#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“১৯”
– রুদ্রর সামনে দাঁড়িয়ে আছে দোলা। রুদ্রর জ্ঞ্যান ফিরেছে অনেক আগেই। জ্ঞ্যান ফেরার পর রুদ্র একটা কথাও বলেনি কারো সাথে। ঘটে যাওয়া সমস্ত কিছু কাটিয়ে উঠতে তার সময়ের প্রয়োজন। জীবন তাকে নিয়ে বারবার উপহাস করছে। যতবার ঘুরে দাঁড়াতে চাই! কেউ না কেউ ঠিক তাকে মাটিতে থুবড়ে ফেলছে। ভালোবাসা নামক শব্দটা যেনো বারবার খেলা করছে তাকে নিয়ে। দোলা রত্না চৌধুরীর সাথে কথা শেষ করে রুদ্রর কাছে ছুটে আসে । এত হাহাকার না পাওয়ার মধ্যে একটু মানসিক শান্তি রুদ্রকে সে দিতে চাই এই সন্তানের খবরটা দিয়ে। দোলাকে দেখে তানিয়া, রাজ অবাকই হয় একটু। রুদ্রর সামনেও যেতে বারণ করে তারা। রুদ্র যদি আবার হাইপার হয়ে যায় দোলাকে দেখে সে ভয়ে। কিন্তু দোলা ওদের কথা না শুনে ভেতরে আসে।
– দোলাকে দেখে রুদ্র রাগী গলায় বলে তুমি এখানে? কেনো এসেছো এখানে? আমি তোমার মুখ দেখতে চাইনা। প্লিজ চলে যাও আমার সামনে থেকে। আমাকে বাঁচতে দাও একটু৷ আমি মানসিক শান্তি চাই তোমাদের থেকে দূরে যেয়ে। রুদ্রর কথায় দোলা ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলার মতো শক্তি যেনো সে পাইনা৷ রুদ্র অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে এই অল্প সময়ে। যা তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে৷ এমন শক্ত সামর্থ মানুষ বিশ্বস্ততার কাছে হেরে কিভাবে নুয়ে পড়েছে দোলা যেনো সেটা গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে।
– দোলাকে চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্র যেনো আরও বেশি রেগে যায়৷ উত্তেজিত কন্ঠে বলে কি বললাম শুনতে পাওনি তুমি। চলে যাও এখান থেকে। রুদ্রর কন্ঠস্বর পেতেই রাজ আর তানিয়া ভেতরে আসে। রাজ রুদ্রকে ধরে শান্ত হতে বলে আর তানিয়া দোলাকে ঠেলায় বাইরে আসার জন্য। কিন্তু দোলা এক চুল পরিমাণ সরে না৷ রুদ্রর সাথে কথা শেষ না করে সে এখান থেকে বের হবে না এই পণ যেনো তার মাঝে।
– ভাবি কেনো পাগলামি করছো? চলো না এখানে থেকে। ব্রো দেখছো তো কত হাইপার হয়ে আছে তোমাকে দেখে৷ একটু সময় দাও সব কিছু মানিয়ে নিতে৷ আবার সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো। তুমি চলো এখানে থেকে। তানিয়ার কথায় দোলা মুচকি হেসে বলে আমি চাইনা আর কিছু ঠিক হোক তানিয়া। দোলার আকষ্মিক এমন কথায় তানিয়া, রাজ ভ্রু কুচকে বিস্ময়কর দৃষ্টি রাখে।
– তোমার কথা ঠিক বুঝলাম না ভাবি? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলে তানিয়া।
– আপাতত না বুঝলে। সময় আসলে ঠিক বুঝে যাবে৷ আমার উনার সাথে কিছু কথা আছে৷ সেগুলো বলে আমি চলে যাবো। দোলার কথা শেষ হতেই রুদ্র বলে হ্যাঁ চলে যাও তুমি। অনেক দূরে চলে যাও। চাইনা আমি আর কাউকে। তোমাকেও না। আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছিলাম ইচ্ছের বিরুদ্ধে। ভেবেছিলাম আমার ভালোবাসা দিয়ে সব কিছু গুছিয়ে নেবো। