#তাজ-ইলোর প্রণয়ালাপন
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি
পর্ব:৪২
দুপুরে খাবার টেবিলে তাজ ভাইকে দেখতে পেলাম। খাওয়ার সময় জানতে পারলাম পাত্রপক্ষের লোক বিকালে আসতে পারবে না। সন্ধ্যায় আসার কথা বলেছে। তাতে আমার কী? আমি এসবে ভ্রুক্ষেপ করলাম না। অপেক্ষায় থাকলাম কখন তাজ ভাই রুমে যাবেন। খাওয়া শেষ করেই উনি রুমে চলে গেলেন। আমিও নিজের রুমে গিয়ে ডায়রিটা হাতে নিয়ে দ্রুত ওনার রুমে ছুট লাগালাম। হাত দুটো পেছনে লুকিয়ে ধীর পায়ে রুমে ঢুকে দেখলাম উনি মাত্রই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছেন। আমাকে দেখে ভ্রুকুটি করে বললেন,
“কারো রুমে এলে নক করে আসতে হয়, জানিস না?”
আমি চরম অবাক হবার ভান করে বললাম,
“তাই না কি? জানা ছিল না তো। আসলে আমি আপনার থেকে অনুপ্রাণিত তো, তাই বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হচ্ছে।”
তাজ ভাই প্রতিউত্তর না করে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন। গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করলেন,
“কেন এসেছিস?”
আমি প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করলাম,
“আজকাল ডিটেকটিভিটি ছেড়ে চুরির কারবার শুরু করেছেন না কি?”
আমার কথা শুনে তাজ ভাই ভ্রু দ্বয় কুঞ্চিত করে তাকালেন। পরক্ষণেই হয়তো ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারলেন। নিজের ফোনে মনোযোগ দিয়ে বললেন,
“যা বলার স্পষ্ট বলে বিদায় হ।”
“এটা চুরি করেছিলেন কেন?” হাত দুটো সামনে এনে ডায়রিটা ওনার সামনে তুলে ধরে বললাম।
উনি ডায়রির দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে কিছু না বোঝার ভান করে বললেন,
“কার ডায়রি এটা?”
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
“ঢং করছেন? এই ডায়রি চুরি করে পুরো এক বছর নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছেন। এখন না চেনার ভান করে আমাকে বোকা বানাতে চাইছেন? হারানো ডায়রির তো আর পাখা গজায়নি যে, উড়ে উড়ে আমার টেবিলের ওপর এসে পড়বে।”
“তোর আজাইরা কথা শোনার সময় নেই আমার। একটু পর বেরোতে হবে। রেস্ট নিতে দে। নিজের কাজে যা।”
ওনার কন্ঠে বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছে। বুঝলাম, উনি এই নিয়ে কথা বলতে চাইছেন না। এড়িয়ে যেতে চাইছেন। তাই ডায়রিটা বিছানায় রেখে আমিও বিছানায় এক পা তুলে বসে পড়লাম। তাজ ভাই ঝট করে শোয়া থেকে উঠে বসলেন। পুনরায় বিরক্তি নিয়ে বললেন,
“কী সমস্যা? যেতে বলছি না তোকে?”
“আপনি বললেই আমি চলে যাব?” ত্যাড়াভাবে বললাম আমি।
“ইলু, ঘাড়ত্যাড়ামি করবি না বলছি। যেতে বলছি।”
“এড়িয়ে যেতে চাইছেন?”
তাজ ভাই ধমকের সুরে বললেন,
“কী এড়াব? বড়োদের মুখে মুখে কথা বলা শিখেছিস কোত্থেকে? বেয়াদব মেয়ে। বেরো রুম থেকে।”
আমি শান্ত স্বরে বললাম,
“আপনার মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন তাজ ভাই? কন্ঠে রাগ থাকলেও মুখে নেই। কী ব্যাপার বলুন তো?”
