তারকারাজি- (১৩)
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী
|| দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ||
‘কবুল’ বলে বিবাহ বন্ধনে জড়ানোর পর এই প্রথম নীলাশা পা রাখল আরাভদের বাড়িতে। তাদের বৈবাহিক জীবনের বয়স এখন চার মাস পেরিয়ে পাঁচ ছুঁইছুঁই। তবুও নীলাশা যেন লাল, রেশমি বেনারসিতে ঠিক নতুন বউয়ের মতোই লাজ-লজ্জায় নত হয়ে আছে। ঠোঁটে কী সুমিষ্ট হাসি তার! সেই লাল টুকটুকে ঠোঁট জোড়ায় হাসতে থাকা নতমুখী স্ত্রী ও চারিপাশের হৈ-হুল্লোড় দেখে আরাভ নিজেও উপলব্ধি করে নিচ্ছে ঘরে নতুন বউ আনার উৎসবমুখর আমেজ; ঠিক যেমনটা ছিল তার বড় ভাইয়ের সময়ও! অথচ কেই-বা মনে রেখেছে এই বিবাহকে কেন্দ্র করে হয়ে যাওয়া ঝঞ্জাটটা?
সে যে পাঁচ মাস পূর্বের অতীত হওয়া এক সাদা-কালো গল্প! ইয়াসিন চৌধুরীর প্রস্তাবে আহসান চৌধুরী সম্মতি পোষণ করেছিলেন ঠিকি তবে ছেলে আরাভ ছিল নাছোড়বান্দা। ভার্সিটি জীবন না পেরিয়েই বিয়ের মতো কাজটি সম্পন্ন করতে আরাভের ছিল তুমুল অনীহা। শূন্য পকেটে সে নিজের বউকে ঘরে আনবে না… কোনোমতেই না! ওদিকে নীলাশাও ভীষণ জেদ ধরে বসে রইল। বাবা-মা কি শৈশবকালের অবুঝ শিশুদের মতো হয়ে গেল যে, এমন শিশুসুলভ বায়না জুড়ে দিয়েছে? অন্তরে জমা বিশুদ্ধ আবেগটা মুহূর্তেই বলে উঠেছিল— তার বিয়েটা বান্ধবীর এই করুণ দশায় ভীষণ অভিশপ্ত বৈ আনন্দের নয়। আর তার মধ্যে সে তখন মিশমির চিন্তায় মগ্ন ছিল। স্টেসির অনুরূপ সে মিশমিকেও দেখতো কাছে ডাকতে, একসাথে বাঁচা-মরার খেল খেলতে। দুঃস্বপ্ন দেখার ভয়ে কতকাল যে আবোলতাবোল ঔষধ সেবন করে বিনিদ্র রাত্রি কাটিয়ে, চোখের নিচে কালি ফেলেছিল নীলাশা, তা শুধুই উপলব্ধি করতে পেরেছিল বাড়িতে উপস্থিত থাকা মানুষগুলো। একজনের অনুপস্থিতিতে আরেকজন এসে হাজির থাকতে হতো মেয়েটির পাশে। ওর যে ঠিক ছিল না কিছুই! হুটহাট মিশমি-মিশমি করে ছাঁদের পথে পা বাড়াতো ভয়ঙ্কর সকল কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে। আরাভকে বিয়ে করার হুঁশ তার আর ছিল না-কি অতো!
