তুমি আমার প্রেমবতী পর্ব ১২

0
413

#তুমি_আমার_প্রেমবতী
#পর্বঃ১২
#সানজিদা_খানম_স্বর্ণা

২৭.
সময়টা চৈত্র মাসের শেষ বৈশাখের সূচনার।কেটেছে বেশ কয়েকদিন।মনের মাঝে পাহার সমান ব্যাথা নিয়ে ভাগ্যের পরিহাস বরণ করেছে প্রেমা।মায়ের এই মৃত্যু দুই ভাই বোন কেউ মানতে পারছে না।আদিল নিজের মা’কে বাবা মা’কেই মা বলে জানত।মায়ের মৃত্যু শোক এতো সহজে ভুলে যেতে পারছে না।প্রেমা জীবন বাঁচাতে সামান্য কিছু খেয়ে কোনো রকম বেঁচে আছে।আদিলের চোখ মুখের অবস্থা দেখে মনে হবে কত দিন কষ্টে আছে!অথচ সেদিনের পর থেকে অভি প্রতিদিন এসে খোঁজ নেয়।লা*শ দাফন থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ অভি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করেছে। প্রেমা আর আদিলের এই অবস্থা দেখে সে খুবই কষ্ট পায়।যদিও এই প্রেমাকে তার একদম ভালো লাগে না।১ম দিনের ঝগড়ুটে প্রেমাকে খুব মিস করে।কেন জানি প্রেমা একটা বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে অভির মনে।খুব করে অভি চাইছে আদিল আর প্রেমা যাতে ভালো থাকে সেই ব্যাবস্থা করতে।

‘এই সময়ে এই ভাবে বসে আছো কেন?এই রাত্রি বেলা এই ভাবে পাগলের মতো ঘরের সামনে কেন বসে আছো?’
মাথা তুলে তাকায় প্রেমা।সেদিনের পর থেকে অভি রোজ অফিস থেকে ফেরার পথে প্রেমা আর আদিলের খোঁজ নিয়ে যায়।
‘আপনি?আজও এসেছেন?’

‘না আসার মতো কি কিছু হয়েছে?আমি রোজ আসব।আদিল কোথায়?আদিলকে দেখছি ন যে!তোমাকে আর আদিলকে আমি একা একা ছেড়ে দিতে পারি না।’

‘কেন পারেন না?আমার মা মারা গেছে এই জন্য আমাদের ওপর আপনার এতো দয়া।কেন দেখাচ্ছেন এতো দয়া?’

‘এটা দয়া নয়। এটা আমার দায়িত্ববোধ।বলো আদিল কোথায়?’

‘ভাই ঘরেই আছে ঘুমাচ্ছে।আর আমি আর আমার ভাই কবে থেকে আপনার দায়িত্ব হয়ে গেলাম?কিসের দায়িত্ব?না আছে আমাদের কোনো রক্তের সম্পর্ক। এমন ও নয় আপ৬আমাদের আত্নীয়!কেম এতো দায়িত্ব নিচ্ছেন? ‘

‘দেখো মানছি আমার সাথে তোমাদের রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই।আমি তোমাদের কোনো ভাবে আত্নীয় ও নই।কিন্তু মানুষ হিসাবে আমি তোমাদের এইভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। এটা আমার দায়িত্ব। ‘

‘ও আচ্ছা মানুষ হিসাবে আপনি কেন এগিয়ে এলেন? শহরে তো মানুষের অভাবে নেই।কই অন্য কোনো মানুষ তো এতো দায়িত্ব নিতে আসে না।আপনি কেন যেচে পরে দায়িত্ব নিচ্ছেন?’

‘প্রেমা আমি তোমাদের চিনি।আর আদিলের জন্যই সেদিন তোমাদের বাড়িতে এসেছিলাম।আর এসে তোমার মায়ের মৃত দেহ দেখেছি।আমি কি চাইলেই এর পর তোমাদের ছেড়ে যেতে পারতাম।আমার কি বিবেক বোধ বলতে কিচ্ছু নেই।’

‘আপনার যেমন বিবেক বোধ আছে।আমারও তেমন আত্নসম্মান আছে।এই ভাবে অন্যের থেকে দয়া নেওয়া আমি মানতে পারি না।’

‘আচ্ছা মানতে পারো না।কিন্তু আমি যদি তোমাদের পাশে না দাঁড়াতাম তাহলে না খেয়ে থাকতে।নিজের কথা ছেড়ে দাও।আদিলের কি অবস্থা হতো ভেবে দেখেছো?ছেলেটা এমনিতেই কেমন যেন শান্ত হয়ে গেছে। ‘

‘আমি কি করব বলুন?আমার কষ্ট হচ্ছে? আমি আমার মা’কে খুব ভালোবাসি।আমার মা মরে গেছে এটা ভাবতেই পারি না। নিজেকে কেমন যেন অসহায় লাগে। আমাদের মা আমাদের মাথার ওপরের ছায়া ছিল।আর সেই ছায়া সরে গেল এটা ভাবতেই আমি পা*গ*ল হয়ে ওঠি।’

‘দেখো প্রেমা শান্ত হও।তোমার…’

কথা শেষ করতে পারে না অভি।প্রেমা হুট করে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব অভি।কিন্তু পরক্ষনেই মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় প্রেমার।

