেস করছেন! নাকি আমাকে মেকআপ আর্টিষ্টের মতো লাগছে?
এরিকের কথা শুনে হো হো করে হেসে দেয় রিদিশা। এরিক রিদিশার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়। রিদিশা এরিকের তাকানো দেখেই চুপ করে মুখ টিপে হাসতে থাকে। অপমানে ফিওনার মুখ লাল হয়ে গেছে। বেচারি এমন অপমান মনে হয় জীবনেও হয়নি। তাড়াতাড়ি করে ফাইল নিয়ে গটগট করে চলে যায় ফিওনা।
_________
ফিওনা রেগে গিয়ে ধ’রা’ম করে ইথানের রুমের দরজা খোলে। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ফাইলগুলো ডেস্কের উপর ছু’ড়ে ফেলে। ইথানের কাছে গিয়ে কলার ধরে ঝাঁ’কি দিয়ে বলে-
-” আর কত অপমান সহ্য করবো তোমার জন্য? আর কতো এন্সার মি?
ইথান নিজের কলার ছাড়িয়ে নেয়। ফিওনাকে শান্ত করতে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। গলার স্বর নিচে নামিয়ে বলে-
-” দেখো কাজটা যত সোজা ভেবেছো, তত সোজা নয়। এরিক বিদেশে থাকলেও ওর কালচার কেমন যেনো। বড় কথা হচ্ছে ও মুসলিম ধর্মীয়। ওদের ধর্মে শিক্ষা অন্যরকম। কিন্তু আজকাল কজন তা মানে। এই ছেলের ফ্যামিলি একে ছোট থেকেই এমন বানিয়েছে। মেয়েদের ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। তাই ওর নিজের কারো উপর ফিলিংস না থাকলে তার কাছেও ঘেঁষবে না।
ফিওনা ইথান কে ঝ’টকা মে’রে সরিয়ে দেয়। ফুসফুস করতে করতে নিজের চেয়ারে বসে। দুহাতে মাথা ধরে, চোখ বন্ধ করে বলে-
-” তুমি বুঝতে পারছো না কিছু। এরিক আমাকে কতকিছু বলে অপমান করেছে। রেইদিশ্যা তা শুনে খিলখিলিয়ে হেসেছে। তবুও সে কিছু বলেনি। এরিক রেইদিশ্যার প্রতি এডিক্টড্ হয়ে যাচ্ছে। সব হাতের বাহিরে চলে যাবে।
ফিওনা মুখটা মলিন করে ইথানের দিকে উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে। ফিওনার কথায় ভাবনায় পড়ে যায় ইথান। সে রিদিশাকে পাঠিয়েছে যাতে এরিক তাদের হাতের মুঠোয় থাকে। আর রিদিশা এরিকের সিনিয়র। সে কি কখনো ওর সাথে রিলেশনে যাবে? এরিক যদি সত্যি রিদিশার প্রতি আসক্ত হয় তবে তো সব প্ল্যান ফ্লপ যাবে। মেয়েটা খুব বুদ্ধিমতি। নিজের মনে কথার সুতো পাকাচ্ছে ইথান। ফিওনা হাত ধরে নাড়া দিয়ে বলে-
-” তুমি কি ভাবছো? আমাকে বলো প্লিজ। আমি আর অপেক্ষা করতে পারবো না।
ইথান সয়তানি হাসি দিয়ে ফিওনার পাশে বসে। এবার বাজিমা’ত সে করবেই। হয় ম রবে, নয় মা রবে! রিদিশা এখন মূল গুটি!
_________
ফিওনার যাওয়ার পর রিদিশা হেসেই ফেলে জোরে। এরিক রাগী চোখে তাকাতে গিয়েও পারেনা। এত মিষ্টি হাসি থামাতে ইচ্ছা করছেনা। সহজে হাসতে দেখে না মেয়েটাকে। দুঃখের কালো মেঘেরা যেনো তার চোখে মুখেই ভর করে থাকে।এরিক বিমুগ্ধ হয়ে চোখ বন্ধ করে বলে-
-” তোমার হাসিতে রোদের উত্তপ্ত কিরণ ও তে’জষ্ক্রি’য়তাও নিমিষেই ঠান্ডা হয়ে যাবে। তোমার হাসির সাথে বৃষ্টি ধ্বনির ও তুলনা হয়না। তোমার হাসি পেঁজা মেঘের ন্যায় শুভ্র কোমল। তোমার হাসিতে কাশফুল বনেও আন্দোলন শুরু হবে। তোমার হাসি শীতের শৈত্যপ্রবাহ কেও হার মানাবে। তোমার হাসি পত্র ঝরা গাছেও সতেজতার সৃষ্টি করবে। তোমার হাসি বসন্তের চেয়েও সুন্দর রিদিমনি!
