তুমিময় আসক্তি ২ পর্ব ১৩

0
570

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“১৩”

— সজল অসহায় একটা ফেস করে বলে ভাইয়া? তানিয়া সজলের অবস্থা’টা বুঝতে পেরে ঠোঁট চেপে ধরে হেসে বলে, কোনো সমস্যা ভাইয়া? আবারও ভাইয়া ডাকে সজল পারে তো কেঁদে দেবে।
– কিসের ভাইয়া হ্যাঁ? আমি আপনার কোন জনমের ভাই লাগি শুনি কিছুটা উত্তেজনা পূর্বক বলে সজল।
– এই জনমের! এই কিছু দিনের আলাপে। মানে ভাবির ভাই তো আমারও ভাই হয় তাই-না? তাছাড়া আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেনো বুঝলাম না? তানিয়ার কথায় সজল হকচকিয়ে উঠে আমতাআমতা করে বলে ক-কই রেগে যাচ্ছি৷ যাই হোক আসুন আপনাকে পৌছে দিই। বাড়ি ফিরবেন নিশ্চয় আপনি?
– তানিয়া সজলের সাথে যাওয়ার মনস্থির করে। কারণ রিকসা আদো পাবে কি-না সন্দেহ। তানিয়া যাওয়ার জন্য হ্যাঁ বলতেও গিয়ে বলে না৷ সজলকে না করে দেয়।
– আপনি চলে যান! আমি একটু বাদে চলে যাবো। আমার একটা কাজের কথা মনে পড়ে গেছে। তানিয়ার কথায় সজল ভ্রু কুচকে বলে আপনি এই-না বললেন রিকসা খুঁজছেন বাড়ি ফেরার জন্য।
– জ্বি বলেছিলাম কিন্তু এখন আমার একটা কাজ আছে। আপনি যান বলে তানিয়া সামনে এগিয়ে যায়। হঠাৎ কি হলো তানিয়ার সজল এটা ভেবেই অবাক হয়৷ এরপর সজল গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে।
– আসলে তানিয়া দোলার কথা ভেবেই সজলের সাথে যায়না। সেদিন দোলার সাথে যে অত্যাচারটা হয়েছে সেটা তানিয়া আর হোক চাইনা। সজল যদি তাকে পৌছে দেয় তাহলে সৌজন্যের খাতিরে ভেতরে আসতে বলতে হবে আর যদি সজল সত্যি তানিয়ার কথায় ভেতরে যায়। তখন রুদ্র দেখে আবার রাগারাগি করবে। তাই তানিয়া আর কোনো রিস্ক নিতে চাইনা।

— দোলা পুরো আলমারি খুঁজে হয়রান। কিন্তু কোনো রকম চাবি সে পাইনা৷ হতাশ হয়ে বিছানায় এসে বসে দোলা৷ ইচ্ছে করছে কেঁদে দিতে বিরক্ততে৷ এতখন খোঁজার পর ফলাফল শূণ্য। খারাপ লাগারই কথা। অনেক আশা নিয়ে দোলা চাবিটা খুঁজতে ছিলো। কিন্তু চাবিটা কোথায় থাকতে পারে? তাহলে কি রুদ্রর কাছে? রুদ্র কি নিজের সাথে নিয়ে বেড়ায় চাবি? সব কিছু ভেবে মাথা ফেটে যাচ্ছে দোলার। দোলা এবার ভাবে চাবি বাদে কীভাবে তালাটা খোলা যায় কিন্তু কেউ বুঝতে পারবে না। দোলা উঠে আলমারিটা আবারও ঠিকঠাক করে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

