নিজের হবু বরকে ছোট বোন জড়িয়ে ধরে কান্না করছে তা দেখে স্থির হয়ে গেলো রিদিশা। মুহূর্তেই চোখের সামনে আঁধার নেমে আসলো। সে আড়ালে লুকিয়ে ওদের কথা শুনতে লাগলো। রিদিশার ছোট বোন আরিশা রিদিশার হবু বর শোয়াইব কে জড়িয়ে ধরে বলছে-
-” প্লিজ শোয়াইব তুমি রিদিশা আপুকে সত্যিটা বলে দাও। আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। তুমি বউ থাকতে কেন অন্য কাউকে বিয়ে করবে? তুমি তো বলেছিলে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলে নাকি তোমার পরিবার আর তোমার উপর বিয়ের প্রেশার দিতে পারবেনা। কিন্তু তোমার মা আমার বড় বোনকে তোমার বউ বানাতে চাইছে। আর তুমিও রাজি হয়ে গেলে!
শোয়াইব আরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে-
-” দেখো আমার মা আই মিন তোমার ফুপিকে তোমার কথা বলব এমন সময় সে তার মাথায় হাত দিয়ে কসম করিয়েছে বিয়েটা যদি আমি ভেঙে দেই তাহলে তাঁর ম’রামুখ দেখবো। আমি কি করবো আমি নিরুপায়। তুমি রিদিশা কে বলছোনা কেন আমাদের বিয়ের কথা?
আরিশা শোয়াইব কে ছেড়ে বলে-
-” আমি আপুকে খুব ভয় পাই। এসব কথা আমি আপুকে বলতে পারবোনা।
-” আচ্ছা তুমি না বলতে পারলে আমি তোমার আপুকেই বিয়ে করে নিচ্ছি।
শোয়াইবের কথায় আরিশা রেগে তাকে কয়েকটা কি/ল ঘু/ষি বসিয়ে দেয়। শোয়াইব আরিশাকে থামাতে পারছেনা।
-” এটা রেস্টুরেন্ট কোন মা রামা রি করার জায়গা নয়।
আচমকা কারো কথা শুনে দুজনেই থেমে যায়। রিদিশাকে দেখে দুজনেই ভুত দেখে চমকে ওঠার মত তাকিয়ে আছে। এমন সময় রিদিশাকে মোটেও আশা করেনি তারা। রিদিশা একটা চেয়ার টেনে বসলো। মুখে হালকা হাসির রেশ ফুটিয়ে বলল-
-” বাহ আরু হবু দুলাভাইয়ের কাছে ট্রিট নিতে এসেছিস অথচ আমাকেই জানাস নি। আবার তাকে মা রছিস ও?
আরিশা ভ’য় ভ’য় চোখে শোয়াইবের দিকে তাকায়। শোয়াইব ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে। আরিশা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে-
-” আসলে তা নয় আপু!
রিদিশা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে-
-” যাইহোক। মিঃ শোয়াইব ওরফে ফুফাতো ভাই শোনেন আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা। ফুপিকে বলে দিয়েন, আমি একজন কে ভালোবাসি। সো বিয়েটা হচ্ছে না। আজ থেকে আমরা আবার মামাতো ফুফাতো ভাই বোন। আপনি আপনার মতো লাইফ লিড করুন। আরিশা সময়মত বাসায় এসে পড়িস।
রিদিশা ওদের কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে উঠে যায়। কষ্ট হচ্ছে খুব। চোখের সামনে এতদিনর স্বপ্ন ভেঙে গেলো। আরিশা বিয়ে ভাঙার কথা শুনে প্রচুর খুশি হয়ে যায়। এবার তার ফুফিকে মানালেই হলো। কিন্তু চিন্তায় পড়ে যায়। তার বোন কাকে ভালোবাসে আবার? শোয়াইব গম্ভীর গলায় বলে-
-” আমার মনে হয় তোমার বোন আমাদের সব কথা শুনে ফেলেছে। তাই বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে। কাউকে ভালোবাসা একটা অজুহাত ছিল!