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। আমি জানতাম না ভালোবাসা নামক যে বীজ আমি পুতে যত্ন করে গাছে রুপান্তরিত করতে চেয়েছি সেটা অনেক আগেই কারো ঘরের বটবৃক্ষ ছায়া হয়ে আছে। তুমি মুক্ত দোলা। আজ থেকে তুমি স্বাধীন। যার সাথে ইচ্ছে! যা ইচ্ছে করতে পারো। আমি আর তোমাকে বাধা দেবো না৷ আমি যে এতদিন তোমাকে জোর করে আঁটকে রেখেছি। ভালোবাসা নামক যে টর্চার করেছি তার জন্য তুমি দারুণ উপহার দিয়েছো আমায়৷ তারপরও আমি মাফ চাই তোমার কাছে৷ আমাকে ক্ষমা করে দিও সব কিছুর জন্য। তুমি চলে যাও দোলা মুখ ফিরিয়ে নেয় রুদ্র৷ দোলার নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে৷ গলা দমে আসে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে আমি প্রেগন্যান্ট রুদ্র! দোলার এই একটা বাক্য যেনো রুদ্র কানে বেশ কয়েকবার আঘাত করে। একই সুরে কথাটা বাজতে থাকে।
– আমি আপনার সন্তানের মা হতে চলেছি। দোলা আশাবাদী হয়ে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। রুদ্রর রিয়াকশন টা নিজ চক্ষে দেখতে চাই সে।
— ভাবি! তুমি সত্যি মা হতে চলেছে? উল্লাসিত কন্ঠস্বর তানিয়ার। তার মধ্যে আনন্দের মুখরতা। খুশিতে দোলা দুই কাধ চেপে ধরে বুকে জড়িয়ে নেয়। ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলে তুমি সত্যি বলছো ভাবি? তুমি সত্যি মা হতে চলেছো? তানিয়া যেনো কোনো ভাবে মানতে নারাজ। এত কিছুর মধ্যে এমন একটা খুশির সংবাদ সত্যি অবাক করে দেওয়ার মতো। দোলা মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলে হ্যাঁ তানিয়া! আমি সত্যি বলছি। আমি মা হতে চলেছি।
– রুদ্র হুট করে এসে দোলার হাত চেপে ধরে। এতে তানিয়া, দোলা রাজ চমকে উঠে সবাই। সবার এটেনশন এতখন দোলার দিকে ছিলো। যার ফলে রুদ্রকে খেয়াল করেনা৷ রুদ্রর স্যালাইন চলছিলো হাতে৷ ওইটা ছাড়িয়ে দোলার কাছে আসে। স্যালাইন লাগানো অংশ থেকে ফিরনি দিয়ে রক্ত পড়ছে।
– রুদ্র কি করছিস তুই? তোর হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে রাজ। রুদ্র সে-সবে পাত্তা না দিয়ে ঠোঁটের কোণে প্রত্যাশিত হাসি ধরে বলে তুমি সত্যি মা হবে দোলা। আমি বাবা হবো। রুদ্রর মধ্যে প্রবল উত্তেজনা। আনন্দে পাগলপারা অবস্থা। সব মলিনতা, দুঃখ কষ্ট ছাপিয়ে সুখের সন্ধান তার মধ্যে।
– রুদ্র হুট করে দোলার পেটে হাত রাখে।। দোলা চমকে উঠে পিছু সরে যায়।
– আমার বেবি! কথাটা বলে রুদ্র জোরে জোরে হাসতে থাকে। সবাই অবাক চোখে রুদ্রকে দেখছে৷ রুদ্রর এই পাগলামো কে দেখছে তারা। একটা বাচ্চার জন্য এতটা উতলা থাকতে পারে একটা মানুষ এটা রুদ্রকে না দেখলে হয়তো জানতো না এরা।
– আমি বাবা হবো।আমার কি যে আনন্দ হচ্ছে। তানিয়া শুনেছিস আমি বাবা হবো। আমার বেবি আসবে। আমি তাকে কোলে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরবো। অনেক অনেক খেলনা নিয়ে আসবো। ওই ছোট ছোট দুটি হাত এসে আমাকে স্পর্শ করবে। রুদ্রর এমন ছেলেমানুষী দেখে সবাই অবাক৷
— রুদ্র তুই আবারও ভুল করছিস। এই বাচ্চা তোর না। দোলা কার বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে সেটাই জানা নেই৷ আর তুমি বলছিস এটা তোর বাচ্চা৷ তুই এমন পাগলামো করিস না রুদ্র কথাটা বলতে বলতে আসে জেসমিন চৌধুরী। এতখন দরজার বাইরে থেকে সবটা শুনে সে। দোলাকে বাড়ি থেকে বেরুতে দেখে সেও দোলার পিছু পিছু আসে এখানে।