“ইলু”, চোখ পাকিয়ে পুনরায় ধমকে উঠলেন তাজ ভাই।
আমি এবার দুটো পা-ই বিছানায় তুলে বসলাম। স্পষ্ট ভাষায় বললাম,
“শুনুন, ওই লোকদের আসতে না বলে দিন। আমি বিয়ে করব না।”
তাজ ভাই চোখ দুটো সরু করে বললেন,
“ফাজলামি করছিস? ওনারা সন্ধ্যায় আসবেন। এমনও হতে পারে আজই বিয়ের পাকা কথা বলে যাবেন।”
“আমি মোটেও ফাজলামি করছি না। এই বিয়েতে আমার মত নেই।”
“কেন?”
“হতেও তো পারে আমার পছন্দের কেউ আছে। তা না জানতে চেয়েই আপনারা আমার বিয়ের পাকা কথা বলার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কী মনে করে? মানে যার বিয়ে তারই খবর নেই!”
“মামুকে বল গিয়ে।”
“বলব, তার আগে আপনাকে বলে রাখলাম। আমি যখন বলেছি ওই ছেলেকে বিয়ে করব না, তো করবই না।”
“কাকে পছন্দ তোর?” গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলেন তাজ ভাই।
“জানেন না?”
“আমার জানার তো কথা না।”
“আপনাকে”, ফট করে বলে বসলাম আমি।
তাজ ভাই বোধ হয় একটু থমকালেন। তড়িঘড়ি করে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে নড়েচড়ে বসলেন। গম্ভীর গলায় বললেন,
“ফালতু কথা বলতে এসেছিস এখানে?”
আমি মৃদু হেসে বললাম,
“আপনি খুব ভালো করেই জানেন আমার কোনো কথাই ফালতু না।”
“আমাকে নিয়ে পড়েছিস কোন দুঃখে তুই? তোর বিয়ের ব্যাপারে আমাকে টানবি না, খবরদার”, চোখ পাকিয়ে বললেন তাজ ভাই।
আমি ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে বললাম,
“কেন? আমাকে ভালোবাসেন না?”
তাজ ভাই থতমত খেয়ে গেলেন। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে চোয়াল শক্ত করে বললেন,
“এসব কোন ধরণের কথা? অসভ্য মেয়ে। চাপড়ে কথা শিখিয়ে দিব। দুদিন পর বিয়ে হয়ে যাবে, আর তুই এসেছিস ফাজলামি করতে?”
আমি এবার কেঁদেই ফেললাম। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে রাগত স্বরে বললাম,
“আপনি আড়ালে ভালোবাসতে পারবেন, আর আমি জিজ্ঞেস করতে পারব না? আমাকে কি দু বছরের বাচ্চা মনে হয়? কিচ্ছু বুঝি না আমি? আপনি মুখ ফুটে বলেননি বলেই আমি কোনোদিনও বুঝতে পারব না ভেবেছেন? এসব নাটক বন্ধ করুন। আমার আর ভালো লাগছে না। এত লুকোচুরি, এত ভয় কিসের আপনার? ভয়ের কথা আগে মনে ছিল না। আমার মনকে দুর্বল করে এখন আপনার ভয়ের কথা মনে পড়েছে? আগলে রাখার সাহস না থাকলে ভালোবাসার কী দরকার ছিল? একা ছিলাম, বেশ ছিলাম। কোনোরকমে চলে যেত জীবন। যেচে এলেন কেন আমার জীবনে। এসে আবার আমাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে চলে যাওয়ারও ব্যবস্থা করছেন। বাহ্, বাহ্! সবকিছু আপনার মন মতোই কেন হবে? আমার জীবনের প্রতি আমার কোনো অধিকার নেই? আমাকে কী পেয়েছেন আপনি?”
