#তুমি_আমার_প্রেমবতী
#পর্বঃ১৪
#সানজিদা_খানম_স্বর্ণা
৩১.
সারাক্ষণ চিন্তায় চিন্তায় শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে পড়শী।সৌখিন মেয়েটি কেমন করে নিজের সমস্তটা ভুলে এক সাক্ষরের ভাবনায় মত্ত হয়ে আছে।সেদিনের পর থেকে একদম থমকে গেছে পড়শী।এখনো সাক্ষরের কোনো খোঁজ পায়নি সে।তাওহিদের সাথেও যোগাযোগ নেই।সবার থেকে সে নিজেকে একা করে নিয়েছে। সাক্ষর যেমন করে হারিয়ে একা হয়ে গেছে সে ও নিজেকে একা করে নিয়েছে। কিচ্ছু ভালো লাগে না তার।সাক্ষরের কথা ভাবতেই চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরে।
‘পড়শী।এই পড়শী।’
পরিচিত কন্ঠের আওয়াজে দরজা খুলে পড়শী।কিন্তু দরজায় কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির দেখা না পেয়ে আশ্চর্য হয়ে বলে,
‘মা তুমি?কিন্তু আমাকে যে ডেকেছে সে কোথায়?’
‘এই যে আমি?’
‘তাওহিদ তুই এই সময়ে এখানে!এই ঝড় বাদলের মাঝে?”
‘কেন তোর বাসায় আমি আসতে পারি না?আর এই সব ঝড় আমার কাছে কিছুই না।’
‘কেন আসতে পারবে না বাবা,অবশ্যই পারো।এই পড়শী তুই তাকে ঘরে নিয়ে যা।আমি কিছু খাবার দাবারের ব্যাবস্থা করি।’
এই বলে পড়শীর মা চলে যায়।পড়শীর বাবা অনেক আগেই মারা গেছে।অর্থ বিত্তের অভাব নেই।এক মেয়ের সমস্ত আবদার মেটাতে যথেষ্ট সামর্থ আছে।
‘কিরে তাওহিদ, এতো রাতে আমাদের বাড়িতে কেন এলি?’
‘কেন রাত হয়েছে বলে কি হয়েছে?রাতের বেলা বুঝি তুই মানুষ থাকিস না?রাক্ষসরাণী হয়ে মানুষের ঘাড় মটকে দিস!রাতে এসেছি তাই সমস্যা হচ্ছে?চিন্তা করিস না,আজকে আমার ঘাড় মটকে দে।’
‘একটা কানের নিচে দিব।শয়তান।বাদরামি করার জায়গা পাও না।এতো রাতে কেন এসেছিস তাই বল?’
‘তার আগে তুই বল,কয়েকদিন থেকে তোর ফোন বন্ধ কেন?ভার্সিটিতেও যাচ্ছিস না কেন?’
‘ভালো লাগে না তাই যাচ্ছি না।’
‘কেন ভালো লাগে না?সব কিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিলেই কি সমাধান হবে?’
‘জানিনা।কিন্তু আমি মুক্তি চাই। এই ভাবে আর থাকতে পারছি না।সাক্ষরকে আমি আঘাত করেছিলাম। মানিছি সে কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু সে কি এটা বুঝে না আমারও কষ্ট হচ্ছে।আমার নিজেরও যন্ত্রণা হচ্ছে।বুকের ভেতর অনুতাঅএর পাহার জমা হয়েছে। সাক্ষর শুধু নিজের দিকটা বুঝে হারিয়ে গেছে। আমার দিকটা কেন বুঝলো না?একটু যোগাযোগ ও করেনি এই এতোদিনের ভিতরে।’
‘আমি সব জানি।কিন্তু এই ভাবে তো জীবন চলে না সাক্ষরের সাথে কথা বলা উচিত । তোদের নিজের সমস্যা নিজেদের মিটিয়ে নেওয়া উচিত। এই ভাবে না তুই ভালো আছিস। না সাক্ষর ভালো আছে।’
‘কিন্তু এখন আমি কি করবো?সাক্ষর কোথায় আছে কিছুই জানিনা।তার সাথে কিভাবে দেখা করবো? কিভাবে কথা বলব?’
‘আমার মনে হয় সে বাড়িতে চলে গেছে।কিন্তু ওর বাড়ির কারো নাম্বার বা কিছুই আমার কাছে নেই যার সাহায্যে ওর সাথে যোগাযোগ করবো।আমাদের উচিত একবার ঢাকা যাওয়া।ওর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেওয়া সে ওখানেই আছে কি না?’
