তুমিময় আসক্তি ২ পর্ব ৩

0
1129

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“৩”

– দোলা শাড়িটা ঠিক করে দৃঢ় কন্ঠে বলে, দেখুন আমার শরীরটা একদম ভালো নেই আজ। তাই কোনো কিছুর জন্য আমি প্রস্তুত নই। আমাকে মাফ করুন আজকের মতো। দোলার কথায় রুদ্র ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে হোয়াট? রুদ্রর এমন রিয়াক্টে দোলা হতভম্ব হয়ে তাকায়। রুদ্র বিরক্তমাখা একটা লুক নিয়ে কিছুখন দোলার দিকে তাকিয়ে থেকে টাওয়াল নিয়ে সোজা ওয়াসরুমে ঢুকে যায়। রুদ্রর এমন বিহেভে দোলা তো অবাক। রুদ্র কিছু না বলে এই ভাবে ছেড়ে দিলো তাকে। এ যেনো অতী অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার। কারণ! এর আগে দোলা যতবার বারণ করেছে বা বাধা দিয়েছে তাতে রুদ্র তো শুনিনি বরং আরও বেশি রোমান্টিক টর্চার করেছে তার উপর। দোলা যেনো গভীর ভাবনায় তলিয়ে যায়। এই হিংস্রতা তো আবার এই স্বাভাবিক। দোলার ভাবনা চিন্তার মধ্যে রুদ্র ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে আসে। দোলাকে আনমনে হয়ে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে আসে রুদ্রর। রুদ্র টাওয়ালটা কাবার্ডে রেখে দোলার কাছে আসে। দোলা তার ভাবনায় এতটাই মগ্ন হয়ে ছিলো যে রুদ্র ওয়াসরুম থেকে কখন বের হয় বুঝতে পারেনি। রুদ্র তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে দোলা হকচকিয়ে উঠে ভয়ার্ত চোখে তাকায়।

– তাহলে কি উনি এবার ঝাপিয়ে পড়বে আমার উপর? মনে মনে ভাবে দোলা। রুদ্র দোলাকে আর কিছু ভাবার সময় দেয়না৷ দোলাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে দোলার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। দোলা শিউরে ওঠে শাড়ির একপাশ চেপে ধরে একহাতে। রুদ্রর থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে শুরু করলে রুদ্র গলা থেকে মুখ তুলে দোলার দিকে তাকিয়ে গভীর কন্ঠে বলে আর একবার যদি নড়াচড়া করো! তাহলে যেটা চাইনা করতে সেটাই করতে বাধ্য হবো। চুপচাপ শুয়ে থাকো। বড্ড ক্লান্ত আমি। আই নিড রেস্ট! সো চুপচাপ শুয়ে থাকবে৷ রুদ্রর হুমকিতে দোলা নিরব মেরে যায়। রুদ্র আবারও দোলার গলায় মুখ ডুবিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।

গন্ডার একটা। আই নিড রেস্ট। রেস্ট দরকার করনা বারণ করছে কে। কিন্তু আমার উপর কেন ভাই? মনে মনে কথাগুলো বলে দোলা। অতঃপর! ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুদ্রর দিকে তাকাতেই দেখে রুদ্র ঘুমিয়ে পড়েছে৷ রুদ্রর উত্তাপ ছড়ানো দৃঢ় শ্বাস দোলার গলায় আঁচড়ে পড়ছে। এতে যেনো দোলার মধ্যে অন্য রকম অনুভূতি জাগ্রত হয়।
– যা বাবাহ! এর মধ্যে ঘুমিয়েও গেলো। দোলা এবার রুদ্রর দিকে পূর্ণ দৃষ্টি রাখে৷ ঘুমন্ত রুদ্রকে যেনো বাচ্চাসুলভ লাগছে। এই সময়টা কেউ দেখলে বলবেই না এই মানুষটার আরো একটা রুপ আছে। আর সেটা হিংস্র। জাগ্রত অবস্থায় হিংস্র রাগী সিংহ হয়ে উঠে।
– কেনো এত কঠিন হোন আপনি? কেনো আমার সাথে এমন করেন আপনি? এই ভালোবাসা দেন তো আবার এই দূরে সরিয়ে রাখেন। আচ্ছা সত্যি কি উনি আমাকে ভালোবাসে? নাকি অন্য কোনো কারণ আছে। যার জন্য উনি আমার সাথে এমন করেন। কিন্তু কি কারণ থাকবে? উনার সাথে আমার কিসের শত্রুতা। যদি ভালোবাসবেই তাহলে কেনো কষ্ট দেয় আমাকে? ভালোবাসার মানুষকে কি সত্যি কষ্ট দেওয়া যায়? সব প্রশ্ন যেনো দোলার মধ্যে জোট পাকিয়ে আসে। দোলা উন্মাদ হয়ে উঠে প্রশ্নের ভীড়ে।