তাজ ভাই হতবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমার কথা শেষ হতেই উনি শান্ত গম্ভীর স্বরে বললেন,
“ইলু, অতিরিক্ত কথা বলছিস কিন্তু তুই। আমার মাথা গরম করিস না বলে দিলাম।”
“সত্যি কথা বললেই অতিরিক্ত হয়ে যায়? নিজে তো পারেন শুধু লুকোচুরি খেলতে। ভালোবাসা? ভালোবাসার মর্ম বোঝেন আপনি? বুঝলে দূরে ঠেলে দিতে না চেয়ে আগলে রাখতে চাইতেন।”
সঙ্গে সঙ্গে তাজ ভাই আমার বাঁ হাতের বাহু শক্ত করে চেপে ধরলেন। ব্যথায় ককিয়ে উঠলাম আমি। উনি চোখ-মুখ শক্ত করে গর্জে উঠলেন,
“আজকাল মুখে খুব বুলি ফুটেছে তোর। ভালোবাসা? কিসের ভালোবাসা? এই কিসের ভালোবাসা রে? আবেগে ভেসে যাচ্ছিস? তাজওয়ারের পায়ের নখের সমান যোগ্যতা আছে তোর? তোকে আমি ভালোবাসতে যাব কোন দুঃখে? এত সস্তা মনে হয় আমাকে? সুইডেনে কত সুন্দরী মেয়েদের আমি রিজেক্ট করেছি, ধারণা আছে তোর? তুই তো ওদের কাছে কিছুই না। সুন্দরী, স্মার্ট, হট, অ্যাডুকেটেড, কোন দিক আছে তোর? আছে কোনো দিক, যা দিয়ে আমাকে আয়ত্তে আনবি? আবেগ দিয়ে আমাকে পটানো যায় না, এটা ভালোভাবে ঘিলুতে ঢুকিয়ে নে। চুপচাপ বিয়ে কর, সংসার কর, সুখে থাক। ভুলেও আমার পেছনে পড়তে আসিস না। আমি তাজওয়ার, মুখ ফুটে একবার প্রেম-ভালোবাসার কথা বললে সুন্দরী মেয়েদের লাইন লেগে যাবে। তোর মতো একটা অযোগ্য মেয়ের প্রতি আমার ইন্টারেস্ট থাকবে, এ কথা কেবল স্বপ্নেই সত্যি হবে, বাস্তবে নয়।”
হাতের ব্যথার থেকে বেশি ব্যথা হচ্ছে মনে। ওনার প্রত্যেকটা কথা এসে বুকের মধ্যে তীরের সুচালো ফলার মতো বিঁধে গেল। বুকের মধ্যে অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছে। হাতের ব্যথা তো তার কাছে অতি তুচ্ছ। আমি নির্বাক হয়ে শুধু ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনে গেলাম। অশ্রুসিক্ত স্তব্ধ চোখ জোড়া সহসা সরাতে পারলাম না। কন্ঠনালি শব্দ তুলতেও ভুলে বসে আছে। মস্তিষ্কের মধ্যে অনবরত বেজে চলেছে, এ আমি কাকে দেখছি? এ আহনাফ তাজওয়ার হতেই পারে না, কিছুতেই না। আমার মস্তিষ্কের ধারণা ভুল প্রমাণ করে তাজ ভাই আমার বাহু থেকে ওনার হাতটা একপ্রকার ছিটকে সরিয়ে নিলেন। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন,
“গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার।”
বলার মতো কোনো কথা আমি খুঁজে পেলাম না। রোবটের ন্যায় অতি সন্তর্পণে বিছানা থেকে নেমে পড়লাম। দরজার দিকে পা বাড়াতেই ভীষণভাবে চমকে উঠলাম। কাঁপা গলায় বলে উঠলাম,
“ভাইয়া!”
রাজ ভাইয়া অবাক দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি দ্রুত নিজের চোখের পানি মুছে নিলাম। তাজ ভাই আমার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে ফিরে তাকালেও, কিছু বললেন না। রাজ ভাইয়া রুমে ঢুকে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলেন,
“কী হয়েছে তোদের?”