আরিশা চিন্তিত হয়ে বলে-
-” আপু সব শুনে ফেলেছে আমাকে কিছু বলল না কেন? আচ্ছা বাদ দাও আমার মনে হয় আপু কাউকে ভালোবাসে। নাহলে তাকে মাঝে মাঝেই ডায়েরিতে কারো নামে চিঠি লিখতে দেখতাম। কাউকে উদ্দেশ্য করে মনের কথা লেখি আছে ডায়েরিতে। ও সত্যিই কাউকে ভালোবাসে বা প্রেম করছে। নাহলে এত সহজে বিয়ে ভাঙতোনা।
শোয়াইব গম্ভীর মুখেই বলে-
-” হতে পারে।
..
ডায়েরির পাতাটা বন্ধ করে দিল রিদিশা। পুরোনো দিনগুলো আজো বড্ড পীড়া দেয়। এখন আরিশা সুখেই আছে শোয়াইব কে নিয়ে। মাঝখান দিয়ে সে শুধু কাউকে ভালোবেসে কষ্ট পেল। রিদিশা ঐদিন শোয়াইবের মা কে সব বলেছে। তাকে অনেক কষ্টে বিয়েতে রাজি করিয়ে, আরিশা আর শোয়াইবের বিয়ে দিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের আদর ছাড়া বড় হয়েছে আরিশা। আমি কিভাবে বোন হয়ে ওর প্রিয় মানুষ টাকে কে ড়ে নেই? ওদের যাতে সমস্যা না হয় তার জন্য পারি জমিয়েছে সুদূর কানাডাতে। এখন একটা জব নিয়ে ভালোই আছে সে। সত্যিই তিনটা বছর কিভাবেই না কেটে গেল! সব চিন্তা ছেড়ে ফ্রেশ হতে যায় রিদিশা। সকাল হয়েছে অনেক অফিসে যেতে হবে। রিদিশা আধা ঘন্টার মধ্যে ফ্রেশ হয়ে এসে অফিসে রওনা দেয়। সে দ্রুত অফিসের সিঁড়ি দিয়ে উঠছিল এমন সময় কারো সাথে ধা ক্কা লাগে। চোখ বুজে “আল্লাহ” বলে চিৎকার দেয় রিদিশা। আচ্ছা আমি কি ম রে গেছি? মনে তো হচ্ছে ঝুলে আছি। আচ্ছা মরলে কি এমন ফিলিংস হয়? হঠাৎ সামনে টান পড়ে। চোখ খুলতেই কোমল কিছু ঠোঁট স্পর্শ করে। রিদিশা ভালো করে দেখে একটা ছেলে তাকে ধরে আছে। তার ঠোঁট ছেলেটার ঠোঁট স্পর্শ করেছে। রিদিশা ছিটকে সরে এলো। টাল সামলাতে না পেরে ছেলেটা পড়েই গেল। ছেলেটার ফোনটাও ছিটকে দুরে গিয়ে পড়লো। ছেলেটা “মাই ফোন” বলে চিৎকার দেয়। রিদিশা রাগী চোখে ছেলেটার দিকে তাকায়।খেকিয়ে বলে ওঠে –
-” হোয়াট রাবিস? মাই ফোওওওন। আপনি আমাকে কিস করলেন কেন? বজ্জাত লোক কোথাকার। মেয়েদের দেখলেই অসভ্যতামি করার ধান্দা তাই না? এখন ঢং করে মাই ফোন মাই ফোন করে চিল্লাচ্ছেন!
রিদিশা সব কথাগুলো বাংলায় বলেছে। তাই এই কানাডিয়ান ছেলেটি এর আগামাথাও বুঝতে পারেনি। ছেলেটি বুঝতে না পেরে ইংরেজি তে বলল-
-” সরি! আমি আপনার কথা বুঝতে পারিনি।
রিদিশা চারপাশে তাকিয়ে জীভ কা|টে। সে কেন বারবার বাংলা ইউস করছে। এই সাদা বিলাই গুলো তো বাংলা বুঝেই না। রিদিশা এবার ইংরেজি তে বলে-
-” আপনি কোন সাহসে আমায় টাচ করেছেন? আবার কিস করেছেন?
