#তুই__আমার
#লেখাঃ সাফিয়া_জান্নাত_মুন
#পর্ব ১২
———–
আমি বিরক্ত হয়ে দেখছি আর কত শো পিক যে তুলেছে এই মেয়েটা সেটা সে জানে।
হুট করে প্রিয়তার ফোনে ফোন এলো। আমি খুব খুশি হয়ে যে ফোন দিয়েছে তার জন্য ভালো ভালো দোয়া করতে থাকলাম। আমাকে বড্ড বাঁচা বাঁচালেন। পিক দেখে দেখে আমি ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিলাম।
প্রিয়তা ফোন হাতে ব্যস্ত ভঙ্গিতে উঠে গেলো।
কাব্য ভাইয়া আমার পাশে বসে। আমি তার গা ঘেসে বসলাম সে এখন আমায় নিয়ে মনে মনে কি ভাবে ভাবুক এখন কাব্য ভাইয়া আমি নিয়ে ভাবতে ভাবতে হা হয়ে থাক না কাত হয়ে পড়ে যাক তা আমি এখন দেখতে যাচ্ছি না। আমি কাব্য ভাইয়ার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম,
এই মেয়েটার কি বাড়িঘর নেই?
কাব্য ভাইয়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন অবশ্য এটা ২য় নাম্বারিং অবাক কারন আমি তার গা ঘেসে বসতেই তিনি ১ম নাম্বারিং অবাক হয়েছেন
তিনি একটু আধাভাঙ্গা কন্ঠে বললো,,আছে তো কেনো।
২ঘন্টা ধরে বসে আছে বাসায় যাওয়ার কোনো নাম নেই। আমার সংসারে অনেক কাজ কাম আছে এভাবে বসে বসে আড্ডা দেওয়ার এতো টাইম আমার কই।
কাব্য ভাইয়া বড়বড় চোখ করে বললো, আচ্ছা মেঘা তুমি সংসার সামলাও আমি নাহোয় আড্ডা দেই।
আমি রাগে উঠে দারালাম। আপনার বন্ধু আসতে না আসতে আপনার কথার ধরন বদলে গেছে হ্যা তা তো যাবেই। আপনি ওনার সাথে একা হ্যাপি তো ঠিক আছে আপনি ওনার সাথে থাকুন।
মুখ ভেঙচি কেটে সিঁড়ি বেয়ে আমি উপরে চলে গেলাম।
এটা কি হলো মিসেস মেঘা কাব্য চৌধুরী আমার উপর এতো রেগে গেলো কেনো আমি আবার কি করলাম।
!
!
!
!
আমার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে ইচ্ছে করছে ওই মেয়েটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে না ফুটবলের মতো লাথি মেরে বের করে দেই। হুউ আমার সামনে আমার বর এর উপর লাইন মারছে তা আমি বেশ বুঝতে পারছি। নিজে নিজে বকবক করতে করতে মিশুর রুমে গেলাম।
মিশু গা এলিয়ে বিছানায় উপর হয়ে কবির ভাইয়ার ছবি নিয়ে গালে হাত দিয়ে আছে।
এই যে বাড়ির বড় বউ ছবি থেকে বের হয়ে সংসারে কাজে হাত দিবেন কি?
মেঘার কথায় ধুরমুর করে উঠলো মিশু আর একটু লজ্জামাখা কন্ঠে বললো আপু তুমি না
আমায় ছাড় আর তোর সংসারের হাল ধর বুঝলি কাজে আসবে।
কি কাজ করবো?
ওরে গাধীর আম্মার।
ওয়েট কি বললি তুই?
গাধীর আম্মা।
বাহ স্বামী স্ত্রী একি ভাষায় বকা দিচ্ছো হ্যা তোমাদের দিন।
এই চুচুপ করতো। আমতাআমতা করে বললাম।
হুম হুম আমায় তো চুপ করতে বলবা।
আচ্ছা যাহ তোকে ভালো কথা বলতে আসছিলাম এখন বলবো না এই আমি চললাম।
এই আপু যাস না প্লিজ বল না বল।
দেখ কোনো মানুষের মনের মধ্য ঢুকতে হলে প্রথমে তার পেটের মন জয় করো এটা কবি বলেছেন?