– নাহ! আমি এত কিছু আর ভাবতে পারছি না। তবে আমাকে তো সবটা জানতে হবে কেনো উনি এমন করেন আমার সাথে। কেনো এত হিংস্রতা তার মধ্যে? এইসব ভাবনা নিয়ে দোলাও একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।

— পরের দিন সকালে! দোলার ঘুম ভাঙে বেশ বেলা করে। ঘুম থেকে উঠে দেখে পাশে রুদ্র নেই। ঘড়ির দিকে তাকায়েই আঁতকে উঠে দোলা। কারণ ঘড়ির কাটা নয়টা ক্রস করে গেছে অনেক আগে।
– আমি এতটা সময় ঘুমিয়েছি আজ? আর কেউ আমাকে একবার ডাকলো না। এরপর দোলা লক্ষ্য করে দেখে তার শরীরে ব্যথাটা কমবোধ হচ্ছে৷ দোলা উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। পেট থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে হাত দিলে কেমন আঠালো ঠেকে। দোলা বুঝতে পারে এটা মলম দেওয়ার কারণে ।
— তাহলে কি উনি আমাকে মলম দিয়ে দিয়েছেন? কিন্তু কখন? উনি তো ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন আমার আগে। দোলা এবার গলার দিকে তাকিয়ে দেখে গলার দাগগুলো হাল্কা হয়ে এসেছে।

– নিজে আঘাত করে আবার মলম লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দরকার নেই এমন ভালোবাসার। কিন্তু উনি এত সকালে গেলেন কোথায়? উনার অফিস তো দশটার সময়। দোলা ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে সোজা নিচে নেমে যায়। ড্রয়িং রুমে রত্না চৌধুরী ( রুদ্রর মা) আর জেসমিন চৌধুরী আছে। দোলাকে দেখে রত্না চৌধুরী মুচকি হাসি দেন একটা। বিনিময়ে দোলাও একটা হাসি উপহার দেয়। জেসমিন চৌধুরী মুখ বেকায় দোলাকে দেখে।

– কি রে দোলা মা শরীর ঠিক আছে তোর? রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা বিস্মিত হয়ে বলে আমি ঠিক আছি মা৷
– তাহলে যে রুদ্র বলে গেলো তোকে যেনো কেউ ডিস্টার্ব না করে। তো নাকি শরীরটা ভালো নেই৷ ঘুমের প্রয়োজন। তাই আর আমরা কেউ তোকে ডেকে পাঠায়নি। রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা অবাক হয়ে বলে উনি বলেছেন?
– গুড মর্নিং ভাবি! মিষ্টি একটা হাসি ঝুলিয়ে বলে তানিয়া ( জেসমিন চৌধুরীর মেয়ে তানিয়া) তানিয়াকে দেখে দোলা শুধু মৃদু হাসে।
– দোলা মা সত্যি করে বলতো কি হয়েছে? তোর শরীর ঠিক আছে তো? রুদ্র কি কিছু করেছে তোর সাথে৷ যদি ওর জন্য শরীর খারাপ হয়ে থাকে তো বল আমায়৷ আমি শাসন করবো রুদ্রকে। দিন দিন কেমন একরোখা হয়ে উঠছে ছেলেটা৷ গম্ভীর কন্ঠে বলে রত্না চৌধুরী।
– না না মা! উনি কিছু করেননি। আমি ঠিক আছি। হকচকিয়ে উঠে কথাটা বলে দোলা। তানিয়া মুগ্ধ চোখে তাকায় দোলার দিকে। এত কিছুর পরও দোলা রুদ্রকে ছোট করতে চাইনা কারো সামনে।

