তারকারাজি- (২৭)
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী
তিহাম ফিরে গিয়েছে ঢাকায়। প্রিয়তম মানুষটির স্মরণে মরমর মিশমিও নিখুঁত অভিনেত্রী হয়ে ওঠার ব্যর্থ চেষ্টা করছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু আনন্দে থাকার অভিনয় আর ক’জনই-বা করতে পারে? তিহাম চলে যাবার পরও গোটা একটা বিবর্ণ, বিষন্ন দিন কাটিয়ে ফেলেছে মিশমি। বলা বাহুল্য, তিহামের স্মরণে মিশমির মন যতটা না বিষন্ন ছিল তার থেকেও বেশি ভীত ছিল ঝুমুর বেগমের হুটহাট করে কল দেওয়ায়। সে শুনেছে, বাবা মঈনুল হোসেন না-কি স্ত্রীকে কৌশলে বলেছেন তিনি অফিসে চলে গেলে তাদের মেয়ে বেশিরভাগ সময় বাসায় একাই থাকবে। বিপদ-আপদ কি আর বলে-কয়ে আসে? তাই তিনি তার মেয়েকে বান্ধবী নীলাশার বাসায় পাঠিয়েছেন এই ক’দিন কাটানোর জন্য। তিনি এটাও বলেছেন যে, মেয়ের মা যেন সারাক্ষণ মেয়েকে কল করে তদারকি করতে গিয়ে নীলাশার বাবা-মাকে উত্যক্ত করে না বসেন। ঝুমুর বেগম বোধহয় এই জন্যেই মিশমিকে কম কল করছেন আজকাল। কিন্তু এদিকে সময়ে-অসময়ে কল করায় মাকে একেকটা মিথ্যা বলার জন্যও মনটা খুব দুঃখী হয় মিশমির। যদি মায়ের তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক ধরে ফেলে মেয়ের বলা মিথ্যেগুলো, তখন? মনে-মনে একটাই কামনা যে, মা যেন কোনোদিনও এই ভ্রমণের কথা জানতে না পারেন। মিশমি ঝুমুর বেগমকে যেমন অসন্তুষ্ট করতে চায় না তেমন বন্ধুদেরও দুঃখী করতে চায় না। শুধু একটু ভালো রাখতে চায় নিজের কাছের মানুষগুলোকে। একটু হলেও না-হয় এই বোকা মিশমির জন্য ভালো থাকুক আশেপাশের মানুষগুলো!
সকাল সাতটা বেজে ত্রিশ মিনিট। এটা ছিল আরাভ-নীলাশাদের সমুদ্রসৈকত ভ্রমণের চতুর্থ এবং শেষ দিন। আজ বান্দরবানের পাহাড় দর্শন করে পরশু রাতের বাসে তারা ফিরে যাবে ঢাকায়৷ সেই রকম প্রস্তুতি নিয়েই নীলাচলে যাবার উদ্দেশ্যে নিজেদের ব্যাগপত্র গাড়িতে তুলছিল তারা। কিন্তু এমন সময় এলো এক অনাকাঙ্ক্ষিত ফোন কল। এতো সকাল-সকাল মেয়েটা নীলাশাকে কল করল কেন? বলা হচ্ছে নিশান-রিশানের আদরের ছোট বোন ঈশার কথা। খানিকটা বিভ্রান্তিতেই নীলাশা নিজে কথা সেড়ে নিয়ে ছুটে গেল সেখানে, যেখানে নিশানরা দুই ভাই মিলে গাড়িতে ব্যাগপত্র তুলছিল। সে নিজের ফোনটা দুই বন্ধুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,
“ দোস্ত, তোদের লাইনে না পেয়ে ঈশা আমাকে কল দিছে। শী ইজ ক্রাইং। কথা বল তো একটু! ”
কথাটা শুনে নিশান হুড়োহুড়ি করে ফোনটা হাতে নিলেও রিশানের তাগিদে ফোনের স্পিকার চালু করতে বাধ্য হলো সে। মেয়েটা এতো সকাল-সকাল উঠে কাঁদছে কেন আবার? রিশান আওয়াজ দিতেই ওপাশ থেকে ক্রন্দনরত ফিসফিসানি কণ্ঠ ফিরে এলো,
“ ভাইয়া? তোমরা কেউ কি লাইনে আছো ভাইয়া? ”