তবে ইয়াসিন চৌধুরী যখন মেয়ের পাগলপ্রায় দশা দেখিয়ে আরাভকে বুঝিয়ে বললেন সবটা তখন আরাভ বিনা বাক্য ব্যয়েই রাজি হয়ে গিয়েছিল বেশ। আত্মসম্মান না-হয় আত্মসম্মানের জায়গাতেই থাকুক। কিন্তু ওই মেয়েটা তার স্বাভাবিক জীবন ফিরে না পেলে বা অসুস্থতাতেই বড়সড় অঘটন ঘটিয়ে ফেললে আরাভ এ-জীবনে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতো না-কি? সে তো জানতো মেয়েটা তাকে কতটা ভালোবাসে… মান্য করে! ভালোবাসার অভিমানিনীকে নিজ দায়িত্বে মেরে ফেলার অপরাধে তার মৃত্যুটাও যে সে নিশ্চিত ঘটিয়ে ফেলতো সেইটাও আরাভ উপলব্ধি করতে পেরেছিল খুব। অতঃপর নীলাশাকে রাজিও করিয়েছিল এই আরাভ। মিশমির কেবিনে একদিন হঠাৎই কাজী এনে, কনে ও বরের পিতা-মাতা এবং মিশমির পিতা-মাতার উপস্থিতিতে নীলাশা কবুল বলে বিয়েটা সম্পন্ন করেছিল অত্যন্ত নিভৃতে, বিনা সোরগোলে। বন্ধুরা কেবিনের বাইরে থেকেই উঁকিঝুঁকি দিয়ে চেপে গিয়েছিল ব্যাপারটি। এক তরফা দুঃখ প্রকাশ করে আরেক তরফা আনন্দে মেতেছিল তারাও। বেশ কয়েকদিন পূর্বে পিহুর বাগদানের কথাটা যেমন হাওয়ায় ছড়িয়েছিল হসপিটালে, সেখানে পাঁচ মাস পূর্বে রোগীর কেবিনে একটি বিয়ে সম্পন্নের বার্তাটি গোপনেই থেকেছিল সবার। কিন্তু দিবাস্বপ্ন দেখা মেয়েটি কাঙ্ক্ষিত সংসারী হবার তৃষ্ণা মিটানোর বিতৃষ্ণা দেখিয়েছিল তখন যখন তার স্মরণে এসেছিল নিজের বাড়িতে উপস্থিত থাকা ঈশার কথা।
তখন বিবাহের এক মাস চলে। নীলাশা আরাভের অত্যধিক সঙ্গ পাওয়ার সাথে সাথে মানসিক চিকিৎসায় সুস্থতা ফিরে পাবার পর যখন ইয়াসিন চৌধুরীর নিষেধাজ্ঞার বহির্ভূত হয়ে, শ্বশুরবাড়িতে থাকার অনুমতি পেল; তখন হুট করেই প্রাপ্তমনস্কতা তার বয়সকে বাড়িয়ে তুলল চোখের পলকেই। বর্তমানে ঈশার অত্যন্ত আপন বলতে নীলাশাই আছে। কবে সে তার ভাইদের সঙ্গ পাবে… কবে ফিরে পাবে হঠাৎই অপরিচিত হয়ে যাওয়া মাকে বা আদৌও ফিরে পাবে কি-না সেই সকল সন্দেহেই তো দিন বদলে রাত হচ্ছে আর রাত বদলে দিন! নিজ দায়িত্বে বুকে টেনে নেওয়া এই মেয়েটাকে আরো একবার একা করে দিয়ে, নিজের সেই বহুত প্রত্যাশিত সংসারী রমণী হবার ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দেওয়াটা বেঠিক বলেই মনে হয়েছিল নীলাশার। ওদিকে আরাভও ভালো আয় না-করা অবধি নীলাশার বধূবরণ করতে চাচ্ছিল না নিজ বাড়িতে। একে-একে দুই করে সেই লুকিয়ে-চুরিয়ে দেখা করা পুরনো প্রেমিকযুগল-ই থেকে গেল আরাভ-নীলাশা। ধরা পড়ে লজ্জিতও হলো বহুত কিন্তু স্বামী-স্ত্রী হয়ে সকলের সাথে সময় কাটানো হলো না তাদের। আর তার জন্যই আরাভ ও নীলাশাকে বাবা হিসেবে কড়া আদেশ করলেন আহসান চৌধুরী— একদিনের জন্য হলেও তিনি তার ছোট পুত্রবধূকে বধূ বেশেই নিজ বাড়িতে দেখতে চান। আরাভ অবশ্য এতে অমান্য করেনি তবে বাবাকে উল্টো শর্ত দিয়েছে যে— সে তার স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ি দর্শন করাবে কিন্তু সেই একদিন যেন একদিনেই স্থির থাকে। সংখ্যা পাল্টে দুই, তিন, চার যেন না হয়ে যায়। অতঃপর এইযে হলো নীলাশার এ-বাড়িতে বধূবরণ! জটাময় বৈবাহিক সম্পর্কের এই ঝঞ্জাট সকলে ভুলে গেলেও অত্যধিক ভুক্তভোগী আরাভ-নীলাশা এবং তাদের মাতা-পিতারা হয়তো তা ভুলবেন না এ-জীবনেও।