_____(মেঘলা আহমেদ)__
রিদিশার হাসি থেমে গেছে। অবাক চোখে বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে সে। এই ছেলে এত সুন্দর কথাও বলতে পারে। দেখলে মনে হয় না। সারাদিন ঘ্যানঘ্যান আর রাগারাগী, ছাড়া তো কিছুই করেনা। রিদিশার হাসি থেমে গেছে দেখে এরিক চোখ খুলে তাকায়। রিদিশার দিকে তাকিয়েই সর্বনাশ হয়ে গেলো যেনো। বিষ্ময়ভরা বড় বড় এই আঁখি যুগলে সেই যেনো ডুবে গেলো। সময়টা থেমে গেলে মন্দ হয়না। দুই জোড়া চোখ এক হয়ে গেছে। রিদিশা সম্বিত ফিরে পেয়েই চোখ সরিয়ে নেয়। রাগি রাগি চোখে তাকানোর চেষ্টা করে বলে-
-” এভাবে তাকিয়ে আছো কেন বাচ্চা!
এরিক ঘোরের মধ্যেই বলে-
-” তুমি এত সুন্দর কেনো মেয়ে? আমার চোখদুটো স্বার্থক হয়েছে তোমায় দেখে। ওগো বিদেশিনী তোমার চোখ এতো সুন্দর কেন?
রিদিশা এরিকের কথা গাঁয়ে না মেখে বলে-
-” আমি সুন্দর কেন জানো? আমি ছোটবেলায় কেজি কেজি ফলমূল খেয়েছি। না খেতে পারলে চিবিয়ে ফেলে দিয়েছি। প্রচুর পরিমাণে গাজর খেয়েছি। আর মশারি ছাড়া ঘুমিয়েছি। তাই মশা সব রক্ত নিয়ে আমায় সুন্দর বানিয়ে দিয়েছে। আর ছোটবেলায় কমলা খেয়ে, খোসার রস চোখে দিয়েছি, আর কেঁদে কেঁদে চোখ পরিষ্কার করেছি। তাই আমার চোখ ও সুন্দর। তুমি সুন্দর হতে চাইলে এগুলো এপ্লাই করতে পারো।
এরিকের মুখের ভাব পাল্টে যায়। চোখ মুখ কুঁচকে বলে-
-” ছিহ তুমি কতটা কেয়ারলেস্। খেয়েছো ভালো কথা, কিন্তু কমলার খোসা, মশার কামড় এগুলো কি? তুমি তুমি পাগল।
রিদিশা রেগে বলল-
-” হ্যা আমি পাগল। তুমি ফিওনাকে এখানে নিয়ে এসো। তোমার সাথে কাজ হয়ই না। উল্টো ঝগ’রুটে হয়ে গেছি।
এরিক রিদিশার কথা শুনে অবাক হলো। পরক্ষনেই হেসে বলল-
-” আমাকে তুমি ঝগ’রুটে বানিয়েছো। মম ও বলে আমি বেশি কথা বলি, খিট’খিটে হয়ে গেছি।
-” ওকে ফাইন আমি দোষী। আমি বাংলাদেশে চলে যাব। তখন তো ঠিকই থাকবে।
এরিকের মুখটা কালো হয়ে গেছে। দুঃখী দুঃখী গলায় বলে-
-” শোন মেয়ে তুমি যেথায় থাকো না কেন আমি পিছনেই থাকবো। তোমার সাথে ঝগ’ড়া না করলে আমার চলবেনা। সারাজীবন ঝগ,ড়া করবো ঝগ’ড়ুটে রানি!
রিদিশা ফুঁসে ওঠে। কিছু বলবে তার আগেই একটা পুরুষ কন্ঠ ভেসে আসে-
-” হেই হোয়াটস্ আপ?
রিদিশা আর এরিক একসঙ্গে তাকায়। রিদিশার মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে ওঠে। এরিক দুজনের দিকে তাকিয়ে মুখ কালো করে ফেলে।
#চলবে