#তুমি_আসবে_বলেছে_হৃদয়
#পর্ব-৪
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)
❌কার্টেসী ব্যতিত কপি নিষিদ্ধ ❌
-” প্লিজ ওয়ান মোর কিস! আরেকটা প্লিজ!
ইথানের কথায় রেগে ছিটকে সরে এলো ফিওনা। আঙুল উঁচু করে রেগে বলল-
-” লিসেন! তুমি এখানে বসে যে ঢং করছো, এগুলো এরিক জানতে পারলে আস্ত রাখবে না। আমাদের সব প্ল্যান তখন নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ভালোয় ভালোয় বলছি এটা অফিস। যখন তখন এটাকে বেডরুম বানাবেনা। আই হোপ তুমি বুঝতে পারছো!
ফিওনা উত্তরের জন্য ইথানের দিকে ব্যাকুল হয়ে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ফিওনার আশায় জল ঢেলে ইথান বলল-
-” দেখো এই চারটা বছর ধরে আমি অপেক্ষা করেছি, ধৈর্য ধরেছি অনেক। আর পারছিনা আমি। কত ভাবে এরিক কে আমাদের চালে ফেলার চেষ্টা করলাম। ছেলেটা কিভাবে যেনো টের পেয়ে যায়। এখন তুমিই ভরসা। এরিক কে নিজের দিকে টানো।
ফিওনা চুপ করে শুনলো। এরপর বিরক্ত হয়ে বলল-
-” যাষ্ট একটু কাছে যেতে ধরেছিলাম, বলেছিলাম এরিক স্যার চোখে যেনো কি পড়েছে। সে আমার চোখে ফু দিচ্ছিলো। আমি কিছু করতে যাব তখনই ঐ কি যেনো নাম বাংলাদেশী মেয়েটা, রিইদেইশা। ও কেবিনে ঢুকে সব গ|ন্ডগোল করে দিলো। ওর জন্য আমার প্ল্যান ফ্লপ যাচ্ছে!
ফিওনা কথা বলতে বলতে টেবিলে ঘুষি মারে। ইথান চুপ করে নেক্সট প্ল্যান সাজাতে থাকে।
______
-” প্লিজ কাছে আসবা না। তুমি আমার জুনিয়র।
রিদিশার কথায় এরিক বিরক্ত হয় প্রচুর। তবুও গাড়ির দরজাটা খুলে সরে আসে। রিদিশা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁ|চলো। এরিক গাড়ির দরজা খুলছিলো আর সে কি না কি ভাবছিলো। আচ্ছা এখনে গাড়ি থামালো কেন? আমাকে কি গাড়ি থেকে নামিয়ে দিবে? রিদিশার ভাবনাকে সত্যি করে এরিক বলল-
-” নামো গাড়ি থেকে!
রিদিশা মুখটা আলাভোলা বাচ্চাদের মত করলো। আস্তে আস্তে ভদ্রভাবে বলল-
-” স্যার আপনি আমাকে নামতে বলছেন কেন? আমি কি ভুল প্রশ্ন করেছি?
এরিক বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে বলল-
-” তোমরা বাংলাদেশী মেয়েরা একটু বেশিই বুঝো! নামতে বলেছি নামো। এত কথা প্যাচাও কেন?
রিদিশা অসহায়ের মতো এরিকের দিকে তাকালো। তারপর গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। এরিক গাড়ি পার্ক করে এসে রিদিশার সামনে দাঁড়ালো। রিদিশা অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। এরিক একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামিয়েছে। আর সে কি না ভেবে ভয় পেয়েছিল। এরিক প্রসন্ন হেসে বলল-
-” রেদি ভেতরে চলো!
রিদিশা এরিকের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো-
-” এখানে কেন এসেছেন?
এরিক রিদিশার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
-” ক্রিকেট খেলবো তাই এসেছি। রেস্টুরেন্টে মানুষ কি করতে আসে? আর একটাও বেশি কথা বললে নায়াগ্রা জলপ্রপাত থেকে ছুঁ|ড়ে ফে|লে দিবো।
এরিকের কথায় রিদিশা ভয় পেলো। এই ছেলের বিশ্বাস নেই। রাগের মাথায় পেলেও দিতে পারে। রিদিশা মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকলো। এরিক হেসে বলল-
-” এইবার ঠিক আছে মিস চলুন!