— আমি কিছু বুঝতে পারছি না। কি হচ্ছে আমার সাথে৷ আমার মনে হয় কেউ ইচ্ছে করে আমার আর দোলার সম্পর্কটা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তাই দোলাকে নিয়ে আমার মধ্যে সন্দেহ প্রবেশ করিয়ে দোলার উপর অত্যাচারী হতে বাধ্য করে। আর আমি বোকার মতো দোলার উপর.. কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুদ্র। রাজ রুদ্রর কথায় খুশি হয়ে বলে তাহলে তুই বুঝতে পেরেছিস রুদ্র! যে দোলা ভুল ছিলো না। তুই শুধু শুধুই মেয়েটার উপর নির্যাতন করিস। আমি তো আগে থেকেই জানতাম দোলার কোন দোষ নেই। দোলা তেমন মেয়েই নয়। রাজের কথায় রুদ্র সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে বলে আগে থেকে জানিস মানে?
– রাজ ঘাবড়ে যায় রুদ্রর কথায়। তোতলানো স্বরে বলে তুই আবার সন্দেহ করছিস দোলাকে সেই সাথে আমাকেও। রুদ্র দৃষ্টি স্বাভাবিক করে বলে আচ্ছা তুই থাক আমি যায় এখন। কাল অফিসে দেখা হচ্ছে৷ আর শুন কাল আমাদের প্রডাক্ট ডেলিভারি হবে। ওইখানে তোকে থাকতে হবে। সবটা ভালো ভাবে বুঝে নিয়ে গাড়িতে উঠাবি ওকে। রুদ্রর কথায় রাজ মুচকি হেসে ওকে বলে। রুদ্র চলে আসে সেখানে থেকে।

— রাতে! দোলা রাতের খাবার রেডি করে ঘরে আসে রুদ্রকে খাওয়ার জন্য ডাকতে। রুদ্র একটা ফাইল নিয়ে কাজ করছিলো বসে। দোলা খাবারের জন্য ডাকলে রুদ্র সাথে সাথেই উঠে চলে যায়। রুদ্র যেতেই দোলা রুদ্রর প্যান্টের পকেট চেক করে। চাবিটা খোঁজার উদ্দেশ্য। কিন্তু দোলা এবারও হতাশ। দোলা ওয়ালেট চেক করেও কিছু পাইনা। ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুখটা মলিন করে বলে গন্ডার’টা রেখেছে কোথায় চাবিটা।
— তুমি আমার ওয়ালেট ধরে কি করছো? হুট করে বলে উঠে রুদ্র৷ আচমকা রুদ্রর কথায় দোলা লাফিয়ে উঠে ভয়ে। হাত থেকে ওয়ালেট’টা পড়ে যায়। দোলা একবার ওয়ালেট আরেকবার রুদ্রর দিকে তাকায়। রুদ্র কৌতুহলী হয়ে তাকিয়ে থাকে দোলার দিকে। রুদ্র তার ফোন টা নেওয়ার জন্য ফিরে আসে আবার। একটা জরুরি ফোন আসার কথা আছে৷ তাই রুদ্র ফোনটা কাছে রাখে।
— দোলা এবার হাসার চেষ্টা করে ওয়ালেট’টা তুলে। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে দোলা। কি বলবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।
– কি হলো উত্তর দাও? রুদ্রর গম্ভীর কন্ঠে দোলা আরো ভড়কে যায়।
– আচ্ছা তুমি কি কোনো ভাবে টাকা পয়সা খুঁজছিলে। আই মিন! আছে না বউরা স্বামীর পকেট কাটে অনেক সময় টাকার জন্য। তুমিও কি তেমন ভাবে আমার… ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে বলে রুদ্র। ঠোঁটের কোণে তার দুষ্টামি হাসি।
– রুদ্রর কথায় দোলা কি রিয়াকশন দেবে সেটাই ভুলে গেছে। শুধু ফ্যালফ্যালে চোখে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর আর ভেতর ভেতর ফুঁসে উঠে।
– কি হলো বলো। তুমিও নিশ্চয় সেই-সব বউদের মতো স্বামীর টাকা মেরে দেওয়ার ধান্দায় ছিলে?
– দেখুন ভালো হবে না কিন্তু। আমি মোটেও তেমন ধরনের মেয়ে নয় প্রতিবাদী স্বরে বলে দোলা।
– হ্যাঁ জানি তো! তুমি তেমন মেয়ে নও তবে বউ তো। আর বউদের স্বভাব এমন। দোলা করুণ একটা চাহনি রাখে।
– তো এবার বলো তুমি আমার ওয়ালেট ধরে কি করছিলে? রুদ্রর কথায় দোলা ঘাবড়ে যায় আবার। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে দুই হাত মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে। রুদ্র দোলার চোখের দিকে তাকায় একবার তো একবার হাতের দিকে তাকায়।
– তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি কিছু একটা চুরি করতে গিয়ে রামধরা খেয়েছো মুচকি হেসে বলে রুদ্র।
— ছিহ! কি সব ভাষা। আমি কিছু চুরি করিনি। আমি তো ওই দেখছিলাম আপনার পকেটে একশো ‘টাকা আছে নাকি৷ একদমে কথাটা বলে থামে দোলা।।কিন্তু রুদ্রর হজম হয়না দোলার কথাটা। তাই রসগোল্লার ন্যায় চোখ করে তাকিয়ে বলে সিরিয়াসলি দোলা!তুমি রুদ্রনীল চৌধুরীর ওয়ালেটে মাত্র একশো টাকা খুঁজছিলে?
– তো আপনার কি মনে হয় আমি লাখ টাকা নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম।
– তা হয়তো করোনি। আর যদি ওইটা করতে তাহলে ঠিক ছিলো। অস্বাভাবিক কিছু হতো না। রুদ্রর কথাটা বুঝতে পারে না দোলা। তাই ভ্রু কুচকে বলে মানে?

