#তুমি_আসবে_বলেছে_হৃদয়
#পর্ব-০২ ও ০৩
#মেঘলা_আহমেদ
(❌কার্টেসি ব্যতিত কপি নিষিদ্ধ ❌)
চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা রিদিশার। এখানে তো সে চোরের কাছেই বিচার চাইতে এসেছে। মুখ থেকে কোন আওয়াজ ই বের হচ্ছে না। ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে সে। এখন যদি স্যারের সাথে খারাপ ব্যবহার করায় আমার চাকরিটা খেয়ে দেয়। রিদি প্রতিবার গড়বড় করিস তুই। এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও আল্লাহ, ভুলেও করাও সাথে লাগবো না। একদম ভালো হয়ে যাবো। এরিক রিদিশার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করলো। মেয়েটা হালকা কাঁ|পছে। হয়তো ভুলেও ভাবেনি আমিই ওর স্যার। এরিক বাঁকা হাসলো। এবার মজা বুঝাবো তোমায়। চেয়ার ঘুরিয়ে বলল-
-” হ্যা বলুন বলুন।
রিদিশা আমতা আমতা করছে। অতিকষ্টে তোতলাতে তোতলাতে জিজ্ঞেস করলো-
-” ইয়ে মানে আপনি এখানে কেন? স্যার কোথায়?
এরিকের মুখের হাসি প্রসারিত হলো। প্রফুল্ল চিত্তে জবাব দিলো-
-” আমি কম্পানির মালিকের ছেলে। কম্পানিটা আমাদের। আজ থেকে আমি জয়েন করেছি। আর ফেলিক্স ছিলো। সে আমেরিকা চলে গেছে। তো আপনি কে? আপনার নাম কি?
রিদিশা চোখ রসগোল্লার মত করে এরিকের দিয়ে তাকিয়ে আছে। আজ কম্পানির মালিকের ছেলেকে গালাগালি করায়, তার কপালে কি আছে আল্লাহ জানে! রিদিশা কুল কুল ভয় পেলে চলবেনা। এই অসভ্য ছেলেকে দেখিয়ে দে তুই কি জিনিস। রিদিশা চেহারাটা স্বাভাবিক করে বলল-
-” আমার নাম রিদিশা। সবাই রিদি বলেই ডাকে
এরিক মুখটা কুঁচকে অতিকষ্টে উচ্চারণ করলো –
-” রেইদেইশ্যা।
রিদিশা উজবুকের মতো এরিকের দিকে তাকালো। তার এতো সুন্দর নামটাকে কি বলছে এই ছেলে। বাংলাদেশে থাকতে সবাই রিদি, রিদ, দিশা যাই বলতো মানা যেত। এ তো নামটা কে একদম করলার জুস বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। রিদিশা চেঁচিয়ে বলল-
-” হোয়াট রেইদেইশ্যা? রেইদেইশ্যা না রিদিশা, রি দি শা, রিদিশা হবে। আপনি আমার নামটাকে কি উল্টাপাল্টা করে ফেলছেন। একদম আরশোলার চেহারার মতো বানিয়ে ফেলেছেন। ছিঃ।
এরিক বিরক্ত হলো। বিরক্তিতে চ শব্দ করে বলল-
-” তুমি নিশ্চয়ই বাংলাদেশী আমি সিউর। বাংলাদেশী মানুষদেরই এমন আজব নাম থাকে। আমার গ্র্যান্ডমায়ের নামটাও এমন আজব। কত অদ্ভুত নাম রেইদেইশ্যা।
রিদিশা সবকিছু ভুলে রেগে তেড়ে গেলো। ঘুষির মতো দেখিয়ে বলল-
-” আরেকবার নাম বিকৃত করলে একটা ঘুষি দিয়ে বৃন্দাবন পাঠাবো। আবার বাংলাদেশ কে অপমান করছেন। আপনি তো আচ্ছা পাগল লোক। বলুন রিদিশা, রি দি শা।
এরিক আবারো কষ্ট করে ভাঙা উচ্চারণ করে বলল-
-” রেইদিশা
রিদিশা বিরক্তিতে কপাল চাপড়ালো। এই ছেলে তার নামে মসল্লা লাগাচ্ছে। তবুও হাল না ছেড়ে আরেকবার বলল-
-” আরেকটু ভালোভাবে বলুন রিদিশা।
এরিক এবার হাসি দিয়ে বলল-
-” রেদিশা
রিদিশা হাফ ছেড়ে দাঁড়ালো। যাইহোক একটু তো উন্নতি হয়েছে। এবার এরিক বাঁকা হেসে বলল-
-” তো মিস রেদিশা আমি আপনাকে রেদি বলে ডাকবো। সো এখন আপনাকে কি করা উচিত। কম্পানির ভবিষ্যত মালিকের সাথে খারাপ ব্যবহার করা ও তার ফোন ভাঙার অপরাধে? কি শাস্তি দেয়া উচিত?