এরিক রিদিশাকে নিয়ে একটা টেবিলে গিয়ে বসল। ওয়েটার কে ডেকে কিছু খাবার অর্ডার দিলো। ওয়েটার রিদিশার দিকে আর চোখে তাকিয়ে খাবার আনতে গেলো। যা এরিকের নজর এড়ালো না। এরিক একটা কাশি দিয়ে রিদিশার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। তারপর বাম ভ্রু টা উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো-
-” গাড়িতে কি যেনো জিজ্ঞেস করেছিলে আমি মুসলিম নাকি?
রিদিশা মাথা উপর নিচ করে হ্যা বোঝালো। এরিক টেডি স্মাইল দিয়ে বলল-
-” অনেক বড় কাহিনী এটা শুনবে?
রিদিশা আবারো মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝালো। এরিক চোখ বুজে বলা শুরু করলো-
-” আমার গ্র্যান্ড পাপা হলো এই কানাডিয়ান, তিনি খ্রিস্টান ছিলেন। কিন্তু আমার গ্র্যান্ডমা বাংলাদেশী। এবং সে মুসলিম ছিলো। গ্র্যান্ডমা পড়াশোনা করার জন্য কানাডা এসেছিলো। গ্র্যান্ডপাপা ভার্সিটিতে গ্র্যান্ডমা কে প্রথম দেখে তারপর লাভ এট ফার্স্ট সাইট। সে গ্র্যান্ডমার প্রেমে পড়ে যায়। এরপর গ্র্যান্ডমাকে প্রপোজ করে। কিন্তু সে রিজেক্ট করে দেয়। গ্র্যান্ডমা বাংলাদেশী ছিল তাই সে কানাডিয়ান কারো সাথে নাকি সম্পর্কে জড়াবে না। এরপরেও আমার গ্র্যান্ড পাপা হাল ছাড়েনি। সে নানাভাবে গ্র্যান্ডমা কে পটানোর চেষ্টা করতে থাকে। অবশেষে একদিন গ্র্যান্ডপাপার এক্সিডেন্ট হয়। সেদিন নাকি গ্র্যান্ডমা পাগলের মতো হসপিটালে ছুটে গিয়েছিলো। গ্র্যান্ড পাপাকে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলো। তিনিও গ্র্যান্ড পাপার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিলো। কিন্তু গ্র্যান্ডমা শর্ত রাখে গ্র্যান্ড পাপা কে মুসলিম হতে হবে। তাহলেই সে বিয়ে করবে। আমার গ্র্যান্ডপাপা তো একপায়ে রাজি। সে তখন মুসলিম হয়ে গ্র্যান্ড মাকে বিয়ে করেছে। কিন্তু তারা আমাদের সাথে থাকেনা। তারা তাদের সেই পুরোনো বাড়িটাতে থাকে। তারপর আর কি এখন বলো আমি কোন ধর্মের?
রিদিশা চিন্তিত হয়ে বলে –
-” সবই বুঝলাম তুমি মুসলিম! কিন্তু তোমার নাম এরিক কেন? সুন্দর ইসলামিক নাম রাখতে পারতো না?
এরিক জোড়ে হেসে দেয়। গজ দাঁত ঝিলিক দিয়ে ওঠে। রিদিশা মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখে। এই বাদামী মনি আর বাদামী চুল ওয়ালা ছেলেটা নিঃসন্দেহে সুদর্শন। এরিক হাসি থামিয়েও বলে-
-” এরিক নামের অর্থ জানো?