কোন কবি??
সেটা বেশি দরকার নাকি আমার মূল কথা শুনাটা
আচ্ছা এই আমি চুপ করলাম তুই বল।
এখন তুই কবির ভাইয়ার সব পছন্দের খাবার রান্নাবান্না করে নিয়ে যাবি অফিসে আর দেখবি এভাবে আস্তে আস্তে তোর প্রতি দূবল হয়ে পড়বে ভাইয়া তারপর পাগল মজনু হয়ে যাবে তোর প্রেমে।
এই আপু তুই আজকাল বেশি ফ্রি হয়ে যাচ্ছিস।
আচ্ছা শুকরিয়া শুকরিয়া।
আমি তো তেমন রান্নাবাড়া পারি না।
আমি আছি তো তুই চল আমি দেখিয়ে দিবো।
ওকে চল আপু।
!
!
!
!
!
মেঘা অনেকক্ষণ হলে গেছে এখন প্রিয়তাকে কাব্যর রীতিমতো বিরক্ত লাগছে। তার কোনো কথাই তার মাথায় আসছে না শুধু মেঘার কথাবার্তা মাথায় ঘুরছে।
মিসেস পুতুল চৌধুরী নিচে নেমে এসে প্রিয়তা কে দেখে খুশি হয়ে বললেন,
প্রিয়তা কখন এসেছো তুমি?
এই তো অনেকক্ষন হলো আন্টি ।
আমায় কেউও জানায়নি কেনো? তুমি কিছুই নিয়েছো??
আন্টি আপনাকে ব্যস্ত হতে হবে না।wow আন্টি এই শাড়িতে তো আপনাকে জাস্ট অসাধারণ লাগছে।
অহ thanks প্রিয়তা।
এরিমধ্য বাসার কাজের লোক রহিম এসে বললো,
ম্যাডাম ফ্রিজের তার টা লিংক হয়ে গেছে কোনোভাবে,, এখন যেকেউও ফ্রিজ টা ধরলে শর্ট খাইতে পারে। মিস্ত্রি ডাইকা এটা এহনি ঠিক করতে হইবো।
মিস পুতুল চৌধুরী রাগী কন্ঠে হুনকার দিয়ে বললো
বেয়াদব মেহমানের সামনে এসব বলছিস? বাসায় কি কেউ নেই এইসব ছোটখাটো জিনিষ আমায় দেখতে হবে এখন।
কাব্য অনেকটা রাগ হয়ে বললো,
তুমি দেখবে না তো কে দেখবে মা?? এটা না তোমার সংসার।
কাব্যর কথায় মিসেস চৌধুরী বেশি কিছুই বললেন না,, তিনি বিরক্ত হয়ে রহিম কে বললো যা। আমি এখনি ইলেক্ট্রিশিয়ান কে ফোন করে দিচ্ছি ওরা এসে রিপেয়ার করে দিয়ে যাবে। বলে পুতুল চৌধুরী ব্যস্তভঙ্গিতে নিজের রুমে দিকে চলে গেলেন।
!
!
!
এতসব চিৎকার চেঁচামেচির মধ্য টিপটাপ পা ফেলে রান্নাঘরের দিকে চলে গেছে মিশু আর মেঘা।
এই মিশু কবির ভাইয়া কি পছন্দ করে তার জন্য কি বানাবি??
আপু আমি ভাবছি আলুর পরোটা আর মিষ্টিজাতীয় হিসাবে গাজরের হালুয়া বানিয়ে ফেলি।
হুম বেশি টাইম লাগবে না চটপট লেগে পড়।
তুমি কিছুই করবা না?
দেখ বোন পুড়া কাজ টা তুই কর ক্রেডিট টা তুই পাবি এরমধ্য আমায় টেনে নিজের ক্রেডিট টা তুই হারাবি কেনো বল??
বুঝেছি আপু আমি করছি সব।
মিশু রান্না করতে করতে নাজেহাল আর মেঘা মিশুর অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে শেষ।
!
!