– পিপি! খবরদার আমার বাচ্চার দিকে আঙ্গুল তোলার সাহস দেখাবে না। এটা আমার বাচ্চা৷ আমার বেবি৷ গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র। জেসমিন চৌধুরী অবাক হয়ে বলে রুদ্র তুই কিন্তু ভুল করছিস। দোলা তোকে আবারও ঠকাচ্ছে। কার না কার বাচ্চা তোর নামে চালিয়ে দিচ্ছে৷
– ফুপি! চিৎকার করে উঠে দোলা। আর চুপ থাকা সম্ভব হয়না তার।
– অনেক বাজে কথা বলেছেন এবার চুপ করুন দয়া করে। আমাকে যা ইচ্ছে বলুন কিন্তু আমার বাচ্চাকে নিয়ে একটাও বাজে কথা শুনতে চাইনা। আঙ্গুল তুলে বলে দোলা।
– মা তুমি কখনো শুধরোবে না তাই না? তোমার এইসব বাজে কথা বন্ধ করে যাও এখানে থেকে। কটাক্ষ কন্ঠে বলে তানিয়া।
তুই চুপ থাক। সব সময় ভাবি ভাবি করে মাথা খাস। তুই কি জানিস এই মেয়ের পেটে পেটে কত কি আছে। নির্লজ্জ, চরিত্রহীন মেয়েমানুষ একটা।
মা! রেগে উত্তেজিত কন্ঠে তানিয়া চিৎকার করে জেসমিন চৌধুরীকে চুপ করিয়ে দেয়।
– জেসমিন চৌধুরী চোখ পাকিয়ে তাকায় তানিয়ার দিকে।
– দোলার পেটের সন্তান যে রুদ্রর তার কি প্রমাণ আছে? হুট করে বলে জেসমিন চৌধুরী।
– এটা আমার সন্তান আমি জানি। তাই নতুন করে আমার কোনো প্রমাণের দরকার নেই। তুমি দয়া করে এইসব কথা বন্ধ করো পিপি। আমার সন্তানকে নিয়ে আমায় ভাবতে দাও। তোমার এই বিষয়ে না ভাবলেও চলবে।
– রুদ্র তুই আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা কর। জেসমিন চৌধুরীকে হাত উঠিয়ে থামিয়ে দিয়ে রুদ্র কাঠগলায় বলে আমি সব কিছু বুঝতে পারছি৷ তুমি এবার তোমার মুখটা বন্ধ করো আর যাও এখানে থেকে। দোলা যে আমার সন্তানের মা এটা আমার থেকে ভালো আর কারো জানার কথা নয়৷ সো আমি যখন বলেছি এটা আমার সন্তান তো আমার সন্তানই।
– তুই এতটা কীভাবে শিওর হচ্ছিস রুদ্র? কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে জেসমিন চৌধুরী।
– রুদ্র কিছুখন তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে বিয়ের পর দোলাকে আমি কখনোই একা ছাড়িনি। আর না কোথাও যাওয়ার পারমিশন দিয়েছি। তাহলে তুমি কোন ভিত্তিতে বলো এই সন্তান অন্য কারোর? চোখ মুখ লাল করে কথাটা বলে রুদ্র।
— শুধুমাত্র এই ভিত্তিতে উনি বিশ্বাস করলেন এটা উনার বাচ্চা। তার মানে উনি আমার বাচ্চাকে নিয়ে এই কারণে কোনো দ্বিধা রাখে না৷ যদি এর অন্যথা হতো তাহলে উনি? আর ভাবতে পারে না দোলা৷ চোখ দিয়ে এক-ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। মাথাটা ভনভন করতে থাকে।
– আচ্ছা তুমি কি এই বাচ্চাটা শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবছো? হঠাৎ করে রুদ্র বলে উঠে দোলার ভাবনার মাঝে৷ দোলা চোখ মুখ কুচকে তাকায়।
– তুমি চাওনা এই বাচ্চাটা দুনিয়াতে আসুক? তুমি রোজার মতো কিছু করার কথা ভাবছো না তো। তুমি আমার সন্তানকে মেরে ফেলার চিন্তা করছো না দোলা? উত্তেজনা রুদ্রর মধ্যে। রাজ, তানিয়া সবাই চমকানো চোখে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে। কি অবান্তর কথা বলছে রুদ্র এটা ভাবতেই শিউরে ওঠে তারা। আর দোলা সেতো অনুভূতিহীন হয়ে গেছে রুদ্রর এই কথাগুলো শুনে। তার নিজের সন্তান নাকি সে খুন করবে। কীভাবে?