‘দেখ এতোদিন হয়ে গেলো।যদি সাক্ষর বাড়িতে না থাকতো বা অন্য কোথাও থাকলেও বাড়ির সাথে যোগাযোগ না রাখতো তাহলে বাটি থেকে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই খোঁজ করতো।কিন্তু এমন কিছু ও হয়নি।মনে হচ্ছে সাক্ষর বাড়িতেই চলে গেছে। ‘
‘তাহলে তো আমার আর তোর ভাবনা মিলেই গেছে।আমরা তাহলে সাক্ষরের বাড়িতে গিয়েই খোঁজ নেবো। ‘
‘যেখানে সাক্ষর নিজে আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি।স্বার্থপরের মতো একা রেখে চলে গেছে সেখানে ওর বাড়িতে যাওয়া কি আমার আত্নসম্মানে বাঁধে না?’
‘কি সব আত্নসম্মান টম্মান নিয়ে পরে আছিস?জানিস তো সাক্ষর কেমন?ওর অভিমান হয়েছে।আমাদের দেখলে এমনিতেই অভিমান ভেঙে যাবে।এই সব জেদ না করে ভালোর জন্য বলতেছি চল সাক্ষরের বাড়িতে যাই।’
‘ঠিক আছে।তাহলে আমরা ঢাকা কবে যাচ্ছি?’
‘পড়শী আমি বলি কি কাল সকালেই যাবো।অনেক দিন হলো সাক্ষরকে দেখি না।যত দ্রুত যাওয়া যায়।’
‘ঠিক আছে। তুই যখন কাল বলতেছিস তাহলে কালকেই যাবো।’
‘তাহলে, এখন আমি যাই পেত্নী।রাত হয়েছে অনেক।তোর তো আবার রাক্ষসী রূপ নিতে হতে।’
‘তবে রে,দাঁড়া তুই।আমি রাক্ষসী তাই না?’
‘সরি, রাক্ষসী না।পেত্নী।আচ্ছা পেত্নী যাই।’
৩২.
বিয়ের আয়োজন বেশ ঘটা করেই হচ্ছে।বাড়ি ভর্তি মেহমান।বৃষ্টি নেই তবে খুব জোরে হাওয়া দিচ্ছে এরই মাঝে কয়েক বার অভির খোঁজ অনেকে।আবার কেউ ঠাট্টা করে বলছে,’নিজে বিয়ে করবে না। তার জন্য বাবা মা ছোট ভাইকে বিয়ে করানোর সিন্ধান্ত নিয়েছে আর সেই অপমান হয়তো মানতে পারছে না। তাই কোথায় গিয়ে গা’ ঢাকা দিয়েছে দেখো।বড় ছেলেকে রেখে ছোট ছেলের বিয়ে দিচ্ছে।কি আজব রে বাবা।বুঝি না এই মোজাম্মেল সাহেবের বড় ছেলের বিয়ে করতে কিসের সমস্যা।’
‘আমার ভাইয়ার কোনো সমস্যা নেই।আমার ভাইয়া কোনো সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করবে না এটাই সমস্যা।আর আব্বু আম্মু সেটাই মানতে পারছে না বলেই ছোট ভাইয়ার বিয়ে দিচ্ছে।সুন্দরী মেয়ে না হলে আব্বু আম্মু বিয়ে দিবে না।আর ভাইয়া কোনো সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করবে না।আর কার বিয়ে কেন হচ্ছে?কার সাথে হচ্ছে? বড় ভাইয়ার বিয়ে হবে নাকি ছোট ভাইয়ার সেটা জেনে আপনাদের কাজ নেই। আপনারা এসেছেন অতিথি হয়ে।সে রকম অতিথি হয়েই থাকুন।দাওয়াত দিয়েছে। খাবেন আনন্দ করবেন চলে যাবেন।পারিবারিক বিষয়ে এতো নাক গলাতে কেউ ডাকেনি আপনাদের।’
স্মৃতির মুখে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শুনে মহিলাগুলো থতমত খায়।একজন ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,’শোনো মেয়ের কথা। বলি বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেই সহবোধ শিক্ষাটা বুঝি তোমার নেই?’
