#তুই__আমার
#লেখাঃ সাফিয়া_জান্নাত_মুন
#পর্ব ৯ম
মেঘা অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকালো কাব্যর দিকে আর কাব্য ইনোসেন্ট চেহারা নিয়ে দারিয়ে আছে।
আপনার মতো লো মেন্টালিটির ছেলের সাথে আমি কোনো কথা বলতে চাই না বুঝেছেন আপনি??
জ্বী বুঝেছি।
মেঘ তুমি বিছানায় ঘুমিয়ে যাও আমি মেঝে তে শুয়ে পড়ছি।
কি প্রমান করতে চান বলুন তো??
আমি কিছুই প্রমাণ করতে চাই না মেঘ আমার প্রমান করার কিছুই নেই।
আপনার যা ইচ্ছা আপনি তাই করুন আমার যায় আসে না বুঝলেন আপনি।
মেঘা চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়লো।
কাব্য মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে সোজা হয়ে শুয়ে আছে। মেঘার কথা গুলো প্রতিনিয়ত তার রূিদয় কে ক্ষতবিক্ষত করে চলেছে। তার ভালোবাসা কি কোনো দিন বুঝবে না সে? তাকে কি কোনো দিন ভালোবাসবে না মেঘ?
হাজারো প্রশ্নের একটা উওর ও খুঁজে পায় না কাব্য তার শুধু একটা লক্ষ্য মেঘ কে ভালোবাসা তার সব টুকু উজার করে ভালোবাসা। এক বুক নিস্বার্থ ভালোবাসা সে মেঘকে দিতে চায় সেখানে ভালোবাসার জন্য ভালোবাসা টা আশা করলে তা নিস্বার্থ হয় কিভাবে? তাচ্ছিল্য হাসি হাসে কাব্য।
!
!
!
!
আমি কোনোদিন ভাবিনি মিশু তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো?
কবির আমি তোমায় ভালোবাসি যা করেছি ভালোবেসে করেছি।
কিসের ভালোবাসা বলতে পারো আমায়? যে ভালোবাসারর জন্য আমার মা-বাবা কষ্ট পায় সেই ভালোবাসার কথা বলছো?
কবির তুমি আমায় ভুল বুঝছো? তুমি যেমন তোমার মা-বাবাকে ভালোবাসো তেমনি আমি তোমায় ভালো বাসি।
হুউ আমার কাছে এইসব এর কোনো মূল্য নেই তুমি কেনো বুঝতে পারছো না?
তোমার ভালো লাগা না লাগার কোনো মূল্য কি তোমার কাছে নেই কবির?
না নেই, আমি চাই না আমার জন্য আমার মা-বাবা কষ্টে থাকুক কষ্ট পাক এটা আমি চাই না মিশু?
শুধু মা-বাবাকে ভালোবেসে তুমি নিজের সব দায়িত্ব পূরন করতে চাও?
হ্যা চাই।
তুমি ভুল করছো কবির ভুল করছো।
আমার ভুল ঠিক আমি তোমার কাছে শুনতে চাই না মিশু তুমি শুনে রাখো আমি তোমায় কোনোদিন নিজের স্ত্রী অধিকার দিতে পারবো না বুঝেছে তুমি।
কবির নিজের সাইডে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো।
মিশু ঠায় দারিয়ে আছে তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অনাবরত তার মনের মধ্য জাগছে যে মা-বাবা কে সে এতো ভালোবাসে সে মা-বাবা তাকে আদৌ মূল্যায়ন করে কি?
সোফায় শুয়ে শুধু কবিরের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কবির ভুলেও পাশ ফিরে মিশুর দিকে তাকাচ্ছে না। এক বুক কষ্ট যে মিশুর মন টাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
!
!
!
!
!
ভোরের আলো কেবল ফুটেছে চারিদিকে। অন্ধকার টা কেটে গেছে হালকা আলোয় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে চারপাশ টা। পাখিগুলো কিচিরমিচির শব্দে জানান দিচ্ছে ভোরের আলো ফুটেছে নবগত ফুলের মতো।
ছাদের রেলিং ধরে দারিয়ে আছে কাব্য, তার পড়েনে সাদা পাঞ্জাবি।
গলা খেরখেরি দিয়ে মিশু বললো,
কি দুলাভাই তলে তলে এতো কিছুই?