রিদিশা এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। তবুও অপরাধীর সুরে বলল-
-” আমি কি জানতাম আপনি এখন ফেলিক্স স্যারের জায়গায় জয়েন করেছেন?
এরিক ভ্রু নাচিয়ে বলল-
-” ওহ আচ্ছা জানলে কি করতেন?
রিদিশা কোন কথা না বলে উল্টা দৌড়ে পালায়। এই ছেলে একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। এরিক উজবুকের মতো তাকিয়ে আছে। মেয়েটা পালিয়ে গেলো কেন? রিদিশা তার স্যারের কেবিনে গিয়ে হাঁপাতে লাগলো। ইথান রিদিশাকে এভাবে হাঁপাতে দেখে বলল-
-” হেই রিদি আর ইউ ওকে? তুমি লেট করে এসেছো। এখন হাঁপাচ্ছো কেন?
রিদিশা ঠিকমত নিজের জায়গায় বসে দম নিয়ে বলল-
-” স্যার আই এম ওকে। আসলে ফেলিক্স স্যারের কাছে গিয়েছিলাম একটা ডকুমেন্ট নিয়ে।
ইথান ভেবে বলল-
-” কিন্তু ফেলিক্স তো চলে গেছে। এখন এরিক কম্পানির সব দায়িত্বে আছে।
ওহ এ বেটার নাম এরিক। নিজের নামের কি শ্রী। সে আসছে আমার নাম বিকৃত করতে। রিদিশা ঢোক গিলে বলল-
-” হ্যা স্যার ওনাকে দেখেই এসে পড়েছি।
ইথান রিদিশার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকালো। তারপর নিজের কাজে মনযোগ দিয়ে বলল-
-” যাইহোক ফাইলগুলো তাড়াতাড়ি কম্পিলিট করো। বিকালে একটা গেট টুগেদার পার্টি আছে।
রিদিশা আচ্ছা বলে কাজে লেগে পড়লো। ইথান স্যার খুব ভালো মানুষ। দুই বছর ধরে ইথান স্যারের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট রিদিশা।
__
বিকেলে পার্টিতে প্রায় সব কর্মকর্তারাই উপস্থিত ছিলো। পার্টিটা ছিল এরিকের জন্য। এরিকের বাবা তার ছেলেকে পরিচয় করিয়ে দেয় সবার সাথে। এরিক খেয়াল করলো, রিদিশা কালো একটা লং কুর্তি পড়েছে। দেখতে অপরুপ লাগছে। এরিক রিদিশার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। তার বাবাকে গিয়ে কি যেন বলে। তখন এরিকের বাবা রিদিশার কাছে গিয়ে বলে-
-” আজ থেকে এরিকের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট তুমি!
কথাটা শোনামাত্রই রিদিশার মুখ বাংলার পাঁচের মত হয়ে গেলো। এই সয়তান ছেলে তাকে ছাড়বেনা। এখন রিভেঞ্জ নেয়ার জন্য তার পিএ বানিয়েছে। এরিক মিটিমিটি হাসছে। রিদিশা ইথানের কাছে গিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে-
-” স্যার আমি তো আপনার পিএ। কিন্তু এখন উনি কি বলল।
ইথান হাসিমুখেই বলল-
-“সমস্যা কি রিদিশা? এরিক অনেক হেল্পফুল মানুষ। আর মানুষের সাথে মিশতে ও পারে ভালো।
রিদিশার এখন হাত পা ছু|ড়ে কাঁদতে কাঁদতে বে|হুঁশ হতে ইচ্ছে করছে। কি করে বোঝাবে এই খ•বিস এরিক তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য পিএ বানিয়েছে! এরিকের খুব আনন্দ লাগছে রিদিশার মুখ দেখে। এবার বুঝাবো এরিক কি জিনিস। আমাকে অপমান করেছো তাই না। রিদিশা চোখ পাকিয়ে এরিকের দিকে তাকায়। এরিক আশপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ দেখছে কি না। তারপর রিদিশার পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলল –
-” সো রেদি বি রেডি!