– ওর আর কি হবে ভাবি! যা হওয়ার তো হয়েছে আমাদের রুদ্রর৷ কপাল তো পুড়েছে আমাদের। এমন একটা ফকন্নি ঘরের মেয়েকে বিয়ে করলো যে ছেলেটা এখন প্রতি মুহুর্তে আফসোস করে। কি যাদু যে করেছিলো আমাদের রুদ্রকে কে জানে। ব্যঙ্গ করে বলে জেসমিন চৌধুরী দোলার উদ্দেশ্যে।
– জেসমিন চৌধুরীর কথায় দোলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রত্না চৌধুরী হুংকার দিয়ে বলে তোমাকে না কতদিন বলেছি দোলার সাথে এইভাবে কথা বলবে না। দোলা যেমনই হোক না কেনো! ওর স্টাটাস যাই হোক না কেনো! এখন ওর পরিচয় এই বাড়ির বউ। এই চৌধুরী বাড়ির একমাত্র পুত্রবধূ সে। তাই কোনো কিছু বলার আগে একটু ভেবেচিন্তে বলবে আশা করি। আমার রুদ্র ওকে ভালোবেসে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। নিজ ইচ্ছায় আসেনি এই বাড়িতে। তাই আমি চাইনা দোলার কোনো ভাবে অসম্মান হোক এখানে। আমার ছেলেটা ওর জন্য নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। ওই কালকুট অবস্থা থেকে ফিরে এসেছে। কথাগুলো বলতেই রত্না চৌধুরীর চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি ঝরে পড়ে। জেসমিন চৌধুরী মুখ বেকিয়ে উঠে যায় রত্না চৌধুরীর কথা শুনে৷ কিন্তু দোলা বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে৷

– কালকুট অবস্থা মানে? কি হয়েছিলো মা? হঠাৎ দোলার এমন প্রশ্নে ঘাবড়ে যায় তানিয়া এবং রত্না চৌধুরী। দোলার তীক্ষ্ণ নজর দুজনের দিকে।
– কি হলো মা বলুন। কোন অবস্থার কথা বলছেন আপনি? আর নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে মানে? কৌতুহলের শেষ নেই দোলার মধ্যে। রত্না চৌধুরী আবগে কথাগুলো বলে ফেলেছেন। কিন্তু এখন সেটা কিভাবে বোঝাবে দোলাকে। কীভাবে সামাল দেবে?

– কই কিছু না তো। আমি তো এমনি বললাম কথাটা৷ তোকে বিয়ে করার পর আমার রুদ্র তো নতুন জীবন পেয়েছে। নতুন একটা সম্পর্কে পা দেওয়াকে কি নতুন জীবন বলে না৷ আমতাআমতা করে বলে রত্না চৌধুরী। দোলা সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে থাকে রত্না চৌধুরীর দিকে।
– ওইসব বাদ দে। শুন দোলা’মা! বিয়ের পর তুই তো একবারের জন্যও তোর বাবার বাড়ি যাসনি। জানি এটা আমার রুদ্রর জন্য হয়নি। আমি বলি কি তুই একদিনের জন্য ঘুরে আয় সেখানে থেকে। তাহলে তোরও ভালো লাগবে সাথে তোর বাবার মনটাও ভালো লাগবে। উনাকেও তো আসতে দেখিনা এখানে৷ রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা মুখটা মলিন করে মিনমিন স্বরে বলে সে উপায় কি আছে মা। তোমার ছেলে তো চাইনা আমার পরিবারের কেউ এখানে আসুক বা আমি সেখানে যায়।

– কি রে! একা একা কি বিড়বিড় করছিস। আমি কি বললাম শুনেছিস? রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা খুশি হয় অনেক। অবশেষে সে তার বাড়িতে যেতে পারবে ভেবেই আনন্দ লাগছে। কিন্তু পরোক্ষে সে আনন্দ, হাসি খোয়া যায় রুদ্রর কথা মনে হতেই।
– কিন্তু মা্! আপনার ছেলে কি রাজী হবে আমাকে ওই বাড়িরে যেতে দিতে। অসহায় কন্ঠস্বর দোলার।
– কেনো দেবে না? ব্রো সহ যাবে দরকারে। কি তাই না মামি? হাসি মুখে বলে তানিয়া।
– হ্যাঁ তাই তো! রুদ্রও যাবে তোর সাথে। বিয়ের পর এই প্রথম বাবার বাড়ি যাবি। একা গেলে মানুষ কি বলবে। রুদ্র যাবে কথাটা ঠিক হজম হয়না দোলার। যদিও দোলা আন্দাজ করতে পারছে এতটা সহজ হবে না সব কিছু৷ আদো রুদ্র যাবে কি-না তারও ঠিক নেই৷ তবে না যাওয়ার পসিবিলিটি বেশি।