— মানে খুবই সিম্পল! তুমি আমার ওয়ালেটে একশো টাকা পাবে ভাবলে কি করে। রুদ্রনীল চৌধুরীর এতো করুণ দিনও আসেনি যে ওয়ালেটে একশো টাকা রাখবে।
– অমনি শুরু হয়ে গেলো লাটসাহেবের লাটসাহেবগিরি। নেহাতই ধরা পড়েছি তাই মিথ্যা বলতে হলো। নাহলে ওই সব টাকায় দোলার যায়-আসে না হু ভেংচি কেটে মনে মনে বলে দোলা।
— এ্যানি ওয়ে! তুমি একশো ‘টাকা কি করবে? সিরিয়াস মুডে বলে রুদ্র। দোলা একের পর এক রুদ্রর প্রশ্নে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
– দরকার ছিলো তাই। আমাকে তো কোনো টাকা পয়সা দিয়ে রাখেন না আপনি৷ একটু বিষ খাওয়ার ইচ্ছে হলেও সেটা আপনাকে বলা লাগবে তাও নিজে নিয়ে আসতে পারবো না। কথাটা অভিমান নিয়ে বলে দোলা।
– দোলা! চিৎকার করে উঠে রুদ্র। দোলা চমকে যাওয়া চোখে তাকায়।
– কি বাজে কথা বলছো। নেক্সট টাইম যেনো আমি তোমার মুখে এইসব বাজে কথা না শুনি। ভীষণ রেগে গেছে রুদ্র দোলার কথায়। যার ফলে অনেকটা রিয়াক্ট করে উঠে সে। দোলা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। এই সামান্য কথায় রুদ্র এতটা রেগে যাবে ভাবিনি দোলা।
– আমার যা কিছু আছে সবই তোমার। তুমি আর আমি আলাদা নয় এটা এতদিনে নিশ্চয় বুঝে গিয়েছো।।তোমার টাকার দরকার আমাকে বলতে পারতে। আমি তোমায় কি না করতাম। আচ্ছা ওয়েট কথাটা বলে রুদ্র ড্রয়ার থেকে চেকবই বের করে সাইন করে দোলার হাতে দেয়। দোলা বিমুঢ় দৃষ্টিতে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে থাকে।
– এখানে সাইন করে দিলাম। তোমার ইচ্ছে মতো এমাউন্ট বসিয়ে নিও।
– আমাকে টাকার গরম দেখাচ্ছেন আপনি? দোলার কথায় রুদ্র থমকে যায়। হাসার চেষ্টা করে বলে এইভাবে বলছো কেনো দোলা৷ এটা তোমারও টাকা। হ্যাঁ মানছি আমি তোমাকে সেইভাবে টাকা পয়সা দিই না। যখন যেটা প্রয়োজন আমি নিজে নিয়ে এসে দিই। তাই বলে তোমার যে টাকার দরকার হতে পারে এটা আমার ভাবা উচিত ছিলো। আজ তুমি সেটা জানিয়ে দিলে তাই আমি এটা তোমায় দিলাম দ্যাটস অল।
— লাগবে না আমার কোনো টাকা। আপনার টাকা আপনার কাছে রেখে দিন। আর যাই হোক আমি কখনো কারো কাছে হাত পাতবো না। এই শিক্ষা আমার বাবা আমাকে দেয়নি কখনো কথাট বলে দোলা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়৷ রুদ্র কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ দোলার কি হলো সেটাই বুঝতে পারে না।