নিশানরা সাড়া দিল। এই-সেই প্রশ্ন করল অনেকক্ষণ কিন্তু ঈশার কান্নার কোনো ভিত্তি খুঁজে পেল না তারা। এটা ঠিক ঈশা তাদের স্মরণে কাঁদতেও ছাড় নিবে না। কিন্তু এতো সকালে তো সে ওঠে না! আবারও প্রশ্ন করা হলো তাকে। অতঃপর উপায় না পেয়ে মা মিলা রহমানকে চাইলে ঈশা কেমন সংকীর্ণ কিন্তু ভীত কণ্ঠে বলে উঠল,
“ না ভাইয়া, খবরদার! আমি তোমাদের পায়ে পড়ি তোমরা আমার ফোন করা নিয়ে মাকে কিছু বলো না। তোমরা যদি আমার ফোন করা নিয়ে মাকে একটা অক্ষরও বলছো তো আমি গলায় দড়ি দিব। আমি কিন্তু আত্মহত্যা করে ফেলব ভাইয়া! তোমরা প্লিজ কাউকে কিছু বলো না। প্লিজ বলো না। ”
প্রাণের চেয়েও প্রিয় বোনটার এহেন কথায় শরীরটা কেমন থরথর করে কেঁপে উঠল নিশানদের। হঠাৎ কী হলো? নীলাশাও পড়ল দারুণ চিন্তায়। তখন রিশানকে কেমন দায়িত্বশীল ভাইয়ের ন্যায় নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বলতে শোনা গেল,
“ ঈশা, বাই অ্যানি চান্স তুই কারো সাথে রিলেশনশিপে আছিস না তো? তার সাথে কিছু হইছে দেখে কাঁদতেছিস? তা-ই যদি হয় তো আমাদের বল। আমরা কিচ্ছু বলব না তোদের। দরকার পড়লে ঢাকায় ফিরে গিয়ে ওর সাথে কথা বলব আমরা। ”
ছোট ভাইয়ের কথা শুনে মনে-মনে ভীষণ ক্ষিপ্তবৎ হলো নিশান। সে এ-ও ঠিক করে নিল যে, বোনের সেই প্রেমিককে ধরে এমন ধোলাই দিবে যেন সে আর ঈশার দিকে ফিরে না তাকায়। কিন্তু তা হলো না। নিশানের খেপাটে চিন্তাগুলোকে দুমড়েমুচড়ে ফেলে দিয়ে ঈশা বলল,
“ আমি কোনো সম্পর্কে নেই ভাইয়া। তার থেকেও বড় কিছু হয়ে গেছে। তোমরা প্লিজ ঢাকায় চলে আসো আজই। আমি আর সহ্য করতে পারছি না কিছু। প্লিজ ফিরে আসো আর কাউকে কিচ্ছু জানিয়ো না। মা তো দূরেই থাক, নীলাশা আপুরা বাদে আর কাউকে কিছু বলো না এই নিয়ে। তোমরা কাউকে কিছু বলে দিলে আমি সত্যিই মরে যাব ভাইয়া! ”
নিজের কথা সম্পূর্ণ করে মেয়েটা আবারও কেঁদে উঠল। ঘুরেফিরে তার একই কথা, আজ না আসলে হয়তো সে আর নিজের কথার সত্যতা প্রমাণ করার সুযোগ পাবে না। আজই তার সেই দুটো মানুষকে দরকার যারা সব-সময় তাদের বোনটাকে বুকে আগলে রেখে এসেছে। নিশান সিদ্ধান্ত নিল এখনি রওনা হবার। কিন্তু এখানেও বাঁধলো নিদারুণ ঝামেলা! ঈশা পইপই করে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা যত আগেই ঢাকায় আসুক না-কেন! তার কল না করা অবধি যেন ভাইয়েরা তাদের এলাকার ত্রিসীমানায়-ও না আসে। খুব ভালো হয় যদি সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম হতে রওনা হয় তারা। তাই বোনের এই শর্ত পূরণ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিলেও নিজেদের বাকি চারটা বোনকে রেখে যাবার ভরসা পেল না নিশানরা। তারা জানে, আর যে যাইহোক না-কেন আরাভ ও সাহেল অত্যন্ত দায়িত্বশীল