আমি মাথা নিচু করে ডানে-বায়ে দুলিয়ে বললাম,
“কিছু না।”
কথাটা বলে আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করলাম না। দ্রুত পায়ে হেঁটে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। ডায়রিটাও নিতে ভুলে গেলাম। রুমে এসে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম। বেশিক্ষণ নিজেকে সামলে রাখা সম্ভব হলো না। দু হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। বুকের মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। যে মানুষটা সবসময় আমার কথাই আগে ভাবত, সে-ই কি না আজ আমাকে সহ্য করতে পারছে না! কদিন আগেও উনি কতশত অজুহাতে আমাকে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে সামনে বসিয়ে রেখেছেন। আর আজ? সেই উনিই আমাকে এভাবে ধমকে রুম থেকে তাড়িয়ে দিলেন? এত কেয়ার, এত চিন্তা-ভাবনা কোথায় গেল সব? শেষমেষ আমাকে এভাবে অপমান করলেন! এতটা ছোটো করলেন! ছিহ্! রাগে-দুঃখে নিজের মাথার চুল টেনে ধরলাম। মাথার মধ্যে দপদপ করছে। এক মুহূর্তেই পুরো পৃথিবীটা কেমন বিষাদময় লাগছে। ইচ্ছে করছে অজানা কোথাও হারিয়ে যেতে। যেখানে ভালোবাসার জন্য একটা মানুষও থাকবে না। তাহলে হয়তো এই অলুক্ষুনে ভালোবাসার জন্য আমাকে এভাবে কাঁদতেও হবে না। দীর্ঘদিন পর আজ হঠাৎ করেই আম্মুকে খুব মনে পড়ল। ঠিক আগের মতো, যখন একাকীত্বে ভুগতে-ভুগতে আমি আম্মুর জন্য সময়-অসময়ে কাঁদতাম। আমার সেই নিয়মমাফিক কান্নাটা তাজ নামক পাষাণ লোকটা এসে পুরোপুরিভাবে ভুলিয়ে দিয়েছিল। শেষ কবে আমি আম্মুর কথা ভেবে কেঁদেছিলাম, তা এখন আমার নিজেরই মনে পড়ে না। ওই লোকটা হুট করে এসে আমার জীবনে জুড়ে বসেছিল। ম্যাজিকের মতো আমার সব দুঃখ-কষ্ট, একাকীত্ব ভ্যানিশ করে দিয়েছিল। হাজার বকঝকা, শাসন, ব্ল্যাকমেইলের মাঝেও আমার যত্ন আর খুশির কথা আগে ভাবত। আজ যেন এক নিমিষেই সব এলোমেলো হয়ে গেল। অভিমানের পাহাড় আকাশ ছুঁলো। সে আর আজ মাথা নোয়াবে না। তাজ নামক পাষাণ লোকটার ওপর তার অজস্র অভিমান ক্রমশ বেড়েই চলল। ঠিক যেন অশ্বের গতিতে ছুটল তার অভিমানের গতিবিধি। আর সেই অশ্বখুরের প্রতিটি শব্দ বুকের বাঁ পাশে আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত করল। এত এত বেশি কষ্ট কি আমার মতো আবেগী মেয়ের সহ্য ক্ষমতার মধ্যে পড়ে? একসময় ঠিকই ভেঙে পড়তে হলো। বালিশে মুখ গুঁজে ঘন্টাখানেক কাঁদার পরও আবেগী মন শান্ত হলো না। একসময় বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে ভালোভাবে পানির ঝাপটা দিয়ে এসে ফোনটা হাতে নিলাম। রুমের দরজা বাইরে থেকে লক করে সোজা ড্রয়িংরুমে চলে এলাম। সন্ধ্যায় মেহমান আসবে বলে মিতা, রিতা, মারজিয়া খালা কাজে ব্যস্ত। বাবা দুপুরের পর আজ আর অফিসে যায়নি। বিশ্রাম নিচ্ছে। জেনিফার ভাবি আর জেসিকাও আশেপাশে নেই। ফাঁকা ড্রয়িংরুম পেরিয়ে আলগোছে দরজা খুলে আমি অনায়াসেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। কেউ টেরও পেল না। তীব্র অভিমানগুলো মাথায় জেঁকে বসেছে। এই মুহূর্তে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো কথাই মাথায় আসেনি। গেইটের কাছে এসে থমকে দাঁড়ালাম। দারোয়ান কাকা আমাকে একা দেখলে যদি গেইট না খোলে? কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে সাহস জুগিয়ে এগিয়ে গেলাম। দারোয়ান কাকা আমাকে দেখেই বললেন,
“কী গো মামনি? কী খবর?”