ছেলেটা মেঝেতে ভর দিয়ে উঠে বলে-
-” পাগলের মতো কথা বলবেন না। আমার আপনাকে কিস করার কোন ইচ্ছাই নেই। আপনার প্রতি আমার ইন্টারেস্ট নাই। আপনি ধা|ক্কা দেয়ায় আমার ফোন পড়ে যাচ্ছিলো। সেটা ধরতে গিয়েই আপনি আমার গায়ে এসে পড়েছেন। আমার নতুন ফোনটা গেলো।
যদিও দোষটা রিদিশারই তবুও সে স্বীকার না করে বলল-
-” কি আমাকে পা•গল বললেন। আপনাকে ফেলে দিয়েছি বেশ করেছি। অন্ধের মত ফোনের দিকে তাকিয়ে হাঁটলে মানুষ তো ধা ক্কা খেয়ে পড়বেই। আপনাদের মতো পা গলের ফোনগুলো ন ষ্ট হওয়াও ভালো। নেক্সট এ চোখ উপরে তুলে হাঁটলে ফোনসহ আপনাকেও ফে লে দিবো। আমি আজকেই না লিশ দিবো আপনার নামে স্যারের কাছে।
রিদিশা গটগট করে উপরে হাঁটা দেয়। এরিক চোয়াল ঝুলিয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কি মেয়েরে বাবা আমায় ধা•ক্কা দিলো, আমার ফার্স্ট কিস চু রি করলো, আমার ফোন ভাঙলো এখন আমার উপরেই বাঘের মত সরি বাঘ নয় সিংহ হবে, সিহং এর ফিমেল ভার্সন মানে সিংহীর মতো গ|র্জন করছে। এরিকের নিজের ফোনের কথা মনে হতেই তাড়াতাড়ি নিচে নামল। ফোনটা খ।ন্ড খ|ন্ড হয়ে পড়ে আছে। শীট আমার নতুন ফোনটা শেষ করে দিলো। যাইহোক এখন আমি আরেকটা কিনবো। এরিক নিজের কেবিনে গিয়ে বসলো। তখন একটা ছেলে এসে বলল-
-” স্যার একটা মেয়ে আপনার সাথে দেখা করতে চায়।
এরিক ভাঙা ফোনটা ডয়ারে রাখলো। আয়েশী ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে ঘুরলো একবার। দাপটের সাথে জবাব দিলো-
-” মেয়েটা কি আমাদের কম্পানির? নাকি বাহিরের?
-” আমাদের কম্পানির।
-” পাঠিয়ে দাও তাহলে।
এরিক ঘুরে গেলো চেয়ার নিয়ে। ছেলেটাও মাথা নিচু করে চলে গেলো। গিয়ে মেয়েটিকে বলল-
-” আপনি যেতে পারেন।
মেয়েটির চোখে খুশিতে ঝিলিক দিয়ে উঠলো। সে যেন এটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। এখন বুঝাবে মজা। ধন্যবাদ জানিয়ে চট করে দরজায় নক করলো মেয়েটি। ভেতরে এরিক কন্ঠ গম্ভীর বানিয়ে বলল-
-” কাম ইন।।
আসার নির্দেশ পেয়ে মেয়েটি তাৎক্ষণিক দরজা ঠেলে ঠুকলো। মুখে এক টুকরো হাসি ফুটিয়ে বলল-
-” স্যার আমার একটা অ|ভিযোগ আছে। আমাকে একটা ছেলে ধা|ক্কা দিয়েছে একটু আগে। তার উপর আবার সাথেই খা|রাপ ব্যবহার করেছে।
এরিক কথাটা শুনেই চট করে চেয়ার ঘুরালো। চোখ দুটো বড় বড় করে রাগী গলায় বলল-
-” ইউউউ
#চলবে
#সূচনা_পর্ব
#তুমি_আসবে_বলেছে_হৃদয়
#মেঘলা_আহমেদ (লেখিকা)