২৮.
সাক্ষরের সাথে স্নিগ্ধার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়েছে।দুদিন পরেই গায়ে হলুদ।স্মৃতির এসএসসি পরীক্ষা শেষ। অভি আজকাল বাড়িতেই থাকে না।রোজ সকালে বাড়ি থেকে বের হয়।ফিরে আসে গভীর রাতে।সাক্ষরের সাথেও তেমন কোনো কথা হয়নি অভির।সকালে খাবার টেবিলে একটু আধটু গুড মর্নিং আর রাতে ভুলক্রমে দেখা হয়ে গেলে গুড নাইট।ভীষণ রকম ভাবে মানসিক অস্থিরতায় ভুগছে সাক্ষর।তবুও সবার সামনে হাসি খুশি।তাওহিদ আর পড়শীর সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই।ফোন বন্ধ করে রেখে দিয়েছে।সে চায় পড়শী কষ্ট থাকুক।এই অপমান মানক্তে তার ভিতর দুমড়েমুচড়ে যায়।ছাদে উঠে গিটারের সুর তোলেছে সাক্ষর।

‘মাইয়্যা ও মাইয়্যারে তুই অপরাধী রে,
আমার যত্নে গড়া ভালোবাসা দে ফিরাইয়া দে।’

এমন সময় পেছনে কারো উপস্তিতি লক্ষ্য করে সাক্ষর বলে,’কে?’

ধীর পায়ে এগিয়ে আসে স্মৃতি। সাক্ষর স্মৃতির দিকে তাকিয়ে বলে,’কিছু বলবি বনু?’

‘ভাইয়া তোর কি হয়েছে?’

‘আমার আবার কি হবে।হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন করছিস বনু?’

‘তুই আমার থেকে কিচ্ছু লুকিয়ে রাখিস না।তোকে দেখে মন হিয় তুই ভালো নেই।’

‘কে বললো আমি ভালো নেই?’

‘তোর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।’

‘বাপরে তুই আবার কবে মনের কথা বুঝতে পারিস? কিরে মানুষের মন পরতে শুরু করেছিস নাকি বনু?’

‘ভাইয়া ফাইজলামি করবি না।তোর মুখ দেখেই আমি মনের কথা বুঝতে পারছি।তার জন্য এতো ঘটা করে যতীশী হবার দরকার নেই।তুই যে কষ্টে আসিছ তোকে দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে।’

‘না বনু আমি ভালো আছি।আর তুই কি সব নিয়ে পরে আসিছ?আমার বিয়ে আনন্দ কর।’

‘আর আনন্দ।বড় ভাইয়ার বিয়ে না দিয়ে আগে তোর বিয়ে দিচ্ছে।বড় ভাইয়াও যেন কেমন হয়ে গেছে।কারো সাথে ঠিক করে কথা বলে না।কেমন যেন খাপছাড়া হিয়ে গেছে জীবন।আমার এই সব দেখতে ভালো লাগে না।’

‘সত্যি আমিও খেয়াল করেছি ভাইয়া কেমন যেন হয়ে গেছে?এর কারণ কি বনু?’

‘আব্বু তোর সাথে স্নিগ্ধা আপুর বিয়ে ঠিক করার পর ভাইয়া বলেছিল যাতে তোর মতামত নিয়ে বিয়ে ঠিক করে।কিন্তু আব্বু তা না করে ভাইয়াকে অনেক কথা শুনিয়েছে।এর পর থেকেই ভাইয়া এমন হয়ে গেছে।’

কথাটা শুনে সাক্ষর আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাস ভাবে বলে,’ওহহ কিন্তু ভাইয়া ভুল কি বলেছিল?আব্বু এমন কেন করে বনু?’

‘ভাইয়া তুই কি এই বিয়েতে রাজি নই?’

‘আমি কি একবারও বলছি?আব্বু আম্মুর সিদ্ধ৬আমার সিদ্ধান্ত। ‘

‘যদি রাজিই থাকতিস তাহলে ছাদে এসে গিটার নিয়ে বিরহের সুরে অপরাধী গান গাইতি না।তোদের এই ভাবে দেখতে আমার একদম ভালো লাগে না।কষ্ট হয়।আগে তুই বাড়ি এলে কত মজা হতো।তিন ভাই বোন মিলে কিত আনন্দ করে সময় কাটাতাম।ঝগড়া করতাম।কিন্তু এখন তোরা সবাই যান্ত্রিক রোবট হয়ে গেছিস।কেউ মানুষ নেই।আমার আগেই দুই ভাইকে আমি মিস করি।আমি তোদের খুব ভালোবাসি ভাইয়া।’

‘আমিও তোকে অনেক বেশি ভালোবাসি বনু।কিন্তু ভাবতেই কষ্ট হয় ভাইদের ভুলে তুইও শশুর বাড়ি চলে যাবি।বয়স তো কম হলো না।১৮ হয়েই যাবে।’

‘তাতে কি?আমি কি বুড়ো হয়ে যাবো নাকি?এই সব বলবি না।তাহলে খবর আছে তোর।’

‘ওকে বলব না।এখন যাও ঘরে যাও আপুমনি।রাত অনেক হলো।’

‘তুমিও চলো ভাইয়া।’

দুই ভাই বোন হেসে ওঠে।সাক্ষরের হাসিটা কি সত্যি হাসি?নাকি বোনের সামনে নিজেকে যান্ত্রিক মানুষ প্রমান করা থেকে বাঁচানোর সামান্য প্রচেষ্টা?

চলবে, ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here