“গেইট খুলুন কাকা। আমি বাইরে যাব।”
“তোমার লগে তো কাউরে দেখতাছি না। একলা বাইরে যাইবা?”
“না কাকা। আমার এক বান্ধবী আসছে, তাই একটু সামনে এগোব।”
“ও, আইচ্ছা যাও তাইলে।”
দারোয়ান কাকা আমার কথাটা সত্যি ভেবে গেইট খুলে দিলেন। গেইট পেরিয়ে রাস্তায় নেমে আমি রাস্তার পাশ ধরে সোজা হাঁটা শুরু করলাম। একটানা অনেকক্ষণ হাঁটার পর কিন্ডার গার্টেনের সামনে এসে থামলাম। ফোন লাগালাম শ্রেয়ান ভাইয়ার নাম্বারে। চারবার রিং হতেই ফোন রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে শ্রেয়ান ভাইয়ার কথা শোনা গেল,
“ইলোমিলো? কেমন আছো?”
“এই তো ভালো। আপনি?”
“ভালো। হঠাৎ নিজে থেকে ফোন করলে যে?” কিছুটা অবাক হয়ে বললেন শ্রেয়ান ভাইয়া।
আমি ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
“আপনি কি ব্যস্ত আছেন ভাইয়া?”
“এই না, না। তুমি রাগ করলে না কি? আমি তো এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম।”
“রাগ করিনি ভাইয়া। আপনি কি একটু আমাদের বাড়ির বাঁ দিকের রাস্তার পাশের কিন্ডার গার্টেনের সামনে আসতে পারবেন?”
“ওখানে এখন কেন? এই ওয়েট ওয়েট, কোনোভাবে তুমি বাড়ি থেকে পালিওনি তো?” সন্দিহান কন্ঠে প্রশ্ন করলেন শ্রেয়ান ভাইয়া।
আমি শান্ত স্বরে জবাব দিলাম,
“আমি এখন কিন্ডার গার্টেনের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি ভাইয়া। বেশিক্ষণ এখানে দাঁড়াতে পরব না। আপনি আসতে পারলে আসুন, নইলে আমি অন্য ব্যবস্থা করছি।”
শ্রেয়ান ভাইয়া সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে বললেন,
“এই না ইলোমিলো, তুমি ওখানেই দাঁড়াও। ওখান থেকে এদিক-ওদিক কোথাও যাবে না। আমি এক্ষুনি আসছি। ওকে?”
“একটু তাড়াতাড়ি আসুন ভাইয়া।”
“বাইক নিয়ে আসব তো, বেশি সময় লাগবে না। ওয়েট করো তুমি।”
“আচ্ছা। আর শুনুন, তাজ ভাই ফোন করলে কিছু বলবেন না আমার ব্যাপারে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। রাখছি।”
শ্রেয়ান ভাইয়া ফোন কেটে দিলেন। আমি ফুটপাতের কিনারায় চুপ মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম ওনার পথ চেয়ে। ভেবে নিলাম শ্রেয়ান ভাইয়া এলেই ফোনটা বন্ধ করে দিব। জানি, শ্রেয়ান ভাইয়াকে বারণ করলে উনি কাউকে বলবেন না আমার কথা। তারপর যত ইচ্ছা খুঁজুক। খুঁজতে-খুঁজতে পাগল হয়ে যাক। আমার কী? বিয়ে দিবে, তাই না? বিয়ে দেওয়ার শখ মিটে যাক। একবার শিক্ষা দিলে জীবনে আর কোনোদিন বিয়ের নাম নিবে না। আমাকে কাঁদানোর ফল এবার হারে হারে টের পাবেন ডিটেকটিভ সাহেব।
চলবে………………?
(গল্পটা খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে। আশা করি সবাই রেসপন্স করবেন।)
পার্সোনাল গ্রুপ লিংক:
https://www.facebook.com/groups/935884643636506/?ref=share