— পরের দিন! দোলা তার ঘরে ছিলো। তানিয়া আজ একাই ভার্সিটি যায়৷ দোলার শরীরটা দুদিন ভালো যাচ্ছে না৷ কিন্তু এটা দোলা কাউকে জানায় না। হঠাৎ হঠাৎ মাথাঘোরানো আবার মাঝে মাঝে বমিও আসছে। হঠাৎ করে এমন সমস্যা হওয়ার কারণ দোলা খুঁজে পাইনা৷ দোলা ভাবে হয়তো অতিরিক্ত চিন্তা আর শরীর দুর্বল হওয়ার কারণে এমন হচ্ছে। কিছুদিন গেলে ঠিক হয়ে যাবে। আর এইসব যদি রুদ্রর কানে যায় তাহলে রুদ্র বেশি বাড়াবাড়ি করবে যেটা দোলার একটু ভালো লাগবে না। দোলা ইচ্ছে করে ভার্সিটি যায়না আজ। রুদ্র কিছুক্ষণ আগে অফিসে বেরিয়ে গেছে। তানিয়াও নেই বাড়িতে। দোলার একা একা ভালো লাগছে না৷ তাই দোলা অপেক্ষার নামে একটা গল্পের বই হাতে নিয়ে পড়তে থাকে। সেখানে বিভিন্ন লেখক লেখিকার ছোট ছোট গল্প আছে।

– এর মধ্যে একজন সার্ভেন্ট আসে রুমে।
– দোলা ভাবি আপনারে আম্মাজান ডাকতাছে নিচে। সার্ভেন্টের কথায় দোলা বই বন্ধ করে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। রুম থেকে বের হয়ে উপর থেকে নিচে তাকাতেই দোলার চোখ দুটো চকচক করে উঠে খুশিতে। চোখের কোণে ভেসে উঠে আনন্দঅশ্রু । ঠোঁটের হাসিটা গাঢ় করে উচ্চকণ্ঠে বাবা বলে খুশিতে। দোলার ডাকে রাশেদ মিয়া হাসি মুখে উপরে তাকায় সাথে আছে রোকনও। ভাই আর বাবাকে একসাথে দেখে দোলা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। ছুটে নিচে নামতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে যেতে নেয় দোলা।
– আপু চিৎকার করে উঠে রোকন সাথে সবাই ভয় পেয়ে যায় ভীষণ। প্রচন্ড রকম অবাক হয়ে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। দোলা নিজেকে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে সিঁড়ির সাথে রেলিং ধরে। দোলা নিজেও ভীষণ ভয় পেয়ে যায় এতে। হাঁপাতে থাকে ভয়ে।
– রোকন ছুটে এসে দোলাকে ধরে বলে কি করছিস আপু পড়ে যেতিস তো এখনই। কি একটা কান্ড বাধাতে বসেছিলি বলতো।
– রোকনের কথায় দোলা ঠোঁট এলিয়ে হেসে রোকনের মাথায় হাত রেখে বলে কেমন আছিস ভাই? তোরা এখানে? আমি না সত্যি ভাবতে পারছি না।

— রোকন দোলাকে নিয়ে নিচে যায়। দোলা নিচে যেতেই রাশেদ মিয়া মেয়েকে বুকের সাথে আগলে নেয়।
– সাবধানে চলাফেরা করবি তো। আর একটু হলে কি একটা বিপত্তি হতো। আমার তো প্রাণটাই ছুটে যাচ্ছিলো রে মা। রাশেদ মিয়ার কথায় দোলা মুচকি হেসে বলে সরি বাবা৷ আমি তোমাদের দেখে ভীষণ এক্সাইটেড হয়ে উঠি। বুঝতে পারিনি এমন হবে।
— বাবাকে দেখে খুশি হয়ে এমন বিপদ বয়ে আনে কেউ পাগলী মেয়ে রত্না চৌধুরী বলে হেসে।
– বাবা কেমন আছো তুমি? তোমার শরীর ভালো আছে তো? তোমার পেশার ঠিক আছে৷ ঔষুধ খাচ্ছো তো ঠিক ভাবে? দোলার হাজার টা প্রশ্ন।
– রাশেদ মিয়া আর রত্না চৌধুরী শুধু হাসে দোলার কান্ডে৷
– আপু তুই বাবাকে নিয়ে একদম চিন্তা করিস না। বাবাকে আমি সব ঔষুধ সময় মতো খাওয়ায় আর রুদ্র দুলাভাই তো নিজে বাবার জন্য ঔষুধ নিয়ে গেছে একগাদা। বলেছে শেষ হলে যেনো আমরা তাকে জানায়। জানিস আপু আমার জন্য অনেক চকলেট আর খাতা কলম নিয়ে গেছে দুলাভাই। রোকনের কথায় দোলা ভ্রু কুচকে বলে কি বলছিস এইসব? উনি এইসব নিয়ে গেছেন মানে?

