#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“২৬”
–সত্যি তুমি বড় নিষ্ঠুর, নির্লজ্জ, জঘন্য মেয়েমানুষ। যার মধ্যে নেই কোনো মায়াদয়া। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের কপাল পোড়াতে কিভাবে পারো? তোমার জন্য আমি আমার স্বামী হারিয়েছি, আমার রুদ্রটা তার বাবাকে হারিয়েছে। মিথ্যা ছলনা করে আমার ছেলেটার জীবন নষ্ট করে দিয়েছো। এখন আবার ওর সুখের সংসারে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করেছো। তোমার কখনো ভালো হবে না দেখো। যে অন্যায় তুমি করেছো তার জন্য প্রতিটা মুহূর্তে অনুশোচনায় ভুগবে। ধুকে ধুকে মরবে তুমি আর এটা একটা মায়ের অভিশাপ, একজন স্ত্রীর অভিশাপ। রত্না চৌধুরী কথাটা বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তার স্বামী এই পৃথিবী ত্যাগ করেছে সত্যি মানতে পারছেন না তিনি।
কেঁদো না মা। তোমার চোখের কান্না দেখে কারো অনুশোচনা নয় বরং আনন্দই হবে। কারণ এটাই তো চেয়েছিলো সে। তাই চোখের পানি ফেলো না। তোমার মুখে আমি হাসি দেখতে চাই মা। সব সময় হাসবে তুমি যাতে করে ওদের দেখে গায়ে জ্বালা ধরে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে রুদ্র রোজার দিকে তাকিয়ে। রোজার মধ্যে কোনো অনুশোচনা বা কোনো অপরাধবোধ নেই আর না আছে কোনো ভাবান্তর। সাবলীল ভাবে দাঁড়িয়ে আছে সে।
– আমার নিজেরই খুব খারাপ লাগছে জানো রোজা! যে আমি তোমার মতো নিচ – জঘন্য মেয়েকে ভালোবেসে ছিলাম। তার জন্য পাগলামি করেছি। পরিবার, বা নিজের কথা ভাবিনি। তোমাকে নিয়েই মত্ত ছিলাম আমি। কিন্তু আমার সে ভালোবাসা যে পুরোটাই মিথ্যা দ্বারা পরিপূর্ণ ছিলো বুঝতে পারিনি। করুণা হচ্ছে খুব। সত্যি আমি বোকা, ষ্টুপিড একটা। তবে আমি এটা ভেবে আনন্দ পাচ্ছি! বলতো পারো স্বস্তি পাচ্ছি যে তুমি সরে গেছো আমার জীবন থেকে। উপর আল্লাহ তোমাকে সরিয়ে দিয়েছে আমার জীবন থেকে। নয়তো আমি তোমাতে আরো আসক্ত হয়ে যেতাম। তোমার সাথে মিশে যেতাম। আর তখন যদি আমাকে ফেলে আসতে তাহলে হয়তো আমার মৃ/ত্যু একমাত্র রাস্তা হতো। আমি এদিক থেকে তোমার কাছে কৃতজ্ঞ যে তুমি আমাকে ছেড়ে এসেছো। নয়তো আমি দোলার মতো মেয়েকে জীবনে পেতামই না। ওর মতো নিষ্পাপ একটা মানুষ আমার জীবনে আসার সুযোগ পেতো না তুমি থাকলে। রুদ্র মলিন কন্ঠে বলে কথা গুলো।
— সব কিছুর যেমন শুরু থাকে! তেমন তার শেষও হয়। তোর পাপের দিন শেষ আজ। যে অন্যায় করেছিস তুই এতদিন। এখন তার শাস্তি ভোগ করার পালা। ক্রোধান্বিত হয়ে বলে রাজ।
– ওদের কথোপকথন শেষ হতেই পুলিশ এসে উপস্থাপন হয় সেখানে। পুলিশ দেখে সামির, রোজা চমকে উঠে। পালানোর কোনো রকম সুযোগ তারা পাইনা। রুদ্র ওদেরসহ প্রমাণ তুলে দেয় পুলিশের হাতে। তানিয়া ওর মায়ের লা/শ ধরে কান্না করছে। দোলা আর আশা তানিয়াকে সামলানোর চেষ্টা করে।