মানুষ। ভরসা করার মতো! তবুও তো মনটা খচখচ করে? সে আরাভকে বলল বিষয়টি। তাদের বোনটা বোধহয় খুব বিপদে পড়েই এমন করে ডাকছে। তারা নীলাশাদের নিয়ে ঢাকায় ফিরে যেতে চায়। হুটহাট করেই বাস বা ট্রেনের টিকেট পাওয়া যাবে বলে তো মনে হয় না! সে যদি আবিরকে বলে জরুরি তাগিদে একটি মাইক্রোর ব্যবস্থা করে দিত তো খুব ভালো হতো নিজেদের জন্য। এই কথা শুনে আরাভের স্পষ্ট জবাব,
“ আবিরের সাথে কথা বলতেছি আমি। তবে হ্যাঁ, আমিও তোদের সাথে যাব। আমি বাবাকে ভরসা দিয়ে তোদের স্পেশালি নীলাশাদের এখানে আনছি। তাই ওদের সেইফলি পৌঁছে দেওয়াটাও আমার দায়িত্ব। আর তোর বোন যখন এভাবে বলছে তখন নিশ্চয়ই কোনো বড় বিপদ হইছে? আমি তোদের দুইজনকেও একা ছাড়তেছি না। বাকিরা থাকুক আর আমরা ফেরত যাব ঢাকা। ”
এই কথা শুনে আরাভের বন্ধুরা প্রথমে কেউ না মানলেও পরে অবশ্য আরাভের অনুরোধেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সকলে। কিন্তু রাজি হলো না সায়ান। যদি সত্যিই বড় কোনো বিপদ হয়ে থাকে?আরাভ যদি সেই বিপদ মোকাবিলায় নিশানদের সাহায্য করতে অক্ষম হয়, তখন? অতঃপর নিজেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তেই অটল আটজন সদস্য সময় গুনতে-গুনতে, বিকেলেই এক মাইক্রো করে রওনা হলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। খরচটা ভালোই হলো এখানে। কিন্তু বিপদের সময় কি এইসব ধরতে আছে?
সন্ধ্যা কেটে রাত্রির ঘন শিশিরের অন্ধকারে যখন নিস্তব্ধ হতে লাগল এলাকা, তখনও নিশানদের ভাড়া করা মাইক্রো পৌঁছায় নি ঢাকায়। না জানি কখন মেয়েটা কল করে বসবে! চিন্তায় ঘাম ঝরে গেল রিশানের। অত্যন্ত রসিক এবং ছন্নছাড়া নিশান সান্ত্বনা ভাইকে সান্ত্বনা দিল,
“ হুদাই এতো প্যারা নিস ক্যান? গেলে তো দেখমুই কী হইছে! একটা ঘুম দে তো এখন। উঠে দেখবি ঢাকায় চলে আসছি আমরা। ”
নিশান অভিনয় করলেও নিজের চিন্তাপূর্ণ স্বরটা আড়াল করতে ব্যর্থই হলো বেশ! তাই রিশানকেও দেখা গেল ভাইয়ের উপর না রেগে চুপচাপ নিজের চিন্তায় মগ্ন থাকতে। নিজেদের ফোনে নেটওয়ার্কের জটিলতায় নীলাশাকে দিয়েই ঈশাকে কল করা হলো। সংযোগ পাওয়া গেলেও ঈশা সংযোগ স্থাপন করেছে সেই মুহূর্তেই। ইংরেজি অক্ষরে বার্তা লিখে পাঠিয়েছে,
“ আমি কল করবো আপু। ভাইয়াদের বলো যেন কল না করে। ”
সেই বার্তা পেয়ে সকলের চিন্তা বাড়লো বৈ কমলো না। আকাশ-পাতাল ভাবতে-ভাবতে ঢাকায় যেই-না গাড়ি প্রবেশ করল তখনই কল এলো ঈশার,
“ হ্যালো ভাইয়া? কই তোমরা? ঢাকায় আসছো? ”
তার কল পেয়ে নিশান তাড়া দিল ড্রাইভারকে আর রিশান বোনকে উত্তর দিল,
“ ঢাকায় ঢুকছি। আর আধা ঘন্টা লাগবে। তুই ঠিক আছিস ঈশা? আমাদের কই যেতে হবে বল? ”