মিশুর গলায় মুচকি হেসে কাব্য ঘুরে বললো
কি করবো ভাবি নিয়তি তো ফিক্সড ডিপোজিট করে দিয়েছিলো।
মিশু আর কাব্য খিলখিল করে হেসে উঠলো। আর তারা মনে করলো অতিতের কিছুই কথা।
সেইদিনের কথা যেদিন মেঘার সাথে কবিরের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।
মিশু সেই প্রথম দিন থেকে কবিরকে পছন্দ করতো তার কথাবার্তা সব কিছুই মিশুর পছন্দ ছিলো। কখন সেই ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিনিত হয়েছে তা মিশু বুঝতে পারেনি।
যখন মিশু জানতে পারলো তার বোনের সাথে তারি ভালোবাসার মানুষ টার বিয়ে হচ্ছে সে কিছুইতেই মেনে নিতে পারেনি।
চুপচাপ নিজের হাতের শিরাউপশিরা কেটে ক্ষতবিক্ষত করতে চেয়েছিলো। ঠিক সেই সময়ে কাব্য এসে মিশুকে বাধ্য দেয়,
মিশু তুই এসব কি করছিস?
ভাইয়া আমায় ছেড়ে দেও ভাইয়া আমি আর বাঁচতে চাই না,, কান্নারচোট মিশু হুচকি তুলতে তুলতে বললো।
এই পাগলী কি হয়েছে তোর?? কেউ কিছুই বলেছে?
না ভাইয়া কিছুই হয়নি প্লিজ আমায় ছেড়ে দেও ভাইয়া প্লিজ।
মিশু বল কি হয়েছে।
আমি কবির ভাইয়াকে ভালোবাসি ভাইয়া কিন্তু মেঘা আপুর সাথে বিয়ে হচ্ছে তার।
মিশুর কথা শুনে কাব্য মিশুকে ছেড়ে সরে দারালো কিসব বলছে মিশু? মেঘ অন্যকারো হতে পারে না। আমি কিছুইতেই হতে দিবো না। কাব্য নিজের চুল গুলো ঠিক করে মিশুকে বললো,
আমি তোকে কথা দিচ্ছি ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে হবে শুধু তোর বিয়ে হবে।
তুমি মিথ্যা বলছো না তো ভাইয়া?
এই তোকে ছুঁয়ে বলছি তোর সাথে কবির ভাইয়ার বিয়ে হবে।
!
!
কল্পনার জগত থেকে ফিরে মিশু হেসে বললো,
ভাইয়া তুমি তোমার কথা রেখেছো।
হুম আমি যে কথা দিয়েছিলাম নিজেকে কেমনে না রেখে পারি?
কাল রাত্রে আমি তো প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেছিলাম যখন আপুর রুমে এসে দেখলাম তুমি আপুকে কোলে তুলে দারিয়ে আছো,,,,,,,,,
ভাইয়া আপুর কি হয়েছে? আপু বেহুঁশ কেনো?
কিছুই হয়নি মিশু শুধু একটু বেহুঁশ করেছি তোর বোন কে।
ভাইয়া আপুর কিছুই হবে না তো?
না রে ওর কিছুই হবে না।
ভাই এখন ভাবিকে নিয়ে কেমনে যাবেন বাড়ি ভর্তি মানুষের সামন দিয়ে।
রনির কথা কাব্য ঘুরে থাকলো,মিশু সন্দেহ দৃষ্টি তাকালো আর বললো,
এই তুমি আমার আপুকে ভাবি বলছো কেনো?
না আপু এমনি বলছি।
এই মিশু তুই ওর সাথে পড়ে কথা বলিস এখন যা রেডি হয়ে নে।
আমি রেডি আছি ভাইয়া।
মাথার ঘোমটা টা বড় করে নে যাতে কেউ মুখ দেখতে না পারে।
রনি বস্তা টা দে এর মধ্য মেঘাকে ঢুকিয়ে স্টোর রুমে রেখে আসতে হবে।
কাব্য মেঘা কে অনেক সাবধানে বস্তার মধ্য ঢুকালো। আর বস্তা নিজের কাধে তুলে নিলো স্টোর রুমে যাবার পথে আগলে দারালো আয়েশা খালা।
এই কাব্য তুই এই বস্তায় কি নিয়ে যাচ্ছিস?