যাইহোক, আজ আরাভদের বাসায় যেন আত্মীয়দের মিলনমেলা বসেছে। শুধুমাত্র বাড়ির ছোট বউয়ের গৃহপ্রবেশ ঘটবে বলেই রমরমা সাজসজ্জা ও খানা-পিনার আয়োজন দেখে নীলাশা নিজেও ভীষণ চমৎকৃত হতে বাধ্য হলো। সে তো আত্মীয়দের চোখের অগোচরেই অভ্রর স্ত্রী ফাবিহাকে ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করল,
“ ভাবী? এতো মানুষ কি আমাকে দেখতেই এসেছে? তোমার দেবর তো সোশ্যাল মিডিয়ায় পিকচার আপলোড করেছিল। আমাকে কি এরা কেউই দেখেনি? ”
এ-কথা শুনে ফাবিহার হাসিটা হলো দেখার মতো। সে পিহুর মতোই অকারণে হাসে। পিহুর মতোই ভীষণ মিশুকও বটে! নতুন বউয়ের এহেন কথাটা সকলের সামনে বলতে ইচ্ছা করলেও সে বলল না। বউটা যে প্রচণ্ড লজ্জা পেয়ে যাবে! বঙ্গীয় আচার-আচরণ, রীতি-নীতি যে বিদেশ ফেরত মেয়েটিকে এখনো সম্পূর্ণভাবে কাবু করতে পারেনি তা ফাবিহা টের পেল হাড়েহাড়ে। সে শুধু এটুকুনি বলল,
“ ওই দেখা আর এই দেখা এক হলো না-কি, পাগলি? তুমি ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। এরা কিন্তু জোঁকের মতো মানুষ! নতুন বউকে একবার পেয়েছে তো কোনোমতেই ছাড়বে না। আমার বিয়ের সময় তো ভোর চারটা পর্যন্ত আঁটকে রেখে গল্পই করেছিল এরা! তবে মানুষগুলা খুব ভালো। তুমি ওদের সাথে কখন যে মিশে যাবে তা টেরও পাবে না। ”
নীলাশা মুচকি হাসল। অতঃপর ফাবিহা নিজেই তার হাত টেনে নিয়ে গেল আরাভের ঘরে। আরাভের ঘরটাও আজ কাঁচা ফুল ও সুরভিত মোমে সাজানো হয়েছে। ফাবিহা ঘরে প্রবেশ করেই আগে মোমবাতি জ্বালাতে ব্যস্ত হলো আর নীলাশা ব্যস্ত হলো চারপাশটা দেখতে। ঘরের এরূপ সাজসজ্জা মুহূর্তেই অপ্রস্তুত করে তুলল নীলাশাকে। অন্তরের কাঁপুনি প্রবল হলো। তার এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো— এই অন্তর কাঁপুনির আওয়াজটা বোধহয় ফাবিহাও শুনতে পেয়ে যাবে খুব শীঘ্রই। অবশ্য সেই কাল্পনিক অনুভূতি কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ থাকলো। মেয়েটি নিজের দু’গালে কোমল অরুণরাগরেখা ফুটিয়ে তুলে, রিনিঝিনি কণ্ঠে শুধালো,
“ এইসব কী করেছো তোমরা, ভাবী? আমি তো একদিনের জন্য শুধু ঘুরতেই এসেছিলাম এখানে। এতো এতো আয়োজনের প্রয়োজন তো ছিল না। ”
ফাবিহা আবারও হেসে উঠল, “ একদিনের জন্যই আসো আর সারাজীবনের জন্য… তোমার শ্বশুরমশাই বলে দিছে যে, তোমাকে সেভাবেই এ-বাড়িতে আনা হবে যেভাবে শ্বাশুড়ি তার বৌমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে। মা তো নেই। তাই আমিই তোমাকে নিয়ে আসলাম, দেখলে না? আর এখন সেইসব নিয়ম তোমাকে, আমাকে এমনকি আমাদের সবাইকেই মানতে হবে। প্রয়োজন-অপ্রয়োজন দেখা চলবে না। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। এখন তোমাকে তোমার বর ছাড়া আর কেউ ডিস্টার্ব করতে পারবে না। ”