– এ-সব কি বলছেন আপনি রুদ্র? কোন ভিত্তিতে কথাগুলো বলছেন আপনি? আমি আমার সন্তানকে মেরে ফেলবো? এটা কিভাবে বলতে পারেন আপনি? এটা আমার সন্তান রুদ্র। আমি ওর মা। আমি গর্ভে ধারণ করছি আর আমি তাকে মেরে ফেলবো। এই দুনিয়ায় আলো দেখাবো না?
– তোমাদের মতো মেয়েদের দ্বারা সবই সম্ভব দৃঢ় কন্ঠে বলে রুদ্র।
– দোলা বিমুঢ় দৃষ্টিতে তাকায়৷ রুদ্রর এই কথার বিপরীতে কি জবাব দেওয়া যায় তার জানা নেই।
-দোলা তুমি সন্তানকে পৃথিবী আলো দেখার সুযোগ করে দাও প্লিজ। তুমি ওর কোনো ক্ষতি করো না। তুমি যদি বাচ্চা না চাও সমস্যা নেই। লাগবে না তোমাকে। তুমি শুধু আমার বাচ্চাটাকে আমার হাতে তুলে দেবে। তারপর যেখানে ইচ্ছে তুমি যাও, যার সাথে ইচ্ছে ঘর বাধো আমার আপত্তি নেই৷ তুমি শুধু বলো আমার বাচ্চার কোনো ক্ষতি করবে না। আমাকে বাবা ডাক শোনার সুযোগটা তুমি দেবে দোলার হাত চেপে ধরে অনুনয় করে বলে রুদ্র। দোলার শ্বাস নিতে যেনো কষ্ট হচ্ছে৷ রুদ্রর কথাগুলো ভেতরে গিয়ে আঘাত করছে বারবার। হৃদয়টাকে ক্ষতবিক্ষত করে তুলছে।
– দয়া করে এমন কথা বলবেন না রুদ্র। আমি একটা মা। আমি কখনো আমার সন্তানকে হত্যা করতে পারিনা। সবাইকে আপনি এক পাল্লায় তুলে ওজন করতে যাবেন না দয়া করে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে দোলা। রুদ্রর কথাগুলো যে তাকে কি পরিমাণ আঘাত করেছে সেটা দোলা ছাড়া বোঝার ক্ষমতা কারো নেই।
– রুদ্র তুই কেনো এইসব কথা বলছিস? এটা যেমন তোর সন্তান তেমন দোলারও সন্তান। আর দোলা একটা মা হয়ে কীভাবে নিজের সন্তানকে… রোজাও তো মা ছিলো রাজ। রুদ্রর এই একটা কথায় থমকে যায় সবাই।
– সবাই মা হতে পারে না ব্রো। যে সত্যিকারের মা হওয়ার যোগ্যতা রাখে সে কখনোই নিজের সন্তানের ক্ষতি তো দূর একটা আঁচড়ও পড়তে দেবে না। তুমি দয়া করে দোলা ভাবি আর রোজাকে এক সাথে গুলিয়ে ফেলো না। দুজন সম্পুর্ণ পৃথক মানুষ। তাদের চরিত্র চিন্তা ভাবনা সম্পুর্ণ রুপে আলাদা। তানিয়ার কিঞ্চিৎ রাগ হয় রুদ্রর প্রতি। যার জন্য এই কঠিন কথাগুলো বলতে সে বাধ্য হয়।
– আমি আপনার সন্তানকে এই পৃথিবীতে নিয়ে আসবো রুদ্র কথা দিলাম৷ আমাকে নিয়ে আপনার মধ্যে যে ভ্রান্ত ধারণা, যে ভুল আপনি গেঁথে রেখেছেন সব কিছু আমি মুছে দেবো। আমার চরিত্রে যে তক্তমা আপনি লাগিছেন সেটাও আমি ধুয়েমুছে দেবো। শুধু একটু অপেক্ষা। আমাকে একটু সময় দিন দয়া করে। কথাটা বলে দোলা বেরিয়ে আস কেবিন থেকে। দোলা বাইরে এসে বেঞ্চে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সব দিকে গ্রাস করেছে দোলাকে। বন্ধুত্বের বিশ্বাসঘাতকতা, স্বামীর অবিশ্বাস, চরিত্রে কালি, দোষ না করেও সম্পুর্ণ রুমে দোষী সাবস্ত হওয়া। দোলা যেনো ভুলের মাঝ দরিয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছে।