কাব্য থতমত খেয়ে গেলো, কাব্যর কপালে বিন্দুবিন্দু ঘাম জমতে লাগলো।
ওই সব জিনিশ পত্র রাখতে যাচ্ছি এই রনি টা যে কই একটা কাজে পাওয়া যায় না তাই আমি করছি।
আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয় এখনি বিয়ে শুরু হবে।
কাব্য হাফ ছেরে বাঁচালো স্টোর রুমে এনে কাব্য মেঘাকে বস্তা থেকে বের করে সুন্দর করে আলগোছতে মেঘাকে ফ্লোরে শুয়ে দিলো। কাব্য মেঘার গালে হাত দিয়ে বললো,
কি মিষ্টি দেখাচ্ছে আমার বউ কে? ইশ ইচ্ছা করেছে কিছুই করি হিহিহি উঁহু ওরে দুষ্টু মন তুই যত আমায় বলিস না কেনো যতদিন না আমার মেঘ পাখি আমায় ভালোবাসবে ততদিন না আমি ওকে কিছুই করবো না।
দেখো মেঘ তোমার জন্য পুড়া রুমে আলোর ব্যবস্থা করে রেখেছি আমি তো জানি তুমি অন্ধকারে ভয় পাও তোমার কাপাকাপি শুরু হয়ে যায় তোমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে তোমার কষ্ট হলে আমারো যে খুব কষ্ট হয় জান। তুমি তো বুঝো না আমায় জান।
কাব্য উঠে দারিয়ে দরজার কাছে রনিকে পাহারায় রেখে গেলো।
রনি দেখিস এই ঘরে জানো অন্যকেউ ঢুকতে না পারে।
আচ্ছা ভাইয়া।
এক ফোটা চোখের পানি মুঝে কাব্য চলে গেলো বিয়ের আসরে।
মিশু বসে আছে মাথায় বিরাট বড় ঘোমটা দিয়ে।
কেউ একজন বললো এতো বড় ঘোমটার কি দরকার ঘোমটা টা সরিয়ে দেও। আয়েশা খালা নিজে যাচ্ছিলো ঘোমটা টা সরাতে,
কাব্য বাধা দিয়ে বললো,
আরে খালামনি থাক না, বিয়ের আগে যখন ভাবি কাউকে মুখ দেখাতে চাচ্ছে না তখন বুঝতে হবে ভাবির মুখ আগে ভাইকে দেখাতে চায়।
কাব্যর কথায় সবাই হা হা করে হেসে উঠলো।
বর্তমান সময়ে,
মিশু আর কাব্য পাশে পাশে রোলিং এ হেলান দিয়ে হাত গুটিয়ে রেখে দারিয়ে আছে।
মিশু দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
ভাইয়া আমি তোমার ভাবি হবে এটা কথা ছিলো কিন্তু তুমি আমায় এটা কেনো বললা না তুমি আমার দুলাভাই হতে চাও? তোমায় আমি দুলাভাই মানি না।
ওরে শালি নিজের কাজ হয়ে গেছে এখন আমি আপনার কে?
হিহিহি শালি ডাক টা কিন্তু অনেক সুন্দর দুলাভাই
দুলাভাই ডাকটাও কিউট অনেক।
সব সময় বড় বোনের সাথে বড় ভাইয়ের বিয়ে হয় কিন্তু প্রথমবার বড় জনের সাথে ছোট জনের আর ছোট জনের সাথে বড় জনের বাহ আমার তো ইতিহাস রচনা করবো।
হুম বলছিস। কাব্য ঘুরে মিশুর দিকে তাকালো নিজের অনামিকা আঙ্গুল টা দাঁত দিয়ে চেপে ধরে বললো,
তোর বোন তো এক নাম্বারের ডাফার, নিজের ভালো বুঝে না। সবসময় উল্টা পাল্টা ব্যাঙের মাথা বুঝে।
মিশু পিছুনের দিকে তাকাতে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। প্রতিনিয়ত কাব্যকে থামানোর চেষ্টা চালাছে কাব্য আবার বলে উঠলো
শুন আমি জানি তোর বোন হয় তাই তোর খারাপ লাগছে কিন্তু তুই বল ওর মতো গাধী আর একটা হয়? কোন পাগলীর পাল্লায় পড়েছি আমি আল্লাহ জানে।
ভাইয়া পিছুনে।
কি পিছুনে আমার সব কিছুই সামনে রে বোন সামনে।
না ভাইয়া তোমার সব পিছুনে।
এই দেখ তুই বেশি পাক্কামো করবি না তোর বোন তো পৃথিবীর নাম্বার ওয়ান ইডিয়ট।
ছি ভাইয়া পিছনে।
পিছোনে না আমার তো মনে হয় ও ইচ্ছা করে নিজের চেহারায় বেআক্কেল এর মতো করে নিয়ে ঘুরে বেরায়। আমার তো ইচ্ছা করে ওর কানের নিচে দেই একটা এতো কিসের ভয়।
ভাইয়া তুমি পিছু ঘুরে বলো না।
এই তুই চুপ কর তো, তোর বোন এমন বিহেভ করে জানি ও ৫বছরের বাচ্চা কিছুই বুঝে না এতো নিষ্পাপ কেন ও? দেখতে লম্বা চওড়া আর ব্যবহার দেখলে কি মন হয় বল বল
ভাইয়াআআআআ পিছে।
উফফ জ্বালা তখন থেকে পিছে পিছে করছিস কি আছে কি পিছে।
কাব্য পিছু ঘুরতে,,,
চলবে_______________