– কেঁদো না তানিয়া। ফুপি যে আমাদের সাথে এমন কাজ করবে সত্যি কল্পনা করিনি। উনি তো আমাদের নিজস্ব মানুষ ছিলো বলো।।যদি উনার সম্পত্তির দরকার হতো সেটা উনাকে বলতে পারতেন। আমার বিশ্বাস উনি কখনোই না করতেন না। দোলা বলে আফসোস নিয়ে।
– আসলে কি জানো ভাবি! লোভ। লোভই মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। তেমন আমার মাকেও তার লোভ, উচ্চাকাঙ্খা শেষ করে দিয়েছে। তার ভেতরের মনষত্ব, ন্যায়-অন্যায় সব লোপ পেয়েছে। যার ফল-স্বরুপ আমার মা আজ এইভাবে মাটিতে লুটিয়ে আছে। কিন্তু আমার কি হবে? মা কেনো একবার আমার কথাটা ভাবলো না। আমি তো কখনো বিলাসিতা চাইনি। একটা ভালো সুন্দর পরিবারই চেয়েছি সব সময়। তাহলে মা কেনো বুঝলো না সেটা তানিয়া হাউমাউ করে কেঁদে উঠে কথাগুলো বলে। রত্না চৌধুরী এগিয়ে এসে তানিয়াকে আগলে নেয় নিজের কাছে। সবার মধ্যে চাপা কষ্ট বিদ্যমান। চোখের মধ্যে টলমল পানি। পুলিশ জেসমিন চৌধুরীকে নিয়ে যায় তার আগে একজন পুলিশ অফিসার রুদ্রর সামনে দাঁড়িয়ে বলে ধন্যবাদ মিস্টার চৌধুরী। আপনারা আজ কতবড় উপকার করলেন বলে বোঝাতে পারবো না। এরা যে শুধু ঠক প্রতারক তাই নয়। নারীপাচারকারীর মতো জঘন্য কাজের সাথে লিপ্ত। শুধুমাত্র তথ্য প্রমাণের অভাবে এদের ধারেকাছে আসতে পারিনি আমরা। গতরাতে বেশ কিছু মেয়েদের পাচার করা হয়। সে-সময় আমাদের পুলিশ বাহিনি তাদের আটক করে সাথে যারা এই কাজে জড়িত তাদেরও আটক করা হয়। আর তাদের মধ্যে থেকেই একজন এদের নাম বলেছে। এর আগে অনেকবার আমরা ধরতে পেরেছি কিন্তু তারা কখনোই মুখ খুলেনি এদের ব্যাপারে। এমন ভাবে ট্রেনিং দেওয়া ছিলো ওদের। ওরা নিজে নিজেই জীবন দিতো তাও এদের নাম প্রকাশ করেনি। কিন্তু গতদিন যাদের ধরা হয় তাদের মধ্যে থেকে একজন জান বাঁচানোর জন্য এদের নাম বলেছে আজ। সবার মধ্যে ঘৃণার পরিমাণটা যেনো বেড়ে যায় ওদের প্রতি। এতটা জঘন্য খারাপ মানুষ ভাবতেও যেনো শরীরে কাটা দিয়ে উঠে। রোজা আর সামির মাথা নিচু করে আছে৷ এতখনে তারা দমে যায় একটু হলেও।
– আশা করি ওদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করবেন রুদ্র বলে কঠোর গলায়।
জ্বি অবশ্যই। এই বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন আপনি। এখন আসি বলে পুলিশ চলে যায় ওদের নিয়ে। রুদ্র দোলার কাছে গিয়ে হাত ধরে বলে তুমি ঠিক আছো দোলা। ওরা তোমার সাথে কিছু করেনি তো? তোমাকে এতো পাকামি কে করতে বলেছে শুনি। যদি কোনো ক্ষতি করে দিতো তোমার তাহলে কি হতো? রুদ্রকে আবারও চিন্তিত দেখায় এতখন বাদে।
– আমি ঠিক আছি রুদ্র৷ চিন্তা করবেন না। এরপর দোলা কিছুক্ষণ দমে থেকে বলে সব প্রমাণ পেয়ে গেছেন নিশ্চয়। আমি যে নির্দোষ এটা তো প্রমানিত এখন মলিন কন্ঠে বলে । রুদ্র মাথা নুয়ে ফেলে। আবারও তার মধ্যে দীর্ঘশ্বাস একটা।
– দোলা তাড়াতাড়ি চল আমার সাথে। মামা তোর জন্য অপেক্ষা করছে। ওদের কথার মাঝে সজল বলে উঠে ব্যস্ত হয়ে। দোলা ভ্রু কুচকে উত্তেজিত চাহনি রেখে বলে বাবা অপেক্ষা করছে মানে? কোথায় বাবা?