রিদিশা মাথা ডানে বামে নাড়িয়ে না বুঝায়। মানে সে জানেনা। এরিক নিজের চমৎকার হাঁসি দিয়ে বলে-
-” এরিক হচ্ছে আরবি নাম। এর অর্থ আছে অনেকগুলো। তবে সেরা অর্থ হচ্ছে বন্ধুত্বপূর্ণ, সক্রিয়, ভাগ্যবান, আনন্দদায়ক, স্বাভাবিক। আমার বাবা আধুনিক হওয়ায় এই নাম রেখেছেন তবে আরবি নামই রেখেছে। তুমি এরিক নামের অর্থই জানোনা, আবার আমার সাথে ঝগড়া করতে আসো। সিনিয়র আমার হওয়া উচিত ছিল।
রিদিশা আঙুল উঁচু করে বলে-
-” আরেকটা প্রশ্ন একদম সত্যি উত্তর দিবে।
এরিক চিন্তিত হয়। কি জানতে চায় এই মেয়ে। নিজের চিন্তা রিদিশাকে বুঝতে না দিয়ে বলে-
-” বলো কি প্রশ্ন মিস!
রিদিশা হাতের তালুতে হাত ঘসে জিজ্ঞেস করে-
-” তোমার সাথে আমার এ|ক্সি|ডেন্টলি যখন কিস হয়েছিল, তখন তুমি বলেছিলে আমি তোমার ফার্স্ট কিস চুরি করেছি। কিন্তু আজ যে তুমি ফিওনা কে কিস করছিলে তার বেলা? তুমি কি সবাইকে কিস করেই বলো ফার্স্ট কিস?
এরিক অবাক হয়ে বলে-
-” আমি কখন ফিওনা কে কিস করলাম? আমার ফার্স্ট কিস তো তুমি চুরি করেছো। ওয়েট এক মিনিট। ফিওনা আমার কাছে কিছু ফাইল নিয়ে এসেছিল। তখন বলল এরিক স্যার আমার চোখে যেনো কি পড়েছে। আমি ওর চোখে ফু দিচ্ছিলাম। তুমি সেটাকে কিস ভেবে বসে আছো। ও গড গ্র্যান্ড পাপা ঠিকই বলে বাংলাদেশি মেয়েরা একটু বেশিই বোঝে। তিল কে তাল বানায়। জেলাসি হচ্ছে নাকি?
রিদিশা মুখ ভেংচি কাটলো। এরিক রিদিশার মুখ ভেংচি কাটা দেখে ঠোঁট টিপে হাসলো। রাগলে সুন্দরই লাগে তিতা করলা সিনিয়র কে। এর মধ্যে খাবার এসে গেলো। দুজনে কথা না বলে যে যার মতো খেলো। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরোনোর সময় এরিকের কাছে ফোনকল আসে। সে আড়ালে গিয়ে কথা বলে রিদিশার কাছে আসে। রিদিশা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এরিকের দিকে। এরিক মাথা চুলকে বলে-
-” রেদি আমার একটা জরুরী কাজ পড়েছে। প্লিজ তুমি অন্য গাড়িতে করে চলে যাওনা। আমার আর্জেন্ট যাওয়াই লাগবে। নাহলে তোমাকে আমি ড্রপ করে দিতাম।
রিদিশা এরিক কে হাসিমুখে বলে-
-” প্রবলেম নেই তুমি তোমার কাজে যাও। আমি একা চলে যেতে পারবো। এরিক রিদিশাকে বলে-
-” ডিরেক্ট বাসায় যাবে। অফিসে আজ আর মাওয়া লাগবেনা।
রিদিশা মাথা নেড়ে সম্মতি বুঝিয়ে একটা গাড়িতে উঠে পড়ে। এরিক নিজের গাড়ি করে চলে যায়।
___
রিদিশা আজ প্রফুল্ল চিত্তে বাসায় গেলো। যতটা খারাপ এরিক কে ভেবেছিলো সে আসলে ততটা খারাপ নয়। কত সুন্দর নামের ব্যাখ্যা দিলো। তবে তার গ্র্যান্ডমা আর গ্র্যান্ডপাপার গল্পটা জোস ছিলো। রিদিশা গ্র্যান্ডমার সাথে কথা বলে টাওয়াল নিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো। অনেক কাজ বাকি
#চলবে