কথাটি বলেই ফাবিহা চলে গেল। অথচ তার শেষোক্ত কথাটা যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখল নীলাশাকে। মেয়েটা বাঁধাহীন লজ্জায় মরমর হয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগল। কী অধীরতা এই মনে! অলঙ্ঘনীয় লাজে রাঙা কনেবউ কোথা থেকে যেন বেলীফুলের সুবাস পেল… অন্তরে উষ্ণতা আনা এক সুবাস। ফাবিহা মোমবাতি জ্বালিয়েছিল তখন। সেই কৃত্রিম বেলীফুলের সুবাস কী ভীষণ তীব্রতায় উথাল-পাতাল করে দিতে লাগল নীলাশার সুবিন্যস্ত অনুভূতিগুলোকে। ম-ম করতে থাকা সেই সুগন্ধির প্রণয়ে নীলাশা সুমিঠে কণ্ঠে গেয়ে উঠল অত্যন্ত একান্তে…
মাতাল তবুও কোমল নারীকণ্ঠে,
‘ মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো
দোলে মন দোলে অকারণ হরষে।
মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো
দোলে মন দোলে অকারণ হরষে। ’
দুপুরের ক্লান্তি ভাঙা একগুচ্ছ হরিদ্রাভ রোদ এসে তীর্যকভাবে গা এলিয়েছে মিশমির কেবিনের জানালায়। আকাশটা ছিল ভীষণ মেঘলা যখন সায়ান এসে উপস্থিত হয়েছে এখানে। পিহুর অযথাই গণ্ডগোল পাকানোর সেই রাতের পর থেকে আর দু’বার করে দেখতে আসা হয় না প্রেয়সী মিশমিকে। ওই দু’বেলায়-ই যে ঝুমুর বেগম উপস্থিত থাকেন মেয়ের কাছে! তাই অফিসের লাঞ্চ ব্রেকেই এখানে ছুটে আসে এই তৃষ্ণাদগ্ধ প্রেমিক। আর যাইহোক, ঝুমুর বেগমের মুখোমুখি হওয়াটা তার জন্য সত্যিই ভয়ঙ্কর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে বলেই মনে করে সে।
আজ মিশমির মাথার মোটা আস্তরণের ব্যাণ্ডেজটা খোলা হয়েছে। কপাল ঘেঁষে যাওয়া বামদিকের সেই আঘাতটা শুকিয়েছে বেশ। সায়ান আলতো করে সেই স্থানটা বুলাতে গিয়েও হাত ফিরিয়ে আনল। মেয়েটা ব্যথা পেলে তো বলতেও পারবে না! অতঃপর প্রেয়সীর জটাধারী চুলেই হাত বুলিয়ে নিল পরম আদরে। ডাকল, “ মিশমি? শুনতে পাচ্ছো? ”
মিশমির সাড়া মিলবে না জেনেও সে প্রত্যেকবার এসে মিশমিকে ডাকে, এটা নতুন নয়। কে জানে মিশমি শুনতে পায় কি-না সেই ডাক! সায়ান সোজা হয়ে বসল। মিশমির একটা হাত মুঠোবন্দী করে নিল নিমিষেই। এই চৈত্রের হঠাৎ মেঘবৎ হয়ে আসা দিনের মধ্যাহ্নে খুবই দৈবযোগে দেখা পাওয়া কোমল রৌদ্রের স্পর্শে বদ্ধ থাকা নিজের এবং নিজের প্রেয়সীর হাতটার দিকে তাকিয়ে সায়ানের হঠাৎই মনে পড়ে যায় অতীতে ফেলে আসা এক অন্যরকম চৈতালি দিনের কথা।
ভীষণ মন কেমন করা অনুভূতি নিয়ে ভার্সিটির-ই এক লাল রঙা বাসে বসে-বসে চৈত্রের মেঘ-রোদের কানামাছি খেলা দেখছিল মিশমি৷ তাকে সবাই ডাকার পরও যখন সে বাস থেকে নামলো না তখন সায়ান-ই তার সমীপে গিয়ে গাম্ভীর্যের সাথে জিজ্ঞেস করেছিল,
“ ওই! কী হইছে? ”
মিশমি চমকেছিল। অতঃপর ক্ষীণ হেসে নঞর্থক মাথা নাড়িয়েছিল। অর্থাৎ— কিছু না। সায়ানও কম চেষ্টা করেনি ওর মন ভালো করার। তখন ঠিক কোন কথার প্রেক্ষিতে কথা উঠেছিল তা মনে পড়ে না সায়ানের তবে সেই কথাটা ছিল মিশমির হোঁচট খাওয়া নিয়ে। তখন তো আর জানতো না যে, মিশমির পায়ে আগের থেকেই সমস্যা ছিল! তাই সেই কথার শেষে মিশমি প্রশ্ন করেছিল সায়ানকে,
“ আমি যতবার পড়ে যাব আপনি ততোবার-ই আমার হাতটা ধরবেন? ”
অঙ্গনার সেই পূর্ণ চাহনিতে চোখ রেখে সায়ান স্পষ্ট উত্তর দিয়েছিল সেদিন, “ হ্যাঁ, ধরব। ”