– সজল সব খুলে বললে দোলা ভেঙে পড়ে। রাশেদ মিয়ার কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে।
– আমাকে জলদি বাবার কাছে নিয়ে চলো ভাইয়া। তোমরা আমাকে এতখন বলোনি কেনো?
– আঙ্কেল ঠিক আছেন ভাবি। তুমি চিন্তা করো না। বাবা আছেন সেখানে। আমরা আঙ্কেলকে দেখে তবেই এখানে এসেছি তানিয়া বলে।
– আমি বাবার কাছে যাবো। প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো তোমরা। রুদ্র সজলকে বলে দোলাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রুদ্র বাকিদের নিয়ে আসছে। দোলা, আশা আর সজল বেরিয়ে যায় সেখানে থেকে।
– থ্যাংকস ইয়ার। তোর জন্য সব কিছু এত সহজে হলো। আমি না সত্যি কল্পনাও করিনি রোজা এতটা ডেঞ্জারাস হয়ে উঠেছিলো। ওর মধ্যে প্রতিশোধের নেশা এতটা প্রখর।
– আমার সাথে আবার ফর্মালিটি করা হচ্ছে৷ আমি কি তোদের পর কেউ মুখটা ভাড় করে বলে রাজ৷ রুদ্র ফিক করে হেসে দেয় সাথে রত্না চৌধুরী আর তানিয়াও।
– আসলে রাজই তখন বুদ্ধিটা দেয়। রুদ্র মাথা গরম করে বেরিয়ে আসতে চাইলে রাজ বাধা দেয়। সত্যি যদি দোলা রোজার কাছে থাকে। তাহলে এত সহজে ফিরিয়ে নিয়ে আসা যাবে না। যার জন্য রাজ বলে রুদ্রর লোকদের কাজে লাগাতে। তবে ওদের কল্পনাতেও ছিলো না এইগুলো। কেঁচো খুঁজতে যে কেউটে বেরিয়ে আসবে ভাবিনি ওরা।
— কেটে যায় দুদিন! রাশেদ মিয়া এখন মোটামুটি সুস্থ আছে। তাকে সকালের দিকেই বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে। সবাই এখন দোলাদের বাড়িতেই আছে। এই দুদিন দোলা বাবার সাথে হসপিটালেই থেকেছে। অনেক ধকল গেছে তার উপর দিয়ে। তারপরও কাউকে কিছু বুঝতে দেয়না সে। বাবার মায়ের সেবা করতে পারা সে-তো বড়ই ভাগ্যের ব্যাপার। সেখানে দোলা তার মাকে হারিয়েছে অনেক আগেই। বাবাই একমাত্র ভরসা তার।
— দোলার বাড়িতে সবাই থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে-বসে আছে। রুদ্র মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অপরাধীর ন্যায়। সবাই যেনো একটা শকের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দোলা স্বাভাবিক ভাবে আছে।
– এইসব কি বলছিস তুই দোলা মা। এমন সিদ্ধান্ত নিস না তুই দোলা। আমার ছেলেটা এবার সত্যি সত্যি শেষ হয়ে যাবে রত্না চৌধুরী বলেন কাঁদো কাঁদো কন্ঠে। দোলা একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে তাহলে যে আমার নিজের প্রতি অবিচার করা হবে মা। আমি মানছি তোমার ছেলে যেটা করেছে আমার সাথে তার জন্য সম্পুর্ণ দায়ী নয়৷ কিন্তু একবারে নির্দোষও বলা যায় না। উনি ঠকে গিয়েছেন একটা নারীর থেকে। তার মানে এই নয় যে একজন নারীর দায় সবাই বহন করবে। উনার সাথে যা কিছু হয়েছে তাতে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বাস করাটা কষ্টসাধ্য জানি। কিন্তু বিশ্বাস ছাড়া যে কিছু হয়না এটাও তো উনার বোঝা দরকার ছিলো।
– ভাবি! যা হওয়ার তো হয়েছে। প্লিজ তুমি ব্রোকে মাফ করে দাও৷ আমরা সবাই একসাথে থাকতে চাই। আমি তো মাকে হারালাম এখন যদি তুমিও দূরে সরে আসো তাহলে আমি কি নিয়ে থাকবো বলতে পারো? মামি কিভাবে থাকবে তোমাকে ছাড়া। অসহায় কন্ঠস্বর তানিয়া।