রিদিশা রিদিশা এবার তুই শেষ। এই ছেলে তোকে এবার শায়েস্তা করার জন্যই প্ল্যান করেছে। গেলি তুই গেলি। আরো লাগতে যাবি।
___
ক্লান্ত শরীর টা বিছানায় এলিয়ে দিলো রিদিশা। কিছুই ভালো লাগছে না। কাল থেকে কপালে যে শনি আছে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। তবুও করার কিছুই নেই। ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে মুখের যাচ্ছে তাই অবস্থা হয়ে গেছে। হালকা ক্রীম লাগিয়ে জ্যাকেট চাপিয়ে নিলো গায়ে। বাড়ির সামনে গিয়ে ইজি চেয়ারে বসলো রিদিশা। তখন বাড়ির মালিক এসে দাঁড়ালো। মহিলার বয়স হয়েছে তবুও চেহারায় একটা জোয়ান জোয়ান ভাব। রিদিশা ভদ্রভাবে হেসে বলল-
-” বসুন গ্র্যান্ডমা।
মহিলা বসলেন কিন্তু তার মুখ টা খুবই মলিন। অন্যদিন হাসিখুশি থাকে। কিন্তু আজকে কোন কথাই বলছেনা। এই ভদ্র মহিলাও বাংলাদেশী। আর রিদিশার নানির বেষ্ট ফ্রেন্ড। উনি পড়াশোনা করতে কানাডা এসেছিল। কিন্তু এক কানাডিয়ান ছেলের সাথে বিয়ে করে থেকে গেছেন এখানে। সে আর তার হাসবেন্ড মিলে এই বাড়িতে থাকে। আর তিনবছর ধরে রিদিশা তাঁদের সাথেই থাকছে। রিদিশা আহ্লাদী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
-” কি হয়েছে গ্র্যান্ডমা? তোমার কি মন খারাপ?
মহিলা রিদিশার দিকে তাকালেন। মেয়েটাকে তার বেশ লাগে। তিনি ঠোঁটে কিঞ্চিত হাসি ফুটিয়ে বললেন –
-” অনেকদিন হলো ছোট নাতি টাকে দেখতেই যাইনি। এখন শরীরে আর কুলোয় না। অথচ দেখ তাঁরাও আমার খোঁজ নিলো না রে। নাতিটা সামনে গেলেই গ্র্যান্ডমা গ্র্যান্ডমা করে, অথচ একবারো এসে দেখলো না গ্র্যান্ডমা থাকে কোথায়। সবাই নিজের জীবন নিয়ে ব্যাস্ত। আমি এই বুড়ি মরে গেলে বুড়োর কপালে দুঃখ আছে দেখিস।
রিদিশা বুঝলো মানুষটার মন খারাপ। বয়স হয়েছে তারও তো ইচ্ছে করে কারো সাথে গল্প করতে। অথচ পরিবার ছেড়ে এতদূরে একা একা থাকছেন। রিদিশা হাসি দিয়ে বলল-
-” চিন্তা করোনা বুড়ি। তুমি এত তাড়াতাড়ি কোথাও যাচ্ছোনা। আর বুড়োর জন্য আমি আছিনা।
মহিলা ফোকলা দাঁতে হেঁসে উঠল। কি মায়াময় সে হাঁসি। রিদিশা অপলক চেয়ে রইলো, সে হাসির দিকে।
#চলবে
( গল্পটা কেমন হচ্ছে জানিনা। এতদিন অসুস্থ থাকার পর নতুন গল্প নিয়ে এসেছি। চেষ্টা করছি গুছিয়ে লেখার। ভুল ত্রুটি আল্লাহর দেয়া মহান গুণ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনাদের মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম 🥰)
#তুমি_আসবে_বলেছে_হৃদয়
#পর্ব-০৩ (বোনাস পার্ট)
#মেঘলা_আহমেদ
এরিকের কেবিনে ঢুকতেই একটা মেয়ের সাথে কিস করা অবস্থায় দেখে ছিটকে বেরিয়ে এলো রিদিশা। আগে ভেবেছিলো এই ছেলে পাজি কিন্তু এখন দেখছে চূড়ান্ত লু|চু। শব্দ পেয়ে এরিক আর মেয়েটা চমকে উঠলো। এরিক মেয়েটিকে ছেড়ে দিলো। ফাইলগুলো নিয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলো। মেয়েটি যেতে চাইলো না, কিন্তু এরিক জোড় করে পাঠিয়ে দিলো। মেয়েটি মুখ কালো করে বেড়িয়ে গেল। দরজার পাশে রিদিশা কে দেখে বলল-
-” ম্যানারলেস। নক করে ঢুকতে হয় জানো না? আর এই সময় আসার কি দরকার ছিলো?