“ সব-সময়? ”
সায়ান এবারও স্পষ্ট উত্তর দিল, “ সব-সময়ই। ”
মিশমির ফের কী যেন হয়েছিল… সটান বাসের সীট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নেমে যেতে চাইছিল। নামার সময় আকুতিভরা কণ্ঠে বলেছিল,
“ আমি তো সব-সময়ই আপনাকে বিপদে ফেলে দিই। শুধু-শুধু আমার হাত ধরে বিপদে পড়তে চাচ্ছেন কেন? দয়া করে এটা করবেন না, সায়ান ভাই। সর্বনাশ হয়ে যাবে। ”
সেই স্মৃতিতে আজ হঠাৎই অন্তরটা পুড়ে ছারখার হতে আরম্ভ করল সায়ানের। কেন সেদিন মিশমির হাতটা ধরে রাখার সুযোগ হলো না তার? হয়তো সেই সুযোগটা হলে আজ মিশমি আগের মতোই কথা বলতো, চলাচল করতো। এমন পুতুলের মতো নিষ্ক্রিয় থাকতো না-কি? সায়ান তার হাতের বাঁধন দৃঢ় করল। থমথমে গলায় বলে গেল কিছু কথা,
“ একবার হাত ধরি নাই দেখে তুমি এমন একটা কাজ করতে পারলা, মিশমি? তুমি তো এমন পাষাণ ছিলা না। তুমি জানো নীলাশা তোমার জন্য কত কষ্ট পায়? সারা দিন-রাত কাঁদতে দেখছি ওকে। পিহু হেসেই গলে যায়! সেই পিহুকেও কাঁদিয়ে ফেলছো তুমি। দয়া কি হয় না তোমার? একবার কি উঠে দাঁড়িয়ে বলতে পারতাছো না যে, তুমি কমপ্লিটলি ফিট? কী চাচ্ছো তুমি সবাই তোমার জন্য মরে যাই? ”
মিশমি উত্তর দেয় না। টুঁ শব্দটাও করে না। গভীর আঁখি জোড়া মেলে তাকিয়েই থাকে যা! সায়ানের ডান চোখ থেকে হঠাৎই এক ফোঁটা জল পড়ল… কষ্টের নোনা জল। সে তো বলতে পারছে না যে, মিশমিকে এভাবে দেখে কষ্টে তার বুকটা চৌচির হয়ে যাচ্ছে! নীলাশা আর পিহু তো কেবল অযুহাত। তারও যে খুব বলতে ইচ্ছা করে— সে এই মেয়েটাকে পাগলের মতো ভালোবাসে! কিন্তু না… বলা হয়ে ওঠে না সেই কথা। ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলতে গিয়েই যেন ওষ্ঠদ্বারে এক দানবীয় আড়ষ্টতা এসে খিল দিয়ে দেয়। শুধু আকুতিভরা অনুরোধেই অনুনয়-বিনয় করে চলে তৃষ্ণাদগ্ধ প্রেমিকটি,
“ মিশমি? আমার সর্বনাশ তো তুমি সেদিন-ই করেছো যেদিন শক্ত করে তোমার হাতটা ধরতে বলেছিলে। এখন কেন আমার সাথে এমন করছো, বলো তো? একবার হুট করেই উঠে গিয়ে সবাইকে চমকে দাও না? আমরা তো শুধু তোমাকেই চাই। কী ভুল করছো কী ঠিক করছো… সেই সব মনে রাখেই-বা কয়জন? মনে তো খালি তুমিই আছো, তুমিই থাকবে। এভাবে হারিয়ে যেও না প্লিজ। আরে একবার কথা তো বলো আমার সাথে? কেন তুমি এভাবে চুপ করে আছো?… ”
দুপুরের নিস্তব্ধতায় খাঁ খাঁ ঘরটায় চাপা পড়ে যায় জীবন থেকে প্রিয় অনেককিছু হারানো এই তাম্রবর্ণের পুরুষটির আকুতি। নিজের বাবার মৃত্যুটা এমনিতেও তাকে দুর্বল করে দিয়েছে অনেক। মিশমির এমন মৃত্যু সে মানতে পারবে না। প্রিয়তমাকে আগের মতো করেই ছাড়বে সায়ান! কিন্তু মিশমি যে কোনো কথাই বলে না। আগের মতোই স্তব্ধ থাকে। ঠিক যেন এই ঘরের থমথমে চার দেয়াল!
অনুভূতিহীন…!
আজীবনের মতো নির্বাক!
#চলবে ইন শা আল্লাহ!
(#বিঃদ্রঃ বেশ কয়েকদিন গ্যাপ যাওয়ায় পোস্টের রিচ কমে গেছে। তাই অনুরোধ রইল সবাই রিয়াক্ট করার পাশাপাশি মন্তব্যও করবেন। পারলে এই দুই-তিনটা দিন একজন একাধিক মন্তব্য করার এবং শেয়ার করার চেষ্টা করবেন। ইন শা আল্লাহ, আমি উপকৃত হবো খুব)