রান্না তো শেষ তুই যা রেডি হয়ে নে আমি এইগুলো টিফিন বক্সে দিয়ে দিচ্ছি।
আচ্ছা আপু।
মিশু উপরে চলে গেলো রেডি হতে।
!
!
১০ মিনিট পড় মিশু নিচে আসলো আসতে কাব্য ডাক পড়লো।
মিশু এগিয়ে এসে বললো,,বলো ভাইয়া
এতো সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছিস?
মিশু হালকা হেসে বললো,,তোমার ভাই কে টিফিন দিতে।
ওহ নিজের হাতে রান্না করে,, আর কিছু বলতে মিশু বললো নিজের হাতে রান্না করেছি ঠিক আছে।
মিশুর কথা কাব্য দীর্ঘ নিশ্বাস ছেরে প্রিয়তার পাশ থেকে উঠে অপর পাশের সোফায় মুখ ঘুরে বসলো
আমার বউ তো পারে আমার জন্য একটু রান্না করতে। তা না করে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
মেঘা টিফিন বক্স নিয়ে মিশুর হাতে দিতে দিতে কাব্যর কথা টা শুনলো।
ভাইয়া আমার লেট হচ্ছে আমি এখন আসি।
কাব্য মিশুর দিক হয়ে কিছুই বলতে জিহ্বা কামাড় দিয়ে বললো,,
আমি আসলে বলছিলাম মেঘা
হয়েছে আমি সব শুনেছি।
এই তুই দাঁত না কেলিয়ে যা।
মিশু হাসতে হাসতে চলে গেলো।
!
!
আমি কাব্য ভাইয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থেকে প্রিয়তা কে জিজ্ঞেস করলাম লান্সে কি খাবেন।
আমি বেশি কিছুই খাবো না হালকা পাতলা কিছুই হলেই হবে।
কাব্য ভাইয়ার দিকে ঘুরে বললাম আপনি।
আর কি করো করো আমি পায়েশ খাবো মেঘা বেশি নারিকেল দেওয়া।
আর কিছুই বলতে মেঘা বললো,
ফ্রিজে যদি নারিকেল আর দুধ থাকে তবে বানিয়ে দিতে পারবো তাছাড়া না।
কাব্য ঘাড় কাত করে হ্যা সূচক উওর দিলো।
আমি চলে গেলাম কিচনে অনেক কিছুই রান্না করতে হবে।
!
!
!
এই কাব্য এই ড্রেস টা দেখ কত সুন্দর।
প্রিয়তার কথায় কাব্য ফোন হাতে নিয়ে ড্রেস টা দেখছে আর বললো আমার বউকে অনেক সুন্দর মানাবে।
কি আমি এটা আমার জন্য ওর্ডার দিবো তুই তোর বউ এর জন্য অন্যকিছুই ওর্ডার দে।
না আমি এটাই দিবো।
না না না আমি তোকে দিতে দিবো না।
ওয়েট আমি আমার ফোন থেকে দিচ্ছি।
আমি এখনি দিচ্ছি।
কাব্য ফোন বের করে ড্রেস টা ওর্ডার করলো
আর প্রিয়তা ও ওর্ডার করলো।
হুট করে কাব্য উঠে দাঁড়ালো,,, আর মনে করলো রহমানের কথা টা তারপর আবার ভাবলো ১৫ মিনিট আগে মেঘা রান্নাঘরের দিকে গেছে আর ও ফ্রিজ থেকে কিছুই বের করবে বলছিলো এই কথা ভাবতে কাব্য দৌড় লাগালো প্রাণপণে ছুটে চলেছে। তার মনের মধ্য কেমন ভয় লাগছে তার, অদ্ভুত অনুভব হচ্ছে সব, যখনি এমন হয়েছে তখনি মেঘার কিছুই
ভাবতে কাব্য আরো জরে দৌড় দিলো।
কাব্য পিছে প্রিয়তা ছুটেছে কি হলো বুঝার জন্য।
চলবে____________
[যদি সবার মন ছোঁয়া তে পারি তো আরো এক পার্ট লিখতে আমি রাজি। আরো এক পার্ট আজ দিবো কি না নির্ভর করছে আপনাদের উপর।]