রিদিশা অবাক হলো। তেতে উঠে বলল-
-” আমি আমার টাইম মতো অফিসে এসেছি। আপনারা যে এভাবে দরজা খুলে রেখে উল্টাপাল্টা কাজ করছিলেন সেটা কে জানবে?
তখনি ভেতর থেকে এরিক বেরিয়ে এলো। বিদেশী মেয়েটাকে চোখের ইশারায় বেড়িয়ে যেতে বলল। রিদিশা রাগী চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে অপমান করলো। এর শোধ নিয়েই ছাড়বে। মেয়েটা বিরবির করতে করতে চলে গেলো। এরিক রিদিশার দিকে তাকিয়ে ভেতরে চলে গেলো। রিদিশা রাগে গজগজ করতে করতে গিয়ে এরিকের কেবিনে নিজের চেয়ারে বসলো। এরিক রাগী গলায় বলল-
-” এই যে আন্টি! আপনি নক না করে এসেছেন কেন?
রিদি চমকে উঠলো। চারপাশে তাকিয়ে দেখলো রুমের মধ্যে তো কেউ নেই। রিদি রেগে বলল-
-” আপনি কাকে আন্টি বলছেন?
এরিক বাঁকা হাসলো। চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে ঘুরলো কয়েকবার। তারপর চোখ বন্ধ করে বলল-
-” আপনার ডিটেইলস এ দেখলাম আপনি আমার তিন বছরের বড়। সিনিয়র তাই আন্টি ডাকছি।
রিদিশা এবার অবাকের সপ্তাকাশে উঠলো। এই ছেলে তার তিন বছরের ছোট তা দেখে বোঝার উপায় নেই। হাইটে তার থেকে দুই এক ইঞ্চি লম্বা হবে হয়তো। আর খেয়ে খেয়ে শরীর একদম ফিট রেখেছে। রিদিশা খুশি হলো যাক সে সিনিয়র এখন বেশি কথা বললে দিবে এক ধমক। এরিক তুড়ি মেরে বলল-
-” কি হলো আন্টি কই হারালেন?
রিদিশা রেগে দাঁড়িয়ে বলে-
-” আপনি আমাকে আন্টি বলছেন কেন?
-” তো কি ডাকবো?
রিদিশা কিছুক্ষন ভেবে বলল-
-” মিস বা সিস্টার নাহয় নাম ধরেও ডাকতে পারেন। তবুও আন্টি বলবেন না। খব|রদার!
এরিক বাঁকা হেঁসে বলল-
-” আচ্ছা মিস রেদি আপনি আমার ইম্পর্টেন্ট টাইম নষ্ট করেছেন। নক না করে ঢুকেছেন। তাই এই ৫৩ টা ফাইল সব কম্পিলিট করতে হবে আজকে আপনার।
রিদিশার চোয়াল ঝুলে গেলো। নিজেরা দোষ করে তাকে শাস্তি দিচ্ছে। এই ছেলে পেয়েছে টা কি রেগে স্পষ্ট বাংলায় বলল-
-“ শালা লু|চু কোথাকার। অফিসে বসে লু|চুগিরি করবে আর মানুষ কে শাস্তি দিবে।
এরিক বাংলা না বুঝে বলল-
-” হেই বাংলা বলবেন না প্লিজ। ইংরেজি তে বলুন।
রিদিশা কিছু বলল না আর। মুখ ভেঙচি কেটে কাজ শুরু করলো। এতগুলো কাজ কম্পিলিট করতে করতে আজ জান পানি পানি হয়ে যাবে। এরিক মনে মনে হেসে বলল- রাগলে মন্দ লাগেনা সিনিয়র কে! সিনিয়র আসলেই? পেঁচা মুখো সিনিয়র! উহুম কিউট সিনিয়র!