‘আমার সহবোধ শিক্ষা আছে কিন্তু আপনাদের এতোটুকুও বোধ বুদ্ধি নেই।বিয়েতে অতিথি হয়ে এসে ঘরের খবর নিয়ে না পরলেই হতো। এতো কথা আপনারাই তুলেছেন। ‘
‘কথা বাড়াচ্ছো কেন মেয়ে?আমরা তোমার গুরুজন।বড় হয়েছো।অথচ বড়দের সম্মান দিয়ে কথা বলতে শিখোনি।’
স্মৃতি জবাব দিতে যাবে এমন সময় সাথী এসে ডেকে নিয়ে যায় তাকে।কিছু মহিলা এবার স্মৃতিকে নিয়ে পরেছে।’এই মেয়ের যা ব্যাবহার। বিয়ে হবে না।মোজাম্মেল সাহবের স্ত্রী এই মেয়েকে মানুষ করতে পারেন নি। ছেলে দুটোর আর যাই হোক এতোটা উচ্ছনে যায় নি মেয়েটার কথায় কি তেজ।’
‘রাখো তো। যার যা ইচ্ছে।আমরা তাদের ব্যাপার নিয়ে কেন এতো মাতামাতি করতেছি।উনাদের ব্যাপার উনারা বুঝে নিবে।’
সাথী স্মৃতিকে সাইডে এনে বলে,’স্নিগ্ধা আপুদের বাড়ি থেকে একটা ছেলে এসেছে।কি একটা দরকার।উনার সাথে একটু কথা বলো।সবাই তো ব্যাস্ত। উনাকে একা বসিয়ে রাখলে কেমন দেখায়?’
‘তা তুই আমাকে ঐ ছেলের সাথে কথা বলতে বলতেছিস কেন?তুই নিজে গিয়ে কথা বল।ভদ্রলোকের সাথে আমার কথা বলার টাইম নেই।তুই উনাকে একটু চা, কফি, শরবত যা লাগে দে। আমি পারব না।আমি যাচ্ছি কাজ আছে।’
‘আপু শোনো।এই যাহহ চলে গেলো।আমি ঐ ছেকেটার সামনে একা একা যাবো?সে কি করে হয়?’
স্মৃতি আবার ফিরে এসে তাড়া দিয়ে বলে,’কিরে কি ভাবছিস যা।’
সাথী কথা বাড়ায় না।রান্না ঘর থেকে শরবত সহ লোকটির সামনে এসে দাঁড়ায়। শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে,’এই নিন।শরবত খান।’
লোকটা মজা করে বলে,’আরে আমি শরবত খান নই।আমি শুভ খান।’
সাথী শুভর কথায় হেসে ওঠে।সাথীর ইনোসেন্ট মার্কা হাসি দেখে মুগ্ধ হয় শুভ।১ম দেখাতেই অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে তার মনে।সাথী হাসতে হাসতে বলে,’এই নিন শুভ খান শরবত খেয়ে মাথার বুদ্ধির দরজা খুলুন।’
‘এক মিনিট।তুমি কি কোনো ভাবে আমাকে বোকা প্রমান করতে চাইলে?’
‘আশ্চর্য আমি আপনাকে কেন বোকা প্রমান করতে চাইব?’
‘বুদ্ধির দরজা খুলতে বললে কেন?আমার বুদ্ধির দরজা খোলাই আছে।তুমি বুঝতে পারছো না।’
‘দেখুন আমার এতো বুঝে কাজ নেই।এই নিন শরবত আপনার ইচ্ছে হকে খাবেন ইচ্ছে হলে খাবেন না।আমি যাই।’
‘তোমাদের বাড়িতে লোকজন এলে এভাবেই বুঝি কথা বলো?একটু আদর ভালোবাসা দিয়ে কথা বলতে পারো না?’
‘আদর ভালোবাসা দিয়ে মানে?’
‘মানে,একটু ভালোভাবে।একটু ভালোবেসে।মিষ্টি করে দেখতে তো খুব মিষ্টি তা কথা এতো তেতো কেন তোমার?’
‘আমি এতো মিষ্টি করে কথা বলতে পারি না সরি।আমি তেতো কথাই বলি।’
এই বলেই সাথী বলে যায়।শুভ তাকিয়ে থাকে সাথীর যাওয়ার পানে।
চলবে, ইনশাআল্লাহ ✨
(আসসালামু আলাইকুম।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করবেন।হ্যাপি রিডিং।)