– হ্যাঁ রে দোলা মা রোকন ঠিকই বলছে। কাল রুদ্র বাবাজি সন্ধ্যায় আমাদের ওইখানে যায়। আমি সেই সময় আমার ওষুধ নিয়ে আসার জন্য বের হচ্ছিলাম। হঠাৎ রুদ্রকে আমার বাড়িতে দেখে অবাক হয় ভীষণ। পরে রুদ্র আমার থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে আমার জন্য ওষুধ আর রোকনের জন্য ওইসব নিয়ে আসে। দোলা যেনো ছোটোখাটো একটা শকের মধ্যে পার করে কথাগুলো। রুদ্র এইসব করেছে ভাবতেই পারছে না।
– এরপর রুদ্র বাবাজি বলে আমাদের এখানে আসতে আজ৷ যদি আজ না আসি এখানে তাহলে নাকি সে রাগ করবে অনেক। তাছাড়া তোকে দেখার লোভটা আর সামলাতে পারলাম না রে মা। তাই চলে আসলাম সকাল সকাল।
– খুব ভালো করেছো বাবা। আমারও ভীষণ তোমার কথা মনে পড়ছিলো। অনেক মিস করছিলাম তোমাকে।
– যেই দেখেছেন জামাই আসার অনুমতি দিয়েছে আর সাথে সাথে চলে এসেছেন৷ তা জামাই বাড়ি এসেছেন কি নিয়ে এসেছেন দেখি। এই প্রথম জামাইয়ের বাড়ি পা রাখলেন খালি হাতে নিশ্চয় আসেননি। ব্যঙ্গ করে কথাগুলো বলতে বলতে আসে জেসমিন চৌধুরী। তার কথায় দোলা মুখটা মলিন করে তাকায়। রাশেদ মিয়া, রোকনের মুখটা ছোট হয়ে আসে। রত্না চৌধুরী বিরক্তমাখা চোখে তাকায় জেসমিন চৌধুরীর দিকে।

— আমি গরিব মানুষ বেশি কিছু নিয়ে আসার সামর্থ্য আমার নেই৷ সাধ্যের মধ্যে এই মিষ্টি গুলো নিয়ে এসেছি হাসার চেষ্টা করে বলে রাশেদ মিয়া।
– বাদ দেন তো ভাইজান। আপনি যে এসেছেন এতেই আমি অনেক খুশি। রুদ্র আর দোলার বিয়ে হয়েছে অনেক দিন হলো। কিন্তু আপনি এতদিন পর আমাদের বাড়ি আসছেন। আপনার উপর রাগ থাকলেও সেটা এখন আর নেই আপনাকে দেখার পর। মেয়েকে কোন ঘরে বিয়ে দিয়েছেন! সেখানে এসে কেমন আছে মেয়ে দেখা লাগবে না। হেসে বলে রত্না চৌধুরী।
– কেনো নিশ্চিন্তে আছে বুঝতে পারছো না ভাবি। জানে তো বড়লোক বাড়িতে গছিয়েছে মেয়েকে। সেখানে আর যাই হোক মেয়ে কষ্টে থাকবে না। জীবনে এত বড় বাড়ি, এত ভালো ভালো খাবার এত টাকা পয়সা চোখে দেখেছে নাকি। এদের মতো ছোটলোক গুলো খুবই চালাক হয়। সেটা তুমি না জানলেও আমি জানি বুঝেছো।
– আপনি কিভাবে জানেন ফুপি? আপনিও কি আমাদের মতো ছোটলোকের কাতারে নাম লিখিয়েছেন। নয়তো এইসব কথা তো আপনার জানার কথা নয়৷ কই মা তো এইসব জানে না জেসমিন চৌধুরীর কথায় ঠেস দিয়ে বলে উঠে দোলা। দোলার কথায় জেসমিন চৌধুরী তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।