________
কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে রিদিশা। এই এরিকের বাচ্চা তার জীবনটা তেজপাতা করে দিবে। এরিক রিদিশার সামনে এসে বলল-
-” উঠো!
রিদিশা বিরক্তিতে কপাল কুঁচকালো। বিরক্তিতে চ শব্দ করে বলল-
-” কেন উঠবো?
এরিক ডেস্ক এ হেলান দিলো। ভাবলেশহীন ভাবে বলল-
-” আমি তোমার বস। তুমি আমার পিএ। সো আমি যা বলব তাই করবে সিনিয়র। চলো এখান আমার সাথে আসো। ফলো মি।
রিদিশা রাগে উঠে দাঁড়ালো। লু|চু একটা ছেলে। খালি মেয়েদের দেখলেই লু|চুগিরি করে। আমার সাথে একবার লাগতে এসো দেখো কি করি। এরিক হাঁটছে, রিদিশা তার পিছে না গিয়ে ইথানের কেবিনে গেলো। রিদিশা ইথানের কেবিনে গিয়ে অবাক হল। কারণ সকালে এরিকের কেবিনে যে মেয়েটাকে দেখেছে সে এখন ইথানের কেবিনে পিএ এর জায়গায় বসে কাজ করছে। এরিক রিদিশাকে ইথানের কেবিনে যেতে দেখে কপাল চাপড়ালো। হায় উপরওয়ালা এই মেয়েকে নিয়ে আমি কি করি। এখন কোন সিন ক্রিয়েট করবে কে জানে? ইথান স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসি দিয়ে রিদিশাকে জিজ্ঞেস করলো-
-” কি ব্যাপার রিদিশা? তুমি আমার কেবিনে কেন? কোন প্রব্লেম হয়েছে নাকি?
রিদিশা আগে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল-
-” স্যার এই মেয়ে আপনার কেবিনে কেন?
ইথান আবারো হেসে মেয়েটির দিকে ঘুরে বলল-
-” মিট মাই নিউ পিএ ফিওনা।
ফিওনা মেয়েটা একবার আড়চোখে রিদিশার দিকে তাকালো। মুখ ভেংচি কেটে কাজে মনযোগ দিলো। রিদিশা মুখটা কালো করে বলল-
-” স্যার এখন কাজের সময় কিন্তু এরিক স্যার আমাকে কাজ করতে না দিয়ে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে।
এরিক তখন ভেতরে প্রবেশ করে বলল-
-” হেই ব্রো। আসলে আমার একটা দরকারি কাজ আছে। মিস রেদিশা তো আমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট তাই ওনাকে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু উনি আপনার কেবিনে এসেছেন। আমার সাথে নাকি কাজ করবেনা। আপনার এখানে এসেছে তাই।
ইথান একটু অসন্তুষ্ট হলো। রিদিশার দিকে কঠোর চোখে তাকালো। রিদিশার প্রাণ পাখি উড়ে যায় যায় অবস্থা। এই দুই বছরেও ইরানের কঠোর রূপের সাথে তার পরিচয় হয়নি। তাই কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। ইথান কঠোর কন্ঠে রিদিশা কে হুকুম দিলো-
-” দেখুন মিস রিদিশা। আপনি আমার সাথে দুই বছর কাজ করেছেন কোন কাজ পালনে অমান্য করেন নি। তাই এরিক যা বলে তাই করুন। না হলে আমাদের কম্পানি এই পদের জন্য অনেক লোক পেয়ে যাবে।
রিদিশা আঁতকে উঠলো। একেবারে চাকরি খেয়ে দেয়ার ধান্দা করছে। আল্লাহ আমার মাথায় রাখা উচিত ছিলো এই বজ্জাত এরিকের মিথ্যা কথাই সবাই বিশ্বাস করবে। এরিক বাঁকা হেসে বলল-
-” ফলো মি মিস রেইদেইশ্যা!