– এর মধ্যে রুদ্র হাজির হয় সেখানে৷ যগিং করে ফিরছেন তিনি। রুদ্রকে এই যগিং এর পোশাকে দেখে দোলা একটু শকড খায়৷ বিয়ের পর রুদ্র এই প্রথম যগিং গেছে।
– কোথায় যাওয়া নিয়ে কথা হচ্ছে শুনি? গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র। রুদ্রর কথায় রত্না চৌধুরী হেসে বলে ওইতো রুদ্র চলে এসেছে।
– কি হয়েছে মা? ভ্রু কুচকে বলে রুদ্র।
– আমি ঠিক করেছি যে! তুই আর দোলা আজ দোলাদের বাড়ি যাবি। বিয়ের পর একদিনও যাসনি তোরা। আর মেয়েটাকেও একবারও যেতে দিসনি। মন খারাপ করে না নাকি ওর। জানিস তো বিয়ের পর মেয়েদের বাবার বাড়ির জন্য মন আনচান করে। যদি একটু ঘুরে আসা যায়। সবার সাথে একটু সময় কাটানো যায়। তাহলে অনেক ভালো লাগে। মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে যায়৷ বেশ আনন্দমুখর হয়ে কথাগুলো বলে রত্না চৌধুরী।

– কিন্তু এখন তো কোথাও যাওয়া হচ্ছে না আমাদের। আমার অফিসে ইমপোর্টেন্ট কাজ আছে। ফ্রি হলে ভেবে দেখবো গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে রুদ্র।
– তুমি না যেতে পারো একলিস্ট ভাবিকে তো যেতে দাও ব্রো। ভাবি নাহয় একদিনের জন্য ঘুরে আসলো। তানিয়ার কথায় রুদ্র চোখ পাকিয়ে তাকায় তানিয়ার দিকে। এতে তানিয়া ঘাবড়ে যায় সাথে ভয়ে ঢোক গিলে একটা।
– আমি যখন বলেছি এখন যাওয়া হবে না মানে হবে না। কেউ কোথাও যাবেনা। এই নিয়ে আর একটা কথাও শুনতে চাইনা আমি। রুদ্রর কথায় রত্না চৌধুরী কিছু বলতে যাবে তার আগে রুদ্র দ্রুত পায়ে তার ঘরে চলে যায়। বিষন্ন মনে ছলছল চোখে মাথা নিচু করে আছে দোলা৷ সে জানতো রুদ্র কখনোই রাজি হবে না৷ বাবাকে দেখার যে ইচ্ছে, আকাঙ্খাটা জেগে উঠেছিলো। সেটা নিরবে নিস্তেজ হয়ে যায় আবার।

– মন খারাপ করিস না মা। আমি যখন বলেছি তুই যাবি তো যাবি। দেখি রুদ্র কি করে। জেদ নিয়ে বলে রত্না চৌধুরী।
– থাক না মা৷! উনি যখন চাইছেন না আমি যাবো না। উনি ফ্রি হলে আমাকে নিয়ে যাবেন।
– আমার একটা আইডিয়া এসেছে মাথায়। ভাবুক হয়ে বলে তানিয়া।
– ওর কথায় সবাই উৎসুক দৃষ্টি রাখে।
– কি আইডিয়া রে তানি? আগ্রহ নিয়ে বলে রত্না চৌধুরী।
– ব্রো তো এখন অফিসে চলে যাবে৷ আসবে সেই রাতে। ভাবি যদি সন্ধ্যার আগে ফিরে আসে তাহলে তো ব্রো জানতে পারবে না। যদি আমরা কেউ না বলি তবে। আমি বলতে চাইছি! ব্রো অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পর ভাবিও বেরিয়ে যাবে৷ এরপর সন্ধ্যায় ফিরে আসবে ব্রো অফিস থেকে ফেরার আগে। কেমন দিলাম আইডিয়াটা ভাব নিয়ে বলে তানিয়া।

– না তানি! আমি এমনটা করতে পারবো না৷ একবার যদি উনি জানতে পারে তাহলে অনেক বড় বিপদ হয়ে যাবে। আমি যাবো না। কিছুটা ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে দোলা।।কারণ সে জানে রুদ্র যদি একবার এই বিষয়ে অবগত হয় তাহলে আবার তার উপর টর্চার করবে৷ এমনও হতে পারে তার বাবা বা ভাইয়ের কোনো ক্ষতি করবে। রুদ্রকে দিয়ে একদম বিশ্বাস নেই দোলার।
– আরে তুই এত চিন্তা কেনো করছিস। আমি আছি তো। যদিও রুদ্র জানতে পারে তো আমি সামলে নেবো। আমার ছেলে আর যাই হোক আমার উপর কথা বলতে পারবে না। যতই সে বড় বড় অফিসের বস হোক৷ সবাই তাকে ভয় পাক। আমি একদম ভয় পাইনা।