– তোমার এত বড় সাহস! আমাকে এইসব কথা বলার সাহস কে দিয়েছে তোমায় শুনি। তুমি জানো আমার বাবার কত সম্পত্তি আছে। কত বড় ঘরের মেয়ে আমি আর তুমি আমাকে তোমাদের মতো ছোটলোকদের সাথে তুলনা করছো। ইচ্ছে করছে ঠাঁটিয়ে দুটো চড় বসিয়ে দিই তোমার গালে। তাহলে বড় বড় কথা বেরিয়ে যাবে। জেসমিন চৌধুরী থামতেই দোলা কিছু বলার জন্য উদ্যোগ নেয় তখন রাশেদ মিয়া দোলার হাত ধরে থামিয়ে দেয়। রাশেদ মিয়ার অনেক খারাপ লাগে জেসমিন চৌধুরীর কথাগুলো। রোকনও মন খারাপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

– জেসমিন! কি হচ্ছে এইসব? তুমি উনাদের সাথে এইভাবে কথা বলছো কেনো? তাছাড়া উনারা আমার বাড়ির মেহমান। উনাদের সম্মান বজায় রাখা আমাদের দায়িত্ব। তুমি যদি সম্মান দিতে না পারো তো অসম্মান করো না৷ যাও এখানে থেকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলে রত্না চৌধুরী।
– ভাবি তুমি আমাকে এই ছোটলোক গুলার জন্য এইভাবে অপমান করলে। ন্যাকা কান্না জুড়ে বলে জেসমিন চৌধুরী। আসলে এটা আমার বাড়ির নয়তো তাই যা ইচ্ছে তাই বলে অপমান করো। আজ যদি ভাইজান বেঁচে থাকতো তাহলে নিশ্চয় তোমরা আমাকে এইভাবে অপমান করতে পারতে না৷
– অপমানের পথ তুমি নিজে তৈরি করেছো জেসু। এখন অন্যের দোষ দিয়ে আর কি হবে৷ যে যেমন তার সাথে তো তেমনটাই হবে। তোমার কোনো অধিকার নেই দোলার বাবার সাথে এমন ভাবে কথা বলার। কিন্তু তুমি বলেছো। তাই এইগুলো তোমারও প্রাপ্য তানভীর আহমেদ বলতে বলতে আসে। তানভীর আহমেদের কথায় জেসমিন চৌধুরী চোখ পাকিয়ে তাকায়। কিন্তু এতে তানভীর আহমেদের একটু হেলদোল হয়না।

– রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ঘরে চলে যায় জেসমিন চৌধুরী।
– আমার বউয়ের কথায় কিছু মনে করবেন। আসলে ও একটু এমনি। তবে আমরা কিন্তু বেশ খুশি হয়েছি আপনাদের দেখে৷ আচ্ছা আপনারা দাঁড়িয়ে কেনো। বসুন না৷ দুই বিয়াই মিলে জমিয়ে আড্ড দেবো আজ।
– আমি আবার বাদ যাবো কেনো তানভীর। এতদিন পর বিয়াই কে পেয়েছি খোসগল্প তো হবেই তানভীর আহমেদের কথার বিপরীতে বলে রত্না চৌধুরী। তার কথায় সবাই হেসে উঠে একসাথে।
– আচ্ছা তোমরা গল্প করো আমি রান্নার ব্যবস্থা করি। তার আগে তোমাদের জন্য চা পাঠিয়ে দিই গদগদ কন্ঠে বলে দোলা।
– সে আর বলতে রে দোলা মা। চা ছাড়া আড্ডা জমে নাকি। তানভীর আহমেদের কথায় দোলা হেসে রান্নাঘরে যায়। রোকনও বোনের পিছু পিছু যায় কথা বলার জন্য। তবে দোলার মধ্যে আজ একরাশ ভালোলাগা। রুদ্রর প্রতি যতটা রাগ,ঘৃণা ছিলো সব কিছু আপাতত মলিন হয়ে আসে। সেখানে জমা হয় ভালো লাগা কিছুটা শ্রদ্ধা। কিন্তু রুদ্র হঠাৎ এত পরিবর্তন কীভাবে হলো দোলা বুঝতে পারে না। আর যাই হোক একটা ধন্যবাদ রুদ্রর প্রাপ্য দোলার থেকে আর দোলা সেটা রুদ্রকে দেবে। সব কিছু ভেবে দোলা চুলায় চায়ের পানি বসায়।

চলবে….

– ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌ আস্তে আস্তে রহস্য উন্মোচন হবে। পরবর্তী পর্ব গুলো সব রহস্য খোলসা হতে থাকবে৷ ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here