রিদিশা আবারো ক্ষেপে গেলো। ইচ্ছা করে তার নামটাকে বিকৃত করছে এই বান্দা। রাগে গজগজ করতে করতে এরিকের পেছনে হাঁটা দিয়ে বলল-
-” এই যে, আমি তোমার সিনিয়র। তাই সিনিয়রদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হয় জানো না। আমার নাম ইচ্ছা করে বিকৃত করবেনা। আর নেক্সট আমার সামনে কোন মেয়ের সাথে অস|ভ্যতা করবে না।
এরিক হেসে বলল-
-” কেন তোমার কি জেলাসি হয় নাকি?
রিদিশা চমকালো এরিকের কথায়। ছেলেটা পাগলের মত কি বকছে। খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো রিদিশা। এরিক মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখতে রিদিশার হাসি। ডিম্পল পড়া গাল দুটোতে অদ্ভুত মায়া মায়া ভাব। হাসলে রিদিশাকে একদম নিষ্পাপ বাচ্চাদের মত লাগে। রিদিশা হাসতে হাসতে বলল-
-” তোমার মত জুনিয়রের রোমান্স দেখে আমার জেলাসি হবে কেন। আর তুমি আমার জুনিয়র ছোট ভাই তাই জেলাসি হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
এরিক বিরক্ত হয়ে বলল-
-” আজব বারবার বয়সের পার্থক্য টানছো কেন? তিনবছর কোন ব্যাপারই না হুহ। আর ভাই বলবেনা।
এরিক মুখটা গোমরা করে গাড়িতে বসল। বলাই ভুল হয়েছে আমি ওর জুনিয়র। এখন কথায় কথায় খালি জুনিয়র সিনিয়র দোহাই দিবে। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মা|রা এটাকেই বলে এরিক বোঝ এবার। রিদিশা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এরিক গাড়ির গ্লাসটা নামিয়ে মাথা টা বের করে বলল-
-“কি হলো মিস? দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো।
রিদিশা এক হাতের তালুতে অপর হাতের তালু ঘসে বলল-
-” গাড়িতে কেন বসবো? আমরা কোথায় যাচ্ছি?
এরিক এতক্ষনে বুঝলো রিদিশার সমস্যা। অন্য কোন মেয়েকে গাড়িতে ওঠার কথা বললে বিনা বাক্যব্যয়ে উঠে পড়তো। এই মেয়ে প্রশ্ন করছে। এরিক ভাবুক হয়ে বলল-
-” চলো একটু মাইন্ড ফ্রেশ করে আসি। সারাদিন কাজ করে করে বোরিং হয়ে গেছি। এখন একটু হাওয়া খেয়ে আসবো। বেশি দুরে যাবোনা।
রিদিশা পেছনের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে দরজাটা ধরতে যাবে তখনই এরিক বলে উঠল-
-” তোমাকে নিয়ে আমি কি করি। আল্লাহ বাঁচাও। এই মেয়ে তুমি পেছনে বসছো কেন? আমাকে কি তোমার ড্রাইভার মনে হয়? সামনে এসে বসো।
এরিকের এক ধ|মকে রিদিশা চুপসে গেলো। বাধ্য মেয়ের মত সামনে এসে বসলো। রিদিশা উৎসুক করছে। তা দেখে এরিক বলল-
-” কি হয়েছে মিস? কিছু বলবে?
রিদিশা এই কথাটা শোনার অপেক্ষাতেই ছিল যেন। কাল বিলম্ব না করে নিজের প্রশ্নটা বলে দিল-
-” আচ্ছা তুমি কি মুসলিম? একটু আগে আল্লাহ বাঁ|চাও বললে যে।
রিদিশার কথা শুনে এরিক জোড়ে গাড়ির ব্রেক কষলো। রিদাশা ভয় পেয়ে গেল। গেলি রিদি এবার তুই গেলি। সবসময় বেশি কথা না বললে তোর হয়না। এরিকের রাগী চাহনী দেখে রিদিশার অজ্ঞান হওয়ার মত অবস্থা।
#চলবে