– এই নাহলে আমার মামি। কথাটা বলে তানিয়া রত্না চৌধুরীর হুইলচেয়ারটা টেনে ধরে কাছে নিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে তাকে। একটা এক্সিডেন্টে রত্না চৌধুরী পা হারায়। এরপর থেকে তার অবস্থান হুইলচেয়ারে। রত্না চৌধুরী ঠোঁট এলিয়ে হেসে তানিয়ার মাথায় হাত রেখে বলে পাগলী মেয়ে আমার। এরপর দোলার দিকে তাকিয়ে বলে – শুন দোলা মা। আর কিছু ভাবিস না৷ আমি সামলে নেবো৷ তাছাড়া রুদ্র কিছু জানতেও পারবে না। আমি জানি তোর মনের অবস্থাটা। আমিও তো একটা মেয়েরে। আমিও যে বিয়ের পর অন্যের ঘরে এসেছি। তাই জানি এই অনুভূতিটা কেমন হয়৷ রত্না চৌধুরীর কথায় দোলা ছলছল চোখেই হেসে ফেলে।

– আমি সত্যি বড় ভাগ্যবতী মা। বিয়ের পর তোমার মতো একটা মা পাবো আমি কখনো ভাবিনি। সেই ছোট থাকতে মাকে হারিয়েছি। মায়ের আদর ভালোবাসা খুব মিস করতাম। বিয়ের পর তুমি সে সব পুরণ করে দিয়েছো।
– শুনো মেয়ের কথা। আরে পাগলী মেয়ে! তুই তো আমার সন্তানই। তোকে আদর করবো না তো কাকে করবো। এর মধ্যে রুদ্র আসে অফিসের লুকে।
– রুদ্রকে দেখে সবাই চুপ হয়ে যায়৷ দোলা চলে যায় কিচেনে৷ সবার জন্য নাস্তা রেডি করতে।
— আড়াল থেকে সব কথা শুনছিলো জেসমিন চৌধুরী। জেসমিন চৌধুরী একটা ডেভিল হাসি দিয়ে বলে, তুমি যাও দোলা মা। নিশ্চিন্তে তোমার বাবার বাড়ি ঘুরে আসো৷ আর এই খবরটা আমি সোজা রুদ্রর কাছে পৌছে দেবো। আর তখন রুদ্র কি করবে? তোমাকে ঘাড় ধরে এই বাড়ি থেকে বের করে দেবে ওর কথা অমান্য করার জন্য। কথাটা বলে জেসমিন চৌধুরী প্রাপ্তির হাসি দেয় একটা।

– এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কার কপাল ফাটানোর চেষ্টা করছো? হঠাৎ এমন কথায় চমকে উঠে জেসমিন চৌধুরী। পিছু ফিরে তানভীর আহমেদকে( জেসমিন চৌধুরী স্বামী) দেখে একটা স্বস্তির শ্বাস ত্যাগ করে।
– ওহ তুমি! আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কথাটা বলে জেসমিন চৌধুরী ঘরের মধ্যে চলে যায়।
– ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। সব সময় অন্যের পেছনে লাগতে গেলে ভয়টা থাকবেই। কি পাও তুমি এইসব করে জেসু? কেনো করো এমনটা৷ কখনো কি কারো কাছে সম্মান পেয়েছো তুমি এর জন্য। সেদিনের একটা মেয়ে দোলা, সে আসার পর থেকে তুমি ওর পেছনে পড়ে গেছো। আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো? এটা না ভাইয়ের বাড়ি। এখানের প্রতিটি মানুষ তোমার আপনজন। আর তুমি তাদেরই ক্ষতি করার কথা ভাবো কিভাবে?।
— শাট আপ! একদম লেকচার দিতে আসবে না আমাকে৷ আমার দয়ায় খাচ্ছো, থাকছো আর অন্যের গুণগান গাইছো। নিজের তো মুরিদ নাই কিছু করার। তোমাকে বিয়ে করে জীবনে কি পেয়েছি আমি? কি দিতে পেরেছো আমাকে? সারাজীবন তো আমার টাকায় চলে গেছো। তাহলে এত বড়বড় কথা আসে কীভাবে তোমার?

— চলবে…..

❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here