ওপাশে ঈশাকে চুপ থাকতে অনুভব করা গেল কিছুক্ষণ। তার ঘন নিঃশ্বাসের শব্দও শোনা গেল। অতঃপর কষ্টে জর্জরিত, ধরা কণ্ঠে ঈশাকে বলতে শোনা গেল,
“ কোথাও না, বাসায় চলে এসো। আমি দরজা খুলে রাখব তোমাদের জন্য বাট প্লিজ, বাসায় আসা না পর্যন্ত কাউকে কিচ্ছু জানতে দিও না ভাইয়া। ”
কিছু বলার আগেই সংযোগ কেটে দিল ঈশা। রিশানের খুব ভয় হচ্ছে। কী এমন হতে পারে যে, ঈশা এমন করে ডেকে আনল তাদেরকে? নীলাশা নিজের হাত ঘড়িটায় চোখে ছুঁয়ে নিল এক পলক। রাত বারোটার ঘর পেরিয়ে গেছে সময়। সে নিশানকে তীক্ষ্ণভাবে জিজ্ঞাসা করল,
“ নিশান, আজকের দিনটা কি তোদের কারো কাছে কোনো স্পেশাল দিন? ঈশা তো তোদের বার্থডের রাতেও এভাবে চমকে দিত। এইরকম কিছুই কী হচ্ছে বলে মনে হয় তোদের? ”
নীলাশার কথাটা মুহূর্তেই খেলে গেল দুই ভাইয়ের মস্তিষ্কে। দুজনেই পাল্লা দিয়ে মনে করার চেষ্টা করল যে, এমন কিছু সত্যিই আছে কি-না আজ। কারণ ঈশা মানুষকে ভয় দেখানোর ওস্তাদ! কিন্তু না, এমন কিছুই মনে পড়ল না বলেই বিদিত হলো। রাতের গভীরতা আরও বাড়তে থাকল। বাড়তে থাকল দুঃশ্চিন্তা। নিজেদের এলাকার কাছাকাছি এসে ঠিক করা হলো- সায়ান মিশমি আর পিহুকে মিশমিদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবে। আর এদিকে ঈশার সাথে দেখা করার পর নীলাশা ও সানামকে আরাভ পৌঁছে দিবে নীলাশাদের বাসায়। সেই নিয়ম মেনে সায়ানরা চলে যেতেই নীলাশা ঈশাকে বার্তা লিখল,
“ পৌঁছে গিয়েছি। তুই কি বাহিরে আসবি? ”
মুহূর্ত পার হতে না হতেই ঈশা লিখল, “ এক্ষুনি আসছি আপু। ”
গাড়ির ভাড়া মিটিয়ে আরাভ এলো। একমাত্র সে-ই যেন ছিল একদম স্বাভাবিক। অন্যদের মতো চিন্তায় ছটফট করছে না সে। সকলে একসাথে দালানের চারতলায় উঠতেই দেখা মিললো ঈশার। এলোমেলো চুলের উপর ওড়না টেনে দাঁড়িয়ে মেয়েটি কেঁদে চলেছে অনবরত। তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই ঈশা এসে ঝাপটে ধরল রিশানকে। বড় ভাই রগচটা মানুষ। তাই নিজের যত আবদার, ইচ্ছা-অনিচ্ছা সবকিছুই এই ছোট ভাইয়ের বুকে মাথা রেখেই পূরণ করতে হয় মেয়েটির৷ রিশানও আগের মতোই আঁকড়ে ধরল নিজের বোনকে আর তখনই অনুভূত মেয়েটি কাঁপছে। ঈশার গায়ের অস্বাভাবিক কম্পনটা মুহূর্তেই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে রিশানের বুক। সে তরান্বিত প্রশ্ন করতে লাগল ছোট বোনকে। তখন ক্রন্দনে কম্পিত ঈশার ওষ্ঠদ্বয় বলে উঠল,
“ আস্তে কথা বলো ভাইয়া। ”