– আমি তোমায় বলেছিলাম তানিয়া! আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবো। সব সত্যি সামনে নিয়ে আসবো। আর সেদিন যদি জানতে পারি আমি নির্দোষ। কোনো প্রকার দোষ আমার ছিলো না তারপরও আমি অত্যাচারের শিকার হয়েছি সেদিন আমি দূরে সরে আসবো সব কিছু থেকে। আজ সে- সময় এসে গেছে তানিয়া। তোমার ভাইয়া কখনোই বিশ্বাস করতে পারেনি আমায়। হ্যাঁ মানছি উনার ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিলো না। কিন্তু ভালোবাসা নামক যে অত্যাচার হয়েছে আমার উপর সেটা আমি মানতে পারিনি আর না এখন পারছি। উনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন এতে আমার কোনো অভিযোগ নেই এখন। কারণ উনার ভালোবাসা উনার অতীত সেসব মিটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দিনের পর দিন যে অত্যাচার হয়েছে আমার উপর। আমাকে যে আমার পরিবারের থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে৷ আমার বাবা ভাই চাইলেও আমার কাছে যেতে পারিনি। আর এই সব কিছু উনার জন্য। আমি সেদিন গুলো মুছতে চাইনা আর না পারছি। আমার সাথে করা অন্যায় গুলো আমি ভুলতে পারছি না৷ যেখানে কোনো দোষ না করে এতটা শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে সেখানে সব কিছু মেনে নেওয়া মানে নিজের সাথে বেইমানি করা। নিজ আত্মার সাথে বেইমানি করা।
– আমি বলছি না উনাকে একবারে ছেড়ে চলে আসবো আমি বা আসতে চাই৷ তবে যতদিন আমার মনে হবে আমার সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি আমি উনাকে দিতে পেরেছি। আমার ভেতরটা শান্ত হতে পেরেছে ততদিন আমি উনার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে চাইনা।
– দোলা আরেকবার ভেবে দেখলে হতো না বোন। আমি জানি তুমি কতটা খারাপ সময় পার করেছো। তোমার সাথে কি কি হয়েছে। কিন্তু রুদ্র কেনো এমন করেছে সবই তো জানো। ও যে ভুল করেছে এটা তো স্বীকার করেছে। তাহলে কেনো পারছো না মাফ করে দিতে। সব কিছু ভুলে যাওনা করুণ কন্ঠে বলে রাজ।
–ভাইয়া প্লিজ আমাকে জোর করবেন না। আমি পারছি না নিজেকে বোঝাতে৷ উনি এক নারীর কাছে ঠকেছেন মানে এই নয় সবাই তার শাস্তি পাবে। উনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করতেন। আমাকে সব কিছু বলতেন তাহলে আজ হয়তো এইদিনটা আমাদের দেখতে হতো না। আর না আমাকে এত কষ্ট এতো অত্যাচার সহ্য করতে হতো। কিন্তু উনি… দোলা থেমে যায়। রুদ্রর দিকে ঘৃণিত দৃষ্টি আজ আবারও।
– তুমি আমার থেকে দূরে থাকতে চাও তাই তো? আমাকে শাস্তি দিতে চাও। ওকে ফাইন!৷ তুমি দাও শাস্তি আমায়। আমার থেকে দূরে দূরে থাকো সমস্যা নাই। তবে সেটা তো তুমি আমার বাড়ি থেকেও করতে পারো দোলা। তোমাকে থাকতে হবে না আমার সাথে। আমি তোমার আলাদা ঘর সব কিছু ব্যবস্থা করে দেবো৷ তুমি শুধু আমার চোখের সামনে থাকবে। আমি তোমাকে প্রতিদিন দুচোখ ভরে দেখতে চাই। সাথে এটাও দেখতে চাই আমার সন্তান কিভাবে একটু একটু করে বেড়ে উঠে তোমার মধ্যে। আমাকে এইগুলো থেকে বঞ্চিত করো না দোলা। তুমি আমার সাথে কথা বলোনা। আমাকে অবহেলা করো কিন্তু এত বড় শাস্তি দিও না। রুদ্রর মধ্যে তোলপাড় অবস্থা। চাপা আর্তনাদ, অসহায়ত্ব।