– শান্ত হো দোলা। তোর যে এখন ভেঙে পড়লে চলবে। শক্ত হতে হবে৷ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে৷ ওই সামিরকে শাস্তি দিতে হবে৷ দোলার কাধে হাত রেখে আশ্বস্ত দিয়ে বলে কথাগুলো আশা। এই সময় আশাকে দেখে দোলা একটু অবাকই হয়। তানিয়াও দোলার পেছন পেছন এসে আশাকে দেখে ভ্রু কুচকায়।
– তুই এখানে? দোলা চোখের পানি মুছে বলে উঠে।
– আমি আসতে বলেছি।কথাটা বলতে বলতে বেরিয়ে আসে রাজ। সবাই বিস্মিত হয়ে তাকায়।
– সামির অনেক অন্যায় করেছে দোলা আমাদের সাথে। অনেক মিথ্যা বলেছে আমাদের। সামির কখনোই আমাদের ব্যাচ ছিলো না। মিথ্যা নাটক সাজিয়ে আমাদের বন্ধু হয়েছে। সামির রুদ্র ভাইয়াদের ব্যাচ আর সবচেয়ে বড় কথা সামির রুদ্রর ভাইয়ার প্রথম স্ত্রী রোজার কাজিন। সামির অনেক খারাপ একটা মানুষ। অনেক মেয়ের জীবন ও নষ্ট করেছে। আর এখন তোর পেছনে পড়েছে। আশার কথায় দোলা যেনো একের পর এক শক পেতে থাকে।
– তানিয়া যেনো অবিশ্বাস্য হয়ে সব কিছু শুনছে।
— তুই এত কিছু কিভাবে জানলি?আগ্রহ চাহনি রেখে বলে দোলা।
– আশা রাজকে দেখিয়ে বলে উনি গিয়ে ছিলেন আমার কাছে তোর আর সামিরের বিষয় জানতে৷ আমি তো অনেক অবাক হয় উনার মুখে তোর আর সামিরের রিলেশন আছে শুনে। কারণ এইটা সম্পুর্ণ মিথ্যা। এরপর উনি আমাকে জানায় এইসব৷ আর বাকিটা আমি জানতে পাই সামিরের ফ্রেন্ড শাবনম আপুর থেকে। উনি সম্পর্কে আমাদের আত্মীয় হয় কিন্তু সামিরকে খুব ভালো করে চেনে। সামির যে কতবড় খারাপ মানুষ এটা সবাই জানে। আশার কথায় ভেঙে পড়ে দোলা। চারপাশটা অন্ধকারে ছেয়ে আসে। কিন্তু একটা ভাবনা সামির এত কিছু কেনো করলো? শুধু কি দোলার জন্য নাকি রোজার কথায়?
– ভেঙে পড়লে হবে না ভাবি। তোমার আর ব্রোর সম্পর্ক যারা নষ্ট করতে চেয়েছে। ব্রোর জীবনটা যারা বিষিয়ে দিয়েছে তার প্রত্যেকে শাস্তি পেতে হবে৷ তোমার সাথে যে অন্যায় করেছে তার শাস্তিও তাদের দিতে হবে। তানিয়ার কথায় দোলা দৃঢ় কন্ঠে বলে আমি সামিরের সাথে কথা বলবো। কেনো করেছে এমন তার উত্তর চাই আমার। এই নোংরা খেলায় কেনো আমাকে গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছে তার হিসাবেও আমার চাই।
– তুই একা না দোলা আমি আছি তোর পাশে৷ আমি সাহায্য করবো তোকে।
– আমিও আছি। আশার কথা শেষ হতেই তানিয়া বলে।
– তোমার এই ভাইও তোমার সাথে আছে দোলা। আমি জানি তুমি কোনো অন্যায় করতে পারো না৷ রুদ্রর সাথে কোনো অন্যায় করতে পারো না এই বিশ্বাস আছে৷ তুমি যে রুদ্রকে ভালোবাসো এটাও আমি জানি। রাজের কথায় দোলা একটা হাসি রাখে যেটা এখন শুধুই তাচ্ছিল্যের হাসি স্বরুপ।
– চলবে….
❌❌কপি করা নিষেধ,❌❌ বলেছিলাম তাড়াতাড়ি দেবো। কিন্তু কাজের জন্য আর পারলাম না। ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।