ঈশা তাকিয়ে দেখল আশেপাশে। নীলাশা আর সানামকে দেখে সে অপ্রস্তুত না-হলেও আরাভকে দেখে ঈশা মুহূর্তেই নিভে গেল। এই অজানা মানুষটার সামনে কি তার এতোকিছু বলা ঠিক হবে? কৈশোর বয়সের অত্যন্ত আবেগী ঈশা ব্যাপারটি বুঝতে পারল না। শুধু এটুকুই জানে যে, আজ না হলে হয়তো কোনোদিনও এইসব কিছু প্রকাশ করা সম্ভব হবে না তার পক্ষে। তাই সে কোনো কথা না বলেই বাসার ভিতর টেনে নিয়ে গেল দুই ভাইকে। অনিচ্ছাতেই নিমজ্জিত মেয়েটি নিজের ভাইদের দুঃসময়ে সামলানোর উদ্দেশ্যে বাসায় প্রবেশ করতে বলল নীলাশা, সানাম ও আরাভকে। আরাভ আসতে চায়নি তবে পরবর্তীতে রিশানরাই জোর করেছে তাকে। মানুষটাকে দরজার বাহিরে রাখা যাবে না-কি! এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে সবাই সেই অন্ধকারেই ঘুরে দেখল চার পাশটা। ঘুটঘুটে অন্ধকার নয় তবে বাসার সব ক’টা বাতিই ছিল নিভানো। সেখানকার এক ঘরের দরজার নিচের ফাঁকা অংশ দিয়ে আলো আসতে দেখেই নিশান কেমন উদ্বিগ্নতার সাথে প্রশ্ন করল,
“ মার ঘরে লাইট জ্বলছে যে? মা কি জেগে আছে? ”
ঈশা উত্তর দিল না সেই ফিসফিসিয়ে করা প্রশ্নের। ক্রন্দনে ফোলা চোখ দুটো জলে থৈথৈ করতে লাগল আগের চেয়েও বেশি। মেয়েটার আচার-আচরণে ক্ষণে-ক্ষণেই কেঁপে উঠছে দুই ভাইয়ের অন্তর। কেন এমন অস্বস্তি হচ্ছে তাদের? তাদের এই অস্বস্তির মাঝেই ঈশা কাঁদতে-কাঁদতে নিশানের হাতে একটি চাবির গুচ্ছ তুলে দিয়ে বলল,
“ মা তো সব-সময় দরজার নব-ই লক করে রাখে, তাই না ভাইয়া? কোনো কথা না বলে মার ঘরের লকটা খুলে ফেলো, যাও। আমাকে আর দয়া করে কোনো প্রশ্ন করো না তোমরা। ”
নিশান ধরতে পারেনি সেই কথার রেশ। তারা একটু সময় নিয়েই ঈশার বলা কথাটা মস্তিষ্কে আঁটতে লাগল। নিশান ও রিশানের এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো- তাদের মা বোধহয় পৃথিবীতে আর নেই! তিনি হয়তো তার তিন সন্তানকে এই দুনিয়ার বুকে একলা করে চলে গেছেন বা এমন কিছুই হয়ে গেছে যে, তিনি হয়তো আর বাঁচবেন না বেশিক্ষণ। এর জন্যই মেয়েটা এতক্ষণ ধরে কিচ্ছু না-বলে এতো তাড়া দিয়ে তাদের ডেকে এনেছে, তাই না? হ্যাঁ, তা-ই ভেবে রিশান থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলেও নিশান ছুটে গেল মায়ের ঘরের দিকে। অথচ তারা দুজন এটা বুঝতে পারল না যে, ছোট বোন তাদের মায়ের ঘরের লক কেন খুলতে বলল। মৃতপ্রায় বা মৃত মানুষ কখনো দরজা বন্ধ করে রাখার মতো উদ্ভট কাজ করে না-কি? নিশান কোনো টুঁ শব্দ না করেই মিলা রহমানের ঘরের চাবিটি আলাদা করে নিল। অতঃপর তা নবে প্রবেশ করিয়ে যখন দরজার লক খুলল তখন নিজেকে সামলে রাখার মতো কোনো মজবুত কারণ খুঁজে পেল না ছেলেটি। বুকে শুরু হলো তোলপাড়। এ কেমন মৃত্যু যন্ত্রণা! নিদারুণ আড়ষ্টতায় নিমজ্জিত ঠোঁট জোড়া অত্যন্ত কষ্টেই আলগা হয়ে ডেকে উঠল সেই ভরসার ডাক, “ মা? ”
#চলবে ইন শা আল্লাহ!
(ঘটনা প্রবাহের বিস্তৃতি ঘটাতে গিয়ে খেয়াল করলাম এইটুকুই অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। বোরিং লাগবে হয়তো! তবুও অনেক কাটছাট করে ছোট করে দিলাম। কারণ এইটুকু না-দিলে হতো না বলেই মনে হচ্ছিল আমার। সবাই সবার মন্তব্য জানাবেন)