— কাছে থেকে ইগ্নোর করা সহজ কথা নয় রুদ্র। মায়া বলে একটা শব্দ আছে। আর এই শব্দটা এতটাই কঠিন একটা শব্দ যে মানুষের জীবনকে সাঁজিয়ে দেয় আর শেষ করেও দেয়। কাছে থেকে আপনাকে উপেক্ষা করার সাধ্যি আমার নেই। আমার স্বামীকে ইগ্নোর করতে পারবো না আমি।।তাহলে যে উপরে যিনি আছেন তিনি আমার প্রতি নারাজ হবেন। তাছাড়া মানুষ তো আমি সাথে একটা মনও আছে। কাছে থেকে মায়ায় ডুবে যেতে সময় লাগবে না। যেটা আমি একদম চাইনা। আর রইলো আপনার সন্তানের কথা। এটা যেমন আমার সন্তান তেমন আপনারও সন্তান। ওর প্রতি আমার যতটুকু অধিকার ঠিক ততটুকু অধিকার আপনারও।। ওর কোনো ব্যাপারে আমি আপনাকে কখনোই বাধা দেবো না। ওর জন্য আপনি উন্মুক্ত সব সময়। আর একটা কথা যেদিন এই সন্তান পৃথিবীতে আসবে সেদিন আমি ওকে আপনার হাতে তুলে দেবো। বিশ্বাস করুন আমি একটুও কার্পণ্য করবো না ওর বিষয়ে। কারণ আমি জানি ও আমার থেকেও আপনার কাছে ভালো থাকবে। একটা সন্তানের জন্য যে আকুতি, যে মায়া মহব্বত থাকে সে সব কিছু আমি দেখেছি আপনার মধ্যে। তাই দয়া করে আপনারা কেউ আমাকে জোর করবেন না আর কোনো বিষয়ে। আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবেন আপনারা সবাই। আর আপনি! আমি এতটুকু আশা তো রাখতেই পারি আপনার উপর। আপনি নিশ্চয় আমার মতামতকে প্রাধান্য দেবেন রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলে দোলা।
রুদ্র আহত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে দোলার দিকে। চোখের মধ্যে আসতে চাওয়া অশ্রু গুলো যথাসাধ্য লোকানোর চেষ্টা করে বলে আমি তোমার মতামত তোমার চাওয়াকে সম্মান করি দোলা। আমি যে অন্যায় করেছি তার জন্য মাফ সত্যি দুর-সাধ্য। আর আমি যদি এরপরও মাফ চাই তোমার কাছে সেটাও হবে আমার আরেকটা অপরাধ। আমি তোমাকে কখনো ভালো রাখতে পারিনি এটা যেমন সত্য তেমন তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা ছিলো এটাও সত্য। যাই হোক তুমি যখন চাওনা আমার সাথে থাকতে ঠিক আছে। আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য। যেদিন তোমার মনে হবে আমার কাছে ফিরে যাওয়া দরকার সেদিনটার জন্য আমি অপেক্ষা করবো।তার আগে আমি কখনো তোমার সামনে আসবো না কথা দিলাম। রুদ্র বেরিয়ে যায় কথাগুলো বলে। সবাই হতভম্ব হয়ে আছে। রুদ্র যেতেই দোলার চোখ বেয়ে এক ফোটা পানি নিচে পড়ে।
– বাবা! আমার সিদ্ধান্তে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো? তোমার বাধা নেই তো আমাকে নিয়ে? তোমার কি আলাদা ভাবে কিছু বলার আছে এখানে। যদি থেকে থাকে বলতে পারো জিজ্ঞাসু দৃষ্টি রেখে বলে দোলা।
– আমি আর কি বলবো দোলা ‘মা। তোর জীবন তুই ভালো মন্দ সবটা বুঝিস৷ এছাড়া তোর মতামত তোর সিদ্ধান্তের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। কিন্তু মা আরেকবার ভেবে দেখলে হতো না। একটা অন্যায় হয়ে গেছে সেটা তো… বাবা প্লিজ। আমাকে এইগুলো করতে বলো না তুমি। আমাকে আর দুর্বল করে দিও না আমি নিজের মতো থাকতে চাই। আমার ভেতরের আত্মাকে আমি প্রশান্তি দিতে চাই। নয়তো সারাজীবন ছোট হয়ে থাকবো আমি আমার নিজের কাছে। দোলাও আর দাঁড়ায় না সেখানে ঘরে চলে যায় কান্না করতে করতে। সবাই মনোক্ষুণ্ণ হয়ে সেখানেই বসে থাকে৷ হতাশা, দুঃখ গ্রাস করে সবাইকে।।সব ঠিক হয়েও আবার এলোমেলো হয়ে গেলো। দুজন মানুষ কাছাকাছি এসেও দূরে সরে গেলো পুনরায়।
চলবে….
– ❌❌কপি করা নিষেধ ❌ ভুলক্রুটি ক্ষমা করবেন।